ভোটম-ভোটে-ভোটানি

ভোটম-ভোটে-ভোটানি

কিয়ৎদিবস যাবৎ কর্ণগোচর হইতেছিল যে পঞ্চবার্ষিকী গণতন্ত্র উৎসবে নারী পুরুষের  সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হইবে। যে মহিলাকুলকে ‘সমস‍্যা’ ভাবিয়া এতৎবধি গণতন্ত্রের কর্তাগণ দায়িত্ব অর্পণে কুণ্ঠাবোধ করিয়াছেন, একটি অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, জীব ও জড়ের মধ‍্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু সেই অচলায়তনে চরম আঘাত করিয়া সাম‍্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করিল। কিন্তু হায়, মনুষ‍্য অতি জটিল জীব। সর্বপ্রকার সাম‍্য সর্বদা কাঙ্ক্ষিত হইয়া উঠে না। গৃহবাসী নিরীহ শিক্ষিকাকুল এই সাম‍্যের সংবাদে আনন্দিত না হইয়া আতঙ্কিত হইয়া পড়িল। কিন্তু অনিবার্যকে কে রুখিতে পারে? যথাসময়ে সেই অতি অনাকাঙ্ক্ষিত পত্রখানি মূর্তিমান আতঙ্কের রূপ ধরিয়া আবির্ভূত হইল, যাহাতে তাবৎ বিদ‍্যায়তনের সমস্ত নিদ্রালিপ্সু শিক্ষক শিক্ষিকাদিগের নাম উল্লিখিত রহিয়াছে। শিক্ষকমহাশয়গণ পুরাতন পাপী। তাঁহারা অবিচলিত রহিলেন। কিন্তু কক্ষে, স্কন্ধে সন্তান লহিয়া সংসারের চক্রে পিষ্ট শিক্ষিকাকুল যারপরনাই ভীত সন্ত্রস্ত হইয়া পড়িলেন। কতিপয় শিক্ষিকা পঞ্চবৎসর অপেক্ষা কম বর্ষীয় শিশুর মাতা হওয়ায় রেহাই পাইলেও অবশিষ্টের অদৃষ্টে নিষ্কৃতি ঘটিল না – তা সে হৃদরোগীই হউন বা একাকিনী মাতা। উল্লেখ‍্য, এই তালিকায় সদ‍্য পিত্তথলি অপসারিত হইয়াছে এমন এক শিক্ষকও রহিয়াছেন। কর্তৃপক্ষের তালিকায় তাহার সমস‍্যাটি কোনরূপ সমস‍্যা বলিয়া বিবেচিত হয় নাই। প্রভুরা সাফ জানাইলেন, চাকুরি করিয়া ফুটানি করিতে পারিলে ভোটও করিতে পারিবে, নচেৎ তোমার লাগিয়া বংশদণ্ডের অভাব সরকারের গৃহে অন্তত নাই।

ভোটের আমি, ভোটের তুমি…

আমি অতি অভাজন ব‍্যক্তি। কার্যত একাকিনী মাতা ও প্রকৃতপক্ষে শয্যাশায়ী মাতার একাকিনী কন‍্যা। কিন্তু পূর্বঅভিজ্ঞতা বশত জানিতাম, যে আমার সমস‍্যা একান্তই আমার, সরকারের নহে। ফলে ব‍্যর্থ আবেদনের পথ পরিত‍্যাগ করিয়া গৃহ ব‍্যবস্থাপনায় মনোনিবেশ করিলাম। 

সর্বমোট তিনটি ট্রেনিং। তাহার মধ‍্যে দুটি ছুটির দিনে। একটি তো রবিবার। চাকুরিরতা মহিলা মাত্রেই জানেন রবিবার কতটা মহার্ঘ‍্য। অন্তরে অন্তরে গণতন্ত্রের পিণ্ডদান করিতে করিতে মুখমণ্ডলে মাস্ক চড়াইয়া ট্রেনিং গ্রহণ করিতে যাইলাম এবং আবিষ্কার করিলাম, সমস্যা বলিয়া যতটুকু ভাবিয়াছিলাম তাহা সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলের চূড়ামাত্র। যে পরিমাণ ফর্মের নম্বর উল্লেখ করা হইল, তাহা একবার শুনিয়া স্মরণে রাখিতে হইলে জাতিস্মর হওয়া আবশ‍্যক। আর নিয়মাবলীর কথা উল্লেখ করিয়া স্বীয় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় প্রদান না করাই বুদ্ধিমানের কার্য বলিয়া প্রতীত হইতেছে। সংক্ষেপে বলিতে গেলে, মোবাইলের ডাটার আদ‍্যশ্রাদ্ধ করিয়া হৃদয়ঙ্গম করিলাম –  ইহা অপেক্ষা “মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ” অনুধাবন করা সহজতর ছিল। প্রয়াতা শিক্ষিকার উদ্দেশ্যে অশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে পাঠে মনোনিবেশ করিলাম। 

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসিয়া উপস্থিত হইল। বেতনভোগী, চাকুরিজীবি শিক্ষিকাকুলের প্রতিভূস্বরূপ নিজ অনাক্রমত‍ার উপর নির্ভর করিয়া, অর্ধডোজ ভ‍্যাক্সিন লইয়া, গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞের পুরোহিতের ভূমিকা পালনে ব্রতী হইতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি কলেজে দলবল সহকারে উপস্থিত হইলাম এবং আবিষ্কার করিলাম, করোনা ভাইরাস ভোট প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাহার সংক্রমণ ক্ষমতা হারাইয়া ফেলে! ফলত কাহারো স্কন্ধের উপর, কাহারো বগলের তলা দিয়া গলিয়া অতি কষ্টে নাম তালিকাভুক্ত করাইলাম। কাউন্টারের দিদিমনি এক গাল হাসিয়া মাত্র চারিটি বৃহৎ আকৃতির চটের থলি ও তদুপরি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত ইভিএম মেশিন হস্তে ধরাইয়া কহিলেন, “মিলাইয়া লউন। কিছু ফেলিয়া গেলে বা না পাইলে দায় আপনার।” উত্তপ্ত অ‍্যাসবেস্টসের ছায়ায় অতঃপর আমরা চারমূর্তি গন্ধমাদন পর্বতে বিশল‍্যকরণী খুঁজিতে ব্রতী হইলাম ও মর্মে মর্মে অঞ্জনাপুত্রের সমস্যা অনুভব করিতে লাগিলাম।

গন্ধমাদন পর্বতে স্বয়ং মারুতিই বিশল‍্যকরণী খুঁজিয়া পান নাই তো আমরা কোন ছার! ফলতঃ চারিটি বৃহৎ থলির মধ‍্য হইতে কোন দ্রব‍্যটি অত‍্যাবশ‍্যক, কোনটি বা নহে – তাহা খুঁজিবার বৃথা প্রচেষ্টায় দীর্ঘকালক্ষেপের পরবর্তী পর্যায়ে আমদিগের প্রতীতি হইল যে অনুসন্ধান করিয়া কোনও ফল লাভের সম্ভাবনা নাই। ফলতঃ চতুর্মূর্তি পুলিশ খুঁজিতে এবং যাত্রা নিমিত্ত নির্ধারিত পরিবহনের অনুসন্ধানে লিপ্ত হইলাম ও সবিস্ময়ে আবিষ্কার করিলাম, পুলিশগণ বহুপূর্বেই রথারূঢ় হইয়াছেন এবং সর্বাপেক্ষা আরামদায়ক স্থানটি অধিকার করিয়াছেন! তুচ্ছ নির্বাচনকর্মীদলকে তাঁহারা “লোক না পোক” ভাবিয়া সর্বপ্রকার সাহায্যদানে বিরত রহিলেন। সরকারি পরিবহন দায়িত্ব ভারে (প্রকৃত অর্থে) ন্যুব্জ হতভাগ‍্য আধিকারিকগণকে বহন করিয়া গণতন্ত্রের মন্দিরে পৌঁছাইয়া দিল। 

অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ‍্যালয়। লক যে দিবস হইতে ডাউন হইয়াছিল, তদাবধি বিদ‍্যালয়ের দুয়ার উন্মুক্ত হয় নাই। প্রতিটি কক্ষ বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ধূলিধূসরিত, কক্ষগুলি মাকড়সা হইতে বোলতার নিরাপদ বাসস্থানে পরিণত হইয়াছে। অকস্মাৎ কতিপয় মানবপ্রজাতির আগমনে তাঁহারা অতিশয় রুষ্ট হইয়া উঠিলেন। আমাদিগকে ঘিরিয়া অবস্থানকারী সেনাবাহিনীর ব‍্যক্তিগণকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাঁহারা এমৎস্থানে কী রূপে অবস্থান করিতেছেন? তাঁহারা সহাস‍্যে জানাইলেন, তাঁহারা ইহাতে অতি অভ‍্যস্ত। আমরা, গৃহপালিত শিক্ষিকাকুল, এবম্বিধ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করি নাই। সুতরাং সম্মার্জনী লইয়া গৃহগুলিকে বাসযোগ‍্য করিতে করিতে, প্রাকৃতিক আহ্বানে সাড়া দিবার স্থানটিকে ব‍্যবহারযোগ‍্য করিতে করিতে সন্ধ‍্যা অতিক্রান্ত হইল। অতঃপর বৃহৎ থলিগুলির অভ‍্যন্তরস্থ পর্বতপরিমাণ  ফর্মগুলিকে পূর্ণ করিতে করিতে মধ‍্যরাত্রি অতিক্রান্ত হইল। ক্ষনিকের বিরতির পর যথাসময়ে যজ্ঞারম্ভ হইল। 

প্রতি পূজার সূচনা যেমন গণপতিকে আহ্বান করিয়া আরম্ভ হয়, এক্ষেত্রেও “মকপোল” নামক এক প্রত্যুষকালীন পূজার মাধ‍্যমে যজ্ঞের শুরু। প্রকৃতপক্ষে যন্ত্র যে দক্ষিণ ও উত্তর যুগপৎ নিরপেক্ষ, তাহা প্রমাণ করিবার প্রচেষ্টা মাত্র। কার্যটি আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হইলেও উপযুক্ত ব‍্যক্তির সান্নিধ‍্য পাইলে ইহাও যথাযথ বংশবাটিকায় পরিণত হইবার ক্ষমতা রাখে। গণতন্ত্রের নব‍্য পূজারী শিক্ষিকাকুল প্রাথমিক অভিঘাতে দুই এক পদক্ষেপ পিছাইলেন বটে, কিন্তু দীর্ঘদিন ছাত্র ঠ‍্যাঙাইবার অভিজ্ঞতায় অচিরেই বুঝিলেন, “offence is the best defense” নীতিটি ফুটবল মাঠ হইতে কর্মক্ষেত্র তথা গৃহাঙ্গনে যেমত প্রযোজ‍্য, এই গণতান্ত্রিক পূজাঙ্গনও তাহার ব‍্যতিক্রম নহে! অতঃপর উত্তর দক্ষিণ নিরপেক্ষভাবে সরকারি নিয়মাবলী শ্রবণে বাধ‍্য হইল ও প্রাচীরে পৃষ্ঠ-ঠেকিয়া-যাওয়া, মরিয়া মার্জারের ন‍্যায় ক্ষিপ্ত নারীমূর্তিকে ঘাঁটাইবার সাহস সঞ্চয় করিতে না পারিয়া পশ্চাদপসরণই শ্রেয় বিবেচনা করিয়া বিরত হইল। 

সীতা উদ্ধারের প্রথম বাধা ছিল সমুদ্র, কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রে জনগণই সমুদ্র-প্রমাণ। ভারতের ন‍্যায় গ্রীষ্মপ্রধান দেশে উত্তপ্ত বৈশাখ বা জ্যৈষ্ঠতেই গণতন্ত্র-পূজার সম‍্যক সময় কোন গাণিতিক নিয়মে নির্ধারিত হইয়াছে, তাহা গিরিরাজ কন‍্যারও সম্ভবত জ্ঞাত নাই। অনুমান, গণতান্ত্রিক দেশের রাজাধিরাজগণ কৃত্রিম শৈত‍্যপ্রবাহিত গৃহে অবস্থান করিতে করিতে বর্হিজগতের তাপমাত্রা বিস্মৃত হইয়াছেন। ফলত দীর্ঘ সর্পিল অজগরসদৃশ মানবসারি, ক্রমউত্তপ্ত টিনের চাল, ফুটন্ত জলের নিকটবর্তী তাপমাত্রার পানীয় জল, প্রাকৃতিক আহ্বানে সাড়া দিবার সময়াভাব, সম্পূর্ণ শূন‍্য উদরের চিৎকার – সমস্তই উপেক্ষা করিয়া যথাযথ উপচারে পূজাপ্রক্রিয়া চলিতে লাগিল। সবিস্ময়ে আবিষ্কার করিলাম, ঠেলিয়া জলে ফেলিয়া দিলে সন্তরণের প্রচেষ্টা সকল জীবই করে এবং কদাচিৎ বাঁচিয়াও যায়। সরকারি চাকুরেগণ সর্বস্তরে ঘোরতর নিন্দার পাত্র, কারণ তাঁহারা প্রতিমাসে মাহিনা পাইলেও কর্মক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব পালন করিয়া থাকেন না – এরূপ জনশ্রুতি রহিয়াছে। ইহাদের মধ‍্যে শিক্ষককুল বতর্মানে অধিকতর নিন্দার পাত্র বা পাত্রী কারণ তাঁহারা করোনা সংক্রমণকালে গৃহে বসিয়া মাহিনা পাইয়াছেন। এবংবিধ পাপকর্মের নিমিত্ত মৃত‍্যুর পরবর্তীকালে তাঁহারা যমালয়ে কুম্ভীপাকে বা রৌরব নরকে নিক্ষিপ্ত হইবেন, ইহা নিশ্চিত। শিক্ষকগণ সর্ববিষয়ে অনুশীলনের পক্ষপাতী। অগ্নিবর্ষণকারী টিনের ছাদের নিম্নে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া আসলে যমালয় যাত্রার পূর্বাভাস  মাত্র। ইহাতে নরকগমনের ভীতি দূরীভূত হয়। রৌরব বা কুম্ভীপাক নিতান্তই “গা সওয়া” বলিয়া প্রতিভাত হয়। 

ভোট প্রক্রিয়ার সর্বাপেক্ষা কঠিন কার্য হইল সচিত্র ভোটার কার্ডের চিত্রর সাথে সম্মুখে দন্ডায়মান ব‍্যক্তির মুখচ্ছবির সাদৃশ‍্য নিরূপণ। মারুতি তো দূরস্থান, স্বয়ং তাঁহার প্রভুর চর্তুদশ পুরুষেরও এমত ঐশ্বরিক ক্ষমতা নাই। কিয়ৎ প্রচেষ্টার পর আমরা চর্তুবর্গ সর্বসম্মতিক্রমে সেই মার্গ পরিত‍্যাগ করিলাম। ফলে ধর তক্তা মার পেরেক নীতিতে ভোট গ্রহণ চলিতে লাগিল। রক্তের স্বাদ পাইলে ব‍্যাঘ্র নরখাদক হয় আর ভোটদানের ক্রমবর্ধমান শতাংশ শ্রবণে আমাদের চিত্ত চঞ্চল হইল। কথিত আছে দশমীতে রাবণ বধ হইয়াছিল কিন্তু তৎপূর্বেই কুম্ভকর্ণ বধ হওয়ায় রাবণবধ সহজতর হয়। শাস্ত্রবাক‍্য অনুসারে কুম্ভকর্ণ বধের জন‍্য ভোটপূজায় একটি ডায়রি পূর্ণ করিতে হয়। এটিকে প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়রি বলা হইয়া থাকে। ধীশক্তিহীন বালককে যেমন একাধিকবার পাঠ‍্যবস্তু বলিয়াও মস্তিষ্কে প্রবেশ করাইতে ঘর্মপাত হয়, এক্ষেত্রেও সেইরূপ একই বিষয় শতাধিকবার লিখিয়াও নিবৃত্তি ঘটে না! সম্ভবত রূপালী পর্দার নায়কগণ সমগ্র জীবনেও এতবার অটোগ্রাফ দেন না, একজন প্রিসাইডিং অফিসার একটি ভোটগ্রহণ কালে যাহা প্রদান করিয়া থাকেন। ইহাতে তাহার হস্তের পেশিসমূহের যথাযথ চালনা ঘটে বটে, কিন্তু সামগ্রিক কী উপকার সাধিত হয় – তাহা “দেবা ন জানন্তি কুত মনুষ‍্যা!” 

নারীগণ বাঘিনির সমতুল্য

জনকনন্দিনীর মতো অদৃষ্ট লইয়াই ভারতীয় ললনাগণ জন্মগ্রহণ করেন বলিয়া তাহাদের দুর্গতির সমাপ্তি সহজে ঘটে না। প্রভাত সাত ঘটিকা হইতে সন্ধ‍্যা সাত ঘটিকা অবধি নিরবিচ্ছিন্ন ভোটগ্রহণ পর্বের সমাপ্তিতে (সঠিক পড়িয়াছেন, বারো ঘন্টা, কোনওরূপ বিরতি ছাড়াই, এমন কী প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিবার সময়টুকুও বিরতি নাই) যাবতীয় প্রদত্ত সামগ্রী বস্তাবন্দী করিয়া ফিরত দিবার নিমিত্ত যথাস্থানে প্রত‍্যাবর্তন করিবার পর আবিষ্কার করিলাম, শুধুমাত্র ইভি এম মেশিন ও তৎসংক্রান্ত নথিপত্রই নয়, বস্তুত যাহা যাহা গত দিবসে প্রদান করা হইয়াছিল তাহা তাহা গুনিয়া গাঁথিয়া, গুচ্ছের দস্তখত সহকারে সমর্পণ করিতে হইবে। কিন্তু বিগত দিবসের অভিজ্ঞতা শিখাইয়াছে যে সর্ববাক‍্যে কর্ণপাত করিতে নাই। ফলে যতবিধ ঝাঁঝের সহিত কর্তৃপক্ষ দ্রব‍্যাদি গ্রহণে অস্বীকৃত রহিলেন, তাহার চর্তুগুণ ঝাঁঝের সহিত আমরা বস্তুগুলি পুনঃপ্রত‍্যর্পণ করিলাম। নারীগণ এইক্ষেত্রে বাঘিনির সমতুল‍্য। নহিলে এই ধরাধামে তাঁহাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হইত। কেন্দ্রস্থিত কর্তৃপক্ষ নতিস্বীকারে বাধ‍্য হইলে সমগ্র গন্ধমাদন তাহাদের স্কন্ধে চাপাইয়া দিলাম। 

বিগত একটি দিবসব্যাপী স্কন্ধে স্কন্ধ মিলাইয়া যুদ্ধ একটি দৃঢ় বন্ধন তৈয়ারী করিয়াছিল। চতুর্মূর্তি আমরা আলিঙ্গনবন্ধ হইলাম। আক্ষরিক অর্থে মহাভারত সমাপ্ত হইল। 

মহাভারতের কথা অমৃতসমান
শ্রবণেও জ্ঞানলাভ পর্বতপ্রমাণ।।

—–

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত। 

পেশায় স্কুল শিক্ষিকা, নেশায় পাঠক। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের 24 পরগণা। শখ - বই পড়া। মূলত সাহিত‍্য পড়তে পড়তেই এক সময় ভেবে বসা, "আচ্ছা এই ঘটনাটা লিখলে কেমন হয়?" এই ভাবনা থেকেই লেখা শুরু।

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • অভিষেক দত্ত , July 16, 2023 @ 5:53 am

    অধম পুরুষ প্রজাতি। ইতি পূর্বে গণতন্ত্রের তান্ত্রিক শবসাধনার কনিষ্ঠতম তান্ত্রিক রূপে সমিধ সংগ্রহ এবং হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলন করিতে হইয়াছে। আশঙ্কা রাখি সে দুর্বিপাক পুনরায় ভাগ্যাকাশে ঘনীভূত হইয়া বজ্র বিদ্যুৎ সহযোগে বিপর্যয় বর্ষণ করিবে।

    শৈবগীত স্থগিত রাখিয়া মূল প্রসঙ্গে ফিরিয়া আসি। যে পর্বত সঙ্কুল সমস্যা ‘লঙ্ঘয়তে গিরি’ মানসিকতা লইয়া অতিক্রম করিতে পুরুষদেরকে মৃতপ্রায় হইতে হয় তাহা ভদ্রবংশজাতা নারীদের স্কন্ধে আরোপিত হইলে কী হইতে পারে তাহা অনুধাবন করিয়া চিত্ত শিহরিত, হৃদয় বিদীর্ণ এবং চক্ষু অশ্রুস্নাত হইয়া ওঠে। মহোদয়ারা, ভাবিবেন না যে নারীশক্তি সম্বন্ধে অবগত নহি। প্রতিটি পুরুষ মনুষ্যই নারী গর্ভ হইতে আগত। সে নিখিল অনন্ত মাতৃদেরকে, ইতিমধ্যে মাতৃত্বে অভিষিক্তা এবং ভবিষ্যতে মাতাদেরকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।

    পুরুষদের লজ্জা ঘৃণা ভয় নারীদের তুলনায় কিঞ্চিৎ কম। সুতরাং গঞ্জিকা, চলিবার উপযোগী দুটি বস্ত্র এবং একটি গাত্রমার্জন সম্বল করিয়াই অভিযানে অগ্রসর হইতে পারি। সামান্য অন্তরালেই প্রকৃতির আহ্বানের প্রত্যুত্তর দিতে সক্ষম। সমস্ত দিবস শুষ্ক খাদ্য এবং জল সহযোগে কোনপ্রকারে অতিক্রান্ত হইয়া যায়।

    এরপর নানা প্রকার প্রক্রিয়া যথাযথ রক্ষা বৈধ নির্বাচকদেরকে পালন অবৈধদেরকে দমন ছায়াহীন কায়াধারী ভৌতিক নির্বাচককে চিহ্নিত করিয়া সসম্মানে বিদায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সুমধুর আপ্যায়নে নির্বিকার থাকিয়া সমস্ত প্রক্রিয়া সমাপনান্তে য্থায্থ স্থানে হস্তান্তর – এবংবিধ কার্য এবং তদন্তে গহীন নিশায় কুক্কুর তস্কর সঙ্কুল পথ অতিক্রম করিয়া স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন।
    বিগত বিধানসভা নির্বাচনে গণ্ডোপরি বিস্ফোটক তুল্য সমস্যা – যন্ত্র বিপর্যয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত। ফলত অন্যান্য নির্বাচনকর্মীদলেরন্যায় মতো তিনটি নয় ছয়টি যন্ত্র এবং সেই অনুপাতে নথিপত্র প্রস্তুত করিতে হইয়াছিল।

    এ কঠিন কার্যে নারীদেরকে যুক্ত করিবার আদেশনামায় স্বাক্ষরকারী কুলাঙ্গারদিগকে, তাহাদের ঊর্ধতন এবং অধস্তন চতুর্দশ পুরুষকে কৃতান্তের হস্তে সমর্পণ করিতে পারিলে রোষানল কিঞ্চিৎ শান্ত হইতো। কিন্তু সদাশয় যমরাজও এ হেন পাপিষ্ঠদেরকে গ্রহণ করিতে রুচিবোধ করেন না। সম্ভবত অদ্যাবধি উপযুক্ত নরক নির্মাণ করিতে পারেন নাই।

    যাহা হউক, লেখিকার সুস্থ ও নির্বিপাকে কর্তব্য সমাধানে অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করিয়া শতসহস্র শুভেচ্ছা জানাইলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *