এই মাত্র খবর পেলাম, বন্ধু জিয়াউদ্দীন তারিক আলি আর নেই। কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকালে বাংলাদেশে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। ‘৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তারিক আলী ছিলেন একজন উদার মনের মানুষ। বাংলাদেশে বহু কর্মকাণ্ডে তিনি নিবিড় ভাবে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি হিসেবে সেটিকে গড়ে তোলার কাজে ওঁর অবদান ছিল তুলনীয়। এছাড়া সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের-এর তিনি ছিলেন সভাপতি। নীচে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের মাছরাঙা টিভি-তে তারিক আলির ইন্টারভিউয়ের লিঙ্ক দেওয়া হল।
আমার উদারমনা বন্ধুদের মধ্যে তারিক ছিল অন্যতম। ওর সঙ্গে আমার আলাপ নিউ জার্সিতে। তখন জানতামও না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তারিক সক্রিয় অংশ নিয়েছিল। যখন বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ মিউজিয়াম’ গড়ে তুলছে, তখনই ভালো করে জানলাম। মৃত্যুর পর ঢাকা ট্রিবিউন-এ দেখলাম, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে তারিকের ভূমিকা উল্লেখ করে।
এখানে ওকে জানতাম, রবীন্দ্র-ভক্ত, গান পাগল এবং সুলেখক হিসেবে। যদিও নিজেকে সুলেখক মানতে চাইত না। আমি আর অগ্রজ-প্রতিম সুমিত রায় মিলে ‘অবসর’ বলে যে ওয়েবজিন শুরু করেছিলাম, তাতে তারিক ছিল উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য। উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি শঙ্কর-দাকে (অধ্যাপক শঙ্কর সেন) এ-বছর হারিয়েছি, এখন তারিক ভাইকে।
অনেক কথা মনে পড়ছে এলোমেলো ভাবে। মাঝে মাঝে যখন বাংলাদেশে ওকে ফোন করেছি,
“কী খবর তারিক ভাই? কোথায়?”
“এই তো বনানী-তে পুজো প্যান্ডেলে এসেছি।”
পরে বাংলাদেশেরই কে জানি আমাকে বললেন, তারিক প্রত্যেক পুজোয় ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে বেরিয়ে পড়ে – নানান পুজো মণ্ডপে হাজিরা দেবার জন্য।
একবার ফোন করেছিলাম নিউ জার্সির প্যাটার্সনে বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্টদের অনেকের নানান রকম অসুবিধা হচ্ছে – সে ব্যাপারে সাহায্যের জন্য। ওখানে ইমিগ্রেন্টদের একটা বড় সমস্যা ভাষা সংক্রান্ত, যেহেতু অনেকেই এসেছেন লটারি ভিসাতে। শমীতা অনেক সাহায্য করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ওর একার পক্ষে অসম্ভব, এগিয়ে আসা দরকার কোনও বাংলাদেশী সংস্থার, যারা সিলেটি ও অন্যান্য বাংলা ডায়ালেক্টে-এ স্বচ্ছন্দ। তারিকের কি কোনও কন্টাক্ট আছে?
“আচ্ছা সুজন-দা, বউদির এতো মুসলমান-প্রীতি কেন?” বলেই হো হো করে হাসি। “আচ্ছা। দেখছি।”
আমাদের রেডিও সংখ্যার জন্যও বেশ খেটেখুতে একটি লেখা তৈরী করেছিল তারিক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রেডিও স্টেশন নিয়ে। ঐতিহাসিক সেই লেখাটির লিংক ও নীচে দিলাম।
https://abasar.net/abasarold/abasar/Radioissuetariq.html
এই হল তারিক আলি। বিদায় তারিক ভাই, বিদায়।
(ছবিটি ঢাকা ট্রিবিউন-এর একটি ইন্টারভিউ থেকে নেওয়া।)