“যা দেখতে পাই না, তা হই কী করে?”
প্রতি সমাজের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে চলচ্চিত্র। ভালো-খারাপের কথা বলছি না, কিন্তু মানুষের জীবনে সিনেমা যে গভীর প্রভাব বিস্তার করে তাতে সন্দেহ নেই। মতামতটা পৃথিবীর সব দেশে সমানভাবে প্রযোজ্য না হলেও ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক। ছায়াছবির জনপ্রিয়তা ভারতে অপরিসীম। প্রায় চার শতাংশ ভারতীয় নিয়মিত সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেন আর তার চেয়ে বহুগুণ বেশি দেখেন টেলিভিশন আর স্মার্ট-ফোনে।[i] দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে এই সংখ্যা নেহাত নগণ্য নয় (২০২১ সালে সেপ্টেম্বর ২৫, ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১,৩৯২,৭০০,০০০)।[ii] অতিমারির লকডাউনে এই পরিসংখ্যানে অবশ্যই পরিবর্তন ঘটেছে, তবে তা সাময়িক বলেই মনে হয়। বিনোদনের এই চাহিদা মেটাতে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পনগরী বলিউডে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ হিন্দি ছবি তৈরি হয়,[iii] আর বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় হয় ৮০০র কাছাকাছি।[iv] ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩টি বাংলা ছায়াছবি। সব মিলিয়ে কোথায় লাগে হলিউড! সিনেমার এই সর্বব্যাপী জনপ্রিয়তা মানুষের মনে যে প্রগাঢ় প্রভাব ফেলবে তাতে সন্দেহ নেই।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ছায়াছবি জড়িয়ে আছে। চলচ্চিত্রের প্রভাব সমাজে কতটা ব্যাপক তা আন্দাজ করা যায় আজকের দুনিয়ায় সাজগোজ, কথাবার্তার ভঙ্গি, নাচগান, খাওয়া-দাওয়া, পুজো-আচ্চা, বিয়ের আচার, ইত্যাদি দেখে। কয়েকটা উদাহরণ দিই। আজকাল শিক্ষার্থীরা ধ্রুপদী নাচের বদলে বা পাশাপাশি শেখে বলিউড ডান্স; রোজকার শাড়ি-শার্ট-প্রসাধন হয় কোনো জনপ্রিয় সিনেমায় দেখা শৈলী অনুসারে; আঞ্চলিক বিয়ের সাজে জায়গা করে নিয়েছে লহেঙ্গা-চোলি; যেখানে কিছু বছর আগে অবধি ধনতেরস এবং কর্ভা চৌথ কী কেউ জানত না, এখন সেখানে এই আচার জমিয়ে বসেছে। সব পরিবর্তনই ঘটেছে চলচ্চিত্রের প্রভাবে। সমাজে সিনেমার বিপুল প্রভাবের আর একটি নিদর্শন হল সন্তোষী মায়ের পুজোর প্রচলন।
১৯৬০-এর দশকে ‘সন্তোষী মাতা’র ব্রত উত্তর ভারতের কিছু গ্রামে হঠাৎ দেখা দিয়েছিল। এর আগে ‘সন্তোষী মাতা’ নামে কোনো ঈশ্বরীর পরিচয় কেউ জানত না। বছর দশ-বারো এই দেবী শুধু উত্তর ভারতের দু’একটা গ্রামেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেল আর. প্রিয়দর্শীর লেখা ও বিজয় শর্মা পরিচালিত বলিউডের ভক্তিমূলক ছবি, ‘জয় সন্তোষী মা।’ সেই সিনেমাই এই দেবীকে সর্বজনীন স্বীকৃতি ও লোকপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেল।[v] তারপর বিভন্ন আঞ্চলিক ভাষায় ডাব করে, বা তার অনুকরণে নির্মিত ছবি ছড়িয়ে পড়ল নানান রাজ্যে। এখন কলকাতা শহরের বহু বাড়িতে সন্তোষী মায়ের ব্রত নিয়মিত পালন করা হয়।
এছাড়া আরও এক ভাবে ভারতীয় সমাজে সিনেমার প্রভাবের কিছুটা মূল্যায়ন করা যায়। ১৯৭০-এর দশক থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলচ্চিত্র তারকারা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে হারিয়ে প্রশাসনে জায়গা করে নিচ্ছেন। এই চল তামিলনাডুতে প্রথম আরম্ভ হলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যে একই পন্থা রাজনৈতিক দলগুলি গ্রহণ করেছে এবং তাতে যথেষ্ট সাফল্য পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় রাজ্যসভার কয়েকটি আসনে তো চলচ্চিত্র তারকাদের এখন পাকাপাকি অবস্থান। রাজনীতির জগত ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমাজ পরিবর্তনের কাজে এগিয়ে এসে চিত্রতারকারা তাঁদের বক্তব্য পেশ করছেন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সবের মূলেই রয়েছে ফিল্মে অভিনেতাদের জনপ্রিয়তা।
তবে এই আলোচনায় সিনেমার সুফল ও কুফল, বা আধুনিক সংস্কৃতির কুৎসা গাওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি চলচ্চিত্রের কার্যকারিতা বিনোদন ছাড়িয়ে আরও ব্যাপ্ত, আরও গভীরে যায়। বেশ, তাই যদি হয়, তাহলে সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে চলচ্চিত্রের উপযোগিতা থাকতে পারে কি?
আমাদের পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হল সামাজিক অসাম্য। লিঙ্গ, বিত্ত, জাত, ত্বক-বর্ণ, ক্ষমতা, ধর্ম, ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বৈষম্যের দাগ টানা হয়েছে। এই ভেদাভেদের ইতিহাস পুরোনো হতে পারে, তবে তা নির্মূলের লড়াইও চলছে বহুকাল ধরে। আমার প্রশ্ন, সামাজিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে চলচ্চিত্র কতটা শামিল হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি?
এই প্রশ্ন সামগ্রিকভাবে খুঁটিয়ে দেখার ক্ষমতা আমার নেই, প্রবন্ধের পরিসরও অল্প। তাই আমি এই বিশাল সমস্যার একটি অংশ কিছুটা বিশ্লেষণ করতে চাই। সমস্যাটি লিঙ্গ বৈষম্য। মনে রাখতে হবে সমাজে সিনেমার প্রভাব গাঢ় ও সুদূরব্যাপী। সন্তোষী মা’য়ের দেবী রূপে আবির্ভাবের ইতিহাস থেকে প্রমাণ করা যায় সিনেমার সাহায্যে প্রাচীন সামাজিক বিশ্বাস ও রীতিও টলানো সম্ভব। বিজ্ঞাপন তৈরির কারিগরেরা অবশ্য এই সত্য বহুদিন আগেই বুঝতে পেরেছেন। পত্রপত্রিকায় এবং ছায়াছবিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের লক্ষ্যই হল মানুষের চিন্তাধারা প্রভাবিত করে তার ক্রয়-অভ্যেস পাল্টানো। বহু প্রচারিত ভোগ্যপণ্যের চাহিদা এবং বিক্রির আধিক্য দেখে বোঝা যায় কোন বিজ্ঞাপনগুলি সফল। একই পদ্ধতিতে সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যের মনোভাব ও আচরণ পরিবর্তন করা যাবে না কেন?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দেখি বাঘের ঘরেই ঘোঘের বাসা। যে মাধ্যমের সাহায্যে লিঙ্গ-সাম্য এগিয়ে নিয়ে যাবার ভাবনা, সেখানেই অসহনীয় লিঙ্গ বৈষম্য। চলচ্চিত্র শিল্পের অন্তর্নিহিত যে নারী নির্যাতন ও লিঙ্গ বৈষম্য এতদিন সযত্নে ঢাকাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ‘মি টু’[vi] এবং ‘টাইম’স আপ’[vii] আন্দোলনের ফলে তা প্রকাশ হতে আরম্ভ হয়েছে। মুখ খুলছেন বহু নারী চলচ্চিত্র কর্মী। তাও, সিনেমায় লিঙ্গ বৈষম্যের কথা উঠলেই অনেকে জোরদার আপত্তি তোলেন – ‘অবস্থা আর আগের মত নেই;’ ‘শিল্প পত্তনের সময় এই বিভেদ প্রকট থাকলেও আজকের দুনিয়ায় তা বন্ধ হয়েছে;’ ‘যা দু’চারটে কেস কানে আসে তা ব্যতিক্রমমাত্র,’ ইত্যাদি, ইত্যাদি। অকাট্য প্রমাণ হিসেবে এঁরা ইঙ্গিত করেন আধুনিক নারীপ্রধান চলচ্চিত্রের সংখ্যা, মহিলা পরিচালকদের উপস্থিতি, আর মহিলা অভিনেতাদের রোজগারের অঙ্ক। মহিলা যন্ত্রকুশলীদের কথা কেউ টেনে না আনলেও পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী পরিচালক, অভিনেতাদের নাম অবশ্যই উল্লেখ করেন। মুখ্য যুক্তি, চলচ্চিত্র জগত লিঙ্গ বিভেদ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এবং সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার পক্ষে উপযোগী।
এই বিশ্বাসের সঙ্গে আমার মতদ্বৈধ আছে – আর তাই নিয়েই আজকের আলোচনা। আমি বলব, চলচ্চিত্র জগতে যে লিঙ্গ বৈষম্য রয়েছে তা কখনই দু’একজন বিকৃত রুচি ব্যক্তির আচরণ নয়, বরং সুসংবদ্ধ পিতৃতান্ত্রিকতার পরিচায়ক। এই বক্তব্য পাঠকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে লেখার প্রথম অংশে বেশ কিছু পরিসংখ্যান পেশ করেছি। ফলে সংখ্যার ভারে আলোচনা কিছুটা ভারাক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মনে হয়েছে, একমাত্র পরিসংখ্যান দিয়েই এই অন্যায্য অসাম্যের ব্যাপ্তি ও পৌনপুনিকতা বোঝানো সম্ভব।
লিঙ্গ প্রভেদ ও চলচ্চিত্র
পৃথিবীর প্রায় সব সমাজেই লিঙ্গ-বৈষম্য একটি বিশেষ সমস্যা। কোথাও বেশি কোথাও কম, তবে লিঙ্গ ভিত্তিক অসাম্য প্রায় সর্বজনীন। জাতিসঙ্ঘের বক্তব্য, রাজনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিত্ত, এবং বৃত্তির দিক থেকে পৃথিবীর নারী সমাজ পুরুষের থেকে এতই পিছিয়ে পড়েছেন যে প্রতি ক্ষেত্রেই বিশেষ সরকারি মনোযোগ না দিলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। সিনেমা জগতেও এই অসাম্য মর্মান্তিকভাবে বর্তমান, তবে তার গভীরতা সম্পর্কে আমরা ইদানীং সচেতন হতে আরম্ভ করেছি। চলচ্চিত্র যে আমাদের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যময় তা আমরা জানি। নারীপুরুষের সমানাধিকার যদি এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে অদৃশ্য থেকে যায় তাহলে লিঙ্গ বৈষম্যের স্বাভাবিকিকরণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
সিনেমায় মহিলা শিল্পীদের সংখ্যা ইদানীং অবশ্যই বেড়েছে। তবে পুরুষের অনুপাতে তাঁদের সংখ্যা কী তা একবার দেখা যাক। ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে ৬.২ পুরুষকর্মীর তুলনায় মাত্র একজন মহিলা কাজ করেন। পরিচালক গোষ্ঠীর মধ্যে মহিলা হলেন শতকরা ৯.১ জন। বিভিন্ন প্রযোজক সংস্থায় উচ্চপদস্থ মহিলার সংখ্যা শূন্য বললেই চলে।[viii] এই মারাত্মক অভাবের ফলে মহিলাদের কর্মজীবন, উচ্চাশা, এবং কামনাবাসনা নিয়ে লেখা বহুমুখী, জটিল গল্প ছায়াছবির রূপোলি পর্দা অবধি পৌঁছোয় না। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাছা গল্প, ঘটনাই বারবার পর্দায় ফিরে আসে। ফলে নারী-চরিত্র চিত্রায়ন হয় পুরুষের কল্পনা প্রসূত। বস্তুত, বহু মহিলা অভিনেতা আর পরিচালকদের মতে পুরুষপ্রধান শিল্প নারীকেন্দ্রিক গল্প নির্বাচন করতে যথেষ্ট অনীহা প্রকাশ করে। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রায় ১৭০০ ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে নির্ভেজাল নারীকেন্দ্রিক ছবির সংখ্যা এক চতুর্থাংশও নয়। ১৯৭০ থেকে ২০১৭ সাল অবধি মুক্তিপ্রাপ্ত ৪০০০ ছায়াছবি নিরীক্ষা করে দেখা গেছে মহিলাদের স্ক্রিনে উপস্থিতির সময় গড়ে ৩১.৫ শতাংশ। তুলনামূলক পুরুষ চরিত্রের উপস্থিতি-সময় ৬৮.৫ শতাংশ।[ix] মাত্র ১৫ শতাংশ ছায়াছবিতে মেয়েরা বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিবিদ, অঙ্কশিক্ষক, রাজনীতিবিদ, বা সফল ব্যবসায়ীর ভূমিকায় রয়েছেন। সিংহভাগ সিনেমায় মহিলাচরিত্র হলেন শিশুশিক্ষক, সেবিকা, বা মা ও স্ত্রী। সবচেয়ে মুশকিল, মেয়েদের মা এবং স্ত্রী হওয়ার সঙ্গে বৃত্তির বিরোধ ছবিতে অবিরাম দেখানো হয়।
হলিউডের জগতে মহিলাদের স্থান এর চেয়ে কিছুটা উন্নত হলেও সেখানে সমানাধিকার এখনো দূর অস্ত। হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পে পাঁচজন পুরুষের অনুপাতে রয়েছেন একজন নারী। ২০১৫ সালে হলিউডে নারীপ্রধান ছবির সংখ্যা ছিল ৩৪ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৩৭%।[x] ২০০৭ থেকে ২০১৬ অবধি মুক্তিপ্রাপ্ত ৯০০টি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে স্ক্রিনে কথা-বলা চরিত্রের মধ্যে ৩০.৫ শতাংশ হল নারী, বাকিরা পুরুষ। মাত্র ১২ শতাংশ ছবিতে নারী পুরুষের সমতা দেখানো হয়েছে।[xi] নব্বই বছরের ইতিহাসে, মাত্র একজন মহিলাই অস্কার পুরস্কার জিতে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিপ্পান্নো বছরের ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসেও মাত্র একজন মহিলা শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেয়েছেন।
পৃথিবীতে বোধহয় একটাও দেশ নেই যেখানে নারীপুরুষের রোজগারে সমতা আছে। জাতিসঙ্ঘের বিশ্লেষণ অনুসারে উপার্জনে লিঙ্গ সমতা আনতে এখনও অন্তত ১৭০ বছর লাগবে। ভারতে সমতুল্য কাজে মেয়েরা পুরুষের চেয়ে ২৫% কম রোজগার করে। অর্থাৎ, পুরুষের উপার্জন এক টাকা হলে একই কাজের জন্যে মেয়েরা পায় ৭৫ পয়সা। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের রোজগার ছিল ৮২%।[xii] ভারতে নারী পুরুষ উপার্জনের তফাত তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। একই কাজের জন্যে মহিলারা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীর থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কম রোজগার করেন। এই তফাত ফিল্ম জগতেও বর্তমান। বলিউডের প্রথম শ্রেণীর অভিনেতাদের উপার্জনের অঙ্কে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, তাই এ নিয়ে কেউ বিশেষ আলোচনা করে না। তাও দেখা যায়, বিখ্যাত নায়িকারা একই পর্যায়ের নায়কের চেয়ে যথেষ্ট কম উপার্জন করেন। দীপিকা পাদুকোনের তুলনায় ছবি পিছু শাহরুখ খান পাঁচ গুণ বেশি টাকা পান। এই পাঁচ গুণিতকের তফাত সাধারণভাবে সব পুরুষ এবং মহিলা অভিনেতাদের বেলাতেই বর্তায়।[xiii]
ছায়াছবির জগতে আর একটা চিন্তার বিষয় হল মেয়েদের কেমন করে রুপোলী পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। আমাদের দেশে যৌনতার ব্যাপারে বাইরে যতই ছুঁতমার্গ থাকুক না কেন, সিনেমায় যৌন সুড়সুড়ির খামতি নেই। বেশির ভাগ ছবিতে মেয়েদের প্রধান ভূমিকা পুরুষ দর্শকের যৌন কল্পনা রাঙানো। ফলে নারী চরিত্রকে স্বল্পবসনে বা শরীর দেখানো জামাকাপড়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় অভিনয় করতে হয় শতকরা ৩৫ শতাংশ ছবিতে। সেই তুলনায় পুরুষ অভিনেতারা অর্ধনগ্ন অবস্থায় পৌঁছোয় ১৩.৫ শতাংশ ছবিতে। বলিউড এবং কলকাতার প্রথম শ্রেণীর মহিলা অভিনেতারা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা পুরুষ সহকর্মীদের সমান পারিশ্রমিক দাবি করলে প্রয়োজকেরা প্রত্যাখ্যান করেছেন এই বলে যে নারী চরিত্রের খাটুনি অনেক কম; তাদের কাজ শরীর দেখানো আর নায়কের চারপাশে ঘুরঘুর করা। ফলে তাদের পুরুষ অভিনেতার সমান পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। হলিউডের পরিস্থিতিও তুলনীয়। হলিউডে স্বল্পবসনা মহিলারা আনাগোনা করেন প্রায় ২৬ শতাংশ সিনেমায়; তুলনায় পুরুষকে কম জামাকাপড়ে দেখা যায় মাত্র ৫.৭ শতাংশ ছবিতে। পূর্ণ নগ্নতার বেলায় নারীর পরিসংখ্যান প্রায় এক থাকলেও পুরুষেরটি বেড়ে হয় ৯.২ শতাংশ।
এখন কী করা?
যদি মেনে নিই ছায়াছবি আমাদের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, তাহলে ওপরের পরিসংখ্যান দেখে আমাদের হৃৎকম্প হওয়া উচিত। অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন চলচ্চিত্র শিল্পের কী দোষ – সিনেমা আমাদের সামাজিক পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করছে। তা নিশ্চয়ই কিছুটা ঠিক, কিন্তু সেই গড্ডালিকা প্রবাহ বারবার সমাজকে ফিরিয়ে দিয়ে সিনেমা আরও শক্ত ভিত্তিতে লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিষ্ঠা করছে। যে শিল্প এতই পুরুষপ্রধান যে সেখানে প্রযোজনা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীস্তর পর্যন্ত নারীর উপস্থিতির অভাব, সেখানে পুরুষতন্ত্র ভাঙার আশা দুরাশা বৈকি। অর্থাৎ, চলচ্চিত্র শিল্পকে কাজে লাগাতে হলে তার মধ্যেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। তারপর সেই সমতার প্রতিফলন পড়বে ছায়াছবিতে, আর সেখান থেকে শিখবে সমাজ।
১৯৬৯ সালে মার্কিন টেলিভিশনে ‘সেসামি স্ট্রিট’ প্রোগ্রামটি আরম্ভ হবার পর তার প্রভাব নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। মুক্তিলাভের পর, ছোটোদের জন্যে এই প্রোগ্রামটি সমাজে এত গভীর প্রভাব ফেলেছিল যে গবেষকেরা ‘সেসামি স্ট্রিট’ পূর্ব ও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পরিষ্কার বিভাগ দেখতে পান। সেসামি স্ট্রিট নিয়মিত দেখার পর স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশুনার আগ্রহ বেড়েছিল, তাদের বই পড়ার হার ও দক্ষতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছিল। এমনকি ক্ষুদে দর্শকদের মধ্যে অন্য দেশের, অন্য বর্ণের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল । আর, এই প্রভাব ক্ষণস্থায়ী নয়। বেশির ভাগ সময়, এই পরিবর্তন পাকাপাকিভাবে চরিত্রে রয়ে গেছে।
২০১৬ সালে আমেরিকায় মুক্তি পেয়েছিল ‘হিডন ফিগার্স’ নামে একটি ছায়াছবি। ছবির নায়িকা তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা গণিতজ্ঞ। ১৯৬০-এর দশকে, দেশব্যাপী ঘোরতর বর্ণবৈষম্যের সময়ে, NASA-র ল্যাব-এ কাজ করতেন বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নারী গণিতজ্ঞ। মহাকাশ অভিযানের প্রতিযোগিতায় নাসার চন্দ্রাভিযান ও পরবর্তী বহু অভিযানে এঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এঁদের মধ্যে একজন পরে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পান। ‘হিডন ফিগার্স’ ছবিটির জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের মধ্যে অঙ্ক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ঝোঁক বেড়েছে। কলেজে এই দুটি শাখায় অনেক বেশি সংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের আবেদনপত্র জমা পড়ছে।
১৯৭৬ সালে, আমেরিকায় দাসপ্রথা নিয়ে তৈরি টেলিভিশন মিনিসিরিজ ‘রুটস’ মুক্তি পাবার পর দেশে কৃষ্ণাঙ্গদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েবফিল্ম ‘১৩থ (13th)’ মুক্তির পরে দেশে শ্বেতাঙ্গ প্রাধান্যের ব্যাখ্যা এবং কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের ইতিহাস মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে অসংখ্য শ্বেতাঙ্গ নাগরিক যোগ দেবার একটি অনুপ্রেরণা এই ছবি। এমনি করে বহু সিনেমা বিভিন্ন দেশে মানুষকে সচেতন করেছে, পরিবর্তনের ইন্ধন জুগিয়েছে। অনেক সরকারি আইন প্রণয়ন ও বদলেও চলচ্চিত্রের অবদান রয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্কাম’ ছবি অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের জন্যে প্রতিষ্ঠিত ‘বর্স্টাল’ জেলের সমাপ্তি ঘটায়; ১৯৬২ সালের ছায়াছবি ‘ভিক্টিম’ ইংল্যান্ডের সমকামী বিরোধী আইন পরিবর্তনে সাহায্য করে। ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘স্ট্রিটস অফ শেম’ জাপানে গণিকাবৃত্তি বন্ধের আইন পাস করতে প্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ‘দ্য স্নেক পিট’ ছায়াছবির অনুপ্রেরণায় মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসার দায়িত্ব মার্কিন সরকার নিতে স্বীকার করে।
পথের ঠিকানা
নিঃসন্দেহে ছায়াছবি, সে সিনেমা হলে হোক বা টেলিভিশনে, সমাজকে প্রভাবিত করে। চলচ্চিত্র মাধ্যম নারী পুরুষের সম্পর্ক ও ভূমিকা, জাত ধর্ম, নৈতিকতা ও ন্যায়, সামাজিক নিয়ম নীতির গণ্ডী, ইত্যাদি সম্বন্ধে শিশুদের শিক্ষা দেয়। মানুষের মধ্যে বহু সমস্যা সম্বন্ধে সচতনতা এসেছে সিনেমার হাত ধরে। জিনা ডেভিসের[xiv] মতে, ‘যা আমরা
দেখতে পাই, তা আমরা হতে পারি।’ তাই মেয়েরা যদি রুপোলি পর্দায় নিজেদের ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গণিতজ্ঞ, দেশের সাহসী নেতা, হিসেবে না দেখে, তাহলে বাস্তবে তা যে হওয়া সম্ভব, তা তারা ভাবতেই পারে না। অতএব আরও অনেক বেশি ছবিতে (অন্তত ৫০%) মেয়েদের এই ধরনের ভূমিকায় দেখতে পাওয়া চাই। তবেই আমরা নারী সমানাধিকারের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
এছাড়া, নারীকে যৌনবস্তুতে পরিণত করা চলবে না। সিনেমা থেকে যতটা সম্ভব মেয়েদের সম্পর্কে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ বিষয় সরিয়ে ফেলতে হবে। তার মানে যৌনতা বাক্সবন্দি করা নয়, নারী যে যৌনতার বাইরেও মানুষ, তা বোঝানো। নারীকে শুধু যৌন উপভোগের বস্তু হিসেবে দেখা আর তাকে নির্যাতন করার মধ্যে ঘনিষ্ট যোগ আছে। সমাজ যে ব্যবহার হালকা ভাবে ‘ইভ টিজিং’ বলে উড়িয়ে দেয় তার কথাই ভাবা যাক। হিন্দি সিনেমায় অনেক সময়ই নায়ক এক গাদা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গান গেয়ে, নায়িকার শাড়ি-ওড়না টেনে, বিশ্রী মন্তব্য করে, পথ আটকে, নাজেহাল করে দেয়। নায়িকার মতামত বা অনুমতির কোনো অবকাশই সেখানে নেই। পরে আবার সেই নির্যাতনকারীর সঙ্গেই নায়িকা প্রেমে পড়ে। যে দেশে ছেলেমেয়ের মধ্যে সহজ মেলামেশার সুযোগ বেশি নেই, সেখানে অল্প বয়স থেকেই ছেলেরা শেখে এমন ব্যবহার করেই মেয়েদের মন জয় করতে হয়। তারা জানতে পারে না বাস্তবে এমন আচরণ মেয়েদের পক্ষে কতটা ভীতিপ্রদ, উদ্বেগজনক। এমন ব্যবহার ‘টক্সিক’ পুরুষালীর একটি রূপ, যা অনেক সময়ই শেষ হয় শ্লীলতাহানি, মুখে অ্যাসিড ছোঁড়া, বা ধর্ষণে।
পুরোনো দিনের ছায়াছবির কথা ছেড়ে দিলাম, আধুনিক লিঙ্গ-সচেতনতার যুগেও মহিলাদের এক পাশে সরিয়ে রাখা হয়। কিছুদিন আগেই একটি রহস্যকাহিনির ওয়েবসিরিজ দেখলাম – ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি।’ গল্পটিতে নায়িকার প্রধান কাজ রূপ দেখিয়ে দর্শকের মন ভোলানো – ইংরেজিতে যাকে ‘আই ক্যান্ডি’ বলে। নায়িকার অভিনয়ের সুযোগ সামান্য – নায়ক এবং অন্যান্য পুরুষ পার্শ্বচরিত্রের তুলনায় খুব অল্প দৃশ্যেই তিনি কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। যে ভূমিকাটি হতে পারত একজন শক্তিময়ী নারীর, পরিচালক তাকে বিকৃত, আসুরিক বানিয়ে পেশ করেছেন।
নারী চরিত্রকে সাইফার-এ পরিণত করার ব্যাপারে আমার লেখক স্বামী, সুজন দাশগুপ্তও দোষী। সুজনের ‘একেনবাবু’ রহস্য সিরিজ এখন ছাপার অক্ষরে এবং ওয়েবফিল্মে জনপ্রিয়। কিন্তু প্রথম থেকেই একেনবাবু সিরিজে কোনো নারীচরিত্র নেই। পরে যে দু’একজনকে ঢোকানো হয়েছে তারা নগণ্য পার্শ্বচরিত্র, তাদের অনুপস্থিতিতে গল্পের গতির অদলবদল হবে না। আবারও, নারী চরিত্রের প্রতি এই অমনোযোগ বা উপেক্ষা একজন লেখক বা পরিচালকের ব্যক্তিগত খামখেয়াল বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না, কারণ একই অভাব আমরা দেখতে পাই অন্তত ৩২% ছবিতে।
শেষ কথা
আপনি যদি টেলিভিশন বা ছায়াছবি দেখতে ভালোবাসেন, একটা অনুরোধ করি। যখন টিভি বা সিনেমা দেখছেন (যে কোনো ভাষাতেই হোক), মন দিয়ে গুনুন ক’বার মেয়েদের বলা হচ্ছে ‘রাতে বাইরে যেও না,’ ‘একা কেন গেছিলে,’ ‘সন্ধের আগে ঘরে ফিরবে,’ ‘কে সঙ্গে যাচ্ছে,’ ‘স্ত্রী বা মা হওয়া মেয়েদের ধর্ম,’ ইত্যাদি। এই প্রশ্ন এবং নির্দেশগুলো আপাতদৃষ্টিতে যত্ন বা সুরক্ষার বাণী মনে হলেও আসলে তা মেয়েদের জীবনে গণ্ডী টানছে; অবাধ বিচরণের সীমানা এঁকে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে গুনুন কতবার বলা হচ্ছে, ‘অবশ্যই তুমি একা যেতে পারবে,’ ‘প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, কেন কাউকে সঙ্গে দিতে হবে,’ ‘তুমি এগিয়ে চল,’ ইত্যাদি। গুনুন কতবার নারী চরিত্রকে যৌন উত্তেজক বস্তু হিসেবে দেখানো হচ্ছে আর কতবার দেখানো হচ্ছে সফল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, হিসেবে।
আমার মতে লিঙ্গ সাম্যতা আনতে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে যতটা সম্ভব নতুন চিন্তাধারার বাহক হতে হবে। বারবার মেয়েদের প্রতি রক্ষণশীল মনোভাব প্রকাশ না করে ছায়াছবি যদি নারীর সমানাধিকার, সুরক্ষা, এবং সম্মানের পক্ষে দাঁড়াতে পারে, তাহলে হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই একটু আধটু পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব।
জানি, সিনেমা, টেলিভিশন, ইত্যাদির মূল মন্ত্র হল ‘টাকা।’ কিন্তু সমাজে তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, এবং সে দায়িত্ব পালন না করলে জনসাধারণের তরফ থেকে অভিযোগ আনা হবে, তা জানা তাদের প্রয়োজন। এ বিষয়ে কিছু কিছু কাজ এখন আরম্ভ হয়েছে। ‘লাডলি’ তথ্য ও বিজ্ঞাপন পুরস্কার সিনেমা, টেলিভিশনে লিঙ্গ সমতা আনার জন্যে সচেষ্ট। সম- ও রুপান্তরকামীদের ইতিবাচক ভাবরূপ যাতে সিনেমায় দেখা যায় সে ব্যাপারেও তারা এগিয়ে এসেছে।
‘ক্রিটিকাল মাস থিয়োরি (critical mass theory)’ অনুসারে যে কোনো সামাজিক বিষয়ে পাকাপাকি পরিবর্তন আসে যখন অন্তত ৩০% একদিকে হেলে পড়ে। অর্থাৎ চলচ্চিত্র শিল্পে মৌলিক পরবর্তন আসবে যখন প্রায় ৩০% ছায়াছবি লিঙ্গসমতার জয়গান গাইবে। সময় সময়ে দু’একটি প্রতীকী ছবি বা দু’একজন সংবেদনশীল পরিচালক নারী কেন্দ্রিক ছবি তৈরি করলেও শিল্পে বিশেষ রদবদল ঘটবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সমগ্র শিল্পে ৩০% চলচ্চিত্র নিয়মিতভাবে নারীপ্রধান হতে আরম্ভ করে। তা হলেই বাকি ৭০% রক্ষণশীল অংশ মহিলাদের সঠিক প্রতিফলন নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবেন।
—–
পাদটীকা
[i] Geena Davis Institute on Gender in Media. (2015). ‘Cinema and society: Shaping our worldview beyond the lens.’ Oak Foundation. Available: https://seejane.org/wp-content/uploads/cinema-and-society-investigation-of-the-impact-on-gender-representation-in-indian-films.pdf.
[ii] ‘India Population (Live).’ (2021, September 25). Worldometer. Available: https://www.worldometers.info/world-population/india-population/
[iii] The Real World. (2021, January 1) ‘Welcome to Bollywood: A beginners guide to India’s billion dollar film industry.’ Trafalgar. Available: https://www.trafalgar.com/real-word/bollywood-beginners-guide-indias-billion-dollar-film-industry/.
[iv] ‘Cinema of India.’ (2021, September 20). Wikipedia. Available: https://en.wikipedia.org/wiki/Cinema_of_India.
[v] ‘Santoshi Mata.’ (2021, September 20). Wikipedia. Available: https://en.wikipedia.org/wiki/Santoshi_Mata.
[vi] ২০০৬ সাল নাগাদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ‘মি টু’ আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গী সমাজকর্মী তারানা বার্কের নেতৃত্বে। এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল যৌন নির্যাতনের শিকার মহিলাদের স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের দাবি সমাজে প্রচার করা।
[vii] ‘টাইমস আপ’ হলিউডের একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। ২০১৮ সালে বিখ্যাত এবং ক্ষমতাশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টাইনের বিরুদ্ধে যৌন অত্যাচারের আইনি অভিযোগ আনার পর, ভিক্টিমদের সমর্থনে এবং সাহায্যার্থে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শুধু হলিউডে নয়, এই সংস্থা দেশজুড়ে কাজ করে।
[viii] Geena Davis Institute on Gender in Media. (2015).
[ix] Farooqui, M. (2018, October 18). Gender equality in cinema gaining traction in India, but queens have a long way to go. Money Control. Available: https://www.moneycontrol.com/news/trends/entertainment/gender-equal-cinema-gaining-traction-in-india-but-queens-have-a-long-way-to-go-3051661.html.
[x] Broom, D. (2021). ‘Here’ how gender stereotypes are plaguing Hollywood films despite progress.’ World Economic Forum. Available, https://www.weforum.org/agenda/2020/02/women-hollywood-starring-role-equality-diversity/.
[xi] Pasquine, F. (2018). Gender inequality in film infographic. New York Film Academy Blog. Available: https://www.nyfa.edu/film-school-blog/gender-inequality-in-film-infographic-updated-in-2018/.
[xii] Barroso, A., and Brown A. (2021, May 25). Gender pay gap in U.S. held steady in 2020. Pew Research Center. Available: https://www.pewresearch.org/fact-tank/2021/05/25/gender-pay-gap-facts/.
[xiii] D’Cunha, S. D. (2017, August 30). In India, the gender pay gap extends even to Bollywood. Forbes. Available: https://www.forbes.com/sites/suparnadutt/2017/08/30/in-india-the-gender-pay-gap-extends-even-to-bollywood/?sh=3180d85a502b.
[xiv] জিনা ডেভিস হলিউডের এক বিখ্যাত অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা। ২০০৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Geena Davis Institute on Gender in Media প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গবেষণাভিত্তিক সংগঠন সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্র শিল্পে নারীর ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করে। উদ্দেশ্যঃ শিল্পে লিঙ্গসমতা আনা।
প্রবন্ধের নামঃ Geena Davis Institute on Gender in Media-র মতে, “If she can see it, she can be it.” এই ভাবনার উল্টোপিঠ হল “যা দেখতে পাই না, তা হই কী করে?” কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ Geena Davis Institute.
ছবিঃ আন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।
1 Comment