কয়েকটি গানের গল্প (লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে মনে রেখে)
জীবনটা হল ‘তাসের দেশ!’ এই বাণীটা দিয়েছিল আমাদের পাড়ার বন্ধু বলাই। কিন্তু বন্ধু হলে কী হবে, দিনের বেলা বলাই যে কী করে, কোথায় যায় বা দর্শন দেয়, আমরা কেউই সেটা জানতাম না। বলাইয়ের ভিজিটিং আওয়ারস ছিল সন্ধ্যাবেলা, স্বপনদের বাড়ির রোয়াকে। সদ্য গোঁফবান বলাই তখন পাড়া বেপাড়ার আধবুড়োদের সঙ্গে তাস পেটাত, অকশন ব্রিজ! তাসুড়ে হিসেবে বলাই তখন তল্লাটের শীর্ষ বাছাই, যাকে বলে প্রডিজি। লোকে তাকে ডাকতো ব্রিজবলাই নামে! আমরা সব তখন বলাইয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে তার বীররসের বাহবা দিতাম। আর আমাদের সাথে গ্যাঁজাতে গ্যাঁজাতে বলাই এমন সব তাস চালত যে, ‘জোর কা ঝটকা ধীরে সে লাগে!’ঠিক তখন স্বপনদের বাড়ির আড়াআড়ি বিপরীতের একটা রাস্তাঘেঁষা বারান্দায় বসে তাসের দেশের দিকে দূরবীনের মতো তাকিয়ে থাকতো ময়না, আর গুনগুন করত, ‘কেন কিছু কথা বলো না!’
তো আমি একদিন তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে, বাঁ চোখটা একটু ছোটো করে, বলাইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে ময়নাকে শুধোলাম, ‘কী রে, ময়না কি খাঁচায় ঢুকবে?’ দুই গাল লাল করে ময়না জবাব দিল, ‘আমার বয়েই গেছে!’ আমি তখন এটা অন্তত বুঝতে শিখে গেছি যে, মেয়েদের ‘না’ মানে ‘না!’ তবে মেয়েরা যদি বলে ‘বয়েই গেছে,’ তার মানে রিপোর্ট পজিটিভ! ময়না তখন যারে কয় বাজার-কাঁপানিয়া! ওর পিছনে পাড়ার ছেলেদের লম্বা লাইন। কিন্তু কবিদের মতোই, সবাই তো আর বলাই নয়, কেউ কেউ বলাই! কাজেই ময়নার কাছে ‘না’ শোনা পাবলিকরা সুযোগ পেলেই ময়নাকে আওয়াজ দিত ‘বলাই বাহুল্য’ বলে! এই খবর গেল ময়নার বাবার কানে। কোন শ্বশুর আর সাধ করে তাসুড়ে জামাই চায়! ব্যাস, ময়না হাউস অ্যারেস্ট। কাজেকম্মে কচিৎ কদাচিৎ বাড়ির বাইরে বেরোলেও সঙ্গে দেহরক্ষী ময়নার দাদা। খবর পেয়ে বিরহী বলাই তাসের দেশ ছেড়ে বাস্তবের রাস্তায় পা দিল। এরপর থেকে সে ফি বিকেলে ময়নাদের বাড়ির সামনে ট্র্যাফিক পুলিসের মত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত। তার গায়ে একটা সাদা টি শার্ট, যার বুকে পিঠে কালো কালি দিয়ে লেখা, ‘ও মোর ময়না গো!’ ব্যাস, ময়নার বাবা দাদারা স্পিকটি নট! ময়নাকে আটকানো গেলেও লতার গানকে তো আর আটকানো যায় না!
যায়, লতার গানকেও আটকানো যায়। পুলিস সব পারে। সেই বিকেলটা আমার খুব মনে আছে। একটা লম্বা মিছিল। হাতে হাতে রাঙা পোস্টার, রক্তরংয়ের ঝাণ্ডা। মিছিলের পুরোভাগে আমাদের সুরমাপিসি। পরনে মলিন একটা ছাপাশাড়ি, কাঁধে কাপড়ের ঝোলা, পায়ে হাওয়াই স্যান্ডেল! সুরমাপিসি খালি গলায় গান গাইতে গাইতে চলেছে, ‘কার ঘরে প্রদীপ জ্বলেনি, কার বাছার অন্ন মেলেনি, ওগো প্রিয় মোর, খোলো বাহুডোর, পৃথিবী তোমারে যে চায়’! হঠাৎ একটা কালো প্রিজন ভ্যান মিছিল আটকে দাঁড়াল। পুলিস হাতে লাঠি বাগিয়ে এসে সুরমাপিসিকে শাসাল, “এ সব বিপ্লব বিদ্রোহের গান কেন গান আপনারা! লতার আর কোনও গান নেই! উঠুন, ভ্যানে উঠুন!” সুরমাপিসি ভ্যানে উঠল, আরও অনেকে উঠল! তারপর ভ্যানটা কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে দূরে কোথায় চলে গেল! পাড়ার বড়দের মুখে শুনেছিলাম, এর কয়েকদিন বাদে সুরমাপিসির মা, আমাদের বড়ঠাম্মা মেয়ের চিঠি পেয়েছিলেন, “মা, জেলে মণিদির সাথে আলাপ হল, মণিদি, মণিমালা সেন! দিদি কোথায় গো মা, একেবারে তোমার মতো, মায়ের মতো। জেলখানায় আমার আলো বলতে ওইটুকুই। বাকিটুকু তো অন্ধকারের জীবন। ওরা খবরের কাগজ পড়তে দেয় না। রবি ঠাকুরের ‘আগুনের পরশমণি’ পর্যন্ত গাইতে দেয় না! তাহলে কোন গান গাইব মা! কোন গান!” জবাবে মায়ের চিঠি আর পাওয়া হয়নি সুরমাপিসির। কিছুদিন বাদে এক নিশ্চন্দ্র রাতে একটা পুলিসের ভ্যান এসে নিষ্প্রাণ সুরমাপিসিকে ওর বাড়ির সামনে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল। বড়ঠাম্মা একটুও কাঁদল না। শুধু দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকা পাড়ার পিনপতন নীরবতাকে ছত্রখান করে দিয়ে বড়ঠাম্মা স্লোগানের মতো গান গেয়ে উঠল, লতার গান, ‘মনে রেখো, মনে রেখো, আমি এ নিশি অমর করেছি!’
বড়ঠাম্মা সেদিন কাঁদেনি, কারণ মানুষের মৃত্যু হলেই মানুষ মরে যায় না। মানুষ চিরজীবী হয়ে থাকে বিদ্রোহে ও প্রেমে। তাই বিপ্লবও মরে না, থেকে যায়। থেকে যায় চাঁদ ফুল জোছনা। থেকে যায় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের! এরকম কত লক্ষ অযুত প্রেম এসেছিল আমাদের জীবনে, নিরুচ্চার, অসমাপ্ত, চিরন্তন প্রেম। এসেছিল শর্মিলার জীবনেও, কোনও কিন্নরীর গানের স্বরলিপিতে চুপটি করে লুকিয়ে থাকা প্রেম। কলেজ জীবনের কথা মনে এলো হঠাৎ! আমাদের মা বাবারা জানত, ওটা কলেজ। কিন্তু আমরা বলতাম, ক্লাব। তখন ক্লাসের চেয়ে আমাদের বেশি সময় কাটত ক্যান্টিনে। ওলটপালট আড্ডা, কোটি কোটি হাফ চা আর কাউন্টার চারমিনার। এবং অবশ্যই টেবিল বাজিয়ে গান, রীতিমতো একটা ব্যান্ড খুলে ফেলেছিলাম আমরা, নাম দিয়েছিলাম ক্যান্টাব্যান্ড! ক্লাস শেষ করে একটু দেরির দুপুরে শর্মিলা আসত ক্যান্টিনে। খোলা জানালার পাশের বেঞ্চটা আমরা ছেড়ে দিতাম ওকে। ও খোলা গলায় গান ধরত, লতার গান, ‘ও পলাশ ও শিমূল!’ এই সব গান গাইলে দূরে কোথাও বৃষ্টি নামে, দৃষ্টি হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টি! সেদিন দুপুরেও নেমেছিল, ঝেঁপে বৃষ্টি। দুপুরে বৃষ্টি হলে বাতাসে সোঁদা গন্ধ ভাসে। যেন অমলতাসের মন খারাপ। সেদিন কেন কেজানে, শর্মিলা গান ধরল, ‘প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে!’ গান শেষ হল না। পাড় ভেঙে বান ডাকল গাঙে! শর্মিলার দুই চোখ ভেসে গেল অলকানন্দা জলে। টিপ টিপ, টুপ টাপ! ভিজে গেল নোটবই, লতার গানের স্বরলিপি। আমরা চুপচাপ বসে রইলাম, বৃষ্টি দেখলাম এক দুপুর। শুধু কবি ঘোষ খানিক বোজা গলায় ‘একটু আসছি’ বলে ক্যান্টিনের বাইরে চলে গেল! কেন চলে গেল? কেন? সেদিন কার জন্য কেঁদেছিল শর্মিলা? কার জন্য? মালতী-লতা, কার জন্য তোমার ‘আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে?’
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আগে জানতে হবে, ‘তারা’ ব্যাপারটা কী? সেটা বোঝানোর জন্য আমাদের পাশের বাড়ির তাতুদা একদিন আমাদের বন্ধু বাবনকে মধুদার চায়ের দোকানে ডেকে পাঠাল। তাতুদা ছিল খানিক আঁতেল গোছের। আর বাবন ছিল পুরো বিন্দাস। নিজের ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকই সে ঠিকমতো পড়ত না। আর তার বাইরের বই তো ছিল তার কাছে অস্পৃশ্য! এ হেন বাবনকে তাতুদা বোঝাল, আকাশপ্রদীপ যাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাদের নাম হল ‘সন্ধ্যাতারা!’এরপর রাত বাড়ার সাথে সাথে ‘ঝিকিমিকি তারা’ জন্ম নেয়। অবশেষে মাঝরাতে ‘ঘুম ঘুম চাঁদ’ ওই তারাদের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। সোলার সিস্টেম অনুযায়ী, এটাই হল ‘মাধবীরাত!’এর কিছুদিন বাদে, ইভনিং শোয়ে অমিতাভ-জয়ার ‘অভিমান’ দেখে ফেরার পথে বাবনের কেন যেন মনে হল, এটাই সেই ‘ওগো মায়াবিনী রাত!’ ঠিক তখনই, পাড়ায় ঢোকার মুখে তার কানে ভেসে এলো ‘কে তুমি আমারে ডাকো, অলখে লুকায়ে রাখো, ফিরে ফিরে চাই, দেখিতে না পাই!’এর মধ্যে কেন কে জানে বাবন ভুল করে স্বপনকুমারের ‘বিশ্বচক্র সিরিজ’ পড়ে ফেলেছিল। কাজেই একটি মেয়ে ‘ফিরে ফিরে চাইছে, অথচ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না’, এই ব্যাপারটায় বাবন একটা রহস্যের গন্ধ পেল। গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জির স্টাইলে রহস্যের উৎস সন্ধানে সে ঘুরপথে রায়বাড়ির আমবাগানের পাঁচিল টপকে, আধো অন্ধকারে পিঙ্কুদের উঠোন হামাগুড়ি দিয়ে পেরিয়ে দেখতে পেলো, গান গাইছে বুচকি। পাড়ায় বুচকির তখন হেব্বি ডিমান্ড। তাই আর দেরি না করে, পরদিন সকালে বাবন সটান বুচকির বাড়ির সামনে হাজির। ইস্কুলে যাওয়ার পথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাবনকে দেখে অবাক হয়ে বুচকি সুধল, ‘এই, তুমি কে’? ফুল নার্ভাস বাবন কাঁপতে কাঁপতে বলল, ‘আমি রোমিও, তুমি রেডিও। কাল যা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলে না, পুরো রেডিও মাইরি’! রেগে আগুন বুচকি বলল, ‘প্রথমত, ওটা আধুনিক গান। আর দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্রসঙ্গীত কোনটা, সেটা বুঝতে না পারলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন’? বাবন সপাটে জবাব দিল, ‘তোমাকে আমার ভাল লাগলে আমি কী করবো?’ বিস্মিত বুচকি ঘটনার অভিঘাতে কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘বেশ তো, তাহলে গান শুনে বাড়ি চলে যাবে’! বাবন সেই অপশনটাই নিলো। পরদিন বিকেলে বাবন সেজেগুজে বুচকিদের ফুলবাগানে হাজির হল এবং বুচকিকে বলল, ‘তোমার গান শুনতে এলাম’! সতর্ক বুচকি শর্তারোপ করল, ‘গান গাইতে পারি, কিন্তু ভালবাসতে পারব না’! বলেই বুচকি গান ধরল, ‘ছলছল আঁখি মোর জলভরা মেঘে যেন ছাওয়া, জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’! গান শেষ করেই ফট করে উঠে পড়ে বাবনকে বুচকি বলল, ‘নাও, এবার কাটো’! বাবন বলল, ‘আরে, আসল কথাটাই তো বলা হল না’! বুচকি বলল, ‘কী আর কথা! গানটা সন্ধ্যার মতো হয়নি, তাই তো! সে আমি জানি’! বলেই ঘরে ঢুকে পড়ল বুচকি। আর হতাশ বাবন ‘চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে, জীবনে তোমায় যদি পেলাম না’ গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে এল!
এই ‘পালঙ্ক’ শব্দটা আমার বাবা খুব ব্যবহার করত। কোনও কোনও ছুটির দিনে বাবা মা আমাদের তিন ভাইবোনকে নিয়ে নদীর ধারে বেড়াতে যেত। নদীর ওপারে বাংলাদেশ, মা বাবার ফেলে আসা জন্মভূমি। আমার উদ্বাস্তু বাবা নদীপাড়ের মাটিতে হাত ছুঁইয়ে বলতো, ‘এই যে, এইটা আমার পালঙ্ক। এই মাটিতে মিইশ্যা আছেন জীবনানন্দ, জসীম উদ্দিন’! মা বলতো, ‘কাঁটাতারের ওপারেও একই আকাশ, একই মাটি, একই নদী! তবে ক্যান এপার ওপার’! ওপারে তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। বাংলার ঘরে যত ভাইবোন, সবাই নেমে পড়েছে রাস্তায়। মাঠে ময়দানে মুক্তিসেনাদের ঝোড়ো সংলাপ। মিছিলে জনসভায় খানসেনাদের বিরুদ্ধে তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত ভাষণ! রেডিওতে খবর পড়ছেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের বাড়ির গ্রামোফোনে বাজছে সন্ধ্যা-গীতি, ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’! মা শক্ত চিবুকে বলছে, ‘পারবা না, আমাগো দাবায়ে রাখতে পারবা না’! বাবা মুষ্টিবদ্ধ হাতে বলছে, ‘আপন দ্যাশে পাসপোর্ট কইর্যা যামু না আমি! নইলে আমিও যাইতাম মুক্তিযুদ্ধে!’এক হতভাগ্য শরণার্থীর শপথ। এই অঙ্গিকার ঢুকে পড়ছে আমাদের তিন ভাইবোনের রক্তস্রোতে, স্বেদবিন্দুতে, নয়নের জলে, আমাদের অধরা আকাঙ্ক্ষায়। একটা ঈপ্সিত স্বাধীনতা আমাদের বুকের ভিতর, আমাদের মাথার ভিতর অনিবার ঢেউ তুলছে সন্ধ্যার গান হয়ে। ‘উজ্জ্বল একঝাঁক পায়রা, সূর্যের উজ্জ্বল রৌদ্রে, চঞ্চল পাখনায় উড়ছে’! উড়ছে আমাদের সোনা সোনা স্বপ্নের পতাকা হয়ে!
এমন স্বপ্ন দেখতে হলে, ভালবাসতে হয়। দু’হাতের মমতায় ঢেকে জ্বেলে রাখতে হয় প্রেমের প্রদীপ, অনন্তকাল। মানুদি তাই করেছিল, আর বিনিদ্র অপেক্ষা করেছিল, ‘সুবিনয় কবে আসবে?’ সুবিনয়দা আসেনি। ‘বাইরে’ পড়তে যাওয়া উচ্চাকাঙ্ক্ষী সুবিনয়দা আর কোনদিন মানুদির সাথে দেখা করার সময় পায়নি। প্রথম কয়েকদিন মানুদি খুব কেঁদেছিল। তারপর আজীবনের জন্য চুপ করে গিয়েছিল মানুদি, চুপ, ভোরবেলার মতো চুপ, অরণ্যের মত চুপ। শুধু সন্ধ্যাবেলায় নীলুদার বাড়ির সিঁড়িতে গিয়ে বসে মানুদি গান ধরত, ‘নিশি ফুরালে কেহ চায় না আমায় জানি গো আর, আমি যে জলসাঘরে বেলোয়ারি ঝাড়’! পথচলতি লোকজন মানুপাগলির গান শুনে মুখ টিপে হাসতে হাসতে কেটে পড়ত। এর অনেক অনেকদিন বাদে, হঠাৎ পথ ভুলে, এক দোলের সন্ধ্যায় সুবিনয়দা এসেছিল পুরনো পাড়ায়। এসে মাথা নিচু করে সে দাঁড়িয়েছিল মানুদির সামনে। কিন্তু তখন তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। সব পাখি ঘরে ফিরে গেছে, সব নদী হারিয়েছে মরুপথে। সুবিনয়দাকে দেখেই মানুদি চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে, ‘মধুমালতী ডাকে আয়, ফুল ও ফাগুনের এ খেলায়’ গাইতে গাইতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সুবিনয়দা একা দাঁড়িয়ে রইল ছিন্নমালার ভ্রষ্ট কুসুমের মতো। ‘আরো কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে, কিছুখন আরো না হয় রহিতে কাছে’! কারো হাতে সময় নেই। ভালোবাসার সময় নেই। কারো জন্য কারো অপেক্ষা নেই। তবু, তবুও তো সন্ধ্যার গানে চারিদিকে আবির উড়ছে, ফুটছে পলাশ শিমূল। আর কি কখনও কবে, এমন ‘সন্ধ্যা’ হবে!
হবে হয়ত। হয়ত হবে। ওই যে, কনে দেখা আলোয় অপার্থিব সা রে গা মা পা’র সুরে বই লিখছেন সলিল চৌধুরী, ‘জীবন উজ্জীবন’! আত্মজীবনী অসমাপ্ত রেখে তিনিও চলে যাবেন মায়াভরা চাঁদের দেশে! তবু তাঁর বইয়ের পাতার পাতায় ফুল ফোটাবে সবুজ সজীব গুল্ম ‘লতা’! তাঁর বইয়ের স্বরলিপিতে ফুটে উঠবে সুন্দর স্বর্ণালি ‘সন্ধ্যা’!
ভুবন বলে ‘তোমার তরে আছে বরণমালা’, গগন বলে ‘তোমার তরে লক্ষ প্রদীপ জ্বালা’!
2 Comments