আমার জাদু চর্চা – একটি স্মৃতিচারণ

আমার জাদুচর্চা – একটি স্মৃতিচারণ

স্কুল ফাইনাল পাশ করেছি উত্তরবঙ্গের দিনহাটা হাই স্কুল থেকে। তখন তো যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রযুক্তির এত উন্নতি হয়নি; তাই কলকাতায় ফল বেরোলেও দিনহাটায় বসে সংবাদপত্রে জানা যেত প্রায় দু’দিন পরে। সেবার দিনহাটা থেকে আমাকে নিয়ে মোট তিন জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল। পরের পর্ব কলেজে ভর্তি হওয়া। বিজ্ঞান নিয়ে কোথায় পড়া যায় সেটা ঠিক করা সহজ হ’ল না। সময় সংক্ষেপ করতে কুচবিহার থেকে আকাশপথে দমদম বিমান বন্দরে পৌঁছলাম। যে প্লেনে করে এসেছিলাম সেটা নিতান্তই ছোট। যতদূর মনে পড়ে যাত্রী সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ছ’সাত জন, মাল ছিল অনেক। মূলতঃ সেটা ছিল একটা মালবাহী প্লেন। সোজাসুজি কলকাতায় না এসে প্লেনটা আসামে, সম্ভবতঃ রূপসা নামে একটা জায়গায় নেমে কিছু মাল ও দু’এক জন লোক নিয়ে আবার আকাশে উড়ল।

জ্যাঠামশাইরা থাকতেন বিবেকানন্দ-কর্নওয়ালিস স্ট্রিট মোড়ের কাছে মদন মিত্র লেনে। বাড়িতে লোক ছিল বেশি, জায়গা কম। সেখানে থেকে পড়াশোনার অসুবিধা হবে ভেবে আমার থাকার ব্যবস্থা হল সিটি কলেজ সংলগ্ন রামমোহন ছাত্রাবাসে। রামমোহন হস্টেলের দোতলার একটা ঘরে সিট পেলাম। একঘরে চার জন। আমরা দু’জন ফার্স্ট ইয়ার, বাকি দুজন সিনিয়ার। পড়াশোনা বাদ দিলে হোস্টেলের দাদাদের সঙ্গে আমার খুব মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বহু অবস্থায় তাদের ব্যবহার, ভালবাসা, আন্তরিকতা, আজও স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে।

পাশের ঘরেই থাকতেন হারাধনদা। হারাধন নায়ক, তৃতীয় বর্ষ বাণিজ্যের ছাত্র। বীরভূম জেলায় হেতমপুর হয়ে সুরুলে ছিল তার বাড়ি। বারান্দা দিয়ে যাতায়াতের পথে দেখতাম প্রায় সব সময়েই তার খাটের কাছে দু’চারজন বসে আছে। একদিন আমাকে ডেকে বললেন, “তুমি ফার্স্ট ইয়ার? কোত্থেকে এসেছ? বেশি shy হ’লে হস্টেল লাইফ এনজয় করতে পারবে না।” পরে জানলাম হারাধনদা একজন ম্যাজিশিয়ান। জাদুর আকর্ষণে তার কাছে সব সময়েই কেউ না কেউ আসে।

সেই বয়সে ম্যাজিক সম্বন্ধে কার না কৌতূহল থাকে! আমি সহজেই হারাধনদার বন্ধুস্থানীয় হয়ে গেলাম। তিনিও দেখলাম আমাকে একটু বেশি স্নেহ করছেন। তাঁর কাছে অনেকেই এসে আবদার করত, কিছু একটা খেলা দেখতে চাইত। এসব ক্ষেত্রে সব চেয়ে উপযুক্ত হল এক প্যাকেট তাস। এরকম হলে হারাধনদা আমাকে ডাকতেন। খেলা তিনিই দেখাতেন, আমাকে কাছে থাকতে বলতেন। দেখতাম তাঁর অসাধারণ আত্মপ্রত্যয়। কেউ বোকা বানাতে পারবে না, এই দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর নিজের উপরে ছিল। তাসের খেলাগুলি দেখে মনের মধ্যে তোলপাড় চলত, সেগুলি কী করে হচ্ছে বুঝতাম না। ঘর ফাঁকা থাকলে মাঝে মাঝে তিনি দু’একটা খেলার কৌশল আমাকে দেখিয়ে দিতেন। পড়াশোনা তো শিকেয় উঠেইছিল, যেটুকু বাকি ছিল সেখানে ঢুকে পড়ল ম্যাজিকের চিন্তা। একটু যেন বেশি মাত্রায় সেটা আমাকে পেয়ে বসল। এর একটা কারণ অবশ্যই ছিল হারাধনদার স্নেহসিক্ত প্রশ্রয়।

মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়া গ্রামের ছেলে জয়ন্ত শাসমল ছিলেন সাহিত্যের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, বাংলা অনার্স। ম্যাজিক সম্বন্ধে তার কৌতূহল ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু হারাধনদা তাকে কখনো উৎসাহ যোগাননি। বলতেন, “তুই পারবি না। ম্যাজিসিয়ানকে অনেক স্মার্ট হতে হয়।”

জয়ন্তদা একবার হাসতে হাসতে হারাধনদার কাছ থেকে কোনো একটি খেলা কেড়ে নিতে চাইছিল। তাই নিয়ে দু’জনের সাময়িক মনমালিন্য হল। সে এক ছেলেমানুষি ব্যাপার। জয়ন্তদা ছিলেন খুব ভালোমানুষ। জয়ন্তদাকে কিন্তু দমিয়ে রাখা যায়নি। বহু বছর বাদে, তখন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ সম্পূর্ণ ছিন্ন, কাগজে একটা ছোট খবর পড়েছিলামঃ ‘জাদুকর জয়ন্ত কুমার শাসমল মুগবেড়িয়ার রাস্তায় চোখ বাঁধা অবস্থায় সাইকেল চালাচ্ছেন, কৌতূহলী জনতার ভিড় ঠেলে।’ অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ম্যাজিসিয়ান তিনি হয়েছিলেন। ‘অভ্যাসে কী না হয়, কী না হয় চেষ্টায়।’

ম্যাজিকের কথাই যখন লিখতে বসেছি, তখন এ সম্বন্ধে দু’চার কথা বলা নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এ বিদ্যাটি অতি প্রাচীন। এখানে জাদুবিদ্যার ইতিহাস লেখার পরিসর নেই, তবে যদি কেউ উৎসাহী থাকেন, অজিতকৃষ্ণ বসুর ‘যাদু কাহিনী’ বইটি কোনো গ্রন্থাগার থেকে নিয়ে পড়তে পারেন। বাজারে বইটি বর্তমানে অপ্রাপ্য। আজকের জীবনযাত্রার ধরন এবং শিল্প ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে পরিবর্তিত ধ্যানধারণার জন্য জাদুবিদ্যার চর্চা হয়তো কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। আজকাল গনপতি চক্রবর্তীর নাম জানা লোক কম। পি.সি. সরকারের (প্রতুল চন্দ্র সরকার) নাম হয়তো কিছু লোক মনে রেখেছে, সেটাও মনে হয় কিছুটা জুনিয়ার পি. সি. সরকারের সৌজন্যে।

এক সময়ে রাজা মহারাজারাই সঙ্গীত, জাদুবিদ্যা, ইত্যাদি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাদের সহায়তা নিয়েই এসব বিদ্যা চর্চিত হয়েছে, প্রসার লাভ করেছে। এখানে প্রসঙ্গতঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৫৬৯–১৬২৭) শাসনকালের কিছু ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য আমরা জানি। সম্রাটের লেখা আত্মজীবনী, তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী বইয়ে একটি পৃথক পরিচ্ছেদই রয়েছে দরবারে অনুষ্ঠিত জাদুর খেলা বিষয়ে। ফারসিতে লেখা এই আত্মজীবনীটি ইংরাজিতে পূর্ণাঙ্গ অনুদিত হয়েছে। তবে এর একটি সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ করেছেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা ও সিটি কলেজের অধ্যাপক কৃষ্ণকুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্র (পরে বসু) (১৮৮২-১৯৪৩)। ধারাবাহিকভাবে ‘সুপ্রভাত’ মাসিক পত্রে প্রকাশিত হবার পর এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১২ সালে। সম্প্রতি বইটি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। সম্রাট জাহাঙ্গীর আত্মজীবনীতে মোট সাতাশটি জাদুর খেলা উল্লেখ করেছেন। এগুলি দেখে তিনি এতটাই চমৎকৃত ও মুগ্ধ হয়েছিলেন, যে আত্মজীবনীতে একটা পৃথক পরিচ্ছেদই এর জন্য উদ্দিষ্ট হয়েছে। কুমুদিনীর অনুবাদ থেকে আমি এখানে তিনটি উল্লেখ করছি। জাহাঙ্গীরের বক্তব্য হিসাবে এটি লেখা।

বর্তমান সময়ে বঙ্গদেশে কয়েকজন অদ্ভুতকর্ম্মা ঐন্দ্রজালিক আছে। তাহাদের অভূতপূর্ব্ব কৌশল আমাকে এত মুগ্ধ করিয়াছিল যে, এতৎ সম্বন্ধে কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করিয়া পারিলাম না। একবার সাতজন বাজিকর আমার দরবারে আগমন করিয়াছিল। তাহারা বলিয়াছিল যে তাহারা মানবের বুদ্ধির অগম্য কার্যসমূহ সম্পন্ন করিতে সক্ষম। বস্তুতঃ তাহারা এমন আশ্চর্যজনক কার্য্য করিয়াছিল যে, তাহা দর্শন করিয়া আমি বিস্ময়াভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলাম।

…দ্বিতীয়ত: এক দিবস রাত্রি দু-প্রহরের সময় সমুদয় জগৎ যখন গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন এই সাতজনের মধ্যে একজন বাজিকর আপনার পরিধেয় বস্ত্রাদি ত্যাগ করিয়া একটি চাদরে সর্ব্বাঙ্গ আবৃত করিল। ততঃপরে সে এই চাদরের মধ্য হইতে একটি অত্যুজ্জ্বল আয়না বাহির করিল। এই আয়না হইতে এ প্রকার তীব্র রশ্মি নির্গত হইল যে, তদ্দারা সমুদয় আকাশ অসম্ভবরূপে আলোকিত হইয়া উঠিল। পথিকগণ বলিয়াছিল যে, এই রাত্রিতে তাহারা নভোমন্ডল এক অভূতপূর্ব্ব আলোকে পরিপ্লুত হইতে দেখিয়াছিল এবং আগ্রা হইতে যে সকল স্থানে গমন করিতে দশদিন লাগে, সেই সকল স্থানের লোকেরাও এই আলোক দেখিতে পাইয়াছিল। এই আলোক, অত্যুজ্জ্বল দিবসের আলোক অপেক্ষাও অধিক হইয়াছিল।

…পঞ্চমতঃ বাজিকরগণ আমার সম্মুখে একটি গরম জলপূর্ণ বৃহৎ কটাহ স্থাপন করিয়া তাহাতে প্রায় তিন মন চাউল ফেলিয়া দিল। তৎপরে বিনা অগ্নিতে কটাহের জল ফুটিতে আরম্ভ করিল। কিয়ৎক্ষণ পরেই তাহারা কটাহের ঢাকনি খুলিয়া তাহা হইতে ভাত বাহির করিয়া একশত থালা পূর্ণ করিল, অধিকন্তু কটাহ হইতে প্রত্যেক থালায় একটি সিদ্ধ মুরগী রাখিল। এই ব্যাপার দেখিয়া আমি আশ্চর্য্যাণ্বিত হইয়া গিয়াছিলাম।

…ত্রয়োবিংশ দৃশ্যঃ তাহারা পঞ্চাশ হাত পরিমিত দীর্ঘ এক শৃঙ্খল লইয়া আসিয়া একবার আকাশের দিকে ছুঁড়িয়া দিল। এই দিক যেন শূন্যেই, কোনো অদৃশ্য বস্তুতে আটকাইয়া রহিল। শৃঙ্খলের অপর দিক ভূমির সহিত সংযুক্ত করিয়া দেওয়া হইল। তৎপরে তাহারা একটি কুকুর আনিয়া শৃঙ্খলের নিম্নদিকে দন্ডায়মান করাইয়া দিল। কুকুর তৎক্ষণাৎ শৃঙ্খল বাহিয়া শেষ সীমায় গিয়া উপস্থিত হইল এবং সেস্থান হইতে আদৃশ্য হইয়া গেল। এই প্রকারে এক একটা শূকর, সিংহ, ব্যাঘ্র, শৃঙ্খল বাহিয়া উঠিয়া উপরিভাগে গিয়া অদৃশ্য হইয়া গেল। তৎপরে তাহারা শৃঙ্খল নামাইয়া লইয়া উহা এক থলিয়ার মধ্যে রাখিল। জন্তুগুলি আকাশের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হইয়া গেল তাহা কেহই বুঝিতে পারিল না। এই অভূতপূর্ব্ব ঘটনা বিশেষ আশ্চর্য্যজনক।

(তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী, অনুবাদকঃ কুমুদিনী মিত্র)

সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজের চোখে খেলা দেখে যখন লিখে গেছেন, তখন এগুলি নিতান্তই শোনা কথা বা ঘটেনি একথা বলা চলে না। আর খেলা দেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি নিশ্চয়ই সুখকর হত না।

এবার নিজের অসমাপ্ত কাহিনিতে ফিরে আসি। ইতিমধ্যেই হারাধনদার কাছ থেকে কয়েকটা খেলা দেখে নিয়েছি। তিনি নিজেই আমাকে কৌশল শিখিয়েছেন। এমনকি, একবার বাড়ি যাবার আগে নিজের বাক্সের চাবিটাও আমাকে দিয়ে বলেছিলেন, “যদি সেরকম কেউ আসে আর ম্যাজিক দেখতে চায়, তবে বাক্সটা খুললে কিছু জিনিসপত্র পাবে।” দিন তিন’চারেক বাদে তিনি বাড়ি থেকে ফিরে এসেছিলেন। বাক্স খুলবার দরকার হয়নি।

তাস ছাড়া প্রথম যে খেলা তিনটি আমি শিখেছিলাম অর্থাৎ কৌশলটা দেখেছিলাম তার প্রথমটা হল খুব পাতলা কয়েকটা রঙিন কাগজ (ঘুড়ির কাগজের মত) ছিঁড়ে উপরে ছুঁড়ে দিলে সেটা একটা বড় ফুলের তোড়া হয়ে নেমে আসে। এর অনেক রূপান্তর পরবর্তী সময়ে দেখেছি, সেগুলি সবই তখন বিদেশ থেকে আসত। এ ধরনের খেলা প্রথম দেখেছিলাম এ.কে. দাস নামে এক ম্যাজিসিয়ানের কাছে। তিনি মঞ্চে একটি রুমাল নিয়ে এসে ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ সেটা একটা বড় লাঠিতে পরিণত করলেন। এর উল্টোটাও দেখেছি। একটি লম্বা লাঠি হঠাৎ দু’টি সুদৃশ্য রুমালে পরিণত হল।

যাই হোক, দ্বিতীয় যে খেলাটি শিখেছিলাম সেটি ছিল Dice Box-এর। পাশাপাশি একই সঙ্গে জোড়া দুটি কাঠের বাক্সের একটিতে একটা বড় মাপের Die (লুডো খেলার ঘুঁটি) রাখলে সেটা কাঠের দেয়াল ভেদ করে পাশের ঘরটিতে চলে যায়। এর পর দুটি ঘরই ফাঁকা দেখান হয় এবং Die আবার ফিরে আসে। তৃতীয় খেলাটির নাম ছিল ‘Magic Arrow।’ এক প্যাকেট তাস থেকে দর্শককে একটি পছন্দ করতে বলা হয়। তাসটি দেখে তিনি গোটা প্যাকেটে সেটি ভাল করে মিশিয়ে দেন। পরে জাদুকর প্যাকেটের সব তাস আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেন। তাসগুলি যখন হাওয়ায় ভেসে ভেসে নীচে নেমে আসছে, সেই সময়ে জাদুকর তীর-ধনুক দিয়ে সেই বিশেষ তাসটিকে গেঁথে ফেলেন। এরই উন্নততর ও জমকালো রূপ ছিল Television Frame। এটি আমি পরে কিনেছিলাম এবং বার কয়েক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখিয়েছি। এসব খেলা দু’শো আড়াই’শো লোকের সামনে ভালোই চলে। দর্শক সংখ্যা খুব বেশি হলে যন্ত্রপাতি নিয়ে বড় মাপের খেলা দেখানো ভালো। না হ’লে পিছনের দর্শকেরা শো উপভোগ করতে পারেন না। এসব অবশ্য হারাধনদার ছিল না। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। কারণ, তিনি তো পেশায় জাদুকর ছিলেন না, শুধুই শখে পড়ে শেখা।

আর একটি খেলা আমার খুব ভাল লেগেছিল, সেটি ছিল Multiplying Billiard Ball-এর খেলা। বিলিয়ার্ড বল বলা হলেও এটি দেখানো হত টেবিল টেনিসের পিংপং বল দিয়ে। খেলাটি হল – জাদুকর খালি হাতে মঞ্চে এসে ‘হাওয়া থেকে’ একটা বল ধরবেন। তার পর সেটা ক্রমশঃ সংখ্যায় বেড়ে পাঁচ আঙুলের ফাঁকে চারটি বল হবে। এর পরে কমতে কমতে একটি বল-এ এসে দাঁড়াবে এবং পরে সেটাও অদৃশ্য হয়ে যাবে। এক একটা বল যখন শূন্য থেকে এসে লাফিয়ে দু’আঙুলের ফাঁকে ঢুকে যায়, অথবা সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়, বাইরে থেকে দেখতে খুবই আকর্ষনীয় লাগে। খেলাটির ট্রিক বা কৌশলের অংশটি তেমন কিছু নয়, কিন্তু প্রচন্ড অনুশীলনের প্রয়োজন। মঞ্চে উঠে হাত থেকে বল পড়ে যাওয়াটা কাজের কথা নয়।

নিরন্তর অভ্যাস আমার পক্ষে কী করে সম্ভব! সব সময়েই কেউ না কেউ ঘরে রয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একমাত্র দুটি সময় কিছুটা অনুকূল ছিল। সেটা হল, রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে। কিন্তু সবাই যখন ঘুমোতে যায় তখন আমারও অসম্ভব ঘুম পায়। শেষে ঘুম কাতুরে বাঙালির সকালে ঘুম না ভাঙার স্বভাবটাই আমাকে অভ্যাসের সুযোগ দিয়েছিল। শীতকালে এ সুযোগটা আরো বেশি করে পেয়েছিলাম। শেষে অনেক চেষ্টায় খেলার প্রথম ও শেষ অংশটি ছাড়া অর্থাৎ হাওয়া থেকে বল ধরে একেবারে শেষে হাওয়ায় মিলিয়ে দেওয়া বাদ দিয়ে, একটা থেকে চারটা এবং চারটা থেকে একটা বল ধরা মোটামুটি আয়ত্ব হল।

সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে হস্টেল সংলগ্ন ভিতরের মাঠে প্রতি বছরই একটা জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। আবৃত্তি, গান, মূকাভিনয়, ইত্যাদি থাকত। সেবার সুপারিন্টেনডেন্ট সরোজ বসু মহাশয় অনুরোধ করলেন হারাধনের ম্যাজিক শো চাই, সেই সঙ্গে আমারও। হারাধনদার তেমন কিছু হেলদোল দেখলাম না কিন্তু শোনার পর থেকেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হবার জোগাড়। হারাধনদা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী কী দেখানো যায় বল তো?” সময় ধার্য ছিল আধ ঘন্টা। আয়োজকরা ঠিক করলেন, আসর শুরু হবে ম্যাজিক শো দিয়ে। ঠিক হল, মানে হারাধনদা ঠিক করলেন উনি দেখাবেন কাগজ ছিঁড়ে ফুল, ডাইস বক্স, জাম্বো তাস, এবং চোখ বেঁধে ব্ল্যাক বোর্ডে লেখার খেলা (যেটা X-Ray Eye নামে বিখ্যাত)। প্রথম খেলাটি দেখাবার পরে থাকবে আমার বিলিয়ার্ড বলের খেলা এবং তার পরে বাকিগুলি আবার ওঁর। জাম্বো তাসের খেলা হল, একটা বিশাল আকৃতির তাস, তাতে রুহিতন-এর (diamond) নানা ফোঁটা থাকবে। কথা বলতে বলতে তাসটা হাতে করে উপর থেকে নীচে ঘুরিয়ে ক্রমাগত এপিঠ ওপিঠ করে গেলে তাসের ফোঁটার পরিবর্তন হতে থাকবে। রুহিতন নেওয়া হয় এই জন্য যে এতে, উলটো করে দেখলেও জ্যামিতিক আকারের কোনো পরিবর্তন হয় না।

এ খেলাটি তখন কিছুদিন হয় বাজারে এসেছে। এটি দেখাতে গেলে বিশেষ ভাবে তৈরি তাস দরকার। যারা ম্যাজিকের যন্ত্রপাতি তৈরি করেন, তারাই পারেন এটি দক্ষ হাতে ত্রুটিহীন ভাবে তৈরি করতে। এরকম দু’একটি জায়গা ছিল যেখানে এসব তৈরি করানো যায়। আমরা ভেবেচিন্তে জাদুকর শঙ্কর দাশের কাছে গেলাম। বহু বছর উনি জাদুসম্রাট পি.সি. সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। বেলেঘাটায় ‘আলোছায়া’ সিনেমা হলের কিছু দূরে একটা গলি দিয়ে ঢুকে একফালি পুকুর পেরিয়ে ছিল ওঁর বাড়ি। পরে আমি একাও তাঁর বাড়িতে বার কয়েক গিয়েছি। উনি বাড়িতেই ছিলেন। শুনে বললেন, “পেয়ে যাবেন। কবে চাই?” দাম জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, “দশ টাকা।” এখন শুনে হাসি পেতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে সেটা ছিল গত শতকের পাঁচের দশকের শেষের দিক।

দু’এক দিন পরে শঙ্কর দাশের বাড়িতে গিয়ে জাম্বো তাস নিয়ে আসা হল। পরীক্ষা করে দেখলাম কী অসাধারণ দক্ষতায় সূক্ষ্ম জিনিসগুলি নিঁখুত ভাবে তৈরি করেছেন। শঙ্কর দাশের হাতের কাজ ছিল খুবই উঁচু দরের।

কিন্তু শুধু জিনিস হাতে পেলে তো হবে না, অভ্যাস করতে হবে। হাতে আর মাত্র দু’মাস সময়। এবার যেহেতু নিজেদের হস্টেলের অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক সূচির তালিকা আনুষ্ঠানিক ভাবেই তৈরি হয়েছে, তাই হারাধনদা অনুরোধ করলেন যে বিকেলে ঘন্টা খানেকের জন্য ওঁর ঘরে কেউ থাকবে না – শুধু উনি আর আমি থাকব। যাই হোক, যতদূর সম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে নির্দ্দিষ্ট দিনে মঞ্চে ওঠা গেল। হারাধনদার কাগজ ছিঁড়ে ফুল ভালোই উৎরালো। এবার আমার পালা। মঞ্চে উঠলাম। কৌতূহল এবং আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকা এতগুলি লোকের সামনে দাঁড়াতে হবে কখনো ভাবিনি। সামান্য একটু এদিক ওদিক হলেই সমূহ বিপদ। মঞ্চে দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু ভয় অনেকটা কেটে গেল। প্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে কোনো রকমে সে যাত্রা উৎরে গেলাম। হাততালিও পড়ল। কে একজন যেন একটা ছবি তুলেছিল। কয়েক দশক অ্যালবামেই পড়ে ছিল সেটা, কখনো কাজে আসবে ভাবিনি। একটা থেকে চারটে হওয়া পিংপং বল আঙুলের ফাঁকে নিয়ে মঞ্চে দাঁড়ানো সে ছবিটা এখানে জুড়ে দিলাম।

সিটি কলেজের রামমোহন ছাত্রাবাসের অনুষ্ঠানে লেখকের মাল্টিপ্লায়িং পিংপং বলের খেলা দেখানো

আমার পালা শেষ হয়ে গেছে। মনে তখন প্রবল সাহস। মঞ্চের পাশে পর্দার আড়ালে হারাধনদার জন্য অপেক্ষা করলাম। বলা বাহুল্য, উনি যথেষ্টই প্রসংশিত হলেন। দু’জনে দোতলার ঘরে উঠে এলাম। মনে হল যেন জীবনের এক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছি। তখন উৎপলা সেনের গান হচ্ছে। বারান্দায় কে যেন চেঁচিয়ে বলল, “উৎপলা জমিয়েছে।”

এরপর অনেক ম্যাজিসিয়ানের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আলাপ হয়েছে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউর পাশে ‘প্রভাত’ সিনেমা হলে (এখনও আছে কিনা জানি না) একবার All India Magicians’ Conference হয়েছিল। প্রত্যেক রাজ্য থেকে একজন দু’জন করে জাদুকরকে খেলা দেখাবার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে আবেদনের ভিত্তিতে মনোনয়ন করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’জন সুযোগ পেয়েছিলেন – একজন হারাধন নায়ক, অন্যজনের নাম মনে নেই। অপেক্ষাকৃত কম বয়সিদেরই বোধহয় সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, না হলে এ রাজ্যে তখন বহু লব্ধপ্রতিষ্ঠ জাদুকর ছিলেন। কোন রাজ্য থেকে কে এসেছিলেন এখন আর মনে নেই, তবে মাইকে একটা ঘোষণা এখনও কানে লেগে আছেঃ “Om Prakash, from East Punjab।” এই ওম প্রকাশের খেলা আর কোথাও কখনো দেখিনি – স্বাভাবিক, তিনি থাকেন পাঞ্জাবে। যাই হোক, সেদিন দীর্ঘ চার ঘন্টা ধরে বহু জাদুকরের খেলা দেখার সুযোগ হয়েছিল। অনেকে বহু নতুন খেলা দেখালেন, যেসব অন্যদের মধ্যে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল। সকলেই চাইছিলেন কে সেগুলি আগে রপ্ত করে মঞ্চে প্রদর্শন করবেন। শঙ্কর দাশের মত যারা ম্যাজিকের যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন, তাদের কাছে ভিড় লেগে গেল। Diminishing Milk, Increasing Milk, Milk Vanishing, Rising Card, ইত্যাদি খেলা আমি অন্তত সেখানে প্রথম দেখলাম। হারাধনদাও আগে কখনো দেখেননি বলে জানালেন।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, জাদুর জগতে আমরা ছিলাম নিতান্তই আনকোরা। অনেকের কথাই মনে পড়ছে তবে সেগুলি বলতে গেলে রচনার কলেবর বৃদ্ধি পাবে। একটা প্রদর্শনীর কথা শুধু বলব। ড: শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর ম্যাজিক শো – হয়েছিল নিউ এম্পায়ারে। ড: দাশগুপ্ত ছিলেন একজন চিকিৎসক। সেবার টি. বি. রোগীদের সাহায্যার্থে প্রদর্শনীটি হয়েছিল। ড: দাশগুপ্তর সঙ্গে ছিলেন তার কন্যা উমা দাশগুপ্ত। পরে আমি উমা দাশগুপ্তর একক প্রদর্শনীও দেখেছি। পরিচ্ছন্ন সেই খেলা, মার্জিত কথাবার্তা, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা।

শঙ্কর দাশের কাছে মাঝে মাঝে গিয়েছি। কয়েকবার হারাধনদা সঙ্গে ছিলেন, কয়েকবার আমি একা। সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। একজনের নাম মনে আছে – সুনীল দাস। কোন্নগর বা বৈদ্যবাটি কোথাও একটা থাকতেন। উনি আমাকে একটা ছাপান কার্ড দিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল ‘Specialist in modern magic and sleight of hand।’ হস্তকৌশল প্রদর্শনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ ও সাবলীল। কৌশল জানা থাকা সত্বেও চার পাঁচ ফুট দূরে বসে দেখেও বোঝা শক্ত কখন কী ভাবে তিনি সেটা প্রয়োগ করছেন। এ ধরণের খেলাই ছিল আমার বেশি পছন্দ। বিশাল যন্ত্রপাতি নিয়ে, সুবেশা মেয়েদের সাহচর্যে, চোখ ধাঁধানো জমকালো অনুষ্ঠান কখনই আমাকে তেমন আকর্ষণ করেনি। আসানসোলে রাস্তার পাশে বসা বেদেনীদের কাছে cup and ball-এর খেলা অনেক দেখেছি। মুখ থেকে বান্ডিল বান্ডিল ছুঁচ বার করাও দেখেছি। ফুটপাথে লোক চারপাশে ঘিরে রয়েছে, তারই মধ্যে তারা অনায়াস দক্ষতায় খেলা দেখিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হাসছে (হয়তো সবাইকে বোকা বানিয়ে)। বেঁচে থাকার জন্য সামান্য কিছু পয়সা রোজগার করতে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে কী পরিমাণ অনুশীলন এদের করতে হয়েছে ভাবতে অবাক লাগে। ম্যাজিক দেখাবার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হ’ল প্রদর্শনভঙ্গী বা showmanship, অতি সাধারণ খেলাও দেখাবার গুণে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ম্যাজিক তো হ’ল, কিন্তু আর দু’মাস বাদেই I.Sc পরীক্ষা – সেখানে তো জাদুর কৌশল কোনো কাজে আসবে না। মনঃসংযোগ করতে গেলেই নানা খেলার কথা মনে পড়ে। নেশা কী জিনিস সেটা টের পেলাম। কোনো রকমে সেবার প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। নানা সমস্যার মধ্যে আমি পুরানো কলেজে আর যেতে পারিনি। হারাধনদা বা অন্যান্য সতীর্থ ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। চিরদিনের জন্যই তারা হারিয়ে গেছে। স্মৃতিতে যেটুকে ধরা ছিল সেটুকু আশ্রয় করেই এই স্মৃতিচারণ।

এর পর দু’বার আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে মঞ্চে উঠতে হয়েছে। প্রথমবার ১৯৬২/৬৩ সালে বি.ই. কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়ে। সেবার ১০নং হোস্টেলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে হস্টেলের পাশের জমিটা ঠিকঠাক করে মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। আবৃত্তি গান ইত্যাদি তো ছিলই, তবে প্রথমে ম্যাজিক দিয়ে শুরু। মঞ্চে উঠে দেখি সামনে প্রিন্সিপাল এ.সি. রায়। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকম্যুনিকেশন বিভাগের প্রধান ড: এস.এস. বড়াল এবং আরও কয়েকজন অধ্যাপক। ১০নং হস্টেলের সুপারিনটেন্ডেন্ট ড: এ.কে. শীল তো ছিলেনই। আমি পেশাদারি জাদুকর নই, মঞ্চভীতি পুরোমাত্রাতেই ছিল, বিশেষ করে গণ্যমান্যদের সামনে। সবে milk vanishing দেখিয়েছি – সেটি ছিল একটা বড় জাগের দুধ কাগজের ঠোঙায় ঢেলে অদৃশ্য করে ফেলা – এমন সময় ড: বড়াল ছোটো ছেলেদের মত বেশ জোরেই বলে উঠলেন, “এ খুব সোজা, এটা আমি জানি।” এরকম একটা মন্তব্য শুনে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। বহু বছর পরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে যখন প্রসঙ্গক্রমে ঘটনাটি বলেছি, উনি প্রাণভরে হেসেছিলেন। অনুষ্ঠানের পরে রাত্রিবেলা ডাইনিং টেবিলে বসে যখন খাচ্ছি হঠাৎ ফাইনাল ইয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র, সঞ্জীত বর্ধন (বহু বছর ধরে আমেরিকাবাসী) খাবার ঘরে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী হে! খুব ভাল দেখিয়েছ।” বলে রান্নাঘরে ঢুকে একবাটি অতিরিক্ত মাংস নিয়ে এসে আমার পাতের কাছে রাখল।

আমার শেষ অনুষ্ঠানটি হয়েছিল ১৯৬৮ বা ’৬৯ সালে। তখন আমি শিক্ষক হিসাবে কলেজের সঙ্গে যুক্ত। কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই পান্ডিয়া হলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে নবীন শিক্ষকদের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ও গবেষক ছাত্ররাও থাকত। সেবার সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বেশ বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার অমিতাভ ঘোষ নিজে উদ্যোগী হয়ে চাঁদা তুলল। আমার আপত্তি নাকচ করে ঠিক হল ম্যাজিক দিয়েই অনুষ্ঠান শুরু হবে। নিতান্তই ঘরোয়া অনুষ্ঠান, শ’খানেক লোক। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভাগীয় প্রধান ড: শঙ্কর সেন, বৌদি, ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। সেবার টেলিভিশন ফ্রেম-এর খেলা দেখিয়ে খুব প্রশংসা পেয়েছিলাম, ভয়ও করছিল খুব – যদি যন্ত্রটি সঠিক মুহূর্তে কাজ না করে! খেলার শেষে চোখ গোল গোল করে ছোট একটা মেয়ের জিজ্ঞাসা করল, “এটা কী করে হ’ল বলুন না।” মেয়েটি ছিল ড: সেনের ছোট মেয়ে মুন্নি।

সেই শেষ। শত অনুরোধেও আর আমি ম্যাজিকের পথে পা বাড়াইনি।

বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর [IIEST, Shibpur]) অধ্যাপনা করেছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Suprabhat Mukhopadhyay , July 26, 2021 @ 4:12 pm

    মাননীয় মহাশয়,
    লেখাটি খুব মনোগ্রাহী হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র/ শিক্ষক-গবেষক হয়েও পরিচয় লিপিতে জ্যোতিষশাস্ত্র যা অবৈজ্ঞানিক তাতে উত্সাহী দেখে কিছুটা হতাশ হতে হলো বৈকি!
    এবারের সংখ্যার বিভিন্ন ধরনের লেখা দেখে খুব ভালো লেগেছে।
    অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকুন সবাই।
    – সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়। 5/7 নব অনন্যা, আসানসোল 5 mukhopadhyay suprabhat @ gmail(dot)com 26/07/21

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *