কেউ কোনোদিন পেন্সিল চিবিয়েছ? লালকালো নটরাজ মার্কা পেন্সিল!
প্রথমে একটু শক্ত। দাঁতে সেট হয়ে গেলে, মুখে একটু ছিবড়ে লাগবে। তারপর ভিজতে ভিজতে নরম হবে। তারপর রঙ চটে কাঠ বেরিয়ে আসবে। চিবোতে চিবোতে ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে লালা বেরিয়ে আসে। এই অবস্থায় সারা পৃথিবী ভুলে একমনে গভীর ভাবে যে চিন্তা আসে সেটাই হলো মেডিটেশন।
আমার সেই চিন্তায় প্রায়ই ঘুম এসে যেত। তবুও প্লান্ট কি, কোন মাটিতে কেন হয় সেইগুলি আর মুখস্তই হতো না। স্কুলে সাইন্স আউন্টি একটা প্যারাগ্রাফ হুবহু মুখস্থ চাইতেন। প্রায় সবাই পড়া দিচ্ছে আর আমি পেন্সিল চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেলছি, কিন্তু প্লান্ট আর বেরোচ্ছে না। এই রকম অবস্থায় আমি ক্লাস ফোর থেকে ফাইভে উঠে গেলাম।
সেবার জন্মদিনে কে যেন একটা হারমোনিয়ামের মতন দেখতে পেন্সিল বক্স আর তারমধ্যে দুটি পেন্সিল, একটি স্কেল গিফ্ট করেছিল। সেই পেন্সিলের মাথায় আবার হরেক রঙের রাবার লাগানো থাকত। তাই রাবারটা ঠিক চিবানো উচিৎ মনে করিনি। সুতরাং আমার সেই নিজস্ব কায়দার মেডিটেশন একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমায় ছেড়ে যেতে বসে ছিল। কিন্তু এবার ক্লাস ফাইভ। মানে নতুন পেন। তাই যখন পেন ধরলাম তখন আবার ধ্যান ধ্যান ভাব এলো। একদিন ধ্যানে মগ্ন, আমি আবিষ্কৃত হলাম একমুখ কালি নিয়ে।
সেইসময় দাদু বেঁচে থাকা কালীন গরমের ছুটিতে দাদুর বাড়ি বর্ধমানে গিয়ে দিন পনেরো থাকা একদম বাধ্যতা মুলক ছিলো। আর যেহেতু ছুটির পর পরীক্ষা থাকতো তাই সাথে করে বই খাতা, পেন পেন্সিল ও ব্যাগে আসতো। বর্ধমানে আমার দুই জ্যাঠতুতো থাকতো। তাঁরা বেশ অনেকটাই বড়ো। মানে ছোটদাদার গার্লফ্রেন্ড ছিলো। তাই বড়ো বড়ো ভাব তাঁর। একদিন দুপুরে, লুকিয়ে ছোটদাদার গার্লফ্রেন্ডের দেওয়া পেন নিয়ে অঙ্ক করতে বসে আবার চিবোই চিবোই ভাব এলো। কোনরকমে রেখে সরে এলাম। রাতে ছোটদাদা এই মারে কি সেই মারে। কারণ পেনের পেছনে চার পাঁচটা দাঁতের কামড় রয়ে গেছিল।
চিবোতে চিবোতে যদি চিদানন্দ ভাবটাই না আসে তাহলে আর কী হলো। এখনও মনটা চিবোই চিবোই করে। তবে আশেপাশে পেন পেন্সিলের থেকে হাতা খুন্তিই বেশি। তাই একটু কঠিন ধ্যানে যাব কিনা ভাবছি।