বাংলা চলচ্চিত্রে গানের ব্যবহার: আধুনিক বুদ্ধিজীবীর অচ্ছুত মৎস্য (প্রথম পর্ব)

বাংলা চলচ্চিত্রে গানের ব্যবহার: আধুনিক বুদ্ধিজীবীর অচ্ছুত মৎস্য (প্রথম পর্ব)

(১)

ভারতীয় ছবিতে গানের ব্যবহারের ইতিহাস সবাক চলচ্চিত্রের ইতিহাসেরই সমবয়সী। তবে হিন্দি বা দক্ষিণ ভারতীয় ছবির সঙ্গে বাংলা ছবির সূচনাপর্ব থেকেই উল্লেখযোগ্য মৌলিক পার্থক্য যা ছিল – তা হল হিন্দি বা দক্ষিণী ছবি যেখানে প্রথম থেকেই ছিল নৃত্যগীতবহুল, বিনোদনমূলক উপাদানে সম্পৃক্ত, সেখানে বাংলা ছবি প্রায় জায়মান পর্ব থেকেই ছিল সাহিত্য নির্ভর। তাই বিনোদন প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলেও বাংলা চলচ্চিত্র বিষয়বস্তুর নিরিখে চিরকালই ছিল অনেক বেশি জীবনমুখী ও বাস্তব নির্ভর। দর্শক মনোরঞ্জনের প্রয়োজনে গানের ব্যবহার হলেও প্রথম থেকেই তাই বাংলা ছবিতে গানের প্রয়োগ হয়েছে অনেকাংশেই জীবনধর্মী।এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল বাংলা সঙ্গীত-অঙ্গনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামক ব্যক্তিটির উপস্থিতি। এই ব্যক্তিটির উপস্থিতির কারণে এবং প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতিন বসু, দেবকী বসুর মতো প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকারদের হাতে চলচ্চিত্রে তাঁর গানের শিল্পিত প্রয়োগের কারণে বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের প্রথম যুগ থেকেই গানের ব্যবহারে স্বয়ংক্রিয় ভাবে একটা উচ্চমান নির্ধারিত হয়ে যায়।

শুরু থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সমান্তরালে পরিস্থিতির প্রয়োজন অনুযায়ী পরিচালক, গীতিকার ও সুরকারের যৌথ প্রয়াসে বিশেষ ভাবে নির্মিত গানেরও ব্যবহার শুরু হয় এবং এ ব্যাপারেও অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন সেই প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতিন বসু, দেবকী বসুরাই। এই ভাবে শৈশব কাল থেকেই গান ও গল্পের অঙ্গাঙ্গী মিলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ছবি পরিণতির দিকে অগ্রসর হয় এবং গান ক্রমশই বাংলা ছবির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে।

কৌতুককর ঘটনা হল – এতকিছু সত্ত্বেও বাংলা ছবিতে গানের প্রয়োগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে বাংলা দর্শককুল কিন্তু বহুধা বিভক্ত৷ প্রথম দল – যে দলের দর্শক চলচ্চিত্রকে আদৌ বিনোদনের মাধ্যম বলে মনে করেন না এবং নির্ভেজাল সিরীয়াস চলচ্চিত্রের পূজারী। এঁদের তত্ত্ব হল – শিল্প মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রে গানের আদৌ কোনো প্রয়োজনই নেই। যত শিল্পিত বা গভীর প্রয়োগই হোক না কেন, চলচ্চিত্র-ভাষার সার্থক প্রয়োগের মাধ্যমে গানের প্রয়োগ-প্রয়োজনীয়তার অপনয়ন অবশ্যই সম্ভব৷

মজার ব্যাপার হল – ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রয়োগের প্রশ্নে এঁরা কিন্তু নীরব – বিশেষ করে বিশেষ কিছু পরিচালকের ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহারের প্রশ্নে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে সেই প্রয়োগ কত ব্যঞ্জনাময়, কত শিল্পসম্মত তাই নিয়ে বহু পৃষ্ঠা ব্যাপী দীর্ঘ আলোচনা দৃষ্ট হয়। হোক, তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই- শুধু বোধগম্য হয় না, ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়োগ যদি তার প্রয়োগ ব্যঞ্জনা এবং শিল্পোত্তীর্ণতার মাপকাঠিতে বিচার হতে পারে তবে পরিচালক-গীতিকার-সুরকারের সম্মিলিত প্রয়াসে ছায়াছবির বিশেষ সিচুয়েশনের জন্য, বিশেষ ভাবে সৃষ্ট গান কেন সেই একই মাপকাঠিতে বিচারের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। কেন সেইসব গান শুধুমাত্র তথাকথিত “আধুনিক গান” বলেই এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর উপেক্ষা ও অবজ্ঞার বিষয়বস্তু হয়ে রয়ে যাবে! ঠিকই, বাণিজ্যিক ছবিতে ব্যবহৃত গানের সিংহভাগের ক্ষেত্রেই হয়তো কাহিনী বা চরিত্রদের দাবির তুলনায় শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যটিই প্রাধান্য পেয়েছে ( ঠিক যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সব ছবিতেই সত্যজিৎ-ঋত্বিক-তরুণ-তপনের নির্ধারিত মান আদৌ অনুসৃত হয়নি)। তবু, প্রচলিত ইংরেজি প্রবাদের সাবধানবাণীকে মর্যাদা দিয়ে বলতেই হয়- টবের নোংরা জল ফেলার সময় যথোচিত সাবধানতা ব্যতিরেকে নোংরা জলের সঙ্গে বাচ্চাকেও ফেলে দেবার সম্ভাবনা থাকে। বহু ক্ষেত্রেই (বিশেষতঃ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সমালোচনার ক্ষেত্রে) এই সম্ভাবনার সত্যে পরিণতি দৃষ্ট হয়ে থাকে বলেই কিন্তু এই সাবধানতা!
দ্বিতীয় দল- যে দলের দর্শকরা মূলতঃ গানেরই শ্রোতা, তারা আবার চলচ্চিত্রকে দেখেন প্রধানতঃ গানের বাহন হিসেবেই। ছবির গল্প, তার গুণমান, কে তার পরিচালক, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কে অভিনেতা-অভিনেত্রী – এসব তথ্যই তাদের কাছে গৌণ। একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল ছবির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার (এমন কি, গীতিকারও তেমন গুরুত্বপূর্ণ নন)।

এর বাইরে অপর একটি দল আছেন, যাঁরা মধ্যপন্থী। তাঁরাই ছায়াছবি ও গানের মধ্যে সাযুজ্য খুঁজে বেড়ান। ছায়াছবিতে গানকে তাঁরা বাহুল্য বলে মনে করেন না, আবার ছবির পরাকাষ্ঠাও মনে করেন না। ছবিতে গানের সার্থক প্রয়োগ দেখলে এঁরা খুশি হন, আবার অপপ্রয়োগ বা অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগ – তা সে গান হিসেবে যতই শ্রুতিমধুর হোক না কেন- এঁদেরকে কষ্ট দেয়। মোটামুটি এই শ্রেণীর দর্শকদের জন্যই বর্তমান আলোচনার অবতারণা।

(২)

“ঐ যে দূরে বাড়ি দেখছো, ওখানে পৌঁছতে/ অনেকগুলো রাস্তা ছিল চলন্তিকার হাতে” – শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন। একটি সার্থক শিল্প-সৃষ্টি হিসেবে কোনো একটি চলচ্চিত্রের লক্ষ্য যদি সেই দূরাগত ভবনটি হয়, তবে সেই লক্ষ্যে উপনীত হতে পরিচালক বা নির্মাতার হাতেও থাকে একাধিক বিকল্প পথ। চলচ্চিত্রের গতিপথে একেকটি মুহূর্ত, একেকটি সন্ধিক্ষণ, একেকটি চরিত্রের সূক্ষ্ম মনস্তত্ব, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, কখনো ব্যক্তিসাপেক্ষে অথবা কখনো সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, নৈর্ব্যক্তিক ভাবে কাহিনির পরিস্থিতি বা গতিপথের মূল্যায়ন – এগুলির সার্থক রূপায়ণের জন্য পরিচালকের সামনেও একাধিক বিকল্প থাকে – যেমন চিত্রনাট্য, সংলাপ, অভিনয়, ক্যামেরার কাজ, ধ্বনি এবং / অথবা আবহ সঙ্গীত এবং সেইসঙ্গে – গান। পরিচালক নিজ প্রতিভা, মনন, ক্ষমতা ও শিল্পবোধ অনুযায়ী এর মধ্যে এক বা একাধিক বিকল্প অনুসরণ করে থাকেন। এর মধ্যে গানের প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, গানের বাণীতে যদি গভীরতা না থাকে, তা যদি ছবির কাহিনির গতিপ্রকৃতি যথার্থ রূপে অনুধাবন করা, কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতির যথাযথ মূল্যায়ন করা কিংবা চরিত্রের মনস্তত্ত্ব বা সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলিকে যথার্থ মাত্রায় ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যর্থ হয় এবং তার পরিবর্তে চরিত্রদের সাধারণ আনন্দ-উচ্ছ্বাস, প্রেম, বিরহ – এই ধরনের নিছক মোটা দাগের সহজবোধ্য অনুভূতিগুলি প্রকাশ করাই (তাও আবার কাব্যগুণহীন, স্থূল ভাষায়) যদি গান ব্যবহারের উদ্দেশ্য হয় তবে গানের সেই অনাবশ্যক এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার চলচ্চিত্রের শিল্পমানকে উন্নত করার পরিবর্তে তার গতিকে ব্যাহত করতে বাধ্য। সেইসঙ্গেই গানের এই ধরনের স্থূল ব্যবহার রুচিশীল দর্শকদের শির:পীড়া, একঘেয়েমি বোধ- এমনকি সময়বিশেষে ব্যঙ্গবিদ্রূপের উৎসও হয়ে ওঠে সহজেই। অবশ্য একথা অনস্বীকার্য, যে এই ধরণের নিম্নরুচির এবং নিম্ন মানের গানের পাশাপাশি গুণী সুরকারের সুর-সংযোজিত বহু গান আছে যেগুলি চলচ্চিত্রে প্রয়োগ হিসেবে যতই অপ্রয়োজনীয় হোক, কম্পোজিশন হিসেবে অত্যন্ত উচ্চমানের। স্বাভাবিক ভাবেই, পূর্বে উল্লেখিত দ্বিতীয় দলের দর্শকরা এই ধরণের গানে পরিতুষ্ট হন এবং অনেক ক্ষেত্রেই বহু সাধারণ মানের চলচ্চিত্রও শুধুমাত্র গানের গুণে বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখে। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই ধরনের ছবির উদাহরণ অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন হয় না- ঈষৎ নয়ন উন্মীলনেই ভুরিভুরি দৃষ্টিগোচর হতে বাধ্য।

বর্তমান নিবন্ধে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণ ভান্ডারে অনুসন্ধান চালিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে এমন কয়েকটি গানের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চলচ্চিত্রে যাদের প্রয়োগ উপরোক্ত বিচারে সার্থক ও শিল্পসম্মত বলা চলে।

সাধারণ ভাবে গান গীতিকার ও সুরকারের (সময় বিশেষে যাঁরা অভেদ ব্যক্তিত্বও হতে পারেন) যৌথ সৃষ্টি, আর চলচ্চিত্রের গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই দুই ব্যক্তিত্ব ছাড়াও অন্য যাঁর সক্রিয় ভূমিকা থাকে তিনি হলেন চলচ্চিত্র পরিচালক। তবুও গানের প্রয়োগ-সার্থকতার প্রাথমিক মানদণ্ড হিসেবে যদি চিহ্নিত করতে হয় তবে তা অবশ্যই হবে গানের বাণী। পরিচালকের ভূমিকা এক্ষেত্রে সার্থক কাণ্ডারীর – যিনি চলচ্চিত্রের প্রয়োজনকে যথাযথ প্রাসঙ্গিকতায় ব্যক্ত করে গীতস্রষ্টাদের দিশানির্দেশ করবেন উপযুক্ত গান সৃষ্টিতে। গীতিকারের ওপরেই ন্যস্ত থাকে পরিচালকের চলচ্চিত্র-ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পিত গানটিকে বাণীরূপ প্রদানের- অর্থাৎ, অধরা মাধুরীর যথার্থ ছন্দোবন্ধনের। সুরকারের সুর কখনো গীতিকারকে সহায়তা করে এই রূপ পরিগ্রহণে, আবার কখনো গীতিকারের কথার কাঠামোর ওপরেই সাঙ্গীতিক প্রাণপ্রতিমার প্রকাশ ঘটান সুরকার। তবে যেভাবেই হোক, পরিচালকের চলচ্চিত্র ভাবনার প্রাথমিক প্রকাশের দায়িত্ব যে গীতিকারের হাতেই ন্যস্ত এ সম্বন্ধে কোনো দ্বিমত নেই। তাই বর্তমান আলোচনায় গানের নির্বাচনকে রাখা হয়েছে মূলতঃ গীতিকার কেন্দ্রিক। বাংলার শ্রেষ্ঠ গীতিকবিদের একেকজনের চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ কিছু রচনা নিয়ে আমাদের বর্তমান আলোচনা।

(৩)

বাংলা ছবির সাবালকত্ব প্রাপ্তি ও আধুনিক যুগে পদার্পণের সূচনাপর্বে- অর্থাৎ মোটামুটি ভাবে পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে- যে সব শক্তিমান গীতিকবির অবদানে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁদের মধ্যে প্রথমেই স্মরণীয় কবি বিমল চন্দ্র ঘোষের নাম। ছবির কাহিনীর গতিধারা এবং সংশ্লিষ্ট চরিত্রের মানসিকতাকে গানের মধ্যে ধরার আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে অপূর্ব কাব্যময়তা এবং অনির্বচনীয় শব্দচয়ন তাঁর রচিত ছায়াছবির গানগুলিতে অন্য মাত্রা সংযোজিত করত। প্রয়োগ দক্ষতায় অনন্য তাঁর রচিত কয়েকটি গান :

১। ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস (শাপমোচন – ১৯৫৫। পরিচালনা: সুধীর মুখার্জী, সঙ্গীত: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)

‘শাপমোচন’ ছবিটি এককথায়, সঙ্গীত নির্ভর।কাহিনির নায়ক যেহেতু একজন উদীয়মান সঙ্গীতশিল্পী তাই পরিচালক বিভিন্ন সমাবেশে বা অনুষ্ঠানে – বন্ধু বান্ধবের ঘরোয়া আড্ডায়, অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য রাস্তার জনসমাগমে কিংবা বেতারের অনুষ্ঠানে – নায়কের কন্ঠের গানগুলিকে তার তৎকালীন মানসিক অবস্থার প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বর্তমান গানটিতে নায়ক নায়িকার ভুল বোঝাবুঝি এবং নায়কের চরম মানসিক অশান্তিকে প্রাকৃতিক ঝড়ের রূপকে অপরূপ কাব্যব্যঞ্জনায় কবি উপস্থাপিত করেছেন। অবিস্মরণীয় এর সঞ্চারী আর শেষ অন্তরাটুকু:

“আকাশ জুড়ে দীর্ঘশ্বাসের মাতন হল শুরু
সুরের স্বপন ভাঙ্গল শুনে মেঘের গুরুগুরু
উড়ছে ভুলের ঘূর্ণি হাওয়া
সকল চাওয়া, সকল পাওয়া
শুকনো পাতার মর্মরে আজ করছে মাতামাতি।।”

গানটি শুনুন/ দেখুন :

২। পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে ( গরীবের মেয়ে-১৯৬০। পরিচালনা : অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীত: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)

সাহিত্যিক অনুরূপা দেবীর (১৮৮২- ১৯৫৮) নাম বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধ পর্যন্ত বাঙালি নারী সমাজের সুখ-দুঃখ-অনুভূতির কথা যে সব মহিলা সাহিত্যিকদের রচনায় মূর্ত হয়েছিল তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর রচিত “গরিবের মেয়ে” উপন্যাস অবলম্বনে অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় নির্মাণ করেন একই নামের ছায়াছবি। অনিল চট্টোপাধ্যায়-সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবিতে বিমল চন্দ্র ঘোষের লেখনী গল্পের নায়িকা নীলিমার অন্তর বেদনা সার্থক ভাবে রূপায়িত করেছে এই গানটিতে।
বাংলা গানে সঞ্চারীর ব্যবহারের সূচনা রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই। একদিকে কাব্য ব্যঞ্জনা অন্যদিকে সুরের চলন- দুই দিক থেকেই এক অপ্রত্যাশিত, নতুন বাঁক সৃষ্টি করে গানের শিল্প সুষমা অন্য স্তরে নিয়ে যাবার ব্যাপারে সঞ্চারীর ভূমিকা অনন্য, এবং এই ব্যাপারে বাংলা গানের স্থান ভারতে অদ্বিতীয়- কারণ অন্য কোনো ভারতীয় ভাষার গানে এর সমতুল্য কোনো ব্যাপার আছে বলে জানা নেই। রবীন্দ্র পরবর্তী গীতিকারদের মধ্যে যাঁরা গানে সঞ্চারীর সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়ে গেছেন, বিমল চন্দ্র ঘোষ তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। এই গানটির সঞ্চারী এবং শেষ অন্তরাতে দেখি:

“ওগো প্রেম, তুমি স্বপনের মায়ামৃগ
আজও বনপথে মায়া হরিণীর ঠিকানা দেবে না কি ,
ফিরে এসো তবে গানে
আকাশ কাঁপানো, বাতাস কাঁপানো সুরভিত অভিমানে
মন যে দিল না একি পরিহাস মন দিতে যাওয়া তাকে ।।”

সঞ্চারীর এই কাব্যময়তা আর একই সঙ্গে অপরূপ শব্দ ঝংকারের ভাব গাম্ভীর্য ছিল বিমল চন্দ্রের নিজস্ব বিশিষ্টতা। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, যে শব্দ-সুষমা এবং কাব্য ব্যঞ্জনা প্রায়ই একত্রে অবস্থান করে না, এবং বহু কবি এবং গীতিকবিই প্রথমটির প্রেমে পড়ে তার যূপকাষ্ঠে দ্বিতীয়টিকে বলি দিতে প্রস্তুত হন।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

শাপমোচন ছবিরই অপর একটি প্রভূত জনপ্রিয় এবং সার্থক-প্রযুক্ত গানের সঞ্চারীতেও মূর্ত হয় একই ধরনের কাব্যব্যঞ্জনা আর শব্দের ধ্বনি-গাম্ভীর্যের যুগপৎ সমাহার :

“নব চেতনার রক্তকমল দলে,
অগ্নিভ্রমর দিগন্তে জাগে রাগিণীর পরিমলে।”

 

বলতে দ্বিধা নেই – এই স্তরের গানের প্রকৃত গুণগ্রাহিতার জন্য প্রয়োজন যথার্থ কাব্যশিক্ষিত মনন এবং একই সঙ্গে চলচ্চিত্রে এই গানের প্রয়োগ তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য প্রয়োজন কাহিনির গভীরে প্রবেশ করে তার ব্যাখ্যান-ক্ষমতা।

কালস্রোত বহমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে চলচ্চিত্রে গানের প্রয়োগ সম্বন্ধে ধ্যানধারণা ও রীতিনীতিও। তবু মনে হয়, বিমল চন্দ্র ঘোষের মত শক্তিমান গীতিকারের প্রয়োজন বাংলা চলচ্চিত্রে বোধহয় আজও শেষ হয়ে যায় নি।

(৪)

পাঁচের দশক ও তার পরবর্তী যুগের জনপ্রিয় গীতিকার, যাঁরা ছায়াছবির প্রয়োজনেও সার্থক গান রচনা করেছেন,তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। অজস্র ছায়াছবিকে গৌরীপ্রসন্ন সমৃদ্ধ করে গেছেন তাঁর র্গীতিকবিতার মাধ্যমে। এর মধ্যে কয়েকটি এখানে আলোচিত হল।

১। কে তুমি আমারে ডাকো ( অগ্নিপরীক্ষা – ১৯৫৪, পরিচালনা- অগ্রদূত, সঙ্গীত – অনুপম ঘটক )-

বিভূতি লাহা (আলোকচিত্রী) এবং নিতাই ভট্টাচার্য ( চিত্রনাট্যকার)র নেতৃত্বে কয়েকজন অত্যন্ত গুণী কলাকুশলী চল্লিশ দশকের শেষে ‘অগ্রদূত’ নাম নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। অপ্রচলিত এবং ভিন্ন ধারার গল্পের নির্বাচনই ছিল এঁদের নির্মিত ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য। আশাপূর্ণা দেবী ছিলেন বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে তৎকালীন নবাগতা। তাঁর প্রথম জীবনে রচিত উপন্যাস অবলম্বনে এঁরা নির্মাণ করেছিলেন অগ্নিপরীক্ষা ছায়াছবি – যেটিকে উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম রোমান্টিক সাফল্য বলা যেতে পারে। উত্তম সুচিত্রা জুটির ছবি হলেও কাহিনির দাবী অনুযায়ী ছবিটি মূলতঃ নায়িকা-কেন্দ্রিক। নায়কের উপস্থিতি বলা যেতে পারে পার্শ্ব চরিত্র হিসেবেই। বাল্যে ঘটে যাওয়া বিবাহ – যখন পাত্র-পাত্রী দুজনের কারো কাছেই, বিশেষতঃ একেবারেই নাবালিকা পাত্রীর কাছে তো বটেই, বিবাহ নামক বস্তুটারই অর্থ সম্বন্ধে তেমন কোনো ধারণা থাকে না, এই ছবির মৌলিক বিষয় (যদিও এই বিষয়কে কেন্দ্র করে কোনো প্রথাবিরোধী বা বৈপ্লবিক চিন্তার প্রকাশ মূল গল্প বা চলচ্চিত্র কোনোটাতেই পাওয়া যায় না। কিন্তু সে প্রসঙ্গ স্বতন্ত্র)। পরবর্তী জীবনে নায়ক-নায়িকার পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা, নায়িকার জীবনে নতুন প্রেমের আগমন, নায়িকার মনে শৈশবে ঘটে যাওয়া ‘বিবাহ’ নামক দুর্ঘটনাটির অতি ক্ষীণ স্মৃতি, আজন্ম লালিত সংস্কার এবং ফলস্বরূপ তার তীব্র মানসিক দ্বন্দ্ব এবং পরিশেষে অতি অবশ্যই মধুর পরিণতি- এই হল গল্পের বিষয়বস্তু। সেই বিচারে আলোচ্য গানটিকে ছায়াছবির theme song আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। অনুপম ঘটকের অসামান্য সুর সংযোজনায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গভীর অনুভবময় কন্ঠে গীত গানটি নায়িকার এই মানসিক দ্বন্দ্বকে সার্থক ভাবে উপস্থাপিত করে। প্রথম অন্তরাটি :

“মনে তো পড়ে না তবুও যে মনে পড়ে
হাসিতে গেলেই কেন হৃদয় আঁধারে ভরে,
সমুখের পথে যেতে
পিছনে টানিয়া রাখ।
ফিরে ফিরে চাই, দেখিতে না পাই।”

গানটি শোনা বা দেখার জন্য – 

২। সেই বাসরও নেই, বাঁশরী নেই (ভ্রান্তিবিলাস – ১৯৬৩, পরিচালনা – মানু সেন, সঙ্গীত: শ্যামল মিত্র)

শেকসপিয়রের নাটকের বিদ্যাসাগরীয় বঙ্গীকরণ অবলম্বনে নায়ক উত্তমকুমারের প্রযোজনায় তৈরী হয়েছিল ভ্রান্তিবিলাস চলচ্চিত্র ( পরিচালক মানু সেন)। কাহিনির পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। উত্তমকুমার অভিনীত দ্বৈত চরিত্রের একজন বিবাহিত- যার স্ত্রীর চরিত্রে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় – অন্যজন অবিবাহিত। সাবিত্রীর ‘স্বামী’ ভেবে ধরে আনা হয়েছে এই দ্বিতীয় উত্তমকুমারকে এবং এই মহিলা তাকে নিজের স্বামী বিধায় আদরে সোহাগে ভরিয়ে জোরপূর্বক ঘরে বন্দি করে রেখেছে। দ্বিতীয় উত্তমকুমার উপলব্ধি করছে যে সে এক ঘোর সমস্যার অতলে নিমজ্জিত হতে চলেছে এবং এই রাতের মধ্যে যে ভাবেই হোক তাকে পালাতেই হবে। কিন্তু এদিকে সমস্যা হচ্ছে – ইতিমধ্যে সে তার আরোপিত ‘স্ত্রী’র বোন ( সন্ধ্যা রায় অভিনীত) এর প্রেমে পড়ে গিয়েছে। তাকে ছেড়ে চলে যেতেও তার মন সায় দিচ্ছে না। উত্তমকুমারের চরিত্রটির এই মনস্তত্ত্ব ও মানসিক দ্বন্দ্বের পাশাপাশি রয়েছে স্বামীর পলায়নের পর শূন্য শয্যার দিকে তাকিয়ে সাবিত্রী-অভিনীত চরিত্রটির লজ্জা ও আত্মধিক্কারের পূর্বাভাস – আর তারই পাশাপাশি সন্ধ্যা রায়ের চরিত্রটির সদ্য যুবতী, কুমারী সুলভ নির্ভার মানসিকতা এবং এই বয়সের পক্ষে অত্যন্ত স্বাভাবিক – অনাগত পুরুষের আকাঙ্ক্ষায় ঘেরা স্বপ্নের আভাস। যদিও তার অনুরাগী, এই দ্বিতীয় উত্তমকুমারের প্রতি তার কোনো আকর্ষণই নেই – কেননা এই পুরুষটির তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক, মেয়েটি তাকে জানে তার ভগ্নীপতি হিসেবেই। এতগুলি চরিত্রের এতরকম মনস্তত্ত্ব তাঁর কলমে সার্থক ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন গৌরীপ্রসন্ন এই একটি গানে। গানের ভিন্ন ভিন্ন পংক্তি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে রচনা। বাংলা গানে mixed perspective এর সার্থক প্রয়োগের এক চমৎকার দৃষ্টান্ত এই গানটি। শ্যামল মিত্রের হৃদয়গ্রাহী সুর ও কণ্ঠদানে সমৃদ্ধ গানটির চলচ্চিত্রায়ণও গানটির এই মিশ্র পরিপ্রেক্ষিতকে চমৎকার ভাবে অনুসরণ করে।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

 

৩। গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে (দেয়া নেয়া ১৯৬৩। পরিচালনা- সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গীত- শ্যামল মিত্র)

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের স্বরচিত কাহিনি ও বিধায়ক ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্য অবলম্বনে সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছায়াছবিটির প্রযোজক ছিলেন সঙ্গীত-শিল্পী শ্যামল মিত্র এবং বলা হয়ে থাকে এর আখ্যানভাগ বহুলাংশেই শ্যামল মিত্রের নিজের জীবনের ওপর আধারিত।

উত্তমকুমারের অভিনয় সমৃদ্ধ, প্রবল জনপ্রিয় ছবিটির কাহিনির পুনরুল্লেখের কোনো প্রয়োজন নেই।

শুধু শেষ দৃশ্যে গানটির প্রয়োগের তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য গানের প্রসঙ্গটুকু ফিরে দেখা যেতে পারে। নায়ক জানে- এই তার জীবনের শেষ গান। সাক্ষাৎ শমনরূপী তার পিতৃদেব উপস্থিত – যিনি বলপূর্বক তাকে কলকাতা থেকে ধরে নিয়ে যাবেন লখনৌ – নিয়োজিত করবেন পারিবারিক ব্যবসায়।

যাঁরা ছায়াছবির প্রয়োজনেও সার্থক গান রচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।

 অন্যদিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত নায়কের গীতিকবি বন্ধুও জানেন এই তার জীবনের শেষ রচনা। চোখের আড়াল মানেই মনেরও আড়াল- পাদপ্রদীপের আলোক থেকে একবার দূরে সরে যাওয়া মানেই যত বড় প্রতিভাবান শিল্পীই হোন না কেন, অনুরাগী শ্রোতাদের মনোজগৎ থেকেও তাঁর ক্রম:নির্বাসন অনিবার্য । শিল্পীর জীবনের এ এক নিষ্ঠুর সত্য। “আমাকে মনে রেখো” এই অনুরোধের স্পর্ধা তাই কজন শিল্পী দেখাতে পারেন? “আমার শেষ গানটুকু শুধু ভুলো না”- বড়জোর এ অনুরোধ টুকুই তাঁর সাধ‍্যায়ত্ত :

“ঝরে কত তারা অলখে
মনে রাখে বল কে?
তারে হাসিমুখে যেতে দাও,
শেষবার শুনে নাও-
মনে রেখো, মনে রেখো
তার এই শেষ গান।”

অনুরাগী শ্রোতাদের কাছ থেকে শেষ বিদায়ের মুহূর্তে দুই শিল্পী-বন্ধুর এই চরম মর্মবেদনার হাহাকার একাত্ম হয়ে রূপ পরিগ্রহ করেছে গৌরীপ্রসন্নর এই গানটিতে – শ্যামল মিত্রের সার্থক সুর সংযোজনে ও কণ্ঠদানে।

গানটি শুনুন / দেখুন :

(৫)

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের পাশাপাশি বাংলা গানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অপর গীতিকার হলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলকের গান রচনার বৈশিষ্ট্য হল সংশ্লিষ্ট চরিত্রটির মানসিকতা বা জীবন দর্শনের নিখুঁত উপস্থাপনার পাশাপাশি কাহিনির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও প্রচ্ছন্ন থাকে তাঁর গানে। সেই কারণেই চলচ্চিত্রের জন্য রচিত পুলকের গানের যথাযথ রসগ্রহণের জন্য প্রয়োজন হয় চলচ্চিত্রের গল্পাংশের সম্যক ধারণার। এই ধারণা ছাড়া পুলকের চলচ্চিত্রের গান উপভোগ করা যায় না এমন নয়। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাণিজ্যিক সফলতা না পাওয়া ছবির গান, কিংবা না দেখা ছবির গানও দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে ছবির কাহিনির সঙ্গে সম্যক পরিচয় না থাকলে যে পুলকের বহু গানেরই সম্পূর্ণ রসগ্রহণ সম্ভব নয়, তা কয়েকটি গান আলোচনা করলেই বোঝা যাবে।

১। সুরের আসর থেকে মন নিয়ে এসেছি গো ( মুক্তিস্নান ১৯৭২। পরিচালনা – অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, সঙ্গীত- রাজেন সরকার )

শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস অবলম্বনে অজিত গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিটির কাহিনিসূত্র খানিকটা এইরকম : নায়ক (অনিল চট্টোপাধ্যায়) একটি ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বংশের আধুনিক প্রজন্ম। প্রাচীন জমিদার বংশের বিলাস-ব্যসন-বৈভব কোনো কিছুই আজ আর নেই, কিন্তু রয়ে গেছে জমিদারী রক্তের অনিবার্য প্রভাব- অর্থ উপার্জনের ব্যাপারে উদাসীনতা, এবং সেই সঙ্গে সঙ্গীতের নেশা। তার সঙ্গীতের গুরু এক বাইজি- নায়ক তার একনিষ্ঠ ছাত্র। সঙ্গীতের এক অচ্ছেদ্য বন্ধনে দুজনে আবদ্ধ- যা স্বাভাবিক ভাবেই তার গুরুজনদের অসন্তুষ্টির কারণ। চিরাচরিত পথে ফিরিয়ে এনে ছেলেকে সংসারী করার উদ্দেশ্যে এঁরা তার বিবাহের আয়োজন করেন। কিন্তু দেখা যায় বিবাহের দিনেও নায়ক তার গুরু তথা পরম বন্ধু বাইজির আলয়ে অধিষ্ঠিত। অবশেষে তার গুরুর একান্ত অনুরোধেই সে পরম অনিচ্ছায় ফিরে আসে বিবাহ আসরে – রাজেন সরকারের সুরে ও  হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে গীত এই গানটি ওষ্ঠে নিয়ে – “সুরের আসর থেকে মন নিয়ে এসেছি গো ফুলের বাসর ঘরে বন্ধু”।

নববিবাহিতা পত্নীর প্রতি এ যেন নায়কের একধরণের চ্যালেঞ্জ – “পারো তো ধর না মোরে , বাঁধো না মালার ডোরে / বন্ধু আমি ওগো এসেছি”। গান শুনতে শুনতে দর্শকের মনও প্রশ্নাকুল হয়, নায়কের পত্নী কি সত্যিই নায়ককে মালার ডোরে বেঁধে রাখতে সক্ষম হবে? নায়কের জীবনে সঙ্গীতের যে স্থান, ‘গানের আগুন জ্বলা নয়নতারা’র যে স্থান, তার নববিবাহিতা স্ত্রীর ‘শুধুই কাজল পরা’ শান্ত দুটি চোখ কি সেই স্থান নিতে পারবে? এই মৌলিক প্রশ্ন ও নাট্যকৌতূহলকে কেন্দ্র করেই আখ্যানস্রোত আবর্তিত হয় এবং এগিয়ে চলে পরিণতির দিকে।

গানটি শুনুন:

২। আমি তোমার মাঝে পেলাম খুঁজে বাঁচার এ নিশানা (জীবন কাহিনী – ১৯৬৪। পরিচালনা- রাজেন তরফদার, সঙ্গীত – প্রবীর মজুমদার)

রাজেন তরফদার পরিচালিত এই ছবিটিরও কাহিনীকার শক্তিপদ রাজগুরু। ছবিতে অনুপকুমার এক বেকার যুবক। বেকার জীবনের হতাশা, অপমান, আত্মগ্লানি যুবকটিকে প্ররোচিত করে আত্মহননের পথ বেছে নিতে। গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে তার জীবনের অন্তিম পরিকল্পনা চরিতার্থ করবার মুহূর্তে সে প্রতিরুদ্ধ হয় তারই মতো জীবনে অসফল আর এক ব্যক্তির দ্বারা (বিকাশ রায় অভিনীত) – কন্যাকে নিয়ে ছোট্ট সংসারে যার উপার্জন বলতে জীবন বীমার দালালি। মরণোন্মুখ যুবকটিকে সে বাঁচায় মানবিকতার তাগিদে নয়, নিজের স্বার্থে। যুবকটিকে সে অনুরোধ করে সে যখন মৃত্যুর ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, তখন আত্মহননের পূর্বে সে যেন একটি বীমা পলিসি করে যায় এবং বৃদ্ধকে তার “নমিনি” নির্বাচিত করে যায়। সেক্ষেত্রে দালালি এবং বীমার অর্থ – এই দু দিক থেকেই বৃদ্ধ লাভবান হবে। যুবকটি রাজী হয়ে যায় এবং যেহেতু পলিসি করা থেকে মৃত্যুর মাঝখানে যথেষ্ট ব্যবধান না থাকলে বীমার অর্থ পাওয়া যাবে না তাই এই নাতিদীর্ঘ (অনুমান করা যায়, বছর খানেক) সময় বৃদ্ধ যুবকটিকে নিয়মিত নজরদারিতে রাখার উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত সেখানে বৃদ্ধের কন্যার সঙ্গে পরিচয় হবার পর দুজনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জীবনের হতাশার গ্লানি কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে যুবকটি জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পায় এবং নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্মস্রোতে এবং উপার্জনের প্রচেষ্টায়। যুবকটির মানসিকতার পরিবর্তন সার্থক রূপ পায় এই কাব্যময় প্রেমের গানটিতে। গানটির স্থায়ী ও প্রথম অন্তরাটুকু :

“আমি তোমার মাঝে পেলাম খুঁজে বাঁচার এ নিশানা
তোমার আলোয় চোখ রেখেছি প্রাণের অভিধানে,
নতুন চোখে পড়ে নিলাম এই জীবনের মানে।

আমি ঝড়ের মুখে শপথ পেয়ে সর্বনাশের
নতুন পাতা উলটে গেলাম ইতিহাসের
আমি নতুন আকাশ খুঁজে পেলাম সূর্যের সন্ধানে।
নতুন চোখে পড়ে নিলাম এই জীবনের মানে”

প্রবীর মজুমদারের সুর সংযোজনা/ সঙ্গীতায়োজন ও সেইসঙ্গে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দরদী কন্ঠ গানটিকে সার্থক করে তুলেছে।

গানটি শুনুন/দেখুন:

৩। সে আমার বুক ভরানো ছোট্ট একটা চিঠি (ফরিয়াদ- ১৯৭১। পরিচালনা- বিজয় বসু, সঙ্গীত- নচিকেতা ঘোষ )

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে বিজয় বসু পরিচালিত “ফরিয়াদ” ছবির নায়িকা (সুচিত্রা সেন) এক দুষ্ট লোকের চক্রান্তে বাধ্য হয় স্বামীপুত্র নিয়ে তার সুখী জীবন বিসর্জন দিয়ে হোটেল গায়িকার পঙ্কিল জীবন বেছে নিতে এবং সেই খলনায়কের শোষণের শিকার হতে। এই পঙ্কিলতার যন্ত্রণার মধ্যেও তার মনে একদিন লাগে গোপন আনন্দের ছোঁয়া যখন সে নিজের একমাত্র সন্তানকে দূরে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করে এসে মনে করে, তার নিজের জীবনে যাই হোক, সন্তানকে অন্ততঃ সে এই সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যন্ত্রণা-জর্জর বাহ্যিক জীবনে নায়িকার এই গোপন আনন্দ ব্যঞ্জনাময় হয়ে ব্যক্ত হয় হোটেলে গেয়ে চলা তার গানে। গানটি কাব্যব্যঞ্জনায় এতটাই গভীর ও সমৃদ্ধ, যে সম্পূর্ণ গানটিই এখানে উদ্ধৃত করবার প্রলোভন কিছুতেই সম্বরণ করতে পারছি না :

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়

“সে আমার বুক ভরানো
ছোট্ট একটা চিঠি
অনেক স্বপ্ন দিয়ে গড়া-
সবার মাঝে যায় না তাকে পড়া।

সে যে আমার মুখের হাসি,
আমার চোখের জল,
ব্যথার আলোয় ফোটা
সুখের শতদল।
সে আমার সাধের জীবন, সাধের মরণ,
স্বর্গ বসুন্ধরা-
সবার মাঝে যায় না তাকে পড়া।

সে যে হাজার চাঁদের আলো,
হাজার অন্ধ রাত,
বিষের কাঁটা ওগো,
আশার পারিজাত।
সে আমার গোপন প্রাণের আনন্দ আর
হাহাকারে গড়া-
সবার মাঝে যায় না তাকে পড়া।”

নচিকেতা ঘোষের সুর আর আরতি মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠের গভীরতা গানটির অনন্য সম্পদ।

গানটি শোনার জন্য 

(৬)

বাংলা গানের জগতে গীতিকার হিসেবে এক উজ্জ্বল নামে চিহ্নিত হলেও দুর্ভাগ্যবশতঃ শ্যামল গুপ্তের সৃষ্টির পরিমাণ অন্যান্য খ্যাতিমান গীতিকারদের তুলনায় অত্যন্ত স্বল্প। বাংলা ছবির জগতে তাঁর বিচরণও কম। যে স্বল্প সংখ্যক ছবিতে তিনি গীতরচনা করার সুযোগ পেয়েছেন, সেগুলির মধ্যেও বহু ছবিরই প্রিন্ট বর্তমানে অস্তিত্বহীন। তাই শ্যামল গুপ্তের চলচ্চিত্রের গীত রচনার যথাযথ মূল্যায়ন অত্যন্ত কঠিন- কারণ বলাই বাহুল্য, ছবিতে গানের প্রয়োগের মূল্যায়ন ছবিটির দর্শন ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। তাই সামান্য যে কটি ছবি দূরদর্শন কিংবা অন্তর্জালের কল্যাণে সুলভ, তারই ভিত্তিতে কয়েকটি গান নিয়ে আলোচনা করা হল।

১। ওরে শোন শোন গেরোবাজ ( মায়ামৃগ- ১৯৬০। পরিচালনা- চিত্ত বসু, সঙ্গীত- মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়)

নীহাররঞ্জন গুপ্তের উপন্যাস অবলম্বনে চিত্ত বসু পরিচালিত অসামান্য জনপ্রিয় এই ছবিটিতে প্রযোজক-পরিচালক একটি প্রায় বৈপ্লবিক কাণ্ড ঘটান – তা হল সমসাময়িক কালে খ্যাতির শীর্ষে থাকা উত্তমকুমারকে এই ছবিতে একজন চরিত্রাভিনেতার ভূমিকায় (যদিও কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ) নির্বাচিত করে বিশ্বজিৎকে নায়কের ভূমিকায় সুযোগ দেওয়া।
উত্তমকুমার অভিনীত মহেন্দ্র চরিত্রটি পরিবারে আশ্রিত, অল্পশিক্ষিত, বেকার কিন্তু হৃদয়বান এই মানুষটি গল্পের বিভিন্ন বাঁকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বাড়ির গুরুজনদের অবজ্ঞা, অবহেলার মধ্যে তার প্রাণের দোসর হল বাড়ির চিলেকোঠার আবাসিক পারাবত-কুল। বর্তমান গানটিতে এই চরিত্রটি যেন চলচ্চিত্রের পর্দা থেকে জীবন্ত রূপ নিয়ে শ্রোতার মানসচক্ষে প্রতিভাত হয়। ধনী পরিবারে তার নিজের মতই অন্যান্য আশ্রিত মানুষদের সঙ্গে তার সম্পর্কগুলি সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই গানে। সেই সঙ্গেই দেখি গানের সূচনায় পায়রাদের খোপ ছেড়ে বেরিয়ে নিজেদের জোরে আকাশ পেরিয়ে যাবার প্রেরণা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি আশ্রিত চরিত্রকেই কর্মে প্রেরণা দেওয়া এবং নতুন আশায় উদ্দীপিত করা ( ‘এমনি দিন থাকবে না খুলবে ভাই জোর বরাত/ আপনা হাত জগন্নাথ করবে ভাই বাজিমাৎ’, কিংবা ‘আহা মরি মরি শোনো রাখহরি তুমি হবে হিরো/ আর বাকী যারা, দেয় ফাঁকি তারা- সব পাবে জিরো)। এই আশাবাদ ও কর্মপ্রেরণা তার নিজের চরিত্রটিকেও সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছে। এই গানের প্রয়োগের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠ। উত্তমকুমারের অধরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠের প্রয়োগের জনপ্রিয়তা ও সফলতা সর্বজনবিদিত। কিন্তু পূর্বেই উল্লেখিত যে এই ছবিতে উত্তমকুমারের চরিত্রটি নায়কের নয়। চরিত্রটি তেমন শিক্ষিত-দীক্ষিতও নয়। হেমন্ত কিন্তু এই চরিত্রের জন্য তার কণ্ঠস্বরও সেইভাবে পরিবর্তন করে নেন। অন্যান্য ছবিতে নায়ক উত্তমকুমারের ঠোঁটে আমরা হেমন্তর যে কন্ঠ পাই এই গানে হেমন্তর কন্ঠ কিন্তু তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর এবং পুরোপুরি চরিত্রানুগ। কণ্ঠশিল্পীর এই মুনশিয়ানা এই গানের একটি বড় সম্পদ।

গানটি শুনুন / দেখুন: 

২। বিজুরি চমকে এল ঝড়( নিষ্কৃতি- ১৯৭৮। পরিচালনা- সুনীল বসুমল্লিক, সঙ্গীত- মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় )

শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে সুনীল বসুমল্লিক পরিচালিত ছায়াছবির কাহিনি সর্বজনপরিচিত। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাঙালী যৌথ পরিবারের প্রতিনিধিস্থানীয় কাহিনি। মেজো বৌয়ের চক্রান্তে ও কূটচালে পরিবারের গৃহিণী বড় বৌয়ের তার আদরের ছোট বৌকে ভুল বোঝা এবং তার ফলস্বরূপ পারিবারিক ভাঙন। ভুল বোঝাবুঝি এবং সাময়িক রাগ ও উত্তেজনার বশে উচ্চারিত চরম মিথ্যা অভিযোগের আঘাতে শেষ পর্যন্ত স্বামী ও ছেলেমেয়ের হাত ধরে ছোট বৌয়ের গৃহত্যাগ – শরৎচন্দ্রের নিজস্ব নাটকীয়তায় বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসে এবং প্রায় একই ভাবে চলচ্চিত্রে। বর্তমান গানটিতে এই ভুল বোঝাবুঝি, মনোমালিন্য এবং সংসারের আসন্ন ভাঙন ও গৃহবিচ্ছেদের ইঙ্গিত সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের রূপকে। সেই সঙ্গেই তাৎক্ষণিক রাগের বশে উচ্চারিত বড় বৌয়ের মিথ্যা অভিযোগ এবং এর অব্যবহিত পরেই তার তৎসঞ্জাত তীব্র অনুতাপ, অনুচ্চারিত মনঃকষ্ট ও গোপন কান্নাও কাব্যময়তায় ধরা পড়ে শ্যামল গুপ্তের কলমে – সেই সঙ্গে বন্ধুবর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সুর ও কন্ঠের সমাহারে:

“সঘন গহন তিমিরে
তুমি কি আমারে ডেকেছ?
আকুল আঁখির কামনায়
ব্যাকুল হৃদয়ে ঢেকেছ?
সকরুণ সেই বেদনা
গুমরিয়া কাঁদে বরষায়
গুরু গুরু দেয়া গরজায়
বাদল হাওয়ার আঘাতে
মনের দুয়ার ভেঙে যায়।।”

গানটি শুনুন / দেখুন:

স্ত্রী প্রখ্যাত গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শ্যামল গুপ্ত

৩। আমরা তো আর ছোট নেই (জয় জয়ন্তী-১৯৭১। পরিচালনা- সুনীল বসুমল্লিক, সঙ্গীত- মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়)

বছর পাঁচ ছয় পূর্বে নির্মিত হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘দ্য সাউন্ড অফ মিউজিক’ এর বঙ্গীকরণ এই ছবিটিতে গীত রচনার পাশাপাশি সংলাপ রচনার দায়িত্বও পালন করেন শ্যামল গুপ্ত। মূলতঃ শিশুদের জন্য নির্মিত এবং গানগুলির প্রয়োগও বহুলাংশে মূল ইংরেজি ছবির অনুসারী হলেও স্বাতন্ত্র্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই গানটির প্রয়োগ। শিশুগুলি জানে, এই বাড়িতে তারা আজ অবাঞ্ছিত। শৈশবে মায়ের চলে যাবার পর যে একজন মানুষ তাদের স্নেহ ও বন্ধুত্বের স্পর্শে আপন করে নিয়েছিলেন (অপর্ণা সেন অভিনীত গভর্নেস) সেই মানুষটিও তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এরা তাই আজ বড় একা। বাড়ির বড়দের সবার অবহেলার শিকার হয়ে এদের চলে যেতে হবে দূরে, বোর্ডিং স্কুলে। চরম অভিমানে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের কান্নার বহিঃপ্রকাশ গানের ভাষায় মূর্ত হয় শ্যামল গুপ্তের কলমে। আরতি মুখোপাধ্যায়ের জাদুকরী কন্ঠ নায়িকার ওষ্ঠে রোমান্টিক গানে যেমন, তেমনি স্বরের গুণগত (tonal quality) সাদৃশ্যের কারণে শিশুদের ওষ্ঠেও যে সুন্দর মানিয়ে যায়- বহু বাংলা ছবি তার প্রমাণ।

গানটি শুনুন :

[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]

জন্ম, চেতনার উন্মীলন, শৈশব, কৈশোর, ও যৌবনের অতিবাহন - সব কিছু কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮তে বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে (Electrical Engineering) স্নাতক। বর্তমানে কর্মসূত্রে গুরগাঁও, হরিয়ানা নিবাসী। পেশাগত জীবনের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন বলতে স্ত্রী ও এক কন্যা সহ পারিবারিক দিনযাপন আর গান-কবিতা-সাহিত্য সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্রিক নিজস্ব সময় যাপন। অবসর সময়ে সামান্য লেখালেখি - কিছু কবিতা এবং কিছু প্রবন্ধ। প্রবন্ধের প্রিয় বিষয় বাংলা গান এবং গীতিকবিতা। কবিতা ও প্রবন্ধের প্রকাশ মূলতঃ বিভাব, প্রমা, মিলেমিশে, একুশ শতকের মতো ছোটো পত্রিকা আর সানন্দার মতো বাণিজ্যিক পত্রিকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *