স্বাধীন বেশে ডনের দেশে
কাহিনিসূত্র
যদি আজকের দিনে একজন গড়পড়তা টেস্টক্রিকেট-প্রেমী ভারতীয়কে প্রশ্ন করা হয় কোন টেস্ট সিরিজটা তাঁর কাছে সবচেয়ে আকর্ষক, আশি থেকে নব্বই শতাংশ সম্ভাবনা যে তিনি বলবেন সেটা হচ্ছে বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি (BGT), যা খেলা হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। আর গত ২০২০-২১ মরশুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের দুরন্ত সিরিজ জয় BGT নিয়ে সেই আগ্রহ-উদ্দীপনাকে যেন আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
কিন্তু ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতা-প্রাপ্তির ৭৫-তম জয়ন্তীটা যে এই দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজেরও ৭৫-তম বছর, এটাও তো আমাদের খেয়াল করতে হবে। যদিও BGT তো দূরের কথা, সেই ১৯৪৭ সালে অ্যালান বর্ডার বা সুনীল গাভাসকার কারোরই তখন জন্মও হয়নি!
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের সূত্রপাত ১৯৪৭-৪৮ মরশুমে, স্বাধীন ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশ সফর – পাঁচ ‘সরকারি’ টেস্টের পূর্ণ সিরিজ (যা ভারত তার আগে কখনও খেলেনি) – তাও আবার ডনের দেশে, তাঁরই দলের বিরুদ্ধে। এই সফর শুরু হয় ভারতের স্বাধীনতা-প্রাপ্তির আট সপ্তাহের মধ্যেই, অর্থাৎ ৯ই / ১০ই অক্টোবর. ১৯৪৭ যদিও এর সময়সূচী ঠিক ছিল অনেক আগে থেকেই।
গোড়াতেই বলে রাখি এই লেখা কিন্তু সেই ঐতিহাসিক সফরের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যপূর্ণ বর্ণনা মোটেই নয় – সফরটাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের (আমার মতে) কিছু গুরুত্বপূর্ণ বা কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা ও বিশ্লেষণ, এখানে তারই কিছুটা প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছি – বিস্তারিত খুঁটিনাটি (সংখ্যাগত) তথ্য জানতে হলে পাঠককে অনুরোধ করি ACSH, CricketArchive, CricketCountry, ESPNCricInfo, HowSTAT! এইজাতীয় Web-site-গুলো দেখতে।
পিছিয়ে যাই ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। অ্যান্টনি ডি’মেলোর (Anthony de Mello) সভাপতিত্বে গঠিত এক সাব-কমিটি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (BCCI) নির্বাচকমণ্ডলীর দায়িত্ব নিয়ে ১৭ জনের এক সফরকারী দল ঘোষণা করেন। তার আগে প্রশিক্ষণ শিবির হয় পুনাতে এবং দল নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরীক্ষামূলক (trial) ম্যাচও খেলা হয়। এরপর ১৯৪৭-৪৮ মরশুমের অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য দল ঘোষণা করা হয়।
দেশের তৎকালীন সেরা ওপেনার বিজয় মার্চেন্ট অধিনায়ক ও অগ্রগণ্য অল-রাউন্ডার লালা অমরনাথ সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। পঙ্কজ গুপ্ত সফরকারী দলের কর্মকর্তা নিযুক্ত হন [চিত্র-০১]।
নির্বাচিত দলটা ছিল এইরকম: মার্চেন্ট, অমরনাথ, মুস্তাক আলি, বিজয় হাজারে, ভিনু মানকড়, রুসি মোদি, হেমু অধিকারি, আমির এলাহি, জেনি ইরানি, জি কিষেণচাঁদ, ফজল মাহমুদ, গুল মহম্মদ, সি.এস নায়ডু, দাত্তু ফাদকর, খাঁদু রঙ্গনেকর, প্রবীর সেন, রঙ্গা সোহনি। উইকেটরক্ষক হিসেবে প্রবীর সেনের সঙ্গে ছিলেন ইরানি।
এগারো জনের দলটা কেমন দাঁড়াত, ভাবুন – (১) মার্চেন্ট, (২) মুস্তাক, (৩) মোদি, (৪) হাজারে, (৫) অমরনাথ, (৬) অধিকারি / রঙ্গনেকর / গুল মহম্মদ, (৭) মানকড়, (৮) ফাদকর, (৯) সি.এস. নায়ডু, (১০) প্রবীর সেন, (১১) রঙ্গা সোহনি / ফজল মাহমুদ / আমির এলাহি – স্বাধীন ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজের উপযুক্ত দলই বটে, বিশেষ করে ব্যাটিং শক্তিতে, বড় রান তুলতে বা তাড়া করতে, দুটোতেই দক্ষ! আর বোলিংয়েও একেবারে নেহাৎ মন্দ নয় – ফাদকর, সোহনি / ফজল / এলাহি, অমরনাথ, মানকড়, সি.এস., প্রয়োজনে হাজারে ও মুস্তাক – উইকেটের পেছনে প্রবীর (খোকন) সেন – হাতে রান থাকলে ডনের দলকে খুব সহজে ছেড়ে দিতেন বলে মনে তো হয়না!
কিন্তু দল নিয়ে বড়রকম সমস্যার শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে আর নির্বাচকমণ্ডলী বেশ বিপাকেই পড়লেন। কারণ? এক এক করে বলি তাহলে।
‘সঙ্কটের কল্পনাতে’ ম্রিয়মাণ ফজল মাহমুদ
বিপাকের আরম্ভ পেসার ফজল মামুদকে [চিত্র-০২] ঘিরে। ঠিক কী হয়েছিল তাঁর? সংক্ষেপে বললে তিনি তখন আর ভারতীয় নেই, পাকিস্তানি হয়ে গেছেন। অতএব সরকারি মতে তিনি সফরে যেতে অস্বীকার করেন যেহেতু তাঁর শহর লাহোর হয়ে গেছে পাকিস্তানের অংশ আর তিনি হয়ে গেছেন পাকিস্তানি নাগরিক! আসুন, একটু খুঁটিয়ে জানবার চেষ্টা করি ফজলের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণটা, যা পরবর্তীকালে তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন।
১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৯ বছরের ফজল লাহোর থেকে বম্বে যান একটা ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তাঁর ‘hero’ অমরনাথের অধিনায়কত্বে উত্তরাঞ্চলের হয়ে খেলতে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে লাহোরে বেশ কয়েকটা রাজনৈতিক ও সাম্প্র্দায়িক গোলযোগ বাধে, গোটা পাঞ্জাব রাজ্য জুড়ে হিন্দু, মুসলমান ও শিখ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়।
ফজল তখন বম্বে থেকে দিল্লির পথে, আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য দলগঠনের পরীক্ষামূলক শেষ ম্যাচ খেলতে যে ম্যাচে ফজলের সঙ্গে যাঁরা খেলেন তাদের মধ্যে ছিলেন অমরনাথ (লাহোরের হিন্দুসন্তান), গুলাম আহমেদ (দাক্ষিণাত্যের হায়দ্রাবাদের মুসলমান-তনয়), কুমার রায় সিং (পাঞ্জাবের রাজবংশীয় শিখ) – আপাতদৃষ্টিতে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যের এক উষ্ণ চিত্র, সবাই চাইছেন আসন্ন ক্রিকেট মরসুমে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে খেলতে যাবেন। আহাম্মক আর কাদের বলে. বলুন তো!
সেই ম্যাচে লেগ-কাটারে ফজল ৪৫ রানে পাঁচ উইকেট নেন। সফরকারী দলে নির্বাচিত হয়েছেন জেনে তাঁর প্রতিক্রিয়া: “As I heard my name being called out, I rushed to the telegraph office to send a telegram to my parents in Lahore.” তাঁকে বলা হয় ১৫ই অগাস্টে পুনাতে প্রাক-সফর এক প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে। ২০ বছরের ফজলের সামনে তখন পেশাদারি জীবনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সাফল্য-স্বীকৃতি-পুরস্কারের হাতছানি ও স্বপ্ন।
তিনি ফিরে গেলেন তাঁর রাজ্য পাঞ্জাবে যেখানে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর পর সদ্য দমন করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক হিংসা। কিন্তু এইসবের (ও বিগত বছর পাঁচেকে ঘটে-যাওয়া আরো বেশ কিছু ঘটনার) ফলে ইংরেজ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং পূর্বনির্ধারিত ১৯৪৮ সালের জুন মাসের পরিবর্তে ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্টের মধ্যেই ভারত ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাঞ্জাব ও বাংলা এই দুই সীমান্তবর্তী রাজ্যের সীমানা নির্ধারণের জন্য তড়িঘড়ি ৯ই জুলাই তারিখে সিরিল রাডক্লিফকে (Cyril Radcliffe) নিযুক্ত করা হয়।
রাডক্লিফের এই নতুন-তৈরি সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত ফজলের শহর পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর হয়ে উঠল তুমুল অশান্তি-অরাজকতার আখড়া। আত্মজীবনীতে ফজল লিখেছেন: “When I arrived in Lahore, the mayhem was at its peak and the curfew was a daily routine. Therefore, it was not possible to practice any cricket.”
পাকিস্তানের ‘জন্মদিন’ ১৯৪৭ সালের ১৪ই অগাস্টও ফজল লাহোরে, তাঁর মাথায় তখন চিন্তা যে কোনভাবে পুণার প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌঁছনো। পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশের অগ্নিদগ্ধ বিধ্বস্ত গ্রামাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গাড়িতে চেপে সাড়ে-ছ’শো মাইল পথ পেরিয়ে তিনি পৌঁছলেন আরব সাগরকূলের বন্দর শহর করাচি, সেখান থেকে বিমানে গেলেন বম্বে – প্রত্যক্ষ করেন লক্ষ লক্ষ গৃহহারা দেশছাড়া মানুষের এই দুই বিপরীতমুখী স্রোত, যা তাঁর তরুণ মনে চিরকালের মতন ছাপ রেখে যায়।
বম্বে থেকে তিনি গেলেন পুণা। কিন্তু চারিপাশের অবস্থার বিপাকে ও প্রবল বৃষ্টিতে সেখানে অনুশীলন মাথায় ওঠার জোগাড়। এর মধ্যে শারীরিক অসুস্থতার জন্য মার্চেন্ট ও পারিবারিক কারণে মুস্তাক আলি সফরকারী দল থেকে অব্যাহতি চাইলেন, মোদি তো আগেই অসুস্থতার কারণ জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই অনুশীলন শিবির পরিত্যক্ত হয় ও খেলোয়াড়দের বলা হয় সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিজের নিজের বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসতে। এইবার ‘সদ্য-বিদেশী-হওয়া’ ফজল পড়লেন বিপদে, হঠাৎ-করে-বিদেশ-বনে-যাওয়া শহরে ফিরতে গিয়ে।
পুনা থেকে বম্বে ফেরবার ট্রেনে কিছু ধর্মান্ধ গুণ্ডা তাঁকে হয়ত পিটিয়েই মেরে ফেলত যদি না ক্রিকেট ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়াতেন তাঁরই এক সহযাত্রী যাঁর নাম সি.কে.নায়ডু! ৯ই সেপ্টেম্বর বম্বে ফিরে ফজল দিল্লি হয়ে লাহোর ফিরতে চেষ্টা করেন। কিন্তু পথেই খুন হয়ে যেতে পারেন এই সাবধানবাণী শুনে কোনমতে বিমানের টিকিট জোগাড় করে করাচি ও সেখান থেকে ১৩ই সেপ্টেম্বর লাহোরে বাড়ি পৌঁছন। সেখানে দেখেন তাঁর বাবা-মা দুশ্চিন্তায় সাংঘাতিক বিপর্যস্ত কারণ একমাস ধরে তাঁর কোনও খবর তাঁরা পাননি, তাঁর পাঠানো চিঠি বা টেলিগ্রাম কিছুই পৌঁছোয়নি। এবার তাঁরা ফজলকে অনুনয় করেন আবার একবার ভারতে না যেতে।
প্রচুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফজল অমরনাথকে তারবার্তা পাঠিয়ে জানান যে তিনি সফরে যেতে অপারগ। ফজলের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তটির গভীর ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেটে। এর প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে, যখন তিনি পাকিস্তানি ক্রিকেটের পিতামহসম, তিনি বলেন যে তাঁর ভারতের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত ছিল নীতিগত, দেশাত্মবোধসঞ্জাত। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিগতভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কাহিনিটি ছিল আরো অনেক জটিল।
ব্যাটিংয়ের বিড়ম্বনা ও মুস্তাক আলির বঞ্চনা
দলের নির্ভরশীল চারজন ‘M’-এর মধ্যে অল-রাউন্ডার মানকড় বাদে বাকি তিনজনই (ওপেনার মার্চেন্ট ও মুস্তাক আর ব্যাটার মোদি) দলে অনুপস্থিত। কেন? সেরা ব্যাটার ওপেনার মার্চেন্ট ও (ঘরোয়া ক্রিকেটে) আরেক বড় রান সংগ্রহকারী তরুণ ব্যাটার মোদি দুজনেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে সফরে যেতে অস্বীকার করেন। মুস্তাক আলি, মার্চেন্টের জুড়িদার আরেক অভিজ্ঞ ওপেনার, পারিবারিক কারণে সফরে যেতে প্রথমে অস্বীকার করে পরে যেতে চাইলেও BCCI তাঁকে আর দলে রাখেনি –ভারতীয় ক্রিকেটের বিবিধ অদ্ভুত-পুরাণের সে আরেক অধ্যায়। এবার জানাই সেই কাহিনি।
মার্চেন্টের পরিবর্তে অমরনাথকে অধিনায়ক করা হলে মুস্তাক আলিকে সহ-অধিনায়ক করা হয়। মুস্তাকের বড়দা পরিবারের অভিভাবক-সম ইকবাল আলির শারীরিক অবস্থা তখন ক্রমশ খারাপের দিকে চলেছে। তারই মধ্যে ডনের দেশে তাঁরই সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার ও তাঁরই বিরুদ্ধে খেলবার আগ্রহে অত্যুৎসাহী মুস্তাক সফরের জন্য তাঁর সাজ-সরঞ্জাম, পোশাক-আশাক, মালপত্র সব গোছগাছ করতে থাকেন, বড়দাও তাঁকে খুব উৎসাহ যোগাতেন।
কিন্তু বিধি বাম – মুস্তাক সফরে রওনা হওয়ার কয়েকদিন আগেই গোটা পরিবারকে মুহ্যমান করে দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইকবাল আলি চলে গেলেন, শোকবিহ্বল মুস্তাক দু’তিনদিন বাড়িতেই বসে থাকলেন। এতদিন তাঁর ওপর পারিবারিক দায়িত্ব ছিল নামমাত্র, তিনি আনন্দে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন, পিতৃসম বড়দাই সব সামলাতেন – এবার হঠাৎ করে সবই এসে পড়ল তাঁর ঘাড়ে, আর্থিক দায়িত্বও এক ঝটকায় বেড়ে গেল। এহেন অবস্থায় অতি বিচলিত মুস্তাক বোর্ড-সভাপতি ডি’মেলোকে এক তারবার্তায় জানালেন কেন তিনি সফরে যেতে অপারগ।
দিনকতক বাদে দাদার শেষকৃত্য মিটে যাওয়ার পর মুস্তাক কর্মস্থলে যাওয়া শুরু করবার দিনই তাঁর ওপরওয়ালা হোলকারের মহারাজার কথামত মুস্তাকের ক্রিকেটীয় গুরু সি.কে. নায়ডু একটা টেলিগ্রাম করে ডি’মেলোকে জানান যে মুস্তাক এখন সফরে যেতে রাজি। যাত্রার জন্য অপেক্ষারত সফরকারী দল তখন কলকাতায়। মহারাজা এমনকি মুস্তাকের রাহাখরচ দিতেও প্রস্তুত ছিলেন।
মুস্তাক খুবই আশান্বিত ছিলেন যে ডি’মেলো সম্মতি জানাবেন। কিন্তু উত্তরে এটা জেনে হতভম্ব হয়ে গেলেন যে দলে আর কোনও জায়গা নেই। তাঁর কথায়: “The (reply) telegram remains with me as a cruel reminder of the wrong done to me by depriving me of the chance of playing for my country at a time when there was dire need for a recognized opening batsman.” মুস্তাকের পরিবর্তে দলে ওপেনার হিসেবে ঠিক কে যে ঢুকেছিলেন, সেটা ক্রিকেটবুদ্ধিসম্পন্ন কেউই শেষ অবধি বুঝে উঠতে পারেননি!
পরিবর্তিত পরিস্থিতি
নির্বাচিত এই চারজনের [মার্চেন্ট, মুস্তাক, মোদি, ফজল] জায়গায় দলে ঢোকেন যথাক্রমে অল-রাউন্ডার চাঁদু সারওয়াতে (Chandu Sarwate), ওপেনার রণবীর সিংজি (Ranvirsinhji), ব্যাটার কুমার রায় সিং (Kanwar Rai Singh) ও পেসার সি.আর.রঙ্গচারি (CR Rangachari) – দ্বিতীয়জন নওনগরের ও তৃতীয়জন পাতিয়ালার রাজবংশের ছেলে হওয়াটাই খুব সম্ভবত ক্রিকেটীয় যোগ্যতার চেয়ে বড় যোগ্যতা হয়ে দাঁড়ায়! এটা অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটের পুরোনো রোগ যা পঞ্চাশের / ষাটের দশকেও বজায় ছিল!
মার্চেন্ট না যাওয়াতে (পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী সহ-অধিনায়ক) অমরনাথ হলেন অধিনায়ক এবং ও (মুস্তাকের বদলে) নির্ভরযোগ্য ব্যাটার বিজয় হাজারে হলেন সহ-অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত দলটা দাঁড়ায় এইরকম – অমরনাথ, হাজারে, অধিকারি, আমির এলাহি, ইরানি, কিষেণচাঁদ, মানকড়, গুল মহম্মদ, সি.এস.নায়ডু, ফাদকর, রায় সিং, রঙ্গচারি, রঙ্গনেকর, রণবীর সিংজি, সারওয়াতে, প্রবীর সেন, রঙ্গা সোহনি। [চিত্র-০৪]
অচেনা অস্ট্রেলিয়ার আহ্বান
প্রসঙ্গক্রমে জানাই যে এই ভারতীয় দলই ছিল অস্ট্রেলিয়াতে বিমানযাত্রা করে পৌঁছনো প্রথম সফরকারী বিদেশি ক্রিকেট দল [এ যাবৎ সব বিদেশি দলই জাহাজে আসতেন] – বিশেষভাবে ভাড়া করা (chartered) MacRobertson Miller Airlines (MMA)-র এক Dakota বিমান ভারতীয় দলকে নামিয়ে দিল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Guidlford Aerodrome-এ, যেটি পরে ১৯৫৩ সালে Perth Airport নামে পরিচিত হয়। তবে বিমানে আসনসংখ্যার কিঞ্চিৎ টানাটানি থাকায় তেরোজন খেলোয়াড় ও একমাত্র কর্মকর্তা প্রথম দফায় ও পরিবর্তে-দলে-আসা চারজন খেলোয়াড় পরের দফায় গন্তব্যে পৌঁছন – এতে অবশ্য বিশেষ কোনও অসুবিধা হয়নি, অধিনায়ক অমরনাথের মতে। সুবেশ ভারতীয় সফরকারীদের সুভদ্র শালীন ব্যবহার বিমানের চালক ও সেবক-সেবিকাদের বেশ মুগ্ধ করেছিল।
ভারতের কাছে এই সফর ছিল অন্তত তিন দিক দিয়ে নতুন – (১) প্রথম পাঁচ ‘সরকারী’ টেস্টের সিরিজ, (২) স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম বিদেশযাত্রা, এবং (৩) “এলেম নতুন দেশে”, অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম পদার্পণ [‘রাজপুত্র’-‘সওদাগরপুত্র’ ছাড়াই, মুস্তাক-মার্চেন্ট কেউই তো দলে নেই – যাঁরা ঐ সময়ের ভারতীয় ক্রিকেটের খবর রাখেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন যে তখন মুস্তাক ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘Prince Charming’, তাঁর টগবগে তেজি আচরণের জন্য তৎকালীন উঠতি অস্ট্রেলিয়ান অল-রাউন্ডার কিথ মিলার তাঁকে ‘Errol Flynn’ বলে ডাকতেন।]
একনজরে দেখি নতুন পরিবেশ ও নতুন প্রতিপক্ষ কেমন ছিল। যদিও ১৯৪৫-৪৬ মরসুমে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার অল্প কিছু পরেই ১৯৪৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে Australian Services দলের হয়ে ভারতে খেলে গেছেন (পরবর্তীকালের) দুই দিকপাল টেস্ট খেলোয়াড় লিন্ডসে হ্যাসেট ও কিথ মিলার, দলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন কিথ কার্মডি (‘Umbrella Field-setting’-এর উদ্ভাবক) ও পরবর্তীকালের নামী ক্রিকেট-লেখক ডিক হুইটিংটন।
তবে তার আগে একঝলক চোখ বোলাই নতুন মাঠ ও পরিবেশের ওপর। খেয়াল রাখবেন আজ যেমন এগারো থেকে একাশি প্রায় সব ক্রিকেটপ্রেমীই বিশ্বায়ন, প্রযুক্তি, অগুনতি বিশেষজ্ঞ-বিশ্লেষক ও বহুবিধ সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে Down Under-এর মাঠ-উইকেট [বড় মাঠ, সাধারণত রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া, মূলত দ্রুতগতির ‘বাউন্সি উইকেট’ ইত্যাদি] সম্বন্ধে মোটামুটি ওয়াকিবহাল, তখন কিন্তু মোটেই তেমনটি ছিলনা – ভারতীয় দলকে খানিকটা নির্ভর করতে হয়েছিল শোনা কথার উপর, বাদবাকি বেশিটাই ছিল ‘নিজের মুখে ঝাল খাওয়া’, হজম হ’লে ভাল আর না হ’লে ‘loose motion’.
মাঠের মাপজোক ও মতিগতি
ব্রিসবেনের Woolloongabba (Gabba) মাঠে তখন চল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শকাসন – পাঁচ মিটার করে বাউন্ডারি বেড়া বাদ দিলে মাঠের মাপ ধরুন ১৬০x১৪০ মিটার। এর উইকেট বরাবরই দ্রুত ও পেস-সহায়ক বলে জানা ছিল।
সিডনির ঐতিহ্যমণ্ডিত Sydney Cricket Ground (SCG) মাঠে [চিত্র-০৬] তখন চল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শকাসন – পাঁচ মিটার করে বাউন্ডারি বেড়া বাদ দিলে মাঠের মাপ ধরুন ১৫০x১৩০ মিটার। এর উইকেট বরাবরই মূলত স্পিন-সহায়ক ছিল।
মেলবোর্নের সুবিশাল Melbourne Cricket Ground (MCG) মাঠে Northern Stand ও Southern Stand মিলিয়ে তখন নব্বই হাজারেরও বেশি দর্শকাসন – পাঁচ মিটার করে বাউন্ডারি বেড়া বাদ দিলে মাঠের মাপ ধরুন ১৬৫x১৪০ মিটার। ভেজা থাকলে আঠালো উইকেটের জন্য একে অনেকে ‘sticky dog’ বলতেন।
অ্যাডিলেডের সৌন্দর্যমণ্ডিত Adelaide Oval মাঠে তখন পঁয়তাল্লিশ হাজারেরও বেশি দর্শকাসন – পাঁচ মিটার করে বাউন্ডারি বেড়া বাদ দিলে মাঠের মাপ ধরুন ১৬০x১২০ মিটার (আদতে ছিল ১৯০ x ১২৫ মিটার)। এর উইকেট বরাবরই ব্যাটিং-সহায়ক, বিশেষত উইকেটের আড়াআড়ি শট খেলার পক্ষে।
বিপক্ষের বিন্যাস ও মনোভাব
বার্ট ওল্ডফিল্ড, ক্ল্যারি গ্রিমেট, বিল ওরিলি, স্ট্যান ম্যাককেব, জ্যাক ফিঙ্গলটন, ফ্লিটউড স্মিথ, ইয়ান ম্যাককরমিক এঁদের অবসর গ্রহণ এবং যুদ্ধে রস গ্রেগরির অকালমৃত্যু – এই ধাক্কা সামলে উঠে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বে নতুন করে দল গড়তে শুরু করে বছর দেড়-দুই সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া গোটা ছয়েক টেস্ট – একটা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েলিংটনে আর নিজের দেশে পাঁচ ম্যাচের একটা অ্যাশেজ সিরিজ – খেলে একটা দিশা পেয়েছে।
যুদ্ধপূর্ব সময়ের বিল ব্রাউন, সিড বার্নস, লিন্ডসে হ্যাসেট এঁদের সঙ্গে – যুদ্ধপরবর্তী কালের ইয়ান জনসন, রে লিন্ডওয়াল, কলিন ম্যাককুল, কিথ মিলার, ডন ট্যালন, আর্নি টোশ্যাক, আর্থার মোরিস, রন হ্যামেন্স এঁদের নিয়ে – আর বিল জনস্টন, নিল হার্ভে, স্যাম লক্সটন, ডাগ রিং, রন স্যাগার্স এঁদের মতন ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুত উঠে আসা তরুণদের নিয়ে ব্র্যাডম্যানের ১৯৪৮ সালের ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ সফরের সেই ‘The Invincibles’-এর কাঠামো তখন তৈরির পথে।
অভিজ্ঞতায় মার-খেয়ে-থাকা ও নৈপুণ্যে কমজোরি ভারত অচেনা-অজানা পরিবেশে শক্তিশালী বিপক্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতেই পারেনি। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পাঁচ জনের টেস্ট-অভিষেক ঘটায় যাঁদের মধ্যে ছিলেন বাঁ-হাতি পেসার জনস্টন, বাঁ-হাতি ব্যাটার হার্ভে, পেসার-অলরাউন্ডার লক্সটন ও লেগ-স্পিনার রিং – এঁরা চারজনই The Invincibles-এর অংশ হয়ে ওঠেন। প্রারম্ভিক ব্যাটিংয়ে ব্রাউন-বার্নস-মোরিস, তারপর ব্র্যাডম্যান-হ্যাসেট-হার্ভে, পেস-বোলিংয়ে লিন্ডওয়াল-জনস্টন-মিলার, স্পিন-বোলিংয়ে জনসন-ম্যাককুল-রিং, উইকেট-রক্ষণে ট্যালন – দলটা ছিল মজবুত এবং আত্মবিশ্বাসী। অতএব দু’দলের মধ্যে ফারাকটা বাড়তেই থাকে আর তার পেছনে আরেকটা বড় কারণ ছিলেন তুখোড় অধিনায়ক (ও অতুলনীয় ব্যাটার) ডন ব্র্যাডম্যান, যিনি যুদ্ধের (ও নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতার) কারণে আট বছরেরও কিছু বেশি সময় [১৯৩৮ সালের অগস্ট থেকে ১৯৪৬ সালের নভেম্বর] ক্রিকেট থেকে দূরে সরে থাকার পরে আটত্রিশ বছর বয়সে টেস্ট খেলা আবার শুরু করেন দেশের মাঠে ১৯৪৬-৪৭ অ্যাশেজ সিরিজে – নতুন খেলোয়াড়ে ভরা কম-অভিজ্ঞ তরুণ দলকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জেতালেন ৩-০, নিজে করলেন একটি দ্বিশতরান, একটি শতরান ও তিনটি অর্ধশতরান সমেত আট ইনিংসে করেন ৬৮০ রান গড় ৯৭.১৪ – ‘ডন’ কি তাঁকে আর এমনিই বলা হ’ত!
সেই দলের কয়েকজন তরুণ-তুর্কী [যাঁরা অদূর ভবিষ্যতেই ‘ক্রিকেটীয় রত্ন’ বলে গণ্য হয়েছিলেন] সেই সিরিজ সম্বন্ধে কেমন মনোভাব নিয়েছিলেন বা কি মন্তব্য করেছিলেন, তার কিছু অংশ এইখানে জানাই – দলনেতার মন্তব্য ও বিশ্লেষণ পরে লিখছি।
- রে লিন্ডওয়াল: তাঁর “Flying Stumps” বইতে জানিয়েছেন যে অস্ট্রেলিয়ান বোর্ডের উইকেট সম্পূর্ণ ঢেকে রাখার সুপারিশ না মেনে ভারত নিঃসন্দেহে তাদের পরাজয়ের পথ আরো সুগম করে দেয়, কারণ বেশ কয়েকবার ভেজা পিচে তাদের খেলতে হয়েছিল। তাছাড়া তাদের সেরা ব্যাটারদের তিনজন, মার্চেন্ট, মুস্তাক ও মোদী, না থাকায় তারা আরো অসুবিধায় পড়ে। 1
- কিথ মিলার: “A Cricketing Biography” বই থেকে জানা যায় যে মিলারের, এবং সবদিক থেকেই অধিক শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষেও বটে, এই টেস্টগুলো তেমন কোনও চাপ তৈরি করেনি। সবল দলের হাতে দুর্বল দলের সংহার. এই ধরণর ক্রিকেটে তাঁর বিশেষ রুচি ছিলনা। 2
- নিল হার্ভে: তাঁর “My World of Cricket” বইতে বলেন যে হাজারে ও অমরনাথ বাদে ভারতীয় দল তেমন সুবিধের ছিলনা। ভিকটোরিয়া রাজ্যদলের বিরুদ্ধে অমরনাথ ২২৮ রানের অত্যন্ত দ্রুতগতির একটা অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন। তাঁর কভার-ড্রাইভগুলো আটকাতে গিয়ে ফিল্ডার হার্ভে নাজেহাল হয়েছিলেন। আর অ্যাডিলেডের চতুর্থ টেস্টে, (ব্র্যাডম্যানের দ্বিশতরান বাদে) অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দু’ ইনিংসেই শতরানকারী হাজারের ব্যাটিং ছিল তাকলাগানো। 3
নিয়মাবলীর বদল ও ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক
এই সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেটীয় একটা নিয়মের প্রস্তাবিত কিছু বদল ও আরেকটা নিয়মের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু জানাই – (১) নো-বলের নিয়মের ১৯৪৭ সালে প্রস্তাবিত এক আসন্ন বদল, এবং (২) ‘মানকড়’ মতে রান-আউট করা।
দ্বিতীয়টা নিয়ে কিছুদিন অন্তর অন্তর ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে তর্ক চলে [যেমন ১৯৬৮-৬৯ ওরেল ট্রফি সিরিজ, ১৯৭৮-৭৯ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড সিরিজ, ১৯৭৮-৭৯ অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজ, ১৯৮৭ রিলায়েন্স বিশ্বকাপ, এবং সাম্প্রতিককালে একাধিক ODI ও T20 ম্যাচ ইত্যাদি] – আর বেচারি ভিনু মানকড় নিয়ম ও প্রথা সবকিছু ঠিকঠাক মেনে কাজটা করলেও তাঁর নামের সঙ্গে জড়ানো এই অস্বস্তিকর তকমাটা থেকে আজ পঁচাত্তর বছর বাদেও রেহাই পাননি! ঘটনাটার ওপর একটু আলোকপাত করবার প্রয়োজন মানকড়কে এই ‘অযথা বদনাম’ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবার জন্য। অবশ্য তাঁর ছেলেরা এবং স্বয়ং গাভাসকারও এই ‘কলঙ্কমোচন প্রচেষ্টা’-তে ইতিমধ্যেই জোরালো বক্তব্য রেখেছেন – আমি নাহয় ‘সেতুবন্ধনে কাঠবেড়ালির অবদান’-টাই রাখি।
প্রথমটা নিয়ে বোধহয় বর্তমানের খুব কমসংখ্যক ক্রিকেটপ্রেমীই অবহিত – বিশেষত যাঁরা ‘Front-foot Landing’, ‘More-than 15-degrees Elbow-bending’ ও ‘Beyond-waist-height Full-toss’ এই জাতীয় নো-বলের নিয়মগুলো জেনে বেড়ে উঠেছেন – তাই একটু ছুঁয়ে যাই। ব্রিসবেনে প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন, ২৫শে নভেম্বর, সংবাদপত্রে বিল ওরিলির একটি লেখা বেরোয় – প্রতিপাদ্য ছিল আগামী মরসুমে চালু-হতে-যাওয়া ‘No-ball back-foot rule’, [যার সারমর্ম অনুযায়ী বল ডেলিভারি করবার মুহূর্তে বোলারের অন্তত একটা পা বোলিং ক্রিজের ভেতরে না থাকলে আম্পায়ার নো-বল ডাকতে পারেন।] যার বক্তব্য ছিল যে এর ফলে (১) সবধরনের বোলারকেই, বিশেষত পেস-বোলারদের, বোলিংয়ের delivery approach-এ বড়সড় রদবদল ঘটাতে হবে, আর (২) বেশি ‘নিয়মমাফিক’ হতে গিয়ে বহু আম্পায়ার ‘অপ্রয়োজনীয়’ নো-বল ডেকে পেসারদের বোলিংয়ের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাবেন।
অবশ্য এইসব বিতর্কের মধ্যেই লিন্ডওয়াল সিরিজে পাঁচটা টেস্টে ১৬.৮৮ গড়ে ১৮টা উইকেট (সিরিজের সর্বোচ্চ) দখল করেন – সেরা বোলিং অ্যাডিলেডের চতুর্থ ম্যাচের ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে চড়া রোদের কড়া গরমের মধ্যে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬.৫-৪-৩৮-৭, মানকড় ও অমরনাথকে (প্রথম বলেই বোল্ড) শূন্য রানে ফেরত পাঠান এবং পরে টেস্ট ক্রিকেটে ম্যাচের দু’ইনিংসেই শতরানকারী প্রথম ভারতীয় হাজারেকেও বোল্ড করেন।
১৯৪৮ সালের ইংল্যান্ড সফরের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রস্তাবিত এই নিয়মের বদল নিয়ে লিন্ডওয়াল-মিলার-জনসটন এঁদের মত পেস বোলাররা এবং অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাডম্যান ও দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরা কিছুটা চিন্তায় পড়লেও, এই নিয়ে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই ‘পেসার-বঞ্চিত’ ভারতের বিশেষ কোনও হেলদোল ছিলনা – তখন ভারতে প্রকৃত পেস-বোলার কোথায়!
সেই রান-আউট – ভিনু মানকড় ও বিল ব্রাউন
সফরে মানকড় ব্যাটিং ও বোলিং দুইয়েই পারদর্শিতা দেখান। মেলবোর্নের তৃতীয় ও পঞ্চম দু’টেস্টেই শতরান করেন – সিরিজে করেন তিনশোর বেশি রান (দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ), তাও লিন্ডওয়াল-মিলার-জনস্টন পেসার-ত্রয়ীর বিরুদ্ধে ওপেন করে আর ১৭৪ ওভার (আট বলের ওভার, এখনকার হিসেবে ২৩২ ওভার) বল করে নেন ১২টা উইকেট (দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) সেটা ব্র্যাডম্যান-হ্যাসেট-ব্রাউন-বার্নস-মোরিস-হার্ভে-মিলার এঁদেরকে বল করে। সফরে ১৩টা ম্যাচে ন’শোর কাছাকাছি রান (গড় ৩৮.৬৫) আর প্রায় পাঁচশো ওভার (এখনকার হিসেবে সাড়ে-ছ’শোরও বেশি) বল করে দলের সর্বোচ্চ ৬১টা উইকেট (গড় ২৬.১৪), সঙ্গে ১১টা ক্যাচ – (কপিল দেব ছাড়া) এমন workhorse all-rounder ভারত আজ পর্যন্ত পায়নি। বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট-সাংবাদিক (ত্রিশের দশকে টেস্ট ওপেনার ছিলেন) জ্যাক ফিঙ্গলটন মানকড়ের বাঁ-হাতি স্পিন-বোলিংয়ের প্রশংসায় লেখেন: “the best of his kind since Hedley Verity’.
একটা ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে মানকড়ের কিছু অহেতুক দুর্নাম হয়। Australian XI-এর বিরুদ্ধে প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচে বল করবার সময় তিনি নজর করেন যে তিনি বল delivery করবার আগেই (non-striker) ওপেনার ব্রাউন বোলিং-প্রান্তের ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, খুচরো রান নেওয়ার অতি উৎসাহে। তিনি একবার ব্রাউনকে সতর্ক করে দেন, কিন্তু ব্রাউন আবার একই কাজ করলে তিনি বল করবার ভঙ্গিমায় হাত ঘুরিয়ে বলটি না ছেড়ে তাঁকে রান-আউট করে দেন। এরপর সিডনির দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর ও ব্রাউনের মধ্যে এমনই ঘটে [চিত্র-০৮] – ক্রিকেট-দুনিয়ায় ‘Mankaded out’ শব্দবন্ধের সেই শুরু। কিছু অস্ট্রেলিয়ান সমালোচক এটাকে ‘অখেলোয়াড়োচিত’ বলেও আখ্যা দেন। মানকড়ের সমর্থনে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকজন সুপরিচিত অস্ট্রেলিয়ান, যাঁদের মধ্যে ছিলেন ডন ব্র্যাডম্যান (“Farewell to Cricket”) 4 এবং রে লিন্ডওয়াল (““Flying Stumps”) 5।
২০২২-এর ৯ই মার্চ তারিখে প্রকাশিত একটি খবর পড়ে প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল ভিনু মানকড় কি এখন ডন ব্র্যাডম্যান আর রে লিন্ডওয়ালের সঙ্গে বসে বসে হাসছেন! কারণ? এম.সি.সি নাকি আগামী ১লা অক্টোবর থেকে (আরো কিছু ক্রিকেটীয় নিয়মের সঙ্গে) এবার রান-আউটের নিয়মের কিছু ‘রদ-বদল’ ঘটাতে চলেছে। বেশ কথা – তাহলে প্রায় ৭৫ বছর লাগল ‘ক্রিকেটীয় দিগগজ’-দের ‘সরকারীভাবে’ স্বীকার করতে যে ভিনু মানকড় ১৯৪৭ সালের ১৮ই নভেম্বর বা ১৩ই ডিসেম্বর ওপেনার বিল ব্রাউনকে রান-আউট করে না করেছিলেন কোনও ‘বেআইনি’ কাজ, না দেখিয়েছিলেন কোনও ‘অখেলোয়াড়ী’ মনোভাব! যদিও ব্রাউন নিজে এবং (তৎকালীন) ক্রিকেটের এই দুই চির-স্বনামধন্য খেলোয়াড় তাঁর এই কাজ বা মনোভাব নিয়ে সেইসময়ই তাঁকে ‘ক্লিন-চিট’ দিয়েছিলেন।
একটা ঘটনার উল্লেখ করে এই প্রসঙ্গে ইতি টানি – সফরশেষে দল ভারতে ফেরবার জন্য রওনা হওয়ার সময় ডন নিজের স্বাক্ষর-করা একটি ছবি ভিনুকে উপহার দেন, তাতে লেখেন: “Well played, Mankad” – ১৯৭৮-এ মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ভিনুর কাছে এটি ছিল পরম সম্পদ।
সফরের ঝলক – প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ
টেস্ট বাদে ভারত ন’টি প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলে দু’টিতে জয়লাভ করে – সিডনিতে Autralain XI-এর বিরুদ্ধে ৪৭ রানে এবং হোবার্টে Tasmania-র বিরুদ্ধে ইনিংস ও ১৩৯ রানে। তিনটে ম্যাচে পরাজিত হয় – সিডনিতে New South Wales-এর কাছে ইনিংস ও ৪৮ রানে [অমরনাথ প্রথম দিনই আহত হওয়ায় আর খেলতে পারেননি], ব্রিসবেনে Queensland-এর কাছে ২৪ রানে এবং পার্থে Western Australia-র কাছে মাত্র ছ’রানে। বাকি চারটে ম্যাচ অমীমাংসিত থাকে – পার্থে Western Australia, সিডনিতে South Australia, মেলবোর্নে Victoria এবং ল্যাঙ্কাস্টনে Tasmania এদের সঙ্গে। দারুণ সাফল্য না হলেও নতুন দেশের অপরিচিত পরিবেশ-পরিস্থিতিতে কম-অভিজ্ঞ দলের পক্ষে মোটেই অগৌরবের নয়। সফরে (টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণী ম্যাচ মিলিয়ে) হাজার রান করেন অমরনাথ (১,১৬২ রান) ও হাজারে [১,০৫৬ রান, চারটে শতরান, গড় ৪৮.০০ – ন’টা ক্যাচও ছিল], অমরনাথ ৩০টা উইকেটও নেন (গড় ২৮.৪৩), আর মানকড়ের কথা তো বলেইছি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নবাগত দাত্তু ফাদকর [চিত্র-১০] আটটা ম্যাচে ৪১৭ রান, একটা শতরান, গড় ৪১.৭০, ১৭টা উইকেট, গড় ৩০.৮২ নিয়ে চৌখস প্রদর্শনের নজির রাখেন। রঙ্গচারি সাতটা ম্যাচে ১৯টা (গড় ৩০.৬৩) ও সারওয়াতে ১২টা ম্যাচে ১৮টা (গড় ৪৩.৪৪) উইকেট দখল করেন।
ব্যাটিংয়ে সুবিধে করতে পারেননি কিষেণচাঁদ [১২ ম্যাচে ৪১৮ রান গড় ২৪.৫৮], অধিকারি [১৩ / ৪৫০ / ২১.৪২], সারওয়াতে (১২ / ৪৪৪ / ২১.১৪), মহম্মদ (১১ / ৩৮৭ / ১৯.৩৫), নায়ডু (৯ / ১৯৮ / ১৬.৫০) ও রঙ্গনেকর (৯ / ১৭৩ / ১০.৮১) – আর দুই রাজবংশীয় ব্যাটার রণবীর সিংজি (২ / ৩৭ / ১২.৩৩) ও রাই সিং (৪ / ৫২ / ৭.৪২) এঁদের কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল!
উইকেট-রক্ষক প্রবীর সেন ও ইরানি প্রত্যেকেই সাতটা ম্যাচে ১৫ জনকে আউট করেন – প্রবীর ১২টা ক্যাচ তিনটে স্ট্যাম্পিং, ইরানি ১৩টা ক্যাচ দুটো স্ট্যাম্পিং।
ব্যাটার অমরনাথ
মেলবোর্নে Victoria-র বিরুদ্ধে অমরনাথের [চিত্র-১১] ইনিংসটা নিয়ে হার্ভের মন্তব্য আগেই জানিয়েছি।
১৪ ম্যাচে ২৩ ইনিংসে ১,১৬২ রান, সর্বোচ্চ ২২৮*, শতরান পাঁচটি, গড় ৫৮.১০ আর তার মধ্যে পাঁচ টেস্টে ১০ ইনিংসে ১৪০ রান, সর্বোচ্চ ৪৬, গড় ১৪.০০ – একই খেলোয়াড়ের একই সফরের পরিসংখ্যান, না জানলে বিশ্বাস করা একটু কষ্টকর. নয় কি! কিন্তু এমনটাই ঘটিয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক অমরনাথ। ব্র্যাডম্যানের মতে অধিনায়কের দায়িত্ব হয়ত অমরনাথের খেলায় খানিক প্রভাব ফেলেছিল, যদিও সত্যি কথা বলতে গেলে তিনি তাঁর জোরালো দৃষ্টিশক্তি ও স্বাভাবিক দক্ষতার ওপর অতিরিক্ত বেশি নির্ভর করতে গিয়ে অনাবশ্যক ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েকবার নিজের পতন ডেকে আনেন 6।
অধিনায়ক অমরনাথ
সফরে কেমন অধিনায়কত্ব করেন অমরনাথ? ব্র্যাডম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী অমরনাথ এবং পিটার গুপ্ত (ঐ নামেই ভারতীয় দলের ম্যানেজার পঙ্কজ গুপ্ত [চিত্র-১৬] পরিচিত ছিলেন) উভয়েই ছিলন মনোমুগ্ধকারী এবং অমরনাথ ছিলেন এক চমৎকার রাষ্ট্রদূত 7।
সে নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে কেমন করেছিলেন অমরনাথ? এ নিয়ে শেষের দিকে কিছু কথা বলার আছে। আপাতত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক ক্ষণে –ব্র্যাডম্যানের শততম প্রথম-শ্রেণীর শতরান করবার ম্যাচে, সিডনিতে সফরকারী ভারতীয় দল বনাম Australian XI-এর ম্যাচে – অমরনাথের ব্যবহৃত একটি ছোট্ট চাতুরীর উল্লেখ করি। অনিয়মিত বোলার কিষেনচাঁদকে দিয়ে আচমকাবোলিং করিয়ে তিনি ৯৯ রানে থাকা ব্র্যাডম্যানকে কৌশলগতভাবে সাময়িক বিভ্রান্ত করে দেন [চিত্র-১২] – কিষেণচাঁদ ঐ ম্যাচে মাত্র এক ওভারই বল করেছিলেন 8।
ব্র্যাডম্যানের বৈভব-মুহূর্তের সাক্ষী
বিশ্বক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শততম শতরান করবার কৃতিত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে ব্র্যাডম্যানই [চিত্র-১৩] প্রথম অ-ইংরেজ [বাকি তিনজন হলেন গ্লেন টার্নার, জাহির আব্বাস ও ভিভ রিচার্ডস] – যিনি কৃতিত্বটা অর্জন করেন ১৯৪৭-৪৮ মরসুমে, সফরকারী ভারতীয় দলের বিরুদ্ধের ম্যাচে। এখানে এই বিষয়-সংক্রান্ত দুটো তথ্য জানাই:
(১) ১৮৯৫ সালে ডবলু .জি.গ্রেস থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে মার্ক রামপ্রকাশ পর্যন্ত, ২৫ জন ক্রিকেটারের মধ্যে ডন ব্র্যাডম্যানই একমাত্র যিনি কখনও English County দলের হয়ে খেলেননি।
(২) ডন তাঁর ২৯৫তম প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসে ঐ মাইলফলকে পৌঁছন। পরবর্তী দ্রুততম হলেন ডেনিস কম্পটন (৫৫২তম), আর অ-ইংরেজদের মধ্যে যুগ্মভাবে জাহির ও ভিভ (৬৫৮তম) রয়েছেন।
সফরের এক ঝলক – টেস্ট সিরিজ
পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারত পর্যুদস্ত পরাজিত হয় ০-৪ ম্যাচে – ব্রিসবেনে ইনিংস-ও-২২৬ রানে, মেলবোর্নে ২৩৩ রানে, অ্যাডিলেডে ইনিংস-ও-১৬ রানে, এবং (আবার) মেলবোর্নে ইনিংস-ও-১৭৭রানে। মেলবোর্নে পঞ্চম টেস্টের প্রথম দিন খেলা শুরুর আগে মহাত্মা গান্ধীর হত্যার ঘটনায় শোকপ্রকাশ করতে দর্শকরা দু’মিনিটের নীরবতা পালন করেন এবং দু’দলের খেলোয়াড়রা কালোরঙের arm-band পরেন। সিডনির প্রবল বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় টেস্ট অমীমাংসিত ছিল যেখানে গোটা সিরিজে একবারই মাত্র ভারত অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পেয়েছিল। সেই ম্যাচটি নিয়ে আগে একটু বলি।
সিক্ত সিডনিতে স্বপ্নভঙ্গ
সপ্তাহ-চারেক আগেই এই মাঠে শক্তিশালী Australian XI-কে [দলে ছিলেন ব্র্যাডম্যান, ব্রাউন, মিলার, হার্ভে, লক্সটন, জনস্টন প্রমুখ] হারিয়ে সফরের প্রথম জয় পেয়েছিল ভারত। তাই ব্রিসবেনের প্রথম টেস্টে [দুই ইনিংসে ৫৮ ও ৯৮ রানে ধরাশায়ী হয়ে] বিধ্বস্ত হলেও ভারত ভরসায় বুক বেঁধে মাঠে নামল – স্পিন-সহায়ক উইকেটের আশায় দলে মানকড় ছাড়াও দুই লেগ-স্পিনার নায়ডুও (টেস্ট-অভিষেক-হওয়া) এলাহি], নতুন বলের দায়িত্বে (টেস্ট-অভিষেক-হওয়া) ফাদকর ও অমরনাথ, সঙ্গে হাজারের মিডিয়াম-পেস। ব্যাটিংয়ে ওপেনার জুটি মানকড়-সারওয়াতে তারপর মহম্মদ, হাজারে, অমরনাথ, কিষেণচাঁদ, অধিকারি, উইকেটের পেছনে ইরানি।
ভারত টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনের শেষে ৩৮-২ নিয়ে, দ্বিতীয় দিন শুরু করে ৯৫-৬ হওয়ার পর কিষেণচাঁদ (৪৪) ও ফাদকর (৫১) ৭০ রানের জুটির জোরে ১৮৮ রানে শেষ করে। মানকড়ের রান-আউট-করা ব্রাউনকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৮-১ দ্বিতীয় দিনের শেষে।
পরের দু’দিন প্রবল বৃষ্টিতে খেলা শুরুই করা গেলনা। পঞ্চম দিনে ভারত এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসল – অস্ট্রেলিয়াকে শেষ করল ১০৭ রানে – হাজারে ৪/২৯, ফাদকর ৩/১৪, অমরনাথ ও মানকড় প্রত্যেকে ১/৩১ – ভারত এগিয়ে গেল ৮১ রানে। প্রবল বর্ষণের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মুখে পাল্টা আঘাত হানল অস্ট্রেলিয়াও – জনস্টন ৩/১৫, জনসন ২/২২, মিলার ১/৫ ও লিন্ডওয়াল ১/১৩ – দিনের শেষে ভারত ৬১-৭, উইকেটে হাজারে ও অধিকারি, তিন উইকেট হাতে নিয়ে এগিয়ে ১৪২ রানে।
শেষদিন পুরোটাই বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত [চিত্র-১৪] – খেলা হলে কি হতে পারত, কে বলতে পারে! এই প্রসঙ্গে ব্র্যাডম্যানের জীবনীকার রোল্যান্ড পেরি লিখেছেন: “(India’s) lead of 142 runs may have been enough on the last day, but rain washed out play once more leaving the soggy match a draw. Just ten hours’ play had been possible. Amarnath, throwing the dice on the weather, had lost so far.”
হাজার রানের হাজারে
অ্যাডিলেডে হাজারে দু’ইনিংসেই শতরান (১১৬ ও ১৪৫) করেন [চিত্র-১৫] – টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম। ২৯৩ রানে পিছিয়ে থেকে follow-on করে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ১৪৫ রান দলের মোট ২৭৭ রানের ৫২% – এসেছিলেন তখন ০-২ (মানকড় ও অমরনাথ আউট), তারপর ১৩৯-৬ থেকে অধিকারিকে (৫১) নিয়ে ২৭১-৭ পর্যন্ত টেনে তবেই গেলেন। তাঁর এই ব্যাটিং নিয়ে হার্ভের মন্তব্য আগেই জানিয়েছি।
পাঁচ টেস্টে ১০ ইনিংসে ৪২৯ রান, সর্বোচ্চ ১৪৫, শতরান দুটো, গড় ৪৭.৬৬ – হাজারে ছিলেন দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটার – সাতটা উইকেটও নিয়েছিলেন। হাজারে ও অমরনাথের ব্যাটিং সম্বন্ধে ব্র্যাডম্যানের বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য অসাধারণ – 9।
সফরের পর্যালোচনা – কিছু কথা
এই সফরের পেছনে যে কৌতূহলজনক ‘গল্প’-গুলো আছে – সব সফরেই / সিরিজেই কমবেশি থাকে – যার কয়েকটা ইতিমধ্যেই বলেছি, বিশেষ করে দলগঠন, ‘মানকড়ীয়’ রান-আউট, ডনের শততম শতরান এমনই কিছু। এবার নজর রাখি সফরের প্রসঙ্গে ক্রিকেটীয় ব্যক্তিত্ব – খেলোয়াড়, সাংবাদিক-লেখক – এঁদের কয়েকজনের মন্তব্য-পরামর্শ-সমালোচনা যাতে ক্রিকেট-দুনিয়া এই সফর নিয়ে কি ভেবেছিল, তার একটা আভাস পাঠকেরা সরাসরি পেয়ে যান।
• লালা অমরনাথ: [“The Making of a Legend”]
“Though India lost the series to a superior Australia side, it left a marvellous impression on everyone Down Under.”
• ডন ব্র্যাডম্যান: [“Farewell to Cricket”] – সফর শুরুর আগে – 10
• ডন ব্র্যাডম্যান: [“Farewell to Cricket”] – সফর শেষে – 11
• জ্যাক ফিঙ্গলটন:
“My feelings are to this chap (Amarnath) for his great-hearted leadership. There are things he does which in our Australian conception of the game we do not agree, but then, when all is said and done, is purely only our opinion and, the fact remains that nobody could do more than what Amarnath has done at critical periods here and many could do less. He has endeared himself to the Australian people.”
• ওয়ালি হ্যামন্ড: [“Cricket My Way”] – তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেটে পেশাদারি মনোভাবের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে – 12
• রে লিন্ডওয়াল: [“Flying Stumps”] – ভিনু মানকড় সম্বন্ধে – 13
• আর্থার মেইলি: [“Illustrated Weekly of India”]
“Whatever shortcomings the Indians have, they are fortunate to possess an admirable captain in Amarnath. Being closely associated, I have had an opportunity to observe his influence on the team. His knowledge of Australian pitches is superior to Bradman’s [sic]. His choice of heavy-light rollers and the decisions regarding the staying powers of the pitches, and when to employ certain bowlers, etc., has been invariably correct.”
• সৈয়দ মুস্তাক আলি: [“Cricket Delightful”] – দলগঠন, ব্যাটিংশক্তির দুর্বলতা ও নিজের অন্তর্ভুক্তি না হওয়া নিয়ে – 14
• জ্যাক পোলার্ড: [“The Complete Illustrated History of Australian Cricket”]
“By sending 17 players for a 14-match tour, India made Amarnath’s task in playing all his men into form virtually impossible. Amarnath increased his team’s difficulties by refusing an offer from the Australian Board of Control to cover the Test match pitches, apparently reasoning that his bowlers would get more benefit than the Australians from bowling on soaked pitches. Bradman won the toss in four of the five Tests and in two of them India were trapped on wet pitches.”
• বেরি সর্বাধিকারি: [“My World of Cricket: A Century of Tests”] – 15
সফরকালে অধিনায়ক অমরনাথ ও Reuter-এ বিশেষ সংবাদদাতা দলীপ সিংজির মধ্যে দলনির্বাচন ও কৌশলগত কিছু ব্যাপারে মতানৈক্য প্রসঙ্গে
ক্রিকেটীয় সম্পর্কের যাত্রার শুরু, আমার এই কাহিনির শেষ
‘ব্র্যাডম্যান ভারতে কখনও খেলতে আসেননি’ এই অনুযোগ-অভিযোগ-আক্ষেপ বহু ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমিকের, সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই। হালে এমন মন্তব্যও মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে যে ভারতের ঢিমে-গতির ঘূর্ণি-উইকেটে অনভ্যস্ত-গরম আর্দ্র-পরিবেশে ভারতীয় স্পিনারদের মোকাবিলায় উনি কি ওঁর ‘Bradmanesque’ প্রদর্শন বজায় রাখতে পারতেন? ১৯৩২২-৩৩ মরসুমে জার্ডিন-লারউড-এর বডিলাইনের সামনে তো পারেননি! এই ‘কাল্পনিক’ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জায়গা এই লেখাতে নয়, তাই কেবল দুটো তথ্যের / ঘটনার উদ্ধৃতি / উল্লেখ করে এখানে থামি।
- ডন ব্র্যাডম্যান: [“Farewell to Cricket”] – Ashes-বহির্ভূত ক্রিকেটের প্রতি তাঁর মনোভাব
“Test cricket between England and Australia is still supreme, but it cannot remain in isolation, and will be materially strengthened if other countries can match their skill. That day undoubtedly will come, and as the mother country founded and nurtured her colonies, so should we assist the less mature cricketing countries to the higher standard of play.”
[কৃতজ্ঞতাস্বীকার এবং তথ্যনির্দেশ]:
- “Farewell to Cricket” – Don Bradman; Ed. 1950
- “Flying Stumps” – Ray Lindwall; Ed. 1956
- “ইডেনে শীতের দুপুর” – শঙ্করীপ্রসাদ বসু; Ed. 1960
- “My World of Cricket” – Neil Harvey; Ed. 1963
- “My World of Cricket: A Century of Tests” – Berry Sarbadhikary; Ed. 1964
- “Cricket Delightful” – Mushtaq Ali; Ed. 1967
- “The Courage Book of Australian Test Cricket: 1877-1974” – RS Whitington; Ed. 1974
- “Keith Miller: A Cricketing Biography” – Mihir Bose; Ed. 1980
- “The Bradman Era” – Bill O’Reilly; Ed. 1983
- “The Complete Illustrated History of Australian Cricket” – Jack Pollard; Ed. 1992
- “The Don: The Definitive Biography” – Roland Perry; Ed. 1995
- “Ray Lindwall: Cricket Legend” – John Ringwood; Ed. 1996
- “The Making of a Legend: Lala Amarnath” – Rajender Amarnath; Ed. 2004
- “The Pakistani Masters” – Bill Ricquier; Ed. 2006
- “Cricket: Conflicts and Controversies” – Kersi Meher-Homji; Ed. 2012
- “Wounded Tiger” – Peter Oborne; Ed. 2014
- “From Mumbai to Durban” – S Giridhar & VJ Ragunath; Ed. 2016
- “Indian Innings: The Journey of Indian Cricket from 1947” – Ayaz Memon; Ed. 2021
- ESPN CricInfo Website
- Cricket Country Website
- Google Arts and Culture
- Wikipedia
[ছবির কৃতজ্ঞতাস্বীকার]:
- ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত – চিত্র ০১, ০৫, ০৬, ০৮, ০৯, ১০, ১৫, ১৮
- “The Pakistani Masters” – চিত্র ০২
- “Cricket Delightful” – চিত্র ০৩
- “From Mumbai to Durban” – চিত্র ০৪
- “The Making of a Legend: Lala Amarnath” – চিত্র ০৭, ১১, ১৪
- “The Bradman Era” – চিত্র ১২
- “Farewell to Cricket” – চিত্র ১৩
- “My World of Cricket: A Century of Tests” – চিত্র ১৬
- ““Indian Innings: The Journey of Indian Cricket from 1947” – চিত্র ১৭
- “India, however, undoubtedly contributed to their own defeat by not agreeing to the Australian Board of Control’s suggestions that the wickets be covered completely. Unfortunately for India they were caught several times on wet pitches. They were also handicapped by the absence of Merchant, Mushtaq Ali and Modi, three of their best batsmen.” [“Flying Stumps”]
- “The Test Matches made no great demands on him (Miller), or for that matter on the Australian team, whose all-round superiority proved too much for the Indians. … It was the type of cricket that had little appeal for Miller, the ritual slaughter of the weak by the strong.” [“A Cricketing Biography”]
- “The following season, 1947-48, we had a visit from the Indian side – not a very good combination really although they had two very good players indeed in Vijay Hazare and Lala Amarnath. Amarnath made 228 in one innings against Victoria with an unforgettable display. His cover driving that day was really wonderful – I know, because I was there at cover trying to stop them. It was a truly great innings with the runs scored at a very brisk rate. … The striking feature of this game, (the 4th Test at Adelaide), however, Bradman’s innings apart (he scored a double century), was the batting of Hazare who hit a hundred in each innings. Two lovely knocks these, and they had to be as our attack at the time was superbly balanced.” [“My World of Cricket”]
- “In some quarters Mankad’s sportsmanship was questioned. For the life of me I cannot understand why. The laws of cricket make it quite clear that the non-striker must keep within his ground until the ball has been delivered. If not, why is the provision there which enables the bowler to run him out? By backing up too far or too early, the non-striker is very obviously gaining an unfair advantage. On numerous occasions he may avoid getting run out at the opposite end by gaining this false start. … Mankad was an ideal type, and he was so scrupulously fair that he first of all warned Brown before taking any action. There was absolutely no (ill) feeling in the matter as far as we were concerned, for we considered it quite a legitimate part of the game.” [“Farewell to Cricket”]
- “Accusations of bad sportsmanship were made against spinner Vinoo Mankad for the running out of Bill Brown at Sydney in the 2nd Test but these were most unfair to the bowler. Unconsciously, Bill had developed a habit of leaving his crease before the bowler had released the ball and in the previous game played at Sydney by the Indians, against an Australian XI Mankad ran him out after warning him that he was breaking the rules. That caused comparatively little stir, probably because it happened in a less important game, … If a batsman infringes the written laws, he can have no grouse against a bowler not conforming to an unwritten law. To all young batsmen, I recommend care to ensure that they do not back up too far and allow the bowler the chance to run them out. There are enough ways of being dismissed apart from that.” [“Flying Stumps”]
- “We know Amarnath to be a brilliant run-getter, and those who saw his innings against Victoria earlier in the season rate it amongst the best ever seen on the Melbourne Cricket Ground. … Maybe the responsibility of being captain weighed heavily on Amarnath’s shoulders. Whether it did or not, one must be accurate and point out that Amarnath trusted his eyesight and natural ability to such an extent that he allowed himself the discretion of hitting against the break and otherwise taking unnecessary risks. This brought about his downfall on numerous occasions.” [“Farewell to Cricket”]
- “Throughout the whole of the Australian tour I found Amarnath and Peter Gupta (nickname of Pankaj Gupta, the manager of the Indian squad –) absolutely charming in every respect. They co-operated in all conceivable ways to try and make the game enjoyable, and the most wonderful spirit of camaraderie existed between the Australian and Indian players. … Amarnath was such a splendid ambassador that (although) he certainly believed in speaking his mind at all times and was not averse to expressing his opinion in regard to a controlling authority or an individual, but he always did it with utmost courtesy and tact. I look back on the season with him as my opposite number, as one of my most pleasant cricket years.” [“Farewell to Cricket”]
- “Finally, with my total at 99, Amarnath called up Kishenchand who was fielding on the boundary. He (Kishenchand) had not bowled before and I had no idea what type of bowler he was. It was a shrewd move, as one could have so easily been deceived, but I treated him with the greatest respect until eventually came a single to mid-on and the great moment had arrived.” [“Farewell to Cricket”]
- “The Indians, despite a gallant fight, were beaten by an innings, but not before Hazare had added his name to the scroll of fame by becoming the first Indian to score a century in each innings of a Test Match. When we foregathered for the First Test Match, I had a lengthy argument with one of my compatriots as to the relative merits of Hazare and Amarnath as batsmen. The skipper had performed brilliantly in one or two State matches, but I had been very impressed by the soundness of Hazare and the correctness of his stroke production. I want to call attention to Hazare’s skills and his right to be called a great player. … (Hazare’s) principal weakness was a lack of aggression which prevented him taking charge of an attack and tearing it to pieces, which is an attribute of such value to a match-winning batsman.” [“Farewell to Cricket”]
- “(Australian Board of Control aka ABC) felt it would be more advantageous to the Indians if wickets remained covered. Surprisingly the Indians decided they would prefer the MCC idea of uncovered wickets. I thought India were making a grave mistake. We do not have many wet wickets in this country, but we see more than the Indians do in theirs. Our players do not possess quite the same skill as Englishmen under such conditions, but it seemed clear they would have more than the Indians. I felt that we would prove superior on dry wickets. Knowing the merits of the players who would be at our disposal, I felt that on wet wickets India would be overwhelmed. For this reason, I strongly pressed for the Indians to agree t covered wickets, and spent considerable time trying to persuade Amarnath, the Indian Captain, of the soundness of my views. It was all to no avail. I think probably Amarnath saw the wisdom of my suggestion but was willing to trust the favoritism of the weather gods. On the contrary the Indians suffered grievously through being caught on wet wickets. The result of the matches may not have been affected, though most certainly the end was expedited. In addition to the effect it had on the results, the financial aspects of cricket cannot be ignored. I do not suggest that the interests of cricket should be subservient to finance, but it must have been obvious to experienced observers that the Indian tour would make very little if any profit. The shortening of matches and the one-sided nature of victories could not do otherwise than have a detrimental effect on the gate receipts.” [“Farewell to Cricket”]
- “Reviewing the tour, one is not being ungenerous to say the Indians were not quite equal to the task. Had their full strength been available it might have been a different story. If Australia or England should lose four or five of their best players, it would seriously prejudice their efficiency. How much more so with India whose resources were much thinner. In the batting line, Amarnath and Hazare were outstanding. They were fit to be classed with any company. Mankad did surprisingly well with the bat if one takes into account the enormous work he was called upon to do with the ball. Without being on the same plane as the two already mentioned, he was very good except against fast bowling, which was his Achilles heel; Ray Lindwall almost invariably got his wicket. A player who definitely improved during the tour and did very well towards the close was Phadkar. He bowled fat medium with good control and quite a lot variation in pace. Lacking the style of other batsmen he, nevertheless, showed splendid courage and the virtue of a straight bat; he always took digging out. [“Farewell to Cricket”]
- “The Indians and the West Indians, and to a lesser degree New Zealand and South Africa have not developed the necessary ‘hard shell’ for Test match play. What they have lacked so far have been two necessary factors – pitiless strategical leadership of the sort epitomised in Jardine and the spirit of aggression and domination. It was, therefore, with a particular interest that I watched the Indians in Australia in 1947-48 demonstrating the first beginnings of the two necessary acquirements. The chief reason for this change undoubtedly lay in the leadership of the Indian team by Amarnath. His experience in Lancashire League had taught him the hardest aspects of captaincy and shown the imperative need for a captain to analyse the play and the personality of each of his opponents just as a professional boxer has to do.
- His handling of the Indian team (in Australia in 1947-48) was masterly, all the more because his material was patchy and weather against him with a cruelty that amounted to personal persecution.” [“Cricket My Way”]
“One of the seven wickets which fell to me at Adelaide (Test) was that of Vinoo Mankad, who was caught by (wicket-keeper) Don Tallon for a duck, thus affording me no little compensation for the outcome of a cocktail party held during the 3rd Test (at Melbourne). Before the game I had clean bowled Vinoo in each the six innings, including four in the Tests, in which I met him, getting him out for 67, 22, 0, 7, 5 and 1, all with yorkers on the off stump. When we chatted together at the cocktail party after the first day’s play in the 3rd Test Vinoo asked me if I could tell him whether he was doing anything seriously wrong. In an expansive mood I told him he was coming down late on the yorker and that possibly he would do better with slightly less back swing. Vinoo thanked me in his usual courteous way – and next day made 116. Several times during hi8s innings he asked me whether he had cut down his back swing sufficiently to suit me!” [“Flying Stumps”] - “The team was not recast as should have been done. Only on the eve of its flight from Calcutta were the gaps filled in the most haphazard manner, which caused much criticism and surprise. In my opinion the replacements did not meet the situation. To fill he places hitherto held by Merchant, me and Modi – numbers one, two and three respectively in the batting order – the new choices were not the right answers to the problem. Sarwate and Mankad were asked to open the innings against the best pace attack Australia ever had. Sarwate failed miserably as an opening batsman, because his weakness in playing really fast stuff. In my opinion he was merely wasted. Mankad, however, did a wonderfully good job as an opener. It should have been better for the selectors, if they had taken K.C. Ibrahim of Bombay or Rege of Maharashtra as an opener. I think that if a fair selection was made and better replacements provided, even without the three M’s the team would have fared much better than it did. In selecting the team, provincialism had overridden national interest. In fact, Mr de Mello was heard saying boastfully that in selecting the Indian team for Australia the whole of the map of India had been displayed. Among the substitutes, Kishenchand and Sarwate, who had been rushed to Australia later as replacements, even though not equal to the specific task, were at least good cricketers with sufficient background. But what about the two princes Rai Singh of Patiala and Ranvir Sinhji of Nawanagar. I do not remember having seen or heard of them playing outstanding cricket in India or abroad. If anyone is willing to contradict me, I shall certainly invite facts and figures. Essentially a middle-order batsman, it was too much to expect Sarwate to assume the role of an opener for India. Yet, despite his constant failures as opener and suggestions in the Press in India for my inclusion in the team in view of my availabilirty, sinister forces must have been working against me. Otherwise, there was no earthly reasons, why in the interest of the team and the country, I should not have been immediately summoned. Examples are there in the annals of international cricket of players being actually flown to reinforce touring teams. Cricket fans not only in India, but in Australia as well, were very keen on seeing me play in Australia. Some of the members of the Indian team on their return from Australia told me how cricketers and cricket lovers in Australia had missed me. How keen the Australians were to see me in action was conveyed personally to me by Keith Miller, the great Australian al-rounder. Ray Robinson, the well-known Australian cricket-critic and sports-writer, touchingly wrote to me and said how the Australians still regret that I could not play before the Australian crowd.” [“Cricket Delightful”]
- “But, by common consent, Amarnath did as good a job of it as possible in Australia despite the absence of three top-notch batsmen – Vijay Merchant, Mushtaq Ali and Rusi Modi. The tour was, however, not a little marred by the skipper Amarnath, and Reuter’s Special Correspondent, Duleep Sinhji, not seeing eye to eye on certain matters of selection and strategy. The difference must have been acute indeed for Amarnath, on the Indian team’s way back at Colombo, to sneer at Duleep as ‘India-born English cricketer’, presumably referring to Duleep’s adverse criticisms of Amarnath’s leadership. I knew Amarnath to be most sincere, if occasionally a little outspoken, perhaps unwisely; on the other hand, I had the deepest regard for Duleep’s integrity. Now that one of the parties to the ‘feud’ is no more, I do not wish to add any more to this unsavoury subject, nor do I have any intention of taking note of anything by way of a rejoinder either way. I would rather be content to share – although rather shame-facedly – Keith Miller and Dick Whitington’s conclusion on this unfortunate and embarrassing subject: ‘This was just another of those little tragedies which have delayed the development of Indian cricket to the standard the natural ability of Indians cricketers warrants.’” [“My World of Cricket: A Century of Tests”]
1 Comment