বিস্ময়কর অজন্তা

বিস্ময়কর অজন্তা

অজন্তা এবং ইলোরার গুহাগুলোর প্রতি আকর্ষণ তো সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার ভ্রমণ-গন্তব্যের তালিকায় তাই অনেকদিন ধরেই তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি।

সময়টা ২০২৪ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ, আমরা যাচ্ছি পুনে থেকে মহাবলেশ্বর। একটা চা-বিরতির সময় ধাবায় বসেছি। হঠাৎ করেই আমাদের গাড়ির চালক, নাম রাজা-ভাউ (ভাউ অর্থাৎ ভাই, ঐ নামেই উনি পরিচিত), পুনে থেকে ঔরঙ্গাবাদ, ও সেখান থেকে অজন্তা-ইলোরা দেখার আইডিয়াটা দিয়েছিলেন। অনেক দিনের ইচ্ছে, তাই তাঁর প্রস্তাবটা চটপট আমাদের বেশ পছন্দ হয়।

শুভস্য শীঘ্রম! মহাবলেশ্বর থেকে কলকাতায় ফেরার পর, সেই পরিকল্পনাটা রূপায়িত করে ফেললাম। ২০২৪-এর ২৬শে নভেম্বর পুনে বিমানবন্দর থেকে রাজা-ভাউয়ের গাড়িতে চেপে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে  ঔরঙ্গাবাদে সরাসরি পৌঁছে গেলাম। বেশিরভাগ অংশেই রাস্তার অবস্থা বেশ ভালই ছিল! আমরা বার-তিনেক চা-বিরতি নিয়ে বেশ আরাম করেই প্রায় ছ ঘন্টা পরে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছলাম।

আগের দিনের একটানা যাত্রার পরে আমরা কিছুটা ক্লান্তও ছিলাম। তাই, পরের দিন সকালে আমরা ইলোরা দেখলাম। এটা তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি, ঔরঙ্গাবাদ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। তার পরের দিন, আমরা গাড়ি নিয়ে গেলাম অজন্তায়, ঔরঙ্গাবাদ থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে, গাড়িতে দু’ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগল।

যদিও কথাপ্রসঙ্গে প্রায়শই ‘অজন্তা-ইলোরা’ একসঙ্গে বলা হয়, দুটোর মধ্যে কিন্তু প্রায় ১০৫ কিমি দূরত্ব। আর দুটোরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অজন্তা তার ম্যুরাল (mural) চিত্রের জন্য বিখ্যাত আর ইলোরা বিখ্যাত তার স্থাপত্যের জন্য। দুয়েরই সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে এবং তাদের তাৎপর্য সঠিকভাবে বোঝবার জন্য একাধিকবার পরিদর্শন ও গবেষণার প্রয়োজন। আমাদের এই প্রথম অজন্তা-সফরে অল্প সময়ের মধ্যে যা দেখেছি তা অবশ্যই বিস্ময়কর ও চমৎকার। এই রচনাটা আমার চোখের লেন্সের মাধ্যমে অজন্তার গুহাগুলোকে অন্যদের কাছে তুলে ধরবার এক সামান্য প্রয়াসমাত্র।

ঐতিহাসিকভাবে, ইলোরার অনেক আগে অজন্তা গড়ে ওঠে। বৌদ্ধধর্মীয় শিল্প এবং শিলা-খোদাই ভাস্কর্যের মাস্টারপিস হিসেবে দুনিয়া জুড়ে প্রশংসিত অজন্তার গুহাগুলো সুন্দর ম্যুরাল চিত্রের প্রমাণ হিসাবে প্রায় দু হাজার বছর ধরে অসাধারণ কৃতিত্বের পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। গুহাগুলো রয়েছে মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি পর্বতমালার দাক্ষিণাত্য মালভূমির ঘন অরণ্যে লুকিয়ে-থাকা ওয়াঘোরা নদীর ধারে U-আকৃতির গিরিখাতে। বহুশত বছর ধরে গুহাগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত।

আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি

অজন্তা গুহাগুলো ভাগ্যক্রমে আবিষ্কৃত হয় ১৮১৭ সালে। কিছু ব্রিটিশ সৈন্য এই গুহাগুলোর উল্টোদিকের পাহাড়ে শিবির বসাতে গেলে, তাদের নজরে আসে, নদীর ওপারের পাহাড়ে কিছু স্তম্ভ ও গুহা। জনাকয়েক সাহসী সৈন্য পাহাড়ে উঠে গুহায় প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে, নির্জন গুহায় অসংখ্য বাদুড়, গুহার ভেতরে সুন্দর চিত্রকলা, ধর্মগ্রন্থ ও ভাস্কর্য দেখে তাদের একেবারে তাক লেগে যায়। ঘাঁটিতে ফিরেই তারা একথা জানায় ওপরওয়ালাদের। কেউ একজন এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে সে বিষয়ে একটি নিবন্ধও প্রকাশ করেন।

তবে প্রাথমিকভাবে তা খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেনি! এর বছর দশ-বারো পর, ১৮২৯ সালে, নিবন্ধটি পাঠা করেন জেমস ফার্গুসন। শিল্প, স্থাপত্য, ইতিহাস এবং পুরাণ সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন ফার্গুসন। কৌতূহলী হয়ে, তিনি জায়গাটা পরিদর্শন করেন। এর বেশ অনেকদিন পর, ১৮৪৪ সালে, এশিয়াটিক সোসাইটির ম্যাগাজিনে, তাঁর বিস্তারিত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানেই এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মোড়।

অবিলম্বে নিবন্ধটি নজরে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা মাদ্রাজ রেজিমেন্ট থেকে রবার্ট গিলকে এই চিত্রকর্মগুলো অনুলিপি করবার জন্য পাঠায়। তিনি বেশ কিছুদিন সেখানে বসে থেকে চিত্রগুলোর প্রতিলিপি তৈরি করেন এবং ইংল্যান্ডে পাঠান। সেগুলো লন্ডনের সিডেনহাম সেন্ট্রাল প্যালেসে রাখা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৮৬৬ সালে, চিত্রগুলির অধিকাংশই এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায়, মাত্র পাঁচটা বেঁচে গেছিল। ১৮৭৫ সালে প্রফেসর জর্জ গ্রিফিথস চিত্রগুলো আবার অনুলিপি করবার আরেকটা প্রচেষ্টা করেন। তিনি সেগুলোকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিলেন। সেগুলি লন্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটন মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, ১৮৮৫ সালে তার মধ্যে অনেকগুলো আবার আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়৷ বর্তমানে শুধুমাত্র ৫৬টা চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট মিউজিয়ামে। ১৯০৩ সালে হায়দ্রাবাদের নিজাম এক আইন পাশ করান, গুহাগুলো সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবার জন্য।

যদিও বিশ্বের কাছে অজন্তা ‘গুহা’ নামে পরিচিত, এগুলোর সৃষ্টি কিন্তু আদৌ প্রাকৃতিকভাবে হয়নি। প্রায় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাতবাহন (Satvahana) এবং বাকাটক বা ভাকাটক (Vakataka)। এই দুই রাজবংশের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো খোদাই করা হয়েছিল। ৩০টা বৌদ্ধ গুহার মধ্যে পাঁচটা চৈত্য (মন্দির), বাকিগুলো বিহার বা মঠ। গুহা # ৮, ৯, ১০, ১২, ১৩ ও ৩০ এগুলো প্রাচীনতম হীনযান (Hinayana) গুহা, যেখানে বুদ্ধকে কখনও সরাসরি দেখানো হয়নি, শুধুমাত্র পদ্ম, পিপল গাছ ইত্যাদি প্রতীকগুলোর মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হয়। বাকিগুলো হল মহাযান (Mahayana) গুহা যেখানে বুদ্ধের মূর্তি পূজা করা হ’ত। বেশিরভাগ গুহাই বিহার এবং তাদের ভেতরে ছোট ছোট শয়নাবাস (dormitory) রয়েছে।

[চৈত্য – ‘চৈত্য’ গৃহ বলতে বৌদ্ধ স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি উপাসনালয়, অভয়ারণ্য, মন্দির বা প্রার্থনা কক্ষকে বোঝায়।
বিহার বৌদ্ধ বিহার হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মঠ। এটি বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
হীন যানহীনযান সম্প্রদায় বুদ্ধকে ‘মানব সত্তা’ হিসাবে বিবেচনা করে। বুদ্ধের শিক্ষার হৃদয় হল দুঃখকে অতিক্রম করা। আনুমানিক খৃস্টপূর্ব ২৫০ থেকে হীনযান মতবাদ বেশি প্রচলিত হয়। এই মতবাদের ধর্মগ্রন্থগুলি পালি ভাষায় লিখিত।
 মহাযানবৌদ্ধদের মহাযান সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে বুদ্ধ একটি ‘ঐশ্বরিক সত্তা’ এবং তিনি ‘নির্বাণ’-এর পথ দেখান। আনুমানিক খৃস্টপূর্ব ৫০০ থেকে মহাযান মতবাদ বেশি প্রচলিত হয়। এই মতবাদের ধর্মগ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। ]

গুহা # ১ সবার আগে, এটা মহাযান বৌদ্ধ মঠ এবং বেশ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা আছে। গুহার ভেতরে ছোট ছোট ঘরে যাওয়ার দরজা রয়েছে যেখানে সন্ন্যাসীরা থাকতেন। এই গুহার দু’টো সবচেয়ে বিখ্যাত আঁকা ছবি হল বোধিসত্ত্বের প্রমাণ-আকার (life-size) মূর্তিগুলোর মধ্যে ডান হাতে একটা পদ্মফুল ধারণ করা পদ্মপানি, এবং বজ্রপাণির শান্তিপূর্ণ প্রতিকৃতি। গুহা # ১-এর কয়েকটা উল্লেখযোগ্য ম্যুরাল বিভিন্ন জাতক কাহিনির গল্পগুলোকে চিত্রিত করেছে। যেমন সিবি জাতক থেকে নেওয়া একটি কাহিনি। সেখানে এক বাজপাখি একটি পায়রাকে তাড়া করেছিল। পাখিটি বোধিসত্ত্বের কোলে আশ্রয় নিয়েছিল এবং বোধিসত্ত্ব বাজপাখির ওজনের সমপরিমাণ নিজের মাংস বাজপাখিকে দিয়ে পায়রাটিকে বাঁচিয়েছিলেন। ছবিটাতে প্রাসাদের দৃশ্য এবং রাজা তাঁর দেহাংশের ওজন নিচ্ছেন এমন দেখানো হয়েছে। আরেকটা ছবি মহাজনক জাতক থেকে,- এখানে বুদ্ধকে রাজা মহাজনক হিসেবে দেখানো হয়েছে যিনি তাঁর পার্থিব আনন্দ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। ছবিতে রাজপ্রাসাদের দৃশ্য দেখানো হয়েছে যেখানে রাজা ও রাণী বসে আছেন এবং রাজার মন-ভোলানোর জন্য মহিলারা নৃত্য প্রদর্শন করছে। এরকম আরো অনেক ছবি রয়েছে। গুহার ছাদে সুন্দরভাবে ফুল ও পাখির নক্সা দিয়ে অলঙ্কৃত করা রয়েছে।

পদ্মপাণি
বজ্রপাণি
গুহার ছাদের ছবি

কয়েক ধাপ ওপরে, গুহা # ২ একটা মহাযান বৌদ্ধ মঠ। সরস্বতীর অলৌকিক ঘটনাকে চিত্রিত করে, যেখানে বুদ্ধের এক হাজার মূর্তি দেখানো হয়েছে। এটাও বেশ ভাল অবস্থায় সংরক্ষণ করা রয়েছে। 

গুহা # ২, চিত্র ১
গুহা # ২, চিত্র ২

 

গুহা # ৪ একটা বড় বিহার, অনেক স্তম্ভ রয়েছে ও পদ্মাসনে বুদ্ধের ভাস্কর্য রয়েছে।

গুহা # ৫ অসমাপ্ত, কিন্তু একটা শাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কুমারীদের ছবি রয়েছে।

গুহা # ৪

গুহা # ৭ একটা গর্ভগৃহ, স্তম্ভসহ একটা হল (hall) এবং সন্ন্যাসীদের জন্য ছোট ছোট কক্ষ নিয়ে গঠিত। বৌদ্ধ থিম (theme) বর্ণনাকারী অনেক শিল্প প্যানেল (art panel) আছে। পদ্মের ওপর উপবিষ্ট বুদ্ধের অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।

গুহা # ৭ চিত্র - ১
গুহা # ৭ চিত্র - ২

 

গুহা # ৯ এবং #১০ হল প্রাচীনতম হীনযান চৈত্য। গুহা # ১০ ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রথম দেখতে পায় কারণ এটা ৪৫ ফুট উঁচু।

মাঝখানে খিলানযুক্ত ছাদ-ওয়ালা এক বিশাল স্তূপ রয়েছে। গুহা # ১০-এ ব্রাহ্মী লিপিতে এক সংস্কৃত শিলালিপি রয়েছে যা প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চিত্রকর্মগুলো অসংখ্য, বেশিরভাগই জাতক কাহিনি থেকে।

গুহা #১০

গুহা # ১১ আকৃতিতে কিছুটা বর্গাকৃতির এবং গুহা # ১৪ ও #১৫ হল মহাযান গুহা৷ গুহা # ১২ ও #১৩ এদের ভেতরে রয়েছে সন্ন্যাসীদের শয়নের জন্য পাথরের বেদীর বিছানা।

গুহা # ১৬-তে বিভিন্ন জাতক কাহিনির চিত্রগুলো আঁকা, যেমন নন্দের রূপান্তর, মায়ার স্বপ্ন, বুদ্ধের জীবনের দৃশ্য, বুদ্ধ এক গাছের নীচে একা বসে, প্রভৃতি। গুহা #১৬ ও #১৭ এগুলোর প্রবেশপথে দুটো ক’রে দুর্দান্ত পাথরের হাতি রয়েছে। গুহা # ১৭-তে, বুদ্ধ বিভিন্ন রূপে এবং ভঙ্গিতে উপবিষ্ট, একটা প্যানেল যা জীবনচক্র দেখায় এবং আরেকটা যেটা শ্রীলঙ্কায় যুবরাজ সিমহালা-র (মতান্তরে বিজয়সিংহ) অভিযানের গল্প বলে।

গুহা # ১৮ হ’ল জলের আধারসহ এক ছোট গুহা। গুহা # ১৯ হল এক চৈত্যগৃহ, বৌদ্ধ শিলা-খোদাই স্থাপত্যের অন্যতম সেরা নমুনা। এতে নাগ-মূর্তি রয়েছে এবং বুদ্ধকে রক্ষা করছে এক সর্প।

গুহা # ১৯ চিত্র - ১
গুহা # ১৯ চিত্র - ২

গুহা # ২৬ হ’ল এক উপাসনালয় যা গুহা # ১৯-এরই মতন। খনন করা শেষ গুহাগুলোর মধ্যে এটা একটা প্রধান শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে। দেওয়ালে বুদ্ধের (শুয়ে থাকা বুদ্ধ) মহাপরিনির্বাণ আছে ও “মার দ্বারা প্রলোভন” নামের কিংবদন্তি চিত্র রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে এই গুহাগুলো প্রাচীন ভারতীয় শিল্প ও স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের উদাহরণ। ভারতীয় সভ্যতার শৈল্পিক উজ্জ্বলতার প্রমাণস্বরূপ ১৯৮৩ সালে, UNESCO এটাকে World Heritage Site হিসেবে মনোনীত করে। আমাদের প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের আভাস পেতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে পর্যটক আসেন। তাঁদের মধ্যে কতজন সত্যিই এর প্রাসঙ্গিকতা বোঝেন, তা জানি না। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, অজন্তা গুহাগুলোর উল্লেখ চীনা বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী ফা-হিয়েন (পঞ্চম শতাব্দী) এবং হিউয়েন সাং (সপ্তম শতাব্দী) এঁদের ভ্রমণকাহিনিতে রয়েছে।

তবে উদ্বেগজনক বিষয় হ’ল যে অজন্তা গুহাচিত্রগুলোর অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটছে। এর পিছনে জৈবিক প্রভাব, জলের নিষ্কাশন, বৃষ্টিপাত বা অন্যান্য উৎস থেকে আসা জল এবং মানুষের নানান কার্যকলাপ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের কারণ আছে। এদের মিলিত ফল রূপে এই শিলাগুলির এখন ক্ষয়প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। Archaeological Survey of India (ASI) কাঠামোগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সেই কাজ চলছে। অজন্তা গুহাগুলোর প্রবেশপথে সান-স্ক্রিন পর্দা রয়েছে যাতে সরাসরি সূর্যের আলো দেওয়াল-চিত্রগুলোর ক্ষতি না করে।

সেদিনে দু-তিন ঘন্টা সময়ের মধ্যে আমি যা দেখেছি তা সমস্ত প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই চিত্রগুলো ভারতীয় সভ্যতার স্বর্ণযুগের দুর্দান্ত সৃষ্টি এবং শৈল্পিক সংবেদনশীলতার পরিচায়ক। আশ্চর্যের বিষয় হ’ল এই যে কেমনভাবে, অত্যন্ত শ্রমসাধ্য উপায়ে, অত্যল্প সরঞ্জাম ব্যবহার ক’রে, প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে, সেই আমলের ম্যুরাল এবং ভাস্কর্যগুলো বানানো হয়েছিল সেটা নিজেই এক দুর্জ্ঞেয় রহস্য। আমি ভেতর থেকে অনুভব করলাম যে আমি কেবলমাত্র বাইরের রূপটা দেখেই মুগ্ধ হয়েছি, এই মহান শিল্পকর্মের তাৎপর্য বুঝতে হলে আরও গভীরভাবে চর্চা করতে হবে। তবে যা দেখলাম তাতে আমি মন্ত্রমুগ্ধ এবং আমার কাছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র:

1. “অজন্তা অপরূপা” – নারায়ণ সান্যাল – ভারতী বুক স্টল – জুন-২০১৩ সংস্করণ
2. “The Colourful World in Ajanta & Ellora” – Almohammadi & Panda – Mittal Publishing – 2011 Edition

ছবি: লেখিকার তোলা

সারা জীবন কলকাতায় বাস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরি সায়েন্স-এ ডিগ্রি অর্জন করে তিন দশকেরও বেশি সময় ধ’রে একটি স্বনামধন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত থেকে ইনফর্মেশন রিসোর্স সেন্টার-এর (IRC) প্রধান হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন। পেশার অংশ হিসেবে বেশ কিছু বিষয়-সংক্রান্ত দেশি-বিদেশি সম্মেলনে তাঁর একাধিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ভালো লাগে ছবি আঁকা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া এবং, অবশ্যই ঘুরে বেড়ানো। ভারতের নানা প্রদেশে এবং বিদেশে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করে সম্প্রতি একটি ভ্রমণ-ব্লগ শুরু করেছেন – santraveldiaries.blogspot.com

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • শান্তনু গঙ্গোপাধায় , January 15, 2025 @ 4:38 pm

    চমৎকার তথ্যঋদ্ধ লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *