গল্প বলা ‘কাজলা দিদি’রা

গল্প বলা ‘কাজলা দিদি’রা

সিন্ডারেলার গল্পের পরিরানির মত আমার ছোটোবেলাতেও ছিলেন একজন আশ্চর্য মানুষ! এক নিমেষে আমার ছোট্ট একরত্তি জীবনের চেনা দুনিয়াটা তিনি বদলে দিতেন হাজার রংমশালের আলোয়! বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতেই ডাক দিতেন নাম ধরে, আর অমনি ছোট্ট আমি দৌড়ে গিয়ে এক লাফে কোলে – ফুসমন্তরে অমনি ঝুলি থেকে বের হয়ে হাতে উঠত বাদামি মোড়ক! বই!

হ্যাঁ বাংলা বই, নানান ধরণের নানান স্বাদের! আমার সেই বই-কাকুর দেওয়া নিত্য নতুন জাদুদন্ডের পরশে আমি পাড়ি জমাতাম কল্পনার রাজ্যে!

পড়ি ক্লাস থ্রিতে। হাতে এল এক আশ্চর্য বই – হান্স অ্যান্ডারসনের রূপকথা! ঘুরি ফিরি পড়ি – সামনে খুলে যায় অজানা জগৎ পরতে পরতে – কখনও নিজেকে ভাবি সেই ঠান্ডায় কাঁপা ছোট্ট মেয়েটি, যার দেশলাই বাক্সের শেষ কাঠিটিও ফুরিয়ে যায়, কখনও বা কল্পনা করি সেই ছোট্ট জলকুমারিকে – যাকে লেজের বদলে পা পেতে গিয়ে দাম দিতে হল গলার স্বর!

বারে বারে পড়ি আর বুঝি এ সব গল্প আমার এতদিনের চেনা ভূত, প্রেত, টুনটুনি, রাক্ষস-খোক্কসের থেকে একদম আলাদা – এ লেখা অন্যদেশের! সত্যি তো তাই – নজরে এল, এ বই অনুবাদ করেছেন লীলা মজুমদার! কিন্তু পড়ে বোঝার সাধ্যটি নেই যে আসল বইটি বাংলাতে লেখা হয়নি!

কে এই অনুবাদিকা? যাঁর জন্যে বাংলার এক গ্রামের মেয়ের কাছে ধরা দিল কোন সুদূর শীতের দেশের ডেইজিফুল?

কৌতূহল মেটাতে উপস্থিত বাবার কাছে – উদ্দেশ্য অবশ্য আরও আছে, জানতে খুব ইচ্ছে আরো কোনও এমন বই এই লেখিকা অনুবাদ করেছেন কিনা। তাহলে পড়ে ফেলতে হবে!

লীলা মজুমদার

বাবা একগাল হেসে বললেন, “লীলা মজুমদার! জানিস উনি কে? মস্ত বড় লেখিকা, সুকুমার রায়ের বোন, সত্যজিতের পিসি!”

তাই বুঝি! শুনেই তো চোখ ছানাবড়া, মুখ হাঁ! সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ আর ‘খাই খাই’ তো মুখস্থ, আর সত্যজিৎ কে, তাও জানি তখন ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার কল্যাণে!  

মুখের হাঁ বন্ধ করে সবে কিছু বলতে যাব এসে হাজির দাদা, পড়ে সে ক্লাস টেনে – ভাব যেন সবজান্তা! আমার প্রশ্ন কানে যেতেই ছুটে এসেছে! শুরু হল তড়বড়ানি, “তুই জানতিস না এটা, আরে ওই বাড়ির সব্বাই লেখক লেখিকা। ইনি তো সুকুমারের খুড়তুতো বোন, দারুণ লেখিকা, সুকুমারের নিজের দিদিও লেখেন, সুখলতা রাও…”

কথা শেষ হবার আগেই আমিও তাড়াতাড়ি বলে উঠি, “আমি তো পড়েছি সুখলতা রাও-এর গল্প, আমাদের বাংলা বই কিশলয়ে আছে, ‘গরিব মুচির গল্প’ – ছোট্ট ছোট্ট ভূতের ছানারা এসে রাতে জুতো বানিয়ে রেখে দিত!”

নিজেকে বিজ্ঞ প্রমাণ করার এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? ভাবখানা যেন, “রাজার ঘরে যে ধন আছে টুনির ঘরেও সে ধন আছে…!”

বাবা হেসে বললেন, “একদম ঠিক বলেছিস! আর এক বোনও আছেন, পুণ্যলতা চক্রবর্তী, মাসে মাসে যে ‘সন্দেশ’ নিয়ে কে আগে পড়বি বলে তোদের ঝগড়া, সেই সন্দেশ পত্রিকার অফিস তো ওনার বাড়িতেই।”

কথা শেষ না করে বাবা হাত বাড়ালেন সামনের টেবিলে, হাতে সন্দেশ পত্রিকা, “দেখ সন্দেশের সম্পাদকমন্ডলী – লীলা মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, আর নলিনী দাশ। মলাটটা খেয়াল করিসনি কখনও তাই না?”

মাথাটা নিচু করেই আস্তে আস্তে বলে উঠি, “নলিনী দাশ, মানে গণ্ডালু…”

বিজ্ঞ দাদা চাঁটি মারে মাথায়, “হ্যাঁরে, এই নলিনী দাশ আবার পুণ্যলতার মেয়ে, বুঝলি?”

গণ্ডালু, মানে সাহসী কালু, ভিতু বুলু, আবেগে ভাসা কবি মালু, আর গল্প বলিয়ে টুলু! চারে এক গণ্ডা! তাই গণ্ডালু! চার ‘লু’র নানান জায়গায় বেড়ানো আর অ্যাডভেঞ্চার! খুব খুব প্রিয়!

চারজন মেয়েকে নিয়ে রহস্য অভিযানের উদ্দেশ্য সেই বয়েসে ভালো করে বুঝিনি – আজ ভাবি, মেয়েরাও যে সাহস আর বুদ্ধি দিয়ে রহস্য রোমাঞ্চের জগতে পাড়ি দিতে পারে, সেটা বোধহয় ছেলেবেলা থেকে শিশুমনের মধ্যে গেঁথে দিতেই নলিনী লিখেছিলেন চার কন্যার অভিযানের গল্প – একের পর এক!

যাই হোক, ফিরে যাই আবার ছোটোবেলায়। এত সব লেখিকাদের খোঁজ পেয়ে আমি তো দিশেহারা। কাঙালকে শাকের খেত দেখালে যা হয় আর কী!

মন দিয়ে ভাবছি বই-কাকুর কাছে এঁদের মধ্যে থেকে কার বই উপহার নেওয়া যায়, সামনেই জন্মদিন!

দাদা যেন হঠাৎ তখন কল্পতরু! “আচ্ছা, আমি তোর জন্মদিনে লীলা মজুমদারের হলদে পাখির পালক দেব!” অবশ্য দাদাসুলভ টিপ্পুনিটিও দিল সঙ্গে সঙ্গে, “বুঝবি না হয়তো সব কিছু, তবু পড়!”

তখন রেগে গেছিলুম বটে, কিন্তু সারা জীবন ধরে সত্যি সত্যি ‘হলদে পাখির পালক’ বুঝতে পারলুম কই!

বুঝলে বোগিদাদা, লখনিয়া তোমাদের মতো ছিল, কষ্ট পাবার ভয়ে কাউকে ভালবাসত না, কোনো মানুষকে না, কোনো জিনিসকে না। মানুষ চলে যায়, ভুলে যায়, মরে যায় আর জিনিস ভেঙে যায়, চুরি যায়, হারিয়ে যায়, মরচে ধরে, পোকায় খায়। কী হবে ভালোবেসে?

এমন জিনিস বোঝার মন তো তৈরি হল না আজও!  

তা পাওয়া গেল জন্মদিনে, হলদে পাখির পালক! পড়া শেষ হতেই শুরু হল পালক খোঁজা! আমাদের সেই গ্রামের বাড়িতে আসে হরেক রকমের পাখি, কত রঙের পালক পড়ে উঠোনে, সবুজ, খয়েরি, বাদামি, নীল, কালো – কিন্তু হলদে পাখির পালক আর পাওয়া গেল না! খুঁজে চলেছি আজও! আসলে, “সত্যি যে কোথায় শেষ হয়, স্বপ্ন কোথায় শুরু হয় বলা মুশকিল” যে!

লীলা মজুমদারের লেখা নিয়ে বলতে গেলে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি! টংলিং, গুপির গুপ্ত খাতা, বদ্যিনাথের বড়ি, পদিপিসীর বর্মী বাক্স – যার মলাটে সত্যজিতের আঁকা লাল রঙের ড্রাগনওয়ালা বাক্সের ছবি – মাকু, বাতাস বাড়ি, নেপোর বই! নেপোর বই-এর প্রসঙ্গে একটা মজার কথা মনে পড়ল। ছোটোবেলায় বেড়াল পোষার খুব শখ ছিল আমার। জামার পকেটে বেড়ালছানাকে পুরে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতুম! মা বকলে নেপোর বই-এর লীলার পোষা বেড়াল, নেপোলিয়নের কথা বলে লীলারই উক্তি নকল করে বলতুম, “বুঝলে মা, এসব হচ্ছে ‘বেড়ালীর ব্যাপার! খুব রসের!’ তুমি কী বুঝবে!” মায়ের রাগী রাগী মুখে চাপা হাসি ফুটে উঠত!

লীলার ভাইপো, প্রসাদরঞ্জনের লেখা থেকে জানতে পারি, লীলার প্রথম বই বদ্যিনাথের বড়ি-র প্রকাশক ছিলেন ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য। ‘প্রকাশকের বক্তব্য’ হিসেবে ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ লিখেছেন, “বাংলা সাহিত্যে শ্রীযুক্ত লীলা মজুমদারের আবির্ভাব একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা… লেখিকার গল্প বলার অসাধারণ ক্ষমতা, অদ্ভুত অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টির কৌশল, সম্পূর্ণ নিজস্ব অতি-সরস বর্ণনাভঙ্গী এবং সর্বোপরি অনাবিল হাস্যরস সৃষ্টির অদ্ভুত শক্তি শুধু ছোটদের নয়, বড়দেরও রীতির কৌতূহলী করে তোলে।” ১৯৩৯ সালে লেখা জাত জহুরি ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণের এই বক্তব্য আজও হীরের মতই দ্যুতিময়!

সিগনেট প্রেস থেকে বেরোনো দিন-দুপুরে বই নিয়ে রাজশেখর বসু লিখেছিলেন, “ছেলেমানুষ আর বুড়োমানুষ এক জগতে বাস করে, কিন্তু দুজনের দৃষ্টি সমান নয়! আমরা ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে যে অদ্ভুতলোকের সংস্পর্শে আসি বড়ো হলে তা ভুলে যাই। দৈবক্রমে কেউ কেউ বড়ো হয়েও বাল্যের দিব্যদৃষ্টি বজায় রাখেন। ‘দিন-দুপুরে’র লেখিকা লীলা মজুমদারের সেই দুর্লভ বাল্য দৃষ্টি আছে!”

লীলার লীলা কি অল্পকথায় সারা যায়?

ফিরি আবার নিজের ছোটোবেলাতে। সেই যে জন্মদিনের কথা বলছিলুম, তা গেল নভেম্বরে, সামনের জানুয়ারিতে হল নতুন ক্লাস, নতুন বই। ওমা, তাজ্জব ব্যাপার! বাংলা বই কিশলয়ে দেখি পুণ্যলতা চক্রবর্তীর লেখা একটা স্মৃতিচারণ, ‘পুরীর সমুদ্র।’ স্কুলে পড়াবার আগেই পড়ে ফেলা হল চটপট! মজার কথা কী, তার কয়েক সপ্তাহ বাদেই আমরা গেলাম পুরী, সেই প্রথম সমুদ্র দেখা আমার – দেখলাম আর পড়লাম প্রেমে! পুরীর প্রতি সেই প্রেম আজও অটুট! কত সমুদ্রসৈকত তো তারপর দেখলাম, কিন্তু পুরীর সমুদ্র সেই যে জায়গাটি নিয়ে নিয়েছে, সে আর বদলাল না! যাই হোক, আমি তো তখন সদ্য ‘পুরীর সমুদ্র’ পড়ে গেছি, আর মেলাচ্ছি একটা একটা করে! কিন্তু পুণ্যলতা লিখেছেন হয়ত তার পঞ্চাশ বা তারও বেশি বছর আগে, তাই মিলছে না অনেক কিছুই – মেলার কথাও নয়! অনেক কিছু ভুলে গেছি সে তল্লাশির, তবে একটা কথা বেশ স্পষ্ট মনে আছে, খুব খুঁজেছিলাম ‘হারমিট ক্র্যাব।’ পুণ্যলতার ভাষায় ‘সন্ন্যাসী কাঁকড়া,’ সে আর দেখতে পাইনি!

পুণ্যলতা চক্রবর্তীর আত্মজীবনী

তবে পুরী থেকে ফিরে আসার পর উপহার এসেছিল বই-কাকুর কাছ থেকে, পুণ্যলতার লেখা ছোটবেলার দিনগুলি! কত বার যে বইটা পড়েছিলাম তার ইয়ত্তা নেই! পড়ে পড়ে যে বাড়িতে পুণ্যলতা থাকতেন তার ঘরগুলো, একতলা, দোতলা, প্রতিটি দেরাজ, তাতে সাজানো পুতুল খেলনা বাসনপত্র, বাড়ির প্রকাণ্ড ছাদ সব এমন মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল বোধহয় সেই বাড়িতে চোখ বেঁধে ছেড়ে দিলেও আমি সব খুঁজে পেতাম! খুব হিংসেও হত পড়তে পড়তে। কত মানুষজন সেই বাড়িতে, কত তুতো ভাইবোনেরা! আমার পুতুলদের সেই সব নামে ডাকতুম! অনেক পরে ছেলে যখন ছোটো তখন হাতে এল, ছোট্ট ছোট্ট গল্প! মিষ্টি মিষ্টি এক দেড়পাতার গল্প, সঙ্গে সত্যজিতের আঁকা ছবি! ‘আদুরে খুকু,’ ‘ভীতু নিতু,’ ‘লালির ছানারা,’ ‘উমরী-ঝুমরী,’ কত কত বার যে পড়ে শুনিয়েছি ছেলেকে, পরে আবার মেয়েকে তার ইয়ত্তা নেই! ছোটদের মনের মত করে লেখা এমন বই বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই!

সেই ছোটবেলায় সুখলতা রাওয়ের কথা শোনার পর পড়েছি তাঁর বেশ কিছু বই। তখন অনুবাদ সাহিত্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। গ্রিম ভাইদের রূপকথার কথা তো জেনেছি কত পরে! ছোটোবেলা ভরে গেছিল সুখলতার কুড়িটি দেশের রূপকথার গল্পের বই ‘নানান দেশের গল্পে’র সুগন্ধে! সুখলতাই প্রথম বাংলায় এঁকেছিলেন কমিক স্ট্রিপ! রবীন্দ্রনাথ খুবই পছন্দ করতেন সুখলতার ছবি। ‘সন্দেশে’ রবি ঠাকুরের কবিতার জন্য ছবি এঁকেছেন সুখলতা। সুখলতার ‘বেহুলার গল্প’-এর ইংরাজি অনুবাদ বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ!

সুখলতার ভাবনা ছিল অত্যন্ত আধুনিক, শিশু মনস্তত্ত্বভিত্তিক! তাঁর মতে, “শিশুসাহিত্য নির্মল হবে। তাতে কোনও প্রকার মন্দ ভাবের প্রশ্রয় বা গুরুজনদের প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব থাকবে না। কারও প্রতি বিদ্বেষের বা অবজ্ঞার ভাব থাকবে না এবং মনে ব্যথা দিয়ে উপহাস বা আমোদ করা থাকবে না…।” ‘প্রবাসী’তে ‘শিশুসাহিত্যে সুরুচি’ (১৯৩২) প্রবন্ধে তিনি লিখছেন,

আমাদের দেশে সেকালে কাঁটা দিয়া পুঁতিয়া ফেলার নিষ্ঠুর শাস্তি ভোগ করিতে হইত। সেই শাস্তির কথা শুনিয়া অনেক কোমলমতি বালক-বালিকার প্রাণ যে শিহরিয়া উঠে, তাহা আমি জানি। ‘বেশ হল, যেমন কর্ম তেমনি ফল,’ এ কথায় তাহাদের মন সায় দেয় না, দেওয়া বাঞ্ছনীয়ও নয়।

সুখলতার মৃত্যুর পরে বঙ্গীয় সাহিত্যজগৎ তাই অনুভব করেছিল বাংলার শিশুসাহিত্য মাতৃহীন হল।

‘মা হারা’ই বটে! সারা জীবন ধরে শিশুশিক্ষার উপযোগী নানা ধরনের লেখা আর তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা বাংলা সাহিত্যে ক’জনই বা করেছেন! শুধুমাত্র বর্ণশিক্ষার জন্যই লেখা হল সাতটি বই! তাঁর প্রথম বই ‘পড়াশুনা’ (১৯১৭ সাল)-র আলোচনা ‘ভারতী’ পত্রিকায়,

শিশুর চিত্তবৃত্তি বুঝিয়া সহজ সরল ভাবে নারী যেমন শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করিতে পারেন, পুরুষ কখনই তেমনটি পারেন না। সেই জন্যই এই গ্রন্থে মহিলা লেখিকা শিশুকে বর্ণ পরিচয় দিবার যে পন্থা নির্দেশ করিয়াছেন, তাহা শুধুই অভিনব নহে, তাহা সহজ হইয়াছে এবং কাজের হইয়াছে।

ছেলেকে ‘নিজে শেখ’ বইটির প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ পড়াতে গিয়ে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলাম সে সত্য!

গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় – ববির বন্ধু

বড়ো হচ্ছি আর বই পড়ার পরিধিও বাড়ছে! কে দিয়েছিলেন মনে নেই, হাতে এল একটা আশ্চর্য বই, ববির বন্ধু, লেখিকা গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লেখিকা অপরিচিত নন। আনন্দমেলা পূজাবার্ষিকীতে পড়ে ফেলেছি ওনার গল্প, ‘সরল পুটি,’ পুঁটিমাছ বড় হলে নাকি সরল পুঁটি হয়! সে এক জটিল তত্ত্ব! গল্পটা এতদিন পরেও মনে আছে, কারণ যে পুকুরে মাছ ধরতে যাওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল রাজপুরে। রাজপুর আমার পাশের গ্রাম! পরে সেখানে চাকরি করেছি প্রায় বিশ বছর! কিন্তু সেই বয়েসে নিজেদের একটা চেনা জায়গা বইয়ের পাতায় দেখে ভা্রি অবাক হয়েছিলাম।

আসি ববির বন্ধু-র কথায়! পশু আর মানুষের সম্পর্ক নিয়ে এমন বই বাংলা সাহিত্যে বোধহয় খুব একটা নেই! পোষা ভাল্লুক ববিকে নিয়ে এ গল্প শুধু ছোটোদের বলি কী করে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে! লিখতে বসে মনে পড়ছে এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায়ের বলা সেই উক্তিটি, “ছোটদের লেখার একটি প্রধান ও প্রচলিত সংজ্ঞা হল, এটি সব বয়সী পাঠক পাঠিকাকে সমান ভাবে আকর্ষণ করবে!” সে বয়েসে সেই যুদ্ধের প্রকৃত ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকলেও বেশ ভয় পেয়েছিলাম বর্ণনায়। আজ পরিষ্কার বুঝতে পারি সবটুকু! আজও মনে ফিরে ফিরে আসে প্রশ্ন, কী হল আবদুল আর ববির? আসলে মনে মনে আমরা সবাই ববির বন্ধু হয়ে যাই লেখা আর বর্ণনার জাদুতে!

পূজাবার্ষিকীর পাশাপাশি আসত দেবসাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত মায়াবী মলাটওয়ালা বইগুলি, যেন এক একটি ফুলের ডালি! তেমনই একটি বইতে পেলাম, “কী করে বুঝব!” লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী! আশাপূর্ণাকে তখন ভাল রকম চিনি, না না প্রথম প্রতিশ্রুতির জন্যে নয়! সে সব তো তখনও আমার ভবিষ্যতের পাঠের গর্ভে! চিনি গজ উকিলের হত্যা-রহস্য-এর জন্যে! ‘কী করে বুঝব’ আমাকে গভীর ভাবনার সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল এ বেশ মনে আছে। মাঝে মাঝে মনে হত বুকুটা কী বোকা! অমন কী বলে দিতে আছে! বড় হতে হতে একটা খাঁটি কথা সার বুঝেছি যে অপ্রিয় সত্য, শিব বা সুন্দর কোনটাই নয়!

আশাপূর্ণা হয়ে গেলেন আর এক প্রিয় লেখিকা! একটাও লেখা ছাড়ি না! আজও নয় অবশ্য! কী যে জাদু সেই সব লেখায়! ছোটরা আপ্লুত হয় আনন্দে আর বড়রা খুঁজে পান হাসির মোড়কে তীব্র শ্লেষের ব্যঞ্জনা! লীলার মত আশাপূর্ণাকে নিয়ে লিখতে গেলেও বোধকরি একটা গোটা বইয়ের পরিসরেও ধরবে না! গজ উকিলের হত্যা-রহস্য তো এক প্রহসন। আদপেই খুন না হওয়া জ্যান্ত মানুষটাকে মর্গে দিয়ে দেওয়া হল, সেই নিয়ে গোটা গল্প। শেষে অবশ্য পুলিশ অফিসার চোখের সামনেই থাকা টাকার খোঁজও পায়নি জেনে ভারী মজা লেগেছিল! হেসে কুটিপাটি খেয়েছিলুম ‘গামছা হচ্ছে এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র’– এই লাইনটা পড়ে! যেমন ভাষা তেমন চলন!

‘নিজে বুঝে নিন’ গল্পের একটা দুটি লাইন না বলে পারছি না! ভূত বৈকুণ্ঠ মিস্ত্রি জমিদার জগদীশকে বলছে,

আর ফাঁসি! তাও মাঝে মাঝে দু-একটা প্রক্সি চলে বই কী! তা ওসব হল গিয়ে পয়সাওলা লোকদের কারবার! বৈকুণ্ঠ মিস্ত্রির বলে পান্তার ওপর নুন জুটত না! সে কিনতে যাবে ফাঁসি খাবার মানুষ! ছ্যাঃ!

অথবা,

আহা! বড় ভালো নামটি দিলেন কর্তা, ‘অপোদেবতা!’ বাড়তি একটা ‘অপো’ থাকলেও দেবতার দরে চলে এলুম তাহলে?”

এ গল্প কি শুধুই ছোটোদের?

আর একটা গল্প ‘শামুকের খোলা!’ শামুকের খোলা দিয়ে হাত কাটাকুটি করে পাণিনি নাকি নিজের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছিলেন, এমন বলে গেলেন এক গুরুদেব! ব্যাস! মেজঠাকুমা সেই শামুকের খোলা দিয়ে বদলে দিলেন নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ! নিজেও অনেকবার সেই বিষয়ে ভেবেছিলুম সেই বয়েসে, কিন্তু হাতের রেখা বদলালে ভালোর বদলে যদি মন্দ করে ফেলি সেই ভয়ে ভাবনা বিনষ্ট হয়েছিল অঙ্কুরেই! তখন ভালো করে বুঝিনি, কিন্তু আজ মনে হয় শিশু কিশোরদের অন্ধবিশ্বাসের কালো মেঘ এমন সরস হাসির গল্পের মধ্যে দিয়ে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন আশাপূর্ণা!

মকবুলা মনজুর – ডানপিটে ছেলে

বড়ো হতে হতে এবার সব বিষয়, সব স্বাদের গল্প নির্বিচারে পাঠ! দেশ, নবকল্লোল, প্রসাদ, আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে আনন্দমেলা, কিশোরভারতী, শুকতারা পড়াও চলছে সমান তালে! আর শুরু হয়েছে বইমেলা যাওয়া! কত নতুন নতুন বই, দেখে দেখে আশ আর মেটে না! এতদিন নিজের আর পাশের গ্রামের লাইব্রেরিগুলো দেখেই যে আকুল হত, সে দেখছে প্যাভিলিয়নে প্যাভিলিয়নে নতুন বইয়ের সম্ভার! আটকে রাখা যায় নাকি নিজেকে!

সেই সময়ই খোঁজ পেয়েছিলাম আর এক রত্নভরা সিন্দুকের! বাংলাদেশের লেখিকাদের বই! খুব মনে পড়ে ‘ডানপিটে ছেলে’ বইটির কথা। মকবুলা মনজুর-এর লেখা একটি অনবদ্য বই! বইটি বহু পুরস্কার পেয়েছিল! গল্পটিকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য পরিচালক খান আতাউর রহমান একটি চলচ্চিত্র করেন। ছবিটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পুরস্কার লাভ করে। আমার বইটি কোথায় হারিয়ে গেছে জানি না, কিন্তু চলচ্চিত্রটি দেখতে পেলাম ইউটিউবে! ছোট বড় সবার জন্যে এক অসাধারণ ছবি! মকবুলা জন্মেছিলেন কিন্তু বর্ধমানের কাটোয়ায়! দেশভাগ কি তাঁকে নিয়ে গেল বাংলাদেশে? সব লেখাই তো বাংলায়, তবে এদেশ ওদেশ কেন? এই সব প্রশ্ন আমার মাথায় সেই সময় বেশ কিছুদিন ঘুরপাক খেয়েছিল! মকবুলার আর একটি বইও ছিল সংগ্রহে, ছোটদের মহাভারত, ঝরঝরে সুন্দর লেখা!

বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকজয়ী সেলিনা হোসেন

সেই ছোটবেলায় না পড়লেও আর একটি কিশোর উপন্যাসের কথা না বলে পারছি না। সেলিনা হোসেনের সাগর! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই বইটি। যুদ্ধের সময় কনভয়ের সামনে বুকে পিঠে মাইন বেঁধে নির্ভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাগর যখন বলে, “আরিফ ভাই বাবা-মাকে বলবেন যে সাগর হারিয়ে যায়নি। ও বাবুই পাখির বাসা খুঁজতে গেছে,” তখন ‘রাজর্ষি’র হাসির মত বলে উঠতে ইচ্ছে করে, “এত রক্ত কেন!”

সাগর-এর কথা বলতে গিয়ে আমার মনে পড়ল আর একটি বইয়ের কথা, নাটকের বই! সাগরকন্যা নামের রাজিয়া মাহবুবের লেখা একটি নাটক। সেই ছোটবেলা থেকেই ছোট্ট জলকুমারির ওপর আমার বড্ড মায়া! বইটা দেখে ভেবেছিলাম বোধহয় সেই ধরণের গল্পেরই নাট্যরূপ! কিন্তু আসলে তা নয়! আমার খুব পছন্দের বই হয়ে উঠেছিল সাগরকন্যা! রাজিয়া মাহবুব ছিলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ছাত্রী! শুনেছি ওনার আরও একটি ছোটদের জন্যে লেখা নাটক ভূতভুতুম আর গল্পগ্রন্থ খাপছাড়া-র কথা! খাপছাড়া’র জন্যে রাজিয়া ইউনেসস্কো পুরস্কার পেয়েছিলেন! দুটোর কোনটাই আমার আজও পড়া হয়ে ওঠেনি!  

কৈশোর থেকে তারুণ্যের পথে জীবন! নতুন চিন্তা, নতুন আশা মনে। পুরনো অনেক জিনিসই নতুন করে ভাবা! সেই ভাবনায় ঝটকা নবনীতা দেবসেনের রূপকথা সমগ্র কেনার পর! নবনীতার লেখা তখন পড়েছি পুজোসংখ্যায়! নানা ধরণের লেখা! কিন্তু রূপকথাগুলো কেমন যেন অন্য রকমের ভালো, চেনা চেনা কিন্তু অচেনা আস্বাদ! পরিষ্কার হয়ে গেল রূপকথা সমগ্রের ভূমিকা পড়ে, লেখিকা লিখছেন –

…আমার রূপকথায় একটু নারীশক্তির প্রকাশ আছে। রাজা, রাজপুত্তুরেরা আর নায়ক নন, ভুল ভ্রান্তিভরা সাধারণ মানুষ। রানিরা আর রাজকন্যেরা দুর্বল নন, অসহায় নন, তাঁরাই সক্ষম। বিপন্ন হলে উদ্ধারের ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারেন। নিঃসন্দেহে তাঁরাই নায়ক। তাঁরা নিজেরা শত্রুজয় করেন, কিন্তু বাহুবলে নয় বুদ্ধিবলে। রাজ্য উদ্ধার করেন সুবুদ্ধির বলে। নারী-পুরুষের সামাজিক অসাম্য ঘোচাতে, নারীর আত্মনির্ভরতার প্রতি সম্মান জাগাতে এই দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি। আমরা চাইব সমাজে ছেলেমেয়েরা সমান সম্মান, সমান সুযোগ পাক!

তাই নবনীতার রূপকথায় চন্দনরাজাকে সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে মুক্ত করেন রাজকন্যা চন্দনী। ‘পদ্ম কদমে’ পহ্লবী রাজার কারাগার থেকে জেলের মেয়ে পদ্মকুঁড়ি উদ্ধার করেন রাজপুত্র কদমকুমারকে। ‘সুসনি-কলমি’ গল্পে, গরিব দুটি বোন ছাগলের দুধ খাইয়ে রাজার কঠিন ব্যামো দেয় সারিয়ে আর সেই কাজের পুরস্কার হয় দুই রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে! আবার, ‘বোকা রাজার বুদ্ধিমতী রানি’ গল্পের রানি বার বার স্বপ্নের গল্প ফেঁদে আটকান রাজাকে যুদ্ধে যেতে! সেই রানি আবার বৌমা করে আনেন পাশের রাজ্যের বুদ্ধিমতী রাজকন্যাকে, যে রাজা, মানে তার শ্বশুরকে বুদ্ধি খাটিয়ে শপথ করিয়ে নেয় যুদ্ধ না করতে!

ছোটবেলা পেরিয়ে এসেছি বহুকাল! কিন্তু আজও শিশু কিশোর বেলার সেই বইগুলোর কথা ফিরে ফিরে আসে মনে! তবে একটা কথা, যাঁরা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে এই লেখাটি পড়েছেন সেই পাঠকদের মনে আসতেই পারে যে আমার স্মৃতিচারণে গল্প বলা দিদিরা শুধু কেন? দাদাদের কথা মনে পড়ে না বুঝি? পড়ে তো বটেই, সে আর বলতে! দাদাদের কথাই যদি বলি শুরু হবে সেই ত্রৈলোক্যনাথ থেকে তারপর উপেন্দ্রকিশোর, রবি ঠাকুর, সুকুমার রায়, পরশুরাম, শিবরাম হয়ে শীর্ষেন্দু… অনাবিল আনন্দের ধারা! শিশু কিশোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনার সব প্রবন্ধেই তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা, তাঁদের নিয়েই আলোচনা! এই দাদাদের অবদান অবশ্যই স্বীকার্য! কিন্তু দিদিরাও তো কম কিছু নন! অনেকেরই অজানা যে বাংলায় প্রথম শিশু সাহিত্য পত্রিকা ‘বালক’ প্রকাশ হয়েছিল জ্ঞানদানন্দিনীর সম্পাদনায়! ‘সন্দেশ’ বেরোনোরও আগে সুখলতা কিছুদিন ‘বালকে’ সম্পাদনার কাজ করেন। আকাশ ছোঁয়া এত এত অবদান থাকা সত্ত্বেও কেন গল্প বলা দিদিরা বাংলা সাহিত্যে ব্রাত্য? অস্ফুট উষ্মা আর অবরুদ্ধ অভিমান থেকেই তাই এই লেখার ভাবনা! দেখেও না দেখা অর্ধেক আকাশের কথাই তাই উঠে এল কলমে! একান্তই নিজের অনুভূতি!  

——

তথ্যসূত্র 

আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন (২০১৯, মার্চ ২৩)। ‘সিংহীর মত মন, আরশোলায় অজ্ঞান।’ https://www.anandabazar.com/patrika/a-story-about-shukhalata-rao-1.969428

চক্রবর্তী, পুণ্যলতা(১৯৫৮)ছেলেবেলার দিনগুলি কলকাতাঃ নিউ স্ক্রিপ্ট।

দেবসেন, নবনীতা। রূপকথা সমগ্র। কলকাতাঃ পত্র ভারতী।  

দেবী, আশাপূর্ণা। দশটি কিশোর উপন্যাস। কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স।

রায়, প্রসাদরঞ্জন। ‘গল্পের যাদুকরী লীলা মজুমদার।’ http://www.srishtisandhan.com/srishtisandhan/magazine/Content/CTRN10PLila.pdf

রায়চৌধুরী, সুদেব। (১৯৮১, অক্টোবর ৫)। ‘যে সত্যজিৎ ছোটদের প্রিয় লেখক ও সম্পাদক’ (সত্যজিৎ রায়-এর সাক্ষাৎকার)। আনন্দবাজার পত্রিকা।

শিশু কিশোর সাহিত্যের সংজ্ঞাঃ https://mugberiagangadharmahavidyalaya.org/images/ques_answer/1588647232Shishu%20kishor%20sahityer%20sworup%20songa.pdf

সুখলতা রাও রচনা সংগ্রহ। সুখলতা শতবর্ষ স্মারক পুস্তিকা কলকাতাঃ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, মানবীবিদ্যাচর্চা কেন্দ্র

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত। 

অদিতি পেশায় গণিতের অধ্যাপক। নেশা লেখালেখি। বাস আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। আনন্দবাজার পত্রিকা, সানন্দা, বাংলা লাইভ, অপার বাংলা, বাতায়ন, শব্দের মিছিল, ও কলকাতা, ড্যাশ পত্রিকা সহ পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত 'অভিব্যক্তি নিউ জার্সি' পত্রিকার সম্পাদক।

Related Articles

5 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • sunetra sadhu , January 18, 2022 @ 5:24 pm

    অসম্ভব ভালো একটি লেখা, সমস্ত বই ছোটবেলায় পড়া হয়ে ওঠেনি, লেখিকা পড়বার তৃষ্ণা জাগিয়ে তুললেন।

    • অদিতি ঘোষদস্তিদার , January 20, 2022 @ 6:38 pm

      লেখিকার কলমের সাহস বাড়ায় এসব কমেন্ট!

  • সমর্পিত ঘটক , January 19, 2022 @ 4:58 pm

    অসাধারণ একটি প্রবন্ধ। এ লেখা রেখে দিতে হবে। জানা, অজানা তথ্য আর অমলিন ছোটোবেলা এ লেখার পরতে পরতে। লেখিকাকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

  • অদিতি ঘোষদস্তিদার , January 20, 2022 @ 6:40 pm

    অসংখ্য ধন্যবাদ! প্রাণভরে শুভেচ্ছা নিলাম! আপ্লুত!

  • Tapas Dutta , February 1, 2022 @ 3:04 am

    Onobodyo lekha! Chotobela firey pawa..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *