প্রযুক্তি কি নারী নির্যাতনের আর এক হাতিয়ার?

প্রযুক্তি কি নারী নির্যাতনের আর এক হাতিয়ার?

প্রযুক্তির জগত

দশটা বেজে গেছে। ফোনটা চার্জে রাখতেই বেজে উঠল। রণিতা দেখলেন, কেয়া কলিং। মনটা স্নিগ্ধ হয়ে গেল। ক’দিন আগেই মেয়েটা নতুন সংসারে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এই সময়?

“হ্যাঁ, কেয়া বলো!”  
“নীতাদি শুয়ে পড়োনি তো?”
কেয়ার গলাটা অন্যরকম, একটু যেন শংকিত।
“না, বলো কী হয়েছে? কোনও সমস্যা?”
“খুব জ্বালাতন করছে আবার নীতাদি! আমাদের পুরোনো মেসেজ, ছবি, একসঙ্গে পিকনিকের ভিডিও সব আমার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে দেখিয়ে দেবে বলছে।!” গলা ভেঙে আসে কেয়ার।  
“ওর সব কিছু ব্লক করা ছিল না তোমার?” প্রশ্ন করেন রণিতা।
“হ্যাঁ গো ছিল তো, কিন্তু অন্য নাম দিয়ে মেসেঞ্জারে পিং করেছে! আমার তো মেসেঞ্জার পাবলিক করা!”
“ফেক অ্যাকাউন্ট তাই না? অত পাত্তা দিও না!”
“কিন্তু স্ক্রিনশটগুলো তো সত্যি!”
“তুমি শমীককে তোমার পুরনো সব কথা বলোনি?”
“ও জানে, কিন্তু ওর বাড়ির লোকেরা তো জানে না, জানোই তো এই বিয়েটা ওর পরিবার ঠিক মন থেকে মানেনি!”
“তুমি রুখে দাঁড়াও, ভয় পেও না! ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে এরকমভাবে যারা ভয় দেখায়, তারা কাপুরুষ ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। বেশি চিন্তা কোরো না, ঠিক সময় অফিসে এসো কাল!”

ফোনটা কেটে দিলেন রণিতা। কিন্তু মনটা সাংঘাতিক রকমের ভার হয়ে রইল। কেয়ার বয়ফ্রেন্ড ভীষণ রকমের অত্যাচারী ছিল। মোটামুটি দুই বাড়িতে জানা ছিল ওদের সম্পর্ক, তাই কেয়াদের বাড়িতে ছেলেটার আসা যাওয়া ছিল। অসম্ভব রকমের পজেসিভ আর সন্দেহবাতিক। একটু দেরি করে কেয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরলে নানারকম সন্দেহ করত, বিশ্রি ইঙ্গিত করত। তাও কেয়া মানিয়ে নেবার চেষ্টা করত। কেয়া চাকরি পাওয়ার পর এই দুর্ব্যবহার বেড়ে গেল আরও। সম্পর্কটা শেষে ভেঙে দেয় কেয়া।

তারপর শমীকের সঙ্গে আলাপ এবং গত তিন মাস আগে ওদের বিয়ে হয়েছে। আবার সেই ছেলেটা জ্বালাতন করা শুরু করেছে। এখন তো জ্বালাতন করার আরও সুবিধা হয়েছে এই অন্তর্জাল আর সামাজিক মাধ্যমে।

ফোন ছাড়া এক দণ্ড চলে না আজকালকার দিনে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপ আমাদের জীবনটাকেই পালটে দিয়েছে গত বেশ কিছু বছরে। মুহূর্তের মধ্যে গোটা পৃথিবীটাকেই পাচ্ছি হাতের মুঠোয়। ভাত খেতে বসে মাছের ঝাল দিয়ে ভাত মেখে মেয়ে মাকে দেখাচ্ছে, “দেখো ঠিক তোমার মতো রান্না করেছি!” সেটা যেমন সত্যি তেমনি পৃথিবীর কোনায় কোনায় মেয়েরা এই সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটের জন্য অপমানিত ও শঙ্কিত হচ্ছেন, ঠিক ওপরের ঘটনার কেয়ার মতো।

“কাল আসতে পারোনি কেন কাজে মতির মা?” চোখের কোন ফোলা দেখে আন্দাজ করলেও বাড়ির গিন্নি মুখে বললেন না কারণটা।

উত্তর মতির মা নিজেই দিল।  

“মিনসে মদ খেলে মাথার ঠিক থাকে না গো, এমন মেরেছে উঠতে পারিনি তাই!”

মতির মা অনায়াসে যে কথা তার কাজের জায়গায় বলতে পারে, সে কথা কিন্তু তিথি মুখ ফুটে বলতে পারে না তার প্রজেক্ট ম্যানেজারকে।

“পড়ে গেছিলাম স্যার বাথরুমে…” বলেই কোনওমতে বাথরুমে ঢুকে যায়।

নারী নির্যাতনের ইতিহাস প্রাচীন যুগ থেকেই। ইন্টিমেট পার্টনার অর্থাৎ যে পুরুষটির সঙ্গে একটি মহিলা জীবন কাটায়, সে নানাভাবে তার সঙ্গিনীকে নির্যাতন করে। জীবনসঙ্গী বলতে আমাদের মনে প্রথমেই আসে স্বামী – আধুনিককালে সেই ব্যক্তিটি স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড বা পার্টনার সবকিছুই হতে পারে। এই নির্যাতনের সঙ্গে ধনী দরিদ্র শিক্ষিত অশিক্ষিত বর্ণ ধর্ম ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক নেই।

নারীর ওপর দৈহিক নির্যাতন হয়ে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। তারপর একে একে মানুষ যত সভ্য হল অত্যাচারের ধরন বদলে গেল। শারীরিক বা যৌন নির্যাতন তো ছিলই, সঙ্গে যোগ হল মানসিক নিগ্রহ। সমাজবিদরা মনে করেন, বর্তমানে নারী নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার প্রযুক্তি। নির্যাতনকারীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে নারীর ওপর প্রতি মুহূর্তে নজরদারি করতে, অধিকার ফলাতে বা নিগ্রহ করতে। প্রযুক্তি এখন সর্বত্র। অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা – টেলিফোন, ইলেকট্রিকের বিল দেওয়া, বীমার টাকা দেওয়া সবই অনলাইন এখন। এবার সেই জায়গায় যদি দখলদারি করা যায় তাহলে তো নির্যাতনকারীর পক্ষে তার লক্ষ্যকে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে বিপর্যস্ত করে ফেলা অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে।  

তার ওপর সামাজিক মাধ্যম। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপ এসবের জন্য নতুন ভাবে জ্বালাতন করা যাচ্ছে। ‘গোপন কথাটি’ সত্যি সত্যি গোপন থাকছে না – ছড়িয়ে যাচ্ছে ইথার তরঙ্গে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তে মানুষ তো কত কথাই বলে – সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে কিন্তু সেই মুহূর্তটির বিশ্বাসটিকে নিয়েই ছিনিমিনি খেলা করে এককালের সঙ্গী। গোপন কথোপকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে ছড়িয়ে দেয় সামাজিক মাধ্যমে। স্ক্রিনশট ব্যাপারটা এখন ভয়ের ব্যাপার হয়ে গেছে – সাধারণ কথাবার্তা বা ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। Screenshot শব্দটিকে ছোটো করে বলা হয় ss, বাংলায় তা হয়ে গেছে সস। মানে সস বা চাটনির মতোই স্বাদু নাকি সেগুলো, এইসব নিয়ে নিকৃষ্টধরনের ঠাট্টা ইয়ার্কিও চলে।  

বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ এ নিয়ে আলোচনা চলছে আধুনিক যুগে। আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবদান সন্দেহ নেই – যার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে যোগাযোগ বা টেলিকমিউনিকেশনে বিপ্লব ঘটে গেছে। অতিমারির সময় তথ্যপ্রযুক্তিরই সাহায্যে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মোটামুটিভাবে সচল থাকতে পেরেছে। আবার এই তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই ঘটে চলেছে নানারকম ন্যক্কারজনক ঘটনা।

প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্যাতন

হোটেলে নিজের ঘরের বাথরুমে ঢুকেই আগে চারদিকে ভালো করে দেখে নিলেন মিসেস আয়াঙ্গার। এটা একটা কেমন যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। বাথরুমে ক্যামেরা লাগানো আছে কিনা আগে দেখে নেন ভালো করে। বেশ কিছুদিন আগে এরকম একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

একটি সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানা যায় এক ডেলিভারি ম্যান অনলাইনে অর্ডার করা পণ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে যেত দুপুরের দিকে, যখন বাড়িতে মহিলারাই সাধারণত থাকেন। বাড়িতে পণ্য পৌঁছাবার পর নিজেদের ফোনে গুগল লোকেশন যুক্ত করার জন্য মহিলাদের অনুরোধ করত লোকটি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা এ ব্যাপারে অনভিজ্ঞ, তখন সেই ব্যক্তিকেই অনুরোধ করতেন যে সাহায্য করার জন্য। লোকটি তখন সেই মহিলার ফোনের গুগল ফটো অ্যাপ খুলত এবং এই অ্যাপের শেয়ারিং অপশনে গিয়ে ‘শেয়ার উইথ পার্টনার’ অংশে নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল যুক্ত করে দিত। তারপর সেই সব ছবি নিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল কাজকর্ম করত। পুলিশ পরে তাকে গ্রেপ্তার করে।

আবার অনেকসময় ভুয়ো ছবি বা ভিডিয়োও বানানো হয় প্রযুক্তির সাহায্যে। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, এক মহিলা মডেলের বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশ পেয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। মডেলটি কাজের জায়গায় পরিবারে সর্বত্র মানসিকভাবে সাংঘাতিক বিপর্যস্ত হন। বার বার প্রতিবাদ করলেও তা ধোপে টেকে না। তাঁকে অনলাইন ট্রাইলে তোলা হয়। তখন মডেলটি আইনের আশ্রয় নেন। অবশেষে প্রমাণ হয় যে ভিডিয়োটি ভুয়ো।

ওপরের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হলেও প্রযুক্তির সাহায্যে এগুলি নারীকে নিগ্রহ করার এক একটি পন্থা।

নারীকে নির্যাতন করা তো যুগ যুগ ধরেই চলেছে। শত্রুকে জব্দ করাও নারী নিগ্রহের মাধ্যমে, সে যুদ্ধকালীন সময়েই হোক বা পারিবারিক।

নারীকে হেনস্তা করার পেছনে কি রয়েছে মানসিক ব্যধি? অথবা ইন্সিকিউরিটি? সমাজবিদরা মনে করেন মেয়েরা এখন অনেক বেশি বাইরে আসছেন, সমাজের নানা ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন, সুখ্যাতি বা সুনাম জুটছে – যা অনেক পুরুষই মেনে নিতে পারছে না। তাই পুরুষত্ব জাহির করার জন্য নারীদের হেনস্থা করার মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। গার্হস্থ্য হিংসার পরিমাণও বেড়েছে সমানতালে।

এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী একটি মেয়ের সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠী ছেলের বন্ধুত্ব হয়। কিছুদিন পর ওই বন্ধুটি নিজের ফোনে মেয়েটির কিছু ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে টাকা দাবি করে। নিজের ও পরিবারের কথা ভেবে মেয়েটি কিছুদিন টাকা দেয়। কিন্তু বারবার টাকা দাবি করায় মেয়েটি বিষয়টি পুলিশকে জানালে ওই সহপাঠীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নানাভাবে নিগ্রহ চালানো হয় সন্তর্পণে। বিভিন্ন মহিলাদের সঙ্গে আলোচনাসূত্রে পাওয়া গেছে নানান ধরনের তথ্য।

অনেকক্ষেত্রেই পার্টনারকে বা স্ত্রীর ওপর বাধানিষেধ জারি করা হয় ফোনে বা মেসেজে কার কার সঙ্গে কথা বলবে সেই ব্যাপারে। কেউ কেউ জোর করে নিজের অপছন্দের ব্যক্তির নম্বর ফোন মুছে সঙ্গিনীর কল লিস্ট থেকে ফেলতে বাধ্য করে।

এক মহিলা হঠাৎই লক্ষ করেন তাঁর ফোনে তাঁর পুরুষ সহকর্মী এমনকি বসের ফোন নম্বর ব্লক করা। করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। 

কেউ কেউ আবার তাঁদের মহিলা সঙ্গীর ফোন ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ভেঙে দিয়েছেন যাতে অনেক ফোন নম্বর বা মেসেজ হারিয়ে যায়।

অনেকে জোর করে জয়েন্ট একাউন্ট করে মহিলাটিকে সেই একাউন্ট অনলাইনে ব্যবহার করার অনুমতি দেন না – পাস ওয়ার্ড কখনই শেয়ার করেন না।

কেউ কেউ স্ত্রী বা পার্টনারের ফেসবুক একাউন্টের ওপর সব সময় নজরদারি করে, এক মহিলা জানান যে তাঁর ফেসবুকে পুরুষ বন্ধুদের কোনও পোস্টে কমেন্ট করলেও তাঁর স্বামী তাঁকে মারধোর করত। এমনকী তাঁর দুবছর আগের পুরনো মেসেজ দেখেও অসভ্যতা করতে ছাড়ত না।    

প্রযুক্তিভিত্তিক দৈহিক নির্যাতন এই শতাব্দীর নতুন এক ঘৃণ্য উপায়।

এই লেখার প্রথমেই কেয়ার জীবনের যে ঘটনার কথা বলা আছে সেরকম থ্রেট করা বা হুমকি দেবার ঘটনা সারা পৃথিবী জুড়ে। একটি মেয়ে জানিয়েছে তার এক্স-বয়ফ্রেণ্ড তাকে সব সময় মেরে ফেলার হুমকি দিত। আর একজন জানিয়েছে, তার বয়ফ্রেন্ড তাকে মেসেজ করত তার কুকুর কেমন আছে জানতে চেয়ে – মেয়েটি ভয় পেত সে কুকুরটির ক্ষতি করবে।

পরিবারের নারীর ওপর সর্বক্ষণ নজরদারি করতে অনেক পুরুষই প্রযুক্তির সাহায্য নেন। ডিজিটাল টেকনোলজি এই কাজের সহায়ক।

বলা হয়, “A victim’s abuser can be omnipresent!”

সঙ্গিনীর ফোনে ট্র্যাক করার ডিভাইস বা যন্ত্র লাগিয়ে গোপনে তাঁর গতিবিধি লক্ষ করে অনেক পুরুষ। এক মহিলা জানাচ্ছেন অফিস যাবার সময় একদিন তাঁর গাড়িতে অদ্ভুত একটি আওয়াজ হওয়ায় তিনি ভয় পেয়ে ভাবেন তাঁর পুরনো বয়ফ্রেন্ড তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তাই সোজা পুলিশ স্টেশনে চলে যান। সেখানে পুলিশ গাড়িতে একটি লুকনো স্মার্ট ফোন পান যাতে জিপিএস সার্ভিস অন করা, মহিলাটি কোথায় কোথায় যাচ্ছে তা নজরে রাখার জন্য।  

আর এক মহিলা জানান, তাঁকে দেখিয়েই তাঁর স্বামী তাঁরই ফোনে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে, যা দিয়ে স্বামীটি স্ত্রীর গতিবিধির ওপর নজর রাখবে।

আর এক মহিলা জানান তাঁর সমস্ত একাউন্ট থেকে ব্লক করে দেবার পরও তাঁর এক্স-হাসব্যান্ড তাঁর ব্যাংকে এক ডাইম করে পাঠাত, সঙ্গে থাকত একটি একশো শব্দের হুমকি।

এতক্ষণ অবধি আলোচনা করা হল প্রযুক্তিকে কীভাবে নারী নির্যাতনে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবার নারীরাও ধরে ফেলছেন অপরাধী, বা নিজেকে নানান ভাবে সরিয়ে রাখতে পারছেন নজরদারি থেকে।

আমেরিকান প্রাবন্ধিক Melvin Kranzberg-এর ‘First Law of Technology’ অনুসরণ করে বলা যায় প্রযুক্তি ভালো কি মন্দ তা নিয়ে কোনও সঠিক ধারণা একেবারেই করা যায় না। প্রযুক্তি হল একটি আয়নার মতো – যেখানে প্রতিফলিত হবে সমাজের ভালোমন্দ সবকিছু। তাই এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে পুরুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করলে সেই প্রযুক্তিকেই আবার ব্যবহার করে নারীরা নির্যাতনের বেড়াজাল থেকে বেরোবার চেষ্টা করবেন। প্রশাসনও সেই  প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই নির্যাতিতার পাশে থাকবেন, অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।  

শুধুমাত্র প্রশাসন বা আইন নয় নারীকে প্রযুক্তিগতভাবে শিক্ষা নিতে হবে। যে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অত্যাচারী ভয় দেখাচ্ছে, সেই মাধ্যম ব্যবহার করেই অত্যাচারীর ব্যাপারে হাজার হাজার মানুষকে জানিয়ে দেওয়া যায়। তবে মেয়েদের যাদের অল্প হলেও প্রযুক্তি জ্ঞান আছে তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। সামাজিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত শিক্ষাও এই যুগে নারীদের একান্ত প্রয়োজনীয়।  

———-

তথ্যসূত্র

আরাফাত শাহেরীন। (২০২৪)। “প্রযুক্তি ও নারী নির্যাতন।” সমকাল অনলাইন। অন্তর্জাল প্রাপ্তিস্থানঃ https://samakal.com/somota/article/217961 

আফরিন সুহাদা। (২০২৩)। “জীবনযাপন।” প্রথম আলো অনলাইন। অন্তর্জাল প্রাপ্তিস্থানঃ https://www.prothomalo.com/lifestyle/kjfymxbbz6

Kranzberg, M. (1986). Technology and history: “Kranzberg’s laws.” Technology and Culture, 27, 544-560. 

Siddamsetti, S. and Maddula, P. (2023). Breaking the barrier: Women and technology. The Review of Contemporary Scientific and Academic Studies, 3. Available: https://www.researchgate.net/publication/370245335

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত। 

অদিতি পেশায় গণিতের অধ্যাপক। নেশা লেখালেখি। বাস আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা, বাংলা লাইভ, অপার বাংলা, বাতায়ন, শব্দের মিছিল, ও কলকাতা, ড্যাশ পত্রিকা সহ পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত 'অভিব্যক্তি নিউ জার্সি' পত্রিকার সম্পাদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *