তখন ক্লাস এইট, ১৯৭৪ সাল। একদিন দুপুরে হঠাৎ ছুটি ঘোষণা হল – সৈয়দ মুজতবা আলী মারা গেছেন। তাঁর একটি স্মরণসভা হবে, তারপরে ছুটি।
আমার বেশ অবাক লাগলো, তখনো আমি নাম শুনিনি। যাইহোক, স্যরদের কথা শোনা যাক। আমাদের বিভিন্ন বাংলার শিক্ষকেরা তাঁর নাম করে বিভিন্ন পুস্তকের নাম করলেন – কটি নাম গেঁথে গেল – দেশবিদেশে, পঞ্চতন্ত্র চাচা কাহিনি আর শবনম। সবাই তাঁর সম্পর্কে বলছিলেন ভাষায় তাঁর সবিশেষ দক্ষতা নিয়ে।
আমার সাহিত্যগুরু ছিলেন আমার কাকা। কাকার আবার অনেক লেখককে পছন্দ ছিল না। কিন্তু মুজতবার কথা জিজ্ঞেস করতেই উচ্ছ্বসিত – ‘ওরকম লেখক হাতে গোনা।’ কি দিয়ে শুরু করবো বলতেই ‘দেশে বিদেশে’র নাম। সৌভাগ্যক্রমে বাড়ীতে ছিল একট পুরনো সংস্করণ। ব্যস, আর পায় কে?
সত্যি বলছি, সেই ছোট বয়সেই বইটি পড়ে অভূত আনন্দ পেয়েছিলাম। বইটি রুদ্ধ্বশ্বাসে পড়ার মত নয়, বরং বেশ দুলকি চাল আস্তে পড়লেই বেশি ভাল লাগে। এ এমন এক ভ্রমণকাহিনি যার প্রত্যেক পাতায় পাতায় অন্যরকম স্বাদ। মুজতবার হাত ধরে সেই সফরের শুরু।
|
সত্যি কথা বলতে সেই বয়সে আমি খুব কতিপয় ভ্রমণকাহিনিই পড়েছি। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সুবোধকুমার চক্রবর্তী প্রণীত ‘রম্যাণী বীক্ষ’। কিন্তু ‘দেশে-বিদেশে’ একেবারে অন্যরকম।
রম্যাণী-বীক্ষ তে সব ভ্রমণই ভারতের মধ্যে, সেখানে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস ও পুরাণের গল্প শুনিয়েছেন লেখক। কিন্তু এখানে একেবারে অন্যদেশে ভ্রমণ, তাও আবার ট্রেনে চড়ে। যে জায়গায় যাওয়া তাদের সঙ্গে ভারতের খুব যোগ ছিল, সেকথাও চলে আসবে পরে পরে। সেখানকার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় মুসলিম। তাদের আতিথেয়তা ও সৌজন্যবোধ মুগ্ধ করেছিল মুজতবাকে। প্রথম যাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় তার নাম আব্দুর রহমান।