উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ

উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ

“কেমন আছেন?”

মনোময়ের হোয়াটস্যাপ মেসেজ।

“ভালো। আছেন কোথায়?”

“মানে?” হেসে বলল মনোময়।

“কলকাতায় নাকি কলকাতার বাইরে?”

“না না, কলকাতাতেই আছি।” 

মনোময় মানেই বেড়ানো। সরকারি চাকরি করতেন একসময়। অবসর নিয়েছেন অনেকদিন হল। বয়সে আমার চাইতে একটু বড়। খুব ভালো বন্ধু আমার। ওঁর সঙ্গে একসময় বহু জায়গায় বেড়াতে গিয়েছি। কখনও আমি আর মনোময়, কখনো-বা সঙ্গে আরও অনেকে। ওঁর অনেক বেড়ানোর গ্রুপ আছে। ফোন করেছেন মানে কিছু একটা ব্যাপার আছে। 

“বলুন।”

“বেড়াতে যাবেন নাকি?” 

এমনটাই আন্দাজ করেছিলাম।  বললাম, “কোথায়?”

“ডুয়ার্স।”

“ডুয়ার্স তো অনেক বড় জায়গা মশাই। কোথায় কোথায় যাচ্ছেন বলুন? কবে? কতদিনের প্রোগ্রাম, সঙ্গে আর কে কে? নাকি আমি আর আপনিই?”

“ওরে বাবা! একসঙ্গে অনেক প্রশ্ন যখন করে ফেলেছেন, উত্তর দিতেই হয় একটা একটা করে।”

“বলুন।”

“যাচ্ছি ঝালং, বিন্দু, মূর্তি, রকি আইল্যান্ড, এরকম আর কী। মোটামুটি একমাস বাদে যাওয়া। একটা রবিবার গিয়ে পরের শনিবার ফেরা। মিনিমাম সাতজনের গ্রুপ। উত্তর সব ঠিক ঠিক হল তো?”

“হ্যাঁ, তা হল। তবে একমাস বাদে তো বর্ষার মধ্যে। তখন তো উত্তরবঙ্গে ঘোর বর্ষা!”

“আরে, তখনই তো ওই জায়গাগুলোর আসল রূপ খোলে।”

“তা ঠিক। তবে জঙ্গল সাফারি করা যাবে না।”

“আমরা তো প্রকৃতির রূপ দেখতে যাচ্ছি।”

“বুঝলাম। কীভাবে যাচ্ছি?”

“কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। শিয়ালদা থেকে ছাড়বে।”

“বেশ বেশ।”

“আর কোনো প্রশ্ন?”

“দুটো শর্ত আছে।”

“বলে ফেলুন। আপনার সব শর্ত মানতে রাজি আছি আমি।”

“ও বাবা! তাই বুঝি? তাহলে বলি।”

“আমি থ্রি-টিয়ার এসিতে যাব। আর, একলা একটা ঘরে থাকব, ডাবল শেয়ারড রুম হলেও।”

“বেশ, তাই হবে। ডান।”

কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ছাড়ল রাত ৮:৩৫ নাগাদ। রাইট টাইম। সংখ্যা আমরা সাতজন। কিন্তু সবাই একসঙ্গে নয়, ছাড়াছাড়া। আমি আর অনির্বাণ এক কমপার্টমেন্টে, থ্রি-এসিতে। আমার লোয়ার বার্থ, অনির্বাণের সাইড লোয়ার বার্থ, একেবারেই কাছাকাছি। আমাদের সঙ্গে মিস্টার এবং মিসেস চক্রবর্তী পাশের কমপার্টমেন্টে থ্রি-এসিতে। মনোময় সহ আর দুজন থ্রি-টিয়ার স্লিপার। 

কোভিডের পরে বহুদিন বাদে ট্রেনে রাত কাটানো। বেশ থ্রিলিং লাগছিল। তার ওপর আমার বসার সিট পড়েছিল জানালার ধারে। যদিও কাঁচের ভেতর দিয়ে রাতে বাইরেটা অন্ধকার লাগছিল, তাও মুখ চেপে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করছিলাম। বিশেষ করে গভীর রাতে (সাড়ে দশটা এগারোটা হবে) ট্রেন যখন দ্রুত গতিতে ছুটছে, কামরার অনেকেই তখন শুয়ে পড়েছিল, কিছুক্ষণ বাদেবাদেই নির্জন স্টেশনগুলো পার হচ্ছিলাম একটা একটা করে, আর মনে হচ্ছিল, আমি একা ছুটে চলেছি সেই কবে থেকে, আমার অতীতকে পেছনে ফেলে! 

শিলিগুড়ি এল পরদিন সকাল ন’টা নাগাদ। কাঁচের জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম সাংঘাতিক মেঘলা আকাশ। মাঝে মাঝেই এসে পড়ছিল ছোট ছোট নদী, যাদের নাম জানা ছিল না। আর, থেকে থেকেই ভয়ঙ্কর সুন্দর সবুজ ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গলের নাম গুলমা ফরেস্ট। ট্রেনের ভেতরটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল জঙ্গলের দাপটে।  

নিউ মাল জংশনে আমাদের ট্রেন এসে পৌঁছল সকাল ১০ঃ৩৫ নাগাদ। অর্থাৎ দেড়ঘন্টা লেট। প্ল্যাটফর্মে নেমেই বুঝলাম বেশ গরম ভ্যাপসা আবহাওয়া, তবে বৃষ্টি হচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল। সেটা আরও বোঝা গেল যখন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আমাদের আগের থেকে বুক করা গাড়ির দিকে এগোতে থাকলাম। পুরো জায়গাটা বেশ বড়, সমতল এবং বৃষ্টি হয়তো কিছুক্ষণ আগেই হয়ে গিয়েছে, তার চিহ্ন ছিল সুস্পষ্ট। দূর থেকেই দেখতে পেলাম, বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তারই মধ্যে আমাদের গাড়িটা আছে, সেটা আন্দাজ করতে অসুবিধা ছিল না, কারণ, আমাদের গ্রুপ লিডার মনোময় আগে আগে হাঁটছিলেন, আমরা সকলে তাঁকে অনুসরণ করছিলাম। গাড়িগুলোর কাছাকাছি এসে মনোময় একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের গাড়ির নম্বর …”

“হ্যাঁ আসুন, এইটা। আমার নাম রাকেশ রায়। এইমাত্র কথা হল আপনার সঙ্গে।”

মনোময় ঘাড় নাড়লেন।

তড়াক করে গাড়ির ছাদে উঠে রাকেশ বলল, “আপনাদের জিনিসগুলো হাত বাড়িয়ে দিন।”

আমরা হাতে হাতে আমাদের ভারি লাগেজগুলো রাকেশের হাতে তুলে দিলাম। ও গাড়ির ছাদে সেগুলো সাজিয়ে একটা নীল রঙের প্লাস্টিক দিয়ে পুরোটা ঢেকে দিল। বুঝলাম, যে-কোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা। 

চটপট সবাই উঠে পড়লাম গাড়িতে। স্টার্ট দিল গাড়ি। কিছুটা লোকালয় ছাড়িয়ে, গাড়ি ছুটল উদ্দাম গতিতে। রাস্তাঘাট খুব সুন্দর। দু’পাশে সবুজ ঘন জঙ্গল। কেমন যেন ছেলেমানুষ হয়ে গেলাম তখন। অকারণে বেশ কিছু কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তীব্র আনন্দের প্রকাশ হলে যেমন হয়! আমার দেখাদেখি বাকিরাও যেন উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। যেন জেল থেকে সদ্য ছাড়া পাওয়া সাতজন আসামি। মনোময় বলে উঠলেন হঠাৎ, “তপনবাবু, কেমন লাগছে বলুন?” 

“দারুণ দারুণ।”

“আমার খুব চিন্তা ছিল আপনার জন্য।”

“কেন বলুন তো?”

“কেমন লাগবে তাই! তবে এটা জানতাম, এরকম সবুজ দেখলে আপনার মন ভরে যাবেই।”

ড্রাইভার রাকেশ অল্পবয়সি একটি ছেলে। মুখে তেমন হাসি নেই। কথা বলছে কেমন একটা নির্লিপ্তি বজায় রেখে। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা মনোময়ের এক ছোটবেলার বন্ধু। পার্থদা। খুব রসিক মানুষ। সেটা আরও ভালো করে বুঝেছি। পার্থদা রাকেশকে অনেক প্রশ্ন করছিলেন। রাকেশ তার উত্তর দিচ্ছিল। আমি পার্থদার ঠিক পেছনেই বসে, কিন্তু সেই প্রশ্নোত্তরপর্ব যথাযথ বুঝতে না পারলেও দুএকটা শব্দ কানে আসছিল। আমি তার মধ্যে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু পারছিলাম না। গাড়ি তখন লম্বা ঝকঝকে রাস্তা ধরে ছুটছে। দুপাশে ঘন জঙ্গল। লম্বা লম্বা আকাশছোঁয়া অসংখ্য শাল গাছ জঙ্গলের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একসময় মনোময়কে বললাম, “আচ্ছা মনোময়বাবু, এইসব রাস্তায় কি হাতি চলে আসতে পারে?”

মনোময় কিছু বলার আগেই রাকেশ গম্ভীরভাবে উত্তর দিল, “যে কোনও সময় আসতে পারে হাতি।”

আমি এটাই চাইছিলাম। রাকেশ কিছু বলুক। ও স্থানীয় ছেলে। ও কিছু বলা মানে অথেনটিক। ওরা গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত এসব রাস্তায়। কথাটা লুফে নিলাম আমি। বললাম, “কীরকম? একটু বলবে?”   

রাকেশ নির্বিকারভাবে বলল, “দূর থেকে দেখতে পেলাম, হাতি দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে আমাকেও দাঁড়িয়ে যেতে হবে।” 

মনে হল, রাকেশ তার নিজের অভিজ্ঞতাই বলল। আমি বললাম, “তাই!”

“হ্যাঁ, অবশ্যই। শুধু হাতি নয়, বাইসনও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।”

“আচ্ছা, এখন কি তাদের আসার সম্ভাবনা আছে?”

“যে-কোনো সময় আসতে পারে। তবে এখন সম্ভাবনা কম।”  

“কেন?”

“একদম দিনের বেলা বলে।”

“তাহলে কখন তাদের আসার সম্ভাবনা?”

“সাধারণত সন্ধে ছ’টার পর আমরা গাড়ি চালাই না।”

এইসব কথাবার্তা যখন চলছে, খেয়াল করছি, ধূ ধূ লম্বা রাস্তায় কোনো মানুষকে হাঁটতে দেখছিলাম না। বোধহয় স্থানীয় মানুষজন জানে, সেটা মোটেও নিরাপদ নয়।

চল্লিশ মিনিট লাগল ‘গরুমারা টি-গার্ডেন হোম-স্টে’-তে পৌঁছতে। একেবারে চা-বাগানের মধ্যে আমাদের থাকার জায়গা। অপূর্ব! চারপাশে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকাল। ফলে জলে ভিজে সবুজ যেন একেবারে জীবন্ত সতেজ। 

লাটাগুড়ির হোম-স্টে-তে আমাদের জন্য চারটে ডাবল বেডেড ঘর বুক করা ছিল। আমরা ছিলাম সাতজন। দুজন দুজন করে তিনটে ঘরে আমাদের ছ’জন ঢুকে গেলেন। আমি একেবারে শেষ প্রান্তের  ঘরটায় ঢুকে গেলাম। এটাই চেয়েছিলাম। একদম নিরিবিলি। ঘরে জিনিসপত্র ঢুকিয়ে আমার ক্যামেরাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে তখন ঝকঝক করছে রোদ্দুর। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে কিছু ছবি নিলাম আমাদের হোম-স্টে’র।

আমাদের থাকার জায়গা

আমার ঘরের দরজা খুললেই বোধহয় দশ ফুট দূরত্ব থেকে শুরু হয়েছে চা-বাগান (ছবি-২)। সবুজে আটকে গেল মন-প্রাণ। বেশ অনেকগুলো ছবি তুললাম আবার। আমার সঙ্গীদের ছবিও নিলাম। তারপর চলল আড্ডা, সেইসঙ্গে চা-বিস্কুট। স্নান সেরে নিলাম।

সাড়ে চারটে নাগাদ দুটো টোটো নিয়ে সামনেই নেয়ারা নদী দেখতে গেলাম। সূর্যাস্তের ছবি তুলব সব ঠিকঠাক, কিন্তু আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, তারপর শুরু হল টিপ টিপ করে বৃষ্টি। তবুও তুললাম মেঘাচ্ছন্ন বিষণ্ণ নদীর ছবি।

নেয়ারা নদী

খুব ইচ্ছে ছিল নদীর সামনে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়াই। কিন্তু পারলাম না বৃষ্টির কারণে।   

 ঘুম তেমন জমল না সেই রাতে, যদিও সুব্যবস্থা ছিল ভালোরকম। আসলে, সেই মুহূর্তে কলকাতায় ডেঙ্গু হচ্ছিল ভালোরকম। এখানেও সেটা নেই, কে বলতে পারে! হোমস্টের কেয়ারটেকারের তরফ থেকে গুড নাইটের ব্যবস্থা ছিল। তার ওপর আমি নিজে একটা ‘গুড নাইট’ নিয়ে গিয়েছিলাম। দুটো ইলেকট্রিক পয়েন্টে দুটো ‘গুড নাইট’ লাগিয়ে দিলাম। এতসব করেও মনে হচ্ছিল, কানের পাশে গুনগুন করছে না তো! পুরোটাই সম্ভবত মানসিক। তারই মধ্যে মাঝে মাঝে ঘুমিয়েছি, জেগেছি। রাত কাটল সেইভাবে।

উঠে পড়লাম ভোর পাঁচটা নাগাদ। হাতমুখ ধুয়ে একটু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিলাম। ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে উঠে পড়লাম সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ।

প্রথম গেলাম মূর্তি। হোমস্টে থেকে মূর্তি যাওয়ার রাস্তাটা ভারি সুন্দর। প্রথম কিছুটা জনবসতি, তারপর বাজার ছাড়িয়েই লম্বা সুন্দর পিচের রাস্তা। দু’পাশে সবুজ আর সবুজ। এই জার্নিটাই মন ভালো করে দেয়। বয়স কমিয়ে দেয়, ছেলেমানুষ করে দেয়। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার সেই রাকেশ ছেলেটি, যে গম্ভীর যথারীতি। ওর ধরনটাই বুঝি এরকম। একসঙ্গে বেড়াতে গেলে সবাইকে হাসিখুশি না দেখলে ভালো লাগে না। ভাবলাম, ওকে একটু চাঙ্গা করি।

বললাম, “রাকেশ, তুমি চারপাশটা তো ভালোই চেনো, একটু রিলে করে দিও, আমাদের ভালো লাগবে তাহলে।” কথাটা শুনতে পেল কিনা রাকেশ, বুঝলাম না। এবার সরাসরি বলেই ফেললাম, “রাকেশ, তুমি বড় গম্ভীর।” 

“কোথায় গম্ভীর?” বেশ বিরক্তি নিয়েই কথাটা বলল রাকেশ।

মুচকি হেসে আমি চুপ। দেখলাম, সকলেরই মুখে মুচকি হাসি। আসলে, একটু তাতিয়ে না দিলে খেলা জমছিল না। আমি আবারও খোঁচা দিলাম, “তুমি বকছো কেন রাকেশ?”

“কোথায় বকছি?”

বেশ ঝামটা মেরে বলল রাকেশ। আমি আবার হাসলাম চুপিচুপি। যাক, ওষুধে কাজ হবে মনে হচ্ছে। 

মূর্তিতে গাড়ি পৌঁছল সকাল দশটার কিছু পরে। মূর্তি নদীর ওপর দিয়ে একটা ব্রিজ চলে গেছে। সেটাতে কিছু রিপেয়ারিং-এর কাজ হচ্ছিল। ফলে সেই দিকটা বন্ধ থাকাতে মূর্তিতে নেমে পা ভিজিয়ে আসা গেল না। একটু হতাশ লাগল। ফলে সেই জায়গাটা ছাড়িয়ে আরেকটু দূরে এগিয়ে আমাদের গাড়ি থামল। নামলাম সকলে গাড়ি থেকে। মূর্তির ছবি তুললাম কিছু (ছবি-৪)। তবে মন ভরল না ঠিক। আশা করা যায়, ব্রিজটা ঠিক হয়ে গেলে আবার স্বমহিমায় দেখা যাবে মূর্তিকে। 

মিনিট পনেরো মূর্তিতে কাটিয়ে আমরা ঝালং-এর পথে রওনা দিলাম। রাকেশকে বললাম, “ঝালং কতদূর ভাই?” রাকেশ কিছু একটা বলল। আমি বুঝতে পারলাম না। 

ফলে বললাম, “কী বললে?” 

রাকেশ এবার বেশ চিৎকার করে কেটে কেটে বলল, “চল্লিশ কিলোমিটার।”

আমি চমকে গেলাম। ভাবলাম, আবার একটু মজা করি ওর সঙ্গে। বললাম, “ও বাবা! তুমি বকছো কেন গো রাকেশ?” রাকেশ গাড়ি চালাতে চালাতে চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “এইজন্য বললাম যাতে সকলে শুনতে পায়।” 

আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, আমি তো তোমার ঠিক পেছনেই বসে আছি, তুমি আস্তে আর স্পষ্ট করে বললে শুনতে পেতামই। তো আর বললাম না কথাটা, কারণ, লেবু তিতো হয়ে যেতে পারে!

গাড়ি ছুটছে। দু’পাশে দুরন্ত সবুজ। আমি মাঝেমাঝেই বলে উঠছিলাম, “দারুণ দারুণ!” শুধু এই সবুজের দিকে তাকিয়েই আমি অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারি। আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল, আমার কৈশোরের কথা, যৌবনের কথা – তখন বাড়ি থেকে হেঁটে কিছুটা দূর গেলেই এমন ধূ ধূ মন-কেমন করা সবুজ দেখতে পেতাম। এখন সেখানে কংক্রিটের জঙ্গল হয়ে গেছে। সবুজ হারিয়ে গেছে।

হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল করলাম গাড়ির ভেতরেই। আমার পাশে যে ভদ্রলোক বসেছিলেন, তিনি আস্তিনের কাছে ফুলহাতা সরিয়ে নিজের হাতঘড়িটা দেখে নিলেন একবার। দুতিন মিনিট পরে আবার। মনে মনে ভাবলাম, এই তো দুমিনিট আগেই তিনি ঘড়ি দেখলেন, আবার এখন কেন! তাহলে বোধহয় সময়টা খেয়াল করেননি তখন। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তিন মিনিট পরে আবার …। ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য করল আমাকে। আমি তখন গুনতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পরেই বুঝলাম, আমার কাউন্ট করার কাজটা চালিয়ে যাওয়া ঠিক মনে হল। কারণ, দু’তিন মিনিট বাদে বাদেই ভদ্রলোক জামার আস্তিন সরিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে চললেন। আমার হিসেবে ভদ্রলোক ওইভাবে মোট দশ বার ঘড়িতে সময় দেখেছিলেন গাড়িতে বসে। কিন্তু রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারিনি। এইসব তুচ্ছ ছোটখাটো ঘটনা ভ্রমণকে আরও জীবন্ত এবং মজার করে তোলে!

ঝালং-এ এলাম যখন তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। যে জায়গায় আমাদের গাড়িটা থামল, সেটাকে বলে ‘গাইরিবাস ভিউ পয়েন্ট’ (Gairibas View Point)। 

একটা খাদ নেমে গিয়েছে নীচে। প্রায় ১০০-১৫০ মিটার কিংবা তারও বেশি হবে গভীরতা। আর সূক্ষ্ম সুতোর মত দেখা যাচ্ছিল, কুলুকুলু করে বয়ে যাওয়া জলঢাকা নদী। সেই সুতোর দৈর্ঘ্য কত হতে পারে, কে বলতে পারে! আমি তার শুরুটা দেখতে চাইছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। আমার মনে এল সেই অপূর্ব উক্তি – “নদী, তুমি কোথা হইতে আসিতেছ? নদী উত্তর করিল, মহাদেবের জটা হইতে।”

 আমি জুম করে নদীর ছবি নিলাম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে।

জলঢাকা নদী
জলঢাকা নদী

ছবি তুলে আশ মিটছিল না। মনে হচ্ছিল, যতগুলো ছবি তুলেছি, তার একটাও আমার মনের মত হয়নি, এবার যেটা তুলব সেটা ভালো হবে। এইভাবে প্রায় সাত-আটটা ছবি তুললাম। মনোময়কে  দেখলাম, নদীর ছবি ভিডিও করে কিছু বলতে শুরু করেছেন। তার মধ্যে আমরাও ঢুকে গেলাম।

কাছাকাছি একটা দোকানে বসে আমরা চা-বিস্কুট খেলাম কিছুক্ষণ। প্রায় আধঘন্টা বাদে আমরা রওনা দিলাম ‘বিন্দু।’ ঝালং থেকে বিন্দুর দূরত্ব অনেকটা। তবে এই দুইয়ের মধ্যবর্তী পথ এত মনোরম যে তা যথাযথ ভাবে  ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই অসম্ভব। তবুও চেষ্টা করি, যদি ভবিষ্যতে নিজের লেখাটা পড়ে সেই ছবিটা যাতে মনে ভেসে ওঠে, এই আশায়। 

 ঝালং থেকে বিন্দুর পথ অপূর্ব।

ঝালং থেকে বিন্দুর পথে

পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা। সমতল বলে তেমন কিছু নেই। কখনো গাড়ি উঠে যাচ্ছে উঁচুতে, আবার কখনো-বা নেমে যাচ্ছে নীচুতে। আর একটু এগোতেই গাড়িটা শার্প টার্নের মুখে পড়ছে। ড্রাইভার রাকেশ এমনিতেই কথা বলে কম, তার ওপর এমন রাস্তা হওয়াতে একেবারে নির্বাক হয়ে একাগ্র ভাবে গাড়ি চালিয়ে চলেছে। আমাদের সকলের দৃষ্টি তখন গাড়ির বাইরে। আমি তো জানলার সামনে বসে আছি। মাঝেমাঝেই  কিছু কিছু জায়গা চলে আসছে যেখানে উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে জলপ্রপাতের মত ঝর্না নেমে আসছে। রাস্তাঘাট জলে থৈ থৈ করছে। মনে হচ্ছিল, যেন কিছুক্ষণ আগেই মেঘ-ভাঙ্গা তুমুল বৃষ্টি হয়ে গেছে। অথচ তা হয়নি কিন্তু। আসলে বর্ষাকালে পাহাড়ের রূপ বুঝি এমনটাই হয়।

আমি মাঝে মাঝেই রাকেশকে বলে উঠছিলাম, “কীগো রাকেশ, গাড়ি থামাবে না? একটু ছবি তুলব যে!” রাকেশ নির্বিকার ভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো আওয়াজ নেই মুখে। একটু এগোতেই দেখা যাচ্ছিল, পাহাড়ের নীচু অংশ দিয়ে জল বেরিয়ে চলেছে প্রবলভাবে। মনে হচ্ছিল, গোটা পাহাড়টার সর্বাঙ্গে ফুটো হয়ে গেছে। এইভাবেই কি কোনও একসময় পাহাড়ে ধ্বস নামে! থেকে থেকেই গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার জন্য মনোময়কে তাড়া দিচ্ছিলাম, “কী হল টিম লিডার? আমরা কি গাড়ি থেকে নেমে একটু ছবিটবি তুলতে পারব না?” আমার অসন্তোষ বেড়ে উঠছিল ক্রমশ। একসময় বিরাট একটা নদী এসে পড়ল, একটা ব্রিজ সেইসঙ্গে। নদীর নাম ‘ঝালং।’ সে দুর্বার গতিতে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের ওপর। ওরকম শত শত পাথরে জলের আছড়ে পড়ার আওয়াজ একসঙ্গে হওয়াতে যেন একটা ঝড় বয়ে চলছিল জায়গাটাতে। আমার ভেতরটা খান খান হয়ে যাচ্ছিল। এবার পরিত্রাহি চিৎকার আমার, “এখানে থামতেই হবে গাড়ি।”

শান্ত স্বভাবের মনোময় বললেন, “রাকেশ, এখানে গাড়ি থামাবে কিছুক্ষণ।”

 তাই হল। গাড়ি থামল। ছবি নিলাম অনেক।

ঝালং নদী

অনেকেই ছবি তুলল তখন। আমাদের মধ্যে অনির্বাণ সর্বকনিষ্ঠ। ও একটু কায়দা করে নিজের ছবি তুলতে ভালোবাসে। ওর অনুরোধ রেখে মাঝে মাঝে কয়েকটা ছবি তুলে দিলাম ওর। ওদিকে তাড়া দিচ্ছে, উঠে পড়ুন সবাই গাড়িতে, নাহলে দেরি হয়ে যাবে। আমার ইচ্ছে করছিল না জায়গাটা ছেড়ে আসতে। তবুও ছেড়ে যেতে হয় সবকিছু! তাই করলাম, উঠে পড়লাম গাড়িতে। 

সেই একই রাস্তা। পাক খেতে খেতে ওপরে উঠছে। জায়গায় জায়গায় সেই একই দৃশ্য – পাহাড়ের গা দিয়ে কখনও জলপ্রপাতের মতন ঝর্ণা নামছে, রাস্তা ভেসে যাচ্ছে জলে। তবু একতিলও একঘেয়েমি নেই। খুব ইচ্ছে করছিল, গাড়ি থামিয়ে পা ডুবিয়ে হেঁটে চলি রাস্তা দিয়ে। আমার নিজের গাড়ি হলে তাই করতাম। কিন্তু ‘পড়েছি যবনের হাতে, খানা খেতে হবে একসাথে’। এক দুরন্ত ভালোলাগা নিয়ে আবেগের বশে মাঝে মাঝে বলে উঠছিলাম – “বাহ বাহ! অপূর্ব!” কিংবা কখনো বলে উঠছি “আরিব্বাস!” এছাড়া আর কোনো শব্দ বেরোচ্ছিল না আমার মুখ দিয়ে। 

‘বিন্দু’-তে এলাম যখন ঘড়ি দেখতে ভুলে গেলাম। রাস্তার একপাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল আমাদের। দূর থেকে ‘বিন্দু ব্যারেজ’ দেখা যাচ্ছিল। আমাদের দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির উলটোদিকে রাস্তার ধারে একটা দোকান ছিল। দোকানের একটি মেয়ে বলে যাচ্ছিল, “স্যার, আমাদের এখানকার চকলেট খেয়ে যান।” পাশে দাঁড়ানো আরও একটি মেয়ে। ওরা ‘স্থানীয়’ বোঝা গেল। চকলেট ছাড়া দোকানে আরও কিছু ছিল। এটাই ওদের ব্যবসা সম্ভবত। আমাদের মধ্যে একজন চকলেট কিনল ওদের কাছ থেকে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে এগিয়ে চললাম ক্যামেরা নিয়ে। দোকানের ঠিক পেছনদিকে দুরন্ত গতিবেগে বয়ে চলেছে বিন্দু নদী।

বিন্দু নদী
বিন্দু ব্যারেজ

পাগল করা দৃশ্য! আমি আরও এগিয়ে চললাম সামনে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নদীর কাছে যাওয়া যায়, সেটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। বিন্দু ব্যারেজের খুব কাছাকাছি তখন। দূর থেকে ছবি তুলেছিলাম ব্যারেজের, এখন আবার কাছ থেকে তুললাম।

ছবি তুলতে তুলতে বারবারই মনে হচ্ছিল, নদীর এই রূপ যা আমি দেখছি, নদীর এই গর্জন যা আমি শুনছি ভয়ঙ্কর রকম, তা কি সত্যিই আমি ক্যামেরায় ধরতে পারছি, ধরা কি যায় আদৌ! বোধহয় পারছিলাম না। আর পারছিলাম না বলেই বারবার চেষ্টা করছি আবার ছবি তুলতে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে। কিন্তু তবুও কেমন যেন একটা অতৃপ্তি থেকে যাচ্ছিল। আর, সেই অতৃপ্তি নিয়ে আমি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম নদীর দিকে ফিরে। তারপর ফেরার পথ ধরলাম। আমি একা তখন, আমার চারপাশে কেউ নেই। হয়তো তখন তারাও ছবি তুলতে ব্যস্ত, কিংবা অন্য কোনো কাজে। ভেতরে আমার এক চরম অতৃপ্তি আর ব্যর্থতা। পথের দুধারে স্থানীয় মেয়েরা পুরুষরা তাদের দোকান সাজিয়ে বসেছে। কেউ বিক্রি করছে চকলেট, কেউ বা কাপড়ের ব্যাগ কিংবা শাল অথবা বিভিন্ন রঙের গামছা। আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে দেখলাম, তারা সেইসব জিনিস কিনতে ব্যস্ত। মনে হল, তারা আমার তুলনায় অনেক ভালো আছে, সুখে আছে। আমার মতন যন্ত্রণা আর ব্যর্থতা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছেন না নিশ্চয়ই! 

হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে এসে গেলাম। সেখান থেকেও বিন্দুর অতি-গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম ভীষণরকম। মনে হচ্ছিল, ও আমাকে ডাকছে। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলাম, তারপর ক্যামেরা অফ করে দিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। এই যন্ত্রণা আমি আর নিতে পারছিলাম না। গাড়িতে উঠে বসে থাকলাম চুপ করে। টিম লিডার মনোময় এসে আমাকে বসে থাকতে দেখে বললেন, “কেমন দেখলেন বিন্দু?” আমি মৃদু হেসে বললাম, “ভালো।”

এবার লাঞ্চ করতে হবে। বিন্দুতে আসার পথে দেখে এসেছি একটা রেস্টুরেন্ট। ‘অ্যাপেল স্টোন রেস্টুরেন্ট’। গাড়ি থামল সেখানে। তখন প্রায় দেড়টা-পৌনেদুটো বাজে। রাস্তা থেকে তিন-চার ধাপ সিঁড়ি ভেঙে ভেতরে ঢুকলাম। অত্যন্ত সুসজ্জিত ভেতরটা, কিন্তু ভয়ঙ্কর একটা আওয়াজ কানে আসছিল। মনে হচ্ছিল, রেস্টুরেন্টের ভেতরে কোথাও কিছু একটা হচ্ছে। বেশ খোলামেলা চারপাশটা। শুধু তিন-চার ফুট উচ্চতার কংক্রিটের দেওয়াল ঘিরে আছে জায়গাটা। সেই দেওয়ালের গা দিয়ে সারি সারি টেবিল পাতা। প্রত্যেক টেবিলের দুপাশে দুটো দুটো করে চারটে চেয়ার লাগানো। বাইরে একরকম ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে পাহাড় দৃশ্যমান। আমি শেষের চেয়ারটায় বসলাম, যেখান থেকে পাহাড়ের ভিউটা পুরোপুরি দ্যাখা যায়। মুখ বাড়িয়ে তলায় তাকিয়ে দেখি, উত্তাল বিন্দু নদী রেস্টুরেন্টের একদম গা দিয়ে বয়ে চলেছে প্রবলভাবে। এতক্ষণে বোঝা গেল সেই ভয়ঙ্কর আওয়াজের উৎস। আমি আবার কিছু ছবি ধরে রাখলাম আমার ক্যামেরায়। সামনেই নজরে এল বিরাট এক আপেলের চেহারার পাথরের খণ্ড দাঁড়িয়ে রয়েছে। দৈত্যের মতন।

অ্যাপেল স্টোন

কত যুগ যুগ ধরে এই পাথর এভাবে দাঁড়িয়ে, কে বলতে পারে! রেস্টুরেন্টের নামকরণ নিশ্চয়ই এই পাথর থেকে হয়েছে। রেস্টুরেন্টের মালিককে বললাম, “এই পাথর কবে থেকে এরকমভাবে দাঁড়িয়ে?” সে আমার  প্রশ্ন শুনে প্রায় হেসে গড়িয়ে বলল, “আমার বাবা কিংবা ঠাকুরদা কিংবা …” কিছুই তেমন বলতে পারল না সে। বোধহয় বলা যায় না! 

ভারি মজার ব্যাপার ঘটল একটা। রাকেশ হঠাৎ ভয়ঙ্কর তৎপর হয়ে এক বোতল খাওয়ার জল আমার টেবিলে রেখে হেসে বলল, “স্যার, এটা আপনার জন্য।”

বুঝলাম, পাথর ক্ষয়ে যায় জল পড়ে পড়ে, আর, মানুষ তো কোন ছার! আমার জয় সম্পূর্ণ হল। রাকেশ পরাজিত অথবা বিজয়ী। কারণ, আসল ‘রাকেশ’ বেরিয়ে পড়েছে। আমি দারুণ হেসে বললাম, “থ্যাঙ্কিউ রাকেশ।”

রাকেশ হেসে মাথা নাড়ল। বেশ তৃপ্তি করে লাঞ্চ সারলাম।

আমাদের ট্রিপের শেষ আইটেম ছিল ‘রকি আইল্যান্ড’ অর্থাৎ পাথুরে দ্বীপ। আসলে রকি আইল্যান্ড একটা পাহাড়ি গ্রাম। মূর্তি নদী পাহাড় থেকে আছড়ে পড়েছে এখানে। বিশাল বড় বড় পাথরের খণ্ড নদীর মধ্যে এলোমেলোভাবে ছড়ানো। ছোটখাটো পাথর নয়, বরং বলা যেতে পারে বড়সড় সব বোল্ডার। কয়েক ঘণ্টা আগে এই মূর্তিকেই দেখে এলাম শান্ত, নিস্তরঙ্গ। এখানেও একটা ব্রিজ আছে। সেখান থেকেও ছবি নেওয়া যায়। ব্রিজের পাশ দিয়ে নদীর কাছে নেমে যাওয়ার একটা রাস্তা আছে। সেখানে গিয়েও কিছু ছবি তোলা হল।

রকি আইল্যান্ড

চারপাশে বেশ ঘন বসতি, দোকানপাট। আমরা একটা দোকানে ঢুকে চা খেলাম। তারপর দোকানের পেছন দিকটায় গিয়ে আবারও কিছু ছবি তুললাম।

রকি আইল্যান্ড- দোকানের পেছন থেকে

 ফেরার পথে গাড়িতে বসে মনোময় বললেন, “বলুন তপনবাবু, কেমন এনজয় করলেন?”

“দারুণ। খুব ভালো।”

“কোন জায়গাটা আপনার সবথেকে ভালো লাগল?”

“আপনার কোন জায়গাটা বলুন।”

“আমার রকি আইল্যান্ড। আমি আবারও আসতে পারি এখানে।”

“আমার বিন্দু নদী এবং গৈরিবাস ভিউ পয়েন্ট থেকে বিন্দু যাওয়ার রাস্তা। আরও পাঁচ বার আসতে পারি,  তবে অবশ্যই বর্ষায়।”

মনোময় হেসে বললেন, “আপনি তো একটু দ্বিধায় ছিলেন, বর্ষায় এখানে আসার ব্যাপারে, জঙ্গল সাফারি নেই …”

“ঠিক বলেছেন। আমার ধারণা পালটে গেছে। সত্যিই বর্ষায় না এলে এইসব জায়গার খোলতাই রূপ দেখা সম্ভব নয়। থ্যাঙ্কস ফর দ্য ট্রিপ।”

 

 
৫ জানুয়ারী ১৯৫৩ কলকাতায় জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পাঁচ বছর পড়াশোনা। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে পি এইচ ডি। ১৯৯১ – ২০০২ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে তারাতলার ইন্সটিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টে অধ্যাপনা। ২০০২ – ২০১৩ কলকাতার নেতাজীনগর ডে কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অধ্যাপনা। তারপর প্রথাসম্মত অবসর। অবসরের পর পাঁচ বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট লেকচারার। কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি শুরু। প্রথমদিকে কবিতা, তারপর নিয়মিত গল্প লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, বইয়ের রিভিউ। এখন পুরো সময়টা কাটে সাহিত্য চর্চায়। ‘কণিকামাত্র’ এবং ‘অণুরেণু’ অণুগল্পের দু’টি সংকলন। ‘গল্প পঞ্চদশ’ পনেরোটি ছোটোগল্পের একটি সংকলন। এছাড়া খুব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি উপন্যাস ‘কোভিডের দিনগুলি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *