জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে

জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে

যদি তুমি না, এ গান কোনদিন শোনো 
কেউ শোনে বা না শোনে, কি আসে যায়; 
যদি তুমি না মোর পথ চেয়ে দিন গোনো
আমি আঁধারে হারায়ে কি আসে যায়…

ঠিকই তো! এক আশ্চর্য সুন্দর গায়কির অধিকারী, যার মধ্যে কোনও পাণ্ডিত্যের প্রদর্শন থাকত না, কোনও দেখনদারি থাকত না, এমনকি সুর করার মধ্যে কোন মারপ্যাঁচ থাকত না – সেই অনন্য শিল্পী তথা সুরকার সতীনাথ মুখাপাধ্যায়ের গলায় এইসব গান শুনতে শুনতে গত শতাব্দীর ‘৫০/’৬০ /’৭০ এর দশকের বাঙালির বড় হয়ে ওঠা। তাঁর পক্ষেই এমনটা বলা শোভা পায়! সতীনাথ মুখোপাধ্যায় মানুষটি নিজেও ছিলেন সাদাসিধে, কম কথা বলা,  আত্মপ্রত্যয়ী। ১৯২৩ সালের ২৩ শে জুন লখনৌ শহরে জন্ম নেওয়া, কিন্তু ছোটবেলাতেই হুগলী জেলার চুঁচুড়া শহরে চলে আসা এই মানুষটির বাড়িতে সবাই ভালো গান জানতেন। বাবা তারকদাস মুখোপাধ্যায়ের গলা ছিল সুমিষ্ট। প্রাচীন বাংলা গান, শ্যামাসংগীত খুবই ভালো গাইতেন। ঠাকুর্দা তন্ময় হয়ে বেহালা বাজাতেন; মা ভালো গান গাইতে পারতেন। তবে তাঁরা কেউ কখনও জনসমক্ষে গানবাজনা করেননি। কিন্তু সতীনাথ আবার ছোটবেলা থেকেই চাইতেন তাঁর নামে রেকর্ড বের হোক, রেডিওতে তাঁর গান বাজুক। তবে তার জন্য কাউকে ধরা বা তোষামোদ করা – এসবের মধ্যে একেবারেই থাকতেন না। সেইজন্যই বোধ হয় ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-এর মত আরো অনেক শিল্পীর নামের সঙ্গে একাসনে সমোচ্চারিত হওয়া সতীনাথের যতটা প্রচার হওয়া উচিত ছিল, ততটা হয়নি। 

সতীনাথ যখন ক্লাস থ্রি-তে পড়েন, তখনই তাঁর ঠাকুর্দা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, তাঁর গান শেখানোর ব্যবস্থা করেদিলেন শ্রীপ্রবোধ ঘোষালের কাছে। বছর তিনেক প্রবোধবাবুর কাছে গান শিখবার পরে, শ্যামবাজারের ধীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছে সতীনাথ ঠুংরি, খেয়াল, ধ্রুপদ, ধামার, টপ্পা শিক্ষা করেন। এরপরে কিংবদন্তী শিল্পী শ্রী চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা করেন যতদিন চিন্ময়বাবু বেঁচে ছিলেন। 

সতীনাথের বয়স যখন খুবই কম, তখনই তিনি রেকর্ড কোম্পানির বইতে লেখা ঠিকানায় চিঠি লেখা শুরু করলেন! তাঁর ইচ্ছে তিনি গানের রেকর্ড করবেন! প্রায় খান পনেরো চিঠি লিখবার পরে গ্রামাফোন কোম্পানি তাঁকে জানাল – “তোমার যা লেখার, সেটা ৩/এ, নলিনী সরকার স্ট্রিটের ঠিকানায় লিখে জানাও। তুমি যেখানে চিঠি লিখেছ, সেটা HMV-র কারখানা!” অতএব তাই করলেন তিনি। মফ:স্বলের একটি অল্পবয়সী ছেলের বারংবার অনুরোধ আর অদম্য ইচ্ছে দেখে তৎকালীন রেকর্ডিং কর্তা হেমচন্দ্র সোমের উদ্যোগে সতীনাথের গান রেকর্ড করার ব্যবস্থা হল, গোপেন মল্লিকের সুরে। আর সেই গানের কথা লিখলেন স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম – “ভুল করে যদি ভালোবেসে থাকি।” অন্য গানটির কথা লিখেছিলেন শ্রীসুবোধ পুরকায়স্থ – “এইটুকু শুধু জানি।” 

সেই রেকর্ডে গায়ক হিসেবে মাস্টার বাদলের নাম ছাপা হয়েছিল। বাদল ছিল সতীনাথের ডাক নাম। গান দুটি ভালোই প্রশংসা পেয়েছিল, তবে বাড়ির লোক জানতে পারেনি ছেলের কীর্তির কথা। ছাদের ঘরে একা একাই বারবার রেকর্ডটি চালিয়ে শুনতেন সতীনাথ। বন্ধুরা শুধু তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল – “তোর এলেম আছে বলতেই হবে!” 

সম্ভবত চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে প্রথম রেকর্ড বের হওয়ার সময় থেকেই রেডিওতে অডিশন দেওয়া শুরু করলেন সতীনাথ, কিন্তু কিছুতেই পাশ করতে পারছিলেন না। প্রতিবারই জবাব আসে, “দু:খের সঙ্গে জানানো হচ্ছে আপনার কণ্ঠস্বরের সাথে মাইক্রোফোনের তালমিল হচ্ছে না। কিছু সময় পার করে আবার অডিশনে বসবেন।” সেই মতো মাস ছয়েক পরে আবার অডিশনে বসতেন। এরকম দশ দশবার অডিশনে ব্যর্থ হওয়ার পরে সতীনাথ ফোন করে বসলেন স্টেশন ডিরেক্টরকে। এবারে অডিশনের দিন স্বয়ং স্টেশন ডিরেক্টর হাজির থাকলেন এবং সে যাত্রায় দিব্যি পাশও করে গেলেন নাছোড়বান্দা সতীনাথ। এটা ছিল ১৯৪৮ সালের কথা। ততদিনে সতীনাথ গ্র্যাজুয়েশন করে A G Bengal এ চাকরি করছেন। এইভাবেই আকাশবাণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্থাপিত হল। 

১৯৫০ সাল বাংলা ছবিতে প্লে-ব্যাকও করে ফেললেন, ‘যুগদেবতা’ এবং ‘পথহারাদের কাহিনী’ ছবিতে। তবুও সেরকম ভাবে পায়ের তলার জমিটা শক্ত হচ্ছিল না। ১৯৫২ সাল দুটো গানের রেকর্ড বের হল। এক পিঠে “পাষাণের বুকে লিখো না আমার নাম, আমি চলে গেলে;” আর অন্য পিঠে “এ জীবনে যেন আর কিছু ভালো লাগে না।” দুটো গানেরই গীতিকার শ্রীশ্যামল গুপ্ত আর সুরকার শিল্পী স্বয়ং। বিশেষ করে প্রথম গানটি সেই সময়ে তো বটেই, এমনকি এই সময়ে পর্যন্ত সতীনাথের যাকে বলে সিগনেচার সং! এক অদ্ভুত বিষাদময় ভাবধর্মী পরিবেশন – মানুষের কাছে সতীনাথ হয়ে উঠলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মায়াময় গায়কিকে যে কয়েকজন সুরকার চমৎকার ভাবে ব্যবহার করেছিলেন, শ্রীসুধীন দাশগুপ্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সুধীনবাবুর সুরে সতীনাথ প্রায় গোটা দশেক গান গেয়েছিলেন – সব কটিই হিট হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে ভাস্কর বসুর কথায় সুধীনবাবুর সুরে সতীনাথ গাইলেন “সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলঙ্কার / কে জানে তার এরূপ দিল, সে কোন মণিকার।” অদ্ভুত সুন্দর এক গান! আর একই রেকর্ডের উল্টোদিকে – “এল বরষা যে সহসা মনে তাই, রিমঝিম রিমঝিম গান গেয়ে যাই।” আহা, যেমন সুর তেমনি অর্কেস্ট্রেশন! ১৯৫৯ সালে সুধীন দাশগুপ্তের কথা ও সুরে সতীনাথ গাইলেন, “ওই আকাশ প্রদীপ তারা জ্বেলো না জ্বেলো না / বধুঁয়া আমার বুঝি এলো না।” কী যে মন মাতাল করে দেওয়া গান! আমরা ছোটবেলায় এইসব গান শুনে শুনে বড় হয়েছি! আবার ১৯৬২ সালে সুনীলবরণের কথায় সুধীনবাবুর সুরে সতীনাথ গাইলেন, “আকাশ এত মেঘলা যেও নাকো একলা / এখনি নামবে অন্ধকার / ঝড়ের জলতরঙ্গে নাচবে নটী রঙ্গে / ভয় আছে পথ হারাবার” – যাকে বলে সুপারডুপার হিট গান। কিংবা এই গানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল – “যেও না চলে এ রাতে গো / এখনও তারা আকাশে জ্বলে / স্বপ্ন আমার কথা যে বলে / থাক তুমি সাথে গো।” 

শুধু কি সুধীন দাশগুপ্ত? তখনকার দিনের প্রসিদ্ধ সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে গাইলেন, “ঐ দূর আলেয়ার একটু আলো” আর “সূর্যমুখী আর সূর্য দেখবে না;” শ্যামল মিত্রের সুরে গাইলেন, “রাতের আকাশ তারায় রয়েছে ঘিরে।” নিজের দেওয়া সুরে গাইলেন, “জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পারো,” এবং “আজও তো এলো না সে,” আর “আজ মনে হয় এই নিরালায়, সারাদিন ছন্দের গান শুনি।” জনান্তিকে বলে রাখি, এই অংশটুকু হওয়ার পরেই একটা অদ্ভুত সুন্দর অর্গান বাজিয়ে অর্কেস্ট্রেশন ছিল, আমরা ওটার জন্য অপেক্ষা করতাম। 

আরো একটি গানের কথা মনে পড়ে – “বনের পাখী গায় বোলো না বোলো না / ফাগুন মায়া শুধু ছলনা ছলনা / কনকচাঁপার ডাকে আয় আয় রে…” 

আরো আছে! রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে সতীনাথের গাওয়া, “মাধবী গো মধুরাতে কেন কাঁদি, কাহারো লাগি এ নিশি জাগি।” যাঁরা শুনেছেন তাঁরাই এই গানের মর্ম বুঝবেন! 

সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের জীবনে প্রকৃত অর্থেই রঙ এনেছিলেন তাঁর স্ত্রী, আরো এক কিংবদন্তী গায়িকা শ্রীমতী উৎপলা সেন। ছায়াছবির জগতে যেমন উত্তম-সুচিত্রা, ঠিক তেমন করেই বাংলা গানের জগতে এই দুজনের নাম একসঙ্গে একটু অদল বদল করে সাজিয়ে বলা হত “উৎসতিপলানাথ!” গান তৈরি ও শিল্পী বাছাই ইত্যাদি সব ব্যাপারেই উৎপলা সেন, সতীনাথবাবুকে খুব সাহায্য করতেন। এই উৎপলা সেনের সুরেও সতীনাথ গান গেয়েছেন, “এলে তুমি সেই তো এলে” ও “শুধু তোমার জন্য এই অরণ্যে।” 

সতীনাথবাবু নিজে ছিলেন অন্য ধারার গায়ক ও সুরকার। একটা নিজস্বতা ছিল তাঁর দেওয়া সুরে, অপ্রয়োজনে অলঙ্কার প্রয়োগ করতেন না। ১৯৫৭ সালে, লতা মঙ্গেশকর প্রথমবার সিনেমার বাইরে যে দুটি আধুনিক বাংলা গান রেকর্ড করলেন, তার সুরকার ছিলেন এই সতীনাথবাবুই। “আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে” রেকর্ডের এক পিঠে, আর অন্য পিঠে “কত নিশি গেছে নিদহারা।” কেউ কি ভুলতে পারবে এই দুটি গানের আবেদন? এই দুটি গান নাকি প্রথমে পান্নালাল ভট্টাচার্যের গাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উৎপলা সেনের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত লতা মঙ্গেশকরকে দিয়েই গান দুটি গাওয়ানো হয়েছিল। প্রায় প্রত্যেক বড় শিল্পীই সতীনাথবাবুর সুরে গান গেয়েছেন এবং সেগুলি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায়, “তোমার আমার কারো মুখে কথা নেই,” শ্যামল মিত্রের গলায়, “তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর,” উৎপলা সেনের গলায়, “ঝিকমিক জোনাকির দীপ জ্বলে শিয়রে,” আর “কিংশুক ফুল হিংসুক ভারি।” ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য গাইলেন, “আমি চেয়েছি তোমায়।” সুপ্রীতি ঘোষের গাওয়া “যেথায় গেলে হারায় সবাই,” শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের গলায়, “এত যে শোনাই গান,” মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গলায়, “তুমি ফিরায়ে দিয়েছো মোরে,” ও “আমার হৃদয় নিয়ে আর কতকাল বলো কাছে এসে দূরে দূরে থাকবে” – এগুলি আধুনিক বাংলা গানের স্মরণীয় সম্পদ! 

সতীনাথ মুখোপাধ্যায় আর উৎপলা সেন – এঁদের জুটি ছিল ‘মেড ইন হেভেন।’ সেই স্বর্গ, যা হল সুরলোক। এঁরা দুজনেই যে বাংলা ছায়াছবিতে অনেক গান গেয়েছেন তা নয়। সতীনাথবাবু যেমন না গেয়েছেন বেশি বাংলা ছবিতে গান, তেমনই বাংলা ছবিতে সুরও করেননি। অল্প কয়েকটি ছবিতে প্লে-ব্যাক করেছেন মাত্র। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে অনুপম ঘটকের সুরে “জীবননদীর জোয়ার ভাঁটায়” অথবা ১৯৬৫ সালে, তপন সিনহার বিখ্যাত ছবি ‘অতিথি’র সেই বিখ্যাত গান – “মাঝে নদী বহে রে, এপারে তুমি …” (সহশিল্পী উৎপলা সেন)। এছাড়াও ‘রাতভোর,’ ‘রানি রাসমণি,’ ‘ অসমাপ্ত,’ ‘সাগরিকা,’ এরকম আরো কিছু বাংলা ছবিতে সতীনাথবাবুর গান শোনা যায়। নিজের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘বনপলাশীর পদাবলী’ ছবিতে – “এই তো ভবের খেলা”র মতো অবিস্মরণীয় গান অমর হয়ে আছে। ভাগ্যচক্র ছবিতে উৎপলা সেনের সঙ্গে গাওয়া দ্রুতছন্দের গান “ভাগ্যের চাকাটা যে ঘুরছেই…” একসময় রেডিওতে ছায়াছবির গান অনুষ্ঠানে খুবই বাজানো হত। 

সতীনাথ এমন একজন শিল্পী ছিলেন যার প্রকৃত মূল্যায়ন বোধহয় কখনওই হয়নি। তাঁর মত অনন্য শিল্পী, যাঁর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে অপরিসীম দক্ষতা ছিল, তাঁকে দিয়ে সেভাবে গাওয়ানোই হল না রাগাশ্রয়ী নজরুলগীতি, ভজন, গজল, বা ঠুংরি। হুগলির মহম্মদ মহসিন কলেজ থেকে বৃত্তিসহ আই এ এবং ডিস্টিংশন নিয়ে বি এ পাশ করা এই মেধাবী মানুষটির গলায় গাওয়া অন্তত দুটো নজরুলগীতির উল্লেখ না করলে এই রচনা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। 

“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?” এবং “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে,” যাঁরা শোনেননি, তাঁদের পক্ষে বোঝা কঠিন, তাঁর মরমী গায়নশৈলী গান দুটিকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৫৮ সালে এই দুটি গান এইচ এম ভি থেকে রেকর্ড করতে চাওয়াতে তাঁকে অনেক বাঁকা কথা শুনতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল আঙুরবালা / ইন্দুবালা / শচীনকর্তারা এসব গান অনেক গেয়েছেন, তাই নতুন করে ওসব গান রেকর্ড করবার প্রয়োজন নেই! অনেক অনুরোধ-উপরোধের পর কর্তারা রেকর্ড করতে রাজি হলেন। তারপরের কথা তো ইতিহাস! রেকর্ড দারুণ হিট হল। কোম্পানির ধারণা হল, নাঃ, নজরুলগীতির বাজার ভালোই আছে। 

এই এইচ এম ভি থেকে বিবাদ-বিসম্বাদের ফলে সতীনাথ যোগ দিয়েছিলেন মেগাফোন কোম্পানিতে। সেখানে যখন গৌরীপ্রসন্নবাবুর কথায় গাইলেন, সে গান ইতিহাস হয়ে গেল – এমনই বিষাদমাখা ও মিনতিভরা গায়কী তাঁর!

জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে
সে জীবনী লিখে রেখ তোমাদের গানের খাতায়
যেদিন রব না আর তোমাদের মাঝে
যদি এই তানপুরা আর নাহি বাজে
তখন হঠাৎ যদি মনে পড়ে মোরে
গেও শুধু মোর গান
যতটুকু লেখা থাকে তোমাদের স্মৃতির পাতায়… 

১৯৯২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর সকালবেলা বাজার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন শিল্পী। বেলা দেড়টা নাগাদ ভর্তি হলেন হাসপাতালে, বিকেলবেলাতেই ইহলোক ছেড়ে চলে গেলেন। সতীনাথ চলে গেলেন ঠিকই, কিন্তু শিল্পীর মৃত্যু নেই। আমরা সত্যি সত্যিই তাঁর জীবনী লিখে চলেছি, কারণ তাঁর স্বর, কণ্ঠ, গায়কি জীবন্ত হয়ে আছে আমাদের মনে। শিল্পীর মৃত্যু নেই! 

—–

তথ্যসূত্রঃ
আকাশবাণী কলকাতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আনন্দবাজার পত্রিকায় নির্মল নাথ এর রচনা। 

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত। 

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • তথাগত ভট্টাচার্য , July 16, 2023 @ 5:36 pm

    খুব মূল্যবান ও সময়োপযোগী একটি আলোচনা। আসলে কণ্ঠশিল্পী অথবা সুরকার- কোনো হিসেবেই সতীনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর প্রাপ্য সম্মান পান নি। সুব্রতবাবু যথার্থই বলেছেন- নিজের সুরের পাশাপাশি প্রায় সব প্রতিষ্ঠিত সুরকারের সুরে বহু অসাধারণ গানের সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে তাঁর কন্ঠে। নচিকেতা ঘোষ সুধীন দাশগুপ্তর পাশাপাশি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি অসামান্য কম্পোজিশন- “তুমি মেঘলা দিনের নীল আকাশের স্বপ্ন আমার মনে” আর “দুটি ওই কাঁকনের ছন্দ/আর কিছু মাধবীর গন্ধ” সতীনাথের কন্ঠে চির-অমর হয়ে থাকবে। ঠিক তেমনি সতীনাথের সুরে সুব্রতবাবুর উল্লেখিত গানগুলোর পাশাপাশি শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে “মোর গান একি সুর পেল রে”, শ্যামল মিত্রের কন্ঠে “তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর” , ‘ভাগ্যচক্র’ ছবিতে “হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে “তুমি ভালোবাসার সমুদ্র” কিংবা “কে যেন আমার মনকে কাঁদিয়ে”, মান্না দের কন্ঠে “অকূল গাঙের মাঝি রে ভাই” – প্রভূত জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও সতীনাথ নিজে তাঁর প্রাপ্য জনপ্রিয়তা পান নি- কিমাশ্চর্যম অতঃপরম !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *