স্লগ স্যুইপ, হেলমেট এবং ইতিহাস!- রঞ্জি ফাইনালে কেরালার যাত্রা:
সূচনাপর্ব:
মানচিত্রের দিক থেকে ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে অবস্থিত “God’s Own Country।” প্রায় ৩৮৮৬৩ বর্গকিমি জায়গা জুড়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের বসবাস সেখানে। রাজ্যটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য খ্যাত হলেও ব্যাকওয়াটার, চা বাগান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর জন্যও প্রসিদ্ধ। প্রায় শতভাগ শিক্ষিত ব্যক্তির বসবাস যে রাজ্যে তা ফুটবলেও সাতবার পেয়েছে সন্তোষ ট্রফির শিরোপা, হয়েছে দেশসেরা।
ভারতের স্বাধীনতার ৪ বছর পর ত্রিবাঙ্কুর-কোচি নামে প্রথম রাজ্যস্তরের ক্রিকেট খেলে। এরপরে ১৯৫৬ সালে কেরালা রূপে প্রথম আত্মপ্রকাশ রঞ্জি ট্রফিতে।
রঞ্জি সেমিফাইনাল:
২০২৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। বিগত দিনের স্কোর ৪২৯/৭ নিয়ে সেমিফাইনালের পঞ্চম দিন ব্যাটিং সজ্জায় সজ্জিত হয়ে মাঠে নামছেন দুই অপরাজিত গুজরাট ব্যাটার জয়মিত প্যাটেল এবং সিদ্ধার্থ দেশাই। তখন আহমেদাবাদে রঞ্জি ফাইনালে ওঠার হাতছানি গুজরাট দলের কাছে। কারণ লিড নেওয়ার জন্য বাকি মাত্র ২৭ রান এবং যে দুইজন ব্যাটার ব্যাট করতে যাচ্ছেন তারা খুব ভালোভাবে ব্যাট করেছেন আগেরদিন। বোলিং দলের কাছে আশার আলো একটাই। যদি সকালের পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে পার্টনারশিপ ভেঙে দিতে পারেন মহম্মদ নিধীশ বা নেদুমানকুজি বাসিল। কিন্তু ততক্ষণে পিচে ক্র্যাক তৈরী হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতীয় দলটির অধিনায়ক সচিন বেবি বল দিলেন আদিত্য সারওয়াতের হাতে। সারওয়াতে বল হাতে পেয়ে শুরু ভালো করলেও প্রথম পাঁচ ওভারে উঠে গিয়েছে ৭ রান। মন্থর হলেও চাঁদমারির দিকে বেশ এগিয়ে চলেছে গুজরাট। ঠিক এইখানেই সারওয়াতে দিলেন প্রথম মোক্ষম চাল। অফ স্টাম্পের বাইরে একটা আর্ম বল করে ক্রিজের সামান্য বাইরে টেনে আনলেন জয়মিত প্যাটেলকে। ভুল লাইনে খেলে সেটি মিস করলেন জয়মিত এবং মুহূর্তের রিফ্লেক্সে স্ট্যাম্প নড়িয়ে দিলেন মহম্মদ আজহারুদ্দিন। ততক্ষণে ম্যাচে কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে কেরালা। অন্য সেট ব্যাটার সিদ্ধার্থ দেশাইকে প্যাড লক্ষ্য করে বল করে ফাঁদে ফেলেছেন সারওয়াতে। কিন্তু তখনও হাল ছাড়েননি গুজরাটের শেষ দুই ব্যাটার আরজান নাগস্বাল্লা এবং প্রিয়জিৎ জাদেজা। প্রায় ১০ ওভার নিজেদের মধ্যে ব্যাট করে জয়ের লক্ষ্য মাত্র ২ রানের মধ্যে নিয়ে এসেছেন তারা। অর্থাৎ ’ওয়ান শট অ্যাওয়ে।’ কিছু সময়ে ভাগ্য সহায় হয়। ইংরেজি একটা ফ্রেজ রয়েছে – ‘ফরচুন ফেভরস দ্য ব্রেভ।’ অর্থাৎ সাহসীদের সহায় হয় ভাগ্য। ক্রিকেট ঈশ্বর হয়তো চেয়েছিলেন ঠিক তাই। আদিত্য সারওয়াতে ফ্লাইট দিয়ে একটা বল করেন মিডল স্ট্যাম্পে। নাগস্বাল্লা সামনের পা ক্লিয়ার করে স্লগ করেন। বলটা নিতান্তই সাধারণ। অন্য যে কোনোদিন তাতে বাউন্ডারির ঠিকানা লেখা থাকবে। তবে ভাগ্যের ফেরে সেদিন বলটা আঘাত হানে শর্ট লেগে থাকা সলমন নিজারের হেলমেটে। এরপরে হাওয়ায় ভেসে নিচে নামা বলটা তালুবন্দী করতে সমস্যা হয়নি স্লিপে দাঁড়ানো অধিনায়ক সচিন বেবির। ভেঙে যায় ৬৮ বছরের আগল। ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথমবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে জায়গা করে নেয় সচিন বেবি-সলমন নিজার-মহম্মদ আজহারুদ্দিন-জলজ সাক্সেনা-আদিত্য সারওয়াতে-রোহন কুননুম্মালের কেরালা।
পিছু ফিরে দেখা:
রঞ্জি ট্রফিতে প্রথম ম্যাচ খেলার পর এক এক করে কেটেছে ৬৮টি বছর। রাজ্যদল থেকে জাতীয় দলে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন তিরুণাভুক্কারাসু কুমারণ, ২০০১ সালে অভিষেক ঘটেছে তিনু যোহান্নানের, ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটে অভিষেক করে দুটি বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছেন সান্তাকুমারণ শ্রীসন্থ, জাতীয় দলে সাদা বলে বেশ প্রতিষ্ঠিত সঞ্জু স্যামসন– কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও রঞ্জি ট্রফি খেতাব রয়ে গিয়েছে দূরের নীহারিকা হয়ে। মধ্যপ্রদেশ থেকে বেরিয়ে এসে দিনের পর দিন দলের জন্য প্রাণপাত করেছেন জলজ সাক্সেনা। দলের প্রয়োজনে ওপেনিং থেকে লোয়ার অর্ডার- সব জায়গায় করেছেন ব্যাটিং, বল হাতে কঠিন সময়ে হয়ে উঠেছেন ‘গোল্ডেন আর্ম।’ ২০০৯ সালে রঞ্জি অভিষেক হওয়ার পর প্রায় ১৫ বছর চেষ্টা করেছেন সচিন বেবি। কিন্তু খেতাব তো দূর, ফাইনালও রয়ে গিয়েছে অধরা। ২০১৭ সালে সেমি-ফাইনালে গিয়েছিলেন তারা কিন্তু পীযূষ চাওলা এবং সিদ্ধার্থ দেশাইয়ের ঘূর্ণির প্রত্যুত্তর দিতে পেরে নদিয়াদ থেকে রিক্ত হাতে ফিরেছিল সচিন বেবির কেরল। অথচ এবার সেই গুজরাটকে মাত্র ১ রানে প্রথম ইনিংসে পরাজিত করেই ফাইনালে গিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলো তারা।




সাফল্যের কারিগররা:
জয়ের কারিগররা কেউই জাতীয় দলের কাছাকাছি নেই। একজন প্রায় দশ বছরের প্রথম শ্রেণীর কেরিয়ারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার মতো খেললেন মাত্র এইবারই। দ্বিতীয়জন দলের অধিনায়ক। ভারতীয় এ দলে কিছু ম্যাচ পেলেও তিনি তার বেশি এগোতে পারেননি। তৃতীয়জন দেশ সেরা অলরাউন্ডার হলেও কোনো অজানা কারণে তাকে টেস্ট ক্যাপ স্পর্শ করতে পারেনি। ৭০০০ প্রথম শ্রেণীর রান এবং ৪৮৪ উইকেট এবং অতি-ধারাবাহিক পারফরমেন্স এর পরেও যদি টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা গায়ে না লাগে তবে এই বিশেষণ জলজ সাক্সেনার ক্ষেত্রে অত্যুক্তি নয় কোনোভাবেই। মহম্মদ আজহারুদ্দিন নকআউট স্তরে উজাড় করে দিয়েছিলেন সর্বস্ব, বল হাতে ৩৪ উইকেট শিকার করেছেন আদিত্য সারওয়াতে। সব মিলিয়ে একটা সম্পূর্ণ দলগত পারফরমেন্স দিয়েই ট্রফির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল কেরালা।
কেরালার এই লড়াইয়ে যার সবচেয়ে বড়ো অবদান তিনি সলমন নিজার। মালাবার উপকূলবর্তী কাননুর জেলার একটি শহর থ্যালাসেরি। ২৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে সেখানে বাস প্রায় এক লাখ ব্যক্তির। এই জায়গা থেকেই উঠে আসা বাঁহাতি ব্যাটার সলমন নিজারের। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৫ সালে হলেও ৯টি মরশুমে খেলেছিলেন মাত্র ২২টি ম্যাচ। চলতি মরশুমের আগে তিনি করেছিলেন মাত্র ৮৪৩ রান, ব্যাটিং গড় ছিল ৩০ এর নীচে। মরশুমের শুরুতেই বাংলার বিরুদ্ধে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে কেরল। ঈশান পোড়েল তখন আগুন ঝরাচ্ছেন নিজের কামব্যাক ম্যাচে। বাংলা যখন একটা সহজ জয়ের কথা ভাবছে তখনই অপরাজিত ৯৫ রানের ইনিংস খেলে সব হিসেব পাল্টে দেন নিজার। তাকে যোগ্য সঙ্গত দেন জলজ সাক্সেনা এবং মহম্মদ আজহারুদ্দিন। উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচে তার ব্যাট থেকেই আসে ৯৩। এরপর দুটি ম্যাচে রান না পেলেও ঠিক ফিরে আসেন নিজার। বিহারের মতো অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ পেয়ে নিজের প্রথম প্রথম শ্রেণীর শতরান করেন তিনি। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে যথেষ্ট ছিল এইটুকুই। এরপর রঞ্জি ট্রফি নক আউট পর্যায়ে গেলে জম্মু-কাশ্মীরের সম্মুখীন হয় কেরালা। কেরালা ফেভারিট হিসেবে শুরু করলেও ২৮০ রানের জবাবে এক সময়ে ১৩৭/৭ অবস্থায় ধুঁকতে থাকে তারা। ঘুরে দাঁড়ান থ্যালাসেরির বাঁহাতি। যুধবীর চরক, আকিব নবীর সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে অপরাজিত ১১২ রানের এক মহামূল্যবান ইনিংস খেলেন তিনি। ফলস্বরূপ কেরালা যখন বাসিল থাম্পির উইকেট হারায় তখন তাদের সংগ্রহে ১ রানের অমূল্য লিড যা সম্বল করে শেষ চারে পৌঁছয় তারা।
এক সময়ে ক্রিকেট কেরিয়ারে উজ্জ্বলতা না পাওয়ায় দাদার সঙ্গে দুবাই যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন পরিবার থেকে। কিন্তু ক্রিকেটকে ভালোবেসে মাঠের সঙ্গেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন নিজার। ভাগ্য সঙ্গী হয় তাঁদেরই যারা শেষ মুহূর্ত অবধি হাল না ছেড়ে এগিয়ে চলেন। যারা পরিণতির কথা না ভেবে বাস্তবে পা রেখে এগিয়ে চলেন। সলমন নিজারের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। শেষে তার হেলমেট পার্থক্য করে দেয় কেরালা এবং গুজরাটের। হয়ে দাঁড়ায় ৬৮ বছরের ফাইনালের খরা ভাঙার কারিগর।
রঞ্জি ফাইনাল:
এরপরে আসে ২৬শে ফেব্রুয়ারি। বহু প্রতীক্ষিত সেই রঞ্জি ফাইনালের প্রথম দিন। বিদর্ভের বিরুদ্ধে নাগপুরে টস করতে যান কেরলের অধিনায়ক সচিন বেবি। শুরুতে বল হাতে নিয়েই আগুন ঝরান নিধীশ। পার্থ রেখাড়ে এবং দর্শন নালকান্ডেকে ফিরিয়ে তিনি আশার আলো জাগান এবং ধ্রুব শোরেকে ফেরান ইডেন অ্যাপেল টম। কিন্তু দানিশ মালেওয়ার-করুণ নায়ার জুটি প্রতিরোধ গড়ে তুললে সুবিধা করতে পারেননি কেরলের বোলাররা। মাত্র ২১ বছর বয়েসি মালেওয়ার ২৮৫ বলে দুর্ধর্ষ ১৫৩ রানের ইনিংস খেলে নিজের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সুনিশ্চিত করেন। তাদের দাপুটে ইনিংসের সুবাদে বোর্ডে ৩৭৯ রান তোলে বিদর্ভ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮০ তাড়া করতে নেমে এক অসাধারণ প্ল্যান তৈরি করে কেরল। প্রথম ওভারে রোহন কুননুম্মাল আউট হয়ে ফিরলে নিয়মিত তিন নাম্বার ব্যাট আহমেদ ইমরানকে সরিয়ে আদিত্য সারওয়াতেকে তিন নম্বরে পাঠায় তারা। নিজের রাজ্যের বিরুদ্ধে রঞ্জি ফাইনালে ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন আদিত্য। কিন্তু ফাইনালে ট্রফি খুব কাছে থেকেও অধরা হয় সচিন বেবির নিজের একটি ভুলে। প্রায় আড়াই সেশন ভ্রান্তিবিহীন ব্যাটিং করে যখন শতরানের দোরগোড়ায় তিনি, তখন তাকে বেশ কিছু টাইট বল করে আটকে রেখেছিলেন বিদর্ভ স্পিনাররা। তারা পার্থ রেখাড়েকে বল দেন যিনি সারওয়াতে-জলজ সাক্সেনার পাশে উজ্জ্বলভাবে বল করছিলেন। রেখাড়ে সামান্য ফ্লাইট দিয়ে অফ স্ট্যাম্পে বল রাখেন এবং সচিনকে আমন্ত্রণ করেন একটি বড়ো শট খেলতে। সেই ফাঁদে পা দিয়ে অনিবার্য পতন হয় কেরালা অধিনায়কের। স্লগ স্যুইপে টাইমিং ঠিকঠাক না হওয়ায় ডিপ মিডউইকেটে ধরা পরেন করুণ নায়ারের নিরাপদ হাতে। তখনো লিড পেতে ৫৫ রান করতে হবে কেরালাকে। জলজ সাক্সেনা থাকলেও সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি দক্ষিণ ভারতীয় দলটি। প্রথম ইনিংসে তারা লিড থেকে বঞ্চিত হয় ৩৭ রানের ব্যবধানে। যদিও শেষ তিন উইকেট হাতে থাকতেও কেন কেরালার ব্যাটাররা বড়ো শট খেলায় মনোনিবেশ করেননি তা একটি ধন্দের বিষয়। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মানসিকতাই হয়তো তাদের জয়ের শেষ সুযোগ থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। সামান্য কিছু ঘটনা পাল্টে দিতে পারে পরিস্থিতি, খেলার কাঁটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে। কেরালার এই মরশুম যেন তারই সাক্ষ্য দিয়ে যায়। জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে শেষ উইকেটের পার্টনারশিপে ওঠা ৮১ রানের জুটি, লিড পেতে সাহায্য করা সর্বশেষ সিঙ্গেল ম্যাচের ফলাফল নথিভুক্ত করেছিল ১ রানের প্রথম ইনিংস লিড হিসেবে। গুজরাটের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে সেই ব্যবধান এক রান বেড়ে হয় ২। আবার ফাইনালে একটা খারাপ শটেই নির্ধারিত হয় ভাগ্য। ট্রফির লড়াই দীর্ঘায়িত হয় এক বছরের জন্য। সচিন বেবি নিজের শটকে চিহ্নিত করেন “ব্রেন ফেড” হিসেবে। তিনি দোষ মাথা পেতে নিয়ে স্বীকার করেন যে তার শটেই খেলার গতিপ্রকৃতি বদলেছে। হতে পারত অনেক কিছুই। নিজের শততম প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে রঞ্জি ট্রফি জিতে ৬৮ বছরের খরার যবনিকা পতন করতে পারতেন সচিন। অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলের জুনিয়র ক্রিকেটারদের কেরালা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল নাগপুরে। আশায় বুক বেঁধে এসেছিলেন তারা। নিজের রাজ্যদলকে ট্রফি তুলতে দেখতে চেয়েছিলেন তারাও। কিন্তু কিছু আশা অপূর্ণ থেকে যাওয়ার মতো এটিও রয়ে গেলো অপূর্ণতার খাতায়।



আবেগঘন মুহূর্ত:
ফাইনাল শেষ হওয়ার পর সেন্টার উইকেটের দিকে হেঁটে যান কেরালা দলের প্রধান কোচ অময় খুরাশিয়া। পিচের থেকে কিছুটা মাটি তুলে আনেন তিনি। সেই মাটি অমূল্য স্মারক হিসেবে হয়তো তিনি রেখে দেবেন। ভারতীয় দলের এই প্রাক্তন বাঁহাতি ব্যাটার নিজের প্রশিক্ষণ কেরিয়ারে অন্য যত সাফল্যই পান, বিশেষ হিসেবে হয়তো থেকে যাবে এটাই। ট্রফি জেতে অনেকে, ট্রফি জেতাকে অভ্যেসও বানিয়ে ফেলেন অনেকে তবে ইতিহাসের দোরগোড়ায় যেতে পারেন খুব কম ব্যক্তি। হয়তো মধুরেণ সমাপয়েৎ হয়নি তাতে কি? সমগ্র মরশুমে ধারাবাহিকতা, পর্বতসম চাপের সঙ্গে নিত্য লড়াই শেষে ওইটুকুই প্রাপ্তি।


উপসংহার:
কোনো মরশুমে হয়তো আবার ফিরে আসবে কেরালা। চাপের মুখে লড়াই করে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা আবার পূর্ণশক্তিতে ঝাঁপাবে তারা। আবার হয়তো ক্রিকেট দেবতা স্নেহাশিস বর্ষণ করবেন সচিন বেবি, সলমন নিজার, জলজ সাক্সেনাদের ওপর। নিজেদের হার না মানা মানসিকতা, নিত্যদিনের মাঠে ঘাম ঝরানো এবং সেই আশীর্বাদের জোরে আবার হয়তো তারা পৌঁছবে ট্রফির দোরগোড়ায়। তবে সেদিন হয়তো মুহূর্তের ভুলটা করবেন না সচিন বেবি, সেদিন হয়তো পারফরমেন্সের বিচারে আরো দুর্ধর্ষ হবেন তারা। প্রত্যেক অপ্রাপ্তি, প্রত্যেক না পাওয়া কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়, কোনোভাবে তৈরী করে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হওয়ার জন্য। সেই ধাপ টপকে সেইবার হয়তো বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হবে কেরালার নাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো।
ততদিন সম্বল হোক লড়াই করে সফল হওয়ার প্রাপ্তিটা। কথাতেই তো আছে “সব পেলে নষ্ট জীবন।”
চিত্রঋণ – আন্তর্জাল