সেকালের ছোটদের পত্রিকা ‘রামধনু’

সেকালের ছোটদের পত্রিকা ‘রামধনু’

বিখ্যাত রামধনু পত্রিকা

১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’ পত্রিকা দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলা সাময়িক পত্রের যাত্রা। উনিশ শতকের গোড়া থেকেই মিশনারিরা বাংলায় আসতে শুরু করেছিল খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। অবশ্য তার অনেক আগেই, ১৭৯৩ সালে, উইলিয়ম কেরী বাংলায় এসেছিলেন ওই একই কারণে। অশিক্ষায় নিমজ্জিত এদেশের লোকদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন। কুসংস্কার থেকে মুক্তি এবং মানসিক ব্যাপ্তি না ঘটলে ধর্মপ্রচার যে নিরর্থক হবে সে উপলব্ধিও তাঁদের হয়েছিল। তাই ওই সময়ে বহু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু কলেজ ও ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর কলেজ গড়ে ওঠে। মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার প্রয়াসে তাদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় তৈরি হয়। তবে এগুলি ছিল প্রায় সবই শহর কেন্দ্রিক। শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বালক বালিকাদের হাতে বিভিন্ন বিষয়ে রচিত পাঠ্যপুস্তক তুলে দিতে ১৮১৭ সালের ৪ঠা জুলাই স্থাপিত হয়েছিল স্কুল বুক সোসাইটি। এর পর তাঁদের নজর পড়ে পত্রপত্রিকা প্রকাশনার দিকে। বিভিন্ন জন্তুর ছবি সহ ছোট ছোট কবিতায় তাদের বর্ণনা করে সাময়িক পত্র ‘পশ্বাবলী’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে – ইংরাজি এবং বাংলা, দুটি ভাষাতেই এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল।

দীর্ঘ সময় ধরে ছোটদের জন্য যে সব পত্রিকা বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল ‘জ্ঞানোদয়’ (১৮৩১), ‘বিদ্যাদর্পণ’ (১৮৫৩), ‘সত্যপ্রদীপ’ (১৮৬০), ‘রহস্য সন্দর্ভ’ (১৮৬৩), ‘অবোধবন্ধু’ (১৮৬৬), ইত্যাদি। ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ‘বালকবন্ধু’র প্রকাশ ঘটে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। কিছু দোষত্রুটি থাকলেও এই পত্রিকাটি সেকালের প্রেক্ষিতে ছোটদের একটি আদর্শ পত্রিকা ছিল। তবে এসব পত্রিকায় বালক-বালিকাদের উপযুক্ত লেখা প্রকাশিত হলে মাঝে মাঝে প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী রচনাও স্থান পেত। গুরুগম্ভীর ভাষা ছোটদের কতটা আকৃষ্ট করত বলা শক্ত। এসব ঘাটতি কাটিয়ে উঠে ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারী প্রমদাচরণ সেনের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করে ছোটদের পূর্ণাঙ্গ মাসিক পত্রিকা ‘সখা।’ এরপর উল্লেখযোগ্য শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ‘মুকুল’ (জুন-জুলাই, ১৮৮৫)। ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর আগ্রহ ও উৎসাহ এই পত্রিকাটি প্রকাশনায় সাহায়্য করেছিল। বৈশাখ ১২৯২ (১৮৮৫ খ্রিঃ) বঙ্গাব্দে ঠাকুরবাড়ির জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সম্পাদনায় ‘বালক’ মাসিক পত্রিকার প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি সব দিক থেকেই ছোটদের উপযোগী হলেও স্থায়ী হয়েছিল মাত্র এক বছর, তার পর বড়দের পত্রিকা ‘ভারতী’র সঙ্গে এটি সংযুক্ত হয়ে যায়।

এইসব পত্রিকা যে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তা নয়। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বালিকা’ আর ‘যশোহর থেকে ‘সুখী-পাখী’ (১২৯৫ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে)। যশোহরেরই জেলা স্কুল থেকে নিবারণচন্দ্র কাব্যতীর্থের সম্পাদনায় ‘শুক-সারি’ (মাঘ, ১২৯৬) ও হাইলাকান্দি ছাত্রসখা সমিতির প্রচেষ্টায় ১২৯৮-এ ‘ছাত্রসখা’ বেরিয়েছে। রাজ্যেশ্বর গুপ্তের সম্পাদনায় চট্টগ্রাম থেকে ‘অঞ্জলি’র প্রকাশ বৈশাখ ১৩০৫ সালে; ১৩১৭ বঙ্গাব্দে ঢাকা থেকে মাসিক পত্রিকা ‘তোষিণী’ এবং ‘সোপান’ প্রকাশিত হয়। ‘তোষিণী’র সম্পাদক ছিলেন অনুকূলচন্দ্র শাস্ত্রী। এই সচিত্র মাসিক পত্রিকাটিতে লিখেছেন বিখ্যাত রূপকথা লেখক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কবিশেখর কালিদাস রায় প্রমুখ ব্যক্তিরা। মাসিক পত্রিকা ‘সোপানে’র সম্পাদক ছিলেন হেমেন্দ্রনাথ ঘোষ। এই পত্রিকাটিতে গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনি ইত্যাদি থাকত। ১৩২০ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘আত্মত্যাগ’ নামে পণপ্রথার বলি স্নেহলতার আত্মহত্যার মর্মস্পর্শী কাহিনী। ‘অঞ্জলি’ নামে আর একটি মাসিক পত্রিকা বেরিয়েছিল ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে কোচবিহারের জেনকিন্স স্কুল থেকে।

১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা ‘শিশু,’ সম্পাদক বরদাকান্ত মজুমদার এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। পত্রিকাটি ছ’হাজার কপি ছাপিয়েও চাহিদা পূরণ করতে না পারায় দশ হাজার ছাপানোর কথা জানা যায়। এর পরেই উল্লেখযোগ্য পত্রিকা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘সন্দেশ।’ ১৯১৩-এর ১লা এপ্রিল পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি বেরোয়। ছোটদের মন মাতানো এই পত্রিকাটি সম্বন্ধে বহু আগে ‘অবসর’-এ বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মাসিক পত্রিকা না হলেও ঠাকুরবাড়ির নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৯১৮-তে প্রকাশিত হয় পূজাবার্ষিকী ‘পার্ব্বণী।’ প্রথম পূজাবার্ষিকী হিসাবে এই পত্রিকাটির আলাদা একটি মূল্য আছে। এর পর ১৩২৭-এর বৈশাখে প্রকাশিত হয় সুধীরচন্দ্র সরকারের সম্পাদনায় মাসিক পত্রিকা ‘মৌচাক।’ পত্রিকায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোদের উপন্যাস ‘বুড়ো আংলা’ ১ম সংখ্যা থেকেই বেরোতে শুরু করে। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের বিখ্যাত ‘যকের ধন,’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়,’ যাযাবরের ‘ঝিলাম নদীর তীরে,’ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘কুহকের দেশে,’ সুবিমল রায়ের ‘প্রেতসিদ্ধের কাহিনী,’ প্রভৃতি ধারাবাহিক উপাখ্যান প্রকাশিত হয়েছে ‘মৌচাকে।’ খগেন্দ্রনাথ মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, দীনেন্দ্রকুমার রায়, সুনির্মল বসু প্রমুখ নাম করা লেখকেরা এই পত্রিকায় লিখেছেন। ছোটোদের পত্রিকাগুলির মধ্যে ‘মৌচাক’ একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে।

এর পর প্রকাশিত অপর কয়েকটি পত্রিকা – ‘খোকা-খুকু’ (সত্যচরণ চক্রবর্তী ও কালীপ্রসন্ন দাশগুপ্ত, ১৯২০); ‘শিশুসাথী’ (আশুতোষ ধর, ১৯২২); ‘রাজভোগ’ (সত্যেন্দ্রশঙ্কর দাশগুপ্ত ও সুধাংশু সেনগুপ্ত, মে ১৯২৪, ঢাকা থেকে প্রকাশিত); ‘মুকুল’ (প্রভাংশুকুমার গুপ্ত, আগস্ট ১৯২৫); ‘ফুলের রেণু’ (প্রভাতকুমার বসু, গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও শিশিরচন্দ্র বসু, ১৯২৬); ‘বেণু’ (ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়, ১৯২৮); ‘আলপনা’ (সুনির্ম্মল বসু, ১৯২৭), ‘যাদুঘর’ (গিরিজাকুমার বসু ও প্রেমাংকুর আতর্থী, জুলাই ১৯২৭); ‘রামধনু’ (বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, ১৯২৭); ‘মাস পয়লা’ (ক্ষিতীশচন্দ্র ভট্টাচার্য ও অখিল নিয়োগী, ১৯২৮); ‘রংমশাল’ (প্রেমেন্দ্র মিত্র, ১৯২৮); ‘ভাই বোন’ (প্রভাতকিরণ বসু, ১৯৩৮); ‘শুকতারা’ (মধুসূদন মজুমদার, ১৯৪৮ – প্রথম সংখ্যা ফাল্গুন, ১৩৫৪)। এই সময়ের মধ্যে এবং পরেও অজস্র ছোটদের পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে কয়েকটির মাত্র উল্লেখ করা হল।  

রামধনু পত্রিকার একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ

বর্তমানে আমরা যে পত্রিকাটির কথা আলোচনা করব সেটি হল ‘রামধনু।’ প্রথম প্রকাশ মাঘ, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে (১৯২৭ খ্রিঃ)। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা, রিপন কলেজের খ্যাতনামা অধ্যাপক মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ছিলেন সেকালের নামী শিশু সাহিত্যিক। প্রথম সম্পাদনার ভার ন্যস্ত হয় মনোরঞ্জনের পিতা বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্যের উপর। প্রকাশনার ৩য় বর্ষে মনোরঞ্জনই সম্পাদক হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মনোরঞ্জন অকালে প্রয়াত হন। পত্রিকার দ্বাদশ বর্ষে ১৩৪৫-এর মাঘ পর্যন্ত সম্পাদক ছিলেন তিনি, ফাল্গুন থেকে তার অনুজ সুলেখক ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য এই কার্যভার গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘকাল যোগ্যতার সঙ্গে পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। সমসাময়িক অন্যান্য পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেলেও ‘রামধনু’ পাঠকদের কাছে সমান প্রিয় ছিল। অনেকে মনে করেন পিছনে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল না বলেই হয়তো পত্রিকাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। এক সময় কাগজের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, সম্ভবতঃ সেজন্যই পত্রিকাটির প্রকাশ কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তবে তা ছিল নিতান্তই সাময়িক। মাঘ থেকে প্রকাশনা শুরু হলেও ১৩৫০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকেই বর্ষ শুরু হয়, সম্ভবতঃ ১৩৪৯-এ মাঘ থেকে চৈত্র কোন সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। ‘রামধনু কার্য্যালয়,’ ১৬নং টাউনসেন্ড রোড ভবানীপুর থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হত।

১৩৬৫ বঙ্গাব্দের একটি সংখ্যায় ‘দেব সাহিত্য কুটীর’-এর বইয়ের বিজ্ঞাপন

পত্রিকার শুরুতেই সম্পাদক ‘রামধনুর কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় ইংরেজ কবি ক্যাম্বেলের কবিতার কয়েকটি পংক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে ‘রামধনু’ নামের যৌক্তিকতা বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। রামধনুর বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা করে পরিশেষে লিখেছেন –

আকাশের রামধনু দেখায় সূর্যের কিরণ, আমাদের ‘রামধনু’ দেখাইবে ‘জ্ঞানের কিরণ।’ জ্ঞান রামধনুর মতই বিচিত্র, রামধনুর মতই মনোরম। রামধনুতে যেমন সূর্য্যের কিরণ নানাবর্ণে বিভক্ত, বিদ্যার শুভ্রজ্যোতিরও সেইরূপ নানা বিভাগ। মোটামুটি বলিতে গেলে – সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস ও জীবনী, বিশ্বের নানা বিবরণ, অর্থশাস্ত্র ও ধর্ম্মশাস্ত্র… মোটকথা আমরা রামধনুর নানা বর্ণের মত জ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখা লইয়া প্রতিমাসে হাজির হইতে ইচ্ছা করি। তাই আমাদের কাগজের নাম হইয়াছে রামধনু।

প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতা

‘রামধনু’র প্রথম সংখ্যায় যে সব লেখা ছিল সেগুলি হল – ‘রামধনু’ (কবিতা)– বিজয়চন্দ্র মজুমদার, ‘রামধনুর কথা’ (সম্পাদকীয়), ‘বাঙ্গালী পালোয়ান’– মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, ‘নারদের-নিমন্ত্রণ’ (কবিতা)– কুমুদরঞ্জন মল্লিক, ‘ভৈরব শঙ্করী’ (গল্প)– সতীশচন্দ্র ঘটক, ‘আপন ও পর’ (কবিতা)– কালিদাস রায়, ‘তরল বাতাস’ (বিজ্ঞান বিভাগ)– হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘শিখগুরু গোবিন্দ সিংহ’ (ক্রমশঃ) (‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ বিভাগ)– প্রিয়রঞ্জন সেন, ‘কাজির বিচার’ (গল্প)– প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ‘আবোল-তাবোল’ (কবিতা)– শ্রীমাঠব্য, ‘অরুণ-আলো’(ছোটদের বড় গল্প)– প্রবোধ রঞ্জন সেন, ‘বর্ম্মার কথা’(ক্রমশঃ)– অধ্যাপক নৃপেন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়; এছাড়া ছিল ‘সন্দেশ’ বিভাগে প্রকাশিত বিবিধ খবর ও নূতন ধাঁধা। ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ শিরোনামে বিজ্ঞাপিত হয়েছে – “এবার স্থানাভাবে বৈজ্ঞানিক গল্প দেওয়া হইল না, আগামী বার যাইবে।” ‘নূতন ধাঁধার’ পাদটিকায় বলা হয়েছে – “যাঁহারা ধাঁধার উত্তর দিতে পারিবেন আগামী সংখ্যায় তাঁহাদের নাম প্রকাশিত হইবে। কেবল গ্রাহক গ্রাহিকারাই উত্তর পাঠাইতে পারিবেন।” অবশ্য সেকালের রীতি অনুসারে অধিকাংশ লেখকের নামের পাশে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সূচক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও মুদ্রিত হত। 

‘প্রবাসী’ সম্পাদক সুসাহিত্যিক রামানন্দ চট্টপাধ্যায় একবার ‘লীগ অব নেশনস’এর আমন্ত্রণে ইউরোপ গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দরদী স্বদেশপ্রেমিক। বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি ‘ইউরোপ-যাত্রার দুঃখ’ নামে একটি ছোট গল্প লেখেন; ১৩৩৬-এর কার্তিক সংখ্যায় এটি প্রকাশিত হয়। লেখার মধ্যে তাঁর স্বদেশ প্রেম খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে –

তিন বৎসর আগে যখন বাড়ী হইতে হাবড়া ষ্টেশনে গিয়া রেলগাড়ী চড়িয়া বোম্বাই যাই তখন ট্যাক্সিতে অর্থাৎ ভাড়াটিয়া মোটর গাড়ীতে চড়িলাম। উঠিয়াই মন হইল এই গাড়ীর কল-কব্জা কোন অংশই আমাদের দেশের লোকে তৈরী করে নাই; সবই বিদেশের লোক করিয়াছে। বিদেশের লোকদের উপর বিদেশী বলিয়া আমার কোন রাগ বা ঘৃণা নাই। কিন্তু বিদেশীর তৈরী গাড়ীতে আমার হাবড়া যাইতে দুঃখ হইল যে জন্য তাহা এই যে, মোটর গাড়ীতে ব্যবহৃত লোহা, ইস্পাত, কাঠ, রবার, কেম্বিস, চামড়া সব জিনিষই আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়; ভগবান অন্য দেশের লোকদের মত আমাদেরও বুদ্ধি দিয়াছেন; অথচ মোটর গাড়ী এবং আরও কত কি জিনিষ আমাদিগকে বিদেশ হইতে আনিতে হয়; তাহার জন্য লজ্জা হয় এবং মনে কষ্ট পাই।

ছোটদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়ে তিনি তাদের উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন বলেই মনে হয়।

পৌষ ১৩৩৯ সংখ্যায় ‘ভাবী সাহিত্যিকের বৈঠক’ বিভাগে এক গ্রাহকের লেখা

‘রামধনু’তে যাঁদের লেখা বেরিয়েছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন – চারুচন্দ্র চক্রবর্ত্তী (জরাসন্ধ), দেবপ্রসাদ ঘোষ, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মণীশ ঘটক, হেমচন্দ্র বাগচী, হেমলতা দেবী, সুবিনয় রায়, বুদ্ধদেব বসু, সুনির্ম্মল বসু, গৌরাঙ্গ প্রসাদ বসু, শিবরাম চক্রবর্ত্তী, সুকুমার দে সরকার, লীলা মজুমদার, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, ধীরেন্দ্রলাল ধর, অখিল নিয়োগী, ক্ষিতীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য্য প্রভৃতি। স্পষ্টতই নাম করা সাহিত্যিকেরা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের রচনা সম্ভার নিয়ে ‘রামধনু’কে সাজিয়ে তুলতে।

শিশুসাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণা ও আলোচনা করেছেন, তারা অনেকেই ‘রামধনু’ পত্রিকায় বিজয়চন্দ্র মজুমদারের লেখা ‘কইরু কোলের কথা’ এবং সুনির্ম্মল বসুর ‘দেহাতী গান’ নামক রচনা দু’টির উল্লেখ করেছেন। প্রথম লেখাটি সম্বন্ধে খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মন্তব্য –“রচনাটি নৃতত্ত্ব-বিষয়ক। ইতিপূর্বে আর কোনও শিশু-সাহিত্য পত্রিকায় এই ধরণের লেখা প্রকাশিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।” ‘কইরু কোলের কথা’ বেরিয়েছিল ১৩৩৫-এর ভাদ্র সংখ্যায়। রচনাটি অবশ্যই শিক্ষণীয়। কিছুটা অংশ দেখে নেওয়া যাক –

এক যে ছিল কইরু মুণ্ডা – জাতিতে কোল, গায়ের রঙ ছিল কুচকুচে কালো, শরীর ছিল বলিষ্ঠ। তীর-ধনুক নিয়া শিকার করিতে ছিল খুব ওস্তাদ, আর যখনকার কথা বলিতেছি, তখন তাহার বয়স ছিল কুড়ি। কইরুর কথা শুনাইবার আগে তাহার দেশের একটু পরিচয় দিতেছি।

বাঙ্গলা দেশের পশ্চিমে যে বন-পাহাড়ের নাম ছোটনাগপুর, সেই মুল্লুকের দক্ষিণ দিকে ছিল কইরুদের বসতি। পাহাড়িয়া ও বুনা কোল জাতির একটা সম্প্রদায়ের নাম “চুটিয়া।” এই সম্প্রদায়ের কোলেরা এক সময়ে খুব ক্ষমতাশালী ছিল, আর সম্প্রদায়ের নাম অনুসারে অঞ্চলটার নাম হইয়াছে, চুটিয়া নাগপুর। লোকে এখন বলে ছোট নাগপুর। কোলেদের গায়ের রঙ কালো, থাকে বনে পাহাড়ে, কিন্তু এই জাতির লোকেরা বড়ই সাহসী, সত্যবাদী ও প্রফুল্ল। উহারা হিঁদুদের ছোয়া জলটুকুও খায় না, তা সে জলটুকু ব্রাহ্মণই দিক, আর যিনিই দিন।

কোলেরা বাঘের মাংস খায়। এর একটি সুন্দর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

…বাঘ মরিল, আর কোল শিকারীরা তাহাদের টাঙ্গিয়া বা কুড়াল দিয়া কয়েকটা লতা কাটিল, আর সেই লতা দিয়া বাঘকে বাঁধিয়া, তাহাদের শরগুলি গুছাইয়া নিয়া বাঘটিকে বহিয়া গ্রামের দিকে চলিল। জুলকি আনন্দে লাফাইয়া লাফাইয়া যখন পাহাড় হইতে নামিল, শিকারীরা তখন বাঘ বহিয়া ফিরিল, আর গ্রামের লোকেরা বাঘ ঘিরিয়া দাঁড়াইল। কোলেদের মধ্যে এক গ্রাম হইতে অপর গ্রামে সংবাদ পৌঁছাইবার আশ্চর্য্য সঙ্কেত আছে। দেখিতে দেখিতে কইরুর উলিকেরা গ্রামের ও অন্য গ্রামের অনেক স্ত্রী-পুরুষ আসিয়া জুটিল। বাঘ ছিল খুব বড়, তাহার মাংস হইল ঢের; তিন গ্রামের লোকেরা মাংস ভাগ করিয়া নিল। কোলেরা বাঘের মাংস খায়।

অনেক তথ্যপূর্ণ সহজ সরল বর্ণনা, ছোটদের ভাল লাগারই কথা।

ছন্দের যাদুকর সুনির্ম্মল বসুর ‘দেহাতী গান’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪১-এর ফাল্গুন সংখ্যায়। দীর্ঘকাল তিনি সাঁওতাল পরগণায় কাটিয়েছেন। সাঁওতালি ভাষাও শিখেছিলেন এবং সেই ভাষায় বহু গান ও ছড়া তাঁর সংগ্রহে ছিল। তাঁর অনেক কবিতায় এর ছায়া পড়েছে। আলোচ্য রচনা ‘দেহাতী গান’-এর কিছু অংশ –

দেহাতী গান, – সে আবার কি ? …কোন রকম কালোয়াতী গান বুঝি? আরে না, না, – কালোয়াতী গানের আসর আমি এখানে জমাতে বসি নাই, – …বিহার প্রদেশের অজ-পাড়াগাঁকে বলে দেহাত, আর সেখানকার নিরক্ষর গ্রামবাসীদের বলে ‘দেহাতী।’ তাদের গানই দেহাতী গান। ও কি! তোমরা হেসে উঠলে! ভাবছ, জংলীদের আবার গান কি?

আমারও আগে সে ধারণাই ছিল। কিন্তু ওদের গ্রামে কয়েকমাস বাস করে আমার সে ধারণা বিলকুল উল্টে গেছে। আজ তোমাদের কাছে সেই দেহাতী গানেরই কয়কটি নমুনা দিতে এসেছি। …দেহাতী ভাষা তোমাদের বুঝতে অসুবিধা হবে, – তাই তার ভাব যথাসম্ভব বজায় রেখে আমি বাংলায় যে তর্জ্জমা করেছি সেই রসই কিছু তোমাদের কাছে পরিবেষণ করছি।

ঝড়ের দিনে ওদের দেশের ছেলেরা ঝড়ের তালে তাল দিয়ে নেচে নেচে গান ধরে –

এলো রে ঐ ঘুর্ণি ঝড় –
বাঁশের বনে ঝরলো পাতা,
বাবলা গাছের নড়লো মাথা –
কাঁপছে যেন বালুর চর;
ছোট্ট টিয়ে উড়তে গিয়ে
আছড়ে পড়ে ছটফটিয়ে,-
আন তো খাঁচা শীঘ্র কর;
টিয়ের ছানা কোথায় এটা!
আরে ছি ছি, চামচিকেটা
ধুঁকছে শুয়ে ধুলোর পর।

খেলা করতে করতে ওদের ছেলেরা অনেক সময়ে এই গানটাও করে –

তুই বেশ গান গাস
ভাইরে,
ঠিক যেন পেঁচা ডাকে
বাইরে।
খাসা তোর রূপখানি
সাঁচ্চা,
ঠিক যেন মোরগের
বাচ্চা ।

১৩৪৭ মাঘ সংখ্যায় ‘লিলি’ বিস্কুটের বিজ্ঞাপন

সম্পাদকের একটি সাধু প্রচেষ্টা ছিল ‘কষ্টিপাথর’ শিরোনামে বিদেশী গল্পের অনুবাদ বা ছায়া অবলম্বনে ধারাবাহিক রচনা প্রকাশ। অনুবাদক বা লেখক ছিলেন অধ্যাপন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। ২য় বর্ষের ৯ম সংখ্যায় (আশ্বিন ১৩৩৬) ‘কালি কে ঢালিল?’ নামে একটি রচনা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল বিখ্যাত ইংরেজ মহিলা-ঔপন্যাসিক মিসেস হেনরি উডের ‘দি চার্লিংস’ নামক বইখানির মর্মানুবাদ। ‘যাঁদের লেখা তোমরা পড়ো’ নামক খগেন্দ্রনাথ মিত্রের একটি আকর্ষণীয় ধারাবাহিক রচনা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৫৯ বঙ্গাব্দের পত্রিকায়। যে সব শিশু সাহিত্যিকের সঙ্গে খগেন্দ্রনাথ ব্য্যক্তিগত ভাবে পরিচিত ছিলেন তাদের নিয়েই এই লেখা। এই সব লেখকদের মধ্যে রয়েছেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার, যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, কার্তিকচন্দ্র দাশগুপ্ত, রাজকুমার চক্রবর্তী, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, উপেন্দ্র চন্দ্র মল্লিক, অখিল নিয়োগী, রবীন্দলাল রায়, শিবরাম চক্রবর্তী, লীলা মজুমদার, সুকুমার দে সরকার, কুলদারঞ্জন রায়, পরশুরাম, সুখলতা রাও প্রমুখ লেখকবৃন্দ।

এ ছাড়া নিয়মিত ভাবে প্রকাশিত বিভাগগুলির মধ্যে ছিল – ‘আমাদের সংবাদ পত্র বিভাগ,’ ‘ভাবী সাহিত্যিকের বৈঠক,’ ‘পাঁচমিশেলী,’ ‘চিঠিপত্র’ ইত্যাদি। ছোটদের একটি আকর্ষণীয় বিভাগ ছিল ‘নূতন ধাঁধা।’ যে সব ছেলেমেয়েরা ধাঁধার সঠিক উত্তর দিতে পারত, ধাঁধার উত্তর এবং ঠিকানা সহ তাদের নাম পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হত। বহু সংখ্যক উত্তরদাতাদের নাম দেখে মনে হয়, ‘রামধনু’ এবং বিশেষ করে এই বিভাগটি পাঠকদের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। বিভিন্ন ধরণের অঙ্কের খেলার সঙ্গে অন্য রকমের মজার ঘটনা দিয়েও ধাঁধা তৈরি হ’ত। এখানে ১৩৬৩-র বৈশাখ সংখ্যা থেকে এ রকমই একটি ধাঁধা তুলে দেওয়া হল –

হাসপাতালের ডাক্তার সকালে এসে শুনলেন, যে নার্সটি সে রাত্রে নাইট ডিউটিতে ছিল সে নাকি স্বপ্ন দেখেছে যে ঐ ডাক্তারের বাড়ীতে ভীষণ একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর এই নার্সটির স্বপ্ন নাকি প্রায়ই ফলতে দেখা গেছে।

খবরটা শুনে তখনই ডাক্তার বাড়ী ফিরে গেলেন। গিয়ে দেখেন দুর্ঘটনা সত্যিই ঘটেছে তাঁর মায়ের, তবে ততটা সাংঘাতিক নয়। যাই হোক, তিনি হঠাৎ এসে পড়ায় চিকিৎসার আর কোনও ত্রুটি হল না। সমস্ত ব্যবস্থা সেরে আবার তিনি হাসপাতালে ফিরে এলেন। এসে দেখেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তদারকিতে এসেছেন। ডাক্তারের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে তাঁরা খুব আশ্চর্য্য হলেন।

এর পর নার্সটিকে ডেকে পাঠান হ’ল। কর্তৃপক্ষ তার অদ্ভুত ক্ষমতার খুব প্রশংসা করে তাকে পুরস্কৃত করলেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তার মাইনে চুকিয়ে দিয়ে তাকে চাকরী থেকে বরখাস্তও করে দিলেন।

কেন বল দেখি ? – নার্সটি কি সত্যিই কোনও দোষ করেছিল?

ধাঁধাটির উত্তর একেবারে শেষে দেওয়া হয়েছে।

গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনি এবং বিবিধ বিভাগে বিশেষ রচনায় সজ্জিত হয়ে ‘রামধনু’ প্রকৃতই বর্ণময় হয়ে উঠেছিল। ছোট ছেলেমেয়েদের এবং বয়স্কদেরও মনের মত হয়ে ওঠায় কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা ছাড়াই ‘রামধনু’ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছিল। বহু লেখককে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্যও করেছে এই পত্রিকাটি। শেষ সংখ্যাটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল সে তথ্যটি সঠিক দেওয়া না গেলেও, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে জন্মলাভ করে অন্তত ১৩৬৫-এর চৈত্র অবধি সচল ছিল ছোটদের প্রিয় ‘রামধনু’।

উপরে প্রদত্ত ধাঁধার উত্তর –   

নার্সটি স্বপ্ন দেখেছিল নাইট ডিউটির সময়ে। তার মানে সে ঐ সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এটা একটা মস্ত অপরাধ এবং এই জন্যই তাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হ’ল।

একদম শেষে, ‘রামধনু’ পত্রিকার জনপ্রিয়তা সম্পর্কে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। সত্যজিৎ রায় তখন একেবারে কিশোর। তাঁর নিজেদের পারিবারিক ‘সন্দেশ’ পত্রিকা খুব জনপ্রিয় ছিল।   ‘সন্দেশ’ ছাড়া আরো একটি মাত্র পত্রিকার কথা তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে (‘যখন ছোট ছিলাম’) উল্লেখ করেছেন, সেটি ‘রামধনু।’ লিখছেন,

“আরেকটা ছোটদের মাসিক পত্রিকা বেরোত যেটা বেশ ভালো লাগত সেটা হল রামধনু।  রামধনুর অফিস ছিল বকুলবাগান রোড আর শ্যামানন্দ রোডের মোড়ে, আমাদের বাড়ি থেকে দুশো গজ দূরে। এই কাগজের সম্পাদক মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম, কারণ ওঁর লেখা জাপানী গোয়েন্দা হুকাকাশির গল্প ‘পদ্মরাগ’ আর ‘ঘোষ চৌধুরীর ঘড়ি’ আমার দারুণ ভালো লেগেছিল।”

তথ্যসূত্র – যখন ছোট ছিলাম – সত্যজিৎ রায়, আনন্দ পাবলিশার্স, অষ্টম মুদ্রণ, চৈত্র – ১৪১৫, পৃষ্ঠা – ৩৫

বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর [IIEST, Shibpur]) অধ্যাপনা করেছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *