ইতিহাসের আলোকে ‘কণ্ঠাভরণ’

ইতিহাসের আলোকে ‘কণ্ঠাভরণ’

প্রাচীন ভারত

অলঙ্কারের মধ্যে কণ্ঠের হার এবং মালার কথাই প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে সব থেকে বেশি পাওয়া যায়। প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রায়-ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতাতেও মানুষ বহুবিধ উপাদানে তৈরি কণ্ঠহার পরিধান করত, এমনটা জানা যায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে। নব্যপ্রস্তর যুগের মেহেরগড় সভ্যতাতে পাথর এবং হাড় দিয়ে তৈরি কণ্ঠহার ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। অধ্যাপক রণবীর চক্রবর্তী সিন্ধু সভ্যতার মানুষের কারিগরি দক্ষতা প্রসঙ্গে সেখানকার মাল্যদানা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সোনা, তামা, শঙ্খ, স্টিয়েটাইট পাথর, গজদন্ত প্রভৃতি উপাদান দিয়ে সিন্ধু সভ্যতায় মাল্যদানা তৈরি করা হত। বানওয়ালিতে উৎখননের সময় একটি বৃহদাকৃতি ইমারতের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে বহু সংখ্যক মাল্যদানা সম্পূর্ণ তৈরি এবং আধা তৈরি অবস্থায় পাওয়া গেছে। অধিকাংশ মাল্যদানাই ছিল কর্নেলিয়ান পাথরের। তবে, সোনা ও লাপিস লাজুলির মাল্যদানাও দেখা গেছে। একটি চুল্লী ও সূক্ষ্ম ওজনের জন্য উপযুক্ত অনেক বাটখারার উপস্থিতিও সেই স্থানে লক্ষ্য করা যায়। তার ফলেই বানওয়ালির এই ইমারতটিকে মাল্যদানা নির্মাণের কারখানা হিসেবে ঐতিহাসিকরা চিহ্নিত করেছেন। সিন্ধু সভ্যতার ব্রোঞ্জ মূর্তিগুলির অঙ্গেও হার ও মালা খোদিত রয়েছে। এই সভ্যতার নারী ও পুরুষের ব্যবহৃত এমন বহু হার বর্তমানে সংরক্ষিত আছে রাজধানী দিল্লিতে জাতীয় জাদুঘরে।

সিন্ধু সভ্যতার কণ্ঠহার। দিল্লির জাতীয় জাদুঘরে। ছবি সৌজন্যে- অধ্যাপিকা অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রাচীন ভারতীয় রাজতান্ত্রিক সমাজে নারী ও পুরুষের পরিধেয় অলঙ্কারগুলি সম্পর্কে জানা যায় সমকালীন সাহিত্যে। অলঙ্কারের মূল চারটি প্রকারভেদের পরিচয় পাওয়া গেছে ভরতের নাট্যশাস্ত্রে। যথা, ‘আবেধ্য,’ ‘বন্ধনীয়,’ ‘ক্ষেপ্য,’ ও ‘আরোপ্য।’ যে সকল অলঙ্কার শরীরের কোন অংশ বিঁধিয়ে পরিধান করতে হয়, তাদের বলা হয় ‘আবেধ্য।’ বালা, চুড়ি, অঙ্গদ প্রভৃতি অলঙ্কারকে বলা হয় ‘বন্ধনীয়।’ নূপুর এবং বস্ত্রাভরণ হল ‘ক্ষেপ্য,’ আর গলার হার জাতীয় অলঙ্কারকে বলা হয় ‘আরোপ্য।’ গলার হার এবং মালার তাই সব থেকে বড় সুবিধা হল যে এই অলঙ্কার পরার জন্য শরীরের কোন অংশকে বেঁধানোর প্রয়োজন হয় না। আবার পাশাপাশি বহু সংখ্যক হার এবং মালা একই সঙ্গে পরা যায়। প্রাচীন ভারতের শাসক এবং অভিজাতরা তাই খুব বেশি পরিমাণেই কণ্ঠাভরণ পরিধান করতেন।

“হায় রে, কবে চলে গেছে কালিদাসের কাল!” কিন্তু রয়ে গেছে সেই কালের সাহিত্য। সেই সাহিত্য থেকেই জানা যায় প্রাচীন ভারতের হরেকরকম হারের কথা। অমরসিংহ তাঁর অমরকোষে সাধারণ ভাবে হারের নাম দিয়েছেন ‘গ্রৈবেয়ক।’ নাভি পর্যন্ত লম্বা কণ্ঠহার পরিচিত হয় ‘ললন্তিকা’ নামে। আবার, এই ললন্তিকাই স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত হলে তার নাম হয় ‘প্রালম্বিকা,’ এবং মুক্তার দ্বারা নির্মিত হলে তা পরিচিত হয় ‘উরঃসূত্রিকা’ নামে। সাধারণভাবে আমরা ‘মালা’কেও হারের মতো কণ্ঠের আভরণ হিসেবেই জানি। কখনও কখনও ফুলের মালার চুলে জড়িয়েও পরিধান করা হয়। কিন্তু অমরকোষ অনুসারে ‘মালা’ এবং ‘স্রক’ মূলত মস্তকেরই আভরণ। মেদিনীকোষ গ্রন্থ অনুসারে এই মালা এবং স্রকের মূল উপাদান পুষ্প হলেও বৈদিকগ্রন্থে স্বর্ণনির্মিত স্রকেরও উল্লেখ পাওয়া যায়। তাণ্ড্যমহাব্রাহ্মণে যজ্ঞের উদ্গাতাকে ‘সুবর্ণনির্মিত স্রক’ প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সূর্য যেমন জগতের প্রকাশ ঘটায়, তেমনই উদ্গাতাও সামবেদের অর্থ প্রকাশ করেন। তাই, উদগাতা যদি সুবর্ণনির্মিত স্রক পরিধান করেন, তবেই প্রকৃত ঊষার উদয় ঘটে। যদিও এখানে স্রকের পরিধান-স্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়নি। বৈদিকযুগে ‘নিষ্ক’ নামক একপ্রকার অলঙ্কারের কথা জানা যায়, যা বক্ষের ওপর পরিধান করা হত। কিন্তু এই নিষ্কর আকার সম্পর্কে খুব স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। তবে ছান্দোগ্য-উপনিষদে বর্ণিত ‘রৈক্কজানশ্রুতিবৃত্তান্তে ঋষিপ্রবর রৈক্ক রাজা জানশ্রুতি প্রদত্ত ‘নিষ্ক’কে ‘হার’ বলেই অভিহিত করেছেন। ‘সৃঙ্কা’ নামেও আরেকরকম হার জাতীয় অলঙ্কারের কথা জানা যায় কঠ-উপনিষদে। বলা হয়েছে, ধর্মরাজ যম নচিকেতার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে একটি সৃঙ্কা উপহার দিয়েছিলেন। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য হারের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। হারগুলি মূলত মুক্তা দ্বারা নির্মিত হওয়াতে হারের অপর নাম হল ‘মুক্তাবলী।’

যেহেতু প্রাচীন ভারতে শরীরের ঊর্ধ্বাংশে বস্ত্র পরার চল তেমন ছিল না, তাই গলার হারই সম্পূর্ণ বক্ষ আবৃত করে রাখত। সেই কারণেই হারগুলি ছিল অনেক লহরযুক্ত। লহরের সংখ্যা অনুযায়ী হারগুলির বিশেষ নামকরণ করা হয়েছিল। শতলহর হার পরিচিত ছিল ‘দেবছন্দক’ নামে। বত্রিশটি লহরযুক্ত হারকে বলা হত ‘গুৎস।’ চব্বিশটি লহরযুক্ত হার ‘গুৎসার্ধ,’ চৌত্রিশটি লহরযুক্ত হার ‘গোস্তন,’ কুড়িটি লহর ‘মানবক’ এবং একলহর হার ‘একাবলী’ নামে পরিচিত ছিল। যদি ‘একাবলী’ হারে সাতাশটি মুক্তা থাকত, তবে তার নাম হত ‘নক্ষত্রমালা।’ ‘বৃহৎসংহিতা’তে ‘মুক্তা-রচিতাভরণ-সংজ্ঞা’ নামক একটি প্রকরণ রয়েছে, যেখানে হারের নানারূপ শ্রেণীবিভাগ পাওয়া যায়। দেবতার অঙ্গের ভূষণ ‘ইন্দুছন্দ’ নামক হারে এক হাজার আটটি লহর এবং ‘বিজয়ছন্দ’ হারে তার অর্ধেক, অর্থাৎ পাঁচশ চারটি লহর থাকে বলে জানানো হয়েছে। ইন্দুছন্দের দৈর্ঘ্য চার হাত এবং বিজয়ছন্দের দৈর্ঘ্য দুই হাত। আটলহরী হার ‘মন্দর,’ পাঁচলহরী হার ‘হারফলক’ নামে পরিচিত হয়েছে। যদি এইরকম হারের মধ্যভাগে মণি বসানো থাকে তবে তার নাম হয়েছে ‘মণিসোপান।’ আবার এই মণিসোপানের মধ্যভাগের মণিটি সোনা দ্বারা বাঁধানো হলে তা অভিহিত হবে ‘চাটুকার’ নামে। পাল এবং সেন যুগের হারের কথাও ইতিহাসে জানা যায়। বল্লাল সেনের নৈহাটি তাম্রশাসনে রাজবংশের মহিলাদের মুক্তমালা ব্যবহারের কথা রয়েছে। পাল যুগে মদনপালের শাসনকালে সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত ‘রামচরিত’ এ রামাবতী নগরের বর্ণনায় পাওয়া গেছে নানারকম মূল্যবান পাথর, হীরক, বৈদূর্যমণি, মুক্তো, পান্না, চুনি, নীলাখচিত অলঙ্কার ও বড় আকারের মণিমুক্তাযুক্ত কণ্ঠহার।

মধ্যযুগ

সুলতানি যুগের অলঙ্কারের বিবরণ পাওয়া যায় সমকালীন সাহিত্যে। পনেরো শতকে গৌড়ের সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ এর সভাকবি শাহ মুহম্মদ সগীর রচিত ‘ইউসুফ জুলেখা’ এ সুলতান সহ সম্পদশালী পরিবারগুলির প্রচুর মূল্যবান মণি মুক্তার হার ব্যবহারের কথা জানা যায়। মধ্যযুগে রচিত বাংলা সাহিত্যগুলিতে বিশেষত মঙ্গলকাব্যে পুরুষ ও নারীর অলঙ্কার পরার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে হারের বর্ণনা। বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মপুরাণ’ এ ‘বেহুলার সাজন’ এ বিবাহের দিন বেহুলার সাজের বর্ণনা দেওয়া হচ্ছেঃ ‘আঙ্গুলে অঙ্গুরি পরে গলায় মুক্তার মালা। আসর বেশর দোলে হাতে স্বর্ণবালা।’ দিন শুধু কন্যা নয়, বরের সাজেরও কণ্ঠহারের ভূমিকা রয়েছেঃ ‘সুবর্ণ মুকুট মাথে, কনক দর্পণ হাতে গলে শোভে গজমুক্তাহার।’ 

ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতায় মুঘলরা আসার ফলে সংস্কৃতির সকল ধারার মতোই অলঙ্কারেও এক নতুন মাত্রা যোগ হল – হিন্দু ও মুসলিম শৈলীর সংমিশ্রণ। এই সময়ে তাই অলঙ্কারের প্রচুর অভিনব ডিজাইন তৈরি হয়, যার মধ্যে নানানরকম জ্যামিতিক আকার, জীবজন্তু ও ফুলের ধরণ ছিল। অর্ধচন্দ্রাকৃতি ডিজাইন মুঘল ঘরানার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। মুঘল শাসক ও অভিজাতরাও ব্যবহার করতেন হীরা, মুক্তা ও অন্যান্য মূল্যবান রত্নখচিত কণ্ঠহার। সোনার মধ্যে রত্নখচিত করা ছিল মুঘলদের বিশেষ কারিগরি। রত্নের লকেটযুক্ত লম্বা মুক্তার হার তাঁরা বিশেষ পছন্দ করতেন।

মুর্শিদকুলি খাঁর কণ্ঠে হার।

আধুনিক যুগ

চলে আসা যাক আধুনিক বাংলায়। ঊনবিংশ শতকের অন্যতম সমাজ-সংস্কারক কিশোরীচাঁদ মিত্র এর স্ত্রী কৈলাসবাসিনী দেবীর লিখিত একটি ডায়েরি তাঁর মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পেয়েছিল মাসিক বসুমতী পত্রিকায়। বিবাহে তাঁর পিতৃগৃহ ও শ্বশুরগৃহ থেকে প্রাপ্য অলঙ্কারের তালিকা কৈলাসবাসিনী লিপিবদ্ধ করেছেন ডায়েরির শেষে “গহনার ফর্দ”তে। সেখানে রয়েছে বহুরকম কণ্ঠাভরণের উল্লেখ। কৈলাসবাসিনী লিখেছেন ‘ডামন কাটা চিক’ (অর্থাৎ ডায়মন্ড কাটা চিক), ‘জড়োয়া চিক,’ ‘দড়ি হার,’ ‘হেসো হার,’ ‘গোলমালা,’ ‘পানহার,’ ‘মুক্তার কণ্ঠি,’ ‘চাপ কলি,’ ‘বিচে,’ (অর্থাৎ বিছেহার) প্রভৃতি বহু রকম গলার অলঙ্কারের নাম। ভারতী রায়ের ‘একাল সেকাল, পাঁচ প্রজন্মের ইতিকথা’ বইয়ে উনিশ শতকের বাংলার মেয়েদের অলঙ্কারের তালিকা পাওয়া যায়। সেখানেও কণ্ঠাভরণের উল্লেখই সবচেয়ে বেশি। সাতলহরী সীতাহার, ময়ূর মিনে করা চিক, জড়োয়ার রুবি পান্না খচিত নেকলেস, ইত্যাদির ব্যবহারের কথা সেখানে জানতে পারা যায়। কল্যাণী দত্ত তাঁর ‘থোড়-বড়ি-খাড়া’ গ্রন্থে যে ‘পিঠঝাপা’ অলঙ্কারের কথা লিখেছেন, সেও কিন্তু আসলে গলার হার। গলার হারের সঙ্গেই পিঠের ওপর সজ্জিত থাকা অলঙ্কারের অংশটি যুক্ত করা হত। স্বামী বিবেকানন্দের ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথ দত্তের ‘কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা’ থেকেও শহরের নারীদের ব্যবহৃত গলার হার ও মালার নাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি, জানা যায় গ্রামবাংলার দরিদ্র নারীরা সোনার অভাবে কাঁসার অলঙ্কার পরতেন। এই কাঁসার মধ্যে সামান্য রূপা মিশিয়ে তৈরি নতুন ধাতুর নাম হত ‘রূপকাঁসা।’ রূপকাঁসার হার এবং মালা মূলত পরিধান করতেন গ্রামের বাগদি ও ডুলে মেয়েরা।

বাংলার ঠাকুরবাড়ি 

ঠাকুরবাড়ির গয়নার ইতিহাসেও হার ও মালার প্রসঙ্গ আসে বারবার। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটভাই গিরীন্দ্রনাথের স্ত্রী ছিলেন যোগমায়া দেবী। তাঁর একটি সাতনরী হার ছিল। সেই হার তিনি দিয়ে যান গুণেন্দ্রনাথের স্ত্রী সৌদামিনীকে। সৌদামিনী দেবী এই হার সযত্নে তুলে রেখেছিলেন। মাঝে মাঝে সিন্দুক থেকে হারটিকে বের করা হত। সেই হারে মিশে থাকা আতর-চন্দনের গন্ধকেই সৌদামিনী দেবী বলতেন “আমার শাশুড়ির খোসবো।”

আবার, ঠাকুরবাড়ির পুরুষরা পরিধান করতেন কণ্ঠের অলঙ্কার। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিলেত যাওয়ার খরচ ঠাকুরবাড়িকে বহন করতে হয়েছিল বলে জ্ঞানদানন্দিনীর সব গয়না সারদাসুন্দরী দেবী নিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাই দিয়েই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জানতে পারলে তিনি স্ত্রীকে খুবই তিরস্কার করেন এবং জ্ঞানদানন্দিনীকে এক বহুমূল্য হিরের কণ্ঠী উপহার দেন। এই হীরের কণ্ঠি পরে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় থেকেই এই বাড়ির পুরুষরা বিবাহ করতে যেতেন। বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী প্রফুল্লময়ী দেবীর দিদি নীপময়ীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র হেমেন্দ্রনাথের। প্রফুল্লময়ী তাঁর ‘আমাদের কথা’ প্রবন্ধে দিদির স্বামীর সাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই হিরের কণ্ঠির কথাও লিখেছিলেন। পরবর্তীকালে জ্ঞানদানন্দিনী তাঁর মা-কে গঙ্গার ধারে ঘুসড়িতে একটি বাগানবাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য অতি অল্প দামে মহর্ষির থেকে প্রাপ্য এই কণ্ঠিটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র মায়ের জন্য স্বামীর কাছে অর্থসাহায্য নেবেন না বলেই।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মেয়েদের নাক ও কান বিঁধিয়ে অলঙ্কার পরাকে পছন্দ করতেন না। সৌদামিনী দেবীর ‘পিতৃস্মৃতি’ থেকে জানায় যায় যে মহর্ষি বলেন, “বন্য বর্বররাই ত নাক কান ফুঁড়িয়া গহনা পরে! এ কি ভদ্রসমাজের যোগ্য?” তিনি বাড়ির ‘কর্ণবেধ অনুষ্ঠান’ ও বন্ধ করে দেন বলে সৌদামিনী জানিয়েছেন। জ্ঞানদানন্দিনীও তাঁর কন্যা ইন্দিরা দেবীকে কান বেঁধাতে দেননি। অন্যদিকে গলার অলঙ্কার বিঁধিয়ে পরার প্রয়োজন হয় না। তাই ঠাকুরবাড়ির নারী ও পুরুষদের কাছে খুবই আদরের অলঙ্কার ছিল হার। ইন্দিরা দেবীর বিবাহের অলঙ্কার তাঁর সমসাময়িক অন্য নারীদের থেকে অনেকটাই আধুনিক ছিল। বিবাহেও তিনি নাক ও কানের কোন অলঙ্কার পরেননি। কিন্তু হীরা-মুক্তার চিক, মুক্তার মালা তাঁর প্রিয় অলঙ্কার ছিল। ছোট ছোট মোহর সোনার চেইনে যুক্ত করে গলার মালা করেও পরতেন ইন্দিরা দেবী।

সরলা দেবী চৌধুরানী তাঁর আত্মজীবনীতে একটি ঘটনার কথা লিখেছেন। সরলার সঙ্গীতপ্রতিভার পুরস্কারস্বরূপ অলঙ্কার প্রদান করতে চেয়েছিলেন ‘দাদামশাই’ অর্থাৎ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই অলঙ্কার কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। কিন্তু দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপনে সরলাদেবীকে সঙ্গে নিয়েই হ্যামিলটনের দোকানে গয়না কিনতে গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “আমি ভেবে দেখলুম কি কিনতে কি কিনব শেষকালে তোর যদি না পছন্দ হয়, সুতরাং তোকে বলে দেখিয়ে তোর পছন্দমতোই নেওয়া ভাল।” হ্যামিলটনের দোকানে সরলাদেবীর পছন্দমতো গয়না হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়নি বলে তাঁরা পাশের দোকান থেকে কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন হীরে ও চুনির নেকলেস। তারপর একদিন প্রকাশ্য সভায় নেকলেসটি সরলার হাতে দিয়ে মহর্ষি বলেন, “তুমি সরস্বতী। তোমার উপযুক্ত না হলেও এই সামান্য ভূষণটি এনেছি তোমার জন্যে।”

সরলা দেবী চৌধুরাণী
ইন্দিরা দেবী (কানে দুল পরতেন না। কিন্তু গলায় হার ও মালা পরতেন।

আবার মেয়েদের বিদ্যালয় শিক্ষার অঙ্গনে এবং কর্মজগতে পা রাখা, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রেরণায় জাগ্রত ভিক্টোরিয়ান রুচিবোধ এবং ব্রাহ্মসমাজের অনাড়ম্বর জীবনযাপনের আদর্শ প্রভৃতির প্রভাবে হালকা গয়না হিসেব হার-মালা-চিকের বদলে ছোট্ট পেন্ডেন্ট যুক্ত সরু চেন পরার চলও এসময় এক শ্রেণীর নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়।

ঔপনিবেশিক বাংলায় অনেক শিক্ষিত উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরা এক ধরণের গিনির মালা পরতেন। সেই গিনিগুলির ওপর খোদাই করা থাকত রাণী ভিক্টোরিয়ার চিত্র। তাকে বলা হত ‘কুইনমালা।’ অলঙ্কারের শৈলীতে এ যেন ঔপনিবেশিক শাসকের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ। মুদ্রার মালা বাংলায় খুব বেশি করে জনপ্রিয় হয় বিংশ শতাব্দীতে।

এই মুদ্রার মালারও বেশ সুন্দর একটি ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরীয়রা তাদের সৈন্যদের মুদ্রা আকারের সোনার মেডেল দিয়ে সাজাত। মেডেলগুলো দেখতে ছিল ওই সময়ের মুদ্রার মতোই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মুদ্রার গয়না খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন তাতে ফুলের মোটিফ বা আদ্যাক্ষর দিয়ে নকশা খোদাই করা হত। এই ধরনের গয়না সেই আমলে ‘সুইট হার্ট’ গয়না নামে প্রচলিত ছিল। কারণ, নাবিক ও সৈন্যরা যুদ্ধে যাবার প্রাক্কালে এই গয়নাগুলো তাঁদের স্ত্রী বা প্রেমিকার কাছ থেকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করতেন। এটি প্রচলনের কাল থেকে মূলত দুই ধরনের গয়না মানুষ ব্যবহার করতো। এক, আস্ত মুদ্রার গয়না এবং দুই, কাটা মুদ্রার গয়না। কারিগরি দিক দিয়ে কাটা মুদ্রার গয়নার খুব কদর ছিল। কারণ, কাটা মুদ্রার গয়নায় প্রকাশ পেত কারিগরদের সৃষ্টিশীলতা, স্বকীয়তা ও দক্ষতা। এই মুদ্রার গয়না সোনা, রূপা ইত্যাদি ধাতু দিয়ে তৈরি হতো। হার, লকেট ছাড়াও তৈরি হতো কানের দুল, ব্রেসলেট, কাফলিং, হাতের রিং প্রভৃতি।

কাটা মুদ্রার গয়নায় প্রকাশ পেত কারিগরদের সৃষ্টিশীলতা, স্বকীয়তা ও দক্ষতা

বাংলাদেশে যেসব আদি জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের সংস্কৃতিতে মুদ্রার গয়না ছাড়া মেয়েদের বিয়ে অকল্পনীয়। কোন কোন সমাজব্যবস্থায় বিয়ের অনেক আগে থেকেই নিজের জন্য মুদ্রা জমা করে আদিবাসী নারীরা। অন্যদিকে কোন কোন সমাজে বর ১৩০টি মুদ্রা দিয়ে মালা বানিয়ে বিয়ের কনেকে সাজিয়ে ঘরে তুলে আনে। এই মুদ্রাগুলো দিয়ে নিজের পছন্দমতো পুঁতির ফাঁকে ফাঁকে বসিয়ে মালা তৈরি করা হয়। ঔপনিবেশিক বাংলায় আদিবাসী নারীরাও গয়নায় ব্রিটিশ মুদ্রা অথবা তামা ও রুপার মুদ্রা ব্যবহার করতেন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুদ্রার এই মালাগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে। একে তঞ্চঙ্গ্যা সমাজ ‘ট্যাগার ছড়া,’ চাকমা জনগোষ্ঠী ‘পয়জে মালা,’ গারোরা ‘দাঙাছড়া,’ ত্রিপুরারা ‘রাংবতাং,’ ম্রো জনগোষ্ঠী ‘পাকড়ি পুটি মালা’ বলে থাকে। বর্তমানে নেত্রকোনা জেলার সুসং-দুর্গাপুর, কলমাকান্দা এবং সুনামগঞ্জের কিছু এলাকায় বালাই আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে। ভারতের মতো বাংলাদেশের বালাই জনগোষ্ঠীরাও মুদ্রার ‘বয়লা’ ব্যবহার করেন। ‘ট্যাগার ছড়া’ ছাড়াও আরও দুধরনের মুদ্রার গয়না তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর নারীরা ব্যবহার করেন। এগুলো হল ‘আল্যাচুরি’ এবং ‘চন্দনা হার।’ মুদ্রার এই গয়না কেবল গলার হার হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। খোঁপার কাঁটায়, আংটিতে এমনকি কোমরের বিছায়ও তাঁরা এই মুদ্রা পুঁতির সঙ্গে গেঁথে পরিধান করেন।

ফুলমালার সরল-সুন্দর সাজে বরাবরই সাজতে ভালবাসেন মেয়েরা, বিশেষত গ্রামের মেয়েরা। রাণী চন্দের ‘আমার মার বাপের বাড়ি’ তে বর্ণনা পাওয়া যায় কীভাবে শাপলা ফুলের মালা গেঁথে গলায় পরতেন মেয়েরা। “একটা শাপলা হাতে নিয়ে এর এই দিকটা একটু ভাঙি- আঁশ টানি। টুকরো টুকরো শাপলাগুলি এক-একদিককার আঁশে আটকে থাকে। একটু আঁশ একটু শাপলা- এইভাবে দুটো নাল তৈরি হয়ে যায়। ভাঙতে ভাঙতে ফুল পর্যন্ত আসি যখন তখন মস্ত এক মালার মাঝখানে শাপলা ফুলটি ঝোলে লকেট হয়ে।”

শাপলা ফুলের মালা। ছবি- ফেসবুক।

সমকালীন বাংলা 

স্মরণে, বরণে, পূজায়, প্রণয়ে ফুলের মালাই তো আমাদের সবচেয়ে আদরের। গাছপালার সঙ্গে যাঁদের নিবিড় সম্পর্ক, সেই সকল জনজাতির নারীরা কিন্তু আজও সেজে ওঠেন ফুলপাতার বিচিত্র অলঙ্কারে। উৎসব- অনুষ্ঠানে শহুরে নারীরাও খোঁপায় রজনীগন্ধা, জুঁই প্রভৃতি ফুলের মালা বাঁধতে পছন্দ করেন, বসন্তে গলায় ও মাথায় পরেন পলাশের মালা। কিন্তু প্রকৃতির সাজে সাজতে গিয়ে যদি আমরা প্রকৃতিকেই নিঃস্ব করে ফেলি? বৃক্ষের থেকে নিতে নিতে যদি আমরা ভুলে যাই নেওয়ার সীমাটুকু? তখন না থাকে ফুলের সৌন্দর্য, আর না থাকে সাজের গৌরব। রিক্ত হয় বৃক্ষ, ধ্বংস হয় প্রকৃতি। পরিবেশের প্রতি হওয়া এমনই এক অত্যাচারের প্রতিবাদে কলম ধরেছিলেন শান্তিনিকেতনের ভূমিকন্যা শ্যামলী খাস্তগীর। সাম্প্রতিককালের এই লড়াই কিন্তু আজ ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের আলোচ্য। ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে শ্যামলী খাস্তগীর লক্ষ করেছিলেন বসন্ত উৎসবের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিশ্বভারতীর মেয়েরা পলাশ গাছের ডাল ভেঙে ফুল সংগ্রহ করতে শুরু করে দেয়। উৎসবে পলাশ ফুলের মালা গেঁথে মাথায় গলায় পরে তারা সাজবে বলে সকলে মিলে ভিড় করে শুরু করে পলাশ নিধন যজ্ঞ। তার ফলে দেখা যায় বসন্ত উৎসবের পরের দিন থেকেই পলাশ গাছগুলি সব রিক্ত ও ধূসর হয়ে পড়েছে। শ্যামলী খাস্তগীর প্রশ্ন তোলেন শুধুমাত্র কয়েক ঘণ্টায় নিজেদের ফুলমালার সাজে সাজিয়ে তোলার জন্য এইভাবে আমরা কি বৃক্ষ, ফুল এবং পাখিদের ক্ষতি করতে পারি? আশির দশকের গোড়ার দিকে শ্যামলী খাস্তগীর একাই এই পলাশ ধ্বংসের প্রতিবাদে আওয়াজ তুলেছিলেন। পরবর্তীকালে এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেল আরও অনেক ব্যক্তি এবং সংগঠনের মধ্যে। ২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পলাশ ধ্বংসের প্রতিবাদে পোস্টারও চোখে পড়ল। এবং সেই ছবি উঠে সংবাদপত্রেও। মালার কথা বলতে বলতে এই আন্দোলনের কথা তো বলতেই হয়। কারণ মানুষের নিজেদের তুচ্ছ স্বার্থপূরণ করতে নির্বিচারে পরিবেশ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করা বন্ধ হলেই পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ের প্রত্যেক সৈনিক গাইতে পারেন, “বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা।”

ছবি সৌজন্যে- অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়
শ্যামলী খাস্তগীর

এমন অনেক প্রতিবাদ, অনেক ভালোবাসা, আবেগ ও স্মৃতি জড়িয়ে থাকে অলঙ্কারের অঙ্গে। উল্লেখ করা যায় তৃতীয় লিঙ্গ ও ভিন্ন যৌনতার মানুষদের অধিকারের লড়াইয়ের কথাও। সদ্য অতিক্রান্ত হল জুন মাস, যাকে ‘এলজিবিটিকিউ প্রাইড মান্থ’ (LGBTQ Pride Month)  হিসেবে পালন করা হয়। এবছর এই গৌরব মাসের উদযাপনের সময় সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন অলঙ্কার কোম্পানির তরফে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ের মানুষদের জন্য গয়নার বিজ্ঞাপন খুব বেশি করে সামনে এসেছে। পাশাপাশি লিঙ্গনির্বিশেষে সকলের পরার জন্য ‘ইউনিসেক্স’ চেইন, লকেট এবং হার সম্প্রতি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।

সেনকো প্রাইড মান্থের নেকলেসের বিজ্ঞাপন।

আসলে ইতিহাসে অলঙ্কারের গুরুত্ব নিছকই মানুষের পরিধেয় সামগ্রী হিসেবে নয়। অলঙ্কার মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। আজকের ইতিহাস তো আর শুধুই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের ক্রমকাহিনি নয়, যুদ্ধ ও সন্ধির দিনলিপিও নয়। বর্তমানে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য আহার, পরিধান, শিল্প, সংস্কৃতি, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি যা কিছু মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

তথ্যসূত্র

১) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাণী চন্দ। (১৪১৮ বঙ্গাব্দ)। জোড়াসাঁকোর ধারে। কলকাতাঃ বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ।

২) কল্যাণী দত্ত। (২০১১)।  থোড় বড়ি খাড়া। কলকাতাঃ থীমা।

৩) গিরিশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ। (১৮২৮ বঙ্গাব্দ)। প্রাচীন শিল্প পরিচয় (দ্বিতীয় মুদ্রণ)। কলকাতাঃ সুবর্ণরেখা।

৪) চিত্রা দেব। (১৯৬১, ডিসেম্বর)। আবরণে-আভরণে ভারতীয় নারী, কলকাতাঃ সাহিত্য সংস্থা।

৫) নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। (২০০১)। প্রাচীন ভারতীয় সমাজ। কলকাতাঃ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ।

৬) প্রফুল্লময়ী দেবী। (২০১২)। ‘আমাদের কথা’, ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের লেখা (সম্পঃ পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়)। কলকাতাঃ গাঙচিল।

৭) ভারতী রায়। (২০১৪ জানুয়ারি)। একাল সেকাল পাঁচ প্রজন্মের ইতিকথা। কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স।

৮) রণবীর চক্রবর্তী। (২০০৭)। ভারত-ইতিহাসের আদিপর্ব। ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান।

৯) সঞ্চলিতা ভট্টাচার্য। (২০২৩, মার্চ ২৫)। ‘ভারতে আভরণের বিবর্তন : ঐতিহাসিক পর্যালোচনা’, ইতিহাস এষণা ৪ (সম্পঃ সৌমিত্র শ্রীমানী)। কলকাতাঃ বঙ্গীয় ইতিহাস সমিতি।

১০) সরলাদেবী চৌধুরানী। (১৩৮২ বঙ্গাব্দ)। জীবনের ঝরাপাতা। কলকাতাঃ রূপা অ্যান্ড কোম্পানি।

১১) সৌদামিনী দেবী। (২০১১ সেপ্টেম্বর)। পিতৃস্মৃতি। কলকাতাঃ দে’জ পাবলিশিং, স্কুল অফ উইমেনস স্টাডিজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

১২) Dr. Sabyasachi Chatterjee. (2022). Ecologically yours: Encompassing Environment & women, shaping gender from women’s perspective, (Ed.) Prof. Kakali Dhara Mandal. West Bengal:  University of Kalyani.

এম.ফিল গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। নারী-ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক-ইতিহাসচর্চায় আগ্রহী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *