নারীবাদ, পুরুষ-বিদ্বেষ, ও কিছু আনুষঙ্গিক

নারীবাদ, পুরুষ-বিদ্বেষ, ও কিছু আনুষঙ্গিক

নারীবাদ – সমানাধিকারের সংগ্রাম

“…আর ছেলেদের জন্যে আপনারা কী করছেন?”

নারী-পুরুষের সামাজিক সমানাধিকার, পারিবারিক নির্যাতন, পুরুষশাসন, বা নারী সংগঠনের লক্ষ্য ও কাজ সম্পর্কে যতবারই কোনও সম্মেলনে কথা বলেছি, পুরুষ শ্রোতাদের মধ্যে থেকে নানাভাবে, নানান ভঙ্গিতে, প্রশ্নটা এসেছে। হ্যাঁ, পুরুষ শ্রোতারাই বারবার প্রশ্নটা তুলেছেন। নারীবাদী আন্দোলনে কাজ করার প্রায় পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতায় কোনও মহিলাকে এই প্রশ্ন করতে শুনিনি। কিছু পুরুষ শ্রোতার প্রশ্নের অন্তরালে থেকেছে অকপট কৌতূহল, আবার অনেকের সুরে পেয়েছি অবিশ্বাস মেশানো ব্যঙ্গ। আর বহু যুযুধান শ্রোতা হুমকি দিয়ে সম্মুখ সমরে আহ্বান জানিয়েছেন। একবার তো একটা সরকারি সভায় এক ক্রুদ্ধ শ্রোতা তাড়া করে গালাগালি করেছিলেন। এ শুধু আমার একার অভিজ্ঞতা নয়। প্রায় প্রত্যেক নারীবাদী কর্মী, যাঁরা খোলা সভায় নিজেদের সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন, বা নারীবাদ সম্বন্ধে বক্তব্য রেখেছেন, তাঁদেরও বারবার এই ধরনের আগ্রাসের মোকাবিলা করতে হয়েছে।

পুরুষ-বিদ্বেষের তকমা

সমাজে নারীবাদী আন্দোলন গড়ে ওঠার পর থেকেই অংশগ্রহণকারীদের কপালে জুটেছে ‘পুরুষ-বিদ্বেষী’ খেতাব। আন্দোলনের প্রথম দিকে নারীবাদীদের ‘কুৎসিত,’ ‘বিয়ের অযোগ্য,’ বলে অপমান করা হত। অনেকে বলতেন, নারীবাদী মহিলাদের কোনও পুরুষ বিয়ে করতে রাজি নয়, সেই আক্রোশে তারা এই আন্দোলন আরম্ভ করেছে। এছাড়া আরেকটি জনপ্রিয় বিশ্বাস ছিল নারীবাদীরা সকলেই সমকামী, অতএব স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ তাদের দৃষ্টিশূল। অর্থাৎ যে কোনও কারণেই হোক না কেন, নারীবাদীরা পুরুষদের ঘৃণা করে, আর সেই মনোভাব থেকেই উদ্ভূত তাঁদের আন্দোলন। এ রটনা কোনও একটি বিশেষ সমাজে সীমাবদ্ধ ছিল না। পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের যে দেশেই নারীবাদী চিন্তাধারা ও কার্যক্রম সোচ্চার হয়েছে, সেখানেই এমন গুজব ও কুৎসা ছড়িয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে – সমকালীন সমাজে নারীবাদ কিছুটা হলেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি কিন্তু সহজে আসেনি। লিঙ্গসমতা ও মহিলাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নারীবাদী কর্মীরা বুঝেছিলেন, সমাজে মহিলাদের আর্থ-সামাজিক এবং মানসিক অবস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ না করলে এবং তা অন্যদের বোঝাতে না পারলে, তাঁদের চিন্তাধারা বৈধতা পাবে না। তখন থেকেই আরম্ভ হয়েছিল নারীর পরিপ্রেক্ষিত থেকে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, চিকিৎসা, আইন, মনোবিজ্ঞান, ব্যবসায়, এবং অন্যান্য বহু বিষয়ে গবেষণার কাজ। এই গবেষণার ফলাফল থেকেই বিভিন্ন সমাজে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল নারীর একটি সম্যক ছবি। সেই ছবি যে প্রীতিপ্রদ নয়, তা বলাই বাহুল্য।

ভারতে, ১৯৭৪ আর ’৭৫ সালে, রাষ্ট্রনীতিবিদ বীণা মজুমদার এবং আইনজ্ঞ লতিকা সরকারের নেতৃত্বে প্রকাশিত হল দু’খণ্ডের একটি নিরীক্ষাঃ Towards Equality: Report of the Committee on the Status of Women in India। রিপোর্টে নথিবদ্ধ ভারতীয় মহিলাদের অবস্থার বিবরণ পড়ে শিউরে উঠেছিল তখনকার বিদ্বসমাজ। পরিসংখ্যান, পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা, ইত্যাদি সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন সমাজের প্রতি স্তরে, প্রতি ক্ষেত্রে, মহিলারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত, উপেক্ষিত, শোষিত, অবদিমত, ও অত্যাচারিত। সমানাধিকার তো দূরের কথা, সসম্মানে বেঁচে থাকার রসদটুকুও তাঁরা পাচ্ছেন না। এই রিপোর্টের তথ্যেই প্রথম নজরে এসেছিল লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত, অপুষ্টি, এবং চিকিৎসায় অবহেলার ফলে মেয়েদের ক্রমান্বয় সংখ্যাহ্রাস; শিক্ষা, কর্ম এবং রাজনীতির জগতে মেয়েদের অনুপস্থিতি; আইন ও গঠনমূলক নীতি তৈরিতে মেয়েদের পরিপ্রেক্ষিতের সার্বিক অবহেলা; এবং পরিবারের মধ্যে ও বৃহত্তর সমাজে তাদের ওপর যথেচ্ছ দৈহিক ও যৌন অত্যাচারের নজির। রিপোর্টে দাবি করা হল দেশের মহিলা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিমুহূর্তে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, অথচ সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। যে দেশ নিজেকে ন্যায়যুক্ত সমাজ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেখানে এই অন্যায় পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভারতে দানা বাঁধল নারীবাদী আন্দোলন। ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ হয়ে উঠল গবেষণা, সরকারি নীতিস্থাপন, ও অলাভজনক সংস্থা গঠনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

লন্ডনে নারীর ভোটাধিকারের আন্দোলন – ১৯১২ সাল

পাশ্চাত্যে, বিশেষত উত্তর আমেরিকায়, নারীবাদী আন্দোলন জন্মের ইতিহাস ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্রীতদাস প্রথা বেআইনি ঘোষণা করার পর, ১৮৬৮ সালে ভূতপূর্ব ক্রীতদাসেরা দেশের নাগরিকত্ব লাভ করল। তার পর থেকে আরম্ভ হল কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের রাজনৈতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুদীর্ঘ লড়াই। অবশ্য তখন ভোটের অধিকার দেওয়া হত শুধু পুরুষকে। এবার প্রশ্ন উঠল, তাহলে কি মার্কিন মহিলারা নাগরিক নন? নইলে তাঁদেরা ভোটের অধিকার নেই কেন? শুরু হল মহিলাদের ভোটাধিকার লাভের সংগ্রাম। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সেই অধিকার তাঁরাt জিতলেন ১৯২০ সালে। ব্রিটেনে একই সময়ে শুরু হয়েছিল নারীর নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেখানে ১৯১৮ আর ১৯২৮ সালে দুটি আইন প্রবর্তন করে মহিলাদের ভোটাধিকার স্থাপিত হল। দু’দেশেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল পুরুষ বিদ্বেষের। যদি পুরুষ-বিদ্বেষীই না হবে তাহলে নারীবাদীরা মেয়েদের জন্যে পৃথক ভোট চাইছেন কেন? স্বামী আর স্ত্রী কি একাত্ম নয়? প্রতিটি দম্পতি জুটির প্রতিনিধিত্ব করেন স্বামী – একজনের ভোটেই দু’জনের প্রতিরূপ রয়েছে। স্বামী এবং স্ত্রীর ভোট বিচ্ছিন্ন করা হবে কেন? রক্ষণবাদী সমাজে দুশ্চিন্তা ঘনাল স্বামী এবং স্ত্রীর ভোট আলাদা হয়ে গেলে তাদের নিবিড়তায় ছেদ পড়বে, পতি-সতীর যুগ্ম জীবনের মাধুর্য নষ্ট হবে। নারীবাদীদের বিরুদ্ধে বিয়ে এবং সংসার ভাঙার অপবাদ উঠল – সেই অপবাদ এখনও যথেষ্ট জনপ্রিয়।

১৯২০ সালে ভোটাধিকার পেয়েও মার্কিন মহিলারা কিন্তু সন্তুষ্ট হলেন না। আরও সর্বাঙ্গীন উন্নতির দাবিতে তাঁরা সরকারকে চাপ দিতে লাগলেন। দুর্ভাগ্যবশত, সরকার নড়েচড়ে ওঠার আগেই বাধল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। দেশের আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ এড়াতে, দেশপ্রীতির দোহাই দিয়ে মার্কিন সরকার নারীবাদীদের সঙ্গে রফা করল – যুদ্ধ শেষ হলেই মহিলাদের অগ্রগতির জন্যে উপযুক্ত নীতি পাশ করা হবে। এর বিনিময়ে

‘আমরা সক্ষম’ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মহিলা কর্মীদের সম্মানে ‘রোজি দ্য রিভেটর’-এর পোস্টার

যুদ্ধের জরুরি সময়ে তাঁরা যেন আন্দোলন বন্ধ করে সরকারের সহযোগিতা করেন। সেই সময়ে নারী-ক্ষমতায়নের আন্দোলন মুলতুবি রাখা হলেও যুদ্ধ শেষে মার্কিন সরকার কথা রাখেনি। ভোটাধিকারের দীর্ঘ আন্দোলনের শেষে আর যুদ্ধকালীন কষ্টস্বীকার করে নারী আন্দোলনও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এর পর প্রায় পঞ্চাশ বছর মার্কিন নারী আন্দোলন ঘুমিয়ে রইল।

মার্কিন নারী আন্দোলনের নবজাগরণ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তিতে যোগ দেবার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষেরা দলে দলে চলে গেলেন যুদ্ধক্ষেত্রে আর দেশের ভেতরকার প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং যুদ্ধের বিমান, অস্ত্র, ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরির কাজ হাতে তুলে নিলেন মহিলারা। এঁদের রক্ত জল করা পরিশ্রমের অবদান ছাড়া মার্কিন সরকার কখনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারত না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এল সৈনিকদের বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু প্রাক্তন সৈনিকদের জন্যে দেশে তখন কর্মসংস্থান কোথায়! কাজের জগতে সৈনিকদের জায়গা করে দিতে মার্কিন সরকার ঘোষণা করল এবারে মহিলাদের বাড়ি ফিরতে হবে। হাজার হাজার কর্মরতা মহিলা বিনা দোষে বৃত্তিচ্যুত হলেন। তাঁদের কাছে সরকারি প্রত্যাশা – ‘এবারে বাড়ি ফিরে গুছিয়ে সংসার করুন।’ অবস্থার এই পরিবর্তনে নারী সমাজের সম্মতি আছে কিনা কেউ জিজ্ঞেস করল না। ধরে নেওয়া হল, নিজেদের লিঙ্গনির্ধারিত সামাজিক ভূমিকায় ফিরে গিয়ে তাঁরা খুশি হবেন।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সমাজ কেমন চলছে দেখার জন্যে মার্কিন সরকার উন্মুখ হল! পঞ্চাশের দশকে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেল দেশের মহিলারা বিষাদগ্রস্ত, অসুখী, বিরক্ত, মানসিক অবসাদে ভুগছেন। সফল, দায়িত্বশীল কর্মী হয়েও তাঁরা চাকরি খুইয়েছেন, অনিচ্ছাসত্ত্বেও পুরুষের আজ্ঞাবাহী হয়ে, সংসারের থোড়-বড়ি-খারা নেড়ে দিন কাটাচ্ছেন। সিংহভাগ মার্কিন মহিলা জানালেন, তাঁরা চান না তাঁদের কন্যাদের জীবন মায়ের মত হোক। নতুন করে নারীবাদী আন্দোলনের বীজ অঙ্কুরিত হল। ষাটের দশকে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের মানবাধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি নারীবাদী আন্দোলনের নতুন পত্তন হল। সত্তরের দশকে এই আন্দোলন হয়ে দাঁড়াল এক জোরালো সমানাধিকারের লড়াই। আবারও সমাজে রব উঠল নারীবাদ মানেই পুরুষ বিদ্বেষ।

নারীবাদের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ভ্রান্তি

নারীবাদীরা বলেন, ‘পুরুষ বিদ্বেষী’ অপবাদ দিয়ে সমাজের রক্ষণশীল অংশ তাঁদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য এবং সমানাধিকারের দর্শন বিকৃত করছে, নারীকে পুরুষের প্রতিপক্ষ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনকে হেয় করেছে। আসলে নারীবাদীরা কোনও কালেই ‘পুরুষমাত্রই শত্রু’ মনোভাব পোষণ করেননি। তাঁদের আসল প্রতিপক্ষ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ-কাঠামো। এই সমাজব্যবস্থাই লিঙ্গবিশেষে শিশুর সামাজিকীকরণের নিয়মনীতি নির্ধারণ করে, ছেলে এবং মেয়েদের নির্দিষ্ট লিঙ্গ-ভূমিকা পালনে বাধ্য করে। পুরুষপ্রাধান্য এই সমাজব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু, তাই ছেলেরা বেশি সুযোগ সুবিধে পায়, স্বীকৃতি পায়, আর নারী পড়ে থাকে পেছনে। তবে সমাজের সব স্তরের পুরুষ একই মাত্রার সুযোগ সুবিধে কখনই পায় না। শ্রেণী, বর্ণ, বিত্ত, যৌনতা, শারীরিক, ও মানসিক ক্ষমতা অনুসারে পুরুষের প্রাপ্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধেয় তফাৎ ঘটে। তবে সমাজের প্রতি স্তরেই নারী থাকে পুরুষের নীচে।

লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে এত যুগ ধরে পাওয়া বিশেষ সুযোগ সুবিধে কমবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এতে পুরুষের কিছু লাভও হবে। নারী-পুরুষের অবস্থান সমান হলে পুরুষকে একা পরিবারের জন্যে উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হবে না – এতে তাঁদের জীবিকা নির্বাচনের ব্যাপ্তি বাড়বে; আবেগ এবং যৌনতা সহজে প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন – এখন যা তাঁদের লুকিয়ে রাখতে হয়; নারীর সাহচর্য পাবেন সমানে সমানে – নির্ভরশীল হিসেবে নয়; আগ্রাসী পুরুষত্ব (toxic masculinity) এড়িয়ে যাবার সুযোগ পাবেন; ইত্যাদি। ইদানীংকালের কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীবাদে আস্থাহীন মহিলাদের তুলনায় নারীবাদীরা পুরুষের সম্পর্কে বেশি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অ-নারীবাদীরা সংসারে সাবেকি ভূমিকা গ্রহণ করেন ঠিকই, কিন্তু নিজেদের ভূমিকার সংকীর্ণতায় ক্ষুব্ধ হয়ে দোষারোপ করেন গোটা পুরুষজাতকেই। বিপরীতপক্ষে নারীবাদীদের মতে ছেলেরাও পুরুষতন্ত্রের শিকার, তাই মেয়েদের সামাজিক ভূমিকার জন্যে ব্যক্তিপুরুষকে সরাসরি দায়ী করা চলে না। অবশ্য সব পুরুষকে তাঁদের ব্যবহারের জন্যে একেবারে ছাড় দেওয়াও যায় না। পুরুষপ্রাধান্যের অন্যায় সুযোগ সুবিধেগুলো সচেতনভাবে বর্জন করে এক সমধর্মী, পক্ষপাতহীন সমাজ গড়ার দায়িত্ব ছেলেদেরও নিতে হবে। নারীবাদীদের দাবি, ছেলেরা এগিয়ে এসে মেয়েদের হাতে হাত মিলিয়ে সমাজ পরিবর্তনের কাজে যোগ দিন।

একবিংশ শতকে পৌঁছে নারীবাদবিরোধীরা বলতে আরম্ভ করলেন বর্তমানযুগে এই আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। মহিলারা এখন সম্পূর্ণভাবে পুরুষের সমকক্ষ। যেটুকু লিঙ্গপ্রভেদ ছিল, তা মুছে গেছে। বস্তুত আইনকানুন, কাজকর্ম, উপার্জন, প্রতি ক্ষেত্রেই মহিলারা এখন অত্যধিক সুবিধে পাচ্ছেন, বরং পুরুষই পিছিয়ে পড়ছে। এখনও ক্রমান্বয়ে নারীবাদী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার গূঢ় উদ্দেশ্য হল পুরুষপ্রাধান্যের বদলে মহিলাশাসন বা মাতৃতন্ত্র স্থাপন করা। অর্থাৎ আবারও অভিযোগের সারাংশ হল ‘পুরুষ বিদ্বেষ।’ এই মতামতের বিরুদ্ধে নারীবাদীরা বলেন পুরুষতন্ত্রের বিকল্প মাতৃতন্ত্র কখনই নয় এবং তা প্রতিষ্ঠা করাও তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। এ হল ভুয়ো ধারণা, অলীক যুক্তি। সমানাধিকারের শেষ কথা হল সাম্য – শুধু লিঙ্গ ভিত্তিক নয়, শ্রেণী, বর্ণ, বিত্ত, ক্ষমতা, যৌনতা ভিত্তিক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রান্তিক গোষ্ঠীকে সমাজের কেন্দ্রে আনতে হবে। সমাজের রক্ষণশীল মানুষজন নারীবাদের এই চিন্তাধারা ও কর্মসূচী অগ্রাহ্য করছেন নিজেরা ক্ষমতা ধরে রাখার অসাধু উদ্দেশ্যে।

নারী নির্যাতন ও নারীবাদ

বিশ্বে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান। তথ্যঃ রাষ্ট্রপুঞ্জ

আন্দোলনের গোড়াপত্তন থেকেই নারীবাদীরা বলে আসছেন নারী-নির্যাতন রোধ করা আন্দোলনের একটি বিশেষ লক্ষ্য। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় শতকরা তিরিশজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। পনেরো বছরের কমবয়েসি মেয়েদের ওপর অত্যাচারের পরিসংখ্যান এতে যোগ করলে নির্যাতিতের সংখ্যা তিরিশের শতাংশের অনেক বেশি হবে। আর বাইরের জগতে যে অত্যাচারের সম্মুখীন তাঁরা হন, তার হিসেব নিলে তো দেখা যাবে মহিলাসমাজের সিংহভাগই জীবনের কোনও না কোনও সময়ে নির্যাতিত হয়েছেন। তবে পারিবারিক নির্যাতন মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা, এবং তা সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় বয়ে আনে।

পরিবারের মধ্যে যৌন ও দৈহিক নির্যাতনের ভয়ে মহিলারা সঙ্কুচিত হয়ে জীবন কাটান, রক্ষা করার তাগিদে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক, ও যৌন আগ্রাস বন্ধ না হলে মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি যে হতে পারে না, তা সব বিশেষজ্ঞই এখন স্বীকার করেন। কিন্তু নারী-নির্যাতন বন্ধ করার রাস্তা সোজা বা সহজ নয়। এই লক্ষ্যে পৌঁছতে যেমন পুরুষের পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব পাল্টাতে হবে, তেমনই তাঁদের সহযোদ্ধা হয়ে মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অনেক পুরুষই পারিবারিক নির্যাতনকে ধিক্কার দেন, কিন্তু আগ বাড়িয়ে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নিতে নারাজ। পরিচিত নির্যাতনকারীর সঙ্গে তাঁরা অবাধে খাওয়াদাওয়া, মেলামেশা চালিয়ে যান। অর্থাৎ নির্যাতনকারীকে পরোক্ষ প্রশ্রয় দেন। নারীবাদীরা বলেন, নিজে অত্যাচারী না হলেও প্রতি পুরুষকে এই অন্যায় আগ্রাসের দায়িত্ব নিতে হবে – এড়িয়ে গেলে চলবে না। নারী-নির্যাতনের ফলে পুরুষের জন্যে যে সুযোগ-সুবিধের জমি তৈরি হয়, তার ফসল ভোগ করে সব ছেলে। তাই তাদের কর্তব্য এগিয়ে এসে এই নির্যাতন বন্ধ করা।

প্রশ্ন ওঠে, আগ্রাসী ব্যবহার করে মহিলাদের পায়ের তলায় রাখলে অত্যাচারীর না হয় সুবিধে হবে, কিন্তু যে পুরুষ অত্যাচার করেন না, তাঁর কী সুবিধে? দুয়েকটা উদাহরণ দিলে যুক্তিটা বোঝা যাবে।

ধরা যাক বিয়েতে পণ কম দেওয়া হয়েছে বলে এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, বা তাকে শ্বশুরবাড়িতে বহু নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় সকলের মন শঙ্কিত হয়ে উঠল। এই রকম দু’একটি ঘটনা ঘটলেই বহু পরিবার বিবাহযোগ্যা কন্যার ভবিষ্যৎ সুখের ও সুরক্ষিত হবে ভেবে, বেআইনি জানা সত্ত্বেও অপরিমিত পণের দাবি মেনে নেবেন, মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে মাথা নীচু করে সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে উপদেশ দেবেন। মেয়েদের ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় “পতি ছাড়া রমণীর গতি নেই আর;” বিয়ে টিকিয়ে রাখা স্ত্রীর দায়িত্ব। স্বামীর কথার অন্যথা তারা যেন কোনওদিন না করে। শিশু বয়স থেকে এই চাপের ফলে মেয়েদের মানসিকতা নমনীয় ও ভীরু হয়ে ওঠে, ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। পরোক্ষে লাভ সব পুরুষেরই।

আর একটি উদাহরণ দিই। বেশি রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি মেয়ে ধর্ষিত হল। এর ফলে শুধু সেই মেয়েটিই ক্ষতিগ্রস্ত হল তা নয়, সেই অঞ্চলের সব মেয়ে আতঙ্কিত হয় উঠল। অভিভাবক বা গুরুজনেরা উদ্বেগবশে পরিবারের মেয়েদের গতিবিধি সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দিলেন – বাইরের জগতে তাদের অবাধ যাতায়ত বন্ধ হল। যাওয়া আসার স্বাধীনতা খর্ব হওয়া মানে মেয়েদের কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত হওয়া। এতে উপকৃত হয় সব পুরুষই কারণ কাজের জগতে মহিলাকর্মীরা বহু কাজ নিতে ভয় পাবেন, বিশেষত যে কাজে রাত অবধি বাড়ির বাইরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ওই ধরনের কাজের দায়িত্ব পুরুষকর্মীদের দেওয়া হবে, পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমানতালে মহিলাদের পদোন্নতি ঘটবে না, কাজের জগতে প্রতিযোগিতা কমবে। ভেবে দেখুন, বিদেশে একা পড়তে যেতে ক’জন মেয়েকে তার পরিবার সচ্ছন্দে ছেড়ে দেয়! নারীসমাজকে অবদমিত রাখতে প্রতিজন পুরুষের অত্যাচারী হওয়ার প্রয়োজন নেই। কয়েকটি দৃষ্টান্তই গোটা মহিলাকূলকে বাধ্য, সীমিত, দুর্বল, পরনির্ভর, আর আজ্ঞানুবর্তী করে তোলে।

এখানে প্রশ্ন ওঠে, সম্পর্ক অসম্মানজনক হলে মেয়েরা কেন প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারেন না? সমস্যাটা জটিল। পারিবারিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করা যথেষ্ট বিপজ্জনক। প্রথমত, প্রতিবাদী হলে মেয়েটির কোনও আশ্রয়স্থল থাকে না। কোথায় যাবে সে? বরং এই প্রতিবাদের ফলে তার ওপর নির্যাতন আরও বাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, নিজের পরিবার আর আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই তার সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা জেগে ওঠে। ‘লোকে কী বলবে,’ ‘বাড়ির কথা বাইরে বলতে হয় না,’ ‘এই আচরণের জন্যে অন্যান্য ভাইবোনের বিয়ে হবে না,’ বাড়ির বয়স্করা ভেঙে পড়বেন,’ ইত্যাদি চাপসৃষ্টি করে মেয়েটিকে নিরস্ত করার প্রচেষ্টা নিরন্তর চলে। ‘একটু মানিয়ে নিলে কিছুদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে,’ পরামর্শ তো প্রায় সব মেয়েকেই শুনতে হয়। “পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই / তবে মেয়ের গুণ গাই” ধরনের শিক্ষা এখনও মেয়েদের সামাজিকীকরণের অঙ্গ। তৃতীয়ত, ভারতে এবং পাশ্চাত্যের সব দেশেই এখন নারী নির্যাতন বিরোধী আইন পাশ হয়ে থাকলেও তার প্রয়োগ সবসময় সুষ্ঠুভাবে হয় না। আমার নিজের মতে প্রতিটি ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ বিরোধী আইনের মুখ্য উদ্দেশ্য নির্যাতনকারীকে শাস্তি দেওয়া – নির্যাতিতের জীবন কী করে সহজ হবে সেদিকে কোনও আইনই বিশেষ নজর দেয় না। তাই বেশির ভাগ মহিলাই অত্যাচার হজম করে বাড়িতে থেকে যান, তাঁদের জীবনে অর্থ, আবাস, নিয়মিত রোজগার, আর পাশের দাঁড়াবার সমর্থক নেই বলে।

বিভিন্ন দেশের যতগুলো নারী সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন আমি দেখেছি, তার মধ্যে ভারতের Protection of Women From Domestic Violence Act-2005 (PWDVA) সবচেয়ে উন্নত মনে হয়েছে। আইনটি দেওয়ানি (Civil Law), ফলে দুষ্কৃতিকারীর শাস্তির চেয়ে জোর দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার ক্ষতিপূরণের ওপর। অর্থাৎ নির্যাতিতার জীবন যাতে সহনীয় হয়, সহজ হয়, আইন তার দিকে লক্ষ্য রেখেছে। দুঃখের বিষয়, আইনটির নিরপেক্ষ, সর্বজনীন প্রয়োগ এখনও দূর অস্ত্‌।

আজকের প্রতিবাদ

ইদানীং ফরাসী নারীবাদীরা বলতে আরম্ভ করেছেন যে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর দোহাই দিয়ে বহুদিন পুরুষকে ক্ষমা করা হয়েছে, আর নয়। এতদিনে পুরুষের শুভবুদ্ধি যদি না জেগে থাকে, তাহলে তাদের ক্ষমা করার দায়িত্ব মহিলারা আর বহন করবে না! পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যে অন্যায়, নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করে, তা উপলব্ধি করার জন্যে ছেলেদের বহু সময় দেওয়া হয়েছে – অথচ এই চেতনা খুব অল্প পুরুষের মধ্যেই জেগেছে। অতএব এখন সময় হয়েছে পুরুষের কাছে জবাবদিহি চাওয়ার। এঁদের মতে এমন দাবি শুনে ছেলেরা অপমানিত বা ক্ষুব্ধ হবে ভেবে নারীবাদীরা অনেক সময়ই কট্টর হন না, সমঝোতার প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু যারা পেছনে পড়ে আছে, শাসিত হচ্ছে, ঘরে-বাইরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তারা কেন নেবে অত্যাচারী শাসককে তুলোয় জড়িয়ে আতুপুতু যত্ন করার দায়িত্ব? পুরুষের কষ্ট বা অবমাননা হলে সমাজ অস্থির হয়ে পড়ে, কিন্তু ধরে নেয় নারী দিনের পর দিন বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত হয়ে মুখ বুজে সহ্য করবে। তাই, মহিলারা যে মুহূর্তে পুরুষের আচরণের সমালোচনা করে, অমনি নারীবাদের প্রতি ‘পুরুষ বিদ্বেষের’ কলঙ্ক লেপা শুরু হয়ে যায়। বেশ, তবে তাই হোক! এখন থেকে মহিলারা এই অপবাদ হাসিমুখে মেনে নেবেন।

তবে বহু কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী এই মনোভাবের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে শ্বেতাঙ্গ নারীবাদীরা ভুলে যান বাদামী বা কালো চামড়ার পুরুষ শ্বেতাঙ্গ সমাজে বর্ণবৈষম্যের শিকার। শ্বেতাঙ্গী নারীবাদীরাও গায়ের রঙের ভিত্তিতে আধিপত্য চালায় কৃষ্ণাঙ্গ ও বাদামী মানুষের ওপর। এ ব্যাপারে তাঁরা কী কৈফিয়ত দেন? শুধু লিঙ্গবৈষম্য খারিজ করা নয়, বর্ণবৈষম্য ধ্বংস করাও নারীবাদের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গী নারীবাদীর সহকর্মী পুরুষ। নারীবাদের সংজ্ঞা হল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও সামাজিক লিঙ্গ-সমতা। সেখানে পুরুষ-বিদ্বেষের জায়গা নেই। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এত যুগ ধরে নারীর প্রতি যে বৈষম্য প্রকাশ করেছে, পুরুষ-বিদ্বেষ তারই উল্টো পিঠ। এই অসম বৈপরীত্য ভাঙতেই তো নারীবাদের জন্ম! তাই পুরুষ-বিদ্বেষ নারীবাদী কর্মপদ্ধতির অংশ হতে পারে না। নারীবাদের লক্ষ্য সমানাধিকার। আধুনিক নারীবাদ নারীপুরুষের লিঙ্গসাম্যের গণ্ডি পেরিয়ে সমকামী, রূপান্তরী, সকলকেই সঙ্গে নিতে উৎসুক। প্রকৃত অর্থে নারীবাদ হল মানব সমানাধিকারের সংগ্রাম।

আজকের নারীবাদী আন্দোলন – পুরুষ-প্রাধান্য নয়, সাম্য চাই

তবে সামাজিক লিঙ্গসমতা যে এখনও নাগালের বাইরে তা সমসাময়িক আইন ও নীতির অবনতির দিকে চোখ ফেরালেই বোঝা যায়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নারীর মানবাধিকার এখন পিছু হটছে। রাজনৈতিক জগতে মেয়েদের সংখ্যা হাতে গোনা যায় – প্রায় সব দেশের সংসদে পঞ্চাশ শতাংশের ধারে কাছেও তাঁরা পৌঁছতে পারেননি। কাজের জগতে তাঁদের অংশ কমছে। মহিলাদের গড় উপার্জন এখনও পুরুষের তুলনায় যথেষ্ট কম। কোভিডকালে বোঝা গেছে সন্তান দেখভালের সিংহভাগ দায়িত্ব এখনও মায়ের ওপরই বর্তায়, ফলে সন্তানের প্রয়োজনে মহিলাদেরই চাকরিতে ইস্তফা দিতে হয়। এই সময়কালে নারী নির্যাতন প্রতি দেশে প্রায় চরমে উঠেছিল। অর্থাৎ, গৃহবন্দিত্ব রোগের ‘ভাইরাস’ থেকে মহিলাদের বাঁচালেও পুরুষের আক্রোশ থেকে বাঁচায়নি।

বিভিন্ন দেশের ‘#মি-টু’ আন্দোলনে বোঝা গেছে নারী নির্যাতন আর উৎপীড়ন কী ভীষণ বিস্তৃত। নিজের শরীর নিয়ন্ত্রণের অধিকারও আজকের নারী ক্রমশ হারাচ্ছে। মহিলাসমাজের প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও, মার্কিন দেশে পঞ্চাশ বছরের পুরনো প্রজনন সংক্রান্ত আইন, Roe v Wade, বাতিল হওয়া এর জ্বলন্ত নিদর্শণ। আজকের নারী পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে মনে করা ভুল। যাঁরা মনে করেন পিতৃতান্ত্রিকতার মৃত্যু ঘটেছে, তাঁরা ভ্রান্তির কুয়াশায় দিকশূন্য হয়ে পড়েছেন। পুরুষপ্রাধান্য বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে, শাখা-প্রশাখা ছড়াচ্ছে – আর ভোল পাল্টেছে থেকে থেকেই।  

———-

তথ্যসূত্র

     Anderson, K. J., Kanner, M., Elsayegh, N., et al. (2009). Are feminists man haters? Feminists’ and nonfeminists’ attitudes toward men. Psychology of Women Quarterly, 33, 216-224.

     Callahan, N. (2017, April 12). “Today’s feminism movement has developed into men hating.” The Telescope. Available at: https://www.palomar.edu/telescope/2017/04/12/todays-feminism-movement-has-devolved-into-men-hating/

     Govt. of India. (2005, September 13). The Protection of Women From Domestic Violence Act, 2005 (Act No. 43 of 2005). Available at: https://www.indiacode.nic.in/bitstream/123456789/15436/1/protection_of_women_from_domestic_violence_act%2C_2005.pdf.

     Housman, P. (2022, June 29). “Roe v Wade Overturned: What it Means, What’s Next.” Washington, DC: American University. Available at: https://www.american.edu/cas/news/roe-v-wade-overturned-what-it-means-whats-next.cfm

     Ministry of Education & Social Welfare, Dept. of Social Welfare (1974, 1975). Towards Equality: Report of the Committee on the Status of Women in India. New Delhi: Dept. of Social Welfare. Government of India.

     Shaji, S. (2020, July 28). “Does feminism encourage man hating and breaking families?” Podcast: Intersectional feminism – Desi style.” Available at: https://feminisminindia.com/2020/07/28/feminism-encourage-man-hating-breaking-families/

*ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ অন্তর্জাল। 

শিক্ষক, গবেষক ও সমাজকর্মী। বিগত পাঁচ দশকের অধিককাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশিয় সমাজে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা ও তাঁদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টায় নিযুক্ত। উত্তর আমেরিকার প্রথম দক্ষিণ এশিয় পারিবারিক নির্যাতন বিরোধী সংস্থা মানবী-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অপরদিকে গোয়েন্দা গল্প রচনাতেও সুপটু। প্রথম উপন্যাস ‘দ্বন্দ্ব’ সানন্দা পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। নিয়মিত লেখালেখি করে চলেছেন ‘সাপ্তাহিক বর্তমান,’ ‘সুখী গৃহকোণ,’ ও বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *