দীননাথ কাশ্যপ ও সত্তর দশকের বাঙালি কৈশোর: ফিরে দেখা

দীননাথ কাশ্যপ ও সত্তর দশকের বাঙালি কৈশোর: ফিরে দেখা

 

সঠিক মনে নেই সেটা কোন সাল ছিল। ১৯৬৯ নাকি ১৯৭০? ক্লাসের এক বন্ধুর হাতে “কিশোর ভারতী” পত্রিকার একটা মাসিক সংখ্যা প্রথম চোখে পড়েছিল। সেই সময়ে, ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই, আমাদের বাড়িতে নিয়মিত কেনা এবং অবশ্যই পড়া চলত “মৌচাক,” “সন্দেশ,” “শিশুসাথী,” “শুকতারা,” আর দেব সাহিত্য কুটীরের অনুবাদ-সিরিজের বই ও পূজাবার্ষিকীগুলি। তাই নব্য-প্রকাশিত আরেক বাংলা পত্রিকার ওপর আকর্ষণ স্বাভাবিক ছিল। সহপাঠীর থেকে ধার করে নেওয়া সেই পত্রিকায় প্রথম পড়ি “দুরন্ত ঈগল”-এর এক কিস্তি, তখন তা বেরোচ্ছে ধারাবাহিকভাবে [চিত্র-১]।

                                     চিত্র-১ [“দুরন্ত ঈগল” – কিশোর ভারতী মাসিক সংখ্যা]

পামিরের যাযাবর শিকারিরা

প্রথমবার পড়াতেই চমকে গেলাম। ততদিনে অনুবাদ সিরিজের বেশ কিছু বই পড়ার সূত্রে বিদেশি – মূলতঃ ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-জার্মানি-অ্যামেরিকা, এবং অল্পস্বল্প চিন [“দ্য গুড আর্থ”] ও খানিকটা রাশিয়া [“ওয়ার অ্যান্ড পীস”, “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট”, “দ্য ইডিয়ট”, “মাদার”, “মাইকেল স্ট্রগফ”] – এইসব দেশগুলোর পরিবেশ-সমাজ-রীতিনীতি বিষয়ে সামান্য ধারণা হয়েছে। কিন্তু এ যে একেবারে অন্যরকম! ‘জুরা’ তো একদম আলাদা চরিত্র। তার সঙ্গীসাথী ও আশপাশের মানুষজন আর ভৌগোলিক পরিবেশও তাই। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পটভূমিকায় পামির মালভূমির যাযাবর শিকারি গোষ্ঠীগুলোর জীবন নিয়ে বাংলা সাহিত্যে, অন্তত কিশোর-সাহিত্যে তো বটেই, (সম্ভবত) অভিনব। তাই, প্রথম পদার্পণেই বাজিমাত করেছিলেন দীননাথ কাশ্যপ, পাঠকমহলে যাঁর নাম তখনও পর্যন্ত (প্রায়) অজানা।

অনেক পরে, সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত বইটার [চিত্র-২] গোড়ার ‘স্বীকৃতি’ থেকে জেনেছি যে রাশিয়ান ঔপন্যাসিক Georgii Pavlovich Tushkan (১৯০৫—১৯৬৫)-এর ১৯৪০ সালে রচিত “Jura” উপন্যাসের ১৯৪৪ সালে ইংরেজিতে অনুদিত “The Hunter of the Pamirs” অবলম্বনে “দুরন্ত ঈগল” উপন্যাসটা দীননাথ কাশ্যপ এই ছদ্মনামে লেখেন দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯১৭—১৯৯৫) যিনি ১৯৬৮ সালে (বাংলা ১৩৭৫) কিশোর ভারতী পত্রিকা [চিত্র-৩] প্রতিষ্ঠা করেন এবং দীর্ঘকাল তার সম্পাদকও ছিলেন।

চিত্র-২ [“দুরন্ত ঈগল” – পত্র ভারতী সংস্করণ, জুলাই-২০১৪]

পাঁচ খণ্ডের এই উপন্যাসে যেসব স্থান ও লোকজনের দেখা পাওয়া যায়, তাদের সঙ্গে ভারতীয়দের সম্বন্ধ খুব দূরের নয়, সুদীর্ঘকালের যোগাযোগ ও ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যমেই তা গড়ে উঠেছিল। সেই সময় সদ্য ব্যর্থ হয়েছে প্রথম মহাযুদ্ধকালের সশস্ত্র ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের কিছু যোদ্ধা উত্তরের তুষারাবৃত দুর্লঙ্ঘ্য পর্বতমালার সারি ডিঙিয়ে মধ্য এশিয়ার দুর্গম গোপন পথ পেরিয়ে সুদূর রাশিয়ায় পৌঁছে সেদেশের বিপ্লবে অংশ নেন এবং তৎকালীন লালফৌজ ও partisan-দের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেন। তাঁদের প্রতিনিধিস্থানীয় চরিত্রের সাক্ষাৎও এই উপন্যাসে পাওয়া যায়, ‘গোরা’ তেমনই একজন।

চিত্র-৩ [শারদীয়া কিশোর ভারতী – প্রথম চার বছরের]

রাজগৃহের ধন্বন্তরি রাজকুমার

আচ্ছা, ইতিহাস-আশ্রিত, কল্পনানির্ভর বাংলা উপন্যাসের কথা বললে আপনাদের প্রথমেই কার নাম মনে পড়ে? উত্তরটা সহজ – নিশ্চয়ই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি কিন্তু এই গোত্রের প্রথম যে উপন্যাসটা মন দিয়ে পড়েছি তার নাম “কালের জয়ডঙ্কা বাজে” [চিত্র-৪ (বাঁদিকে)]। সেটা (খুব সম্ভবত) ১৯৭০ সালের পুজোর ছুটিতে। লেখক সেই দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, এবার তিনি স্বনামে হাজির শারদীয়া কিশোর ভারতীর পাতায়।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেকার বুদ্ধদেব-বিম্বিসারের যুগের রাজগৃহ নগরীর পটভূমিকায় লেখা সেই কাহিনি। বিম্বিসারের পৌত্র জীবক, যাঁর পিতা রাজকুমার অক্ষয়। অল্পবয়সেই জীবক রাজ-সিংহাসনের প্রলোভন ছেড়ে মানুষকে নিরাময় করে তোলবার পবিত্র ব্রত নিয়েছিলেন, হয়েছিলেন বৈদ্য। তক্ষশীলার গুরুগৃহে আচার্য আত্রেয়র কাছে আয়ুর্বেদের শিক্ষালাভ করে অসামান্য পাণ্ডিত্য নিয়ে ও ভেষজ গবেষণায় আবিষ্কারের সাফল্য পেয়ে কালক্রমে তিনি ‘বৈদ্যরাজ ধন্বন্তরি’ নামে অভিহিত হন। নৃপতি বিম্বিসার ও ভগবান বুদ্ধের চিকিৎসাও তিনি করেছিলেন। নিজের মায়ের রহস্যে ঢাকা পরিচয়ের কারণে তিনি জীবনে অনেক বেদনা সহ্য করেন। মায়ের অন্তিমশয্যায় তিনি জানতে পারেন তাঁর নিজের জন্মবৃত্তান্ত।

 

চিত্র-৪ [সত্তর দশকের গোড়ায় পরপর দু’বছরের শারদীয়া কিশোর ভারতীর বড় আকর্ষণ]

আমি স্বয়ং কবিরাজ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত, বৈদ্যবংশের ছেলে। মনে আছে, অল্পবয়সে এই লেখাটা পড়ে বোধহয় সেই প্রথম আমার মনে হয়েছিল ডাক্তার হতে পারলে তো মানুষের অনেক সেবা করা যায়, যথাসময়ে চেষ্টা করে দেখব একবার? তারপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে, সময়কালে সুযোগ পেয়েও আমি ডাক্তারি পড়তে যাইনি – তার অন্য পার্থিব কারণও ছিল। কিন্তু সেই ‘মনে হওয়া’-টা আজও আমার মনে রয়ে গেছে, আর তারই সঙ্গে কোথাও হয়তো থেকে গেছে এই উপন্যাসের প্রতি আমার ভেতরের টানটা।

নীল বিদ্রোহের নির্যাস

দীনবন্ধু মিত্রের “নীলদর্পণ” নাটকটির নাম শিক্ষিত বাঙালি মাত্রেই আশা করি জানেন। আমিও জেনেছি দশম শ্রেণীতে, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের ক্লাসে বাংলা নাটক সম্বন্ধে পড়তে গিয়ে। কিন্তু তার বছর তিনেক আগেই, ১৯৭১ সালের পুজোর ছুটিতে, বাংলার নীলচাষিদের ঊনবিংশ শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ ভাগের ইংরেজ নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সেই ইতিহাস কিছুটা জানা হয়ে গেছিল, শারদীয়া কিশোর ভারতীর পাতায় সেই দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরই “নীল ঘূর্ণি” [চিত্র-৪ (ডানদিকে)] উপন্যাসটা পড়ার দৌলতে।

অবিস্মরণীয় সেই ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসটা পড়ে আমার সদ্য-কিশোর রক্তে দোলা লেগেছিল, একথা আজও মনে পড়ে। ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার ও ব্রিটিশ পুলিশবাহিনীর দমন নীতির বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকসমাজ নিজেদের জীবন বাজি রেখে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে হাতে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল – তারই প্রতীক ঝুলন ফকির (ফকিরদাদু), তরুণ কাশীনাথ ও চাষীর মেয়ে কুসুমকুমারী। এই উপন্যাস তারই কল্পনাশ্রয়ী খণ্ডচিত্রের এক সমাহার – কিন্তু ‘কষ্টকল্পনা’ নয়! কারণ?

এই প্রসঙ্গে লেখকের নিজের জবানিতে আছে:

“ষাটের দশকে একটি বই আমি সংগ্রহ করি কলকাতার ফুটপাথের পুরনো বইয়ের স্টল থেকে। বইখানিতে মূল বা আদি মলাট এবং টাইটেল-পৃষ্ঠা বা নামপত্রাদি কোনও কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। অতিসাধারণ এক কাগজের মলাটের ওপর হাতে লেখা ছিল শুধু ‘নায়েবমশাই’ কথাটা। নীলকরদের ব্যক্তিগত জীবন এবং নীলকুঠির অভ্যন্তরীণ অবস্থার চিত্রণ-কালে এই বইখানি থেকে আমি সাহায্য পাই। কোনও ভাবেই রচয়িতার নাম জানতে না পারায় দায়বদ্ধ থেকে যাই।”

প্রায় এক দশক পর এই রহস্যের কিঞ্চিৎ সমাধান হয় – সাহিত্য, ভাষা ও ইতিহাসের ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত কয়েকজন গুণী ব্যক্তির কাছ থেকে দীনেশচন্দ্র জানতে পারেন যে, ঐ বইটার লেখক হলেন (বহু আগেই) প্রয়াত সাহিত্যিক দীনেন্দ্রকুমার রায়। অথচ চরিতাভিধান সমেত বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক গ্রন্থের কোথাও দীনেন্দ্রকুমারের রচিত গ্রন্থের তালিকায় এই বইটার কোনও উল্লেখ দীনেশচন্দ্র পাননি।

টারজান ও মুগলির শহুরে অবতার?

চিত্র-৫ [বিস্ময়বালক ভাবা – টারজান ও মুগলির শহুরে অবতার?]

১৯৭২ সালের শারদীয়া কিশোর ভারতী বেশ খানিকটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। কারণ? এতে প্রকাশিত হয়েছিল “নাম তার ভাবা” নামক এক উপন্যাস যার মুখ্য চরিত্র জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা এক বালকশিশু, যে কিনা এক ভালুক পরিবারে লালিতপালিত হচ্ছিল। কলকাতার এক বিত্তশালী সম্ভ্রান্ত ডাক্তার-পরিবারের নিঃসন্তান মমতাময়ী কর্ত্রী শ্রীমতী রায় স্বামীর সঙ্গে সেই জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে শিশুটির প্রতি এক অদ্ভুত বাৎসল্য স্নেহ অনুভব করেন এবং সেই শিশুও তাঁর খুব ন্যাওটা হয়ে পড়ে। রায়-দম্পতি জঙ্গলের আধিকারিকদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সেই শিশুকে নিজেদের সঙ্গে করে কলকাতায় নিয়ে আসেন, খানিকটা দত্তক নেওয়ার মতন। তার নাম রাখা হয় ভাবা (ভালুক-বালক) এবং এই অসাধারণ বুদ্ধিমান,  বলশালী ও মনুষ্যেতর প্রাণীদের ভাষা-বুঝতে-পারা ছেলেটি শহুরে পরিবেশে তার পালক পিতা-মাতার ভালবাসায়-স্নেহে-যত্নে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। বাড়িতে তার প্রধান খেলার সঙ্গী হয় এক অ্যালসেশিয়ান কুকুর, এক ভালুকছানা, ও এক বাচ্চা শিম্পাঞ্জি। গৃহশিক্ষকদের কাছে বাড়িতেই লেখাপড়া শিখতে-থাকা অত্যন্ত মেধাবী ভাবা বেড়ে উঠতে থাকে ভবেন রায় হিসেবে।

বাংলা কিশোর সাহিত্যে এমন চরিত্র ও ঘটনার বিন্যাস বোধহয় এই প্রথম। সেইসময়ে ব্যাপারগুলো আমার (ও আমার মোটামুটি সমবয়স্ক বাঙালি ছেলে-মেয়েদের) অনেকের কাছে খুব অভিনব ও আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। ভাবাকে নিয়ে পরের কয়েক বছর ধরে দীনেশচন্দ্র কয়েকটি sequel-ও লেখেন যেগুলো পরে একত্রে প্রকাশিত হয় “ভাবা সমগ্র” [চিত্র-৫] হিসেবে।

আমার কাছে অবশ্য ভাবার কাহিনির প্রতি আকর্ষণ আর বছর দুয়েকের মধ্যেই বেশ কমে যায় এবং স্কুলজীবনের শেষ দু’বছরে ভাবা-কেন্দ্রিক লেখা পড়া প্রায় বন্ধই করে দিই। হয়ত ১৯৭৩ সাল থেকেই আস্তে আস্তে দেশ-আনন্দবাজার শারদীয়া ও সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় (নামের বর্ণানুক্রমে) জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, রমাপদ চৌধুরী, বিমল কর, বুদ্ধদেব গুহ, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, এঁরা আমার বাংলা সাহিত্যপাঠের খিদে মেটাতে শুরু করলেন – আমি ‘বড়’ হয়ে গেলাম!

এর কয়েক বছর পরে, সত্তর দশকের শেষের দিকে Edgar Rice Burroughs-এর Tarzan আর Rudyard Kipling-এর “The Jungle Book”-এর Mougli এদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন মনে হয়েছিল ভাবা চরিত্রের মধ্যে বেশ খানিকটা যেন Tarzan-এর শহুরে অবতারের ছাপ রয়েছে আর তার শুরুতে কোথাও যেন Mougli-র বীজও নিহিত। জানিনা এই মনে হওয়াটা কতটা সঠিক, আর দীনেশচন্দ্রের অতি-অনুরাগী ভক্তরাই বা এই ভাবনাটাকে কেমন চোখে দেখবেন।

আগ্নেয়গিরির ইতিবৃত্ত

চিত্র-৬ [আগ্নেয়গিরির ইতিবৃত্ত]

একবার একটু ফিরে তাকাই ষাটের দশকের দিকে – “The ’60s were the era of reform, not only for the country but also the Bengali literary world” – যখন ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য, সঙ্কর্ষণ রায়, সমরজিৎ কর, অদ্রীশ বর্ধন, এঁরা বাংলা কিশোর-সাহিত্যে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখার ধারা আবার জাগিয়ে তুলেছেন। অনেকের মতন আমিও আগে জানতাম না যে “ভয়ঙ্করের জীবনকথা” [চিত্র-৬] বইটা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬০-৬১ সালে।

“১৯৫৬-৫৭ খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত আগ্নেয়গিরি তথা ভূগর্ভ সংক্রান্ত যেসব সর্বজনগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য তখন জানা ছিল, তাহারই ভিত্তিতে ‘ভয়ঙ্করের জীবনকথা’-য় সংক্ষেপে আমি বলিতে চাহিয়াছিলাম আগ্নেয়গিরির জীবনের রোমাঞ্চকর গল্প। – লিখেছিলেন দীনেশচন্দ্র, এই বইয়ের ‘প্রস্তাবনা’ অংশে, যখন ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই বইটি ১৯৮৯ সালে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ হিসেবে পুনঃ-প্রকাশিত হয়।

১৯৫৭ সালে পৃথিবীর পঁয়ষট্টিটিরও বেশি দেশের বিজ্ঞানীরা  একত্রে অভিযান চালান geophysical data সংগ্রহ করতে – ১৯৫৭ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৫৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড়বছরব্যাপী এই অভিযানের সময়কে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছিলেন International Geophysical Year (IGY), অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ভূপ্রকৃতি-বিষয়ক বর্ষ। এই অভিযানে সংগ্রহ-করা প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই লেখা এই বইটা। বিজ্ঞানের আপাতনীরস কঠিন বিষয়কে গল্পচ্ছলে বলবার যে পরিবেশন-পদ্ধতি ও ভাষারীতি দীনেশচন্দ্র অনুসরণ করেন, তা সর্বস্তরের পাঠক-পাঠিকাদের অনুমোদন ও সমর্থন লাভ করেছিল। জনপ্রিয় এই বইটির আনুমানিক লাখ-দেড়েকেরও বেশি কপি ছাপা হয়েছিল প্রথম প্রকাশ থেকে আশির দশকের শেষদিক পর্যন্ত।

শেষের কথা

রচনাটা লিখতে গিয়ে ও কী লিখব তা ভাবতে গিয়ে খানিকক্ষণের জন্য ফিরে গেছিলাম আমার সেই নব্য-কৈশোরের সত্তর দশকের প্রথমার্ধে যেখানে আরো অনেক লেখকের সঙ্গে ভাবিয়েছিলেন, মনও মাতিয়েছিলেন দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে আমার কিন্তু সবচেয়ে ভাল মনে আছে “নীল ঘূর্ণি” – হয়ত বিদেশি ব্যবসায়ী আর দমনকারী শাসকের জুলুমের বিরুদ্ধে subaltern চাষিদের লড়াইয়ের কাহিনি বলেই, কি জানি! “আর এক আরম্ভের জন্য” কাব্যগ্রন্থের কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন:

“রাজা আসে যায়, রাজা বদলায়, নীল জামা গায়, লাল জামা গায়, এই রাজা আসে ওই রাজা যায়, জামা-কাপড়ের রং বদলায়, দিন বদলায় না!”

চিত্র-৭ [দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – লেখক পরিচিতি, পুস্তক-আলোচনার অংশবিশেষ]

কৃতজ্ঞতাস্বীকার এবং তথ্যনির্দেশ:

১। “দুরন্ত ঈগল” – দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পত্র ভারতী, জুলাই-২০১৪ সংস্করণ

২। “কালের জয়ডঙ্কা বাজে” – দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পত্র ভারতী, এপ্রিল-২০১২ সংস্করণ

৩। “নীল ঘূর্ণি” – দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পত্র ভারতী, এপ্রিল-২০১৫ সংস্করণ

৪। “ভয়ঙ্করের জীবনকথা” – দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পত্র ভারতী, অগাস্ট-২০১২ সংস্করণ

৫ https://en.wikipedia.org/wiki/Dinesh_Chandra_Chattopadhyay

৬। https://en.wikipedia.org/wiki/Georgii_Tushkan

৭। https://www.patrabharati.com/product-category/kishore-bharati/

৮। https://en.wikipedia.org/wiki/Indigo_revolt

৯। https://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_science_fiction

ছবির কৃতজ্ঞতাস্বীকার

  • ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত – চিত্র-১, ৩, ৫, ৭
  • “দুরন্ত ঈগল” – চিত্র-২
  • “কালের জয়ডঙ্কা বাজে”, “নীল ঘূর্ণি” – চিত্র-৪
  • “ভয়ঙ্করের জীবনকথা” – চিত্র-৬
কলরব রায়ের জন্ম কলকাতায়, ১৯৫৯ সালে, কর্মজীবনের বেশির ভাগও সেখানেই অতিবাহিত। স্কুল-জীবন কাটে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক অঞ্চলের তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। পাড়ার ক্লাবে ও স্কুলের ক্রিকেট দলে নিয়মিত খেলবার অভ্যাসটা ছিল। কলেজ-জীবনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র – ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে স্নাতক, কম্প্যুটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতকোত্তর। তিন দশক তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসূত্রে দেশে-বিদেশে প্রচুর ঝাঁকিদর্শন করে, তারপর সপ্তবর্ষব্যাপী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপনা অন্তে ২০১৯ সালে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ। পাঁচ বছর বয়স থেকেই ‘ক্রিকেট-প্রেমিক’। বর্তমানে ‘নন-ফিকশন’ বইয়ের প্রতিই বেশি আকর্ষণ, যদিও সবচেয়ে প্রিয় তিন বাংলা কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিবরাম চক্রবর্তী। ক্রিকেট-বিষয়ক বইয়ের একনিষ্ঠ পাঠক, সংগ্রাহকও বটে। প্রিয় ক্রিকেট-লেখকদের মধ্যে আছেন শঙ্করীপ্রসাদ বসু, রে রবিনসন, টনি কোজিয়ার, ডেভিড ফ্রিথ, প্রমুখ। গত বছর প্রকাশিত হয়েছে লেখকের প্রথম বই "ক্রিকেটের খেরোর খাতা", এই বছর এল “ক্রিকেটের খেরোর খাতা: ফলো-অন”, আর লিখেছেন “Our Cricketing Odyssey with Kapil”, ভাস্কর বসু-র সঙ্গে যুগ্মভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *