(সুমন ঘোষ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাঙলা ছবির পরিচালক। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলি একই সাথে দর্শক এবং সমালোচকের সমাদর লাভ করেছে। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘পদক্ষেপ’। সেখানেই তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে পেয়েছিলেন নায়ক রূপে। সৌমিত্র সেই ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর পরের ছবি ‘নোবেলচোর’ আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। পরে আরো তিনটি ছবিতে তিনি কাজ করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে)
অরিন্দম– একেবারে গোড়া থেকেই শুরু করছি। তোর জীবনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রথম কিভাবে মনে পড়ে?
সুমন ও অরিন্দম – চিত্র সৌজন্য অরিন্দম ঘোষ
সুমন- দেখ, প্রথম সৌমিত্র মানেই তো ‘ফেলুদা’। ‘সোনার কেল্লা’। ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ রিলিজ করে সম্ভবত ১৯৮০ সালে। আমার তখন আট বছর, একেবারে মনে ছাপ রাখার মতই বয়েস। ওরকম একটা চেহারা, তার ওপর রোমাঞ্চকর ছবি, সেগুলো তো ছিলই। এছাড়া আমরা ছোটবেলায় মা, বাবার সঙ্গে অনেক নাটক দেখতাম। ‘ঘটক বিদায়’ বলে একটা নাটক দেখেছিলাম, তাতে উনি ছিলেন। মানে ঐ সময় ঐটুকুই খালি ছিল।
পরে কলেজে যখন ভর্তি হই, সত্যজিৎ রায়ের ছবি গুলো যখন আবার ভালো করে দেখতে শুরু করি, তখনই কিন্তু অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতে শুরু করে। মানে উনি অভিনেতা হিসেবে কেন স্বতন্ত্র ইত্যাদি।
অরিন্দম– মানে তোর সৌমিত্রকে জানা কি পুরোটাই সত্যজিৎ রায়ের মাধ্যমে? হয় ‘ফেলুদা’ নাহয় অন্য সিনেমা?
সুমন- না, সেটা ঠিক নয়। বেশ কিছুটা ফেলুদা দিয়ে। আসলে সেই সময় যখন আমরা খুব ছোট, তখন মূলতঃ ছিলেন অমিতাভ বচ্চন আর মিঠুন চক্রবর্তী। বাংলা সিনেমাতে সৌমিত্র, শুভেন্দু, সন্তু, রঞ্জিত মল্লিক, শমিত ভঞ্জ এঁদের ছবি দেখতাম, উত্তমকুমার তো আছেনই। সৌমিত্র ছিলেন তখন এঁদেরই একজন। সেভাবে আলাদা করে ঠিক মনে পড়ে না। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় সত্যজিৎ রায়ের ছবি তে আলাদা করে ওঁর ইম্পর্টান্স টা বুঝতে পারলাম।
সৌমিত্রর সঙ্গে সুমন ও অরিন্দম – চিত্র সৌজন্য অরিন্দম ঘোষ
অরিন্দম– আচ্ছা, ধর এই মুহূর্তে যদি তোকে আমি জিজ্ঞেস করি সত্যজিৎ রায় ছাড়া অন্য কোন পরিচালকের ছবিতে সৌমিত্রকে দেখছিস? এই মুহূর্তে কোন নাম মনে পড়ে? আমি কিন্তু এখনকার ছবির কথা বলছি না, বলছি ঐ সময়কার ছবিগুলোর কথা।
সুমন- হ্যাঁ, ডেফিনিটলি। ‘ঝিন্দের বন্দী’ আবার দেখলাম, অনেক দিন পরে। আর একটি ছবি দেখলাম, নায়িকা শর্মিলা – অসাধারণ লাগলো (বর্ণালী, পরিচালক অজয় কর)। তপন সিংহের হুইলচেয়ার। আর একটা ছবির কথা সৌমিত্র কাকু খুব বলতেন, ওঁর খুব পছন্দের ছবি যেটা আমি দেখার সুযোগ পাইনি – ‘সংসার সীমান্তে’। সত্যজিৎ, মৃণাল সেন বা তপন সিংহের ছবি বাদ দিয়ে ওঁর এটা ভীষণ পছন্দের ছবি। ‘বাক্সবদল’ আবার দেখলাম, নতুনভাবে। মানে তোর প্রশ্নটা ছিল, – নতুন ভাবে ইভ্যালুয়েট করা?
অরিন্দম– হ্যাঁ, মানে যাকে বলা চলে পুনর্মূল্যায়ন –
সৌমিত্রর সঙ্গে সুমন – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
সুমন- আসলে খুব সত্যি করে বলতে গেলে, এটা আমি আগেও অনেককে বলেছি, সৌমিত্রর ব্যাপারে আমার একটা খুব খারাপ জিনিষ হয়েছে যে পরবর্তী কালে ওঁর সঙ্গে কাজ এবং অন্য ঘনিষ্ঠতা থেকে ঐ দূরত্বটা আর নেই। এটা আসলে খুব মুশকিল, যেমন ধর নিজের বাবাকে কিভাবে ইভ্যালুয়েট করবি? সৌমিত্রকাকুর থেকে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আলাদা করে তো ভাবতে পারিনা। এই আলাদা না করা গেলে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা খুব মুশকিল।
অরিন্দম– সেটা তো ঠিকই, মেকস সেন্স! তাহলে ধর, একটু পিছিয়ে যাই। ধর যে কোন অভিনেতা, তাঁর একটা স্বতন্ত্রতা বা নিজস্ব স্টাইল তো থাকে। তোর মতে অভিনেতা সৌমিত্রর স্বাতন্ত্র্য কোথায়? ইউনিকনেস?
সুমন- এই উত্তর দেওয়ার আগে একটা কথা বলি। আমি খুব ভাগ্যবান যে আমার বহু ভালো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁরা হলেন, সৌমিত্র ছাড়াও – সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, যিনি আমার মতে শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি, বাংলা কেন, ভারতীয় ছবির শ্রেষ্ঠ অভিনেতা- আমি সুপ্রিয়া, মাধবী, সবাইকে ধরেই বলছি। এছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কঙ্কনা সেনশর্মা, অরুণ মুখোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ অনেকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই নিরিখে বিশ্লেষণ করে যদি দেখি – মানে কতটা তাঁরা চরিত্রকে নিয়ে গভীর ভাবনা চিন্তা করেন আর কতটা যাঁরা প্রধানতঃ স্বতঃস্ফূর্ত, তাদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি। মিঠুনদা বা কঙ্কনাকে আমি রাখবো এই স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেতার দলে। মানে এঁদের চল্লিশ ভাগ ভাবনা আর বাকি ষাট ভাগ একেবারে ক্যামেরার সামনে যা বেরোবে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ঠিক অন্যদিকের। ওঁর আশি ভাগ প্রস্তুতি আর কুড়ি ভাগ ক্যামেরার সামনে ইম্প্রোভাইজেশন। এমনকি এই অনুপাত নব্বই – দশ বললেও হয়তো ঠিক হবে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং এখনকার অভিনেতাদের মধ্যে কৌশিক সেন, এই দুই বড় মাপের অভিনেতা, দুজনেই এক ঘরানার। এঁদের সঙ্গে কম্যুনিকেট করতে গেলে আমি বইয়ের সাহায্য নিই। মিঠুনদার সঙ্গে আমার কম্যুনিকেট করার উপায় ছিল জীবনের নানান ঘটনা আর বেসিক ইন্টেলিজেন্স।
আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি আমাদের ‘পিস হেভেন’ ছবিটা থেকে। সেই দৃশ্য যেখানে আলোচনা হচ্ছে অরুণ মুখোপাধ্যায় এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শ্রাদ্ধের মেনু নিয়ে। ওখানে দেখলাম সংলাপ বলতে বলতে সৌমিত্রকাকু পাঞ্জাবীর হাতাটা গোটাচ্ছেন। আমার ব্যাপারটা দারুণ লেগেছিল –
অরিন্দম– ঐ যেখানে ওঁর একটা খুব শ্লেষাত্মক সংলাপ ছিল –
সুমন- ঠিক, মানে নিজেকে তৈরি করছে অরুণবাবুকে হ্যাটা দেওয়ার জন্য। এটা উনি খুব সন্তর্পণে করলেন। তারপর সেটা পরে তিন চারবার রিটেক করতে হয়। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, প্রত্যেকবার ঐ ব্যাপারটা করলেন। অর্থাৎ ওটা ওঁর আগে থেকেই ভাবা ছিল।
অরিন্দম– আমার একটা ব্যাপার মনে হল, মানে তুই যে ক্লাসিফিকেশনটা দিলি, সৌমিত্র ও কৌশিক সেন, – যারা ব্যাপারটা এরকম তৈরি করে রিপ্রোডিইউস করতে পারেন, তারা সকলেই থিয়েটারের লোক।
সুমন- এটা আমাকে কৌশিক (সেন)দা ও বলেছিল। ওঁদের প্রচুর নাটক বারে বারে স্টেজে করতে হয় তো। কিন্তু সৌমিত্র কে তুই স্টেজ আর্টিস্ট বলবি?
অরিন্দম– না, মানে ধর শুরুটা তো স্টেজ থেকেই –
সুমন- সেটা ঠিক। এবং জীবনের শেষ অবধিও যুক্ত ছিলেন। মিঠুন বা কঙ্কনা সেভাবে একেবারেই নন। মিঠুন শুরুর দিকে কিছুদিন স্ট্রিট থিয়েটার করেছেন। কৌশিকদা এটা আমায় বলেছিলেন যে এটা পুরোপুরি স্টেজের ব্যাপার। তবে এই প্রস্তুতিটা থাকবে কিন্তু দেখে বোঝা যাবে না।
আমি কিছু সাধারণ অভিনেতাকে দেখেছি, যারা ঐ প্রস্তুতিটা নিয়ে এসেছে কিন্তু সেটা দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। আমি এমনকি আরো এগিয়ে গিয়ে আরো একটা উদাহরণ দেব। ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে অভিনয়ের মান খুবই উঁচু। যেমন ধর ‘বাড়িওয়ালি’তে সুদীপ্তা বা ‘দোসর’ ছবিতে কঙ্কনা! কিন্তু আমার ওঁর ছবির মহিলা চরিত্রের চরিত্রায়নে বেশ একরকম লাগে। মানে কঙ্কনা, অনন্যা, সুদীপ্তা ছাড়া। এটা আমি ঋতুদা কে বলেওছিলাম। আসলে এক্ষেত্রে তারা ঋতুদা যা বলে দিচ্ছে সেটাই পুরো রেপ্লিকেট করছে। আমার খুব প্রিয় বন্ধু, রাইমা, এতগুলো ছবি করেছে ঋতুদার সঙ্গে, আমি রাইমাকেও বলেছি। একইরকম অভিনয় মনে হয় সব জায়গাতে। রাইমা আমাকে বলেছিল ঋতুদা আমাকে যা দেখিয়ে দিত, আমি সেটাই করতাম। আমি রাইমার নাম করে বললাম, কিন্তু এটা অনেকের ক্ষেত্রেই সত্যি। এখানেই কিন্তু সৌমিত্র, কৌশিক সেনের ঘরানার সঙ্গে তফাৎ। মানে ক্রিকেটের ভাষায় বলতে গেলে – সৌমিত্রকাকু বা কৌশিক সেনরা হচ্ছেন অভিনয়ের রাহুল দ্রাবিড়, আর কঙ্কনা, মিঠুনরা হচ্ছেন শচীন বা সেওয়াগ।
এই দুই ঘরানার, মানে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং পরিকল্পনার, সবচেয়ে সুন্দর সংমিশ্রণ হল শাশ্বত (চট্টোপাধ্যায়) যাঁকে আমি খুবই উঁচু দরের অভিনেতা বলে মনে করি। ও কিন্তু একটা প্রস্তুতি নিয়ে আসে আবার অনেক কিছুই হয়তো ও জানেনা যা ওকে করতে হবে। সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে দেয়। আর ঐ রাহুল দ্রাবিড় ঘরানার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
অরিন্দম– আচ্ছা, উনি তো বেশ ক্রিকেট পাগল ছিলেন?
সুমন- ভীষণ। আমার বেশ মনে আছে ‘পদক্ষেপ’ ছবির স্যুটিং হচ্ছে। ভারতের খেলা, ওয়াসিম আক্রম কমেন্টারি করছেন। তখন আমার সঙ্গে সৌমিত্রকাকুর ভালো করে পরিচয়ও নেই। আমরা শটের জন্য ওয়েট করছি। উনি ওয়াসিম আক্রম স্যুইং বোলিং নিয়ে কী বলেন তা শুনে তারপরে শট দেবেন।
অরিন্দম– মনে আছে, আমরা সেই টলি ক্লাবে বসে আছি। রনজি নিয়ে কতক্ষণ আড্ডা হচ্ছে –
সুমন- আর একটা ঘটনা আমাকে বলেছিলেন, আড্ডা মারতে মারতে। পতৌদিকে নিয়ে। শর্মিলা – সৌমিত্র খুব বন্ধু ছিলেন, সেই সূত্রে পতৌদির সঙ্গেও খুব ভালো বন্ধুত্ব হয় সৌমিত্রকাকুর। একবার ওঁরা ভোর চারটে অবধি গ্র্যান্ড হোটেলে আড্ডা মেরেছিলেন, পতৌদি, শর্মিলা আর সৌমিত্র। মানে পতৌদিকে পেয়ে ক্রিকেট নিয়ে বহু প্রশ্ন, তুমুল আড্ডা, প্রায় স্যুটিং এর কথা ভুলেই গেছেন। পরের দিন সৌমিত্রকাকুর ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’ গানটার স্যুটিং আর পতৌদির ইডেনে খেলা। সৌমিত্রকাকু স্যুটিং করে এসে শোনেন পতৌদি সেঞ্চুরি করেছেন আর সেই নিয়ে হৈ হৈ হচ্ছে। গানটাও তো কিংবদন্তী হয়ে গেল। অন্যান্য অনেক জিনিষের মত ক্রিকেট নিয়েও ওঁর বিরাট প্যাসন ছিল।
অরিন্দম– ‘খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার’ এ মনে পড়লো, সেই বিখ্যাত উত্তম – সৌমিত্র রাইভ্যালরির কথা। সেটা সম্ভবত কিছুটা সেই সময়কার বানিয়ে তোলা – এটা নিয়ে তোর কাছে জানতে চাইবো ওঁর নিজের কথা।
সুমন- এটা তো নিঃসন্দেহে তখনকার বাঙালিদের বানানো। উত্তমকুমারের সম্পর্কে সৌমিত্রকাকুর যে শ্রদ্ধা তার মধ্যে কিন্তু কোনরকম ভণিতা ছিল না। আমাকে একান্তে বহুবার বলেছেন। ওঁরা ভীষণ বন্ধুও ছিলেন। গতবছর, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০১৯, আমার শেষ আড্ডা হয় সৌমিত্রকাকুর সঙ্গে। সেখানে বলেছিলেন স্যুটিং এর পর সৌমিত্র- উত্তম আড্ডা মারতে যেতেন গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে।
আমার আরো মনে হয় একটা রাজনৈতিক বিভাজন ছিল ওঁদের মধ্যে। সেটাও রাইভ্যালরির ব্যাপারে কিছুটা ইন্ধন জুগিয়েছিল। ঐ যে ষাটের দশকের শেষের দিকে শিল্পী সংসদ আর অভিনেত্রী সংঘতে পুরো টলিগঞ্জ ভাগ হয়ে গেল না! এর একদিকে ছিলেন উত্তম অপরদিকে সৌমিত্র। সেটার থেকেও ধারণাটা জন্মায়।
উত্তমকুমার যে কি পরিমাণ পরিশ্রম করতেন নিজেকে ইম্প্রুভ করার জন্য তা আমি সৌমিত্রকাকুর কাছেই শুনেছি। নিজের কথাবলা ভালো করার জন্য সকালে উঠে পাঁচালী পড়তেন। উচ্চারণের ব্যাপারে উত্তম আবার সৌমিত্রের সঙ্গে আলোচনা করতেন। ওঁরা বেশ কিছু ছবিতে তো একসঙ্গে কাজ করেছেন!
হ্যাঁ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও আমি বলবো সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে এটা আমি কোনদিন জানতে চাইনি যে ‘নায়ক’ কি করতে চাননি সৌমিত্রকাকু, বিশেষ করে যখন সেসময় সত্যাজিতের সব ছবিতেই প্রায় ছিলেন তো।
আমি ইয়ার্কি মেরে বলতাম যে পৃথিবীর সিনেমাতে যদি সবচেয়ে ক্যারিসম্যাটিক দুজন অভিনেতা থাকেন তাঁরা হলেন মার্সেলো মাস্ত্রোয়ানি আর উত্তমকুমার! সৌমিত্রকাকু সঙ্গে সঙ্গে একমত হতেন।
অরিন্দম– একদম – অন স্ক্রিন ক্যারিসমা – আর্টিফিসিয়াল না লেগেও –
সুমন- হ্যাঁ। মানে ধর উত্তমকুমার তো সেরকম ভাবে আমরা যাকে বলি সফিস্টিকেটেড ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেননি। গ্রুপ থিয়েটার থেকেও না। ইংরেজি বলাতেও খুব পটু নন। কিন্তু উনি যখন স্যুট পরে হাঁটছেন, ওঁর থেকে ভালো স্যুট কে কেউ ক্যারি করতে পারেননি। যেমন স্যুট, তেমন ধুতি পাঞ্জাবী। দুটো সম্পূর্ণ দুই মেরুর। সেটাই আসল সফিস্টিকেসন। কোন ব্যাকগ্রাউন্ড বা কতটা ভালো ইংরেজি বললো, সেটা ইমমেটেরিয়াল।
অরিন্দম–আমি শুনেছি আমার জেঠুর কাছে- উনি তরুণকুমারের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন যে উত্তম বাড়িতে টিউটর রেখে স্যুট পরা শিখেছেন! কীভাবে পরতে হয়, পরে কীভাবে হাঁটতে হয়, কীভাবে বোতাম লাগাতে বা খুলতে হয় – এগুলোর জন্য নিয়মিত ট্রেনিং নিয়েছেন।
সুমন- অসাধারণ! দেখ, ওঁর কিন্তু কোন দরকার ছিলনা। এগুলো ছাড়াই তো উনি উত্তমকুমার। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে এমন একটা পারফেকসনের জন্য হাঙ্গার – অকল্পনীয়। আর একটা ঘটনা বলছি। এটা আমার ‘নোবেলচোর’ ছবির স্যুটিং এর সময় মিঠুনদার কাছে শোনা। সৌমিত্রকাকুও ছিলেন। মিঠুনদা উত্তমের পরিচালনায় ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবিতে কাজ করেছিলেন। তখন মিঠুনের বেশ নাম হয়ে গেছে। উত্তমদা একদিন মিঠুনকে ডেকে বললেন – ‘মিঠুন তুই কি জানিস যে তুই স্লাইট ট্যারা আছিস? মানে ঐ লক্ষ্মী ট্যারা আর কি!’ মিঠুন বললেন যে তিনি এতদিন কাজ করছেন কেউ ধরতে পারেননি, এই ক’দিনে উত্তম বলে দিলেন? তারপর বলেছিলেন, ‘তুই কখনো লেন্সের দিকে সোজা তাকাবি না, একটু ইঞ্চিদুয়েক পাশের দিকে তাকাবি – তাহলেই ঠিক থাকবে।’ মিঠুন এত অবাক হয়েছিলেন – আনিবিলিভেবল!
মানে ধর, আমরা তো ভাবি সৌমিত্র হলেন রাহুল দ্রাবিড়, খুব মেথডিক্যাল। কিন্তু শচীন তেন্ডুলকরকেও প্রচণ্ড খাটতে হয় – নিজেকে ঠিকভাবে মেলে ধরার জন্য। এটাই আমার সৌমিত্রকাকুর কাছ থেকে জানা উত্তমকুমার সম্পর্কে – মানে উনি কি শিখেছেন উত্তমকুমারের কাছ থেকে।
অরিন্দম– আচ্ছা, সৌমিত্রর নায়িকাদের সঙ্গে জুটি হিসেবে – সৌমিত্র-অপর্ণা, সৌমিত্র-শর্মিলা কোনটা বেশি পছন্দ তোর জুটি হিসেবে?
সুমন- এমনকি সৌমিত্র – তনুজা! ‘প্রথম কদম ফুল’ বা ‘তিন ভুবনের পারে’। কিন্তু আমি ঠিক ঐভাবে দেখিনা। যেমন ধর – ‘সাত পাকে বাঁধা’। কি অসাধারণ সিনেমা! সেখানে তো নায়িকা সুচিত্রা সেন। মানে যাঁর অভিনয় ক্ষমতা সম্পর্কে সীমিত কথাটা বলা হয়, অন্য গুলো নিয়ে তো অতুলনীয়। সেখানে ওঁদের জুটিটাও দারুণ লেগেছিল, সিনেমাটাও খুব ভালো।
অপর্ণা সেনের সঙ্গে – আকাশকুসুম বা বাক্সবদল! কি অসাধারণ কেমিস্ট্রি। আর একটা দারুণ ছবি – বসন্তবিলাপ।
সৌমিত্রর সঙ্গে অপর্ণা – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
তবে যেমন ‘উত্তম-সুচিত্রা’ সেভাবে কেউ নেই। সৌমিত্র-শর্মিলার জুটিতে সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলিই বেশী স্মরণীয়।
অরিন্দম– অর্থাৎ সেভাবে সৌমিত্রের খুব কনসিস্টেন্ট নায়িকা কেউ ছিলেন না। ইন্টারেস্টিং! আচ্ছা, তুই তো ‘বসু-পরিবার’ ছবিতে সৌমিত্র-অপর্ণাকে জুটি হিসেবে পেয়েছিলি। মানে ওঁদের শেষ ছবি ছিল ‘পারমিতার একদিন’। লং গ্যাপ তারপর। সেখানে কেমন কেমিস্ট্রি ছিল ওঁদের মধ্যে?
সুমন- ‘পারমিতার একদিন’ এ ঠিক জুটি তো নয়। তবে সৌমিত্রর অভিনয় খুব ভালো। আসলে দেখ, এক শহরে থাকলেও ওঁদের দেখা হয় অনুষ্ঠানে। আমার ভাল লাগলো দুজনের মেন ভোকেশন হল বইপড়া আর সেটা নিয়ে একটা অদ্ভুত কনেক্ট হয়। অবশ্য আমার ছবিতে তো বিরাট কাস্ট। কিন্তু এটা ঠিকই ওঁদের দুজনের একজন রাজী না হলে আমি ছবিটাই করতাম না কারণ আমার অন্য চয়েস ছিলই না। তবে আমার ওটা মনে ছিল না যে ওঁদের এতদিন বাদে ফিরিয়ে আনা বা সেই পুরনো কেমিস্ট্রি আবার তৈরি করা – ওটা আমার কাছে ন্যাকামো মনে হয়।
আর কেমিস্ট্রির কথা যদি বলিস, তাহলে আমার ‘বসু-পরিবার’ ছবিতে আমি একটা নতুন চেষ্টা করেছিলাম। মানে আমার কাছে নতুন, অন্যরা হয়তো করে থাকবেন। একটা স্ক্রিপ্ট ছিল, কিন্তু ঐ আড্ডার দৃশ্যে আমি স্ক্রিপ্টটা দিয়ে সবাইকে নিজেদের মত করে করার কথা বলেছিলাম। আমি জানতাম, অভিনেতারা যখন সৌমিত্র, অপর্ণা, লিলি চক্রবর্তী, ঋতুপর্ণা – তাঁরা ঠিক নিজেদের মত করে নেবেন। কারণ আমি একটা গ্রুপ কেমিস্ট্রি চেয়েছিলাম। সেজন্যই আমি ব্যাপারটাকে একটু ফ্লেক্সিবল রাখতে চেয়েছিলাম। ঐখানে আমি সৌমিত্র অপর্ণার কেমিস্ট্রি দেখেছি। সৌমিত্র এবং অপর্ণার – টু ইচ আদারস ডায়ালগ। যেমন স্ক্রিপ্টে একটা জায়গায় ছিল যে অপর্ণা বলবেন সৌমিত্রকে দেখে প্রথমে একটা ভয় হয়। এটা বলার পর সৌমিত্র এমন একটা ইমিডিয়েট রিএকসন দেন, মানে একটু পেছনে তাকিয়ে,- সবাই হেসে ফেলেন। এটা স্ক্রিপ্টে ছিল না। তারপর ধর পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, মাস্টার অফ সাচ ইনোভেসনস। এছাড়াও এ টুকটাক দিচ্ছে, অন্যরা রিএক্ট করছে – আসলে ঐ গ্রুপ কেমিস্ট্রিটা যেটা চেয়েছিলাম, সেটা খুব সুন্দর এসেছিল। সেখানে তো অপর্ণা-সৌমিত্র কেমিস্ট্রিটাও ছিল।
‘বসু পরিবার’ ছবির প্রস্তুতি – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
অরিন্দম– মানে এক পরিণত বয়সের কাপলের মধ্যে একটা ইন্টারেকসন! সৌমিত্রের শেষের দিকে বেশ কয়েকটা এরকম –
সুমন- হ্যাঁ, যেমন ‘বেলাশেষে’।
অরিন্দম– কিন্তু এখানে সৌমিত্র-অপর্ণা এজ এ কাপল, ‘বেলাশেষে’র থেকে একদমই আলাদা। আচ্ছা, এবার আমরা পিছিয়ে যাব, স্যুটিং ফ্লোরে তোর প্রথম অভিজ্ঞতা – গৌতম ঘোষের ‘দেখা’। আচ্ছা, তুই কি এসিস্ট্যান্ট ছিলি?
সুমন- না, এসিস্ট্যান্ট ঠিক বলবো না। মোর এজ এন অবসার্ভার। তখন আমি কর্নেল থেকে ফিল্ম কোর্স করেছি, আমি একটা রিয়েল শুট দেখতে চেয়েছিলাম। আমি জানি আমি কলকাতায় আমি ছবি বানাবো, সেই হিসেবেই অবসার্ভার ছিলাম।
অরিন্দম– তুই ঐ সময়কার একটা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলি – সেই সময়কার কিছু মেমরি?
সুমন- মনে আছে, তখনো আলাপ হয়নি, প্রথম সামনা সামনি দেখেই মানে – আই ওয়াজ অস্ট্রাক। দেখ, লাইভ দেখেছি ওঁকে নাটকে। যেদিন আমি প্রথম স্যুটিং দেখতে যাই, স্যুটিং হচ্ছিল নর্থ ক্যালকাটার অরোরা স্টুডিওতে। ছিলেন, সৌমিত্র, পরান বন্দ্যোপাধ্যায় আর বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্রকে দেখে একেবারে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম – সেই অপুর সংসার, ফেলুদা – কেমন যেন একটা আনরিয়েল মনে হত। তারপর স্যুটিং দেখতাম, কিন্তু অনেকদিন গিয়ে আলাপ করার সাহস পাইনি। উনি শট দিয়ে বসতেন, সেখানে ফালতু গিয়ে ‘আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চাই’ গোছের কথা বলাটা ঠিক ভালো লাগতো না। উনিও হয়তো লক্ষ করেছিলেন, গৌতমদাও আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন যে সুমনও ফিল্মে উৎসাহী। প্রথম যেদিন ইন্টারেকসন হয়, সেদিন একটা সিনে দুটো টেকের পর থার্ড টেকটা ওকে হওয়ার পর উনি এসে বসলেন। আমার ঐ ফাইন্যাল টেকটা সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল, আমি তখন গিয়ে বললাম, ‘কাকু, এই টেক টা, খুব ভালো লাগলো।’ তখন আমাকে বললেন,- ‘আগের গুলোর থেকে কেন এটা বেশি ভালো লাগলো জান?’ আমিও সেটা ভাবছিলাম কিন্তু ঠিক ধরতে পারছিলাম না যে কেন থার্ড টেকটা প্রথম দুটোর থেকে ভালো। তখন আমাকে বললেন যে,
‘আমার গুরু শিশির ভাদুড়ি বলতেন যে অভিনয় হচ্ছে মেনলি পজের খেলা। মানে পজ তুমি কোথায় দেবে, কতটা দেবে, আদৌ দেবে কিনা। অর্থাৎ পজের এই রিদমটাই হল আসল অভিনয়। প্রথম দুটো টেকে আমার ঐ রিদমটা ঠিক লাগছিল না, এই শেষের টাতে আমারও খুব ভালো লাগলো, সেজন্যই আমারো মনে হয় তোমারও খুব ভালো লেগেছে।’
তারপর থেকে আমিও এই ব্যাপারে বেশ সচেতন হয়ে গেলাম। মানে ধর কোন একটা অভিনয় খুব ভালো লাগলো, কারণটা বোঝার চেষ্টা করতাম। দেখবি অনেক সময় কোন অভিনয় দেখেই আমাদের মনে হয় –‘উফফ, ফাটিয়ে দিল’। কেন যে ফাটিয়ে দিল, সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করতাম, পরে নিজের পরিচালনার ক্ষেত্রেও সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
অরিন্দম– তখন কি তুই ‘পদক্ষেপ’ ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিস?
সুমন- না, না। করিনি। সেটা ২০০০ সাল, আমি পিএচডি শেষ করতে পারবো কিনা সেই নিয়ে লড়ছি।
অরিন্দম– আচ্ছা, তুই যখন ‘পদক্ষেপ’ গল্পটা লিখতে শুরু করলি, সৌমিত্রর কথা মাথায় ছিল?
সুমন- একদম, একদম। আসলে সেটা আমার একটু গণ্ডগোলই আছে। আমি এখনো যখন কোন স্ক্রিপ্ট লিখি, কোন অভিনেতাকে ভেবে নিয়েই লিখি। তাহলে আমার একটু সুবিধে হয়। আসলে স্ক্রিপ্টের ও একটা তো ভিস্যুয়াল ইমেজিং এর ব্যাপার আছে, তখন একটা মুখ থাকলে সুবিধে হয়। যেমন এই চরিত্রটা সৌমিত্র, এটা অরুণ মুখোপাধ্যায় – এরকম ভেবেই আমি স্ক্রিপ্ট লিখি। লাকিলি এখনো পর্যন্ত আমি যাঁদের ভেবে লিখেছি, তাঁদেরই পেয়ে গেছি।
অরিন্দম– কিন্তু এখনকার কথা আলাদা। কিন্তু একেবারে শুরুতে, যখন সৌমিত্রর কথা ভাবছিলি, সেটা কি একটু রিস্কি হয়ে যেত না? ধর যদি রাজি না হতেন?
সুমন- সেটা ঠিক। আসলে পদক্ষেপ এর স্ক্রিপ্ট লিখি ২০০৪এ, সিনেমাটা করি ২০০৫এ। এই চার বছরে যখনই কলকাতা গেছি, ওঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছি। একটা রিলেসনসিপ ডেভেলপ করেছে। ততদিনে আমি অমর্ত্য সেনের ওপর ডকুমেন্টারি টা বানিয়েছি, ২০০২ তে। উনি অনেক জানতে চাইলেন অমর্ত্য সেনের ব্যাপারে। তবে স্ক্রিপ্টটা না পড়া অবধি আমি জানতাম না উনি রাজি হবেন।
সৌমিত্র ও অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সুমন – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
অরিন্দম– তারপর? স্ক্রিপ্টটা পড়ালি ওঁকে?
সুমন- হ্যাঁ। আমি তখন আমেরিকা থেকে স্ক্রিপ্টটা পাঠিয়েছিলাম, মেল করে। তখন ইমেল এত প্রচলিত ছিল না, আমি হার্ড কপি নিয়ে একেবারে সাধারণ মেলেই পাঠিয়েছিলাম। তারপরে ফোনে কথা হল। উনি জানালেন যে ওঁর মাইনর কিছু সাজেসন আছে, কিন্তু ওঁর ওভার অল খুব ভালো লেগেছে। বেশ অনেস্ট স্ক্রিপ্ট। বললেন, ‘তুমি কলকাতায় এসো, কথা হবে।’ তারপরে কলকাতায় এসে তো কথা হল, সিনেমাও হল।
অরিন্দম– আচ্ছা, যখন এটার জন্য উনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পেলেন, তোর কীরকম রিএকসন ছিল? এটা তো সেবার বেস্ট বেঙ্গলি ফিল্মের জন্যও জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। আর সৌমিত্রর তো এটা প্রথম জাতীয় পুরস্কার।
সুমন- হ্যাঁ, আসলে আমার তো জাতীয় পুরস্কারের মত এরকম বিরাট আকাঙ্ক্ষা কিছু ছিল না। ছবিটা বানাতে পেরেছি, মুক্তি পেয়েছে, কয়েকটা ফেস্টিভ্যালে গেছে, ব্যস! ছবিটা বিশেষ চলেওনি, কারণ আমি মার্কেটিং জানতাম না। আমার মনে হত যে অন্ততঃ সত্তর বছর বয়সে আমার কোন আপসোস থাকবে না যে একটাও ছবি বানালাম না। কাজেই জাতীয় পুরস্কারের আগেই,- মাই চ্যাপ্টার ওয়াস ক্লোজড। তাই যখন শুনলাম, বেশ অবিশ্বাস্য লাগছিল, মানে এটাই কি সেই জাতীয় পুরস্কার? আমার স্ত্রীও বলেছে যে এটা অন্য কোন একটা কিছু হবে। তারপর প্রেস থেকে ফোন এল, এখানে টেলিভিসনে মানে তখন ইন্টারনেট টিভিতে যতখানি দেখা যেত আর কি। টিভিতে ওঁর অন্যান্য সিনেমা মানে অপুর সংসার, ঝিন্দের বন্দী, আকাশকুসুম ইত্যাদি দেখাচ্ছিল এবং বলছিল যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এতদিন পর প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেলেন। তখন বেশ বোধগম্য হল। মানে যাকে বলে ইতিহাস সৃষ্টি হল। আমি সবাইকে বলি দেখ আমার তো দোষ না, যে উনি এত বড় বড় পারফর্মেন্সের পরেও পুরস্কার পাননি।
অরিন্দম– আচ্ছা, এটা কি সত্যি যে উনি বেশ রিলাক্ট্যান্ট ছিলেন? এওয়ার্ড টা নিতে? পরে অনেক বোঝানোর পর সাইট স্বীকার করেন?
সুমন- হ্যাঁ। এটা সত্যি। আসলে ঐ যে ছবির সময়ে আমি অবসার্ভার ছিলাম, সেই ‘দেখা’ ছবির জন্য উনি পান ‘জুরি স্পেশাল মেনসন ইন দ্য ন্যাশনাল এওয়ার্ড’। সেবছর বেস্ট এক্টর হয় অনিল কাপুর, ‘পুকার’ ছবির জন্য। অনিল কাপুর অনেক ভালো ভালো পারফরম্যান্সও দিয়েছে বাট নট ফর ‘পুকার’। সেটা নিয়ে খুব হৈ চৈ হয়। যদি মোহনলাল, নাসিরুদ্দিন বা মিঠুন চক্রবর্তী পেতেন, তাহলে হয়তো অন্য ব্যাপার হত। আমরা সবাই জানি ‘পুকার’ ছবির কথা, এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে যাবে। ঐ ব্যাপারটাতে উনি খুব এনয়েড হয়েছিলেন। ঐ স্পেশাল জুরি মেনসনটাও উনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তারপর থেকেই উনি ঐ এওয়ার্ডের ব্যাপারে এলুফ ছিলেন। তারপর ‘পদক্ষেপ’ এর ব্যাপারে উনি বলেন যে এই পুরস্কারটা একটা ভালো ছবির জন্য, ওঁর পছন্দের ছবির জন্য। এছাড়া ওঁর যাঁরা ফ্যান, গুণগ্রাহী – তাঁদেরও তো একটা সম্মানের ব্যাপার আছে।
অরিন্দম– তোর সঙ্গে এওয়ার্ড, রেকগনিশন, এসব নিয়ে কথা হয়েছে?
সুমন- হয়েছে। মানে আমাদের গত ২০ বছরের পরিচয়, গভীরভাবে ওঁকে জেনেছি প্রায় পনের বছর। এই সময়টাতে ওঁকে দেখেছি ওঁর আর এইসব পুরস্কারের কোন মোহ নেই। কাজটাই ওঁর কাছে মেন ছিল। তবে হ্যাঁ, ফরাসী সরকারের ‘লিজিয়ন দ্য অনার’ এটা পাওয়াতে উনি খুব খুশি হয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায় পেয়েছিলেন, অমর্ত্য সেন পেয়েছিলেন, উনিও পেলেন এটা সম্ভবতঃ ওঁকে তৃপ্তি দিয়েছিল। কিন্তু এওয়ার্ড না পাওয়ার জন্য যে আক্ষেপ সেটা কোনদিন দেখিনি। পরে অবশ্য উনি ‘দাদাসাহেব ফালকে’ ও পান।
অরিন্দম–মানে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ অনেক পরে পেয়েছেন। উনি পশ্চিমবঙ্গে লিজেন্ড, আন্তর্জাতিক খ্যাতিও পেয়েছেন – কিন্তু জাতীয় স্তরে কি তেমনভাবে সম্মানিত? মানে সেটাই কি কারণ যে উনি হিন্দি তে ছবি না করার?
সুমন- আসলে লোকটাই এমন যে কাজটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। দেখ, আমরা সবাই জানি যে পুরস্কারের পেছনে অনেক রাজনীতি কাজ করে। কিছু লোক এসব পাওয়ার জন্য তাঁদের সব ক্ষমতা লাগিয়ে দেয়। সেই মনোবৃত্তি সৌমিত্রবাবুর কোনদিনই ছিল না। ওঁর ছিল কাজ নিয়ে আলোচনা বা পরের নাটক কী নামাবো এই নিয়ে বেশি চিন্তা।
অরিন্দম– আচ্ছা, পুরস্কারের কথা বাদ দিচ্ছি। কিন্তু উনি আরো বেশি জাতীয় স্তরে কাজ করেননি কেন? মানে অন্য ভাষার পরিচালকদের সঙ্গে?
সুমন- সেটা ওঁকে আমি টেলিগ্রাফের একটা ইনটারভিউ নেওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি ‘আনন্দ’ সিনেমাতে অমিতাভ বচ্চনের রোলটা পেয়েছিলেন। তারপর শশীকাপুর নিজে কলকাতায় এসে শ্যাম বেনেগালের ‘কলিযুগ’ ছবিতেও ওঁকে রোল অফার করে ছিলেন। সেটাও উনি করেননি। সৌমিত্রকাকুর দুটো উত্তর ছিল। একটা হচ্ছে উনি হিন্দি ভাষাটা ভালো জানতেন না। ফলে উনি ছবিটা করে খুব তৃপ্তি পেতেন না। করে হয়তো দিতেন, কিন্তু খুব ওঁর মনোমত হতনা। দ্বিতীয় কারণ হলো যে সেটা করতে গেলে ওঁকে কলকাতা ছেড়ে বিরাট একটা সময় বাইরে থাকতে হত। সেটা উনি একেবারেই চাননি। উনি বলতেন আমার নাটক হচ্ছে নিয়মিত। আমার একটা বিরাট বন্ধু গোষ্ঠী। মানে অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের মতই কলকাতার সাংস্কৃতিক জগৎ ওঁর রক্তমাংসে একেবারে মিশে গিয়েছিল। অর্থাৎ একটা হল ভাষা আর একটা হল কলকাতা। তবে আমি যখন হিন্দিতে ছবি করার দিকে ঝুঁকছি, আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন। বলতেন যেটা খুব উৎসাহব্যঞ্জক তা হল হিন্দিতে যে পরিমাণ নতুন প্রতিভাবান অভিনেতারা এসেছেন। শেষের দিকে উনি নওয়াজউদ্দিন, ইরফান, রাজকুমার রাও মনোজ বাজপেয়ি, এঁদের কথা খুব বলতেন। তখন আমাকে খুব সাপোর্টই করতেন হিন্দি ছবি করতে কারণ এত ভালো ভালো অভিনেতা হয়তো এখানে পাওয়া যাবে না।
অরিন্দম– সৌমিত্রর কথাতেই ফিরে আসি। আমার মনে হয় ভাষার যে সীমাবদ্ধতা সেটা উনি নিজের প্রতিভা বা কর্মক্ষমতা দিয়ে কাটিয়ে উঠতে পারতেন আমার মনে হয় দ্বিতীয় কারণটাই মুখ্য।
সুমন- ঠিক, ঠিক।
অরিন্দম– আচ্ছা, তুই তো ওঁকে বেশ কটা সিনেমা – ‘পদক্ষেপ’, ‘দ্বন্দ্ব’, ‘পিস হেভেন’ এবং ‘বসু পরিবার’ – চারটে ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে পেয়েছিস। ডিড ইউ সি সাম সর্ট অফ ইভলিউসন ইন দিস ফেজ?
সুমন- ডেফিনিটলি। ‘পদক্ষেপ’ এর সময় তো আমি ওঁর সঙ্গে কিভাবে কম্যুনিকেট করবো সেটা ভাবার চেষ্টা করছিলাম। আমি অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, একটা সম্ভ্রম ও কাজ করছিল। এটা একজন নির্দেশক ও অভিনেতার মধ্যে থাকা ঠিক নয়, কিন্তু ছিল। তারপর থেকে কিন্তু আমাদের মোটামুটি চোখে চোখে কথা হত। ভাল হলে আমি একটা নড দিতাম। নাহলে – মানে ধর ‘বসু পরিবার’ ছবিতে একটা দৃশ্যে উনি বেশ আবেগপ্রবণ একটা বক্তৃতা দেবেন, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করে। সেখানে শেষে ওঁর চোখে জল চলে আসে। সটটা শেষ করেই আমার দিকে তাকালেন, আমিও তাকালাম। বুঝে গেলেন। পরের টেক এ, চোখটা ছলছল করলো, কিন্তু জলটা আর এলো না। মানে আমি চাইনি যে চোখে জল আসুক। উনিও আমার দিকে তাকিয়ে বুঝে গিয়েছিলেন, শেষের দিকে আমাকে উনি খুব ভালো বুঝতেন। বুঝে ফেলেছিলেন যে এই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যাওয়াটা হতো সুমনের একটু মোটা দাগের লাগলো। সেজন্য সঙ্গে সঙ্গেই পরের টেকটা দিলেন, অন্যভাবে।
আমরা স্যুটিং এর সময় ‘ব্লকিং’ করি। মানে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে কোন সংলাপটা বলা হবে বা কোন ইমোসনটা প্রকাশ পাবে সেটা আগে ঠিক করে নিই। কারণ আলো নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে। মাঝে মাঝে ‘ব্লকিং’টা খুব কনফিউজিং হয়ে যায়। সৌমিত্র টেকনিক্যালিও পারফেক্ট ছিলেন। সেজন্য পরের দিকে আমি বলে দিতাম, কাকু আমি এটা চাই, এই লাইট, এই সংলাপ, এই সহ-অভিনেতার সঙ্গে এরকম অভিনয় -। মানে বলে দিতাম ওঁর প্রিয় ক্রিকেটের ভাষায় – “ব্যাঙ্গালোরের (১৯৮৭, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) সেই এবড়ো খেবড়ো পিচ, তুমি ঠিক করে নাও কিভাবে খেলবে।” উনি বলতেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
শেষের দিকে এভাবেই কম্যুনিকেসন গুলো হত। কিন্তু প্রথম ছবিতে আমি প্রচণ্ড ভয় পেতাম। যদি উনি রেগে যান? বলেন – আগে নিজে ঠিক করে তারপর আমাকে বল। বলতেই পারতেন। তখন আমিও ছেড়ে দিতাম। এটা নাহয় বসে বসেই করুক, লাইটটা নাহলে পাবে না। শেষের দিকে, মানে ‘পিস হেভেন’ বা ‘বসু পরিবার’ ছবিতে সেটাই খুব মজা হত। ওঁকে আমি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতাম, দেখি না কী করে করেন।
অরিন্দম– আচ্ছা, এই যে ট্রানজিসন অফ রিলেসনসিপ, এটা কি ঘটেছিল ‘দ্বন্দ্বে’র সময়? মানে ‘দ্বন্দ্বে’র ওই সেরিব্রাল ক্যারাকটার –ওটা সৌমিত্র ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না –
সুমন- সেরকম ঠিক মনে নেই। তবে আমার একটা রাত্তির মনে আছে। এটা কোন ফিল্ম সেটেও নয়। এটা আমি কোথাও বলিওনি। যেবার আমরা ন্যাশনাল এওয়ার্ড পেলাম তার আগের রাত। আমরা এক হোটেলে ছিলাম। ওঁর সম্ভবত একটা ক্লস্টোফোবিয়া ধরনের কিছু ছিল। ভার্টিগোও ছিল। আমাদের রেখেছিল একটা বহুতল হোটেলে। উনি একা ছিলেন। হি ওয়ান্টেড সামওয়ান টু বি হিস সাইড। আমাকে দশটা নাগাদ উনি ফোন করলেন, ‘সুমন একা আছো, কি করছো? এখানে চলে এসো না, আমরা আড্ডা মারতে মারতে ঘুমিয়ে পড়তে পারি।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। নিশ্চয়ই।’ তারপর আমি চলে এলাম। শুয়ে শুয়ে দুজনে বিশাল আড্ডা। সেই কলকাতা ফুটবল, কত কী নিয়ে। ‘সুমন, এটা দেখেছো, ওটা দেখেছো?’ মানে আমার তখন মোহটা একটু করে কাটছে। আমি ভাবছি আমার পাশের খাটে শুয়ে আমার সঙ্গে কে গল্প করছে? মানে বাংলার একজন কিংবদন্তী। সেই রাতটা আমার কাছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট। যাকে বলে ‘টু ব্রেক দ্য আইস’। ততদিনে ওঁর আমার ছবিতে কাজ করে পুরস্কার পাওয়াও হয়ে গেছে। কিন্তু ঐ রাতের পর থেকে আমার প্রতি একটা পুত্রসুলভ স্নেহ উনি অনুভব করতেন, মানে যাকে পাশে শুইয়ে গল্প করা যায় আর কি! তারপর থেকে আমিও একটা মানসিক নৈকট্য বোধ করছিলাম। আমিও খুব খেয়াল রাখছিলাম, হোটেলে বা যখন এওয়ার্ড নিতে যাচ্ছিলেন। তারপর থেকে ‘দ্বন্দ্ব’ হল, আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। সেজন্য ঐ রাতটা আমার কাছে খুব ক্রুসিয়াল।
অরিন্দম– আচ্ছা, দুটো সিনের কথা তোকে জিজ্ঞেস করবো। ফার্স্ট – ‘পিস হেভেন’, দ্বিতীয় – ‘বসু পরিবার’। দুটোরই শেষ সিন। পিস হেভেন এ আমরা কিন্তু জীবনানন্দ দাশের ঐ কবিতাটা আমরা লিখিনি। আর অন্যটা – ‘বসু পরিবার’ ছবিতে ঐ যে ট্রান্সস্লেসন। আমি জানি ঐটা নিয়ে তুই অনেকদিন চিন্তায় ছিলি। ফাইনালি সৌমিত্রই অনুবাদ করেছিলেন। এই দুটো নিয়ে একটু বল!
সুমন- ‘পিস হেভেন’ এর সময় আমি ওঁকে বলেছিলাম যে ধর তোমার মৃত্যুর আগে তোমাকে সমুদ্রের ধারে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখন তোমার যে কবিতাটা তোমার মনে হবে সেটা বল। উনি তখন জীবনানন্দের ঐ কবিতাটা বলেন। আমি জানি জীবনানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ হলেন ওঁর জীবনের খুঁটি। অবশ্য সত্যজিৎ রায় তো আছেনই। কিন্তু আরো গভীর দার্শনিকতায় আছেন ওঁরা দুজন। আমি ভেবেছিলাম উনি হয়তো রবীন্দ্রনাথের কোন কবিতা বলবেন। কিন্তু উনি জীবনানন্দের ঐ কবিতাটা বলেন।
‘বসু পরিবারে’ ঐ জেমস জয়েসের ‘দ্য ডেড’ গল্পে শেষের কবিতার অংশের অনুবাদটা শেষ দৃশ্যে রাখা ছিল। ওটা কে বলা হয় বেস্ট পিস অফ লিটারেচার এভার মেড। আমি ভেবেছিলাম যে ওটা শ্রীজাতকে বলবো লিখতে। শ্রীজাত আমার খুব বন্ধু। আমি এটাও জানতাম যে কলকাতায় আরো যে দুজনকে আমি বলতে পারতাম, তাঁরা হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং শঙ্খ ঘোষ। যাঁরা ভাষাটাও জানেন এবং ঐ গভীরতা কে স্পর্শ করতে পারতেন। এইসময় একদিন আমরা স্যাটারডে ক্লাবে আড্ডা দিচ্ছি, উনি খুব স্যুইটলি বললেন, ‘সুমন, একটা রিকোয়েস্ট করবো?’ আমি বললাম বল কী বলবে। তখন উনি বললেন, ‘আমি একবার চেষ্টা করে দেখি, যদি পছন্দ না হয়, তাহলে শ্রীজাতকে দিও’। আমি মনে মনে তাই চাইছিলাম। উনি নিজে বলাতে বললাম, সিওর। এরপর উনি বাড়ি গেলেন, দুদিন পরে ফোন করলেন, ‘সুমন ব্যস্ত আছো? ওটা করেছি, তোমাকে শোনাতাম।’ তারপর আমাকে পড়ে শোনালেন। বললেন, ‘ঠিক আছে তো? ভালো না লাগলে পরিষ্কার বলবে কিন্তু।’ আমি বললাম, না একদম খাসা হয়েছে। তারপর ওটাকে ফেয়ার করে আমাকে দেন। সেটা ফ্রেম করে আমার বাড়িতে টাঙানো আছে।
সৌমিত্রর নিজের হাতে লেখা অনুবাদ – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষ
অরিন্দম– আচ্ছা, তুই যখন স্ক্রিপ্ট লিখিস বললি অভিনেতা তোর মাথায় থাকে। ওঁর এবসেন্স টা কি তোকে এফেক্ট করবে?
সুমন- দেখ, আমার ফিউচার প্রজেক্ট তো সবই হিন্দিতে। হিন্দিতে উনি করতেন না। বা সম্ভবও না মুম্বাই গিয়ে ছবি করা। সুতরাং, কাস্টিং নিয়ে তেমন কিছু নেই। কিন্তু, উনি চলে যাওয়ার পর আমার মনে হচ্ছে যে আমার সিনেমা জগতের সত্তাটা, সব সময় ওঁকে খুশি করার একটা চেষ্টা করে। যেমন, আমার হিন্দি ছবি ‘আধার’ – তার গল্পটাও আমি ওঁকে শুনিয়েছিলাম, ‘ফ্যামিলিওয়ালা’ গল্পটাও ওঁকে বলেছিলাম। আমার সব গল্পই ওঁকে প্রথম শোনাতাম। মানে আমার সবসময় চেষ্টা ছিল ওঁকে ইনভল্ভ করার এবং খুশি করার। মানে ধর তোর মেয়েরা বা আমার মেয়েরা যেমন কিছু করে বাবার কাছ থেকে একটা সার্টিফিকেট আশা করে, ঠিক সেরকম।
সৌমিত্রর সঙ্গে সুমন, সকন্যা – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
আমার এটা একেবারে গভীর উপলব্ধি যে সম্ভবতঃ আমার পুরো ফিল্মজীবনটা ওঁকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল। আমার ‘আধার’ সিনেমা,- আমি ওঁর জন্যে একটা আলাদা স্ক্রিনিং করবো ভেবেছিলাম। বা আমার ‘সার্চিং ফর হ্যাপিনেস’ সিনেমাটার ও স্পেশাল স্ক্রিনিং এর কথা ভেবেছিলাম। সেটা একটা খুব বড় ভয়েড বা ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়ে গেল আমার জন্য, আমি জানিনা এটা কীকরে পূরণ হবে।
বাংলার শেষ নবাব – চিত্র সৌজন্য সুমন ঘোষের ফেসবুক পেজ
অরিন্দম– তোকে অনেক ধন্যবাদ, এত বড় করে, এতটা বিস্তারিত এই সাক্ষাৎকারের জন্য।
2 Comments