সম্পাদকীয়

এমন একটি সংখ্যা যে কোনদিন আমাদের প্রকাশ করতে হতে পারে, তা যে একেবারে অভাবনীয় তা আমরা আদপেই বলব না। কিন্তু নিঃসন্দেহে একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। যিনি আমাদের প্রাণপুরুষ, তিনি আমরা দায়িত্ব নেওয়ার এত অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন এ আমাদের কাছে অকল্পনীয় ছিল।
নতুনভাবে অবসর পত্রিকা শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের ছেড়ে চলে যান অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শ্রী সুমিত রায়। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আমরা হারালাম আমাদের সকলের খুব কাছের মানুষ, আমাদের পত্রিকার প্রাণপুরুষ সুজনদাকে। আমরা মর্মাহত। খুবই বিপন্ন বোধ করছি।
কিন্তু তার মধ্যেও আমরা আমাদের কর্তব্যে অবিচল। মনে পড়ছে সুমিত রায়ের প্রয়াণের পর অসম্ভব শোকগ্রস্ত হয়েছিলেন সুজনদা। তাঁর সঙ্গে সুমিতবাবুর প্রায় অর্ধশতাব্দীর সম্পর্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমরা তাঁর স্মরণিকা প্রকাশ করে কর্তব্য পালন করেছিলাম।
এবারেও সে কাজে ব্রতী। এত দুঃখের মধ্যেও আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের লেখকবৃন্দের প্রতি। ব্যক্তিগত শোককে সরিয়ে রেখে তাঁরা তাঁদের কলম তুলে ধরেছেন। নিষ্ঠাভরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাঁরা আমাদের কাছে পেশ করেছেন তাঁদের অমূল্য স্মৃতিচারণ।
আমরাও প্রাণপণে চেষ্টা করেছি সংখ্যাটিকে যথাসম্ভব সুন্দর করে সাজাতে। এই প্রথম সংখ্যা যেটি প্রকাশের আগে সুজনদার কোন পরামর্শ নিতে পারলাম না। মনে পড়ে যাচ্ছে বিগত সংখ্যাটির কথা যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৫ই জানুয়ারি। সেটি প্রকাশের দিন আমি ব্যস্ত থাকব বলে সুজনদাকে অনুরোধ করেছিলাম যে কাজ সব করাই থাকবে, শুধু ঐ নির্দিষ্ট তারিখে প্রকাশ করে দিতে। সুজনদা ঐ তারিখ সম্পর্কে খুব যত্নবান থাকতেন। আমাকে বললেন, “আরে! প্রকাশ করে দাও একদিন আগেই। এখন তো তোমাদের পত্রিকা!” তখন এই কথার গুরুত্ব বুঝিনি। বুঝেছি আর মাত্র ক’দিন পরেই, যখন আমাদের মাথার ওপর থেকে তাঁর হাতটা সরে গেল।
তবে তিনি আছেন! আত্মিকভাবে ভীষণ রকমভাবে। আমি জানি, এই সংখ্যাও পড়বেন। মনে মনে হাসবেন। হয়তো সুমিতবাবুকেও পড়াবেন। দু’জনে মিলে গল্প করতে করতে ভাবছেন আর আলোচনা করছেন এই দৃশ্য ভাবলেই কেমন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভব করছি।
আপনাদের ভালোবাসা আর আশীর্বাদকে পাথেয় করেই চলবে অবসর!

জন্ম কলকাতায়, বেড়ে ওঠা দক্ষিণ চব্বিশ-পরগনার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলে। ১৯৮৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে। শখের মধ্যে অল্প-বিস্তর বাংলাতে লেখা - অল্প কিছু লেখা রবিবাসরীয় আনন্দবাজার, উনিশ-কুড়ি, নির্ণয়, দেশ, ইত্যাদি পত্রিকায় এবং বিভিন্ন ওয়েব ম্যাগাজিন (সৃষ্টি, অবসর, অন্যদেশ, পরবাস ইত্যাদিতে) প্রকাশিত। সম্প্রতি নিজের একটি ব্লগ চালু করেছেন – www.bhaskarbose.com

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • শেখর বসু , March 18, 2023 @ 9:44 am

    শুরু করেছি পড়তে… মন ছুঁয়ে যাচ্ছে লেখাগুলি।

  • শিবাংশু দে , March 24, 2023 @ 7:46 am

    ‘অবসর’-এর এই সংকলনটির সব রচনাগুলি পড়ে ফেলার পর একটাই অনুভূতি মনে আসে। ভালোবাসা যে দেয়, আর যে পায়, সবাই যেন একটা মুহূর্তে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এটাই বোধ হয় বেঁচে থাকার সেরা অর্জন। সে অর্থে জীবনের সেরা ফসল। সুজনদা আমাদের জন্য এমন একজন ভালোবাসার পাত্র ছিলেন যে তাঁকে স্মরণ করতে যে কোনও পদ্যের মায়া, গদ্যের চাতুর্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। তাঁর সম্বন্ধে প্রত্যেকের অনুভূতি, সংলিপ্তির খতিয়ান সমান নিবেদন নিয়ে পড়লুম। ঋদ্ধ হলুম। সম্পাদককে ধন্যবাদ, সুজনদাকে স্মরণ করার এই পরিসরটি আমাদের কাছে এনে দেবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *