'সুজনদার সঙ্গে আড্ডার স্মৃতিগুলো আমি সারা জীবন cherish করব' - অনির্বাণ চক্রবর্তী
(আমরা সকলেই জানি, সুজন দাশগুপ্ত সৃষ্ট ‘একেনবাবু’কে জনপ্রিয় করার পিছনে পর্দার ‘একেনবাবু,’ অনির্বাণ চক্রবর্তীর কী অসামান্য অবদান। এই স্মরণিকাতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে অনির্বাণ আমাদের জানিয়েছেন ‘একেনবাবু’ নিয়ে তাঁর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্তকে নিয়েও তাঁর কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। ‘অবসর’ পত্রিকার তরফে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ভাস্কর বসু)
ভাস্কর – অনির্বাণ, প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই সাক্ষাৎকারে রাজি হওয়ার জন্য। আমাদের প্রথম প্রশ্ন, ‘একেনবাবু’ চরিত্রে অভিনয় করার আগে কি আপনার গল্প পড়া ছিল?
অনির্বাণ – না, পড়া ছিল না। আসলে হয়তো আমারই অজ্ঞতা। মূল কারণ সম্ভবত আমাদের বাড়িতে যে ম্যাগাজিনগুলো নেওয়া হত তাতে একেনবাবুর গল্প থাকত না। আমাকে যখন ২০১৮ সালে প্রথমবার Hoichoi থেকে ডাকা হয় তখন script রেডি হয়ে গিয়েছে। সেখানেই প্রথম পড়ি।
ভাস্কর – আপনি তো নিশ্চয়ই বাংলা এবং বিদেশি গোয়েন্দা কাহিনি পড়েছেন, সিনেমাও দেখেছেন। প্রথম যখন এই চরিত্রে অভিনয় করার কথা হল, কীভাবে তাঁদের সঙ্গে একেনবাবুকে আলাদা করলেন? বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
অনির্বাণ – ঐ যে বললাম, গল্পগুলো আমার পড়া ছিল না। তাই এই চরিত্র সম্পর্কেও আমার ধারণা ছিল না। আমি যখন প্রথমবার script পড়লাম, তখনই আমার মনে হল এমনিতেই এই চরিত্রটি আমাদের দেখা অন্য চরিত্রগুলো থেকে বেশ আলাদা। বাংলা সাহিত্যে যেসব জনপ্রিয় গোয়েন্দাদের আমরা জানি, যেমন ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা কিরীটী, তারা যেমন গম্ভীর বা সিরিয়াস আর তাদের মধ্যে যে বেশ একটা নায়কোচিত ব্যাপার আছে, তা একেনবাবুর মধ্যে একেবারেই অনুপস্থিত। খুব সাধারণ ছাপোষা, পাশের বাড়ির একজন মানুষ, যিনি বেশ খানিকটা অগোছালো আর যাঁর মধ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে অথচ তিনি বেসিক্যালি খুব বুদ্ধিমান, খুব sharp! আবার তাঁর মধ্যে একটা ছেলেমানুষিও আছে। এই যে একটা বিরাট contrast, এটা সাধারণতঃ আমরা আগে বাংলা সাহিত্যে বা সিনেমাতেও কোনও গোয়েন্দার মধ্যে দেখিনি। এই contrastটা আমার কাছে খুব interesting লেগেছিল। আর আলাদা কোন প্রস্তুতি – মানে যে এই চরিত্রটিকে আমাকে আলাদা ভাবে দাঁড় করাতে হবে, সেরকম কিছু ছিল না। চিত্রনাট্য পড়ে, গল্প পড়ে আমার যেরকম মনে হয়েছিল যে এই মানুষটা এরকম হতে পারে, আমি ঠিক সেভাবেই তাকে প্রথমবার portray করেছিলাম। অর্থাৎ পড়ে আমার মানুষটাকে যেমন মনে হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বা কথাবার্তায় তা প্রকাশ পেয়েছে।
তখন আমাদের ইউনিটের সবার মধ্যেই একটা uncertainty ছিল। যেহেতু এরকম গোয়েন্দা চরিত্র আমাদের দর্শকদের দেখার অভ্যেস নেই, তাকে হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে বা দর্শকরা তাকে একেবারে reject করে দিতে পারে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে ঐ অসঙ্গতিটাই এই চরিত্রটার একটা USP (Unique Selling Position) হয়ে গেল। গোয়েন্দা হিসেবে একেনবাবু সম্পূর্ণ একটা আলাদা চরিত্র হিসেবে জনপ্রিয়তা পেল।
ভাস্কর – আমাদের মনে পড়ে প্রথম যখন ‘একেনবাবু’র ট্রেলার দেখি, ভীষণভাবে মনে এসেছিল সন্তোষ দত্ত অভিনীত জটায়ুর কথা। আপনারও নিশ্চয়ই এই কথা কানে এসেছিল। পরে তো আপনি জটায়ু চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এই বিষয়গুলি কি আপনার অভিনয়কে প্রভাবিত করেছে?
অনির্বাণ – আগে যা বললাম, প্রথম ২০১৮তে, একেনবাবু পড়া না থাকার কারণে কোনও ধারণা ছিল না। তার পরে দেখলাম একেনবাবুর চরিত্রের সঙ্গে আমার অর্থাৎ অনির্বাণ চক্রবর্তীর আকার, উচ্চতা, মাথার চুল – কোনটাই মেলে না। প্রোডাকশন হাউস, মানে Hoichoi এখানে বেশ ঝুঁকি নিয়েছিল। পরে শুনেছি তাঁরা সুজন দাশগুপ্তকেও জিজ্ঞেস করেছিলেন – ‘একেনবাবুর সঙ্গে চেহারায় মিল অভিনেতা পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু তাঁরা ভালো অভিনেতা নন। আর আরেকজন ভাল অভিনেতা পাওয়া গেছে যাঁর সঙ্গে কিন্তু কাহিনিতে বর্ণিত একেনবাবুর চেহারার কোন মিল নেই। তা কোনটা আপনার পছন্দ?’ তখন সুজনদা নাকি জানিয়েছিলেন, ‘ভালো অভিনেতা হওয়াটাই বেশি জরুরি।’ এটা কিন্তু সুজনদার সঙ্গে আমার আলাপ হওয়ার আগের ঘটনা। মানে তখনও অভিনেতা নির্বাচন পর্ব শেষ হয়নি। এরপর তো আমি এসে গেলাম। তারপর অনেকরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা হল। মানে একেনবাবুর চশমা থাকবে কিনা, মাথায় চুল থাকবে কিনা – এমনকি আমার গালে একটা আঁচিলও লাগিয়ে দেখা হয়েছিল। শেষমেশ যেটা দাঁড়ালো সেটা যাকে এখন পর্দায় দেখা যায়। তার জামাকাপড় একটু অগোছালো থাকবে। সব মিলিয়ে যে চেহারা বা উপস্থিতিটা দাঁড়ালো তার সঙ্গে জটায়ুর খুব মিল। তখন তো আমি জানতাম না যে আমি কোনওদিন জটায়ুও করব। ঐ সিরিজ বেরনোর আগে খুব ভালো প্রমোশন করা হয়েছিল। কলকাতা জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় আমার ছবির বড় বড় কাট আউট, হোর্ডিং, ইত্যাদি লাগানোর হয়েছিল। তখন সবাই একেবারে নিশ্চিত হয়ে গেল যে জটায়ুকে নিয়ে কিছু আসছে।
তারপরে প্রেস কনফারেন্স করে সবাইকে জানানো হল যে ইনি জটায়ু নন, ইনি নিজেই এক গোয়েন্দা – একেনবাবু। এরপরে তো প্রচুর শুনেছি। সেইসময় ফেলুদার যে গল্পগুলোর থেকে ছবি হচ্ছিল তাতে জটায়ু অনুপস্থিত ছিলেন। তখন আবার অনেকে এটাও বলতে শুরু করলেন যে তাহলে তো এবার জটায়ু পাওয়া গেছে; তাহলে এবার ফেলুদাকে আবার জটায়ু সমেত ছবির পর্দায় পাওয়া যাবে। এই নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা লেখালেখি হল। প্রথমে আমি খুব একটা প্রভাবিত হই নি। পরে এতটাই কথা হতে লাগলো, শুনে আমারও মনে হল যে এতজনে যখন বলছেন তার মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু সত্যতা থাকবে। তাহলে পরে যদি কেউ ফেলুদা করেন, আমাকে জটায়ুর চরিত্রে নির্বাচন করতে পারেন। পরে সৃজিত মুখার্জির যখন ওয়েব সিরিজ করবেন ভাবলেন আমাকে বললেন যে উনি আমাকে জটায়ুর চরিত্রের জন্য ভেবেছেন।
খুবই আনন্দ হয়েছিল। এমন একটা আইকনিক চরিত্রে নির্বাচিত হলে যেমন হয় আর কী! একটা আশঙ্কাও ছিল। আমি ইতিমধ্যে একটি গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করছি যাকে অনেকটা জটায়ুর মত দেখতে। এমনকি তার চরিত্রের কয়েকটি বিশেষত্বের সঙ্গে জটায়ুরও বেশ মিল আছে – যেমন রসিকতা করা বা ভুল হিন্দি বলা। মানে হয়তো সুজনদা তেমনভাবে লেখেননি, কিন্তু পর্দায় যে একেনবাবু তিনি ঐরকম। এটা আমার ওপর সত্যিই একটু চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পরে যখন জটায়ু করলাম, মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন কিন্তু আমার কাছে এটা খুব পরিষ্কার হয়ে গেল যে ঐ বাহ্যিক মিলটুকে বাদ দিলে চরিত্রগত ভাবে একেনবাবু আর জটায়ু সম্পূর্ণ আলাদা। একেনবাবু চরিত্রের মধ্যে কিন্তু বিভিন্ন স্তর আছে,- তাঁর ছেলেমানুষি করা আছে, মজা করা আছে, ভুল প্রবাদ বলা আছে। এসব কিন্তু বাইরের মোড়ক। উনি যখন কাজের মধ্যে থাকেন তখন উনি অন্য একটা মানুষ। প্রচণ্ড intelligent এবং serious। আর ওঁর চরিত্রের এই shiftটা দর্শকদের খুব পছন্দের। জটায়ু চরিত্রের মধ্যে কিন্তু এই স্তরভেদটা বা সেই সংক্রান্ত জটিলতা একদমই নেই। জটায়ু বাইরে এবং ভেতরে একজন বন্ধুবৎসল এবং সরল একজন মানুষ। একেনবাবুর মধ্যে আবার একটা মিচকেমিও আছে, উনি জেনেও না জানার ভাব করেন, অন্যদের মাঝে মধ্যে বুলি করেন। একেনবাবু চরিত্রের মধ্যে নানা ধরণের layer রয়েছে। আসলে জটায়ু তো নিজে ডিটেকটিভ নন, ডিটেকটিভের বন্ধু। অন্যদিকে একেনবাবু নিজেই ডিটেকটিভ। আমি যখন দুটো চরিত্রে পাশাপাশি অভিনয় করছিলাম, আমার কাছে এই পার্থক্যটা খুব পরিষ্কার হয়ে গেল।
ভাস্কর – সুজন দাশগুপ্তের সঙ্গে আপনার আলাপ হল কবে? ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের আগে না পরে? ওঁর কী মনে হয়েছিল আপনার অভিনয় দেখে? ওঁর কল্পনার সঙ্গে মিলেছিল?
অনির্বাণ – ২০১৮তে যখন প্রথম সিরিজের শ্যুটিং হয়, তখন আমার সঙ্গে সুজন দাশগুপ্তর প্রথম দেখা হয়। উনি শ্যুটিং এর সময় ফ্লোরে এসেছিলেন। সেদিনকেই আমাকে আলাপ করিয়ে দিলেন পরিচালক যে ইনি হচ্ছেন সুজন দাশগুপ্ত, এই গল্পের লেখক। আমার মনে পড়ছে, শমীতাদিও এসেছিলেন ওঁর সঙ্গে। তখন তো আলাপ ছিল না। প্রথম দিনের আলাপে খুব একটা কথাবার্তা হয়নি। তখন অবশ্য আমি জানতাম না ওঁর লেখা একেনবাবু আমার মত না। তখন ওঁর মনের ভেতরে কী চলছে সেটা বুঝতে পারিনি। পরে অবশ্য যখন ভালো করে আলাপ হল আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনি নিশ্চয়ই খুব shocked হয়েছিলেন আমাকে দেখে। নিশ্চয় ভেবেছিলেন আমি কী লিখেছিলাম আর কী হল! উনি তো খুব মজা করতেন সবসময়, বলতেন, ‘কাজটা ভালো হওয়া দরকার।’ প্রথম সিজন যখন বেরোল আর খুব জনপ্রিয় হল, উনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। বলতেন যে ‘দেখ আমার একেনবাবু হয়তো তোমার অভিনীত একেনবাবুর থেকে আলাদা কিন্তু এই যে এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে তারও একটা আলাদা মূল্য আছে।’ পরের সিরিজগুলোও যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল, তাতেও উনি খুবই আনন্দিত ছিলেন। এমনকি এই ২০২৩ এর পয়লা বৈশাখে যে একেনবাবু মুক্তি পাবে, তার চিত্রনাট্যও তো ওঁর অনুমোদিত ছিল। শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার খবরও উনি জানতেন। উনি বরাবরই খুব উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। বরং একেনবাবুর একনিষ্ঠ পাঠক যাঁরা ছিলেন তাঁরা কেউ কেউ social mediaতে অনুযোগ করতেন এই বলে যে ‘সুজনদা, এটা কীরকম হল, আপনার একেনবাবুর সঙ্গে তো অনির্বাণ চক্রবর্তীর কোন মিল নেই।’ উনি রসিকতা করে উত্তর দিতেন। ঐ ২০১৮র পর থেকে উনি কলকাতায় এলেই আমাদের আড্ডা হত, ওঁর বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার নিমন্ত্রণ থাকত। এছাড়া ফোনে বা মেসেঞ্জারেও গল্প হত। আমার মনে হত এই যে একেনবাবু এতটা সমাদৃত হচ্ছে, এই ব্যাপারটা ওঁকে আন্তরিক ভাবেই আনন্দ দিয়েছিল। উনি তো বেশ স্পষ্টবক্তা ছিলেন, খুব রাখঢাক করে কথা বলতেন না। কাজেই উনি যেটা প্রকাশ করেছিলেন আমাদের কাছে সেটা ওঁর মনের কথা বলেই ধরে নিতে পারি। ওয়েব সিরিজ এবং ফিল্মের মাধ্যমে একেনবাবুর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ওঁকে খুবই খুশি করেছিল।
ভাস্কর – আপনি অভিনয় করার পরে কি ওঁর গল্পগুলো পড়েন? কিছু গল্প তো আবার সিরিজ শুরু হওয়ার পরে প্রকাশিতও হয়েছিল। সেগুলো যখন পড়তেন, তখন কি অভিনয়ের কথা মনে আসত?
অনির্বাণ – দু’রকমই হয়েছে। এমন হয়েছে script এর প্রথম draft তৈরি হয়েছে এবং কী কী পরিবর্তন হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন পুরোটা জানার জন্য পড়ে নিয়েছি। আবার এমনও হয়েছে আমাদের পুরো শ্যুটিং হয়ে গেছে, release হয়ে গেছে, তারপর পড়েছি। আসলে গল্পের থেকে তো চিত্রনাট্যে change হয়। সেটা মাথায় রেখেই বলছি, খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই তো আমি আটবার এই চরিত্রে অভিনয় করেছি। কাজেই একেনবাবু মানুষটা কেমন, সেটা সম্পর্কে আমার একটা ধারণা হয়ে গেছে। তাই আমার একটা নিজস্ব চেনা একেনবাবু আছে। যখনই কোন নতুন স্ক্রিপ্ট পাই, সেটা পড়ার সময় মনে রাখার চেষ্টা করি যে এই পরিস্থিতিতে এই মানুষটা (আমার চেনা একেনবাবু) কীভাবে react করতে পারে। আর অনেকদিন চেনা হওয়ার পরে improvise করাটাও বেশ সহজ হয়ে গেছে। তাই প্রথম চিত্রনাট্য হাতে পেলেই একটা আবছা ধারণা হয়ে যায়। গল্পের থেকে change গুলো ধরতে পারি। এটা নিয়ে বেশ একটা মজার ব্যাপার হয়েছে।
এটা সুজনদাই আমাকে বলেছিলেন এবং আমি সেটাকে compliment হিসেবেই নিয়েছিলাম। একবার আমাকে messengerএ মেসেজ করলেন, ‘অনির্বাণ, তুমি তো আমাকে বেশ বিপদে ফেলে দিলে!’ উনি খুব মজা করতেন তো, তাই আমি খুব seriously নিইনি। তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার হল?’ উনি বললেন, “দেখ, আমি তো একেনবাবুকে একরকম ভাবে লিখেছিলাম। তুমি অন্যভাবে করেছ, মানে তোমার চলাফেরা, কথাবার্তা বেশ আলাদা। আর তোমার একেনবাবু, এমনকি আমার মধ্যেও এত গাঢ় ছাপ ফেলেছে যে এখন যখন একেনবাবুকে নিয়ে নতুন গল্প লিখতে যাই, আমার কিন্তু তোমার ছবিটাই মাথায় আসে। মানে আমি আমার আগের একেনবাবুকে আর দেখতে পাই না, মনে হয় তুমিই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছ। তুমি কীভাবে চলাফেরা করছ, তোমার body language কীরকম, কীভাবে কথা বলছ!”
এটা শুনে আমার খুব মজা লেগেছিল আর একই সঙ্গে ভালো লেগেছিল।
ভাস্কর – এই কাহিনিগুলি নিয়ে কি কখনো সুজনবাবুর সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা হয়েছে? মানে মার্কিন পটভূমিকা থেকে একেবারে দেশি পটভূমিতে নিয়ে আসার জন্য যে পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন ছিল সেগুলো নিয়ে?
অনির্বাণ – না, সেটা তো কখনোই হত না। একেনবাবুর গল্পের পটভূমি তো সাধারণতঃ আমেরিকায়। আমরা ওয়েবে করেছি মূলতঃ কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, ব্যাঙ্গালোরে বা বোলপুরে। ভারতের বাইরে একমাত্র ঢাকা। আর ফিল্মে দার্জিলিং আর এবার রাজস্থান। আসলে কোন গল্প করা হবে এবং কোন জায়গা নির্বাচন করা হবে সেটা তো আগেই ঠিক হয়ে যেত। মানে আমি অভিনয় শুরু করার আগেই। কাজেই সেই আলোচনাগুলো আমার সঙ্গে বা অভিনেতাদের সঙ্গে কখনোই হয় না। সেগুলো মূলতঃ চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং পরিচালকদের সঙ্গেই হয়। Hoichoi এর creative team ও সম্ভবত সঙ্গে থাকে। আসলে আমি এই processটা ঠিক পুরোপুরি জানি না। শুনেছি এঁরা প্রথমে ঠিক করে সুজনদার কাছে পাঠিয়ে দেন। তারপর সুজনদা অনুমোদন করতেন বা কখনো কিছু পরিবর্তন suggest করতেন।
আমি যখন স্ক্রিপ্ট হাতে পেতাম বা স্ক্রিপ্ট রিডিং হত, তখন আমার যদি কিছু সাজেসন হয়, সেগুলো আমি বলি। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো ওঁদের লজিক্যাল মনে হয়, সেগুলো গৃহীতও হয়।
ভাস্কর – আপনার যে দুই সহকারী, বাপিবাবু আর প্রমথবাবু, এঁদের সঙ্গে আপনার রসায়নটি বেশ চমৎকার ওয়েবসিরিজে। আবার পরে যখন সিনেমা হিসেবে হল, তখন নতুন জুটি এল। মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়েছিল কি?
অনির্বাণ – যখন আমি একেনবাবু শুরু করলাম, তখন থেকেই বাপির চরিত্রে সৌম্য এবং প্রমথর চরিত্রে দেবপ্রিয় (বাবল) অভিনয় করছিল। তাই আমরা যখন প্রথমে এলাম screenএ (ওয়েবসিরিজে), তিনজনেরই একসঙ্গে growth হয়েছিল। অর্থাৎ আমাকে যেমন লোকে একেনবাবু হিসেবে চিনল, সৌম্যকে চিনল বাপি হিসেবে এবং বাবলকে প্রমথ হিসেবে। এই combinationটা লোকের খুব ভালো লেগেছিল। এই যে একেনবাবুর সঙ্গে বাপির আর প্রমথর আলাদা রসায়ন এই ব্যাপারটা দর্শকরাও যেমন উপভোগ করতেন, আমরাও তেমনি enjoy করতাম। আর সিজনের সঙ্গে সঙ্গে এই রসায়নটা আরও গাঢ় হচ্ছিল। আমি নিজে ভাবিনি যে এরকম কোন change হবে মানে বাপি বা প্রমথর চরিত্রে অন্য অভিনেতারা আসবেন।
আসলে এটা আমি আগেও বলেছি, এখানে আরও একবার ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দিতে চাই। আসলে changeটা কিন্তু সিনেমার জন্য নয়। ঠিক ঐ সময়টাতে changeটা হয়েছিল বলে মনে হয়েছিল যে ওয়েব সিরিজ থেকে সিনেমাতে change। সেটা একদমই না। আসলে ঐ যে সময়টাতে শ্যুটিং হয়েছিল, সেখানে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সৌম্য তখন সবেমাত্র টিভিতে একটা মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করছে এবং সেটা বেশ চলছে। তখন ওকে ১৫দিনের জন্য টানা ছুটি নিয়ে দার্জিলিঙে গিয়ে অভিনয় করতে হবে। সেটা কিছুতেই ম্যানেজ করা গেল না। আর অন্যদিকে প্রমথর চরিত্রাভিনেতা বাবল তখন শিকাগোতে রয়েছে। ও শিকাগোতে থাকার জন্যই শান্তিনেকেতনে যে সিরিজটা হয়েছিল, সেটাতে ও শিকাগোতে থাকে এবং ভিডিও কলে ওর সঙ্গে কথা হচ্ছে, এভাবে দেখানো হয়েছিল। সেগুলো ও সত্যিই শিকাগো থেকে একা shoot করে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সিনেমাতে তো বড় canvas, পাশে উপস্থিত থাকাটা দরকার। কাজেই ওভাবে সম্ভব নয়। তবু প্রমথরটা খানিকটা ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল যে ও এসে shoot করে চলে যাবে। এরকম কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু সৌম্যর খুবই সমস্যা হল। তখন ঐ জুটির মধ্যে থেকে একজনকে change করার থেকে ঠিক করা হল দু’জনকেই change করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
এটা শুরুতে আমাদের সবার জন্যই একটা খুব নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল। আসলে আমরা তিনজনে অনেকদিন ধরে একসঙ্গে অভিনয় করছি বলে আমাদেরও যেমন, ঠিক দর্শকদেরও তেমন একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়ে গেছে। সেটা পালটে গেলে দুপক্ষেরই একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়াটা বা খটকা লাগাটা খুবই স্বাভাবিক। আমার নিজেরও হয়েছে। তখন অবধি আমিও বাপি আর প্রমথ বলতে এদের দু’জনকেই ভাবতাম, আমার চোখেও এদের ছবিই আসত।
কিন্তু পরবর্তীকালে এটা করা হল। তখন দার্জিলিঙে শ্যুট করতে যাওয়ার আগে আমাদের পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি বললেন, ‘তোমাদের তিনজনের মধ্যে তো একটা chemistry তৈরি করতে হবে। উনি ব্যবস্থা করলেন। তখন আমরা কলকাতায় বসে তিনজনে মিলে একটু script reading, একটু আড্ডা দিতে শুরু করলাম। এদের দুজনের মধ্যে বাপির ভূমিকার অভিনেতা সুহত্রর সাথে আমি আগে অভিনয় করেছি। আর প্রমথর চরিত্রের অভিনেতা সোমকের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে কিন্তু অভিনয় করা হয়নি। আসলে এরা দুজন নতুন আর আমি পুরনো হলেও তিনজনের জুটিতে তো আমিও নতুন। আর সব নতুন অভিনেতারই তো চরিত্রের একটা নিজস্ব ভাবনা থাকে। কাজেই ঐ আড্ডা এবং একসঙ্গে বসে আলোচনাটা খুব কাজে লেগেছিল। তাতেই আমাদের প্রাথমিক অস্বস্তি বা জড়তা যেটা ছিল, সেটা বেশ কেটে গেল। এবং দার্জিলিঙে যখন শ্যুটিং শুরু করলাম, দেখলাম সেটা বেশ ভালই কেটে গেছে। এরপরে কলকাতায় একটা এবং রাজস্থানে একটা শ্যুটিং করলাম। এখন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যেটা খুব স্বাভাবিক, আমাদের তিনজনের chemistry আবার বেশ জমে যাচ্ছে। কিন্তু ঐ প্রথমদিকে যখন ঐ বদলটা হল, একটা খটকা ছিল।
ভাস্কর – এত গল্পের মধ্যে একটি গল্পের কথা আলাদা করে মনে পড়ছে। গল্পটির কাহিনি একটি জমিদারবাড়ি নিয়ে। এটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং লকডাউনের মধ্যে শ্যুটিং হয়। এই গল্পটি সুজনদা–শমীতাদি মিলে লিখেছিলেন। এখানে বাপি – প্রমথর ভূমিকা সেভাবে ছিল না। বরং আপনার সহকারীর ভূমিকাতে ছিল একটি মেয়ে। এই কাহিনিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কি অন্যরকম?
অনির্বাণ – এই সিরিজটার নাম ছিল ‘বর্মণবাড়ির রহস্য’ এবং সেটা শ্যুট করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদে। সবকিছু মিলিয়ে এই সিরিজটা খুবই স্মরণীয়। কারণ, লকডাউনের মধ্যেই প্ল্যান করা হচ্ছিল একেনবাবুকে কীভাবে করা যেতে পারে। ততদিনে একেনবাবুর কাহিনিতে একটা জিনিষ মোটামুটি established হয়ে গেছে যে একেনবাবুর কাহিনি নতুন নতুন জায়গায় হয় এবং তার সঙ্গে একটা travelogue জড়িয়ে থাকে। মানে সেই জায়গার কালচার, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি। ফলে একেবারে ঘরের মধ্যে একটা গল্প, সেটা হয়তো পড়তে interesting হলেও দেখতে তেমন হবে না। কী করা যায়? এদিকে লকডাউনের মধ্যে আউটডোর শ্যুটিং এর permission পাওয়া যাচ্ছে না। আসলে যখন ভাবনা হচ্ছে তখন শ্যুটিং ও বন্ধ ছিল। তারপরে যখন একটু একটু করে শিথিল হচ্ছে, তখনও কিন্তু অনুমতি পেলেও অনেক শর্ত থাকছে। সেই অবস্থায় একটা পুরো ইউনিট নিয়ে আউটডোরে শ্যুটিং করা খুব মুশকিল। তখন এমন একটা গল্প দরকার যেটাতে অনেক বেশি location দরকার নেই। বরং একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে গিয়ে ঐ শর্তগুলো মেনে শ্যুটিং করা সম্ভব। এই ভাবনা মাথায় রেখেই এই গল্পটা লেখা। এই গল্পের ক্ষেত্রে একটা একেবারে নতুন জিনিষ হয়েছিল। একেবারে গল্পটা পেয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা হয়নি। প্রথমে সুজনদা এবং শমীতাদিও একটা আইডিয়া দিয়েছিলেন যে মোটামুটি এই রকম হবে। গল্প লেখা হচ্ছে, একই সঙ্গে সেই ভাবনা অনুযায়ী স্ক্রিপ্টও লেখা হচ্ছে। এই সময় আমিও শুনছিলাম যে এমন ভাবনা চিন্তা চলছে। তারপরে গল্পটা যখন চূড়ান্ত হল, তখন ওঁরা, মানে Hoichoi কর্তৃপক্ষ এমন একটা location বাছলেন যে একটা compound এর মধ্যেই সব কিছু পাওয়া যাবে। তখন আমাদের তো একটা bubble এর মধ্যে শ্যুট করতে হচ্ছিল, আমরা বাইরে যেতে পারছি না। বহরমপুরে নতুন একটা হোটেল ভাড়া করা হল। সেখানে শুধু আমরা মানে আমাদের পুরো ইউনিটটাই আছি, আর কেউ নেই। সেখান থেকে গাড়িতে করে আমরা ঐ location যেতাম এবং শ্যুটিং করতাম। শুনলে এখন অবাক লাগবে যে বাড়িটি দেখানো হয়েছে সেই বাড়িটিতো বটেই, তা ছাড়া গল্পের অন্য location, যেমন উকিলের বাড়ি বা আমি মাছ ধরছি একটি পুকুরপাড়ে বসে, সেগুলো ঐ একই compound-এর মধ্যেই ছিল। ওটা মুর্শিদাবাদের একটা দর্শনীয় স্থান, কাঠগোলাপের বাগানবাড়ি। ওখানে আগেও অনেক শ্যুটিং হয়েছে। আমাদের পুরো শ্যুটিং, এমনকি ঐ যে রাস্তা দিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছি, সব কিছু ওই কম্পাউন্ডের মধ্যেই হয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্যই একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ঐ যে পুরো ইউনিট একসঙ্গে থাকছে, কাজ করছে এবং খুব অল্প কদিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে একসঙ্গে আবার ফিরে যাচ্ছে সেটা আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত bonding তৈরি করেছিল। তাই আমাদের সবার কাছেই ঐ অভিজ্ঞতা খুব স্মরণীয়।
ভাস্কর – সুজনবাবুর সঙ্গে আড্ডার কোন স্মৃতি আছে? আমরা তো জানি ওঁর দারুণ রসবোধ ছিল। সেরকম যদি আমাদের কিছু বলেন?
অনির্বাণ – সুজনদার সঙ্গে যে সব আড্ডা, তা মুখোমুখি বসেই হোক, টেলিফোনেই হোক বা text exchange করেই হোক, তা সবসময়ই দারুণ উপভোগ্য। ঐ যে রসবোধের কথা বললেন না – ঐরকম শিক্ষিত, মার্জিত বুদ্ধিসম্পন্ন রসবোধযুক্ত বাঙালি প্রজাতি তো প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। সুজনদারা হয়তো সেই প্রজাতির অন্যতম শেষ প্রতিনিধি। এখন আমাদের বাঙালি সম্বন্ধে আইডিয়া খুব পালটে গেছে। আর সুজনদার মধ্যে ঐ রসবোধ একদম ভরপুর ছিল। আমাদের সব বিষয় নিয়েই খুবই মজা হত যেমন ঐ আগে যেটা বললাম যে উনি বলেছিলেন ‘তুমি আমার মধ্যে ঐ গণ্ডগোলটা পাকিয়ে দিয়েছ।’ আমি খুব মিশুকে মানুষ না, কিন্তু যাদের সাথে আমার মনের মিল হয় তাদের সাথে আমি কথা বলতে পারি, মজা করতে পারি। সুজনদার সাথে শেষবার কথা হয়েছে যখন ঐ কলকাতার একেনবাবু সিরিজটা মুক্তি পেল। ঐ সময় উনি কলকাতায় ছিলেন। Promotion event বা ডিনারে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। তারপর ওঁর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলেন, ওঁর বাড়িতে আমার যাবার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই তো এই দুর্ঘটনা। একবার ফোন করে নিমন্ত্রণ করলেন, বললেন, ‘এইসময় আসতে পারবে?’ আর আমি ওঁর ফ্ল্যাটের যে কমপ্লেক্স তার ঠিক পাশের কমপ্লেক্সেই থাকি। উনি বললেন, “তোমার তো হেঁটে আসতে দু-তিন মিনিট লাগবে। তোমার তো সাড়ে বারোটার বেশি দেরি হওয়ার কোন কারণ দেখতে পাচ্ছি না। অন্যদের আসতে দেরি হলেও তুমি চলে এস আগে।” আমি রাজি হলাম। তারপরে আবার একটু বাদে ফোন করে বললেন, ”শোন, আমি না সব কিছু এত ভুলে যাই! শমীতা বকাবকি করছে আমাকে। আমি সবাইকে ফোন করেছি কিন্তু বলতে ভুলে গেছি তারা যেন তাদের spouseকে নিয়ে আসে। তুমিও কিন্তু নিয়ে এস। আমি বললাম, “সুজনদা, নেই তো!” তখন বললেন, “তাহলে তোমার যে পার্টনার তাকে নিয়ে এস।” আমি বললাম, “সুজনদা, এত অল্প নোটিশের মধ্যে কি সম্ভব হবে? তবে যদি সম্ভব হয়, কথা দিলাম, নিশ্চয় নিয়ে যাব।” (একটু হেসে) আসলে সুজনদা সব বিষয়েই মজা করতেন। ওঁর খাবার restriction, চোখে কম দেখছেন – সেই নিয়েও মজা। প্রথম যখন উনি জানতে পারলেন যে আমি একেনবাবুর বই পড়িনি, তখন বললেন, “আরে কিছু ভাল লেখা নয়। না পড়ে ভালই করেছ।” তারপর আবার বললেন, “শোন, তুমি তো পড়নি। একেনবাবুর বই খুব একটা বিক্রি হয় না। তা এবারে কিনে পড়, আমার বই এক কপি বিক্রি হবে।” ওঁর সঙ্গে আড্ডার স্মৃতিগুলো আমি সারাজীবন চেরিশ করব।
ভাস্কর – শুনেছি আপনি জুনমাসে আমেরিকা যাচ্ছেন। যেহেতু একেনবাবুর মূল গল্পগুলি মার্কিন মুলুকের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা এই সফরে কি সেইভাবে দেখার ইচ্ছে আছে? এই ভ্রমণে কি আপনার অভিনয় সূত্রে একেনবাবুর কথাও আলোচিত হবে?
অনির্বাণ – হ্যাঁ। জুনমাসে আমি মার্কিন মুলুকে যাচ্ছি মূলতঃ দুটো কারণে। প্রথম কারণ – একটি নাটকের অভিনয় যেটি নিউ জার্সি ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গাতে অভিনীত হবে। আর দ্বিতীয় কারণ আমি যাচ্ছি NABC তে যেখানে আমি ঐ অনুষ্ঠানে একেনবাবুর সিনেমাকে represent করব। সুতরাং আমার যাওয়ার পেছনে একটি মূল কারণ একেনবাবু। ওখানে একেনবাবুর ভক্ত আর অনুরাগীদের কাছে একেনবাবুকে – ওয়েবসিরিজ এবং ফিল্ম উভয়তই represent করা। OTTর একটা বড় সুফল তো সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ আমাদের কাজ দেখতে পান। তাই একেনবাবু ওয়েবসিরিজ বেরনোর পর থেকে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে প্রচুর শুভেচ্ছা পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি। তাঁরা এটাও জানিয়েছেন তাঁরা আরো দেখতে চান। সেই আনন্দের পরিমাণ বলে বোঝানো মুশকিল। সুজনদাও সেটা জানতেন। আমি যা যা জানতে পারতাম, সুজনদার সাথে share করতাম। এবার যখন দেখা হল তখন সুজনদা জানালেন, “আমি অত দূরে বসে টের পেতাম না, কিন্তু এখানে এসে দেখছি কী বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে!” মানে উনিও খুবই খুশি হয়েছিলেন মনে হয়। সুতরাং, এই যে আমার জুন মাসের আমেরিকা সফর, সেখানে একেনবাবু জুড়ে থাকবেন আমার সঙ্গে।
ভাস্কর – আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ‘অবসর’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী এবং পাঠকদের তরফ থেকে।
চিত্রঋণ –
সুজন দাশগুপ্ত ও অনির্বাণ চক্রবর্তীর সমস্ত ছবি অনির্বানের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে।
একেনবাবু সংক্রান্ত ছবিগুলি Hoichoi এর সৌজন্যে প্রাপ্ত।
1 Comment