পর্তুগালের পথে ও প্রান্তরে - অন্তিম পর্ব
অক্টোবর ২১, ২০২২, সাগ্রেসঃ End of the world
এক সময় লোকে বিশ্বাস করত পৃথিবীটা গোল নয়, চ্যাপ্টা। সেই সময় এখানকার মানুষ ভাবত এই ‘সাগ্রেস’’ হল পৃথিবীর শেষ সীমা — ম্যাপে দক্ষিণ পশ্চিমের শেষ বিন্দুটি।
এর ওপারে যেও না, এরপর ভয়ংকর পাতাল পুরীর শুরু। সমুদ্রের গহ্বরে বিকট সব প্রাণীরা ওত পেতে বসে আছে। কিলবিলে সাপ, সমুদ্র সজারু, অক্টোপাস আট হাত বার করে মুখিয়ে আছে। ওখানেই পৃথিবীর শেষ। ওই পাথরটার ওপর বসে সেদিনের মানুষ তাই ভাবত।
আজ হাসির অক্টোরোল ওঠে। সি-আরচিনের ডিম একটা মহার্ঘ খাবার। আর বেকড অক্টোপাস নাকি অতি উত্তম, তুলতুলে স্বাদের। পাউরুটির ওপর মাখিয়ে খাবার জন্য দারুণ।
“পৃথিবীটা চ্যাপ্টা নয়, বুদ্ধু, গোল। ওর বাইরেও জগত আছে তোমরা জান কি?” বলে আজকের টুরিস্ট শহর সাগ্রেস। ইতিহাস তর্জনী নির্দেশ করে —ঐ সেই নৌকো বানানোর ইস্কুল। বিখ্যাত নেভি একাডেমি, যা কয়েক শ’ বছর আগে হেনরি দ্য ন্যাভিগেটর বানিয়ে ছিলেন।
প্রতিটি নাবিককে ভালো রকম শিক্ষা নিতে হত এখানে। বিদেশ ঘুরে ফিরে এসে প্রতিদিনের দিনলিপি জমা দিতে হত। তাই দেখে হেনরি দ্য ন্যাভিগেটর নতুন ম্যাপ বানাতেন। যে নাবিক ভয় পেত আর যেতে চাইতো না, তাকে ছুঁড়ে ফেলা হত তীব্র তীরস্কারে, কুসঙ্কারাচ্ছন্ন, কাওয়ারড বলে।
এখানেই প্রথম হাল্কা জাহাজের প্যাটার্ন আবিষ্কার হয়েছিল, যা জলযুদ্ধে দারুণ সাফল্য আনে। ভাস্কো দ্য গামা, ফারডিনান্ড ম্যাজালেন, পেডরো কাবরাল, বারতোলোমিউ ডিয়াজ, প্রতিটি সেরা ছাত্র গিয়েছেন এর গেট পেরিয়ে। আর ১৪৭৫ এ ইতালিয়ান যুবক কলম্বাস যেদিন জলদস্যুদের ধাক্কায় এর তীরে আছড়ে পড়েছিলেন, উঠে পড়ে এই নৌ-স্কুলেই যাতায়াত শুরু করেন। পরে এক পর্তুগিজ মহিলাকে বিবাহ করে এখানেই ঘাঁটি গাড়েন। কিন্তু যখন অনুমতি চাইলেন পশ্চিমমুখো সফরের, পর্তুগাল সেদিন মুখ ঘুরিয়ে নেয়। স্পেন কিন্তু রাজি হয়। বাকিটা ইতিহাস।
আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। পামেলার কথা। পামেলা রড্রিগারস।
সময়টা নব্বইয়ের দশক। আমি তখন আমেরিকার একটি ছোট মন্টেসরি ইসকুলের টিচার। পামেলা এল অ্যাসিস্টেন্ট হয়ে। তবে অন্য ক্লাসে। পরিচয় লাঞ্চ ঘরে।
নামের শেষে পর্তুগিজ পরিচয়ের ভার থাকলেও তাকে দেখে প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল যেন দক্ষিণ ভারত বা শ্রীলংকার মেয়ে।
ছিপছিপে একহারা, শ্যামলা চেহারা। কোঁকড়া চুলের লম্বা বিনুনি সামনে আনা। প্রসাধনহীন মুখে একটা হারিয়ে যাওয়া ভাব। গলার চেনে ছোট্ট ক্রস চিকচিক করছে কণ্ঠার বাঁকে। আমায় দেখে ঝিকমিক করে ওঠে ওর চোখ। “ফ্রম ইনডিয়া?”
ধীরে ধীরে পরিচয় গাঢ় হয়। পামেলা ধার্মিক প্রকৃতির। রবিবার নিয়ম করে চার্চে যায়। একদিন একটি চিরকুট এনে বলে, “এটা টেগোরের কোন কবিতা বা গান তুমি বলতে পার? তুমি তো বাঙালি, তাই না?”
সৌভাগ্য ক্রমে ধাঁধা টা সহজ ছিল —‘বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা…।’
“শোনাও অরিজিনালটা।”
আমার মুখে বাঙলা শুনে খানিকক্ষণ উদাস হয়ে রইল। আরেক দিন দেখি লাইব্রেরি থেকে বিবেকানন্দের বই নিয়ে এসেছে। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগে আত্মরক্ষার্থে আমিই প্রশ্ন করি, “তুমিও কি ইন্ডিয়ান অরিজিনের?”
“না, আমরা গিয়ানার লোক।” একটু থেমে, “ছিলাম। তবে এখন অনেক দিন এখানে। আমেরিকান সিটিজেন।”
বাবা বড় কাজ করতেন, এখন রিটায়ার করেছেন। দুই দাদা সফটওয়্যার ভালো কোম্পানিতে কাজ করে। কাছেই নতুন বাড়ি কিনেছে ওরা। ছবি দেখাল আর দেখাল এক বুড়ির ছবি— “মাই গ্র্যান্ডমা।”
একদিন জানাল, “গত কাল শিবরাত্রি গেছে, না? উপোস করেছিলাম। এমন কী প্রহরে প্রহরে শিব গড়েছি।” বলে একটা মস্ত হাই তুলল।
“বল কী? আমি তো জানতাম তুমি খৃষ্টান।” বলি আমি।
“তো?” পামেলা চোখ তোলে। “আমি অনেক দিন থেকেই গ্র্যান্ডমার সংগে শিবরাত্রি করি।”
আমার সব গুলিয়ে যায়। তখন যে গল্পটা শুনলাম, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।
*****
অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। তখন ওর গ্র্যান্ডমার মা থাকতেন কালিকটের কাছে এক গ্রামে। তাকে ও আম্মা ডাকে।
“আম্মা সেদিন পুজোর ফুল তুলছিলেন অন্য মনে। এমন সময় কে একজন তাকে পিছন থেকে জাপটে ধরে কোলে তুলে নেয়। আম্মা মুখ তুলে দেখেন এক সাহেব। লাল চুল, নীল চোখ, সাদা চামড়া। আম্মা যতই হাত পা ছোঁড়েন, সে ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। ঠোঁটের ওপর ঠোঁট এনে জুঠা তো করে দেয়ই… আরো কত যে কী! নিয়ে আসে তাদের জাহাজে। সেখানে তাদের ধর্মমতে বিয়ে করে বটে, আম্মা হয়ে যান খৃস্টান। আম্মার সব কিছু কেড়ে নেয় সেই সাহেব। পর্তুগিজ সাহেব। ইজ্জত, ধর্ম, জীবন যৌবন। না, কেবল জীবনটুকুই নেয় না।
নতুন এক দেশে এসে পড়ে আম্মা। জীবন পালটে যায়। শাড়ি থেকে সেমিজ পরতে শেখে। মন্দির নয়, চার্চে যাওয়া, চেনা রান্নার অভ্যাস ছেড়ে শুয়োর আর বিফ রান্না ।” একটু থেমে পামেলা ওর বেণিটা নিয়ে খেলা করে আঙুলে জড়িয়ে কী যেন ভাবে।
“তুমি কখনো গোয়ানিজ পাম্পফ্রেট মাছ খেয়েছ? মাছের পেটে নারকেল, তেঁতুল, ধনেপাতা আর লংকা দিয়ে… কলা পাতায় মুড়ে, সেঁকে?” আবার চুপ।
আমি ভাবছি, তারপর?
ওর গলা রিনরিনিয়ে ওঠে, “তবে একটা জিনিস কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বিশ্বাস। আম্মার ধর্ম ওরা ছিনিয়ে নিয়েছিল, ঠিক, কিন্তু আম্মার বুকের মধ্যে যে শিবঠাকুর, তার তো নাগাল পায়নি।”
আমি অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলাম। একটু হেসে ও বলল, “তাই তো বলে আমার গ্র্যান্ডমা। সেই বিশ্বাস আম্মা গ্র্যান্ডমাকে দিয়ে গেছে, আর শিবঠাকুর পুজোর মন্ত্র, চুপিচুপি। যদিও আমরা চার্চে যাই, শিবঠাকুরও গড়ি শিবরাত্রির দিন উপোস করে।”
অনুমান করি এরপর আম্মা নিশ্চয় গিয়ানায় বসবাস করেন। কেমন জীবন ছিল তার ধারা আমি আঁচ করতে পারি একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই।
পামেলা সেদিক দিয়ে গেল না, বলে উঠল, “সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা কী জান? গ্র্যান্ডমা কে নিয়ে আমার বাবা গিয়েছিলেন তাঁর পুরনো গ্রামে, আত্মীয় স্বজনের কাছে। দে রিজেক্টেড হার। পরিবারের কেউ দেখা করতে চায়নি। আমরা না কি ‘জুঠা’ হয়ে গেছি। টুরিস্টের মত তাজমহল দেখে ফিরে এসেছে ওরা ইনডিয়া থেকে।আর কোন দিন যায়নি।”
*******
পশ্চিমের শেষ প্রান্তের দিকে দূরে তাকিয়ে শুনি হাওয়ার আওয়াজ। সমুদ্রের বুকে হু হু …হু হু।আশ্চর্য সে শব্দ।
অমিত অনেকটা এগিয়ে গেছে। বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা এক রেস্টুরেন্ট — তারই এক টেবিলের ওপর দেখি ওর চেনা টুপিটি। অর্থাৎ কাছেই আছে কোথাও। হঠাৎ নজরে আসে চকবোর্ডে লেখা— আজকের স্পেশাল মেনুঃ
“গোয়ানিজ পাম্পফ্রেট” (পাশের ছবি)
অক্টোবর ২২, ২০২২
কর্ক ও স্টর্ক
সাগ্রেস থেকে ফেরার পথে দুটো দারুণ অভিজ্ঞতা হল যা না লিখলেই নয়।
ভ্যানের জানালার বাইরে দেখি সারি সারি গাছ। লাল তাদের গায়ের রং। মাঝে বেশ খানিকটা চেড়া ও সাদা কালিতে কী যেন লেখা। জানতে পারলাম এ হোল কর্ক।
পর্তুগালে এই দক্ষিণ অংশ, আলগারভে এলাকা থেকে আসে কর্ক। বোতলের ছিপি বা ক্রিকেট বল যা ছাড়া চলে না। পৃথিবীর অর্ধেক কর্ক তৈরী হয় এখানে। আর তা যে এমন আশ্চর্যের তা আমার জানা ছিল না। একশ’ দেড়শ’ বছরের পুরোনো ওক গাছ, তার গায়ের রং লাল। এর ওপর দেখি অংশ বিশেষ বাকল খুলে নেওয়া এবং তার ওপর নম্বর লেখা সাদা কালি দিয়ে।
পঁচিশ বছর বয়স হলে তবেই একটি ওক গাছের বাকল খোলা হবে। এই ‘ভার্জিন কর্ক’’ আর কেউ ছুঁতে পারবে না আরো নয় বছর। নয় বছর পরে আবার তার বাকল আরেক পরত খোলা যেতে পারে। একটি ওক গাছ সাধারণত তার জীবন কালে নয় বছর পর পর বারো তের বার এমন কর্ক উৎপাদন করে।
এই এলাকাতেই সবচেয়ে বড় ওক গাছ দেখার সুযোগ হল। তার ইংরাজিতে অনুদিত নাম “মনুমেনটাল কর্ক ওক।” শহরের নাম আগুয়াস দ্য মৌরা। দেখা হল সে বৃদ্ধ মহীরূহ — ২৩৪ বছর তাঁর বয়স, ৫২ ফিট লম্বা, তাঁকে জডিয়ে ধরতে পাঁচজন মানুষ লাগে, যদি তারা হাত ধরাধরি করে গুঁড়ি বেষ্ঠন করতে চায়।
পর্তুগিজরা বাকল খোলার ব্যাপারে এই নয় বছরের নিয়ম খুব যত্নের সঙ্গে পালন করে। এর বেশি লোভ করা যাবে না। যা লগিং কম্পানি সারা পৃথিবীর কেউ মানে না। আমার মনে পড়ল জন মিউরের কথা যিনি সারা জীবন এই নিয়ে লড়ে গেছেন আমেরিকায়। ‘গাছ বাঁচাও’ এই আন্দোলনে মুনাফা লোভী লগিং কম্পানির বিরুদ্ধে।
কর্কের বড় কদর আজ। শুধু শিশি বোতলের ছিপি নয, ওয়াইনের বোতল রপ্তানির জন্যও এর দরকার। আর এছাড়া শব্দ ও তাপ নিয়ন্ত্রণের, ইনসুলেশনের কাজের জন্য এর জুড়ি নেই। এখন স্পেস ইন্ডাস্ট্রিতেও কর্কের দারুণ চাহিদা।
পর্তুগাল দুনিয়ার পঞ্চাশ শতাংশ কর্ক উৎপাদন ও রপ্তানি করে। বহু বহু লোক এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। শোনা যায় এ কাজেও (রুবি পোর্ত উৎপাদনের মতো) মানুষের শৈলী এখনও যন্ত্রকে হার মানায়। দু’জন লোক একসঙ্গে কাজ করে গাছের ছাল তুলতে। এদেরকে বলে ‘টিয়াডর।’ একজন কুড়ুল দিয়ে চাঁছবে, আর অন্য জন থাকে গাছের ওপরে, গাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য। এদের দৈনিক রোজগার আশি থেকে একশো কুড়ি ইয়োরোর মতো। এছাড়া মেডিকাল বেনিফিট ইত্যাদি সব তো আছেই। শোনা যায় অ্যাগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে সারা পৃথিবীতে এটা না কি “হাইয়েসট পেইং রেট।” মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর অবধি একমাত্র এই কাজ চলে। এইসব বলছিলেন আমাদের গাইড সাহেব।
মেডিকাল বেনিফিটের কথায় আমাদের গাইড সাহেব উল্লেখ করলেন, “আজ যদি হঠাৎ কারো হার্ট অ্যাটাক হয়, পর্তুগাল তার পুরো ব্যয় ভার বহন করবে। টুরিস্ট বলে কোনও পরোয়া নেই।পর্তুগিজ অ্যাম্বুলেন্সে করে যদি একবার হাসপাতালে পৌঁছতে পারেন….।”
“তার মানে তো দারুণ মেডিকাল সিস্টেম তোমাদের?” একজন যাত্রী চেঁচিয়ে উঠল।
গাইডসাহেব একটু হেসে জবাব দিলেন, “নট নেসেসারিলি। এই তো আমার হাঁটু সার্জারী হবার কথা। কিন্তু আমি তো এমারজেন্সিতে পৌঁছাইনি, ফলে কবে যে হবে কে জানে।”
এমন সময়ে একজন বলে উঠলেন, “এগুলো কী? গাছের মাথায় ঝুড়ির মতন?”
জানা গেল ওগুলো হল স্টর্ক নেস্ট। পরিযায়ী পাখি, সিন্ধু সারস — তার বাসা। শীতালি পাখির দল উত্তর থেকে দক্ষিণে আফ্রিকায় যাতায়েত করে, পথিমধ্যে ক’দিন কাটিয়ে যায় পর্তুগালের এই আলগারভ এলাকায়।
জানলাম, অনেক খবর।
একই বাসাতে ওরা নাকি বারবার ফিরে আসে। তাই পর্তুগালের নিয়ম ওদের বাসা নষ্ট করা চলবে না।। তাছাড়া ওরা যদি তোমার বাড়ির ছাদে বা বাগানের গাছে বাসা করে, সেটা খুব শুভ লক্ষণ ।
“ঐ দেখ এমন কি চার্চের ওপরেও ওদের বাসা। এ শহরের লোক তা শুভ ইঙ্গিত মনে করে। সারস পাখি যে নবজাত শিশু এনে দেয় এ তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু তোমরা জানতে কি, সারসের বাসা করার মানে — ভবিষ্যতে বৃদ্ধ বয়সে তোমার সন্তান তোমার দেখভাল করবে?”
এরকম শুনলে কার বুকের পাটা আছে যে সারস পাখির বাসা নষ্ট করে?
সারস পাখি মেয়ে পুরুষ দুজনে মিলে বাসা তৈরি করে। দুজনেই ডিমে তা দেয়। একজন আরেক জনের বস নয়। এমন কি মানুষও শিখতে পারে এদের কাছ থেকে।
“আর খুব ‘ফেৎফুল’ হয় ওরা। একই সঙ্গী থাকে সারা জীবন।”
আবারও একটি খুদে টুরিস্ট জুটে গেছে আমাদের দলে, সেই বেনাগিল গুহার দলের ছোট্ট দশ বছর বয়সের রায়নের মত। তার নানান প্রশ্ন।
“ওরা কী খায়?”
“ওরা? সাপ, ব্যাঙ, নানান পোকা মাকড়, কিছু ফল টল … কিন্তু সাপ, ইঁদুর এসব খেয়ে ওরা আমাদের দেশের বিশেষ করে চাষিদের খুব উপকার করে। তবে কী জান?” গাইড সাহেব মুচকি হাসেন।
“কী?” ছেলেটার অবাক প্রশ্ন।একটু সময় নিলেন উত্তর দিতে গাইড সাহেব।
“আমরা সে সব নষ্ট করছি। ল্যান্ডফিলে যে পরিমান অভুক্ত ম্যাক ডোনাল্ড আর অল দিস জাংক ডামপ করছি তাতে আর ওদের স্বাভাবিক ন্যাচারেল খাবারের খোঁজে যাবার দরকার হবে না। ক্লাইমেট চেঞ্জে যা হচ্ছে তাতে ওদের আর দূর দেশে পাড়ি দেওয়ারও দরকার হবে না, হয়ত পাখার জোর ও কমে যাবে। তখন ওরা আর মাইগরেটারি স্টর্ক থাকবে না। হয়ে যাবে স্থায়ী বাসিন্দা।কিংবা অন্য কিছু।”
ছেলেটা হঠাৎ বলে উঠল, “তখন ওরাও আর বেবি নিয়ে আসবে না!”
অক্টোবর ২৩, ২০২২, ফতিমা
আজ আমাদের যাবার কথা যেখানে, তার নাম ফতিমা। ফতিমা একটি তীর্থস্থান যেখানে হাজার হাজার ক্যাথলিক আসে প্রতিবছর। কেন? এর একটি আশ্চর্য গল্প আছে।
জায়গাটা লিসবন থেকে ৮০ মাইল মত দূরে — গাড়িতে ঘন্টা দুয়েকের পথ। নানান ভাবে যাওয়া যায়, বাসে, ট্রেনে, ভারাটে গাড়ি, ট্যাক্সি অথবা গাইডের ট্যুর। আমরা নিয়েছিলাম গাইডের ট্যুর।
কথা ছিল সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে নির্দিষ্ট যায়গায পৌঁছতে হবে। ড্রাইভার খুঁজে না পেলে তা ট্যুর কম্পানির দায়িত্ব নয়। মানে, পাঙ্কচুয়ালিটির ব্যাপারটায় বিশেষ জোর। কিন্তু আমার কর্তা আমার থেকে অনেক বেশি রিল্যাকসড। আমি বলি লেট লতিফ।
সকাল আটটায় রাস্তায় অফিস যাত্রীদের বেশ ভিড় শুরু হয়ে গেছে। আটটা তেত্রিশ বেজে গেছে, আমি তো ভাবলাম আর আমাদের হল না। মনে মনে অমিতের ওপর খুব রাগ হোল।
যথাস্থানে পৌঁছে কাউকে দেখতে পেলাম না। আশা করছিলাম কোম্পানির লোগো আঁকা ভ্যান থাকবে। তার পাত্তা নেই। এমন সময় দেখি এক জন এই সাত সকালের শীতেও হাত কাটা স্যানডো গেঞ্জি জাতীয় বেশবাসে, হাতে মস্ত ড্র্যাগন মার্কা উল্কি, মাথার অর্ধেক দু’পাশ থেকে কামানো, যেটুকু বাকি তা নিটোল পনিটেল করে বাঁধা — লোকটি কী যেন খুঁজছে। রতনে রতন চেনে। কাছে এসে পরিস্কার আমাকে শুধোল,
“অনিন্দিতা?” আনিনডিঠা না, অনিন্দিতা… যেন কোন বাঙালি। জানা গেল এই সে ট্যুর কম্পানির গাইড।
আমরাই তারএকমাত্র কাস্টমার, এখন পর্যন্ত । কুড়ি মিনিট পরেও যখন আর কেউ এল না, সে বলল, সারা গাড়ি তোমাদের। এমন সময় খবর এল শহরের আরেক প্রান্তে দু’জন মহিলা অপেক্ষা করছেন। তাঁরা মিটিং পয়েন্ট গুলিয়ে ফেলেছেন, তাই আমাদের সেখানে গিয়ে তাঁদের তুলতে হবে। এছাড়া আর কেউ কোনও উচ্চবাচ্য করেনি।
গাইড সাহেবের নাম রোনালডো। তাই থেকে ফুটবল, খেলোয়াড় রোনালডোর পপুলারিটি এবং এদেশের মানুষের তার জন্য যে কী অপরিসীম গর্ব… ইত্যাদি আলোচনা। একবার নাকি এ হেন আইকনিক খেলোয়াড় রনালডো অসুস্থ হয়ে পড়ায় দেশের লোক হসপিটালের সামনে এমন হত্যা দিয়ে পড়েছিল যে মেয়রকে এসে হাত জোর করতে হয়। পুলিশ সে ট্রাফিক সামলাতে পারেনি।
আমাদের ট্যুর গাইড রোনালডো বেশ ইনটারেসটিং ক্যারেকটার। আমার প্রথম ইম্প্রেশন যে কতটা ভুল ছিল সে কথা ভেবে মনে মনে লজ্জা পেয়েছিলাম। সে পৃথিবীর নানান দেশে থেকেছে নানান কাজের সুবাদে। ইয়োরোপের বিভিন্ন জায়গায়, আমেরিকার লস এ্ঞ্জেলেস থেকে নিউইয়র্কের গ্রেনিচ ভিলেজের কালচার সবই চষে খেয়েছে। আবার ওদিকে বর্মা মুলুক থেকে ব্যাংকক তাও তার নখদর্পণে। সফট ওয়ার লাইন পেষা কিন্তু নেশা – সারফিং। সারফিং শেখাতে এখন জন্মভূমি পর্তুগালে।
এ হেন গাইডের কাছে পর্তুগালের আধুনিক সমস্যা, অর্থনৈতিক অবস্থা, মেডিকাল বিভাগের অভিজ্ঞতা ইত্যাদির যেমন একটা ঘরোয়া দিক পেলাম তেমনই ছবি পেলাম এর ইতিহাসের। ঘুরে ঘুরে বিশেষ বিশেষ বাড়ি দেখালেন যা লিসবনের ১৭৫৫ র ধংসের সঙ্গে লিপ্ত। আমাদের উৎসাহের খাতিরেই এই এক্সট্রা প্রাপ্তি। এঁর কাছেই শুনলাম ফাতিমার গল্প।
অনেক অনেক দিন আগে, তিনটি ছোটো ছেলেমেয়েকে আশ্চর্য ভাবে দেখা দেন ভার্জিন মেরি। সময়টা ১৯১৭, প্রতি ১৩ তারিখে মে মাস থেকে অক্টোবর এই ছ মাস ধরে তিনি আসেন বারবার ওদের কাছে, কানে কানে বলে যান কী যেন। তিনটি বিশেষ খবর। কী সে কথা? কী সে ছবি?
এক নম্বর — একটি নরকের চিত্র ।
দুই — প্রথম মহাযুদ্ধ শীঘ্রই সমাপ্ত হবে। কিন্তু আরেক মহাযুদ্ধ আসবে।
এবং তৃতীয়টি— একটি ছবি — যেন পোপ ও বিশপ পরিবৃত বিশেষ ক’জন অনেকে সৈন্য দ্বারা আক্রান্ত।
ছেলেমেয়ে তিনটির বয়স আট দশ। তারা যে সবকিছু বুঝতে পারবে এমন নয়। কিন্তু মা মেরি বলে গেছেন এদের নিয়তি, এদের উদ্ধার মন্ত্র তাদের হাতে। তিনি শিখিয়েছেন সে প্রার্থনা মন্ত্র। তারাই একমাত্র উদ্ধার করতে পারবে মানুষের নরকবাস।আলাদা করে জিগ্যেস করা হল, এবং তিনজনেই প্রায় একই উত্তর দিল।
মাননীয় উপরওয়ালারা অনেকেই মনে করলেন এগুলো বিশেষ রাজনৈতিক দলের কূটনীতি। শিশুদের ভয় দেখানো হল। যেন তারা এসব কথা আর না বলে। শাস্তির ব্যবস্থাও। কিন্তু তাতে বিশেষ ফল হল না।
তারা জানাল মা মেরি আবার আবির্ভূত হবেন ১৩ ই অক্টোবর।আসলে দেখতে পাবে এক আশ্চর্য মিরাকল। কাতারে কাতারে লোক জড় হল। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, কিন্তু ঠিক দুপুর বারোটার সময় মেঘ কেটে এক আশ্চর্য আলোর খেলা হয়। আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সূর্য যেন লাফালাফি খেলে। মুহূর্তে চারদিক রৌদ্রে আলোকিত এমনকি দর্শকদের ভেজা পোশাক পর্যন্ত শুকিয়ে যায়। এই Miracle of the Sun দেখে ৭০,০০০ মানুষ। আর প্রতি বছর অনেক কৃচ্ছ সাধন করে এখানে তীর্থ যাত্রীরা এসে জমা হন ঐ দিন।
আমরা যখন গেছিলাম সেদিন ১৩ই অক্টোবর ছিল না, ভাগ্যিস, তাই তেমন ভিড় পাইনি। তবু বহু লোককে হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁটতে দেখেছি। যা দেখেছি আমাদের দেশের তীর্থ ক্ষেত্রেও, যাঁরা মনে করেন কষ্টের মধ্যেই কেষ্ট মেলে। আমার নিজের যাই বিশ্বাস থাকুক, এদের নিখাদ বিশ্বাস আমাকে স্পর্শ করেছিল। দূরে ক্যাথিড্রালে অর্গান বাজছিল আর অজানা ভাষায় যে গান হচ্ছিল তাও বড় শান্তিপূর্ণ। আমরা দুজনেই মন্ত্রমুগ্ধের মত চুপ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল হল ফেরার সময়ের মেয়াদ শেষ।
বলতে ভুলেছি আমাদের সঙ্গী সেই দুজন মহিলাদের কথা যাঁরা ভুল জায়গায় দাঁডিয়েছিলেন। পরে জেনেছিলাম তাঁদের বিশেষ উৎসাহ শপিং। কোথায় কী পাওয়া যায় কিনতে এবং কী তাঁরা সওদা করেছেন এই তাঁদের গল্প। আমাদের রোনাল্ডো সাহেব খুব তাড়াতাড়ি তা বুঝে নিলেন এবং তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পিছ পা হলেন না। এতে পর্তুগালের লাভ বই ক্ষতি নেই – বলেছিলেন নাকি জনান্তিকে অমিতকে। কিন্তু তার ফলে আমার গল্প শোনায় একটু কম পড়ল।অনেক গল্প যেগুলো যথাস্থানে শোনাবেন বলেছিলেন রোনাল্ডো সাহেব সে গুলোর সময় কেড়ে নিল ঐ দুই মহিলার বকবকানি।আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার নস্টালজিয়া যেই না তাঁরা শুনলেন অমিত প্রথমে সেখানে থাকত।
এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল অবিডো— একটি পাহাড় ঘেরা ছবির মতন শহর। তবে একটু বেশি টুরিস্টি। এখানকার বিশেষত্ব —এদের চেরি লিকার যা নাকি পরিবেশিত হয় খেলাঘরের মত ছোট্ট ছোট্ট চকোলেটের কাপে।
এবার ফেরার পালা। সমুদ্রের দিকে চেয়ে মনে হচ্ছিল অনেক কথা। বাঙলার সঙ্গে পর্তুগালের সম্পর্কের কথা।শুনেছিলাম প্রথম বাঙলা বইয়ের জন্মও পর্তুগালে।
অক্টোবর ২৬, ২০২২, পর্তুগালে শেষ দিন
অদ্যই শেষ রজনী। কাল এমন সময়ে প্লেনে। জলের ধারে ‘স্বাধীনতার সেতু’র দিকে চেয়ে ভাবছিলাম এই পর্তুগাল ভ্রমণের অর্থ — আমার জীবনে,আমার সত্তায় এই দেখার মানে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙলা। বাঙলা ভাষায় এই যে লিখছি আজ, তার ক্ষীণ সূত্র।
শুনেছিলাম বাঙলায় প্রথম যে বই প্রকাশ পায় তাও এই লিসবন শহরেই। জানতাম তার লেখক ম্যানুয়েল দ্য এসাম্পসাও।যদিও তার হরফ বাঙলা নয়, পর্তুগীজ ভাষায় অনুদিত বইটির প্রকাশক ছিলেন ফ্রান্সিসকো দ্য সিল্ভা — সময়টা ১৭৪৩। কিন্তু আরও অনেক কিছু জানলাম।
আসলে প্রথম বাঙলা বইয়ের লেখকের নাম দম আন্টোনিও রোজারি (১৬৪৩)। তিনি বাঙালি সন্তান। যশোর জেলার ভূষণ গ্রামের জমিদার তনয়।মাত্র বিশ বছর বয়সে আক্রান্ত হন পর্তুগীজ জলদস্যুদের হাতে। কল্পনায় আমার সামনে একটি নাট্যমঞ্চ খুলে যায় যেন।
আজ থেকে সাতশ’ বছর আগের কথা। এমনি এক গোধূলি লগ্নে এক যুবক নদীর জলে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা আহ্নিক করছিলেন। অদূরে একটি নৌকা এসে ভিড়েছে। কিন্তু সেদিকে তাঁর খেয়াল নেই। যুবক ভেজা কাপড় থেকে জল নিংড়ে সিঁড়ির দিয়ে উঠছিলেন।নদীর দিকে পিঠ ফেরানো। এমন সময়ে কারা যেন তাঁকে পিছন থেকে আঁকড়ে জাপটে ধরল। কিছু বলার আগেই ওঁর মুখ বেঁধে পাঁজকোলা করে তুলে নিল। যুবক সংজ্ঞা হারালেন। চোখ যখন খুললেন দেখলেন তিনি একটি অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছেন, অদূরে আরো একটি লোক– সেও যেন সংজ্ঞা হারা।তার পায়ে লোহার চেন বাঁধা। যুবক নিজের বুকে হাত দিতে বুঝলেন গলার সোনার হারটি আর নেই।
এক ফিরিঙ্গি এসে দাঁড়াল সামনে। তার চুল লাল, দাড়ি গোঁফ লাল, চোখ বেড়ালের চোখের মত স্বচ্ছ কটা হলদে। এমন চেহারা যুবক কখনো দেখেননি। বুকে ঝোলা পৈতেটি আঁকড়ে ধরেন তিনি। ফিরিঙ্গি হেসে ওঠে। কী যেন বলে বিদেশি ভাষায়। ছুঁড়ে দেয় একটা ডোরা কাটা পাৎলুন জেলের কয়েদিদের মত। যুবক নিচে তাকিয়ে দেখেন তাঁর পরনের ভিজা ধুতিটি ছিন্ন কর্দমাক্ত। লোকটি একটি বাটিতে জল ঢেলে এগিয়ে দেয়, যেন কুকুরকে জল দিচ্ছে। আর ইঙ্গিত করে আঙুলের আংটি খুলে দিতে।
যুবকের ভ্রু কুঞ্চিত হয়।পা দিয়ে ঠেলে দেন বাটি ভর্তি জল। হাঃহাঃ করে হেসে ওঠে ফিরিঙ্গি, এগিয়ে আসে ওঁর দিকে। অর্ধউলঙ্গ চেনবাঁধা লোকটি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায় বাটিটির দিকে, তুলে ঢকঢক করে খায়। যুবক অবাক হয়ে দেখেন। কোন কথা না বলে হাতের হিরের আংটিটি ছুঁড়ে দেন মাটিতে।
এর পরের দৃশ্য — একটি বিশাল বাজারের চত্বর। আরাকানের হাট, যেখানে মানুষ পর্যন্ত কেনা -বিক্রি হয়। যুবক জানতে পারেন আজ তিনিও এক পণ্য এই ক্রীতদাস বাজারে।
এমন সময়ে এক সাদা জোব্বাধারী পাদ্রী এসে দাঁড়ান তাঁর সামনে। গলায় ক্রসটি একটি লম্বা কালো সুতোয় ঝুলছে। পাদ্রি গৌরবর্ণ যুবকের আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে তাঁর বুকের ঝোলা সুতোটির দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চান
“উহা কী?” উত্তর শুনে তাঁর অবাক প্রশ্ন, “ঊপাবিটা? টুমি কি ব্রাহ্মিন?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি যশোর জেলার ভূষণ গ্রামের জমিদার রাজা…”
পাদ্রী লালমুখো ফিরিঙ্গির সঙ্গে কী কথা বলেন। ফিরিঙ্গি মাথা নেড়ে যুবকের হাতের কড়াটি খুলে দেয়। জানা যায় আর তাঁকে ক্রীতদাসের বাজারে থাকতে হবেনা। “টুমি হামার সাথে থাকবে।”
এই উদ্ধারকর্তা পাদ্রীর নাম ম্যানুয়েল আন্তরিও রোজারি। যুবক ক্রমে তাঁকে পিতৃবৎ শ্রদ্ধা করতে শুরু করেন। যদিও সময় লাগে। প্রতিদিন তাঁদের নানান আলোচনা হয়, বাগ-বিতণ্ডা। যুবক ছাড়েন না কৃপার শাস্ত্রের দুরুহ বিশ্লেষণ। পাদ্রি রোজারি অস্বীকার করতে পারেন না যাদের তাঁরা অসভ্য, আনকালচারড ভাবেন অনায়াসে তাদেরও একটা ধর্ম আছে, আছে সংস্কৃতি।
ঠিক হল তাঁদের এই অমূল্য বিতর্ক আলোচনা লিপিবদ্ধ করা যাক। সেই হল প্রথম বাঙলা লেখা। যদিও সেই ১২০ পাতার বইটি বাঙলা হরফে লেখা নয়, রোমান হরফে, কিন্তু তার ভাষা বাঙলা। সেই সময়ে ভাতখন্ড এলাকায় যে সাধু ভাষা ব্যবহৃত হত তা এর ভাষা।
পরে ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও তাকে পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদ করেন। বইটির নাম ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ।’
ফাদার রোজারি যতই ইম্প্রেসড হন না কেন, পর্তুগাল থেকে সুদূর ভারতবর্ষে এসেছেন ধর্ম প্রচার করতে।কাজেই একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ ও রোমান ক্যাথলিকের ডিবেট বলে সেই বিতর্কে অবশেষে পাদ্রিরই জয় হয়। ভূষণ গ্রামের রাজকুমার, ইতিহাস তার নাম মনে রাখেনি, সেই যুবকটির নতুন নাম হয়, দম আন্টোনিও রোজারি।
গাঁয়ে ফিরে গিয়ে তিনি প্রথমে নিজের স্ত্রী, পরে গ্রামবাসীদের খৃস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন এবং একটি চার্চও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
********
মনে পড়ল হেনরি দ্য ন্যাভিগেটর পাদ্রির কথা – যার হুকুম ছিল যেখানেই যাও আনবে একমুঠো মাটি, অন্তত একটি মানুষ আর তাদের দেশের অমূল্য সম্পদ, আর হ্যাঁ, কিছু লোক ধর্মান্তরিত করে আসবে।
একটা সিন্ধুসারস উড়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে।শুধু পাখার ঝটপট আওয়াজ। জানি, ওদের গলায় স্বর নেই, নেই কোন ভয়েস। কিন্তু ঐ পক্ষধবনি ‘শব্দময়ী অপ্সর-রমণী গেল চলি স্তব্ধতার তপোভঙ্গ করি।’
2 Comments