পাঠপ্রতিক্রিয়া: বই: মাঠরাখা

পাঠপ্রতিক্রিয়া: 'মাঠরাখা'

গল্প সংকলন: মাঠরাখা
লেখক: হামিরউদ্দিন মিদ্যা
প্রকাশক: সোপান
মূল্য : ২৫০ টাকা

কিছু লেখক থাকেন, যাঁরা ভীষণ মেপে শব্দ ব্যবহার করেন। অনেকটা রুল, কম্পাস দিয়ে আঁকার মতন। শব্দ দিয়ে মাঝের জায়গাটুকু ধরার চেষ্টা। এখানে একটু ফাঁক থেকে গেল, হয়তো মুহূর্ত নির্মাণ থেকে চলকে একটুখানি মুক্তোর আভা পথহারা হল। তাঁরা ভীষণ সাবধানী। আরেক দল লেখক আছেন, যাঁরা, ধরুন একটা থাম আঁকবেন। প্রাচীন কোনো এক জমিদারবাড়ির ক্ষয়ে যাওয়া ইট বেরিয়ে যাওয়া দাঁত বের করা একটা থাম। জায়গায় জায়গায় চুন পলেস্তরা খসে গেছে, নাম না জানা ফুল গজিয়েছে থামের পাদদেশে। ওঁরা, মানে যাঁরা ঠিক স্কেল নিয়ে মেপে আঁকেন না, তাঁরা ওই থামটুকু আঁকবেন না। আঁকবেন বাকি জায়গাগুলো। ওই ধ্বসে যাওয়া প্রাচীন ইমারত, নাম না জানা বেগুনি ফুল, থামের প্রগাঢ় ছায়া, থামের গায়ে দুষ্টু বাচ্চার এঁকে যাওয়া কাটাকুটি খেলাগুলো। এতে করে কী হয়, যেটা আঁকলেন না শিল্পী, সেটুকু বাকি দৃশ্যগুলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। সেটুকু ছাড়া বাকি সবটুকু হয়ে যায় গৌণ। ওই মূক থামটুকু ছাড়া অন্য কোনদিকে দ্রষ্টার নজর যায় না আর।

হামিরুদ্দিন মিদ্যা ওই দ্বিতীয় ঘরানার শিল্পী। তিনি আঁকছেন, কিন্তু আঁকছেন না ঠিক। যেটুকু জায়গা ভরাট করলেন না, গল্প ঠিক সেইখানে – নীচু জমিতে গড়িয়ে আসা জলের মতন জমা হচ্ছে।

আরও অবাক করা কাণ্ড হল, বইয়ের শুরুতেই লেখক স্বীকারোক্তি করছেন, তিনি ঠিক ওই উদাসী লিখেই খালাস লেখক নন। প্রতিটি গল্পের পর অপ্রকাশের আক্ষেপ তাঁকে কুরে কুরে খায়। প্রতি গল্প তিনি অসংখ্যবার কাটাছেঁড়া করেন, বাদ যায় না প্রকাশিত গল্পও। গল্পের নামকরণ পর্যন্ত বদলে দিতে কুণ্ঠিত হন না খুঁতখুঁতে শিল্পী। তখন বোঝা যায় যেটুকু আলগোছে বলে চলা অরূপকথা বলে মনে হচ্ছিল, তার প্রতি সিঁড়িতে লেগে আছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসেবী শিল্পীর পরিশ্রমী মেধা ও মনন। মাঠরাখা বইটা ঠিক এই কারণেই আলাদা। স্বতন্ত্রতায় উজ্জ্বল, গল্পগুলো ছেনি হাতুড়ি দিয়ে খোদাই করে আরোপিত নয়, বরং মাটির রং রস রূপ শোষণ করে অঙ্কুরিত।

মোট আঠেরোটি গল্প আছে বইটাতে। সবকটি গল্পের প্রেক্ষাপট বাংলার গ্রাম। সেখানকার ক্রমশ বদলে যাওয়া অর্থনীতি, সামাজিক, আত্মিক সমীকরণ। প্রথমেই আসা যাক গল্পগুলোর ভাষায়। লেখক নিজে গ্রামে বড় হয়েছেন। তাই লেখকের চরিত্রের ভাষাও গ্রাম্য। মাটি থেকে উঠে আসা। আর যেটা নিজের চোখে দেখা, নিজের কানে শোনা, তার মধ্যে একধরনের সহজ অনাবিল সত্য থাকে। মানে পড়ে বোঝা যায়, আচ্ছা, ব্যাপারটা তো এরকমই। গল্পগুলোতে সেই সহজ সত্যটুকু আছে – বোঝা যায় পড়তে পড়তে।

কিছু কিছু শব্দ শহুরে কানে অনভ্যস্ত লাগে। যেমন বইটার নামকরণ যে গল্পটার নামে, মাঠরাখা। চাষের জমিতে পাহারাদার যিনি, তাঁকে মাঠরাখা বলা হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি জানতাম না। কিন্তু গল্প পড়ার পরে বুঝতে একটুও অসুবিধে হয় না। এরকম অনেক শব্দ আছে গল্পগুলোয়। যেমন হেঁড়ল, চুলোশাল, জলকুলি, ধাড় ইত্যাদি। কিন্তু শব্দের ব্যবহার থেকে অর্থ বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না। পাঠে ব্যাঘাত ঘটে না।

একটা লক্ষ করার মতো ব্যাপার গল্পগুলোতে আছে। গ্রাম্য পটভূমিতে লেখা গল্পগুলোর একটা সাধারণ প্রবণতা থাকে দারিদ্র্যকে মহান করে দেখানোর। এই বইয়ের সমস্ত চরিত্রই প্রান্তিক, সেখানেও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ আছে, কিন্তু চরিত্ররা মূলত গরীব। দারিদ্র্যের বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা আছে। ছোঁয়া যায়, চোখে দেখা যায়, অনুভব করা যায় এমন মরমী বর্ণনা। কিন্তু কোনও গল্পেই চরিত্রের আলোছায়া থেকে দারিদ্র্য বড় হয়ে দেখা দেয়নি। লেখক গল্প বলেছেন, ইস্তেহার লেখেননি। এমনকি মেহেরুন্নেসার ভারতবর্ষ গল্পেও সর্বহারা মহিলার অসহায়তাই মূল হয়ে ওঠে। যখন লেখক লেখেন, “…খেজুরগাছের নীচে ঝোপঝাড়ের তলায় চাপাপড়া কবরের মাটি ফুঁড়ে, কয়েকশো বছরের পুরনো দলিল হাতে উঠে আসবে বুড়ো করম আলী।” তখন একের অসহায়তা ছড়িয়ে পড়ে আপামরের মধ্যে। বিন্দুতে ফুটে ওঠে সিন্ধুর ব্যঞ্জনা।

সামগ্রিকভাবে গল্পগুলোর আরেকটা বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে লক্ষ করার মতো। পাঠককে চমক দেওয়ার মতো বহু উপাদান রয়েছে গল্পে। কিন্তু লেখক সেই রাস্তায় হাঁটেননি। অনেকটা কথকথার মতো করে বলা গল্পগুলো। ধরুন করোনা নিয়ে গল্প আছে, ভিনরাজ্যে শ্রমিক চলে যাওয়ার গল্প আছে, হাতের বদলে ফসল তোলার মেশিনের আগমন তো একাধিক গল্পে রয়েছে, এনআরসি রয়েছে, আবার নিছক মানবিক স্খলন কী নিখাদ প্রেমের গল্পও আছে। কিন্তু কোনো গল্পই লেখক উচ্চকিত লয়ে বাঁধেননি। স্থূল শরীর যেমন নেই, চড়া আবেগও নেই। সেজন্যই গল্পগুলো একই সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য এবং মেদুর হয়ে ওঠার অবকাশ পেয়েছে। পড়ার পর যে বিস্ময় জাগে সেটুকু মুগ্ধতা, উত্তেজনার সুড়সুড়ি নয়।

যেমন বিশেষভাবে নিশিকাব্য গল্পটার কথা বলা যায়। গল্পের নামে কাব্য আছে, কিন্তু গল্পের শব্দচয়ন একেবারে গদ্যের। আচ্ছা, গদ্য দিয়ে কি কাব্যময়তা ফোটান যায় না? নিশিকাব্য ঠিক সেটাই করেছে। একদম সরলরৈখিক চলনে গল্প চলেছে, অপ্রতুল আটপৌরে শব্দের ব্যবহার, একটুও ঘটনার ঘনঘটা নেই, সাধারণ একটা রাতের কথা। ছেলে বড় হয়েছে, জমি বুজিয়ে বাগান করতে চায়। মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ আর একজন মানুষী রাতের অন্ধকারে জমিতে এসে দাঁড়ায়, নিছক আর পাঁচটা দিনের মতোই। একটা শিশিরভেজা চ্যাং মাছ হড়কাতে হড়কাতে এগিয়ে যায় কাদাজমির দিকে। সেখানে থইথই জ্যোৎস্না। আসলে মানুষ অলৌকিক বলতে প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম বোঝায়। অথচ এই নিছক লৌকিকতার ভরা দুনিয়াটা ঠিক কতটা অলৌকিক সুন্দর, দেখতে ভুলে যায়। নিশিকাব্য সেই অলৌকিক গল্প শোনায়। সেই অলৌকিকতার নাম মানুষ মানুষীর চিরন্তন কাছে আসা, মুগ্ধ হওয়া আর মর্ত্যের জমিতে নেমে আসে অমর্ত্যের নিশিকাব্য। বহুদিন মনে থাকবে গল্পটা।

বই শুরুর গল্প ডাকপুরুষ। পুজোর সময় মাঝে মাঝে একটা কথা খুব শোনা যায়। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ডাকপুরুষ গল্পটা ওইরকম একটা গল্প। মুসলিম প্রধান গ্রামেও বছরের পর বছর নল পোঁতার উৎসব হয়। হঠাৎ নতুন ইমাম এসে বিধান দেন এসব শেরেকি গুনাহ। স্পষ্টতই যে কোনও সামাজিক পরিবর্তনের অনেক আগে থাকে পরে থাকে। এই গল্পেও আছে, কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি করে আছে সেটা ওই চিরন্তন দ্বন্দ্বটা। কালোর সঙ্গে আলোর। কালো মেঘের কোলে রুপোলি রেখার মতোই গল্প শেষ হয়। সবচেয়ে বড় কথা, বিষয় থেকেই স্পষ্ট কী ভীষণ স্পর্শকাতর! অথচ লেখক অদ্ভুত দক্ষতায় কোনও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হননি। তিনি সাহিত্যিক, পক্ষ নেওয়া তাঁর সাজে না। কিন্তু কী নির্মোহভাবে তিনি দেখালেন “এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই।”

এভাবেই একের পর এক এসেছে নানান আঙ্গিকের গল্প। যেমন কবর, যেখানে অজ্ঞাতপরিচয় এক কবর হঠাৎ করে জেগে উঠল মোষমরার চরে। তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল, ধর্মীয় ভয়, শাসনতন্ত্রের অবস্থান আর এক অলীক মানুষের গল্প। যে এই ভিড় থেকে অনেক অনেক দূরের। হেঁড়ল গল্পে হেঁড়ল এক প্রতীক। চাঁদনী রাতে ছাগলছানা নিয়ে পালিয়েছে হেঁড়ল। তারপর তাকে খুঁজতে গিয়ে বারবার বদলে যায় শিকারী আর শিকারের সংজ্ঞা।

কস্তুরী এক অদ্ভুত সুন্দর গল্প। শিবদাস হাটের সাধারণ হাটুরে, সে যেখানে বসে তার ঠিক পাশে হঠাৎ করেই এক মা আর মেয়ে এসে হাজির। কস্তুরী বিক্রি করবে তারা, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গন্ধ। বিশেষ বিশেষ পুরুষ হরিণের শরীরে মিলনের সময় এই গ্রন্থি উৎপন্ন হয়। কখনো কখনো সে উন্মত্ত হরিণ নিজেই বুঝতে পারে না সেই জ্যোৎস্নাঘ্রাণের উৎস। পাগল হয়ে সারা বনময় ছুটে মরে। তরতাজা যুবক শিবদাস দেখে সেই মেয়েকে, সেও তাকে দেখে। উপবনের গন্ধ পায় তরুণ শিবদাস। তারপর কী হলো সেই নিয়েই গল্প। বইটার অন্য অন্য গল্পের মতোই কী অসাধারণ সহজ চলন গল্পের। ছোট ছোট বাস্তবের আঁচড়ে অদ্ভুত অদ্ভুত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মুহূর্ত উঠে আসে। অথচ গোটা গল্প সেই অতীন্দ্রিয় কস্তুরীর মাতাল করা সুবাসে মাতোয়ারা। আর শেষটুকুও এতো সহজ, যেন এটাই তো হওয়ায় ছিল। অথচ ঠিক সেই কারণেই গল্পটা থেকে অনন্য সুবাস আসে।

ডালিম গাছের ছায়া আদতেই ছায়ার গল্প, মায়ার গল্প। মাঝি গল্পে আবার উঠে আসে বংশপরম্পরায় চলে আসা নদীর সঙ্গে মাঝির নাড়ির যোগ। পীর সাহেবের আস্তানা গল্পটা অনেকটা প্রথম গল্প, মানে ডাকপুরুষ – এর কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই হৃদয়ের সঙ্গে আচারের যোগ, এবং বিয়োগ। জলকুলি গল্পটা আবার একেবারে অন্যরকম। এক অভিমানী পুত্রের সঙ্গে তার পিতার সম্পর্ক। যে অভিমানী পুত্র ঘর ছেড়ে সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, গল্পের শেষ লগ্নে পিতার সঙ্গে তার এক অদ্ভুত সম্পর্কের ছবি এঁকেছেন লেখক।

নাবাল ভূমি আবার ক্রমশ বদলে যাওয়া গ্রামীণ অর্থনৈতিক চিত্রের দলিল। সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মেই কায়িক শ্রমের জায়গা নেয় যন্ত্র। বিঘ্নিত হয় মানুষের জীবিকা, বদলে যেতে থাকে তার সঙ্গে লেগে থাকা সম্পর্কের সমীকরণ গুলোও। পোষ্য শব্দটার মধ্যেই একটা নির্ভরতার প্রতিধ্বনি আছে। অথচ কে কার ওপর নির্ভর প্রায়শই গুলিয়ে যায়। বৃদ্ধা ঠাকুমা তার পোষ্যদের নিয়ে একা থাকে। তাঁকে একা রাখা সত্যিই সমস্যার, অথচ তিনি ভিটে ছেড়ে ছেলেদের সঙ্গে গিয়ে থাকতে রাজি নন। তিনি সেখানে যান তো তাঁর পোষ্যদের কী হবে? আপাত সরল এই গল্প আসলে একটুও সরল নয়। সম্পর্কের জটিল আবর্তের মধ্যে বহু প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। কিন্তু দিনের শেষে পোষ্য কাছে আসারই গল্প। এমন গল্প পড়লে মন ভালো হয়ে যায়।

ফসলের ঘ্রাণ অনেকটা নাবাল ভূমি ঘরানার গল্প। কিন্তু গল্পের শেষ আলোময়। জোনাক জ্বলে উঠবে করোনাকালীন নিরাপত্তাহীনতার গল্প। করুণ। অসহায়। পড়তে পড়তে মনে হবে, বড্ড চেনা, ওই দিনগুলো আমরা সবাই পেরিয়ে এসেছি। উড়োকাক সংঘর্ষের গল্প। বেঁচে থাকার জন্য দাঁতে দাঁত চিপে গরীব পাতুনি ব্যবসাদার শিবদাস কিভাবে লড়াই করে তার গল্প। অথচ গল্পের পুরোটা ‘লড়াই লড়াই লড়াই’ নয়, কুরুক্ষেত্রের মধ্যেও মরুদ্যান থাকে। পাশাপাশি অবস্থান করে সংঘর্ষ আর শিউলি। তাই গল্পের শেষ ‘একবিন্দু আলো’ দিয়েই হয়।

ফাঁস একটা ভীষণ ভীষণ সুন্দর প্রেমের গল্প। প্রেমের একটা মজার ব্যাপার আছে। যতটুকু না বলা রয়ে যায়, সেটুকু বড্ড বেশি বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। ফাঁস গল্পটাও সেরকম। যতটুকু না বলা রয়ে গেল গল্পটার মধ্যে, সেটাই আসলে গল্পটা। আসলে ব্রহ্ম আর কবিতার মতো প্রেমও তো অনুচ্ছিষ্ট! লেখক বড় দরদ দিয়ে লিখেছেন সেটুকু, অথবা লেখেননি।

অবলা ছোট্ট একটা গল্প। কিন্তু একেবারে ঠাসবুনোট। একজন মা হতে চায়, হতে পারেনি। আরেকজন চার মেয়ের জননী। মা দুঃখ কষ্টের গল্প করে, কিন্তু নিজের সন্তানকে তুলে দিতে পারে না অন্য মায়ের কোলে। তাদের সামনে একটি ছাগলের বাচ্চা বিয়োয়। এইটুকুর মধ্যে ছোট্ট পরিসরে উঠে এসেছে অতিকায় অভিঘাত। অবলা বইটার অন্যতম শক্তিশালী গল্প।

চাষের জমিতে রাতের পাহারাদার মাঠরাখা। রাতে সমস্ত উর্বরা মাটির সে একচ্ছত্র সম্রাট। অথচ দিনের বেলায় তার সামনেই মাটির বুক থেকে সোনালী শস্য তুলে নিয়ে যায় জমির মালিক। আসলে এই বইয়ের সব গল্পই সহজ, আবার সহজ নয়ও। মাঠরাখাও ঠিক সেরকম একটা গল্প।

একদম শেষে আসি বইয়ের প্রচ্ছদে। প্রগাঢ় নীল প্রচ্ছদ, তার উপর এক বিস্মিত বালক দাঁড়িয়ে আছে। অতিদূরে ওই ছোট্ট একখণ্ড জমি দেখা যায়। মাঝে শূন্যতা। মাথার ওপর শাদা চাঁদ উঠেছে। বিস্মিত বালকের এক হাতে লাঠি, আরেক হাতে টর্চ, পায়ের তলায় ঘাসজমি। হয়তো ও কস্তুরীর শিবদাস, হয়তো ফাঁসের তমিজ ভাই, হয়তো বা ডাকপুরুষের হায়দর আলি অথবা হয়তো সেই বালক কবর গল্পের সেই কঙ্কালসার লোকটা, যে কবরের পাশে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। যার কান্না কেউ শুনতে পায় না।

অথবা ওই বালক আমি, আমরা। যারা মাঠরাখা বইটার আঠেরোটি গল্প পড়ে হারিয়ে যেতে চাইবে কোনো এক নাবাল জমিতে, কস্তুরী নাভির গন্ধে মাতাল হয়ে গিয়ে বসবে কোনো এক ডালিম গাছের ছায়ায়, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাবে কাক। মেহেরুন্নেসার ভারতবর্ষের অকুণ্ঠ আকাশে তখন লক্ষ জোনাকির মেলা।

নয়ন বসুর জন্ম কলকাতায়, পেশায় আয়কর আধিকারিক। নেশায় পাঠক, শ্রোতা, দ্রষ্টা এবং একদম শেষে লেখালিখি। বেড়াতে যেতে ভালোবাসেন এবং জানলা দিয়ে পাহাড় দেখা গেলে হোটেল থেকে বেরোতে চান না। ভূতে বিশ্বাস করেন না, কিন্তু ভয় পান। ভয় পান উচ্চতা, প্রিয়জনের দূরত্ব এবং পাঁচ বছরের সন্তানের কান্না। প্রিয় খাবার বিরিয়ানি, প্রিয় মানুষ যারা বিরিয়ানি খাওয়ান। অপছন্দ মিথ্যে কথা। পছন্দ পুরোন আমলের বাড়ি, মেঘ আর ঘুম। প্রকাশিত বই একটি, নাম জামিলা। জীবনের লক্ষ্য চোখ বুজবার আগে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতাটি লিখে যাওয়া।

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • দেবব্রত মুখোপাধ্যায় , April 19, 2024 @ 4:50 pm

    খুব সুন্দর পাঠপ্রতিক্রিয়া। প্রতিক্রিয়া এমনই আন্তরিক যে মাঠরাখা পড়ার ইচ্ছে তৈরি হল। পাঠপ্রতিক্রিয়া এমন যত্নে ও এমন মননশীল হলে পড়ার ইচ্ছে হবেই।

  • Madhumita Roy , May 3, 2024 @ 5:48 am

    অসাধারণ পাঠ প্রতিক্রিয়া। হামিরুদ্দিন মিদ্দা আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন শক্তিশালী লেখক। তাঁর লেখায় এমন অপরূপ প্রতিক্রিয়া দিতে যিনি পারেন তিনি অবশ্যই নয়নবসু।
    অসাধারণ! অসাধারণ! প্রতিক্রিয়া পড়ে মন ভরে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *