প্রথমা সে নারী

প্রথমা সে নারী

বহু পুরোনো একটি দুর্ঘটনার খবর এক সময় ভারতে সকলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, সবাই ভেবেছিল এ মেয়ে বাঁচল কী ভাবে! এ তো অবাস্তব! পরবর্তীতে সে মেয়ে শুধু বেঁচেই উঠল না, ভারত তথা সমগ্র পৃথিবীর সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেই থামল সে। যার কথা বহুবার বলেও শেষ হয় না, সে অদম্য প্রাণশক্তির অধিকারী এক বিদ্রোহিনী।

সালটা ছিল ২০১১, সেই দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া মেয়েটির নাম অরুণিমা সিনহা, জন্ম ২০ শে জুলাই ১৯৮৯ সালে উত্তর প্রদেশের আম্বেদকার নগরে। বাবা আর্মির ইঞ্জিনিয়ার আর মা ছিলেন স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সুপারভাইজার। অরুণিমার তিন বছর বয়সে তার বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অরুণিমার জামাইবাবু শ্রী ওমপ্রকাশ।

ছোট থেকেই অরুণিমার খেলাধুলার প্রতি ছিল তীব্র আকর্ষণ, সে যেন জন্মেছিল খেলোয়াড় হবে বলেই। সাইকেল চালাতে আর ফুটবল খেলতে ভালোবাসলেও কলেজে ঢুকে অরুণিমা জাতীয় স্তরে ভলিবল খেলতে শুরু করে। কলেজ শেষ করে শুরু হয় জীবিকার সন্ধান, মেয়েটি বরাবরই আশাবাদী, কেমন যেন তার মনে হত খুব ভালো একটা চাকরি তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। এদিকে সে খেলাধুলা ছেড়ে দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারত না। তাই সে ভাবল, এমন একটা চাকরি নিলে কেমন হয় যেখানে খেলাধুলাও বজায় থাকবে? কিন্তু সেই সময়ে চাকরির বাজারে মন্দা চলছিল, একের পর এক দরখাস্ত জমা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শেষমেষ মরিয়া হয়ে ২০১১ সালে সে Central Industrial Security Force (CISF) এ হেড কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন পত্র জমা দেয় এবং তাকে চমকে দিয়ে সেই বহু প্রতীক্ষিত ডাক আসে। চিঠিটা ভালো করে পড়তেই অরুণিমার চক্ষু চড়কগাছ, কী সর্বনাশ! তার জন্ম তারিখ সেখানে ভুল ছাপা হয়েছে। ইশ, এই সামান্য একটা প্রযুক্তিগত ভুলের জন্য এতো ভালো চাকরিটা হাতছাড়া হয়ে যাবে! সে মনস্থ করে তাড়াতাড়ি দিল্লি গিয়ে এই ভুল সংশোধন করে নেবে। তার জীবনে একের পর এক বাধা এলেও তার অনমনীয় মনোভাব আর জয়ের ইচ্ছা বরাবর তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এবারও সেই মনের জোরেই সে দিল্লি রওনা হল।

এরপরের ঘটনা তার নিজের মুখেই শোনা যাক, যে ঘটনা বহুবার শুনেও পুরোনো হয় না। যখন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানুষ আত্মঘাতী হয়, স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদে কেউ একজন অবসাদে তলিয়ে যায়, অর্থের অভাব কাউকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে, তখন এই মেয়েটির জীবন কাহিনী আশার আলো বহন করে আনে, প্রতিটি মানুষের জীবনদর্শন পাল্টে দেয়। মেয়েটি বলতে শুরু করে স্টেজের ওপর, মুখে উচ্ছ্বাস আর চোখে আত্মবিশ্বাসের ঝলক।

২০১৪ সালে একটি টক শোয়ে সে নিজের জীবনের কাহিনী শোনায় হলভর্তি মন্ত্রমুগ্ধ মানুষের সামনে,
“আমি যখন‌ লক্ষ্ণৌ থেকে দিল্লি যাচ্ছিলাম ২০১১ সালে, তখন কিছু বদমাইশ ছিনতাইকারি সমস্ত যাত্রীর মূল্যবান সামগ্রীর ওপর হামলা চালায়। আমার গলায় একটা সোনার হার ছিল, সেটার ওপর নজর পড়ে ওদের। আতঙ্কে কোনো যাত্রী বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেননি কিন্তু আমার ভেতরের খেলোয়াড় জেগে ওঠে, যে কখনও কাউকে কিছু সহজে নিয়ে নিতে দেয় না। আমি বাধা দিলে ওই লোকগুলো আমাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। দুর্ভাগ্যক্রমে ঠিক সেই সময় পাশের লাইনে উল্টো দিক থেকে আর একটি ট্রেন এসে পড়ে, সেই ট্রেনে আমি ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়ি, বাঁ পা টা সরিয়ে নেওয়ার আগেই অন্য ট্রেন টা আমার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। দুটো ট্রেনই চলে গেলে আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি আমার বাঁ পা টা কাটা পড়ে গেছে আর অন্য পায়ের হাড় গুঁড়ো গুঁড়ো।”

হলে উপস্থিত শ্রোতারা একত্রে শিউরে ওঠেন। কী করে সে সারা রাত বেঁচে রইল, তা সে নিজেও জানে না। মনে আছে, সে রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনে পড়ে আছে, আর তার পাশ দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে গেছে প্রায় উনপঞ্চাশ খানা ট্রেন। শুধু তাই নয়, রেললাইনে লুকিয়ে থাকা ছোটো ছোটো ইঁদুর এসে তার কাটা পড়া পায়ের মাংস খুবলে নিতে চায়। অসহনীয় যন্ত্রণায় শরীর কুঁকড়ে যাচ্ছে তবু তার মস্তিষ্ক সচল। পুরোপুরি জ্ঞান হারানোর আগে একবার অরুণিমা যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে, এটুকুই মনে আছে। পরদিন স্থানীয় গ্রামবাসী রেললাইনের ধারে প্রাতঃকৃত্য সারতে এসে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় আবিষ্কার করে এবং তৎক্ষণাৎ তাকে উত্তরপ্রদেশের বেরিলি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সেখানে না ছিল রক্ত, না ছিল কোনো অ্যানাস্থেসিস্ট। ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে মেয়েটি শুনতে পায়, রক্ত আর অ্যানাস্থেশিয়া ছাড়া কী করে এর অপারেশন করা সম্ভব! সে বলে ওঠে, “আমি যদি সারা রাত আমার কাটা পায়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে পেরে থাকি তাহলে এটাও পারব। আপনারা তো আমাকে বাঁচিয়ে তোলার জন্যই এটা করবেন, কেটে ফেলুন একে, আমি সহ্য করতে পারব।”
ওর এই কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট মিলে এক ইউনিট করে রক্ত দেন এবং তারপর বিনা অ্যানাস্থেসিয়ায় পা টি কেটে বাদ দেন। ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালের এমনই দুর্দশা যে অপারেশনের পর অরুণিমার সদ্য পরিত্যক্ত বাঁ পা টি মেঝের ওপর পড়ে ছিল, একটি কুকুর বেমালুম সেখানে ঢুকে পড়ে ওর চোখের সামনেই সেটিকে খেতে শুরু করে দেয়। ডান পায়ের অবস্থাও ভালো ছিল না , হাঁটু থেকে গোড়ালি অবধি রড ঢোকানো হয়েছিল, স্পাইনাল কর্ডেও ছিল গুরুতর আঘাত। অরুণিমা বলল, “আমি যতবারই এই ঘটনার কথা বলি, ততবার সেই একই মর্মান্তিক যন্ত্রণা অনুভব করি।”

এদিকে যখন সে একটু একটু করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে এবং জিতছে, তখন বাইরে চলছে নোংরা রাজনীতির খেলা। এই দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে শুরু হয় তুমুল লড়াই। শেষে অরুণিমাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়, সে নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল, বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছিল, এক সময় নিজেই ট্রেন থেকে লাফ দেয়, ইত্যাদি নানা প্রকার মিথ্যা প্রচারে সংবাদমাধ্যম ভরে যায়। অসহায় অরুণিমার চোখে তখন আগুন আর বুকে বাড়ে জেদ। সে ভাবে ইচ্ছে করলেই চিৎকার করে সকলের সামনে সত্য উদঘাটন করতে পারে, কিন্তু না, সে চায় এমন এক উচ্চতায় নিজেকে পৌঁছে দিতে যেখানে পৌঁছলে আপনিই সকলের মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে যাবে, সেদিনই সে সকলের মুখের ওপর জবাব ছুঁড়ে মারতে সক্ষম হবে, প্রমাণ করে দেবে, “অরুণিমা ক্যা হায়, ও ক্যা থি! একদিন তো মেরা দিন আয়েগা!”

সে বিশ্বাস করে মানুষ যদি নিজে প্রতিজ্ঞা করে যে তাকে কোনো কাজ সুসম্পন্ন করতে হবে, একটি লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে, তবে সে সেটা পারবেই। একমাত্র নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা হওয়া সম্ভব এবং সেটা অরুণিমা প্রমাণ করেই ছেড়েছে। অরুণিমার এক একটি বাক্য শেষ হয় আর শ্রোতাদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে সভাগৃহ।

২০১১ সালের ১৮ই এপ্রিল তদানীন্তন ক্রীড়া মন্ত্রী শ্রী অজয় মেকেন এর হস্তক্ষেপে অরুণিমাকে দিল্লীর এইমস্‌ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে উন্নত মানের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হয়। চার মাস পর তাকে বিনামূল্যে একটি নকল পা (prosthetic leg) প্রদান করা হয়। সেখান থেকে শুরু হয় অরুণিমার নকল পায়ের সফর। নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে এবং ফিরে পায় হারানো স্বাধীনতা। একদিন হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে খবরের কাগজ পড়ছিল অরুণিমা, একটা খবরে তার চোখ আটকে যায়, মাউন্ট এভারেস্টে পৌঁছনোর পনেরোটা রাস্তা রয়েছে, চোদ্দটা দিয়ে অনেকেই উঠেছেন শুধু পনেরো নম্বর দিয়ে কোনো কৃত্রিম পায়ের অধিকারী এভারেস্টের চূড়োয় ওঠেননি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই মনস্থির করে ফেলে, দুর্গম গিরি লঙ্ঘন করবে সে, তার নাম মাউন্ট এভারেস্ট, রুট নম্বর হবে পনেরো। যে-ই একথা শোনে সে-ই ব্যঙ্গ করে, “তুমি কি পাগল?” হ্যাঁ, সত্যিই সে মেয়ে পাগল, জয়ের জন্য পাগল, নিজের পরিচয় ফিরে পাওয়ার জন্য পাগল, অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার চেষ্টায় পাগল।

শুধু মনে ভাবলেই তো হল না, এভারেস্ট জয় করতে চাই প্রশিক্ষণ, প্রচুর টাকার স্পন্সরশিপ। হাসপাতালে পায়ে তখনও স্টিচ কাটা হয়নি, সে অবস্থাতেই অরুণিমা জামশেদপুর যাবে বলে ট্রেনে চড়ে বসল, কারণ সে দেখা করবে আরেক কিংবদন্তী শ্রীমতী বাচেন্দ্রি পালের সঙ্গে। তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি ১৯৮৪ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে মাত্র দু’ঘন্টা দেখা করার সময় পায় অরুণিমা। তাকে দেখে অশ্রুসজল চোখে শ্রীমতী বাচেন্দ্রি পাল বলে ওঠেন, “অরুণিমা এই শারীরিক পরিস্থিতিতে তুমি এভারেস্ট জয়ের কথা ভেবেছ মানে ইতিমধ্যে তুমি তোমার অন্তরের এভারেস্ট জয় করে ফেলেছ, এবার শুধু পাহাড়ে চড়বে গোটা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে যে তুমি কোন ধাতুতে গড়া।” নিজের পরিবার ছাড়া এই অসম্ভব ইচ্ছাপূরণের লড়াইয়ে অরুণিমা একমাত্র শ্রীমতী বাচেন্দ্রি পালকেই পাশে পেয়েছিল।

এরপর শুরু হল স্বপ্ন জয়ের লড়াই। অরুণিমা আর বাড়ি ফিরে যায়নি, শুরু হয়ে যায় পাহাড়ে প্রশিক্ষণ। এভারেস্টে ওঠার আগে সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে নিজের শরীরকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এভারেস্টের আশপাশের শৃঙ্গ গুলো সে একে একে জয় করতে থাকে তার শরীরকে পাহাড় চিনিয়ে দেবার জন্য। এর আগে উত্তর কাশীর নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে একটা কোর্স করে নেয় অরুণিমা। এর পর আঠেরো মাসের কৃচ্ছ্রসাধন, তার জীবনে না ছিল “হোলি” না “দিওয়ালি”, শুধুই পাহাড় চড়া। পাহাড়গুলো উচ্চতায় কম হলেও অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল, প্রতিদিন মুখোমুখি হয়েছে মৃত্যুর, সয়েছে পায়ের অসহনীয় যন্ত্রণা, তবু থামেনি সে। এমন অনেক জায়গা ছিল যেখানে এক পাহাড়ের খাদের ওপারে যেতে মই বা কোনো সাহায্য ছিল না, লাফ দিয়ে পেরোতে হত সেই বিশাল গহ্বর, এক চুল এদিক ওদিক হলেই মৃত্যু অনিবার্য। সেই সঙ্গে নকল পা বিদ্রোহ শুরু করল, ক্রমাগত সেলাইগুলো থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্তপাত হয়ে চলল, নকল পা পাহাড়ের খাড়াইতে রাখলেই গোড়ালি উল্টো দিকে ঘুরে যেত। শেরপা বলতেন, “তুমি পারবে না অরুণিমা, তোমার সঙ্গে গেলে আমিও মরব, এ তো আত্মহত্যার সমান।”

একে একে চারটে ক্যাম্প পেরিয়ে তারপর মূল শৃঙ্গ অভিমুখে যাত্রা করতে হয়। চার নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছনোর পর আরও ৩৫০০ ফিট উঠলে শৃঙ্গ জয়। এই জায়গাটাকে বলা হয় মৃত্যু উপত্যকা। সেখানে পৌঁছে অরুণিমার অভিজ্ঞতা, “চারপাশে অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলাম, কেউ কেউ কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। এক বাংলাদেশি পর্বতারোহীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তিনি চোখের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমি নিজের মনকে বোঝালাম এখান থেকে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, আর মরলেও চলবে না। আপনারা জানেন তো, মন যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের শরীর সেটাই মান্য করে চলে!”

ইস্পাতকঠিন মেয়ে এগিয়ে চলে, হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত, শেরপা জানান অরুণিমার অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে, এবার তাকে নেমে যেতেই হবে। শেরপা বলেন, আগে প্রাণে বাঁচলে তবে পরের বার শৃঙ্গ জয় সম্ভব। অরুণিমা বলে, এখান থেকে ফিরে গেলে সে বাকি জীবনটা অর্ধমৃত হয়ে রয়ে যাবে। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী তাকে সাহস যোগায়, “Arise, awake and stop not till the goal is achieved.” অতএব চরৈবেতি! চলতে থাকে সে। ২০১৩ সালের ২১শে মে সেই স্বপ্নপূরণের দিন। এভারেস্টের শিখর ছুঁয়ে ফেলে অরুণিমা, আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে সে, পেরেছে, সে ছুঁয়েছে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নকল পা নিয়ে, এক নজির সৃষ্টি করেছে সারা পৃথিবীর সামনে, এবার মরেও সুখ! অবশিষ্ট অক্সিজেন ব্যবহার করে সে ছবি ও ভিডিও তোলে, শেরপা কে বলে, “আমি জানি এবার আমি মরব, কিন্তু দেখো এই ভিডিও যেন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছয়, তারাও যেন অসম্ভব কে জয়ের স্বপ্ন দেখে, হাল ছেড়ে না দেয়।”

আর পঞ্চাশ পা গিয়েই তার অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। কিন্তু কথায় বলে না, রাখে হরি মারে কে! এক ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফিরে যাচ্ছিলেন, তিনি তাঁর অব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারটি অরুণিমাকে দিয়ে যান। শেরপা সঙ্গে সঙ্গে সেটা অরুণিমার সঙ্গে জুড়ে দেন। তুষারশৃঙ্গ জয়ী হয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করে শুরু হয় নীচে নামার পালা, বড় ভয়ঙ্কর সে যাত্রা, কিন্তু তাকে থামায় এমন শক্তি এ পৃথিবীতে কারোর আছে নাকি? তার স্বপ্ন প্রতিটি মহাদেশের উচ্চতম শৃঙ্গে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা। এযাবৎ সে জয় করেছে ছয়টি শৃঙ্গ, আরও অনেক পথ চলা বাকি তার, থামতে যে সে মেয়ে শেখেনি! একে একে সব মেয়েটি বলে চলেছে আর মানুষ শুনেছে এক রূপকথা।

তথ্যসূত্র:
Ability magazine এবং Inktalks
ছবি: অন্তর্জাল থেকে

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে বসে বাংলার জন্য মন কেমন থেকেই লেখালেখির শুরু। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত লেখিকা। ভূগোল নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে ভারতে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে কাজ করেছেন। বর্তমানে উত্তর আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। স্যান ডিয়েগোর ভিস্তা শহরে একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশেষ ভাবে সক্ষম বিভাগে resource specialist হিসেবে কর্মরত।

7 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Sanchalita Bhattacharyya , January 15, 2023 @ 6:02 am

    খুব ভাল লাগল।

    • কল্যানী মিত্র ঘোষ , January 16, 2023 @ 6:30 am

      অসংখ্য ধন্যবাদ

  • সুধাংশু শেখর ঘোষ। , January 16, 2023 @ 1:49 am

    সাবলীল প্রতিবেদন। এরকম ব্যতিক্রমী মহিলা সত্যি দুর্লভ।

    • কল্যানী মিত্র ঘোষ , January 16, 2023 @ 6:06 pm

      অসংখ্য ধন্যবাদ। সত্যি এ কাহিনী লিখতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দেয়!

  • রঞ্জন ভট্টাচার্য , January 16, 2023 @ 3:47 pm

    অসাধারণ। অরুনিমার দুঃসাহসিক জীবন প্রাণিত করল। তেমনি এই লেখা। থ্রিলারের মত দম বন্ধ করে পড়ে যেতে হয় শেষ পর্যন্ত। অনবদ্য লেখকের কথকতা ও নির্মাণ সৌকর্য।

    • কল্যানী মিত্র ঘোষ , January 16, 2023 @ 6:07 pm

      অসংখ্য ধন্যবাদ। এই মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করলো।

  • রঞ্জন ভট্টাচার্য , January 16, 2023 @ 3:53 pm

    অসাধারণ। অরুনিমার দুঃসাহসিক জীবন প্রাণিত করল। থ্রিলারের মত দম বন্ধ করে পড়ে যেতে হয় শেষ পর্যন্ত। অনবদ্য লেখকের কথকতা ও নির্মাণ সৌকর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *