বাংলার রেনেসাঁ নিয়ে গল্প স্বল্প
‘Renaissance’ is a French word meaning “rebirth.”
On December 4, 1829 The Bengal Sati Regulation was passed by the then Governor-General Lord William Bentinck. This act banned the Sati practice in all jurisdictions of British India.
[১] প্রথম পুনর্জন্মের ইঙ্গিত
<> অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্ত অবধি <>
বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল পলাশীর যুদ্ধ। ১৭৫৭ সালে পলাশীর (বর্তমান নদীয়া জেলায় অবস্থিত) এক আম বাগানে বাংলার তৎকালীন নবাব সিরাজদ্দৌলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অধিক সেনা শক্তি নিয়ে রবার্ট ক্লাইভ দ্বারা পরিচালিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য সেনা বাহিনীর কাছে ২৩শে জুন ঘটিত যুদ্ধে পর্যুদস্ত হন। এই যুদ্ধের ১১৮ বছর পর ১৮৭৫ সালে কবি নবীনচন্দ্র সেন ‘পলাশীর যুদ্ধ’ নামক একটি কাব্য লেখেন। সাড়া পড়ে যায় সারা বাংলায়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ সেই কাব্যের গুণগ্রাহী ছিলেন। উক্ত কাব্যের পঞ্চম সর্গের প্রথম পরিচ্ছেদের একটি পংক্তি নীচে দিলাম, যেখানে একটা জাতির ১১৮ বছরের দীর্ঘ হতাশা-দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বনি শুনতে পাবেন।
পঞ্চম সর্গ।
শেষ আশা
মুরশিদাবাদে আজি আমোদ মোহিনী,
নাচিয়া বেড়ায় সুখে প্রতি ঘরে ঘরে;
পরিয়াছে দীপমালা যামিনী কামিনী,
ভাসিতেছে রাজধানী সঙ্গীতসাগরে।
অহিফেন-মুগ্ধ মিরজাফর পামর;
ঢুলু ঢুলু করিতেছে আরক্ত লোচন;
“উড়িষ্যা বেহার বঙ্গ ত্রিদেশ-ঈশ্বর”—
বলিয়া পলাশিজেতা করেছে বরণ।
লভেছে পাতিয়া সেই উর্ণনাভ ফাঁদ!
তীর্থযাত্রা উপদেশ ধূর্ত্ত উমিচাঁদ।
‘পলাশীর যুদ্ধ’ নবীনচন্দ্রের কবিখ্যাতির প্রধান অবলম্বন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আখ্যায়িকা কাব্যগুলিতে সাধারণত দূরকালের ইতিহাস বা পুরাণ থেকে বিষয়বস্তু সংগ্রহ করা হত। নবীনচন্দ্র অনতিদূরবর্তী কালের একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কাব্যের বিষয়রূপে গ্রহণ করে সাহসিকতারই পরিচয় দিয়েছিলেন। যে পরাধীনতার জন্যে তৎকালীন শিক্ষিত সমাজে গ্লানিবোধ দেখা দিয়েছিল তার প্রধান কারণ পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়। তখনকার ইংরেজরচিত ইতিহাসে সিরাজ-চরিত্র কলঙ্কিতভাবে চিত্রিত হয়েছে। নবীনচন্দ্রও সিরাজ চরিত্র চিত্রণে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের প্রভাব অতিক্রম করতে পারেননি। তাই সিরাজকে কাব্যে প্রধান চরিত্রের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেছেন। এ কাব্যে দেশপ্রেমের উদ্দীপ্ত বাণী উচ্চারিত হয়েছে মোহনলালের কণ্ঠে। ‘পলাশীর যুদ্ধ’-এর পাঁচটি সর্গে বিভক্ত। প্রতিটি সর্গে একটি চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছে। দেশাত্মবোধ-প্রকাশের জন্য কবি প্রধানত নির্ভর করেছেন মোহনলাল উপর। নবীনচন্দ্র এই কাব্যের বহুস্থানে বায়রনের ‘চাইল্ড হ্যারল্ড’ কাব্যের যুদ্ধবর্ণনা পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। ‘পলাশীর যুদ্ধ’-এর কোনও কোনও অংশে কবির উৎকৃষ্ট কল্পনাশক্তির পরিচয় আছে। জাতীয়তাবোধ উন্মীলনের প্রথম যুগের এই কাব্য দেশের জন-জীবনে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই জাতীয়তাবোধের যখন উন্মীলন ঘটল তখন ক্লাইভ স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। প্রতিশোধ নেওয়া হয়নি।
উপরোক্ত rebirth, তথা পুনর্জন্ম সংজ্ঞাটিকে যদি আমরা সদর্থে গ্রহণ করি, তবে বাংলার রেনেসাঁ বলতে বুঝতে হবে বঙ্গভূমি বলতে যে অঞ্চলটিকে আমরা জানি, যেখানে আমরা বাঙ্গালিরা থাকি, বাংলা ভাষায় কথা বলি এবং সেই অঞ্চলের মানবজীবনের কল্যাণ-সাধনার্থে একনিষ্ঠ ভাবে সম্পৃক্ত “পুনর্জন্ম”র সূচিত হয়েছিল, তাদের দিকে আমাদের তাকাতে হবে in terms of প্রাগৈতিহাসিক, ইতিহাস ভিত্তিক, সামাজিক ও শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক নতুন কোনও সাফল্যের দিকে এবং যে সকল প্রাতঃস্মরণীয় বঙ্গসন্তানগণ এই কীর্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁদের সবাইকে এই নিবন্ধের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থিত করতে হবে। তার আগে আপনাদের একটা কথা বলি – এই যে দেশটা, নামেই বঙ্গভূমি, কিন্তু কিসের দেশ! তার আছে না আছে চতুর্দিকে সার্বভৌম সীমারেখা যার মাঝখানে আমাদের দেশাত্মবোধ সুরক্ষিত। না আছে সংবিধান, স্বাধীনতা। আজ পাঠান এলেন, রাজা হয়ে বসলেন, কাল মুঘল এলেন, পাঠানকে সরিয়ে রাজা হয়ে বসলেন।
এই রকম চলছিল। নতুন রাজা – সুবাহ বাংলার নতুন নতুন রাজধানী – পাটনা – ঢাকা – মুর্শিদাবাদ … জোব চার্ণক সাহেব তিনটি গ্রাম জুড়ে নতুন শহর বানাল। নতুন শহর – তার জন্মদিন ধার্য হল কলকাতা ২৪ অগাস্ট ১৬৯০ – সিরাজদ্দৌল্লা জন্মাতে তখনও ৪৩ বছর বাকি। নতুন সব ক্যালেন্ডার – শকাব্দ, হিজরি, বঙ্গাব্দ, ……
একটা সামান্য কথা মনে পড়ে গেল – রাধানাথ শিকদার (১৮১৩ – ১৮৭০) হেনরি ডিরোজিও’র ছাত্র ছিলেন এবং সেই সুবাদে ডিরোজিও স্থাপিত প্রতিভাধর যে দল নির্মিত হয়েছিল, Young Bengal, তিনি সেই দলেই ছিলেন এবং তাঁর নিজ প্রতিভার প্রকাশে, বিজ্ঞানের অতি স্বল্প সাহায্য নিয়েই তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের সঠিক উচ্চতা মেপে ছিলেন। ইতিহাসে তাঁর নাম সেই বাবদে কোন সম্মান পাননি, বরঞ্চ সেই কীর্তির মালিক হয়েছিলেন Surveyor General of India from 1830 to 1843. Sir. George Everest – আমি মাউন্ট এভারেস্টে এর কথা বলছি।
আর একটা ক্ষুদ্র উদাহরণ দিইঃ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,
১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে ভূতত্ত্ববিদ হল হুগলী জেলার গোবিন্দপুর গ্রামের এগারো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে কুনকুনে গ্রামে একটি হরিতাভ প্রস্তর নির্মিত কুঠার ফলক কুঠার ফলক (Boucher or Celt) আবিষ্কার করেছিলেন। এতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে আজি হতে প্রত্ন-প্রস্তর যুগ, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন হাজার বৎসর পূর্বে আমাদের বঙ্গভূমিতে লৌহখনিজ উৎপাদন এবং সেই উৎপাদিত খনিজর সাথে অন্য ধাতু মিশিয়ে ব্যবহারোপযুক্ত বস্তু নির্মিত হত। কিন্তু আমার বর্তমান নিবন্ধের উদ্দেশ্য এই নয় যে মাটি খুঁড়ে বঙ্গসন্তানগণ কতগুলি কুঠার, বর্শা, ছুরি নির্মাণ করতাম তার হিসাব দাখিল করা। আপনি কি জানেন, রবার্ট ক্লাইভ (তখনো ‘লর্ড’ হননি) পলাশীর যুদ্ধ জিতে প্রথমেই বাংলার অনবদ্য বস্ত্রবয়ন শিল্প দখল করে নিয়ে সেই সমস্ত চোখ ধাঁধানো বস্ত্র ইয়োরোপে রপ্তানি করতে শুরু করে, সেখানকার বস্ত্রশিল্প সর্বনাশ ঘোষণা করেন? কিন্তু সেটা তো বাংলার শিল্প নয়। (এই নিবন্ধের পরবর্তী অধ্যায়ে এই ঘটনার বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া আছে)
আমি ফিরে যাই সামাজিক অত্যাচারের ঘটনায় – যাঁরা নিপীড়ক বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের উজ্জ্বলদিক গুলিকে তুলে ধরি। সেই তালিকায় আমার প্রথম ‘অভিরুচি’ হলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি হয় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে নয় ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন – কিন্তু এই দুই বছরের ফারাকে আমাদের এই প্রয়াসের যাথার্থ্য নির্ণয়ে কোন ফারাক পরবে না। রামমোহনের পিতা, রামকান্ত রায়ের তিন বিবাহ ছিল। রামকান্তর প্রথমা স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। দ্বিতীয়া স্ত্রী তারিণী ছিলেন দুই পুত্র জগমোহন ও রামমোহন এবং এক কন্যার মাতা।
সতীদাহের মত ঘৃণ্য একটা সামাজিক প্রথার কবে শুরু হয়েছিল, তার নির্দিষ্ট নির্দেশ কোথাও নেই। আমাদের শাস্ত্রে আছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ৩১০২ BCE, অর্থাৎ ৩১০২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। আমরা মহাভারতে পাই, পাণ্ডু রাজার মৃত্যু হলে তাঁর দুই পত্নীই সহমরণে যাবার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু, পাঁচ সদ্যজাত পুত্র অসহায় হবে, এই বিচারে গুরুজনগণ বিধান দেন, মাতা মাদ্রী অগ্নিতে প্রবেশ করবেন ও কুন্তীদেবী এই পাঁচ শিশুর দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন।
তাই যদি হয়, এই ইতিহাস গ্রাহ্য করে আমি ধরে নিচ্ছি যে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের পূর্ব হতেই সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। এইবার বাংলার রেনেসাঁ নিয়ে গল্প-স্বল্পের প্রথম গল্পটা শোনাই :
রামমোহনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন জগমোহন। তিনি ১৮১১ সালে দেহরক্ষা করলে তাঁর স্ত্রী তাঁর অনুগমন করতে চান। শোনা যায় (কার নিকট হতে কে শোনে, সেই বৃত্তান্ত আমি সংগ্রহ করেছি। নীচে দিলাম।) যে রামমোহন তাঁকে এই কাজ থেকে তাঁকে নিবৃত্ত করবার জন্য প্রচুর প্রয়াস পেয়েছিলেন, কিন্তু সফল হননি। অতঃপর চিতার উপরে রামমোহনের বৌঠাকুরাণীর অঙ্গে যখন আগুন আসে লাগল, তখন ঐ নারী আর্তনাদ করে চিতা থেকে নেমে আসবার উপক্রম করেন। কিন্তু তাঁহার গোঁড়া আত্মীয় ও পুরোহিতগণ তাঁকে বাঁশ দিয়ে চেপে চিতার ঊপরে ধরে রাখে এবং সেই বিপন্ন নারীর চিৎকার চেপে রাখবার জন্য ঢোল, কাঁশি ইত্যাদি উচ্চৈশব্দে বাজাতে থাকে।
অসহায় রামমোহন তাঁর বৌঠাকরুণকে রক্ষা করতে না পেরে অসীম ক্রোধে, অনুকম্পায়, হতাশায় সেই দাহ ক্ষেত্রের উপর দণ্ডমায়ন হয়ে প্রতিজ্ঞা করেন যে এই নিষ্ঠুর প্রথা উচ্ছেদ না করিয়া তিনি বিশ্রাম না করিবেন না।
এই প্রতিজ্ঞাটি সম্পন্ন করতে রামমোহনের লেগেছিল আঠারো বৎসর।(১)
আমি আমার এই বিভাগটির নাম দিয়েছি ‘প্রথম পুনর্জন্মের ইঙ্গিত।” হয়ত রামমোহনের হৃদয়ে ১৭৫৭ সালের পরাজয়ের গ্লানি জ্বলে উঠেছিল ১৮১১ সালের সতীদাহের অগ্নিকাণ্ড রূপে। রামমোহন হিন্দু ধর্মের নানা Scripture on Sati, ধর্মগ্রন্থের নানা উল্লেখ, বই পত্র, পুঁথি ইত্যাদি নিয়ে কলকাতার Viceroy (২) দিল্লীর Governor General এর দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে বেঁধেছিল এক মহা যুদ্ধ। একদিকে সনাতন ধার্মিক নিয়মাদি আর অন্য দিকে মানব সমাজের ‘পুনর্জন্মের’।
আমি যে যে সব দলিল দেখার সুযোগ পেয়েছি তার মধ্যে এই দলিলগুলি নিঃসন্দেহে রামমোহন রায়ের পক্ষে যায়, যথা –
[ক] Sati is a particularly relevant social practice because it is often used as a means to prevent inheritance of property by widows. In parallel, widows are also sometimes branded as witches – and subjected to violent expulsion from their homes – as a means to prevent their inheritance.
[খ] Columbia University Press. Time: Around 1663 Aurangzeb was most forthright in his efforts to stop sati. According to Manucci, on his return from Kashmir in December, 1663, he “issued an order that in all lands under Mughal control must abolish Sati.
[গ] আমাদের অতি পরিচিত শ্রীরামপুর কলেজের ফাদার উইলিয়াম কেরি এই বিষয়ে রাজা রামমোহনকে বহুলাংশে সাহায্য করেছেন (সঙ্গে ছিলেন তাঁর মুন্সী রামরাম বসু। (৩) সেই বাবদে একটি দলিল পাওয়া গেছে যেটি বলছে:
William Carey, a British Christian evangelist, noted 438 incidents within a 30-mile (48-km) radius of the capital, Calcutta, in 1803, despite its ban within Calcutta. Between 1815 and 1818 the number of incidents of sati in Bengal doubled from 378 to 839. Opposition to the practice of sati by evangelists like Carey, and by Hindu reformers such as Ram Mohan Roy ultimately led the British Governor-General of India Lord William Bentinck to enact the Bengal Sati Regulation, 1829, declaring the practice of burning or burying alive of Hindu widows to be punishable by the criminal courts.
[ঘ] Other legislation followed, countering what the British perceived to be interrelated issues involving violence against Hindu women, including the Hindu Widows’ Remarriage Act, 1856, Female Infanticide Prevention Act, 1870, and Age of Consent Act, 1891. Ram Mohan Roy observed that when women allow themselves to be consigned to the funeral pyre of a deceased husband it results not just “from religious prejudices only”, but, “also from witnessing the distress in which widows of the same rank in life are involved, and the insults and slights to which they are daily subject.”
Note: Nicolao Manucci (19 April 1638 – 1717) was a Venetian writer, a self-taught physician, and traveller, who wrote accounts of the Mughal Empire as a first-hand witness. His work is considered to be one of the most useful foreign sources for the events that took place in India under Mughal rule.
এছাড়াও রাজস্থানে মহিলাদের ‘জহর ব্রত’র প্রসঙ্গ উঠেছে, কিন্তু সেটা Bengali Social Perspective এ প্রযোজ্য হবে না বলে বাতিল হয়েছে।
এই আটাত্তর বৎসর ব্যাপী যে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রামমোহন, সেই যুদ্ধে তাঁর বিরুদ্ধে এসে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাচীন হিন্দু মানবিকতা সম্পন্ন ভারতীয় তথা ইংরাজ। ১৮২৯ সালে যে আইন প্রণয়ন করে হয়েছিল তা সারা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার সমস্ত গ্রাম, শহর, জনপদের আবাসীদের উপর প্রযোজ্য হয়েছিল। ব্রিটিশ দমননীতি যেমন অক্লেশে সাধারণ মানুষের ওপর প্রযোজ্য হয়েছিল, তেমনই সেই শক্তি দিয়ে ব্রিটিশ সরকার উপরোক্ত আইনের দ্বারা অশুভশক্তি সম্পন্ন বিক্ষুব্ধ মানুষদের দমন করেছিলেন।
এই মহা সাফল্যের জন্য রাজা রামমোহন রায়কে সমস্ত বঙ্গবাসী ‘ফাদার অফ বেঙ্গল রেনেসাঁ’ বা বাংলার পুনর্জন্মের পিতা বলে অভিহিত করেন। শুধু তাই নয়, রাজা রামমোহন রায়ের স্মরণ সভায় ১২৯১ সালের (1884) ৫ই মাঘে, সিটি কলেজ হলে সমগ্র কলকাতাবাসী তাঁর স্মৃতি সভায় রবীন্দ্রনাথ যে শ্রদ্ধাবাণী পাঠ করেন, তার কিয়দংশ নীচে দিলাম :
“রামমোহন রায় যখন ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেন তখন এখানে চতুর্দিকে কালরাত্রির অন্ধকার বিরাজ করিতেছিল। আকাশে মৃত্যু বিচরণ করিতেছিল। মিথ্যা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে তাঁহাকে সংগ্রাম করিতে হইয়াছিল। মিথ্যা ও মৃত্যু-নামক মায়াবী রাজাদের প্রকৃত বল নাই, অমোঘ অস্ত্র নাই, কোথাও তাহাদের দাঁড়াইবার স্থল নাই, কেবল নিশীথের অন্ধকার ও একপ্রকার অনির্দেশ্য বিভীষিকার উপরে তাহাদের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত। আমাদের অজ্ঞান – আমাদের হৃদয়ের দুর্বলতাই তাহাদের বল। অতি বড়ো ভীরুও প্রভাতের আলোকে প্রেতের নাম শুনিলে হাসিতে পারে, কিন্তু অন্ধকার নিশীথিনীতে একটি শুষ্ক পত্রের শব্দ একটি তৃণের ছায়াও অবসর পাইয়া আমাদের হৃদয়ে নিষ্ঠুর আধিপত্য করিতে থাকে। যথার্থ দস্যুভয় অপেক্ষা সেই মিথ্যা অনির্দেশ্য ভয়ের শাসন প্রবলতর। অজ্ঞানের মধ্যে মানুষ যেমন নিরুপায়, যেমন অসহায়, এমন আর কোথায়? রামমোহন রায় যখন জাগ্রত হইয়া বঙ্গসমাজের চারি দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন তখন বঙ্গসমাজ সেই প্রেতভূমি ছিল।”
তাঁর মৃত্যু হয় – ১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইংল্যান্ডের গ্লসস্টারশায়ার স্থিত ব্রিসটল শহরে ১৮৩৩ সালে।
[২] পুনর্জন্মের প্রসার – বিদ্যাসাগর মশাইয়ের করকমল দ্বারা
বাংলার স্বনামধন্য কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায়, লিখেছেন !
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বিদ্যার সাগর তুমি, বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু – উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ, কি সেবা তার সে সুখ সদনে! –
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী;
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল দাসরূপ ধরি;
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে;
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।
আপাতপাঠে এটাই মনে হয় যে, এটি হল এক মহাপ্রতিভাশালী বঙ্গসন্তান তাঁর গুরুপ্রতিম মাত্র পঞ্চবর্ষীয় জ্যেষ্ঠ বিদ্যার সাগরকে তাঁর বন্দনা জ্ঞাপন করছেন। যে সময় কালে এই অপূর্ব কবিতা লিখিত হয়েছিল (আনুমানিক ১৭০ বছর আগে) সে কালে এইটাই রীতি ছিল অগ্রজকে প্রণাম ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মশাই সত্যই ছিলেন দয়ার সাগর এবং অসংখ্য বঙ্গসন্তান তাঁর দয়ার প্রভাবে উপকৃত হয়েছেন, যার প্রমাণ লিপিবদ্ধ আছে আমাদের মানবেতিহাসে।
রাজা রামমোহন যেমন ছিলেন ধনী সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান, সেই তুলনায় ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন এক মেধাসহকার বিদ্বৎ বংশের সন্তান, কিন্তু আর্থিক ক্ষেত্রে এই পরিবারটির বেঙ্গল রেনেসাঁ’র দ্বিতীয় নেতা নিঃসন্দেহে ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়। তাঁর সঙ্গে রাজা রামমোহনের একটা উল্লেখযোগ্য ফারাক ছিল, রামমোহন ছিলে ধনী, সমৃদ্ধ পরিবারের সন্তান। কিন্তু জ্ঞানে, দেশের মানুষের জন্য কর্মে ঝাঁপিয়ে পরবার ব্যাপারে দুজনেই ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিদ্যাসাগরের সাংসারিক দারিদ্র কোনও মতেই তাঁকে উচ্চশিক্ষা লাভের পথে আটকে রাখতে পারেনি। এটা জরুরী ছিল যে, সর্বপর্যায়ে শিক্ষা ছড়িয়ে দেবার জন্য, নিজেকে শিক্ষিত হতে হবে এবং দেশের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার কর্মপন্থা মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।
বিদ্যাসাগর মশাই নিজের সামনে সরাসরি তিনটি কর্তব্য রেখেছিলেনঃ
[১] বিধবা বিবাহ প্রচলন; (এই কার্যের উল্লেখ উপরেই আছে।)
[২] বহু বিবাহ রদ; এবং
[৩] সর্বস্তরে শিক্ষা।
শেষোক্ত বিভাগে, শিক্ষা ও বঙ্গভাষা প্রচারে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্ত মশাই সততা সহকারী। তিনি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তজা মশাইয়ের পিতামহ।
১৯৩৯ সালের পৌষ মাসে আনন্দবাজার পত্রিকার পাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরের প্রতি এক অনবদ্য বিনয়ের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যে ঋণ স্বীকার করে গেছেন, তা হল এই রূপ,
“যে গদ্যভাষারীতির তিনি প্রবর্তন করেছেন, তার ছাঁদটি বাংলা ভাষায় সাহিত্যরচনা-কার্যের ভূমিকা নির্মাণ করে দিয়েছে। অথচ যদিও তাঁর সমসাময়িক ঈশ্বর গুপ্তের মতো রচয়িতার গদ্যভঙ্গির অনুকরণে তখনকার অনেক বিশিষ্ট সাহিত্যিক আপন রচনার ভিত গাঁথছিলেন, তবু সে আজ ইতিহাসের অনাদৃত নেপথ্যে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। তাই আজ বিশেষ করে মনে করিয়ে দেবার দিন এল যে, সৃষ্টিকর্তারূপে বিদ্যাসাগরের যে স্মরণীয়তা আজও বাংলা ভাষার মধ্যে সজীব শক্তিতে সঞ্চারিত তাকে নানা নব নব পরিণতির অন্তরাল অতিক্রম করে সম্মানের অর্ঘ্য নিবেদন করা বাঙালির নিত্যকৃত্যের মধ্যে যেন গণ্য হয়। সেই কর্তব্যপালনের সুযোগ ঘটাবার জন্যে বিদ্যাসাগরের জন্মপ্রদেশে এই যে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সর্বসাধারণের উদ্দেশে আমি তার দ্বার উদ্ঘাটন করি। পুণ্যস্মৃতি বিদ্যাসাগরের সম্মাননার অনুষ্ঠানে আমাকে যে সম্মানের পদে আহ্বান করা হয়েছে, তার একটি বিশেষ সার্থকতা আছে। কারণ এইসঙ্গে আমার স্মরণ করবার এই উপলক্ষ ঘটল যে, বঙ্গসাহিত্যে আমার কৃতিত্ব দেশের লোকে যদি স্বীকার করে থাকেন, তবে আমি যেন স্বীকার করি, একদা তার দ্বার উদ্ঘাটন করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।”
বিধবা বিবাহ প্রচলন আইন ও বহু বিবাহ রদের প্রয়াস
(Hindu Widows’ Remarriage Act, 1856, also Act XV, 1856, enacted on 26 July 1856)
১৮৫৬ সালে লর্ড ক্যানিং ভারতের গভর্নর জেনারেল পদাবৃত হলেন। সেই বছরেই পূর্ববর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত “Hndu Widow Remarriage Act 1856” – এই আইনটিকে লর্ড ক্যানিং মান্যতা দিলেন। উল্লেখযোগ্য এই যে এই আইনটিকে সতীদাহ প্রথার পরবর্তী পদক্ষেপ বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
বিদ্যাসাগর মশাইয়ের সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবন এবং শিক্ষা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার আংশিক বিবরণ উপরে দেওয়া গেল। এবার আমরা এগিয়ে যাই তাঁর সমাজসংস্কার জীবনের দিকে, যেখানে তিনি আর এক অসামান্য কীর্তি রেখে গেছেন। আমি ‘বিধবা বিবাহ প্রচলন’এর কথা বলছি। বিদ্যাসাগর মশাই লিখেছেন,
“বিধবাবিবাহ প্রবর্তন আমার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকর্ম। এজন্মে যে ইহা অপেক্ষা এর কোনও সৎকর্ম করিতে পারিব, তাহার সম্ভাবনা নাই। এ বিষয়ের জন্য সর্বস্বান্ত হইয়াছি, এবং আবশ্যক হইলে প্রাণান্তস্বীকারেও পরাঙ্মুখ নহি।”
তাঁর যে সমাজ-সচেতনতাবোধ তাঁকে এই কঠিন কর্মে ব্রতী করেছিল, তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন,
“আমি দেশাচারের দাস নহি; নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বোধ হইবে, তাহা করিব, লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।”
বিদ্যাসাগর দীর্ঘ সময়ব্যাপী পরিশ্রম করে অসংখ্য শাস্ত্র পুরাণ পাঠ করে Legislative council এর কাছে এক আবেদন করেন, যাতে নানা শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া ছিল তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে। মনুসংহিতায় ব্যাখ্যা সহকারে এই কথা বলা আছে:
যা পত্যা বা পরিতক্ত্যা বিধবা বা স্বয়েচ্ছয়া।
উৎপাদয়েত পুনর্ভূত্বা স পৌনর্ভব উচাতে।।
সা চেদক্ষতযোনিঃ স্যাত গতপ্রত্যাগতাপি বা।
পৌনর্ভবেণ ভর্ত্রা সা পুনঃ সংস্কারমহর্তি।।
।। মনুবচন ।।
এই শ্লোকের বঙ্গানুবাদ হল,
“যে নারী পতিকর্ত্তৃক পরিত্যক্তা অথবা বিধবা হইয়া স্বেচ্ছাক্রমে পুনর্ভূ হয় অর্থাৎ পুনরায় অন্য ব্যক্তিকে বিবাহ করে তাহার গর্ভে যে পুত্র জন্মে তাহাকে পৌনর্ভব বলে। যদি সেই স্ত্রী অক্ষতযোনি অথবা গতপ্রত্যাগতা হয় অর্থাৎ পতিকে পরিত্যাগ করিয়া অন্য পুরুষকে আশ্রয় করিয়া পরে পুনরায় পতিগৃহে আইসে তাহার পুনরায় বিবাহসংস্কার হইতে পারে।”
এমন নয় এই সব বিধান বিদ্যাসাগর স্বয়ং নির্মাণ করেছিলেন। এই সব অনুবিধি পূর্বেও ছিল, তথাপি সমাজপতিগণ বিধবাদিগের পুনর্বিবাহের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যাসাগর যখন লেজিস্লেটিভ কৌনসিলের কাছে বিধবাদিগের পুনর্বিবাহ আইনসিদ্ধ করবার জন্য আবেদন করলেন তখন বাংলার সমাজপতিগণ, যার মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিলেন শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর, যিনি ছিলেন বঙ্গভূমির স্বঘোষিত কনজারভেটিভ হিন্দু সোসাইটির নেতা এবং “ধর্মসভা” নামক এক সংগঠন – যাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের বিরোধী আবেদন জমা দেন। এই বিরোধীরা বিশাল সংখ্যায় অধিক হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিদ্যাসাগরের পক্ষে দাঁড়ালেন। ১৮৫৬ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানি বাহাদুরের দরবারে Hindu Widows’ Remarriage Act-কে আইনানুগ করবার সংগ্রাম শুরু হল এবং ১৯৫৬ সালের ২৬শে জুলাই The Hindu Widows’ Remarriage Act, 1856, also Act XV, 1856 আইন রূপে পরিগণিত হল।
শুধু তাই নয়, নীচে একটি চিত্তাকর্ষক সংবাদ উদ্ধৃত করলাম –
“The first widow remarriage was performed in Calcutta at Vidyasagar’s initiatives and expenses on December 7, 1856. The marriage was between a Child widow Kalimati Devi who was only eleven and Siris Chandra Vidyaratna.”
বিদ্যাসাগর যখন বহু বিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে অগ্রসর হলেন, তখন এক হাস্যকর প্রতিবন্ধকতা তাঁহার সামনে এসে উপস্থিত হল। বিদ্যাসাগর লিখেছেন,
“কেহ কেহ আপত্তি করিতেছেন, বহুকাল পূর্বে এ দেশে কুলীন ব্রাহ্মণদিগের (বহু বিবাহ করিবার) অত্যাচার ছিল। তখন অনেকে অনেক বিবাহ করিতেন। এক্ষণে, এ দেশে সে অত্যাচারের প্রায় নিবৃত্তি হইয়াছে; যাহা কিছু অবশিষ্ট আছে, অল্পদিনের মধ্যেই তাহার সম্পূর্ণ নিবৃত্তি হইবেক। এমন স্থলে, বহুবিবাহনিবারণ বিষয়ে রাজশাসন নিতান্ত নিষ্প্রয়োজন।”
এই মহাপুরুষের সবথেকে বড় কীর্তি ছিল, বিধবা বিবাহকে মুক্ত করে আইন পাশ হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ১৬ই জুলাই এবং কার্যকরী হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ২৬শে জুলাই। Hindu Widows’ Remarriage Act, 1856, also Act XV, 1856 আইন রূপে পরিগণিত হল, আর ঠিক ৬ মাসের মধ্যে, ৭ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ উনি এক ১১ বছরের বিধবার সাথে তাঁর অতি প্রিয় সহযোদ্ধার সঙ্গে বিবাহ দেন। আন্দোলন ও তার প্রতি নিষ্ঠার এর থেকে বড় নিদর্শন বিরল।
বিদ্যাসাগর মশাইয়ের লোকান্তর হয় কলকাতায়, ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই, রাত্রি আড়াইটের সময়।
৩] চাষিদের এক বিপ্লব – কৃষি ক্ষেত্রে রেনেসাঁর উদ্ভব
<> দীনবন্ধু মিত্র রচিত বাস্তবধর্মী নাটক ‘নীল দর্পণ’ <>
একটু বিস্তৃত করে ইতিহাসের পাতা ওল্টাই। নীলকুঠির ছবি যে নীচে দেওয়া আছে, তা এই রচনার উপপাদ্য বিষয়। কিন্তু শুরু করি দীনবন্ধু মিত্র মশাইকে দিয়ে, যিনি মূল প্রবন্ধের নায়ক এবং রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগর মশাইয়ের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশ শাসন দেশীয় কুসংস্কারের হাত থেকে বঙ্গভূমি রক্ষা করে এক নতুন রেনেসাঁ’র উদ্ভব ঘটনা। বিশেষ কিছুর প্রয়োজন ছিল না – ছিল শুধু দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য তীব্র অনুভূতি, প্রতি-আক্রমণের সঠিক স্ট্র্যাটেজি, বুদ্ধি সহকারে সেই স্ট্র্যাটেজির প্রয়োগ এবং কলমের জোর।
ইয়োরোপে রেনেসাঁ’র সঙ্গে আমাদের ‘পুনর্জন্ম’ এর তফাতঃ
যেদিন থেকে ইয়োরোপে রেনেসাঁ’র উৎপত্তি ঘটেছিল, (৪) তখন থেকেই রঙ, তুলি, ক্যানভাস, মারবেল, ম্যুরাল – এই সবের এক শিল্পধর্মী উৎসব লেগে গিয়েছিল। শুধুই আর্টস কিন্তু সামান্য ক্রাফটস। জগৎজোড়া খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীবাহিনী ব্যতীত (da Vinci; Rafael; Michelangelo etc) ইয়োরোপ রেনেসাঁ’র উপহার আমি তিনটে যান্ত্রিক বস্তুর নাম করব – ছাপার যন্ত্র [Gutenberg], দূরবীন [Lipperhey], ও অনুবীক্ষণ [Jansenn]। কিন্তু বাংলার অবস্থা কখনোই এমন শিল্পময় ছিল না। যখন ইংল্যান্ডে “শিল্প বিপ্লব” শুরু হল। (৫) দেখবেন, ১৭৬০ সাল থেকে মাত্র ১৭ বছর পরে ১৭৭৭ সালে বাংলায় নীলচাষ শুরু হয়, যাতে করে ইংল্যান্ডের জমিদারশ্রেণী তাঁদের শ্রেণী বদলে বিপুল ধন-সম্পদ নিয়ে, কল-কব্জা নিয়ে সোনার বাংলার ধান, পাট, সবজি চাষের সর্বনাশ করে দিয়ে শুরু করলেন Indigo Plantation।
অপিচ, কল্যাণময় অশেষ দয়া দেখিয়ে নেটিভদের পক্ষেই ছিলেন। উপরন্তু উল্লেখযোগ্য যে বর্তমান নিবন্ধ বদ্ধ “তিনটি রেনেসাঁ’ তুল্য ঘটনা”র মধ্যে প্রথম দুটি ঘটনায় যে সংগ্রাম বাংলার দুই নেতা, রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লড়েছিলেন, ব্রিটিশ সরকার কিন্তু সর্বশক্তি দিয়ে এই দুজনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।
দীনবন্ধু মিত্র – বাংলার রেনেসাঁ অর্থাৎ পুনর্জন্মের তৃতীয় ব্যক্তি।
তিনি ছিলেন মূলতঃ সাহিত্যিক এবং তিনি মোট ন’টি পুস্তক লিখে উঠতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি মাত্র ৪৩ বৎসর বয়সে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী লিখতে বসে তাঁর পরম বন্ধু সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মশাই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে দীনবন্ধু মিত্রের (তখন তাঁর বয়ঃক্রম ২৬) জীবনী লিখতে বসে বলেছিলেন, “দীনবন্ধুর জীবনচরিত লিখিবার এখনও সময় হয় নাই।” সেই লেখাতেই বঙ্কিম আরো লিখিয়াছিলেন, “এই বঙ্গদেশে দীনবন্ধুকে না চিনিত কে? কাহার সঙ্গে তাহার আলাপ সৌহার্দ্য ছিল না” তারপরে ক্ষেদের সাথে বলিয়াছিলেন, “সেই দীনবন্ধুকে আমরা বিস্মৃত হইতেছি।” দীনবন্ধু মিত্রের খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে জন্ম ১৮৩০, ও মৃত্যু ১৮৭৩। বঙ্গাব্দের হিসাবে তিনি ১২৩৮ বঙ্গাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। ইতিহাস আরও যা বলছে তা শুনুন।
১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর এক আম্রবাগানে বাংলার নবাব সিরাজের সাথে রবার্ট ক্লাইভের বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হল। বিশ্বের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে সেই দিনই সন্ধ্যার আগে যুদ্ধ শেষ হল। সিরাজ পালালেন। কিন্তু পালিয়ে লাভ হল না। তাঁর মৃত্যু হল ঠিক দশ দিন পরে, ১৭৫৭ সালের দোসরা জুলাই। তাকে হত্যা করেছিল মহম্মদ আলি বেগ নামক মীর জাফরের পুত্র মীর মিরণ-এর গুপ্তঘাতক। সেই হত্যা ঘটিত হয়ে ছিল অবমতি-জনক নাম বহনকারী একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন কোঠরি – “নমকহারাম ডেওরহি”-তে। সিরাজদ্দৌলার কবর পাওয়া যাবে মুর্শিদাবাদের খুশবাগে। আমি আজ থেকে ৪৩ বছর আগে শেষবারের মত মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলাম এবং বাংলার হতভাগ্য শেষ নবাবের কবরের সামনে যখন দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আমার মাথায় একটা অদ্ভুত ভাবনা এসেছিল – “পলাশীর যুদ্ধে যদি সিরাজের সেনানী জয়লাভ করত”- কত কী বদলে যেত আমাদের জীবনে। কোন দুর্বৃত্ত (পড়ুন লর্ড কার্জন ১৯০৫) একটি কু-দর্শন বিশাল কর্তনী (মানে কাঁচি) এনে আমাদের সোনার বাংলাকে দু-ভাগ করে দিতে পারতো না।… যা হোক!!
আমি এই নিবন্ধের সর্বাগ্রে বলেছিলাম – বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল পলাশীর যুদ্ধ। এই উক্তির পশ্চাতে ছিল কতিপয় উদ্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাতঃ
[ক] ইংরাজ সেই যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল;
[খ] ক্রমশ বঙ্গভূমির শাসন ব্যবস্থা তাদের হাতে চলে গেল;
[গ] শুরু হল শোষণ। ব্রিটিশ নীলকরগণ বাধ্য করতে লাগলেন বাংলার চাষিদের যাঁরা পুরুষানুক্রমে ধান, পাটা, ডাল অন্যান্য সবজি চাষ করতেন।
[ঘ] সেই শোষণের একটি স্বল্পতর ভাগ ছিল – সোনার বাংলার উর্বর জমি ধ্বংস করে সেখানে নীলের চাষ শুরু হল।
[ঙ] সোনার ফসল ধ্বংস হয়ে চাষিদের সর্বনাশ হল।
আমার তৃতীয় রেনেসাঁ’র নায়ক হলেন দীনবন্ধু মিত্র। তিনি ছিলেন – তাঁর বন্ধু সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় শুনুন –
“…১৮৫৫ সালে দীনবন্ধু কলেজ পরিত্যাগ করিয়া ১৫০ টাকার বেতনে পাটনার পোস্ট-মাস্টারের কাজ গ্রহণ করেন। ঐ কর্মে তিনি ছয় মাস কর্ম করিয়া সুখ্যাতি লাভ করেন। দেড় বৎসর পরেই তাঁহার পদবৃদ্ধি হয়েছিল।”
দীনবন্ধু > নীলচাষ > নীল বিদ্রোহ > নীল দর্পণ রচনা > ঢাকা শহরের অজ্ঞাত কুলশীল বাঙ্গলা মুদ্রণ যন্ত্রে মুদ্রিত ১৮৬০!
[ক] বঙ্গভূমিতে নীলচাষের ইতিহাস বড় অদ্ভুত। কিছু তথ্যের ইঙ্গিত পেয়ে নির্দিষ্ট ইতিহাস রেখাকে অনুসরণ করে বড় একটা কিছু পাওয়া যায় না। যা পেলাম তা হল, ১৭৭৭ সালে লুই বোনো (Louis Bonnaud) নামক এক ফরাসি দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করেছিলেন – [i] পশ্চিমা দেশের বস্ত্র শিল্পে কৃষিজ নীল রঙের (Indigo) ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে এবং [ii] Les plaines alluviales orientales de l’Inde orientale sont idéales pour la culture de l’indigo, idéal pour – যার বাংলা হল – পূর্ব ভারতের পলিমাটি মিশ্রিত জমি নীলচাষের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। পুণে শহরে প্রাপ্ত সকল তথ্য-ঘাঁটি তে এই লুই বোনো সম্বন্ধে আর কোন সংবাদ পাওয়া গেল না। Net ও নীরব। শুধু বলছে, “Louis Bonnaud, a Frenchman, introduced it to the Indian subcontinent. He became the first indigo planter in Bengal, starting to cultivate the crop at Taldanga and Goalpara near Hooghly.” (৬)
[খ] ১৭৭৭ সাল থেকেই মধ্য-পশ্চিম বাংলার পলিমাটি পুষ্ট ভাগীরথীর অববাহিকায় নীলচাষ শুরু হল। এই নীলচাষ যে শুরু হল তার জমি কোথা থেকে এল? সাধারণ চাষিদের ধান/পাট চাষের জমি কেড়ে নিয়ে “নীলচাষ শুরু হয়ে গেল” এর আগে ১৭৬৫ সালে দিল্লীতে মুঘল সম্রাট ছিলেন শাহ আলম তিনি ক্লাইভ-কে ঐ বছরেই “বাংলার দিওয়ানি” দিয়েছিলেন, আবাংলার পক্ষে যা ছিল যে হল পলাশীর পরাজয়ের খেসারত। অফিসিয়ালি লুই বোনো’র জমি পেতে হয়নি, এবং ওপর পক্ষের এই দুর্বৃত্ত-সুলভ আচরণ ছিল “নীল-বিদ্রোহ” প্রারম্ভের প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু চাষিরা জেনে গেছে যে ঐ উঁচু উঁচু ঘাসের মত আগাছা গুলো তাদের রক্ত শোষার জন্য পোঁতা হচ্ছে।
১৮শ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চম দশক থেকে সারা বাংলায় নীলকর সাহেবগণ ছড়িয়ে পড়ল। শোষণ তো চলতই, সঙ্গে চলত অত্যাচার, ধর্ষণ। চাষিদের আর্থিক ও সাংসারিক, পারিবারিক অবস্থা কঠিন হতে শুরু করল। এখানে ওখানে বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে লাগল।
দীনবন্ধু মিত্র সেই সময় ঢাকা অঞ্চলে পোস্টেড ছিলেন। সময়টা ১৮৫৮-৫৯ সাল। হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ের অঞ্চল – মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হুগলি প্রভৃতি নানা জেলায় চাষের খেত, খামারে বিদ্রোহ ছড়িয়ে গেল। ‘নীলদর্পণ’নাটক লিখিত হয় ১৮৫৮-১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এবং শাসকদের চক্ষু এড়িয়ে নিশ্চুপে ১৮৬০ সালে দীনবন্ধু মিত্র ঢাকা শহরে একটি ‘নাম না জানা’ মুদ্রণালয় থেকে নীল দর্পণ নাটক মুদ্রিত করেন। সাবধানতার মার নেই। তিনি প্রথমতঃ ছদ্মনামে বইটি মুদ্রিত হল – নাম দিলেনঃ
নীল দর্পনং নাটকং – ২রা আশ্বিন ১৭৮২ শকাব্দা, ইং ১৮৬০
পৃ. ৯০ + ২ শুদ্ধিপত্রে
<>
নীল দর্পনং নাটকং নীলধর – বিষধর – দংশন – কাতর – প্রজানিকর
ক্ষেমঙ্করেণ কেনচিৎ পথিকেনাভিপ্রণীতং
ঢাকা শ্রীরামচন্দ্র ভৌমিক কর্ত্তৃক
বাঙ্গালাযন্ত্র মুদ্রিত
বিদ্রোহ ক্রমশ স্তিমিত হতে লাগলো যখন ১৮৬০ সালে ইন্ডিগো কমিশন স্থাপিত হল। ততদিনে পুস্তক নীল দর্পণ প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ তা পাঠ করেছে। ইন্ডিগো কমিশনের মধ্যে চাষিদের পক্ষে ভাল কিছু ছিল না। এমন কি ইংরাজি সংবাদ পত্র লিখেছিল, “which offered reforms of the system, which was inherently exploitative.”
নীলকরদিগের অত্যাচারে দিন শেষ হয়ে আসছিল। এক দিকে ইংরাজ সরকার সচেতন হচ্ছিলেন, ইন্ডিগো কমিশন সত্ত্বেও। অন্য দিকে প্রকৃতি জাগ্রত হচ্ছিলেন। এ ক্ষেত্রে ফাদার জেমস লং এক মহান ভূমিকা পালন করেছিলেন (প্রকৃতির জাগরণের ব্যাপারটা ঈশ্বরের ওপর ছেড়ে দিন।)। উইকিপিডিয়া কি বলছে শুনুন।
The Nil Darpan affair
In 1861 at the height of the Indigo revolt by the ryots in Bengal, Long received a copy of the Bengali play Nil Darpan (also transcribed as Neel Darpan or Nil Durpan) from its author Dinabandhu Mitra, who had been one of Long’s students at the CMS school on Amherst Street. The play, published anonymously the previous year in Dacca, was sympathetic to the abject condition of the ryots or labourers on indigo plantations and critical of European planters for their treatment of indigo cultivators. Long brought it to the notice of Walter Scott Seton-Karr, Secretary to the Governor of Bengal and ex-President of the Indigo Commission. Seton-Karr, sensing its importance, mentioned Nil Durpan in conversation with the Lieutenant Governor, John Peter Grant. Grant then expressed a wish to see a translation of it and print a few copies to be circulated privately amongst friends. Long had it anonymously translated into English “By A Native” (Long refused to divulge the name of the translator to the trial court; Bankim Chandra Chattopadhyay later attributed the translation to Michael Madhusudan Dutt,
এই এক রাতে ৯০ পৃষ্ঠা সম্পন্ন নাটকটিকে এক রাত্রের মধ্যে ইংরাজি ভাষায় অনুবাদ করে দেবার মহৎ কর্মটি স্বয়ং সদ্য বিলাত প্রত্যাগত মধুসূদন দত্তজা মশাই করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। ইতিহাস বলছে, যে জন পিটার গ্রান্ট মহোদয়ের বন্ধুগণ নাটকটির ইংরাজি ভাষায় অনূদিত কপি পান এবং ইংল্যান্ডের উচ্চ মহলে তা ছড়িয়ে দেন, স্বভাবতই তাঁদের দেশের চাষাদের এই প্রকার বর্বর আচরণে বন্ধ করবার জন্য অচিরাৎ ব্যবস্থা নেন।
নীলকর সাহেবদিগের কফিনে প্রথম পেরেকটি পোঁতা হল। এই ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৮ সালের মধ্যে।
অতঃপর ১৮৭৮ সালে ইন্ডিগো’র পরিবর্ত অতি স্বল্পমূল্যের কেমিক্যাল ডাই আবিষ্কৃত হল জার্মানিতে এবং চাষ-করা ইন্ডিগো’র বিশ্বের বাজার ধ্বংস হয়ে – প্রকৃতির বিধান। তবে দীনবন্ধু মিত্র’র প্রয়াস সফল হয়েছিল।।
———-
পাদটীকা
১ – ১৮১১ সালে তাঁর বৌঠাকুরাণী সতী হন এবং সেই মুহূর্তে রামমোহন প্রতিজ্ঞা করেন সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করবেন এবং সতীদাহ প্রথা বে-আইনী ঘষিত করে আইন তৈরী হয় ১৮২৯ সাল-এ।
২ -১৮১২ সালে Lord First Earl Canning কলকাতার এখন যে প্রাসাদটির নাম ‘রাজভবন’ সেই ভবনে পদস্থ হন বাংলা-বিহার-ওড়িস্যার প্রথম Viceroy হিসাবে।
৩ – রামরাম বসু (১৭৫৭ – ১৮১৩) বাংলা গদ্যসাহিত্যের আদি লেখক। তার জন্ম হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন; কিছু ইংরেজিও জানতেন। প্রথম দিকে তিনি ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য আসা মিশনারি পাদ্রীদের বাংলা শেখাতেন এবং পরবর্তীকালে তিনি এই খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারকদের সাপোর্ট সিস্টেমের প্রধান হয়ে ওঠেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে মুন্সি ও সংস্কৃত ভাষার সহকারি শিক্ষকের চাকরি পান। তার রচিত রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত বাঙালির লেখা প্রথম বাংলা মৌলিক গদ্যগ্রন্থ ও ছাপাখানায় মুদ্রিত প্রথম বই। বইটি ১৮০১ সালের জুলাই মাসে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়জন যে বসুজা মহাশয় শুধু অকারণ পুলকে রাজা প্রতাপাদিত্য’র জীবনী লেখেন নি। যখন উইলিয়াম কুরি সাহেব কলেজ শুরু করলেন, তখন সিলেবাসে দেবার মত কোন গদ্য পুস্তক নেই। তিনি অনেক অনুসন্ধান করে যখন পেলেন না, তখন বুঝিলেন যে গদ্য পুস্তক লিখিতই হয় নি। তখন তিনি তাঁর মুন্সী এবং অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য সহযোগী বসুজা মহাশয়কে একটি গদ্য পুস্তক লিখিতে আদেশ দেন।
৪ – It is generally believed to have begun in Italy during the 14th century, after the end of the Middle Ages, and it reached its height there between the 1490s and the 1520s, a period referred to as the High Renaissance.
৫ – Industrial Revolution, in modern history, যে নামটা ইংল্যান্ডের economic historian Arnold Toynbee (1852–83) সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। কিন্তু আদতে ১৭৬০ সালে এর প্রতিপত্তি শুরু হয়। Toynbee’র ভাষায় “change from an agrarian and handicraft economy to one dominated by industry and machine manufacturing.”
৬ -তালডাঙ্গা এবং গোয়ালপাড়া দুটি অঞ্চলই বর্তমান হুগলি জেলায় ভাগীরথী নদীর পশ্চিমপাড়ে হুগলী শহরের নিকটস্থ অঞ্চল।
চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল