বাংলা চলচ্চিত্রে গানের ব্যবহার: আধুনিক বুদ্ধিজীবীর অচ্ছুৎ মৎস্য (দ্বিতীয় পর্ব)

বাংলা চলচ্চিত্রে গানের ব্যবহার: আধুনিক বুদ্ধিজীবীর অচ্ছুৎ মৎস্য (দ্বিতীয় পর্ব)

(৬)

বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গানের জগতের এক উজ্জ্বল নাম মুকুল দত্ত। আজীবন মুম্বাই প্রবাসী এই গীতিকবি বিমল রায়, হৃষীকেশ মুখার্জির মতো পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করার সুবাদে চলচ্চিত্রের নির্মাণ ও গঠনের সঙ্গেও সম্যক পরিচিত।

বাংলা গানের রচয়িতা হিসেবে মুকুলের প্রথম সুযোগ ও পরবর্তী কালের প্রতিষ্ঠা, সব কিছুই তৎকালীন মুম্বাই প্রবাসী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুপারিশেই তরুণ মজুমদারের ‘পলাতক’ ছবিতে তাঁর গীত রচনার সুযোগ আসে। তরুণ মজুমদারের ছবিতে গানের সুচিন্তিত প্রয়োগের কথা সুবিদিত। কিন্তু তরুণবাবুর অন্যান্য ছবিতে যেখানে ছায়াছবির জন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীতের তাৎপর্য মণ্ডিত প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়, সেখানে ‘পলাতক’ ছবিতে যাবতীয় গানই এই ছবির জন্য নির্মিত – লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকের গান। এই ছবির প্রায় প্রতিটি গানই প্রয়োগ নৈপুণ্যে উজ্জ্বল, তবু বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ছবির শেষ পর্বে রুমা গুহ ঠাকুরতার কণ্ঠের এই গানটি

মুকুল দত্ত ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

১) “চিনিতে পারিনি বঁধু তোমারি আঙিনা…” (পলাতক, ১৯৬২)

মনোজ বসুর মূল কাহিনির সূত্র ধরেই, নায়ক বসন্ত (অনুপকুমার অভিনীত) বাউন্ডুলে স্বভাবের এবং ‘খেয়াল পোকা’র দাস। এই পোকা মাথায় নড়াচড়া করলেই তার বিলাস-বৈভবের ঘর সংসার, তালুক মুলুক সব তাসের ঘরের বসতির মতোই ভেঙে পড়ে এবং সব ছেড়ে সে বেরিয়ে পড়ে অজানার সন্ধানে। এমনকি বিবাহের বন্ধনও তাকে আবদ্ধ করতে পারেনা সংসারে। বিয়ের অল্পদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ফেলে আবার বিবাগী হয়। সুকণ্ঠের অধিকারী বসন্ত এক গানের দলের সঙ্গী হয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। অবশেষে এক জমিদার বাড়িতে তাদের ছেলের অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে নাচ গানের বায়না নিয়ে যখন পৌঁছয়, তখন মৃত্যুপথযাত্রী, অসুস্থ নায়ক আবিষ্কার করে এ যে তারই ছেড়ে আসা বাড়ি। সে জানতে পারে তার ছেড়ে যাওয়া স্ত্রী ইতিমধ্যে পরলোকগতা আর যার অন্নপ্রাশন হচ্ছে সে তারই সন্তান। নাচের আসরে তখন তার দলের প্রধানা গায়িকা (রুমা গুহ ঠাকুরতা) গাইছে এই গানটি। নায়কের ছেড়ে যাওয়া  ঘরসংসার তথা প্রিয় মানুষটির হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, সেই সঙ্গে স্বকৃত অপরাধের জন্য মনস্তাপ – সব কিছুই সার্থক ভাবে ফুটে উঠেছে মুকুল দত্তের কলমে এই গানটিতে:

চিনিতে পারিনি বঁধু, তোমারি আঙিনা
তাই দেরি হল যে দেরি হল যে তোমার কাছে আসিতে
বলিতে জানিনা বঁধু, কী যে মোর যাতনা
কিছু মানা ছিল না মানা ছিল না তোমার কাছে বলিতে।।

কত পথ পার হয়ে
কত দিন গেছে বয়ে
কত সুখ দুখ সয়ে
চেয়েছি তোমায় –
বিরহের ভার বঁধু বহিতে যে পারি না।।

দূরে গিয়ে ভুল হল
পথ কেন যেতে দিল
কাছে পেতে আজ বঁধু চাই গো তোমায় –
তোমারই ভাবনা বঁধু ছাড়িতে যে পারি না।।

গানটির ব্যঞ্জনাময় প্রয়োগের শেষে নায়কের মৃত্যু এবং ছবির সমাপ্তি।

গানটি শুনুন / দেখুন :

২) “যদিও রজনী পোহাল তবুও…” (বাঘিনী, ১৯৬৮)

সমরেশ বসুর উপন্যাস অবলম্বনে বিজয় বসু পরিচালিত এই ছবিতে গ্রামের স্বামী বা পিতৃহারা সহায় সম্বলহীনা যুবতী মেয়েরা বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে দেশী মদ তৈরি ও চালানের বেআইনি ব্যবসায় যুক্ত হয়, যে ব্যবসার মূল হোতা, নায়ক চিরঞ্জীব (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)। নায়িকা দুর্গা (সন্ধ্যা রায়) এমনই একটি পিতৃহীন অসহায় চরিত্র, যে গ্রামের যাবতীয় লম্পট অর্থবানদের লালসার লক্ষ্যবস্তু। সম্মানের সঙ্গে, স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে নায়কের নেতৃত্বে অন্য অনেক মেয়ের মতো সেও অবশেষে যোগ দেয় এই চোলাই ব্যবসায়। মূল উপন্যাসে লেখকের কলমে এই মেয়েদের বর্ণনা এইরকম:

দুর্গার মত মেয়ে ছিল পাড়ায়। দুর্গা তাদের দেখেছে আজন্ম। ভরা বয়সে আইবুড়ো মেয়ে বাপ-মা হারিয়েছে। নই বাছুরের মতো মেয়ে স্বামী হারিয়েছে। হারিয়ে কপাল কুটে কুটে কেঁদেছে। …কিন্তু কেঁদে কদিন চলে? পৃথিবী বর্ষায় চিরদিন ভেজে না। …রোদ হাসে ঝিকিমিকি করে। দুর্গা দেখেছে, সেই মেয়েরাও হেসেছে। শোকের স্যাঁতস্যাতানি শুকিয়ে, প্রত্যহের জীবনে আবার ঝরঝরে হয়ে উঠেছে তারা। কিন্তু ঘর তারা করেছে ঘর না বেঁধে। মাঝি নেই তবু খেয়া নৌকার মত। পারাপারের যাত্রীরা যে যখন আসে, পার হয়ে যায়। ফিরে চেয়ে দেখে না আর সে নৌকো ভাসে কি ডোবে। ফাটে কি ফুটো হয়। 

এই বর্ণনাই আত্মস্থ করে নিজস্ব গানের ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন মুকুল দত্ত এই গানটিতে। এই যুবতীদের ব্যর্থ যৌবন, অবদমিত কামনা, ভালবাসবার, ভালোবাসা পাবার কিংবা ঘর বাঁধবার অপূর্ণ সাধ – সব কিছুই মুকুল তুলে ধরেছেন এই একটি গানে। গ্রামের মেয়েগুলির মতোই সহজ সরল অথচ হৃদয়স্পর্শী ভাষায়:

এমন পথ চলা ভালো লাগে না –
আমার অঙ্গ দোলে তরঙ্গে তরঙ্গে,
কেউ না বাঁধে যদি পথ হারাবে নদী-
ভালো লাগে না, লাগে না।।
ভালোবেসে মরি যদি সেও ভালো,
ঘর বেঁধে যদি মরি, আরো ভালো।
এস এস হে বন্ধু জ্বলিতে জ্বলিতে – মরণ আমার ভালো লাগে।
কপালের লিখা সিঁদুরে ঢাকিয়া মরে যাওয়া আজো হল না হল না।

ছবিতে গানটি একটি মেয়ের (বাসবী নন্দী) ওষ্ঠে চলচ্চিত্রায়িত হলেও তা হয়ে ওঠে নায়িকা সহ সব মেয়ের মনের কথা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মরমী সুর আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠের অনন্য জাদুকরী প্রকাশ ভঙ্গী মিলে গানটি বাংলা চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসের এক স্থায়ী সম্পদ।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

৩। “চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়…” (মন নিয়ে, ১৯৬৯)

সলিল সেন পরিচালিত ‘মন নিয়ে’ ছবিটির কাহিনির সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এ ছবির কাহিনি আক্ষরিক অর্থেই ‘মন’ নিয়ে – বা বলা যেতে পারে ঘোর মনস্তাত্ত্বিক। নায়িকার (সুপ্রিয়া দেবী) জটিল মনস্তত্বকে স্পর্শ করার প্রচেষ্টাই এই ছবির উদ্দেশ্য। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ, স্বাভাবিক নায়িকার জটিল মনোরোগ হল – তার কাছের মানুষের (এ ক্ষেত্রে নায়ক, উত্তমকুমার) ঘনিষ্ঠতার বৃত্তে অন্য কাউকে সহ্য করার অপারগতা। সে নায়কের নিজের নাবালিকা, পঙ্গু বোন, এমনকি নিজেদেরই অনাগত সন্তান – যেই হোক না কেন ! অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এদের প্রত্যেকের অস্তিত্ব পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে সে বদ্ধপরিকর। এই মানসিক রোগ আরো জটিল আকার ধারণ করে যখন জানা যায় যে তার এই কাজ যে ঘোরতর পাপ সে ধারণা তার অবশ্যই আছে কিন্তু সেই সঙ্গে সে এ ও বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের কাছে নিজের পাপকার্যের গোপন স্বীকারোক্তিই তাকে পাপ থেকে মুক্ত করবে। ঈশ্বরের প্রতি এই গোপন স্বীকারোক্তি সে করে থাকে এক নিজস্ব উপায়ে – এক গোপন বাক্সে তার এই সব পাপকার্যের হাতিয়ার গুলি লুকিয়ে রেখে। এই গোপন বাক্সই তার অবচেতনায় ও স্বপ্নে রূপ নেয় এক অন্ধকার কক্ষে – যে বন্ধ ঘরের অনন্ত অন্ধকার থেকে সঙ্গীহীন নায়িকা পরিত্রাণের পথ পায় না। নায়িকার এই অতি-জটিল মনস্তত্ব প্রকাশ করা সম্ভব হয় মুকুল দত্তের কলমের সহায়তায়, এই একটি গানের মাধ্যমে:

হয়তো বা সব আলো মুছে যাবে
হয়তো বা থাকবে না সাথে কেউ
একদিন মাঝ পথে পথটাও ফুরিয়ে যাবে,
চোখের জলের কথা শুনবে না কেউ,
ভোরের আলোর কথা ভেবে;
স্বপ্ন দিয়ে সাজাতে সাজাতে রাত পার হয়ে যাবো।।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

(৭)

সত্যি কথা বলতে গীতিকার সুধীন দাশগুপ্তে’র যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে বলেও মনে হয় না

পঞ্চকবি-উত্তর বাংলা গানের জগতে গীতস্রষ্টাদের মধ্যে গীতিকার এবং সুরকার- এই দুই শ্রেণীর স্পষ্ট বিভাজন রেখার উপস্থিতি সত্ত্বেও যে স্বল্পসংখ্যক স্রষ্টা একাধারে গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সুধীন দাশগুপ্ত। রেকর্ড এবং ছায়াছবি – দুই ধরণের গানেই সমান জনপ্রিয় এই গীতস্রষ্টার জনপ্রিয়তা অবশ্য সন্দেহাতীত ভাবেই সুরকার হিসেবে যতটা, গীতিকার হিসেবে ততটা নয়। সত্যি কথা বলতে ‘গীতিকার সুধীন দাশগুপ্তে’র যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে বলেও মনে হয় না। তবুও, রেকর্ড বা ছায়াছবির গানে সুর সৃষ্টির সময় বহু ক্ষেত্রে যখনই তিনি যোগ্য গীতিকারের অভাব বোধ করেছেন, তখনই তাঁর নিজের কলমে জন্ম নিয়েছে বহু উল্লেখযোগ্য গীতিকবিতা। ছায়াছবির গানের জগতে সুধীনের কলমের কিছু উজ্জ্বল নিদর্শন এখানে আলোচনা করা হল।

৪) “হয়তো তোমারই জন্য…” (তিন ভুবনের পারে, ১৯৬৯। পরিচালনাঃ আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীত: সুধীন দাশগুপ্ত)

সমরেশ বসুর উপন্যাসের জনপ্রিয় চলচ্চিত্ররূপে তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয় এই গানটির উল্লেখ এই কারণেই করতে হল, যে বর্তমান আলোচনায় তার মূল্যায়ন জনপ্রিয়তার নিরিখে নয়, হয়েছে প্রয়োগ-তাৎপর্যের ভিত্তিতে। বহুল পরিচিত এই কাহিনিতে সরসী (তনুজা) চেয়েছিল রকবাজ, লোফার সুবীরকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে, আর সুবীরের ছিল সরসীর প্রতি অন্ধ প্রেম। সরসীর লক্ষ্য ছিল সুবীরের সেই প্রেমকেই ‘ব্যবহার’ করে, তার ‘শর্ত’ হিসেবে সুবীরের ওপর শিক্ষায় সফলতার বোঝা চাপিয়ে দেবার। লেখক সমরেশ বসুর কলমে উভয় চরিত্রের বিশ্লেষণ এই রকম:

সুবীরের মতো পুরুষ, যাকে প্রবৃত্তির দাস বলা যাবে না কোনরকমেই, স্বাভাবিকতাই যার জীবনের বেগকে কেবল অস্থির তরঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে। আর সেই তরঙ্গ কেবলই সরসীর কূলে ছুটে এসে অজস্র ধারায় ভেঙে পড়েছে… সুবীরের প্রাণের যে অশান্ত বেগ, যাকে সে (সরসী) দস্যুতা বলেছে আপন নারীত্বের গৌরবে, সে অশান্ত বেগের সকল লীলা ওর সরসীকে কেন্দ্র করেই… সুবীর যেন ব্যাকুল ও মত্ত যৌবনের একটা মাতঙ্গ।…

সরসীর নিজের অন্তরে জটিলতা থাকলেও অপরের জটিলতাকে সে স্বীকার করে নিতে পারেনি। আপাতদৃষ্টিতে মিথ্যা সুখসন্ধানী, অগভীর মনোভাবাপন্ন অন্ধকার রোয়াকের প্রাণীদের সে…নিতান্ত রকবাজ বলেই জেনেছে। আত্মমর্যাদাহীন পারিবারিক পরিবেশ, স্নেহহীনতা, দারিদ্র্য ও চারপাশের অন্যায়ের বেড়াজালে পরাজয় ও হতাশায় ব্যথিত ও বিক্ষুব্ধ প্রাণকে সে আবিষ্কার করতে পারেনি… সে কারণে নিতান্ত একটা পোশাক বদলাবার মতোই সুবীরের পরিবর্তন আশা করেছিল সে… হয়তো সেটিও খুব অসম্ভব ব্যাপার ছিল না, যদি প্রেমের প্রতি কোন শর্ত আরোপ না করে সে সুবীরের অনুভূতির দরজায় আপন গ্লানি যন্ত্রণা ও কষ্টকে বিদ্ধ করতে পারত। কিন্তু প্রেম যেখানে শর্তসাপেক্ষ সেখানে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।… 

উভয় চরিত্রের লেখকের এই বিশ্লেষণই গানের ভাষায় রূপ পরিগ্রহ করে নায়কের মুখের গানে, সুধীন দাশগুপ্তের কলমে:

হয়তো তোমারই জন্য
হয়েছি প্রেমেতে বন্য
জানি, তুমি অনন্য-
আশার হাত বাড়াই

আমি যে নিজেই মত্ত
জানিনা তোমার শর্ত
যদিবা ঘটে অনর্থ
তবুও তোমায় চাই।।

আমি যে দুরন্ত দুচোখে অনন্ত
ঝড়ের দিগন্ত জুড়ে স্বপ্ন ছড়াই।।

তুমি তো বলোনি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব
সব ছেড়ে চল যাই ।।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

৫) “আমি অন্ধকারের যাত্রী…” (এপার ওপর – ১৯৭৩। পরিচালনাঃ আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীত: সুধীন দাশগুপ্ত)

‘তিন ভুবনের পারে’র কাহিনিকার, পরিচালক, গীতিকার, সুরকারের একই সমাহারে তৈরি হয়েছিল ‘এপার ওপার’ ছবিটিও। অর্থাৎ, এই ছবিরও মূল আধার সমরেশ বসুর উপন্যাস। একজন তথাকথিত সমাজবিরোধী – যে নিজেকে এবং প্রিয়জনদের বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে অন্ধকার জগতে পদার্পণে বাধ্য হয় – এই ছবির নায়ক (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত)। নিজেরই দলের লোকদের চক্রান্তে একটি ডাকাতির মামলায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে জেলে যেতে বাধ্য হয়। জেলে তার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে তার মতোই আরো কিছু মানুষের যারা জীবনে কিছু করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে এসেছে এই অন্ধকারের রাজ্যে। মূল উপন্যাসে সমরেশ বসুর ভাষায় :

জীবনে হতে চাওয়া আর করতে চাওয়ার সঙ্গে হয়ে যাওয়া আর করে ফেলার যেন একটা চির-দ্বন্দ্ব আছে। এ দ্বন্দ্বের স্বরূপ সম্ভবতঃ মানুষের নিজেরই জটিল গ্রন্থির পাকে পাকে জড়ানো… এ যেন অনেকটা পৃথিবীতে এত সঙ্গীত সৃষ্টি হল, এত কাব্য, এত শিল্প সাহিত্য… তবু বিশ্বযুদ্ধ হয়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, রক্ত নিয়ে মানুষ হোলি খেলে চলে, আরো খেলবে। কতদিন ধরে কে জানে। …বেদ উপনিষদ যদি কাব্য হয় তাহলেও আজ পর্যন্ত সে সব কিছুই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। একদিন হয়তো পারবে, তাই বাতি হাতে করে মানুষ যাত্রা করেছে বহুকাল। বাতিটা বড় নিভু নিভু। তেলের অভাব পড়েনি। অন্ধকারের গাঢ়তা এত বেশি, তার ঝড়ের বেগ এত প্রবল, বাতিটা কেবলই মূর্ছা যায়। 

এই ভাবধারাই ফুটে ওঠে সুধীনের কলমে:

আমি অন্ধকারের যাত্রী
প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও
আমার দু’চোখে রাত্রি
তুমি ভোরের ফুল ফোটাও।
তোমার অভয় বাণী
ঘুচবে শঙ্কা গ্লানি
জানিনা পথের দিশা
তুমি পথ দেখাও।।

ছায়াছবিতে গানটি ব্যবহার হয়েছে নায়িকার (অপর্ণা সেন অভিনীত) ওষ্ঠে, গির্জার প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গানটিতে ব্যক্ত হয় নায়কেরই অভিব্যক্তি। আশা ভোঁসলের কণ্ঠের জাদুতে এবং সম্পাদনার যথাযথ প্রয়োগে গানটি ছবিতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত হয়।

গানটি শুনুন/ দেখুন: 

রমাপদ চৌধুরীর উপন্যাস  অবলম্বনে তৈরি  কাহিনীতে  তিন জোড়া যুবক যুবতী ছুটির আনন্দে পিকনিকে যায়। এদের মধ্যে দুটি যুগল ঘোষিত ভাবে প্রেমিক প্রেমিকা, কিন্তু অবশিষ্ট যুগলটি সদ্য পরিচিত এবং এই প্রমোদ-ভ্রমণ কালে তাদের সম্পর্ক বিকাশোন্মুখ। পারিবারিক বিধিনিষেধের বেড়াজাল সবারই, বিশেষতঃ তিনটি যুবতীর জীবনে, অত্যন্ত প্রবল। সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসা যাবে – এই নিশ্চিন্ততাতেই সবার নির্ভার যাত্রা। কিন্তু সব হিসেবে ওলটপালট হয়ে যায় যখন রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয় এবং সবাই বাড়ির বাইরে রাত্রিযাপনে বাধ্য হয়। পারস্পরিক দোষারোপ, অভিযোগ, সন্দেহ সব মিলিয়ে সম্পর্কের রসায়নগুলি অনেকটাই নতুন ভাবে জারিত হয় এই একটা রাত্রে। নিজের উপন্যাস সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব মূল্যায়ন এই রকম:

জীবনে একটা সামান্য ঘটনা যদি ঘটে যায় তা হলে সমস্ত পৃথিবীটা হয়ে যায় অন্যরকম। একটা গাড়ি, স্টার্ট দিলেই চলতে শুরু করে, মানুষের জীবনের মত ছুটতে  শুরু করে। কি আনন্দ! প্রেম, ভালোবাসা, অহংকার, সজীবতা নিয়ে সে যখন দৌড়য় তখন সেও যান্ত্রিক শক্তিতে উন্মত্ত। মানুষের জীবনও তো একটা পিকনিক বলেই মনে হয়। কিন্তু চাবি ঘোরালেও যখন হঠাৎ কি  কারণে স্টার্ট নেয় না, সব ওলটপালট হয়ে যায়। মুহূর্তে উবে যায় প্রেম, ভালোবাসা, অহংকার ও সাফল্যের হাসি। …রাতারাতি জীবনের রঙ বদলে যায়। নিজের নিজের দুশ্চিন্তা নিয়ে তখন সেই যুবক যুবতীরা এক একেকটি পৃথক মানুষ, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ।

কাহিনির এই সারমর্মটুকুই ফুটে উঠেছে সুধীনের কলমে – এই গানটিতে:

চায় যে ওরা প্রেম কে ধরে চলতে এগিয়ে
কোন জীবনের স্বপ্ন এনে মনকে দেখিয়ে।
বন্ধ ঘরেতে বন্দি হলে সে একই তো ভাবনা।

কী হবে কাল তাই নিয়ে আজ ওরা যেন চঞ্চল
নিঃস্বতার এই যন্ত্রণাতে প্রেমটুকু সম্বল।
সন্দেহেতে মন, সঙ্গীকে যখন, বুঝেও তো বোঝে না –
কেউ তো জানে না, মনেরই ঠিকানা।।

আধুনিকতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “যা কিছু চিরন্তন, তাই আধুনিক।” তাই বোধহয় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের ব্যবধান সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের প্রাসঙ্গিকতায় রচিত গানটিতে আধুনিক সময়ের দমচাপা বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিক আবহাওয়ায় যে নিঃসঙ্গতা, অনিশ্চয়তা এবং সর্বোপরি অর্থহীনতার বোধ একজন সংবেদনশীল মানুষকে ঘিরে থাকতে বাধ্য, তার বর্ণনা এখনও এত প্রাসঙ্গিক। এই প্রসঙ্গে মনে পড়তে বাধ্য বাংলার চির-আধুনিক ও চির-প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথের শতাধিক বছর পূর্বে রচিত একটি গীতিকবিতায় যান্ত্রিক সময়ের অসহায় শিকার আধুনিক মানুষের সার্থক মূল্যায়ন:

অশেষ বাসনা লয়ে ভাঙা বল
প্রাণপণ কাজে পায় ভাঙা ফল
ভাঙা তরী ধরে ভাসে পারাবারে
ভাব কেঁদে মরে, ভাঙা ভাষা।

হৃদয়ে হৃদয়ে আধো পরিচয়
আধোখানি কথা সাঙ্গ নাহি হয়
লাজে ভয় ত্রাসে আধো বিশ্বাসে
শুধু আধোখানি ভালোবাসা।

সুধীনের গানে এই গীতিকবিতারও ছায়া কি পাওয়া যায় না?

গানটি শুনুন/ দেখুন: 

(৮)

পঞ্চকবি-উত্তর আধুনিক বাংলা গানের জগতে সবচেয়ে প্রতিভাবান গীতস্রষ্টা হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে তাঁর নাম নিঃসন্দেহে সলিল চৌধুরী। তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের মতোই একাধারে গীত রচয়িতা এবং সুরকার। এবং শুধুমাত্র গীতিকবি হিসেবে মূল্যায়নের প্ৰয়াসেও যিনি বাংলা গানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকবির আসনের দাবিদার। একথা সর্বজনবিদিত যে তাঁর সাঙ্গীতিক ক্ষেত্রের বিস্তার অতি ব্যাপক। গণসঙ্গীতের সফল স্রষ্টা হিসেবে সাঙ্গীতিক জীবন সূচনার পর বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবি এবং তারই সমান্তরালে হিন্দি, মালয়ালম, তামিল সহ মোট দশটি ভারতীয় ভাষার চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা তথা দেশি-বিদেশী মার্গ সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীতের আত্তীকরণ নিশ্চিত ভাবেই তাঁর সাঙ্গীতিক তথা শিল্পসৃষ্টির দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করেছে। ‘গান তথা যে কোনও শিল্পসৃষ্টি হওয়া উচিত জীবনের দর্পণ’ – এই দর্শনে বিশ্বাসী হলেও তিনি কোনও বিশেষ মতবাদ, বা বিশেষ ঘটনা বা বিশেষ বক্তব্য নিয়ে গান রচনার বিরোধী ছিলেন। গান সৃষ্টির ক্ষেত্রে সব সময়েই তাঁর প্রচেষ্টা থাকত সেই গানকে যতটা সম্ভব সার্বজনীনতার স্তরে উন্নীত করার – যাতে কোন বিশেষ স্থান-কাল-পাত্রের পরিপ্রেক্ষিতে রচনা হলেও গানটির প্রাসঙ্গিকতা শুধু সেই স্থান-কাল-পাত্রের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে তার আবেদন হয়ে ওঠে চিরন্তন। এখানে এটুকু উল্লেখ করা সম্ভবতঃ অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, ঠিক এই কারণেই গণসঙ্গীতের অন্যতম সফল রূপকার হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ তথা কম্যুনিস্ট পার্টির তৎকালীন নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর তীব্র মতভেদ ঘটে এবং তিনি উভয়ের সংস্রব ত্যাগ করে অবশেষে জীবিকার তাড়নায় মুম্বাই প্রবাসের সিদ্ধান্ত নেন।

 

সলিলের এই শিল্প দর্শন তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রচিত গণসঙ্গীতের ক্ষেত্রে যেমন, ছায়াছবির জন্য রচিত গানের ক্ষেত্রেও একই ভাবেই প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। এইখানেই চলচ্চিত্রের অন্যান্য গীতস্রষ্টাদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য। সলিল যখন ছায়াছবির জন্য গান রচনা করেছেন তখন সে গান ইতোপূর্বে আলোচিত অন্যান্য গানের মতো ছায়াছবির চরিত্র বা কাহিনীর সঙ্গে একাত্ম বা ঘনসন্নিবদ্ধ হবার পরিবর্তে চলচ্চিত্রের সিচুয়েশনের শুধুমাত্র মূল সুরটুকু বজায় রেখে হয়ে উঠেছে অনেকটাই সার্বজনীন। ছায়াছবিটি না দেখলেও সে গানের রসগ্রহণের বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় না – কারণ তার আবেদন ছায়াছবির কাহিনি বা তার চরিত্রদের সীমিত গণ্ডি অতিক্রম করে হয়ে দাঁড়ায় চিরন্তন। সলিলের সঙ্গীত পরিচালনার কয়েকটি ছায়াছবির গান দৃষ্টান্ত হিসেবে আলোচনা করা যেতে পারে।

পঞ্চকবি-উত্তর আধুনিক বাংলা গানের জগতে সবচেয়ে প্রতিভাবান গীতস্রষ্টা হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে তাঁর নাম নিঃসন্দেহে সলিল চৌধুরী

৬) “জাগো মোহন প্রীতম…” (একদিন রাত্রে, ১৯৫৬)

পরিচালক বিমল রায়ের আহ্বানে মুম্বাই গেলেও অনতিবিলম্বেই সলিলের পরিচয় হয় তৎকালীন সর্বাধিক বাণিজ্য-সফল প্রযোজক ও পরিচালক রাজ কাপুরের সঙ্গে। ‘একদিন রাত্রে’ ছবিটি রাজ কাপুর প্রযোজিত, কিন্তু নিজের পরিচালিত নয়। এর কাহিনি বা আঙ্গিকও রাজ কাপুরে প্রযোজিত ও পরিচালিত অন্যান্য ছবি থেকে ভিন্নতর। এই ভিন্নধারার চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন বাংলার প্রখ্যাত দুই নাট্যব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্র ও অমিত মিত্র।

বিনা অপরাধে চোর অপবাদ নিয়ে একদল উন্মত্ত জনতার হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য সারারাত ধরে পালিয়ে বেড়ানো একটা মানুষের গল্প বলা হয়েছে ছবিটিতে। শুধুমাত্র একটু জল খাবার আশায় বহু ভাড়াটে পরিবার সমন্বিত একটি উচ্চতল বাড়িতে ঢুকেছিল গ্রাম থেকে শহরে সদ্য আসা মানুষটি। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা চোর সন্দেহে তাকে তাড়া করে। তাড়া খেয়ে খেয়ে একের পর এক ঘরে লুকিয়ে থেকে থেকে সে দেখে সর্বত্র নৈতিকতার অবনমন। কিন্তু তবু তার সাহস হয় না বিনা অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা এতগুলি মানুষের মুখের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে নিজের নির্দোষিতা ঘোষণা করার। ছবির সমাপ্তি দৃশ্যের এই গান রাত্রি শেষে নতুন সূর্যের বন্দনাগানের পাশাপাশি মিথ্যা সঙ্কোচ সংহার করে, প্রভাত সূর্যের গম্ভীর মন্ত্রে নিজেকে জাগিয়ে তোলার গান:

তিমির বিদার করি এস হে জ্যোতির্ময়
দূর করো মূঢ় গ্লানি, করো দূর সংশয়
অমানিশা-ভ্রান্তির করো সংক্রান্তি।

আকাশে বাতাসে শোনো মুক্তির বন্দন
কিসেরই দ্বিধা আজি, কিসেরই এ ক্রন্দন ?
দুঃখ বিমোচন করো ভয় ভঞ্জন।।

রবীন্দ্রনাথের “আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও / আপনাকে এই লুকিয়ে রাখা, ধুলায় ঢাকা ধুইয়ে দাও” যে গানটির সৃষ্টির প্রচ্ছন্ন প্রেরণা তা রবীন্দ্র পাঠক মাত্রেই উপলব্ধি করবেন। কিন্তু এতে গানের মৌলিকত্ব কোনভাবে ক্ষুণ্ণ হয় না। বরং ছায়াছবিতে গানটির প্রাসঙ্গিকতা, অর্থাৎ সহজ সরল, সদ্য-গ্রাম-থেকে-আসা যুবকটির প্রতিরোধের প্রেরণাকে অতিক্রম করে গানটি হয়ে ওঠে শ্রোতামাত্রের কাছেই অকারণ ভয়, মিথ্যা সঙ্কোচ ত্যাগ করে আত্ম জাগরণের প্রেরণা স্বরূপ। সেখানেই গানটির সার্থকতা।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

৭) “আমি অনেক ঘুরিয়া শ্যাষে…” (বাড়ি থেকে পালিয়ে, ১৯৫৮)

ঋত্বিক ঘটকের ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ সম্ভবত: তাঁর সবচেয়ে কম আলোচিত এবং নিম্নতম মূল্যে মূল্যায়িত চলচ্চিত্র। হয়তো শিবরাম চক্রবর্তীর শিশু সাহিত্য অবলম্বনে, কিশোরোপযোগী চলচ্চিত্র হিসেবে তৈরি হবার কারণেই। দক্ষ পরিচালক এই ছবিতে গ্রাম ছেড়ে শহরে পালিয়ে আসা এক নাবালকের দৃষ্টিতে কলকাতা শহরের যাবতীয় রূঢ় ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা অসাধারণ মুনশিয়ানায় উপস্থাপিত করেছেন।

শহরে এসেই বালকটি সর্বপ্রথম যে বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে, তা হল উদ্বাস্তু সমস্যা- দেশভাগ-পরবর্তী কলকাতায় রাস্তার দু’পাশের ফুটপাথ জুড়ে অজস্র, অবিরত ঝুপড়ি – আজন্মের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত কিছু মানুষের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত সংগ্রাম। গ্রাম্য বালকের দৃষ্টিতে দেখা শহর আর একজন উদ্বাস্তুর দৃষ্টিতে দেখা শহর তখন একাত্ম হয়ে যায় (দুজনের কাছেই এই মহানগর তথা নাগরিক জীবন সমান অপরিচিত ও অদ্ভুত।) শহরের পথে পথে ঘুরে গাওয়া বাউলের এই গানে। ‘পদ্মাপাড়ের চরের ঘরবাড়ি,’ ‘বিঘা দুই খেতি বারি’- বিনা দোষে এই সব কিছু ছেড়ে চলে আসার দুঃখের পাশাপাশি ‘ইট কাঠে পাথরে গড়া শহর বড় ভারী’ প্রথম দেখার অসীম বিস্ময়- যুগপৎ ফুটে উঠেছে এই গানে- এই বাউলটির মতই লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষের হৃদয়ের কথা হয়ে। এরই পাশাপাশি শহরের অন্যান্য নিষ্ঠুর বাস্তবতা- শহরের যান্ত্রিক জীবন, বিপুল জনসংখ্যা ও মানুষের ‘ঘেঁষাঘেঁষি-ঠাসাঠাসি’ অস্তিত্ব কিন্তু তা সত্ত্বেও পরস্পরের প্রতি উদাসীনতা, কলে কারখানায় শ্রমিকের নিত্য শোষণ – সব কিছুই একেকটি তুলির আঁচড়ে অপরূপ দক্ষতায় সলিল ফুটিয়ে তুলেছেন এই গানে। অবশেষে শেষ স্তবকে, হাওড়ার পুলের বর্ণনা-কল্পে যখন সলিল লেখেন:

এই এত্তগুলান বরগার সঙ্গে মিলছে এত্ত কড়ি,
লক্ষ কোটি মাইনষেও যদি মিলত এমন করি-
এই জীবনের নদীর ওপর সেতু দিতাম গড়ি,
আর হাইস্যা পার হইতাম মরণ পাইতো না রে পাত্তা।।

তখন গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা বালক, সদ্য আসা উদ্বাস্তু- সবাইকে ছাড়িয়ে তা যেন হয়ে ওঠে যে কোন মহানগরের যে কোন সংবেদনশীল নগরবাসীর হৃদয়ের চিরন্তন অনুভব। এখানেই সলিলের সাফল্য।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

৮) “মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে…” (মর্জিনা অবদাল্লা, ১৯৭৩)

আরব্য উপন্যাসের কাহিনি কে বঙ্গীকৃত করা শুধু নয়, সংলাপ-নাচ-গান-অভিনয় সব মিলিয়ে বাঙালীর নিজস্ব সম্পদে পরিণত করেছিল ১৮৯৭ সালে ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত আলিবাবা নাটক- যা ওই সময় প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।ধীরে ধীরে এই কাহিনি বাংলার ঘরে ঘরে, শিশু ও কিশোর পাঠ্য রূপকথা হিসেবে পাকাপোক্ত আসন তৈরি করে নেয়।

এই অতি পরিচিত কাহিনি অবলম্বন করেই, স্থান-কাল-পাত্র সব কিছু এক রেখে শুধুমাত্র চরিত্রগুলির মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে খানিকটা সমকালীনতা ও আধুনিকতার স্পর্শ এনে দীনেন গুপ্ত তৈরি করেছিলেন ‘মর্জিনা অবদাল্লা’ ছায়াছবি। চরিত্রদের এই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় ছবিতে প্রযুক্ত সলিল রচিত গানগুলির মধ্যে। প্রতিটি গানেই চরিত্রগুলির আধুনিক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের প্রবণতা গানগুলিকে এক স্বতন্ত্র মাত্রা দান করে – বিশেষতঃ এই গানটিতে। ক্ষীরোদ প্রসাদের মূল নাটকটিতে বাঁদি মর্জিনার মুখে ঘর পরিষ্কার করবার অনুষঙ্গে “ছি ছি এত্তা জঞ্জাল” গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সলিল এই শব্দবন্ধটিকে অবিকল বজায় রেখেই, ছায়াছবিতে একই ধরণের সিচুয়েশনের জন্য রচনা করলেন নতুন গান- আধুনিক ভাবধারায়। মূল নাটকের গানটির অনুসরণে “ঘর পরিষ্কার করার উৎসব” এর ঢঙে গানটি শুরু হলেও প্রথম অন্তরা থেকেই মর্জিনার বক্তব্যের স্বাতন্ত্র্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শ্রেণী বৈষম্য, বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত দ্বন্দ্ব, সামাজিক শোষণ, শোষক শ্রেণীর রুচিবিকৃতি ও সংস্কৃতিহীনতা, দুর্নীতিপরায়ণতা – এই সবই মূর্ত হয়ে ওঠে গানের কথায়।

দ্যালে পিক পানের, মেঝেয় জুতো কাদার দাগ
ধুলো আর বালির গুঁতোয় বন্ধ হল নাক-
বাবুদের বাইরে দেখো জরির পোশাক, ভিতর হাঁড়ির হাল,
হায়রে যুগের চাল!

শোনো ভাই সোনার, চাঁদির শুধুই ঝনন ঝন,
বড়লোক আমীর, উমির ময়লা কেবল মন-
বাবুদের বাইরে হাসি, মনের ভেতর শুধুই গালাগাল,
ঠকিয়ে নেবার তাল!

এরই সঙ্গে কৌতুককর সংযোজন হল- প্রতিটি অন্তরায় মর্জিনা (কন্ঠে সবিতা চৌধুরী)র বক্তব্যের শেষে আবদাল্লার (কন্ঠে অনুপ ঘোষাল) ভয়ার্ত প্রতিক্রিয়া: “না না না না মর্জিনা, তার চেয়ে তুই বল/ ছি ছি এত্তা জঞ্জাল, ছি ছি এত্তা জঞ্জাল।” এখানে উল্লেখযোগ্য, “ছি ছি এত্তা জঞ্জাল” এই বাক্যটি যেহেতু মূল নাটকটির কল্যাণে বাঙালীর ঘরে ঘরে দীর্ঘকাল ধরেই বহুল পরিচিত, তাই এই শব্দবন্ধের উচ্চারণ প্রকৃতপক্ষে চিরকালীন প্রথার অন্ধ অনুসরণেরই প্রতীক। অর্থাৎ, আবদাল্লার বক্তব্য হল, “ওরে, এসব বিপরীত কথা বলিস না! কোন প্রতিবাদ নয়, মুখ বুজে আবহমান কালের অনুসরণ কর আর কাজ করে যা! অন্যথায় অনর্থ ঘটবে।” এর জবাবে প্রতিবার মর্জিনার কন্ঠে “আ মার ঝাড়ু মার ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদায় কর” যেন শুধু গানে আস্থায়ীর পুনরাবৃত্তি কিংবা ঘরের জমা ময়লা পরিষ্করণের আহ্বানই নয়, সেই সঙ্গে বুর্জোয়া শোষক শ্রেণীকেও সম্মার্জনীর সহায়তায় যথাযথ শিক্ষাদানের অঙ্গীকার।

এই প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না, যে ইতোপূর্বে উল্লেখিত সলিলের তিনটি গানের মধ্যে প্রথম (‘জাগো মোহন প্রীতম’) এবং তৃতীয় (‘ছি ছি এত্তা জঞ্জাল’), এই দুটি গানই কিন্তু মূলগত ভাবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী – প্রথমটি সুপরিচিত ভৈরব রাগের বন্দিশ এবং তৃতীয়টি, যেমন পূর্বেই উল্লেখিত- ঊনবিংশ শতাব্দীর বিপুল জনপ্রিয় নাট্যগীতি। সলিল তাঁর বহু রচনাতেই এইভাবে প্রাচীন পরিচিত ও জনপ্রিয় কবিতাকে বা কাহিনিকে আত্মীকরণ করে তাকে আধুনিক তাৎপর্যে ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ সলিলের প্রচলিত ছড়ার অনুসরণে ছড়ারই আঙ্গিকে রচিত “একানড়ের ছড়া,” “নাকের বদলে নরুন পেলাম,” “দেবদুলাল-নন্দলালের গান” – এইসব গানে তীব্র রাজনৈতিক শ্লেষ কিংবা বৈষ্ণব পদাবলীর অনুসরণে “সজনী গো সজনী দিনরজনী কাটেনা“তে আধুনিক প্রেমিকার মনোকষ্টের বর্ণনার উল্লেখ করা যেতে পারে। যথার্থ শক্তিমান কবিদের পক্ষেই সম্ভব এই আত্মীকরণ।

গানটি শুনুন/ দেখুন:

(৯)

বাংলা গানের প্রধানতম এবং বিশিষ্টতম গীতিকবিদের চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কিছু গীত রচনা নিয়ে আলোচনাটির এখানেই সমাপ্তি টানা যেতে পারত, কিন্তু সেক্ষেত্রে বহু পাঠকের একটি প্রশ্নের ব্যাপক ভ্রুকুঞ্চনের সম্মুখীন হওয়া অনিবার্য হত – তা হল, বাংলা চলচ্চিত্রের সব বিষয়ে যিনি নতুন পথের দিশারী সেই সত্যজিৎ রায়কে বাইরে রেখে ছায়াছবির গানের আলোচনা কিভাবে সম্ভব?

সত্যজিৎ চলচ্চিত্রে গানের এই ধরণের প্রয়োগে (অর্থাৎ কাহিনির পরিস্থিতি, ঘটনাক্রম কিংবা চরিত্রের মনস্তত্ব ব্যাখ্যা করা) তিনি আদৌ বিশ্বাসী ছিলেন না

 এর উত্তরে এটুকুই বলার, যে পূর্বতন আলোচনায় ছবিতে গানের যে ধরণের প্রয়োগের কথা আলোচিত হয়েছে, (অর্থাৎ কাহিনির পরিস্থিতি, ঘটনাক্রম কিংবা চরিত্রের মনস্তত্ব ব্যাখ্যা করা) সত্যজিৎ কিন্তু তাঁর কোন ছবিতেই গানের সে ধরণের প্রয়োগের কথা চিন্তা করেননি। বস্তুতঃ, চলচ্চিত্রে গানের এই ধরণের প্রয়োগে তিনি আদৌ বিশ্বাসী ছিলেন না। যে কথা আলোচনার সূচনাতেই উল্লেখিত হয়েছে, তিনি সেই ধরণের চলচ্চিত্র দর্শনে বিশ্বাস করতেন, যে দর্শনের মতবাদ হল, উচ্চমানের চলচ্চিত্রে গানের কোন স্থানই থাকতে পারে না।

তাঁর পরিচালিত দুটি ছবি এবং গীত রচিত তথা সুরারোপিত আরো একটি ছবিতে গানের প্রচুর ব্যবহার থাকলেও সে ছবিগুলি হল, যাকে বলা যেতে পারে ‘ম্যুজিক্যাল’ ছবি- অর্থাৎ গান এসব ছবির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। গানকে বাদ দিয়ে গুপী গাইনের কিংবা বাঘা বাইনের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। গান এদের কাছে শুধু জীবন-প্রকাশ শিল্প কলা নয় – বহু ক্ষেত্রেই হয়ে উঠেছে হাতিয়ার-স্বরূপ। ভূতের রাজার বরদানে গুপী-বাঘা যখন গান গায়, কেউ নড়াচড়া করতে পারে না। তাই শুধু শত্রুভাবাপন্ন মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়াই নয়, হিংস্র বাঘকে বশ করতেও গুপী-বাঘাকে দেখা যায় ‘সংগীতাস্ত্র’ প্রয়োগ করতে। একটি ছবিতে তো চুরি করবার সময় চোরেদের ঘুমের ওষুধের ‘স্প্রে’ প্রয়োগের পরিবর্ত হিসেবেও গানের (অপ)প্রয়োগ করতে দেখা গেছে গুপী-বাঘাকে! বর্তমান আলোচনাটি যারা এযাবৎ সধৈর্য পাঠ করেছেন, তাঁরা অবশ্যই উপলব্ধি করবেন, গানের এই ধরণের প্রয়োগ চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে যতই যুক্তিযুক্ত হোক, আমাদের বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। তাই সেই মহান স্রষ্টাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে আমাদের আলোচনায় এখানেই ইতিকরণ যুক্তিযুক্ত।

(১০)

পরিশেষে শুধু একটিই কথা বলার, তা হল, আমাদের এই আলোচনা বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের মননশীল শ্রোতা ও দর্শকের কাছে অসম্পূর্ণ বলে মনে হতে পারে। আমরাও তাঁদের সঙ্গে একমত। আলোচনার বর্তমান পরিসরের বাইরেও প্রচুর না হোক, অন্ততঃ আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাংগীতিক প্রয়োগ অনালোচিত রয়ে গেল মূলতঃ দুটি কারণে। এক, অবশ্যই সীমিত পরিসর, এবং দুই, বেশ কিছু গান আছে যেগুলি বিচ্ছিন্ন শ্রবণে চলচ্চিত্রে সুপ্রযুক্ত বলেই প্রতীত হয়, কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রয়োগ কুশলতা যাচাই করবার কোনই উপায় নেই-সেসব ছবির প্রিন্টের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে। বারান্তরে কখনো সম্ভব হলে তাদের নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রইল।

তবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুটি। প্রথমটি হল, যেটি শুরুতেই আলোচিত, উন্নাসিক বুদ্ধিজীবিদের একটি চিরন্তন, বদ্ধমূল ধারণার বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদের প্রয়াস, যে ছায়াছবিতে গানের ব্যবহার বাহুল্যমাত্র এবং সম্পূর্ণত:ই মনোরঞ্জনমূলক। বিভিন্ন ছায়াছবিতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গানের শিল্পীত প্রয়োগের কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে এই প্রয়াস সাধিত হয়েছে।

দ্বিতীয়টি হল, বিভিন্ন গীতিকারদের, যথেষ্ট কবিত্বশক্তির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যাঁদের কাব্যগীতির আদৌ কোনো মূল্যায়ণ হয়নি, বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁদের গভীর অবদানের কথা কিছুটা হলেও শ্রোতা ও দর্শকদের কাছে তুলে ধরা। তখন মূলধারার বাণিজ্যিক ও জনপ্রিয় ছবি গুলির ভিত্তি ছিল বিভিন্ন সাহিত্যিকের রচিত ও প্রকাশিত প্রখ্যাত উপন্যাস যার চরিত্রগুলিও জনমানসে পরিচিত। সুতরাং তাঁরা কখনোই তাঁদের গীতিকাব্যে সেই স্বাধীনতা প্রকাশের জায়গা পাননি যা আধুনিক গানের গীতিকারের প্রাপ্য। এছাড়া ছিল সহজ ভাষায় গানটিকে সুরের উপযোগী এবং দর্শকের মনোগ্রাহী করার চাপ। এই সীমিত পরিসরের মধ্যেও তাঁরা তাঁদের কলমের জোরে এমন অনেক গান সৃষ্টি করে গেছেন যা আজও আমাদের মনে, এমনকি বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুণীদের মনেও দোলা জাগায়।

এখানেই স্রষ্টারূপে তাঁদের সার্থকতা। ঐ গীতিকারদের একজনের ভাষা থেকেই একটু ধার নিয়ে বলতে পারি, ‘একটি আশা নিয়ে’ তাঁরা যে ‘গান শোনাবেন’ বলেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন, ‘রঙ ছড়াবো একটি তুলি দিয়ে’, তাঁদের সেই আশা অনেকাংশেই পূর্ণ হয়েছে। আমাদের মনে হয় আজকের দিনেও তাঁদের গানের জনপ্রিয়তা এই সত্যেরই স্মারক যে, ‘আমার এই তো অহংকার / হার মানা হার তোমায় দিয়ে / পরব জয়ের হার’ এই পংক্তিদুটি শুধু কোনো চলচ্চিত্রে চরিত্র-বিশেষের মনের কথার প্রকাশই নয়, সেইসঙ্গে তাঁদের বিনম্র গভীর আত্মপ্রত্যয় এবং ক্রান্ত-দর্শনেরই প্রতীক।

জন্ম, চেতনার উন্মীলন, শৈশব, কৈশোর, ও যৌবনের অতিবাহন - সব কিছু কলকাতায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮তে বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে (Electrical Engineering) স্নাতক। বর্তমানে কর্মসূত্রে গুরগাঁও, হরিয়ানা নিবাসী। পেশাগত জীবনের বাইরে ব্যক্তিগত জীবন বলতে স্ত্রী ও এক কন্যা সহ পারিবারিক দিনযাপন আর গান-কবিতা-সাহিত্য সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্রিক নিজস্ব সময় যাপন। অবসর সময়ে সামান্য লেখালেখি - কিছু কবিতা এবং কিছু প্রবন্ধ। প্রবন্ধের প্রিয় বিষয় বাংলা গান এবং গীতিকবিতা। কবিতা ও প্রবন্ধের প্রকাশ মূলতঃ বিভাব, প্রমা, মিলেমিশে, একুশ শতকের মতো ছোটো পত্রিকা আর সানন্দার মতো বাণিজ্যিক পত্রিকায়।

3 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Kalarab Ray , July 16, 2023 @ 6:33 am

    ভাল লাগল – বাংলা কাব্যগীতির নানা বাঁকগুলোকে চলচ্চিত্রে ব্যবহারের এই উদাহয়ণগুলো সমেত …

    • তথাগত ভট্টাচার্য , July 17, 2023 @ 4:16 am

      ধৈর্য সহকারে রচনাটি পাঠ করবার জন্য অজস্র ধন্যবাদ। তবে আরো খুশী হব কিছু গঠনমূলক সমালোচনা পেলে।

  • তথাগত ভট্টাচার্য , July 17, 2023 @ 2:48 am

    অজস্র ধন্যবাদ- ধৈর্য সহকারে রচনাটি পাঠের জন্য এবং ভালো লাগার জন্য। আরো খুশী হব, যদি এই সঙ্গে গঠনমূলক সমালোচনাও যদি পাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *