শিক্ষাদানের মাধ্যম কী হওয়া উচিত তা নিয়ে শিক্ষাবিদেরা যেমন বিভিন্ন সময়ে চিন্তাভাবনা করেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষকেও এই বিষয়টি নিয়ে, বলা ভালো এই সমস্যাটি নিয়ে, বিস্তর আলোচনা করতে দেখা গেছে সাম্প্রতিক অতীতে; এমনকি এই সময়েও এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। ভাষানীতি ও শিক্ষানীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারি স্তরে পরিবর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি সেই বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে, কখনও কখনও বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করেছে। ভারতবর্ষের মতো একটি বহুভাষাভাষিক দেশে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কোনো একটি ভাষাকে সর্বজনীনভাবে গ্রহণ করা ব্যবহারিক কারণেই অসম্ভব। অন্যদিকে এদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াপত্তন যেহেতু ব্রিটিশ শাসনকালে ঘটেছিল সেই কারণে এমনকি বিদ্যালয় স্তরেও ইংরেজি-মাধ্যমে শিক্ষাদানের রীতি স্বাধীনোত্তর ভারতে এক স্বাভাবিক প্রবণতা হয়েই রয়ে গিয়েছিল। অবশ্য স্বাধীনতার পরবর্তী কালে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ব্যবহারের সার্থকতা ও সফলতা, অন্তত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে, ধীরে ধীরে স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছু অন্যরকম। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা কতখানি উপযোগী তা নিয়ে নিঃসংশয় মন্তব্য করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তির অবতারণা করা যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক চৌহদ্দির মধ্যে মাতৃভাষায়, অর্থাৎ বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষা (বিশেষত বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে) বিস্তারের প্রয়াস ও তার সমস্যার দিকগুলির সংক্ষিপ্ত সমীক্ষাই বর্তমান প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।
বাংলাভাষায় পঠনপাঠনের উদ্যোগপর্ব
মাতৃভাষা ও মাতৃদুগ্ধের তুলনাত্মক বাক্যটি প্রবাদপ্রতিম হলেও তার মধ্যে যুক্তির চেয়ে আবেগের দাবিই হয়তো বেশি। কিন্তু শিশুর শিক্ষার জন্য অন্য ভাষার চেয়ে মাতৃভাষা যে বোধগম্যতার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর তা স্বাভাবিক বুদ্ধিগ্রাহ্য। অন্যদিকে শিক্ষাবিজ্ঞানের নানা সমীক্ষাতেও সেই সত্য প্রতিফলিত হয়েছে বারবার। সুতরাং বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে, বিশেষত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায়, ভারতের অন্য আঞ্চলিক ভাষাগুলির মতো বাংলাভাষাও যে ক্রমে ক্রমে স্বীকৃতি লাভ করবে এটা ছিল প্রত্যাশিত। আধুনিক শিক্ষার সূচনাপর্ব থেকেই এদেশে, বিশেষত উচ্চতর পাঠক্রমে, ইংরেজির ব্যবহার মান্যতা পেয়ে এসেছে। যেহেতু এদেশে অন্যান্য অনেক বিষয়েই আধুনিক শিক্ষাপ্রণালীর সূত্রপাত হয়েছিল ইংরেজদের হাত ধরে, তাই তার চর্চার মাধ্যমটিও যে স্বাভাবিক ভাবেই হবে ইংরেজি তাতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে! কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনার পর থেকেই ক্রমে ক্রমে এটাও বোঝা যেতে লাগল যে, জনশিক্ষার ব্যাপকতর ও সার্থকতর প্রসারে দেশি ভাষার প্রয়োজন অনেক বেশি। স্বভাবতই এর উদ্যোগপর্বটি রচিত হল বিদ্যালয়-স্তরের শিক্ষাকে কেন্দ্র করে। মজার ব্যাপার হল এর সূচনাও ঘটল ইয়োরোপীয়দের হাত ধরেই। বস্তুতপক্ষে বিদ্যালয়-স্তরে বাংলা ভাষায় শিক্ষাবিস্তারের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনকালেই। বাংলা ভাষায় বিদ্যালয়-স্তরের বিজ্ঞান-বিষয়ক পাঠ্যবই প্রথম লেখা হয় ‘ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটি’-র উদ্যোগে প্রায় দুই শতক আগে। রবার্ট মে-এর লেখা অঙ্কপুস্তকং (যা কিনা মে–গণিত নামে সমধিক পরিচিত) ছিল এই উদ্যোগের প্রথম ফসল (১৮১৭)। জন হার্লে-র গণিতাঙ্ক (১৮১৯), ফেলিক্স কেরি-র বিদ্যাহারাবলী (১৮২০), উইলিয়াম ইয়েটস-এর লেখা পদার্থবিদ্যাসার (১৮২৪) এবং তাঁরই অনূদিত জ্যোতির্বিদ্যা (১৮৩৩) অন্য উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা। দেশি ভাষায় শিক্ষাদানের উদ্যোগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার কথা না ভাবলে অন্তত বাংলাভাষায় ছাত্রপাঠ্য বই ছাপানোর চিন্তাভাবনার সূত্রপাতই হত না। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, বিদ্যাহারাবলী সম্ভবত আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলা ভাষায় সংকলিত প্রথম কোশগ্রন্থ রচনার প্রয়াস; আর জ্যোতির্বিদ্যা বইটি জেমস ফারগুসন-এর ইংরেজিতে লেখা জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনপ্রিয় গ্রন্থের অনুবাদ। অর্থাৎ দেশি ভাষায় মৌলিক পাঠ্যবই হাতের কাছে না-পেলে যে প্রামাণ্য বিদেশি বইয়ের অনুবাদ দিয়েই কাজ শুরু করা উচিত সেই পথনির্দেশও দিয়েছিলেন ‘স্কুল-বুক সোসাইটি’।[i]
এর পরবর্তী যে প্রয়াসের উল্লেখ করতেই হবে তা হল ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত ‘উডস্ ডেসপ্যাচ’! ব্রিটিশ উদারপন্থী রাজনীতিবিদ স্যার চার্লস্ উড তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি-কে জনশিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে যে প্রস্তাবটি পাঠান, তাতে বিদ্যালয়-স্তরে শিক্ষাদানের জন্য মাতৃভাষা ব্যবহারেরই সুপারিশ করা হয়, যদিও কলেজ-স্তরে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষার কথা তখন চিন্তা করাও অসম্ভব ছিল। স্বাধীন ভারতে বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রথম যে কমিশনটি গঠিত হয়, সেই ‘মুদালিয়ার কমিশন’ মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমে আঞ্চলিক ভাষা বা মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা বললেও মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের গুরুত্ব নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু শিক্ষাপ্রণালীর সার্বিক রূপায়ণের লক্ষ্যে ১৯৬৪-তে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়, যা কিনা ‘কোঠারি কমিশন’ নামে খ্যাত, তার সুপারিশগুলির অন্যতম ছিল স্থানীয় ভাষায় উচ্চশিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস! এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে আঞ্চলিক ভাষায় পঠনপাঠনের প্রসার ঘটে। মোটামুটিভাবে সত্তরের দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গের সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলির একটি বড়ো অংশেই শিক্ষাদানের জন্য বাংলা ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। তবে তখনও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে, বিশেষত বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে, শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলাভাষা ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে গত শতাব্দীর সাতের দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে তার পরবর্তীকালে, ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট সরকার শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণের ব্যাপক প্রয়াস করেন। বিদ্যালয়-স্তর ছাড়িয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা-মাধ্যম প্রচলন করবার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করা হয়। কিন্তু স্বীকার করতেই হবে এই উদ্যোগ সার্বিক সফলতা পায়নি। আসলে কোঠারি কমিশন-এর সুপারিশ রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে সরকারি সদিচ্ছার প্রয়োজন যেমন ছিল তেমনি দরকার ছিল সরকারী নীতি রূপায়ণে দূরদর্শী বিচক্ষণতা এবং সর্বোপরি, জনসাধারণের মধ্যে বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা। এখানেই ছিল সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক; সে আলোচনায় আমরা পরে আসব।
উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষা কেন?
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা ব্যবহারের যাথার্থ্য নিয়ে সংশয়ের অবকাশ না থাকলেও সাধারণভাবে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, শিক্ষাদানের সর্বোচ্চ ধাপে বহুলপ্রচলিত ইংরেজিকে বর্জনের প্রয়োজন কতটুকু! কারণ, এই ধাপে যেসব শিক্ষার্থী এসে পৌঁছোচ্ছে তাদের কাজ-চলার-মতো ইংরেজি জানার কথা। ভাষামাধ্যমের দুর্বোধ্যতার কারণে প্রাথমিক স্তরে স্কুলছুট পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, কিন্তু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সেটা ঘটার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। সুতরাং আলোচনা দীর্ঘায়িত করার আগে এই প্রশ্নের নিরসন করা প্রয়োজন।
এটা ঠিকই যে, উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা কতখানি উপযোগী তা নিয়ে নিঃসংশয় মন্তব্য করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এর পক্ষে ও বিপক্ষে নানাবিধ যুক্তির অবতারণা করা যেতে পারে; আর ভারতবর্ষের মতো বহুভাষাভাষী মানুষের দেশে এর প্রয়োগ ব্যবহারিক দিক থেকে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও সন্দেহ থেকেই যায়। কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখবার যে, উচ্চশিক্ষা নিছক তথ্য আহরণের অনুশীলন নয়, বরং শিক্ষার্থীর নিজস্ব বোধ-বিশ্লেষণের নিরিখে অধীত জ্ঞানের আত্তীকরণের আয়োজন। আর বোধগম্যতার প্রশ্নে, কে না জানে, মাতৃভাষার গুরুত্ব নির্বিকল্প! অন্যদিকে রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান বা জার্মানির মতো উন্নত দেশে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার মডেলটি অত্যন্ত সফলভাবেই পরীক্ষিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে।
এই-যে আমরা ধরে নিচ্ছি যে, ইংরেজি ভাষায় উচ্চশিক্ষার্থীর একটা মোটামুটি দখল থাকবে- এটা কিন্তু প্রায়শই সত্যি না-ও হতে পারে। শোনা যাক ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষাবিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা! জনৈক অধ্যাপক তাঁর বক্তৃতায় ছাত্রদের পরামর্শ দেন কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ সমীক্ষকের অনুমোদনক্রমে ছাপা গবেষণাপত্র পড়বার জন্য। বলা বাহুল্য বক্তৃতাটি হচ্ছিল ইংরেজিতে; অধ্যাপক বলেন, “articles from refereed journals”। এক বিদেশি ছাত্র ফুটবল মাঠের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওই ‘রেফারি’ শব্দটি চিনতে পারে এবং জানতে চায়, তাহলে সে কি ক্রীড়াবিষয়ক পত্রপত্রিকা থেকে ‘রেফারি’র নামগুলো সংগ্রহ করবে! ঘটনাটি কৌতুককর মনে হলেও ভুক্তভোগী ছাত্রটির (বা তেমন আরও অনেকের) সমস্যাটি আমাদের নিশ্চয়ই বিচলিত করে, যেমন করেছিল সম্ভবত তার অধ্যাপককেও। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলতে পারি, এদেশে (এই আলোচনায় মুখ্যত পশ্চিমবঙ্গের কথাই বলতে চাইছি) এই সময়ে যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন তাঁদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা এই ব্যাপারে খুব আলাদা নয়। বস্তুতপক্ষে যে ভাষায় শিক্ষার্থীর ব্যুৎপত্তি সীমিত সেই ভাষায় তালিম দিতে গেলে প্রায়শই বোধগম্যতারহিত মুখস্থবিদ্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে যা কিনা শিক্ষার্থীর নিজস্ব বিচারবুদ্ধির বিকাশ ও প্রয়োগকুশলতার পক্ষে একেবারে অনুকূল নয়। একথা প্রাথমিক স্তরে যতখানি সত্যি, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও তার চেয়ে কম নয়।
আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে (অক্টোবর, ১৯৬২) সত্যেন্দ্রনাথ বসু হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত ‘আংরেজি হঠাও’ শীর্ষক একটি সম্মেলনে বলেছিলেন[ii] —
“অন্য দেশে গেলে একটা জিনিস চোখে পড়ে। সব দেশেই চেষ্টা চলছে মাতৃভাষার মাধ্যমে, যে ভাষা সবাই বোঝে তার উপর বনিয়াদ করে, শিক্ষার ব্যবস্থা করবার।”
সত্যেন্দ্রনাথের মতো আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী এদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার সার্থক ও সর্বজনীন প্রচারের স্বার্থে মাতৃভাষাকেই হাতিয়ার করবার কথা বলেছেন বারংবার। এমনকি তিনি নিজে স্নাতকোত্তর স্তরে পদার্থবিজ্ঞানের পাঠদানে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছিলেন বলে শোনা যায়! তারও অনেক আগে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তাতেও গুরুত্ব পেয়েছে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষা প্রসারের ধারণা। ১৩১২ বঙ্গাব্দে বিজ্ঞানসভা প্রবন্ধে তিনি লিখছেন[iii] —
“স্বদেশে বিজ্ঞান প্রচার করিবার দ্বিতীয় সদুপায়, স্বদেশের ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার করা।”
আর এই বিশ্বাসই পরবর্তীকালে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে বাংলা ভাষায় প্রাথমিক বিজ্ঞানের একটি লোকপ্রিয় প্রবেশক গ্রন্থ রচনা করতে। যার ফল বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭)। এরও প্রায় পঞ্চাশ বছর পর নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন লিখছেন:
“বাংলা শুধু আমার মাতৃভাষা নয়, এখনও আমার প্রথম ও প্রধান ভাষা।”[iv]
মনে রাখতে হবে যে, প্রবাসী অধ্যাপক অমর্ত্যর কাছে সর্বোচ্চস্তরের গবেষণা ও শিক্ষকতা— কোনো ক্ষেত্রেই তাঁর মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। অনুমান করা যায়— এতৎসত্ত্বেও সারস্বত চর্চার ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর চিন্তনের মাধ্যম হল তাঁর মাতৃভাষা বাংলা! বিদ্যানুশীলনের সর্বোচ্চ স্তরে— গবেষণার ক্ষেত্রে, একজন গবেষক তাঁর ব্যক্তিগত চিন্তনের মুহূর্তে, বা তাঁর সমভাষাভাষী সহ-গবেষকের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ে মাতৃভাষাই কি ব্যবহার করেন না! সুতরাং বাঙালির উচ্চতর বিদ্যানুশীলনের জগতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ প্রসার ঘটাতে বাংলা ভাষার উপযোগিতা নিয়ে সংশয় থাকবার কথা নয়। অন্তত যেসব শিক্ষার্থী ইংরেজির চেয়ে বাংলায় অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁদের জন্য উচ্চশিক্ষার বাহন হিসেবে বাংলাকে বেছে নেবার স্বাধীনতা খর্ব হতে দেওয়া অনুচিত ও অনৈতিক।
বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষা: সমস্যার নানা মুখ
বাঙালির সন্তানের জন্য বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষার অধিকার স্বীকার করে নেবার পথে অবশ্য কতকগুলি বাস্তব সমস্যাকে অস্বীকার করা যাবে না। আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে সেইসব প্রতিবন্ধকগুলির স্বরূপ একটু বুঝে নেওয়া দরকার। আর এই সমস্যাগুলির একটি আবার প্রায়শই অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
প্রথমত, শিক্ষাদানের সর্বোচ্চস্তরে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত বইপত্র, জার্নাল, তথ্যভাণ্ডার (এইমুহূর্তে আন্তর্জালও যার অন্তর্গত)- এসবের হদিস পেতে গেলে শুধু মাতৃভাষায় কাজ চলবে না, ইংরেজির সাহায্য লাগবেই। বাংলাভাষার মাধ্যমে প্রথমাবধি বিদ্যাচর্চা করার ফলস্বরূপ শিক্ষার্থী যদি ইংরেজি একেবারেই না বোঝেন তবে এখান থেকে গুরুতর সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। এই সমস্যার এক ভিন্নতর মুখও আছে। ধরুন, যে ছাত্র বা ছাত্রী উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তিনি পরবর্তীকালে কী করবেন? যদি তিনি গবেষণামূলক কাজ করেন তবে ভবিষ্যতে ইংরেজি ব্যবহার তাঁর ক্ষেত্রে পেশাগত বাধ্যবাধকতার নামান্তর! যে-কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে (জার্নাল-এ হোক বা গবেষকদের সম্মেলনে) তাঁর কাজটি উপস্থাপিত করতে গেলে বাংলায় তো কাজ চলবে না। আবার যে মেধাবী শিক্ষার্থী এ রাজ্যের কোনো কলেজে স্নাতক স্তরের পাঠ শেষ করে ভারতবর্ষের অন্যত্র কোনো নামী বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে যাবেন ইংরেজিতে পঠনপাঠন তাঁরও ভবিতব্য। ভারতবর্ষের মতো বহুভাষাভাষিক দেশে আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসারে এটা সত্যিই এক উল্লেখযোগ্য ব্যবহারিক সমস্যা। সুতরাং উচ্চতর শিক্ষার জন্য অন্য রাজ্য বা অন্য দেশের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছাত্র বা ছাত্রী হয়তো প্রয়োজনের তাগিদেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে বেছে নিতে বাধ্য হবেন, সে তিনি মাতৃভাষায় যতই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করুন না কেন। এমনকি উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে এসে, তাঁর নিজের রাজ্যেও তিনি এমন গুণী শিক্ষক পেতেই পারেন বাংলা যাঁর মাতৃভাষা নয়! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম যুগে সি ভি রামন-এর মতো পদার্থবিদ বা গণেশ প্রসাদ-এর মতো গণিতবিদকে পেয়ে মেধাবী ছাত্ররা নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছিলেন। ভাষা যদি সেখানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াত তাহলে তো শিক্ষার্থীরই ক্ষতি হত!
দ্বিতীয়ত, উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ও ভিন্ন ভিন্ন শাখায়, বিশেষত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে, বাংলা ভাষায় ভালো, এমনকি কাজ-চালানোর মতো বইয়ের অভাব। এই অভাব প্রকট না হলে প্রথমোক্ত সমস্যাটির আংশিক নিরসন হত; বাংলায় লেখা উন্নতমানের উপযুক্ত বই হাতে পেলে শিক্ষার্থীকে সর্বদা ইংরেজিতে লেখা আকর গ্রন্থের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত না। এটাও মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ না বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বাংলা ভাষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠনের স্বীকৃতি দিচ্ছেন, চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলিতে বাংলায় উত্তরপত্র লেখার রীতি অনুমোদন করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বাণিজ্যিক কারণেই এই ধরনের বই লেখানোর বা ছাপানোর উদ্যোগ নেবেন না প্রকাশকরা। অন্যদিকে বাংলার মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষা উচ্চমানের সাহিত্যসৃষ্টির উপযোগী হলেও তাতে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ের বই লিখে ফেলা খুব সহজ কথা নয়! কারণ বিজ্ঞানচর্চার কোনো ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এই ভাষায় ছিল না, আর সত্যি বলতে কী, যুক্তিসিদ্ধ বিজ্ঞান-অনুশীলনের আধুনিক ধারাটিও এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির অঙ্গীভূত ছিল না! এই পরিস্থিতিতে প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রামাণ্য বিদেশি পাঠ্যপুস্তকের অনুবাদ দিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারত। দুর্ভাগ্যবশত এ নিয়েও এদেশে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। অবশ্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে এ ব্যাপারে সদর্থক উদ্যোগ লক্ষণীয়! মনে পড়ে স্বাধীনতা লাভের দুই দশক পূর্তির আগেই সেখানে স্নাতক স্তরের উপযোগী আন্তর্জাতিক মানের বই (যেমন, পদার্থবিদ্যায়, Physics, R. Resnick and D. Halliday) বাংলায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছিল। তার পর থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিজ্ঞানের দুরূহ বিষয়গুলিতে বাংলায় লেখা পাঠ্য বই। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিতের মতো ধ্রুপদী বিষয়গুলি ছাড়াও কম্পিউটার-বিজ্ঞান ও অন্য কারিগরি বিষয়েও বাংলায় লেখা বই এখন সেখানে সুলভ। এই সচেতনতা ও উদ্যোগ এই বঙ্গে কেন দেখা গেল না তা ভাববার কথা!
তৃতীয়ত, বাংলা ভাষায় প্রথাগতভাবে কলা ও মানবিক বিদ্যার অনুশীলন যদিবা কিছু গুরুত্ব পেয়েছে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয় সহ উচ্চশিক্ষার অন্যান্য শাখাগুলিতে বাংলা ভাষায় পঠনপাঠন প্রথমাবধিই অবহেলিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক পরিভাষা গঠনের নিবিড় ও ধারাবাহিক চর্চা হয়নি। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সূচনাপর্বেই প্রাথমিক স্তরের গ্রন্থরচয়িতারা পরিভাষা-সমস্যায় বিব্রত হয়েছিলেন; উপযুক্ত পরিভাষা নির্মাণের অল্পবিস্তর চেষ্টাও করেছেন তাঁরা সকলেই। সেই প্রয়াস ছিল মূলত সংস্কৃত শব্দমালার উপর নির্ভরশীল। এই চেষ্টা স্বাভাবিক, যেহেতু বাংলার উদ্ভব সংস্কৃত থেকেই। গত শতকের সাত বা আটের দশকেও এমন স্কুল-স্তরের ছাত্রপাঠ্য বিজ্ঞানগ্রন্থ দেখা যেত যেখানে অক্সিজেন-কে অম্লজান, নাইট্রোজেন-কে যবক্ষারজান আর কার্বন ডাই-অক্সাইড-কে লেখা হত অঙ্গরাম্ল বাষ্প; জীববিদ্যার বইতে Thoracic duct-এর বাংলা পরিভাষা করা হয়েছিল ‘বামা রসকুল্যা’! বলা বাহুল্য, শেষোক্ত এই অভিনব পরিভাষার মর্মভেদ করতে বর্তমান লেখক ব্যর্থ হয়েছিলেন। এসব সত্ত্বেও বাংলায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা প্রণয়নে শৃঙ্খলা আনবার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত প্রয়াস হয়েছে। কিন্তু প্রায়শই তৎসম শব্দবহুল, সুস্পষ্ট ব্যঞ্জনাহীন পরিভাষা রচনার প্রবণতার জন্য মোটের উপর এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারেনি। উপযুক্ত শব্দ খুঁজে না পাওয়া গেলে যে প্রচলিত ইংরেজি বা বিদেশি শব্দকেই অবিকৃতভাবে আত্তীকরণ করা যায়- এই সহজ সূত্রটিও বিশেষজ্ঞদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। অথচ দেখুন, ইংরেজিতেই কত ল্যাটিন ও গ্রিক শব্দ অবিকল ঢুকে গেছে পারিভাষিক শব্দ হিসেবে! এই পরিভাষাজনিত সমস্যার ফলে পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্যোগ খানিকটা হলেও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
চতুর্থ সমস্যাটি মানবিক এবং খানিকটা মানসিক! শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার প্রতি একধরনের শর্তবিহীন আস্থা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবলভাবেই বিদ্যমান। এর অনেকটাই ঔপনিবেশিক আনুগত্যের দুরপনেয় অবশেষ। এই একটি ব্যাপারে ধনী-নির্ধনে, তথাকথিত শিক্ষিত-অশিক্ষিতে ভেদ প্রায় নেই বললেই চলে! দুঃখের বিষয় হলেও এটা সত্যি যে, এদেশে কর্মসংস্থান বা অর্থ রোজগারে সক্ষম হওয়াকেই প্রায়শ শিক্ষার একমাত্র সার্থকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিভাবকের লক্ষ্য থাকে সন্তানকে ‘অর্থকরী শিক্ষা’য় ‘শিক্ষিত’ করে তুলবার। আর কে না জানে সাধারণ চাকরির বাজারে ইংরেজি বলতে-কইতে-লিখতে পারার কদর এদেশে চিরকালই অনেকটা বেশি! বস্তুত ভুবনায়নের পরবর্তীকালে তরুণসমাজের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষাটির সমাদর আরও বেড়েছে। যে প্রযুক্তিবিদ কোনো এক বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পাবেন তাঁকে তো পেশাগত কারণে ভালোমতো ইংরেজি জানতেই হবে। তাই স্কুল-স্তর থেকেই ‘ইংলিশ-মিডিয়াম’ স্কুলে ভরতি হওয়ার মতো এক ভয়ানক ইঁদুর-দৌড়ে শামিল হতে হয় শিক্ষার্থীকে। আর তার পিছনে থাকে, শিক্ষার্থীর নয়, তার বাবা-মা-অভিভাবকের ইচ্ছার প্রবল অশ্বশক্তি!
পঞ্চমত, এদেশের কৃতবিদ্য, বুদ্ধিজীবী মানুষের এক বড়ো অংশ, যাঁরা কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণকার্যে নিযুক্ত, কখনও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেননি যে, বাংলাতেও উচ্চশিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। মুখে মাতৃভাষার সপক্ষে দু-চার কথা বললেও এঁদের মধ্যে অধিকাংশই (সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মত দু-চারজনকে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরতে হবে!) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে হাতেকলমে বাংলাভাষা প্রয়োগ করবার দুঃসাহস দেখাননি। এর অবশ্য একাধিক কারণ থাকা সম্ভব। ধরুন, পড়াতে গিয়ে আপনি দেখলেন, আপনার বঙ্গভাষী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি বা দুটি এমন ছাত্র বসে আছে যারা বাংলা বোঝে না (অনেকসময় তারা হয়তো ইংরেজিতেও তেমন সড়গড় নয়!); আপনাকে তখন ওই ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ড থেকে আগত শিক্ষার্থীর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দের বাংলাভাষা পরিহার করে ইংরেজিতেই পাঠ দিতে হবে! আবার এমনও হতে পারে- বাংলা আপনার মাতৃভাষা হলেও আপনার অধীত বিষয়টি, যা কিনা আপনি ছাত্রাবস্থায় ইংরেজিতেই রপ্ত করেছেন, বাংলায় বিশদে বুঝিয়ে বলার জন্য যে বাড়তি উদ্যমটুকুর প্রয়োজন ছিল তার জন্য ব্যস্ত গবেষক আপনি উপযুক্ত সময় দিতে পারছেন না বা দিতে চাইছেন না! আর এর চেয়েও বড়ো আর-এক সমস্যা হল এই যে, হয়তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের গরিষ্ঠ অংশের মতোই শিক্ষকদের অনেকেই অবচেতনে বহন করে চলেছেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার উত্তরাধিকার। লেখাপড়ার মতো মহৎ কর্ম যে আবার ‘রাজভাষা’ ছাড়াও করা সম্ভব সেটা তাই বিশ্বাসই হতে চায় না! কারণটা যা-ই হোক, ঘটনা হল যাঁদের হাত দিয়ে বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা বিস্তারের কাজটি সমাধা হবার কথা তাঁরা ক্লাসে বাংলায় পড়ানোর উদ্যোগ নিলেন না বা বাংলায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বইপত্র লিখতে এগিয়ে এলেন না (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন)। এর ফলে উপরে উল্লেখ-করা দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমস্যাদুটি আরও ঘনীভূত হল!
বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা: সরকারি উদ্যোগ ও তার সীমাবদ্ধতা
বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসারে যেসব প্রতিবন্ধকের কথা আলোচনা করা হল তার নিরসনে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্তরে একসময় যথেষ্ট সক্রিয়তা লক্ষ করা গিয়েছিল। কোঠারি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষার উপযোগী পাঠ্য ও পাঠসহায়ক গ্রন্থের অভাবমোচনের লক্ষ্যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে, পশ্চিমবঙ্গে স্থাপিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ’। সাধারণ স্নাতক ও সাম্মানিক স্নাতক স্তরের উপযোগী বই ছাড়াও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে কাজে লাগবার মতো বাংলা বইও এখান থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে সাতের দশকের মাঝামাঝি। কিন্তু পুস্তক পর্ষদের প্রকাশনায় সত্যিকারের জোয়ার এল আটের ও নয়ের দশকে। ২০০০ সালের পুস্তকতালিকায় দেখা যায় যে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের সাতাশটি বিষয়ে প্রায় সাড়ে চারশো বই পর্ষদ প্রকাশ করেছে বা শীঘ্র প্রকাশ করতে চলেছে। পর্ষদের প্রকাশনায় এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পিছনে সরকারের নীতিগত অবস্থান ছিল এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ১৯৭৭-এ পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের ফলে ক্ষমতায় আসে বামপন্থী দলগুলির জোট। এই বামফ্রন্ট সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন করা। এমনকি বিদ্যালয় স্তরে মাতৃভাষানির্ভর পঠনপাঠনের চূড়ান্ত রূপদানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্তর থেকে দ্বিতীয় ভাষা (ইংরেজি) শিক্ষণের মূলোচ্ছেদ ঘটিয়ে এই শিক্ষানীতি প্রবল বিতর্কেরও সম্মুখীন হয়েছিল; অবশ্য তা বর্তমান আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু মাতৃভাষাশ্রয়ী শিক্ষাদানের নীতির কারণে আখেরে উপকৃত হল পর্ষদের প্রকাশনা। কারণ সরকারী অনুদান ছাড়া এই ব্যাপক প্রকল্পটি দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সাম্মানিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে চিরাচরিত পঠনপাঠনে বাংলা ভাষার স্থান ছিল প্রায় ব্রাত্য। ফলে পর্ষদের বইগুলির আশু বাণিজ্যিক সাফল্যের সম্ভাবনা ছিল না। উপরন্তু ছাত্রস্বার্থে এবং সম্ভবত নিরঙ্কুশ প্রচলনের উদ্দেশ্যে বইগুলির মূল্য রাখা হয়েছিল অবিশ্বাস্য রকমের কম! বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি এমনকি প্রযুক্তিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানও পর্ষদের প্রকাশনা-প্রকল্পে স্থান পেয়েছে! সেই সময়ের নিরিখে অপেক্ষাকৃত কম চর্চিত বিষয়, যেমন প্রতিরক্ষাবিদ্যা, পরিবেশবিজ্ঞান, গ্রন্থাগারবিজ্ঞান, সাংবাদিকতা পুস্তকতালিকা থেকে বাদ পড়েনি। বাণিজ্য, মনোবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা- এসবও এসে গেছে পর্ষদের কর্মকাণ্ডের আওতায়।[v] হয়তো কোনো কোনো বইয়ের ভাষা সামান্য জড়তাপূর্ণ, হয়তো উপযুক্ত পরিভাষার অভাবে লেখকের স্বরচিত পরিভাষা হয়ে পড়েছে অনাবশ্যক রকমের জটিল, তবুও এই বিপুল সার্বিক প্রয়াসকে কোনোমতেই লঘু করা যাবে না। মানবিক বিদ্যাচর্চায় স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব- অমলেশ ত্রিপাঠী, সুকুমারী ভট্টাচার্য, গৌরীনাথ শাস্ত্রী, ফণিভূষণ তর্কবাগীশ, হুমায়ুন কবীর, দীনেশচন্দ্র সেন-এর পাশাপাশি, অমলকুমার রায়চৌধুরী, সমরেন্দ্রনাথ ঘোষাল, শ্যামল সেনগুপ্ত, পলাশ বরন পাল-এর মতো প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ও শিক্ষক বা ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, সমর রায়চৌধুরী, মণীশ প্রধান-এর মতো খ্যাতনামা চিকিৎসকদের লেখা বই আগ্রহী পড়ুয়ার হাতে তুলে দেবার কৃতিত্ব নিশ্চয়ই অস্বীকার করবার মতো নয়।
এই সময়ের আর-একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বাংলাভাষায় পঠনপাঠনকে বৈধতা দান। এমনকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানের সাম্মানিক স্নাতক স্তরেও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় প্রশ্ন ছেপে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষাকে নীতিগতভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন। স্নাতকোত্তর স্তরে মানবিকবিদ্যার কোনো কোনো বিষয়েও বাংলা ভাষায় পঠনপাঠন মান্যতা পেল। সাধারণভাবে এদেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব শিক্ষায়তনগুলিতে পড়তে দেখা যায়। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলত সরকার-পোষিত স্কুল-কলেজ তো বটেই, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচরণবিধিও প্রায়শই সরকারী নীতির অনুকূলে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই যে-সাম্মানিক স্নাতক স্তরে পঠনপাঠন-পরীক্ষার মাধ্যম ছিল কেবলমাত্র ইংরেজি, সেখানে বাংলা ভাষাকেও মাধ্যম হিসেবে জায়গা করে দেওয়া সম্ভব হল সরকারি শিক্ষানীতির সুবাদেই।
এই পর্বে আর যেসব সদর্থক প্রয়াস হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৫-তে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’-র প্রতিষ্ঠা। এই আকাদেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগপর্বে যে দীর্ঘ কর্মশালা সংগঠিত হয়েছিল সেখানে বাংলা পরিভাষার সমস্যার নানাদিক খতিয়ে দেখে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়।[vi] পরিভাষা প্রণয়নের কাজে বাংলা আকাদেমির পাশাপাশি এগিয়ে আসে ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ’ও। আইন, প্রশাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রের পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতেও পরিভাষা-অভিধান প্রণয়ন করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসারের সমস্যার সমাধানে নির্দিষ্ট সরকারি নীতির প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই সবকিছু মিলিয়ে মনে হতেই পারে যে, পশ্চিমবঙ্গে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসারে যে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাতে ভবিষ্যৎ সফলতার সম্ভাবনা ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু এখন একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষে দাঁড়িয়ে সেই উদ্যোগের কোনো সুফল কেন পাওয়া গেল না- এই প্রশ্ন উঠবেই।
বাস্তব পরিস্থিতি বলছে যে, বহু প্রচেষ্টায় যেসব পরিভাষা রচিত হয়েছিল তার ব্যবহারের অবকাশই পাওয়া গেল না- কী সরকারি কাজে, কী উচ্চশিক্ষায়! যে রাজ্য পুস্তক পর্ষদ প্রথম তিন দশকে বিপুল সংখ্যক বাংলা পাঠ্য ও পাঠসহায়ক বই ছেপেছিল, পরবর্তী প্রায় দেড় দশক জুড়ে তার ব্যাপক অবক্ষয় ঘটল। পনেরো বছরে বইয়ের সংখ্যা (title) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে: অর্থনীতিতে ৭১%, ইতিহাসে ৪০%, প্রযুক্তিবিদ্যায় ৬৭%, গণিতে ৭১%, দর্শনে ৩৮%, পদার্থবিদ্যায় ৬৩%, প্রাণিবিজ্ঞানে ৫০%, ভূবিদ্যায় ৫৩%, রসায়নে ৩০%, রাশিবিজ্ঞানে ৩৩%, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৪০%, শিক্ষক শিক্ষণে ৪৩%! আর সহজবোধ্য কারণে এই প্রবণতা বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতেই প্রকটতর! বহু পুরোনো বই-ই (title) ছাপাখানার চৌহদ্দির বাইরে চলে গেছে। নতুন বই ছাপা হয়েছে হাতে-গোনা কয়েকটিমাত্র বিষয়ে।[vii] বরং দেখতে পাচ্ছি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের নতুন বই গত পাঁচ বছরে দু-চারটির বেশি ছাপা না-হলেও পর্ষদ উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার উদ্যোগ নিচ্ছে! পুস্তক পর্ষদের ওয়েবসাইটে ঘোষিত নীতি হল “production and publication of text books in Bengali at undergraduate/post-graduate level”।[viii] অর্থাৎ অস্তিত্বরক্ষার জন্য পুস্তক পর্ষদকে এখন যা ছাপতে হচ্ছে তা তার ঘোষিত নীতির সঙ্গে অনেকাংশে সাযুজ্যহীন! অন্যদিকে মাতৃভাষায় পঠনপাঠনে, অন্তত বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রায় এক দশক পূর্বেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানের সাম্মানিক স্তরের প্রশ্নপত্রে বাংলাকে বিসর্জন দিয়েছেন! মনে আছে প্রায় দু-আড়াই দশক আগে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত গণিতের এক গবেষক স্থিতিস্থাপক মাধ্যমে তরঙ্গগতির কিছু সমস্যা নিয়ে বাংলাভাষায় লেখা একটি গবেষণা-সন্দর্ভ জমা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে প্রবল বিড়ম্বনার সম্মুখীন করেছিলেন! সাম্মানিক স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন কি গণিতের কোনো ছাত্র বাংলায় উত্তর লিখছেন এটা এখনও এক ভয়ংকর কষ্টকল্পনা মাত্র! সুতরাং সরকারি উদ্যোগ অন্তত প্রথম পর্বে দেখা গেলেও বাংলাভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রসারের স্বপ্ন, অন্তত বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে, ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
শেষকথা
উচ্চশিক্ষার প্রাঙ্গণে বাংলাভাষার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যাগুলির কথা বর্তমান আলোচনায় আমরা উল্লেখ করেছি। এই প্রসঙ্গে প্রধান প্রধান যে বিষয়গুলি উঠে এল সেগুলি মোটামুটি এইরকম:
-
-
-
-
- উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে ব্যবহৃত বইপত্র, জার্নাল এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ভাষা হিসেবে ইংরেজি অপরিহার্য। কেবলমাত্র মাতৃভাষায় পারঙ্গম শিক্ষার্থীর পক্ষে সেই স্তরটি তাই অনধিগম্যই থেকে যায়।
- উচ্চশিক্ষার বনিয়াদি স্তরের উপযোগী বইপত্রেরও অভাব রয়েছে বাংলাভাষায়। এই অভাব মোচনের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত উদ্যোগও দেখা যায়নি।
- উচ্চতর বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে, বিশেষত বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায়, ধারাবাহিক অনুশীলনের যে সংস্কৃতি গড়ে ওঠা প্রয়োজন তা কখনোই সেভাবে বাংলাভাষায় দেখা যায়নি।
- ঔপনিবেশিক আনুগত্যের উত্তরাধিকারী সাধারণ মানুষ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কখনোই বাংলাভাষার প্রতি নিরঙ্কুশ আস্থা রাখতে পারেননি এবং ভুবনায়নের উত্তরকালে সেই প্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে।
- উচ্চশিক্ষায় শিক্ষণকার্যে নিযুক্ত শিক্ষাব্রতী মানুষদেরও এক বড়ো অংশই কখনও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেননি যে, বাংলাতেও উচ্চশিক্ষা দেওয়া যেতে পারে; সেই অভিমুখে তাঁদের সচেতন প্রয়াসও হয়তো তাই চোখে পড়েনি।
-
-
-
প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতির বদল কি সম্ভব? নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল! তবে নীতিগতভাবে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবার বিষয়টিকে যদি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করতে হয় তাহলে তার জন্য অবশ্যই প্রয়াস জারি রাখতেই হবে। এখানে দুটি বিষয় স্মর্তব্য।
প্রথমত, যে-কোনো বৃহৎ উদ্যোগে ফললাভের জন্য ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত যে বিপুল সমস্যা এবং সাধারণ মানুষের অনীহাজনিত দুস্তর বাধা অতিক্রম করে এই সাফল্য অর্জন করতে হবে তা যে সেই ধৈর্য ধারণের কালকে দীর্ঘায়িত করবে সন্দেহ নেই। এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার কাল যাপন করার জন্য যে সহায়তার প্রয়োজন তা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পাওয়া অসম্ভব। সুতরাং একসময়ে সরকারি স্তরে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তা যেন আকস্মিকভাবে বন্ধ করে না দেওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে যে, একমাত্র জনরুচিই যেন সরকারি শিক্ষানীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হয়ে না দাঁড়ায়।
দ্বিতীয়ত, এবং সম্ভবত মুখ্যত, প্রয়োজন হল বাংলা-মাধ্যমের উচ্চশিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজি শিক্ষারও সন্তোষজনক ব্যবস্থা করা। সাম্প্রতিক অতীতে শিশুদের ইংরেজি শিক্ষার নীতি নিয়ে যেসব পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে, নানা কারণেই তা সফল হয়নি। সুতরাং এই ক্ষেত্রটিতে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার অর্থ ইংরেজি বিতারণ নয়। আবার ইংরেজি শেখার মানেও কিন্তু মাতৃভাষাকে বর্জন করা নয়; মাতৃভাষার প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রেখেও অন্তত বাইরের জগতের কেজো ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিখতে-শেখাতে হবে। হয়তো তাহলেই সম্ভাব্য অনিশ্চয়তার অহেতুক শঙ্কায় বাংলা বর্জনের হুজুগ ঠেকানো সম্ভব। আর অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার মতোই বাংলাভাষাকেও ঠেলে সরিয়ে দেবার রাজনৈতিক-সমাজনৈতিক অভিসন্ধিও প্রতিহত করতে হবে একইসঙ্গে। এই পথ ধরেই বাংলাভাষায় যথার্থ উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটবে- এই আশা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে চাই।
তথ্যসূত্র:
[i] বিভাস ভট্টাচার্য, ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা: ধূসর অতীত ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ’, হৃদয়ে বাংলা, সম্পাঃ রণজিৎ দত্ত, পৃঃ ২৪০-২৪৬, ভাষা সংস্কৃতি মঞ্চ, বারাসাত (২০১৭)
[ii] সত্যেন্দ্রনাথ বসু, ‘মাতৃভাষা’, রচনা সঙ্কলন, পৃঃ ১০৪, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা (১৩৮৭ ব.)
[iii] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-রচনাবলী (সুলভ সং), ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৭২১, বিশ্বভারতী, কলিকাতা (১৩৯৫ ব.)
[iv] অমর্ত্য সেন, জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি, পৃঃ ১১, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা (১৪০৫ ব.)
[v] বিভাস ভট্টাচার্য, ‘বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসার: একটি সরকারি উদ্যোগের সম্ভাবনা ও ব্যর্থতা’, অন্তরা, ভাষাদিবস সংখ্যা, সম্পাঃ রণজিৎ দত্ত, পৃঃ ১৭-১৯, ভাষা সংস্কৃতি মঞ্চ, বারাসাত (২০১৮)
[vi] প্রসঙ্গ বাংলাভাষা, পৃঃ ১৬২-২০৫, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার (১৯৮৬)
[vii] বিভাস ভট্টাচার্য, ‘বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার প্রসার: একটি সরকারি উদ্যোগের সম্ভাবনা ও ব্যর্থতা’, অন্তরা, ভাষাদিবস সংখ্যা, সম্পাঃ রণজিৎ দত্ত, পৃঃ ১৭-১৯, ভাষা সংস্কৃতি মঞ্চ, বারাসাত (২০১৮)
[viii] আন্তর্জাল- https://wbbookboard.org/history (২০ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে সংগৃহীত)
ছবিগুলি আন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত