মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও বাংলা থিয়েটার
১৮৩১সালে প্রসন্নকুমার ঠাকুরের নারকেলডাঙার ‘হিন্দু থিয়েটার’ এবং অব্যবহিত পরে ১৮৩৫এ নবীন বসুর শ্যামবাজারের থিয়েটারে ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাটকে স্ত্রী-চরিত্রে পুরুষের বদলে প্রথমবার নারীর অভিনয়; বা নতুনবাজারে চড়কডাঙায় রামজয় বসাকের বাড়িতে ১৮৫৭ সালের মার্চ মাসে বাংলার প্রথম সার্থক প্রহসন রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’এর মঞ্চায়ন— এ সবই বাংলা ও বাংলার থিয়েটারে লিয়েবেদেফের ‘দি বেঙ্গলী থিয়েটার’এর (১৭৯৫) মতো দিকচিহ্ন হলেও কোনো স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করতে অসমর্থ হয়েছিল বলা যায়, বাংলা নাটক তখনও ধনীমানুষের শৌখিন খেয়ালের বাইরে বেরোতে পারেনি। তার জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরো কিছুদিন, যদ্দিন না পাইকপাড়ার রাজভ্রাতৃদ্বয় প্রতাপচন্দ্র ও ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ তাঁদের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িতে বহু টাকা ব্যয়ে স্থাপন করলেন স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ। রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর হলেন তার মুখ্য উপদেষ্টা। তাঁরই উদ্যোগে ওরিয়েন্টাল থিয়েটারের কলাকুশলী, যাঁরা ওরিয়েন্টালে ইংরেজি নাট্যে অংশগ্রহণ সুত্রে আধুনিক মঞ্চব্যবস্থা, মঞ্চোপকরণ ব্যবহার ও অভিনয়কলা সম্পর্কে অবহিত— এমন অনেকেই এসে জুটলেন বেলগাছিয়া নাট্যশালায়। অভিজ্ঞ ইংরেজ শিল্পীদের দিয়ে আঁকানো হলো দৃশ্যপট, পাদপ্রদীপে গ্যাসের আলো। নেপথ্যে ব্যবহৃত করা শুরু হলো দেশীয় ও বিদেশী যন্ত্রানুসঙ্গে ঐক্যতানবাদ্য। শ্রীহর্ষের সংস্কৃত নাটক থেকে বাংলা অনুবাদ করে দিলেন ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ খ্যাত ‘নাটুকে’ রামনারায়ণ (তর্করত্ন); শোনা যায় নাট্যকার হিসেবে তিনি দুই শত টাকা সাম্মানিক পেয়েছিলেন! এই নাটকের গীতরচনা করলেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের শিষ্য গুরুদয়াল চৌধুরী। ৩১শে জুলাই ১৯৫৮, এই ‘রত্নাবলী’ নাটকের অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু হলো বেলগাছিয়া নাট্যশালার।
এই ঘটনার মাত্র দুই বছর আগে (১৮৫৬) পিতৃবিয়োগহেতু মাদ্রাজে শিক্ষকতা ছেড়ে কোলকাতায় ফিরে এসেছেন এক যুবক। যে যুবক ধনীর দুলাল হয়েও আজন্ম বিদ্রোহী; পূর্ববঙ্গের কপোতাক্ষ-তীরবর্তী প্রত্যন্ত সাগরদাঁড়ি থেকে পিতৃইচ্ছায় ব্যারিস্টার হওয়ার লক্ষ্যে কোলকাতায় হিন্দু কলেজে যাঁর পশ্চিমী আদবকায়দা ও শিক্ষালাভ; ওই হিন্দু কলেজেরই শিক্ষক ও কবি ডেভিড রিচার্ডসনের দীক্ষায় ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনে যাঁর রুচি। বনেদী পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে কোলকাতার ওল্ড মিশন চার্চে (কোলকাতার সবচেয়ে পুরনো প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ) ধর্মপরিবর্তন করে ক্রিশ্চান হওয়া (১৮৪৩), ফলশ্রুতি পিতৃসখ্যচ্যুতি— পিতা সক্রোধে ত্যাজ্যপুত্র করে দিলেন তাঁকে! ব্যারিস্টারি মাথায় উঠল, ভাগ্যান্বেষণে ঘর ছেড়ে সুদূর মাদ্রাজ-গমন (১৮৪৭)। মাদ্রাজেই দারপরিগ্রহ (১৮৪৮), পাত্রী এক অনাথা ইংরেজ তরুণী রেবেকা থম্পসন। তাঁদের চারটি সন্তান। যুবকটির ঝুলিতে তখন একটি মাত্র প্রকাশিত কাব্য, তাও আবার ইংরেজিতে–– দ্য ক্যাপটিভ লেডি (১৮৪৯)।
এদিকে সদ্য-প্রতিষ্ঠিত বেলগাছিয়া নাট্যশালায় মঞ্চসজ্জা-আলো-আবহ-অভিনয়গুণে ‘রত্নাবলী’ দর্শকের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দিল। নাটক দেখে স্বয়ং ছোটলাট ফ্রেডরিক হ্যালিডে সায়েব অভিনন্দন জানালেন। পণ্ডিতপ্রবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাজা রামমোহনের পুত্র প্রখ্যাত ব্যবহারজীবী রমাপ্রসাদ রায় সহ মোকাম কলিকাতার নামজাদা সুধীবর্গ এই নাটক দেখে আপ্লুত হলেন। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ (০৫/৮/১৮৫৮) পত্রিকা ‘রত্নাবলী’ প্রযোজনাকে ‘চৌরঙ্গী বা ‘সাঁ সুসি’ থিয়েটারের ইংরেজি প্রযোজনাগুলির সমকক্ষ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। প্রধান অভিনেতা কেশবচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়কে অনেকেই ‘বাংলার গ্যারিক’ অভিধায় ভূষিত করলেন।
বাংলাভাষা বুঝতে অপারগ ইংরেজ, পার্সি, ইহুদি গণ্যমান্য দর্শকবৃন্দের সুবিধার্থে নাটকের ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয় যা অভিনয়ের আগে বিলি করা হতো। বাঙালী-অবাঙালী দর্শকের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে-ওঠা এই নাটকটি চালিয়ে যেতে সিংহ-রাজভ্রাতৃদ্বয় খরচে কার্পণ্য করেননি, ‘রত্নাবলী’র ইংরেজি অনুবাদককে তাঁরা পাঁচ শত টাকা সম্মানদক্ষিণা প্রদান করেন। অনুবাদক ইংরেজিশিক্ষায় সবিশেষ পারঙ্গম সেই মাদ্রাজফেরত বাঙালী-ক্রিশ্চান যুবক। ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেই বাংলা নাট্যজগতে সেই যুবকের পদার্পণ ও বেলগাছিয়া নাট্যশালার হর্তাকর্তা-কুশীলবদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা। আদ্যন্ত পাশ্চাত্য সভ্যতা-সাহিত্য-সংস্কৃতিবিলাসী মানুষটির মনে বাংলা নাটক লিখবার প্রতীতি জন্মাবার পিছনে এহেন অন্তরঙ্গতা একটা বড় কারণ। কিন্তু তিনি ইংরেজিশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্য আধুনিকতা ও যুক্তিবাদ আয়ত্ত করেছেন, সংস্কৃতনাট্য থেকে অনুদিত আড়ষ্ট বাংলা নাটকে তাঁর মন মজবে কেন? অচিরেই ‘রত্নাবলী’ নাটক নিয়ে উচ্ছ্বাসবন্যার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি এবং নিজেই মৌলিক বাংলা নাটক লিখবেন এমন প্রতিজ্ঞা করে বসলেন! অথচ নিজের বাংলাভাষা যে যথেষ্ট দুর্বল, ফলে এমত প্রতিজ্ঞার কথা শুনে নিকট-বন্ধু গৌরদাস বসাকও হাসি চাপতে পারলেন না! কিন্তু প্রিয়বন্ধুর দ্বারা উপহসিত হয়েও এতটুকু টোল খেলো না সেই মানুষটির আত্মবিশ্বাস। গৌরদাসই পরে জানিয়েছেন, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’ থেকে কয়েকটা বাংলা আর সংস্কৃত বই আনিয়ে তাতে ডুব দিলেন সেই যুবক। কয়েক মাসের মধ্যেই সেই যুবক লিখে ফেললেন বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক মৌলিক নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯)! শুধু তাই নয়, বঙ্গনাট্যের অবস্থা দেখে যারপরনাই বিরক্ত তিনি ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের মুখবন্ধে সটান লিখে দিলেন— ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে/ মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে/ নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়!’ সাধে কি বিদ্রোহের অন্য নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত!
সাগরদাঁড়ির রাজনারায়ণ দত্তের পুত্র মধুসূদন কোলকাতায় ধর্ম পরিবর্তনের পরেও পিতৃদত্ত নাম বদলাননি, কিন্তু ১৮৪৮এ মাদ্রাজে রেবেকাকে বিবাহ করবার সময়ে তিনি ক্রিশ্চান নাম ‘মাইকেল’ জুড়ে নেন, তখন থেকেই তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনিই ধুন্ধুমার ফেলে দিলেন বাংলা রঙ্গালয়ে! সংস্কৃত থেকে আড়ষ্ট অনুবাদ আর পৌরাণিক পালার অবিশ্রান্ত কচকচির পদ্মবনে মধু যেন মদমত্ত হস্তী বিশেষ! উনিশ শতকের ঘুণধরা ও বিকলাঙ্গ সমাজের বিরুদ্ধে এক মূর্তিমান বিদ্রোহ, তাঁর নিজেরই ভাষায়— ‘too early for the age’! বাংলা নাট্যজগতের প্রথম ‘রেবেল’, যাবতীয় সেকেলেপনার জঞ্জাল উড়িয়ে-নিয়ে-যাওয়া দুর্দান্ত ঘূর্ণিবাতাস! বন্ধু গৌরদাসকে চিঠিতে তিনি লিখেছেন— ‘..and that it is my intention to throw off the fetters forged for us by a servile admiration of everything Sanskrit!’
শর্মিষ্ঠা-দেবযানী-যযাতির উপাখ্যান থেকে মধুসূদন-বিরচিত নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ কিন্তু মহাভারতের এই বিশেষ কাহিনির শুরু ও শেষ মেনে চললো না; শুরুই হলো শেষের দিক থেকে, শর্মিষ্ঠার নির্বাসন থেকে শুরু হয়ে যযাতির জরামুক্তিতে নাটক শেষ হয়। ফলে দেবযানীর বদলে শর্মিষ্ঠা হয়ে উঠলেন নাটকের প্রধানা চরিত্র! লক্ষ করলে দেখা যাবে, মাইকেলের পরের দু’টি নাটকও কিন্তু পুরান-মহাভারত আশ্রিত ও নায়িকাকেন্দ্রিক, ‘পদ্মাবতী’ (১৮৫৯) এবং ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১)। এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, এই নাটকগুলোর ক্ষেত্রে মধুসূদন মূল কাহিনির প্রতি মোটের উপর বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছেন, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’এর মতো মহাকাব্যিক কাহিনির বিনির্মাণের দুঃসাহস কিন্তু নাটকগুলি লিখতে গিয়ে তিনি দেখাননি।
সত্যি বলতে এ তিনটি নাটক বা মৃত্যুর ঠিক আগে লেখা ‘মায়াকানন’ নয়, বরং ১৮৬০ সালে পর পর লেখা প্রহসন দু’টিই বোধকরি মাইকেল মধুসূদনের নাট্যকীর্তির শ্রেষ্ঠ স্বাক্ষর। ইয়ংবেঙ্গলের উচ্ছৃঙ্খলতাকে পরিহাস করে মধুসূদন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৬০) প্রহসনটি রচনা করেন, নব্যশিক্ষিত বঙ্গযুবাদলের হাতে সাধারণ মানুষের নিগ্রহের চিত্রও এই প্রহসনে স্থান পেয়েছে। অথচ তিনি নিজে যে ইয়ংবেঙ্গল ‘গোত্রভুক্ত’! তা সত্ত্বেও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এই নব্যবঙ্গযুবাদলের মাত্রাজ্ঞানহীন নৈরাজ্য আর তার ঝড়ের ঝাপটা থেকে অন্ধ অচলায়তন রক্ষায় রক্ষণশীল সমাজের পশ্চাৎপদ রীতিনীতি আচারব্যবহারকে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরা— এই ভয়ানক দ্বন্দ্বটাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে হাসিতে-ব্যঙ্গে-কৌতুকে ফুটিয়ে তুলেছেন মধুসূদন। এমন দুই যুবা কালীনাথ ও নবকুমারের কথোপকথনে ‘বাংরেজি’ খিচুড়ি–– ‘আমার father yesterday কিছু unwell হওয়াতে doctorকে call করা গেল, তিনি একটি physic দিলেন। Physic বেশ operate করছিল, four five times motion হল, অদ্য কিছু better বোধ কচ্চেন’! বাংলায় ‘মিথ্যেবাদী’ বললে এঁরা পাত্তা দেন না, কিন্তু ইংরেজিতে ‘লায়ার,…ট্রাইফলিং…’ বললে এঁদের গায়ে তৎক্ষণাৎ ফোস্কা পড়ে! ডিরোজিও সায়েবের অনুসারী এই তথাকথিত বিদ্রোহী বাকসর্বস্ব যুবাদলের লক্ষ্য যে সমাজসংস্কার বা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধাচারণ নয়, বরং এঁরা এক গ্লাস মদ গিলেই ভাবেন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিশাল জেহাদ ঘোষণা করা গেল; এঁরা যে আসলে আদ্যন্ত ইন্দ্রিয়বিলাসী, উচ্ছৃঙ্খল এপিকিউরীয় নীতিই যে এঁদের চালিকাশক্তি তা অব্যর্থ চিনে নিয়ে নবকুমারের সংলাপে ঢুকিয়ে দিয়েছেন মধুসূদন— ‘ইন দ্য নেম অফ ফ্রীডম, লেট আস এঞ্জয় আওয়ারসেলভস!’ আরেকটা আশ্চর্য কথা, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ গোটা নাটকটা কিন্তু মাত্র একটা দিনের ঘটনা নিয়ে লেখা! ‘বিদ্যাসুন্দর’, ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলা’ আর ‘রত্নাবলী’র যুগের নাট্যমহলে এ এক অভূতপূর্ব ও অত্যাধুনিক ব্যাপার!
মাইকেলের প্রথম প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’য় যদি ব্যঙ্গের বর্ষাফলকের লক্ষ্য থেকে থাকে যুবসম্প্রদায়, একই সঙ্গে লেখা ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’তে (১৮৬০) তিনি বেছে নিলেন সম্পূর্ণ উলটো দিক–– এবার তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য হল ভণ্ড, ব্যভিচারী, অত্যাচারী প্রাচীন সমাজ, ‘ভক্তপ্রসাদ’ যার প্রতিভূ। ফলে নাটকের পটভূমিও বদলে গেল, প্রথমটির পটভূমি ইংরেজি শিক্ষিত যৌবনের লীলাভূমি শহর কোলকাতা, আর এটির হলো প্রাচীন সমাজের দুর্ভেদ্য দুর্গ বাংলার পল্লীগ্রাম। জমিদার ভক্তপ্রসাদ গরীব চাষির খাজনা এক কানাকড়িও মাপ করেন না, অথচ গরীব কৃষক হানিফের স্ত্রী ফতিমার রূপবর্ণনা শুনে নালেঝোলে একাকার হয়ে ভারতচন্দ্র আওড়াতে থাকেন। মুসলমানির সংসর্গলাভে অভিসারে যেতে নিজেকে নব্যযুবক করে সাজিয়ে তোলেন, আবার তিনিই হিন্দু ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষায় দারুণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রহসনের শেষে সর্বসমক্ষে নিজের স্বরূপ প্রকাশ হয়ে গিয়ে ভক্তপ্রসাদের চৈতন্যোদয় – ‘বাইরে ছিল সাধুর আকার/ মনটা কিন্তু ধর্ম্ম ধোয়া/ পূণ্য খাতায় জমা শূন্য/ ভন্ডামিতে চারটি পোয়া/ শিক্ষা দিলে কিলের চোটে/ হাড় গুঁড়িয়ে খোয়ের মোয়া/ যেমন কর্ম্ম ফললো ধর্ম্ম/ বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁয়া!’ (মূল টেক্সটের বানান অপরিবর্তিত রাখলে এই রকমই দাঁড়ায়।)
প্রহসন দু’টো পর পর ছাপা হতেই তুমুল শোরগোল পড়ে যায়, প্রভাবশালী সমাজপতিরা এ দু’টো যাতে কিছুতেই স্টেজে না আসে তার জন্য কলকাঠি নাড়তে শুরু করে। ঘটনা এটাই যে, এমন সার্থক প্রহসনের প্রথম অভিনয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হল আরো পাঁচটা বছর, ধনী বা রাজারাজড়ার স্পনসরশিপের সখের থিয়েটারের ‘প্রাসাদ-মঞ্চ’-এর কাল পেরিয়ে সাধারণ নাট্যশালার আবির্ভাব না হওয়া অবধি। ১৮৬৫র ১৮ই জুলাই শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি (যার কার্যনির্বাহক কমিটির সভাপতি ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ) শেষ পর্যন্ত ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ মঞ্চস্থ করেন। কাছাকাছি সময়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেও ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ মঞ্চস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায় ও তাতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নিজে পুলিশ সার্জেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৮৬৬ সালে আড়পুলি নাট্যসমাজ ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রথম মঞ্চস্থ করে। প্রসঙ্গত, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’এরও একই হাল হয়েছিল, ১৮৬০এ লেখা হয়ে গেলেও মঞ্চায়ন হতে হতে সেই ১৮৭২এ ন্যাশনাল থিয়েটার।
‘শর্মিষ্ঠা’র তুমুল সাফল্যের পরে বেলগাছিয়া নাট্যশালা তার প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের অকালমৃত্যুতে (১৮৬১) হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়। ভাগ্যবিড়ম্বনা যে মধুসূদনের জীবনের পরতে পরতে! ফলে মধুসূদনের পরের নাটক ‘পদ্মাবতী’ বা ‘কৃষ্ণকুমারী’ আর দু’-দু’টো প্রহসনের একটারও এই নাট্যশালায় মঞ্চায়ন সম্ভব হয়নি। ঈশ্বরচন্দ্রের প্রয়াণ এবং একই সঙ্গে সমাজপতিদের চাপে বেলগাছিয়া নাট্যশালায় প্রহসন দু’টি সহ তাঁর পরের নাটকগুলির একটাও মঞ্চস্থ না হওয়াটা মধুসূদনের কাছে খুবই বেদনাদায়ক হয়েছিল। এমনকি চরম হতাশায় এরপর থেকে তিনি বাংলা ছেড়ে হিব্রু বা চীনা ভাষায় লেখালেখি করবেন, এমন অভিমানের কথা তিনি বন্ধু নটকূলচূড়ামণি কেশবচন্দ্রকে চিঠিতে লিখে জানিয়েছিলেন।
৭ই ডিসেম্বর ১৮৭২, চিৎপুরে মধুসূদন সান্যালের ‘ঘড়িওয়ালা বাড়ির’ সামনের উঠোনে ধর্মদাস সুর ও তাঁর সহকারী ক্ষেত্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় নির্মিত মঞ্চে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের জন্ম। এর আগে ধনীদের শখের নাট্যশালায় সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না, কিন্তু এই সাধারণ রঙ্গালয়ে জনসাধারণের ‘টিকিট কেটে’ নাটক দেখবার ব্যবস্থা হলো। এ হেন বাংলা ‘সাধারণ’ রঙ্গালয়ের কল্পনা প্রথম করেছিলেন মধুসূদন। তিনি সম্যক বুঝেছিলেন, ধনীর অর্থানুকুল্যে চলা শখের থিয়েটারে কোনোদিনও নাট্যকারের স্বাধীন সত্তার বিকাশ সম্ভব নয়। আর সেটা না হলে থিয়েটারের প্রাণভোমরাই তো বিশ বাঁও জলের নীচে গুপ্তকুঠুরিতে বন্দী হয়ে থাকবে! তাই থিয়েটারকে ধনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করবার জন্য তিনি ‘চাঁদা তুলে’ নাটমঞ্চ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। দীনবন্ধু মিত্রের পর পর তিনটি নাটক, ‘সধবার একাদশী’, ‘জামাই বারিক’ ও বিশেষ করে ‘লীলাবতী’র (১৮৭২) দুর্দান্ত সাফল্য সাধারণ রঙ্গালয়ের উদ্যোক্তাদের মনে দারুণ এক বিশ্বাসের জোর এনে দিল। এবং মাইকেল মধুসূদন এক রাতের মধ্যে গোটা ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিলেন! তিনি ছাড়া আর কে পারতেন এই ঐশ্বরিক কর্ম? শোনা যায় বিশ্রামহীন সেই ‘অনুবাদের রাতে’ মধুর জ্বলন্ত প্রতিভার চুল্লীতে গোটা এক কার্টেন বিয়ার জ্বালানি হিসেবে দিতে হয়েছিল!
সাধারণ রঙ্গালয় স্থাপনের কিছু আগে ‘সধবার একাদশী’ (১৮৬৬) প্রহসনে দীনবন্ধু মিত্র তৎকালীন ইয়ংবেঙ্গল দলের উচ্ছলতা ও অনাচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র পেশ করলেন। এ প্রহসনে সে যুগের কলকাতায় উচ্চশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত যুবসম্প্রদায়ের মাত্রাতিরিক্ত পানাসক্তি, লাম্পট্য, পরস্ত্রীহরণ প্রভৃতি চরিত্রভ্রষ্টতার কাহিনি আশ্চর্য সরসতায় বর্ণিত হয়েছে। নাটকে ইয়ংবেঙ্গলের প্রতিভূ নিমচাঁদ দত্ত-র কারুণ্য-বিষাদ-নৈরাশ্য অনস্বীকার্য, আর তাতেই ফুটেছে মারকাটারি কমেডি, অবিরত হাস্যকৌতুকের মধ্যে করুণরসের অন্তসলিলা ফল্গুধারা গোটা নাটকটিকে সিক্ত করে রেখেছে। নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, মাইকেল মধুসূদন তাঁর প্রহসন দু’খানি দিয়ে সযত্নে সাজিয়ে দিয়েছিলেন দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’র লঞ্চিং প্যাড!
বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটারের হয়ে গিরিশচন্দ্রের নির্দেশনায় ১৮৬৮ সালে অক্টোবরে সপ্তমী পুজোর রাতে ‘সধবার একাদশী’র প্রথম অভিনয়। নিমচাঁদ করলেন স্বয়ং গিরিশ আর কেনারাম অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। নিমচাঁদের ভূমিকায় গিরিশের অসামান্য অভিনয় দেখে বিস্ময়াবিষ্ট রসরাজ অমৃতলাল লেখেন–– ‘মদে মত্ত পদ টলে/ নিমে দত্ত রঙ্গস্থলে/ প্রথম দেখিল বঙ্গ নব নটগুরু তার!’ সমালোচকেরা বলেন, ‘সধবার একাদশী’তে নিমচাঁদ দত্তই আসলে মাইকেল মধুসূদন দত্ত! দীনবন্ধু কিন্তু তা স্বীকার যাননি কখনো। বরং বলেছিলেন–– ‘মধু কি কখনো নিম হয়?’ অথচ দীনবন্ধুর সামনে ইয়ংবেঙ্গলের শ্রেষ্ঠ আইকন মাইকেল মধুসূদন ছাড়া আর কে ছিলেন? যে অপরিমিত মদ্যাসক্তি মুধুসূদনের জীবনের যাবতীয় দুর্দশার মূলে, নিমচাঁদেরও সর্বনাশ করেছে সেই মদ! বেহুঁশ নিমচাঁদ যখন মদের ঘোরে বলে–– ‘I read English, write English, talk English, speechify in English, think in English and dream in English!’–– তখন সেই নিমচাঁদ আসলে কে, তার কতটা ‘নিম’ আর কতটাই বা ‘মধু’, তা সেকালের দর্শকদের বুঝতে একচুল অসুবিধে হয়নি।
বাংলাভাষায় প্রথম সার্থক মৌলিক নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’র (১৮৫৮) মুখবন্ধে বাংলা নাট্যশালার প্রথম যুগের সেই নাট্যোদ্যমী মানুষদের উদ্দেশে মধুসূদন প্রণিপাত জানিয়ে লিখেছিলেন— ‘…should the drama ever again flourish in India, posterity will not forget these noble gentlemen— the earliest friends of our rising National Theatre.’ পাক্কা একশ-বারো বছর পরে এই কথাগুলোর বঙ্গানুবাদ করেই বোধহয় ‘টিনের তলোয়ার’ নাটকের মুখবন্ধে (প্রথম মঞ্চায়ন ১৯৭১) দেখতে পাচ্ছি উৎপল দত্ত লিখেছেন— ‘বাংলা রঙ্গালয়ের শতবার্ষিকীতে প্রণাম করি সেই আশ্চর্য মানুষগুলিকে— যাঁহারা কুষ্ঠগ্রস্ত সমাজের কোনো নিয়ম মানেন নাই, সমাজ যাঁহাদের দিয়াছিল অপমান ও লাঞ্ছনা।… যাঁহাদের মদ্যসিক্ত অঙ্গুলিস্পর্শে ছিল বিশ্বকর্মার জাদু। যাঁহাদের উল্লসিত প্রতিভায় সৃষ্টি হইল বাঙালীর নাট্যশালা, জাতির দর্পণ, বিদ্রোহের মুখপাত্র। যাঁহারা আমাদের শৈলেন্দ্র-সদৃশ পূর্বসূরি।’ কি অত্যাশ্চর্য পরম্পরা!
১২৮৭ সনের ৩০শে চৈত্র মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এক বক্তৃতায় মাইকেল মধুসূদন সম্পর্কে বলেছেন— ‘তাঁহার জীবন শোকান্ত মহাকাব্য, তাঁহার গ্রন্থগুলিও সেইরূপ শোকান্ত মহাকাব্য।… তাঁহার প্রহসন দুইখানি আজিও প্রহসনের অগ্রগণ্য, তাঁহার ন্যায় সর্বতোমুখী প্রতিভাশালী ব্যক্তি অতি বিরল’। অমিত প্রতিভাধর ও একই সঙ্গে চূড়ান্ত পানাসক্ত মাইকেলের ব্যক্তিজীবন মোটেই আমবাঙালীর মত নিস্তরঙ্গ ছিল না, উত্থানের অমিতাচার ও পতনের ভয়াবহ অভিঘাত প্রতি পদেই। তাঁর চরম আর্থিক দুঃসময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের করুণাঘন সহায়তার কথা সুবিদিত। মাইকেলের সঙ্গে তাঁর প্রথমা স্ত্রী রেবেকার বিচ্ছেদের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু জানা যায়, তাঁকে চার ছেলেমেয়ের সঙ্গে মাদ্রাজেই রেখে কোলকাতায় ফিরে এসেছিলেন মাইকেল। এবং ওই ‘শর্মিষ্ঠা’র সাফল্যের কালেই ১৮৫৮ সালে তিনি ফরাসী এমেলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়ার সখ্য গ্রহণ করেন। এমেলিয়া আমৃত্যু এই মানুষটির সঙ্গে ছিলেন, মাইকেলের প্রয়াণের মাত্র তিনদিন আগে তিনি নিজে পরলোকগমন করেন (২৬ জুন, ১৮৭৩)। রেবেকা মাদ্রাজেই থেকে যান, ১৮৯২ সালে মাদ্রাজেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে।
প্রহসন দু’টি বাদ দিলে নাট্যকার মধুসূদনের শ্রেষ্ঠ কাজ নিঃসন্দেহে ‘কৃষ্ণকুমারী’। এটিকে প্রথম সার্থক বাংলা ট্র্যাজেডি-নাট্য বলতে দ্বিধা থাকবার কথা নয়। পুরানাশ্রিত কাহিনি নিয়ে ‘শর্মিষ্ঠা’ বা ‘পদ্মাবতী’তে মধু ভাষা বাংলা রেখেছেন বটে, কিন্তু সংস্কৃত নাটকের ঠাট বা বাঁধুনির প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। টড সায়েব রচিত রাজপুত-ইতিহাস অবলম্বনে ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকে এসে নাট্যকার মধুর কলম যেন স্বকীয় প্রতিভার ঔজ্জ্বল্যে ঝকমকিয়ে উঠল। এই সময়ে কাছের বন্ধুবান্ধবকে লেখা চিঠিপত্র দেখলেই বোঝা যায় ইউরোপীয় নাটকের প্রভাবে ক্রমশঃ তাঁর নাট্যকার-সত্তা পরিণত হয়ে উঠছে— ‘In great European drama you have seen stern realities of life, lofty passion and heroism of sentiment.’ এর বিপরীতে দেশজ নাটকের ক্ষেত্রে, ‘With us it is all softness, all romance.’ এবং ফলস্বরূপ মাইকেলের মতে বাংলা নাটকে— ‘We forget the world of reality and dream of fairylands.’ তিনি অকপটে জানিয়েছেন, তাঁর প্রথম দুই নাটকে ওই চিরাচরিত দেশজ (সংস্কৃত) ঐতিহ্যের প্রভাবে তিনি নিজের কবিসত্তা ছেড়ে বেরোতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ‘কৃষ্ণকুমারী’ লিখতে বসে তিনি সচেতন প্রয়াস করেছেন যাতে তাঁর নাট্যকার-সত্তাকে ঐতিহ্যগত কাব্যবশ্যতা গ্রাস করতে না পারে; তাঁর নাটকের চরিত্রগুলি যেন বাস্তব জীবনবোধ-জারিত সংলাপ বলে, শুধু শ্রুতিমধুর কাব্যঝঙ্কারে বাস না করে— ‘I shall endeavour to create characters who speak as nature suggests and not mouth-mere poetry.’
১৮৬১ সাল মধুসূদনের জীবনপ্রবাহে বিশেষভাবে স্মরণীয়— ওই বছরেই তিনি রচনা করেন তাঁর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’ ও শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য ‘ব্রজাঙ্গনা’। এই সময় থেকেই বস্তুজগতের সুতীব্র ঘাতপ্রতিঘাত, ব্যক্তিজীবনে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তাঁকে করে তুলেছে বিষাদতরীর নাবিক। তাঁর রচনাতেও তারই ছায়াপাত ঘটছে, বাকি সব ছাপিয়ে নেমে আসছে বিচ্ছেদ-বিষাদ-শোকের আবছায়া। মাইকেল যেন নিজেই হয়ে উঠছেন অ্যারিস্টটলের ‘Poetics’এর বিয়োগান্তক নায়ক— যে হয়তো চরিত্রগত ভাবে দুষ্কর্মকারী বা পাপী নয়, কিন্তু নিজেরই অজ্ঞানে আপন ভ্রান্তিবশত জীবনে টেনে এনেছে চরম দুর্বিপাক— ‘অয়দিপাউস’এর মতো! তাঁর শেষ রচনা নাটক ‘মায়াকানন’ যা তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয় (১৮৭৪), তাতেও সেই দুর্বিপাকের অমাবস্যা— ‘আসিছে রজনী, নাহি যার মুখে কথা বায়ুরূপ স্বরে, নাহি যার কেশপাশে তারা রূপ মণি!’ আগে ‘কৃষ্ণকুমারী’ ট্র্যাজেডি হয়েও অন্ধকার ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ধারণ করেছে, কিন্তু ‘মায়াকানন’এ মধুসূদন যেন নিষ্করুণ ও নিদারুণ ভবিতব্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা ক্লান্ত এক প্রাণ! তাঁর নিজের জীবনেও ততদিনে নেমে এসেছে নিঃসীম অন্ধকার; মহাকবি কি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর জীবননাট্যে মহাকালের যবনিকা কম্পমান?
মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গে বাগদেবীকে আবাহন করে মধু লিখেছেন— ‘তুমিও আইস, দেবি তুমি মধুকরী/ কল্পনা! কবির চিত্ত-ফুলবন-মধু/ লয়ে, রচ মধুচক্র, গৌড়জন যাহে/ আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি!’ ২৯শে জুন, ১৮৭৩ মাত্র ৪৯ বছর বয়েসে ভগ্নহৃদয়, প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় ‘দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন’ ‘জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম’, তেমনি অনির্বচনীয় চিরশান্তিতে ‘মহীর পদে মহানিদ্রা’য় বিলীন হন। তিনি দেবী সরস্বতীর প্রসাদধন্য মহাকবি, মৃত্যুর দেড়শ বছর পরে আজও তাই তাঁর নাট্য-প্রহসন-কাব্যের অমৃতসুধা গৌড়জন পান করে চলেছেন নিরবধি।
4 Comments