অনেক দিন থেকেই অনেকে
আমাকে বলেছেন লাদাখ যাবার জন্যে, আমি কেবলই বলে এসেছি যে,
না আমি ওই ঊষর মরুভূমি দেখতে যাব না। শেষে অন্যান্যদের দাবী
গ্রাহ্য করে লাদাখে এসে বুঝলাম যে আমার ধারণা কতটা ভুল।
ওখানে ঘুরে এসে আমার মনে হয়েছে যে ‘ঊষরতার মধ্যে স্নিগ্ধতা,’
মাত্র তিনটি শব্দের এই অসম্পূর্ণ বাক্যটির সাহায্যে সম্পূর্ণ
রূপে লাদাখের বর্ণনা করা যায়।
যাই হোক, ‘অবসরের’ ভাসা পাতাতে আপনারা লাদাখের ছবি ও লেখা
দেখেছেন ও পড়েছেন নিশ্চয়। আমার মনে হয়েছে স্থির ছবি ও ভাষায়
এর সুন্দরতা বোঝানো যায় না ঠিক মতো। তাই আমি ক্রমশ এখানকার
বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে করার
চেষ্টা করছি।
প্রথমেই বলা ভাল যে লাদাখে দর্শনার্থী কেবল মাত্র গোম্ফা
ও লেকের জন্যেই নয়, অদ্ভুত প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা ভারতের আর
কোথাও দেখা যায় না, দেখতেও আসেন। আর সেই দৃশ্য যে কয়েকটা
বিশেষ স্থান-কেন্দ্রিক হয়ে আছে তা নয়, পুরো পথের ধারেই ছড়িয়ে
আছে। আমার ভাই কল্যাণ বলেছিল যে এখানে ‘কোথাও ভিডিও বন্ধ
করবে না।‘ আমি স্বাভাবিক ভাবেই সব সময় ভিডিও চালিয়ে রাখতে
পারিনি, তা সত্ত্বেও চলার পথের ছবি পরে সম্পাদনা করতে বসে
কোন অংশ কেটে কোন অংশ রাখি, এর সমাধান করা খুবই কষ্টকর কাজ
হয়েছিল। তাই আপনাদের লাদাখের ভিডিও-বর্ণনায় প্রায় অর্ধেক
সময় গাড়ি থেকে পথের ধারের ছবি থাকবে।
আমাদের লাদাখ ভ্রমণ
আরম্ভ হয়েছিল জুন মাসের শেষে অমরনাথ দর্শন সাঙ্গ করার পর
জুলাই মাসে। পহলগাম থেকে শ্রীনগর এসে দুই রাত্রী বিশ্রাম
করে আমরা J&KSRTC-র শ্রীনগর-কারগিল বাসে কারগিলের উদ্দেশে
যাত্রা শুরু করি মোট ১১ জন আত্মীয়-বন্ধু মিলে । আসুন আপনাদের
আমি সেই লাদাখ যাত্রার চলচ্চিত্রায়ণ অনেক সংক্ষিপ্ত আকারে
দেখাই পরস্পর কয়েকটি অংশে।
আপনারা বুঝতেই পারছেন
প্রথমেই কারগিল যাওয়ার পথের ভিডিও দেখাবো। এই ভিডিওতে শ্রীনগর
থেকে বেরোবার কিছুটা পর থেকে সোনামার্গ হয়ে বালতালের ওপরের
রাস্তা, জোজি লা (গিরি-পথ) পৌঁছবার ঠিক আগে পর্যন্ত আমরা
এসেছি দেখানো আছে ।
এর পর দুই ভাগে জোজি
লা পার হওয়া দেখবেন। প্রথমে জোজি লার মাঝামাঝি পর্যন্ত
এবং পরে এখান থেকে
কারগিল পৌঁছানো পর্যন্ত )।
তবে কারগিল পৌঁছবার
বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকে ভিডিও নেওয়া সম্ভব হয়নি, দুটো কারণে।
প্রথম কারণ হলো রাত হয়ে যায় বলে বিকেলের কিছু পর থেকে বেশ
কিছু সময়ে আলোর অভাব। সেই দিন পূর্ণিমা তিথির কাছাকাছি হবার
কারণে চাঁদের আলোর অভাব ছিল না, তাই কিছু ছবি অন্তত তোলা
যেতে পারতো পরের দিকে। কিন্তু কেন জানিনা আমার চোখ ঘুমে
জড়িয়ে যাচ্ছিল। এটাই হলো ছবি না থাকার দ্বিতীয় কারণ। এর
জন্যে আমার কোন ওজরের প্রয়োযন ছিল না কিন্তু আমার নিজেরই
ওই সময়কার ছবি না তুলতে পারার জন্যে দুঃখ রয়ে গেছে। কারগিলের
প্রায় ৫০কিমি. আগে দ্রাস পার করার কালে ঘুমের ঘোরে চাঁদের
রুপালি ও স্বপ্নিল জ্যোৎসনায় সমগ্র চরাচর স্নানরত বুঝতে
পারা সত্ত্বেও ভিডিও না নেবার ব্যাপার আমার মনে এখনও ব্যথা
দেয়।
যদিও ভিডিওতে বলা আছে,
কারগিল আমরা পৌঁছেছিলাম J&KSRTC-র বাস-ড্রাইভারের বদান্যতায়
রাত ১২টার পর, পৌঁছবার কথা ছিল বিকাল ৬টায়। আর আমাদের স্থৈর্য
ও ধৈর্য পরীক্ষা করার জন্যে ‘ভ্রমণ-দেব’ সেই সময়ে কারগিলে
পাওয়ার অফ করে দিয়েছিলেন এবং আকাশে মেঘ এসে গিয়েছিল।
যাই হোক, কারগিলে আমরা পরের সারাটা দিন বেশ ঘুরলাম এবং ওখানকার
ও বাইরে থেকে আসা কয়েকজন লোকের সঙ্গে আলাপ করলাম। এদের মধ্যে
বাংলা থেকে আসা কর্মীও ছিলেন।