লিঙ্গসাম্যের সহজপাঠ

লিঙ্গসাম্যের সহজপাঠ

কোনখানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে?

মায়ের মুখে শুনেছিলাম, আজ থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে, আমার জন্মের খবর চিঠিতে পেয়ে, মায়ের দিকের আমার এক নিকটাত্মীয় সে চিঠি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর এমন ব্যবহারের মূল কারণ ছিল সে যুগের এক অমোঘ চিন্তা। এক মেয়ের পরে আবার মেয়ে? রঞ্জন-বাসন্তী দু-দুটো মেয়ের বিয়ে দেবে কী করে? 

সেই আত্মীয় পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন। অন্যদিকে আবার ওই একই খবর পেয়ে আমার অতি মধ্যবিত্ত, প্রায় নিম্নবিত্তই বলা চলে এবং তেমন উচ্চশিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত নন, আমার ঠাকুমা-ঠাকুর্দার প্রতিক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছ’বছরের বড় নাতনি এবং সদ্যোজাত ছোট নাতনির একপেশে ভবিষ্যৎ চিন্তার প্রসঙ্গ তাঁরা  তোলেননি। উল্টে  বাবাকে ডেকে ঠাকুর্দা বলেছিলেন, “মেয়ে দুটোকে খুব ভালো করে মানুষ করিস। ওদের লেখাপড়া সবার আগে! জানবি একটা পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে অনেকসময় তিনটে প্রজন্ম লেগে যায়।” পূর্বজমিদারি থেকে ছিন্নমূল, উদ্বাস্তু জীবন দেখা তিনি শুধু চাইতেন আবার বংশের হাল ফিরুক। পরবর্তী প্রজন্ম আর একটু ভালো থাকুক। সে হাল কে ফেরাবে ছেলে না মেয়ে সে প্রশ্ন তাঁর মাথায় ছিল না। এরপর থেকে আমার ঠাকুমা-ঠাকুর্দা এবং আমার একমাত্র কাকা, আমাদের প্রতি আমার বাবা-মায়ের খেয়াল আদরযত্ন শাসন, আমাদের পড়াশোনা গানবাজনায় বাবা-মায়ের উৎসাহ দেওয়াকে, বিশেষ করে আমার মায়ের ভূমিকাকে, খুব প্রশংসার দৃষ্টিতে বরাবর দেখেছেন। ঠাকুমা-ঠাকুর্দা যতদিন বেঁচেছিলেন আমাদের প্রতি তাঁদের ব্যবহারে কোনোদিন মনে হয়নি, তাঁদের প্রথম সন্তানের দুই মেয়ের বদলে অন্তত একটা ছেলে হলে বোধহয় ভালো হত।। আর আমার একমাত্র কাকা চিরকালই আমাদের দুই বোনকে তাঁর স্নেহ ভালোবাসা প্রশ্রয়ে ভরিয়ে রেখেছেন। এবং আশ্চর্যের বিষয়, আমার জন্মের খবরে চিঠি ছুঁড়ে ফেলা সেই নিকটাত্মীয় পরবর্তীকালে আমার ছোটবেলা এবং আমার সব গরমের ছুটি এতটাই মজা, স্নেহ, ভালোবাসা, আনন্দে ভরিয়ে রেখেছিলেন যে আজও, তাঁর মৃত্যুর পঁচিশ বছর পরেও, তাঁর কথা মনে পড়লে মুহূর্তে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। 

তবে আমার লিঙ্গ বৈষম্যের প্রথম পাঠ সেই চিঠি ছোঁড়ার গল্প দিয়ে শুরু হয়নি। সে গল্প অন্য এবং আরও সরল। কিন্তু গভীর অর্থবহ এবং যার অর্থ একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুতেই  ভালো বুঝতাম না। সে হল সাত মেয়ের পরে এক ছেলে হওয়ার গল্প। আমার মায়েরা ছিল পরপর সাত বোন। তা সাত মেয়ের পরে এক ছেলে হওয়াতে আমার স্বর্গীয় দাদু এমন খরচ করে, তার এমন জাঁকজমকপূর্ণ অন্নপ্রাশন দিয়েছিলেন, যে সে নাকি গোটা গ্রাম বহুকাল মনে রেখেছিল।

এ গল্প শুনে আমি মাকে প্রশ্ন করতাম, “তোমাদের বোনেদের কারোর বড়ো করে অন্নপ্রাশন হয়নি?” মা বলত, “না!” এসব গল্পগাছা শোনার ফলে আমার একটা বদভ্যেস হয়েছিল। কোনো বন্ধু যদি বলত যে তারা পাঁচবোন এক ভাই বা তিনবোন একভাই, আমি সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করতাম, “তোর ভাই নিশ্চয়ই সবার শেষে?”

শুনতে খারাপ লাগলেও আজ থেকে চার পাঁচ দশক আগে এই সমীকরণ খুব একটা দুর্লভ ছিল না। পুত্রের আশায়, বংশরক্ষার আশায়, যে ক’টা মেয়েকে সহ্য করে নেওয়া যায় আর কি! পাঁচ মেয়ের পরে এক ছেলে হলে তাকেই একা কুম্ভ বলে ধরে নেওয়া হত। উল্টোদিকে আমাকে কেউ “তোমরা ক’ভাইবোন?” জিজ্ঞেস করলেই আমি যখন উত্তর দিতাম, “আমরা দু’বোন,” তখন সঙ্গে সঙ্গে আবার তাদের তরফ থেকে অবাক প্রশ্ন আসত, “ওমা, ভাই নেই?” পাড়ায় অনেক কাকিমা আমার মা’কে তাঁর সন্তান সংখ্যা নিয়ে এমনভাবে জিজ্ঞেস করতেন যেন তার গূঢ় অর্থ হচ্ছে, “ছেলে নেই, তবু মাত্র দুটিই মেয়ে?” 

সমানাধিকারের দাবি

যাই হোক, বাড়িতে ওই ভাই বা দাদা না থাকার দরুন আমি আর দিদি, বিশেষ করে আমি, দোর্দন্ডপ্রতাপে বড় হতে লাগলাম। আমাদের ঘরসংসার, রান্নাবান্নার কাজ শেখা প্রসঙ্গে বাবা বলতেন, “ওসব শিখে যাবে।” বাবার বরং উৎসাহ ছিল আমরা স্কুলে পড়তে পড়তেই যেন বাবার সঙ্গে ব্যাঙ্কে যাই, ভবিষ্যৎ বুঝে নিই। বাল্ব ফিউজ হয়ে গেলে নিজেই যেন বদলাতে শিখি। সাইকেল চালিয়ে টিউশন পড়তে যাই, চাকরির সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করা তাঁর ছোট ব্যবসার দায়িত্ব ভাগ করে নিই, এইসব। এমনকি মোবাইল ফোনবিহীন যুগে, বছর বাইশ বয়স থেকে মায়ের চিকিৎসার জন্য আমি তাকে ভিনরাজ্যে নিয়ে একা গেলে বা সেখানে গিয়ে মাসের পর মাস একা থাকলে, সেটা নিয়েও বাবার বিশেষ চিন্তা বা আপত্তি ছিল না। এবাদে সেই নব্বই দশকের শুরু থেকে শেষ জুড়ে কখনো দিদি, কখনো আমি বা আমাদের আশেপাশের মেয়েরা প্রস্তুতি নিয়েছি ব্যাঙ্ক, এল, আই, সি’র মতো চাকরির পরীক্ষার। কম্পিউটার ট্রেনিংও জ্যোতি বসুর নিষেধ অগ্রাহ্য করে ততক্ষনে আমাদের হাতের মুঠোয়। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত মেধাবি না হলে মেয়েরা তখন শুধু আর স্কুল শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে না। নব্বই দশকে যদিও একটা ব্যাপার খুব প্রকট ছিল, কুড়ি বাইশ হতে না হতেই মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ খোঁজা বা বিয়ে দিয়ে দেওয়া। সে ব্যাপারেও আমার বাবা মায়ের প্রবল আপত্তি ছিল। পাড়ায় চেনা কোনো মেয়ের খুব অল্প বয়েসে পরিবারের উদ্যোগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখলে বাবা মা খুব রাগ করত। বাড়ি বসে গজগজ করতো। 

সন্তান ছেলে না মেয়ে এ বিষয়ে তাপ উত্তাপহীন আমার বাবার নিরাপদ ছায়ার বাইরে এসে পরবর্তীকালে বৈবাহিক সূত্রে এমন একজন মানুষের সান্নিধ্যে এলাম, যিনি আবার লিঙ্গসাম্য কতটা সহজ করে ভাবা যায় তার আন্দাজ আমাকে দিলেন। তিনি আমার দক্ষিণ ভারতীয় শ্বশুরমশাই। সাত সন্তানের পিতা। চার ছেলে, তিন মেয়ে। এরা গোড়া থেকেই জানত সবাইকে চাকরি করতেই হবে। একজন মেয়েও আগে চাকরি না করে বিয়ে করতে পারবে না। তাদের বাবার, মানে আমার শ্বশুরমশাইয়ের তেমনই নির্দেশ। আমার মনে আছে তিনি আমাকে বলেছিলেন পৃথিবীর কোনও মেয়েরই চাকরির আগে বিয়েকে তিনি সমর্থন করেন না। যদি কেউ বিয়ে করে বা গৃহবধূ হিসেবে থাকতে চায়, তাহলে পরিবারে ডিসিশন মেকিং ক্ষমতা যেন তার পূর্ণমাত্রায় থাকে। আর একটি বিষয়ে তিনি ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। দক্ষিণভারতে, যেখানে বিয়ের সময় পণপ্রথা আর দানসামগ্রীর প্রভূত প্রচলন, সেখানে তাঁর কড়া নির্দেশ ছিল তাঁর কোনও ছেলেমেয়ের বিয়েতেই জাঁকজমক হবে না। সম্বন্ধ করে বিয়ে হলেও পণ দূরে থাক, কী ছেলে কী মেয়ে কারোর বিয়েতেই কোনও উপহার বা তত্ত্বসামগ্রীর লেনদেন চলবে না। তাঁর ছেলেরা বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ থেকে কেবলমাত্র গ্রহণ করবে একটি ধুতি, একটি উত্তরীয়, এবং একটি আংটি। লেনদেন হবে না কোনো বাস, ট্রেন, বা প্লেনভাড়ার। যাদের ছেলে বা যাদের মেয়ের বিয়ে, তারা তাদের আত্মীয়বন্ধু যাতায়াতের খরচ নিজের পকেট থেকে দেবেন। উল্টোদিকে, আমাকে আমার যে আত্মীয়বন্ধুরা বলেছিল, “দক্ষিণভারতীয় পরিবার তো, ওখানে গিয়ে প্রচুর গয়নাগাটি পাবি,” সে ভবিষ্যৎবাণীতে জল ঢেলে আমি হায়দ্রাবাদে গিয়ে পেলাম গুনে গুনে সাত আলমারি ঠাসা বই। সাতটা চৌকি, সাতটা পড়ার টেবিল, এবং সাত আলমারি বই – এই ছিল সাত সন্তানের জন্য বরাদ্দ বাড়ির হোস্টেল। সেখানে ছেলে মেয়ের কোনও ভাগ বা কমবেশি ছিল না। বাবা হিসাবে ছেলে বা মেয়ে সন্তানকে সমানাধিকার ও সমদৃষ্টিতে মানুষ করার ওঁনার এমন অনেক উদাহরণ থাকলেও, একটি উক্তি আমার বিশেষভাবে আজও মনে আছে। সেটি হল, ওঁর এক আত্মীয় একদিন ওঁকে জিজ্ঞেস করছিলেন, উনি তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন কিনা। কারণ তার বয়স বত্রিশ হল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “ও এখন কোথা থেকে বিয়ে করবে? সবে তো চাকরি পেল। এখনো গাড়ি কেনেনি, বাড়ি কেনেনি। আগে সেটল হোক।” আমি বাকরুদ্ধ হয়ে ভেবেছিলাম, এমন কথা আমি তো আগে কোনোদিন শুনিনি! যে কথা যেভাবে ছেলেদের বিয়ের প্রসঙ্গে বলা হয়, সেই একই কথা একইভাবে একটি মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে তার বয়স সম্মন্ধে বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত না হয়ে এত সহজে উচ্চারণ করা যায়? উনিই বোধহয় কথায় ও কাজে আমার দেখা সেরা পুরুষ ফেমিনিস্ট যিনি আমি বিয়ের পরে কানাডা আসামাত্র ফোনে আমাকে পরামর্শ দিতেন, “আমার ছেলে অফিসে থাকাকালীন তুমি বসে বসে রান্না করে সময় নষ্ট কোরো না যেন! বাইরে যাও। একা একা ট্রেনে বাসে করে শহরটা ঘুরে দেখো, চেনো। একা যাও, একা যাও।” হায়দ্রাবাদে থাকাকালীনও দেখেছিলাম, অচেনা শহর হলেও ওঁর এই আমাকে সর্বত্র একা যেতে বলা। বলতেন, “না চিনলে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে যাও। কিন্তু একা যাও!” আজ থেকে বাইশ বছর আগে প্রায় সেলফোন ছাড়া যুগে এক দক্ষিণভারতীয় শ্বশুরমশাই উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁর নতুন বৌমাকে সব জায়গায় জিন্স পরে টইটই করে একা যেতে, এ দৃশ্য তখন খুব একটা কমন বা অভিপ্রেত ছিল না। তাঁকে দেখেছি, কোনও উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক পণ দিয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে জানলে এবং সে মেয়ের বাড়ির লোক নেমন্তন্ন করতে এসেছে দেখলে, “তাহলে আর লেখাপড়া শিখলে কী করতে,” মুখের ওপরে বলে তাদের পত্রপাঠ বিদায় দিচ্ছেন। বলতে, “অমন বিয়েতে আমি যাই না।”  

আজকাল কতরকমের কথা শুনি। ছেলেকে এভাবে মানুষ করুন, মেয়েকে ওভাবে মানুষ করুন। আমার মনে হয় তখন, আমার বাবা বা আমার শ্বশুরমশাই শুধুই বোধহয় সন্তান বড় করেছিলেন। তাঁরা ছেলে বা মেয়ে মানুষ করার আলাদা কোনও ব্যকরণই জানতেন না। কিছুদিন আগে এক সংবাদপত্রের খবরে দেখলাম এক দম্পতি লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে সমানাধিকারে বিশ্বাস রেখে তাঁদের মেয়ের পৈতে দিচ্ছেন। নিজে ব্রাহ্মণ হওয়ার কারণে এই ভেদাভেদ বোধহয় আমার শ্বশুরমশাইকেও ভাবিয়েছিল। কিন্তু তিনি কী করেছিলেন? তাঁর তিন মেয়ের পৈতে দিয়েছিলেন? না! তিনি তাঁর চার ছেলের এক ছেলেরও পৈতে দেননি। কোনও প্রতিবাদস্বরূপ এমন সিদ্ধান্ত নয়। বেদান্ত দর্শনে গভীর জ্ঞান ও উৎসাহ নিয়ে এটাই তাঁর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। 

লিঙ্গবৈষম্যকে খুব ছোট থেকে কেমন প্রশ্রয় দেওয়া হয়, মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, কতটা নির্লজ্জ্বভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে মান্যতা দেওয়া হয়, তার উদাহরণ প্রথম চাক্ষুস করেছিলাম উত্তর আমেরিকায় এসে। প্রথমে কানাডা, তারপর আমেরিকা এসে দেখলাম, প্রতিটি দোকান ছোট বাচ্চাদের জন্য গোলাপি এবং নীলে ভাগ করা। খেলনাপাতি বার্বি, কিচেন সেট, ও রিমোট কার-এ ভাগ করা। এমনকি পেডিয়াট্রিশিয়ানের অফিস থেকে ডাক্তার দেখানো শেষে বেরোলে, পেশেন্ট বাচ্চা মেয়ে হলে তার হাতে বা গালে ডোরার স্টিকার, ছেলে হলে দিয়েগো স্টিকার। নিজের বাচ্চা হওয়ার আগে থেকেই এসব দেখেশুনে মাথা ধরে যাওয়া আমার সিদ্ধান্ত ছিল, আমার ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন, রঙ বা খেলনায় কোনও ভেদাভেদ রাখবো না। ফলস্বরূপ, একগাদা নীল গাড়ি, গোলাপি পুতুল, রান্নাঘর, বেবি স্ট্রোলার, সব নিয়ে খেলতে থাকা আমার পাঁচ বছরের বড় ছেলেকে দেখে আমেরিকায় থাকা এক আলোকপ্রাপ্তা বাঙালি মহিলা আমাকে সতর্ক করতে মন্তব্য করলেন, “দেখো, আবার গে ফে হয়ে না যায়!”

পৃথিবীর সমান অধিকার

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়াতে আজকাল লক্ষ্য করি লিঙ্গবৈষম্যর বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে এমন কিছু বোকা বোকা উদাহরণ ক্রমাগত মেয়েদের বোঝানো হয় যাতে সহজাত লিঙ্গসাম্যের পরিবেশও সৃষ্টি হয় না, আবার লিঙ্গবৈষম্যও দূর হয় না। উল্টে কোথায় যেন সাম্যের বদলে বদলার ভাষা এসে যায়। আসলে বাস্তব বিচার করে দেখতে গেলে কাজী নজরুলের সেই ভবিষ্যৎবাণী মনে করতে হয়, “নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এরপর যুগে আপনারি রচা ওই কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!” ভাবতে লজ্জা হয়, একদিন খোদ এই আমেরিকাতেও মেয়েদের ভোটাধিকার পেতে, সম্পত্তির অধিকার পেতে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার স্বাধীনতা পেতে অনশন করে, পথ দখল করে, গলার শিরা ফুলিয়ে চেঁচাতে, আন্দোলন করতে হয়েছিল। আর কী আশ্চর্য্য, আজ প্রায় সেই একই ভাবে আমাদের নিজেদের দেশে, নিজেদের রাজ্যে মেয়েরা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজ করা মেয়েরা, আজও দুটো পৃথক এবং পরিষ্কার বাথরুমের দাবিতে, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গার দাবিতে, একটু স্বাভাবিক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এমন কোনও অধিকার কি আছে যা মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি তারাও শুধুই মানুষ বলে ভোগ করতে পেরেছে? আন্দোলন ছাড়া অর্জন করতে পেরেছে? অথচ এমন হওয়ার কথা তো ছিল না! কারণ কবির কথা অনুযায়ী, এই কি ধ্রুবসত্য নয় যে “বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চিরকল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর?” 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হিউস্টন শহরের বাসিন্দা। গত পনেরো বছরেরও বেশি প্রবন্ধ, ছোটগল্প, কবিতা, রম্যরচনা, ভ্ৰমণকাহিনী, সম্পাদকীয়, লিখছেন কলকাতার আনন্দবাজার, এই সময়, বর্তমান, নারীযুগ এবং কানাডা ও আমেরিকায় প্রকাশিত দুকূল, শারদঅর্ঘ্য, অঞ্জলি, প্রবাসবন্ধুর মতো সাহিত্য বিষয়ক পত্রপত্রিকায়। লিখেছেন বাংলালাইভে। ভালোবাসেন কবিতা আর আত্মজীবনী পড়তে। আর ভালোবাসেন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, মানুষকে জানতে। মূল্য দেন নিজের এবং অন্যের জীবনের বিচিত্র ভালোমন্দ অভিজ্ঞতাকে। লেখালিখির মূল সম্পদ সেখান থেকেই উঠে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *