একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নারী নির্যাতন – অন্ধকার সময়ের আখ্যান: বীরাঙ্গনাদের যন্ত্রণার দিনলিপি
১৯৭১ সাল। উত্তাল সময়। মুক্তিযুদ্ধের দামামা বেজে গেছে তার দু’বছর আগে থেকে। গোলাবারুদ, যুদ্ধের কালিমা বাংলাদেশকে গ্রাস করে রেখেছিল। একটা পাশবিক সময়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সেই সময় মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনও তফাৎ ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছিল দুটি বিষয়। গণহত্যা ও নারী নির্যাতন। মিলিটারি সৈন্যরা ত্রাস হয়ে উঠেছিল। অনেক নারী বাংকারে বন্দী থাকতে থাকতে কবে যে মৃত্যুবরণ করেছে তার নির্দিষ্ট সাল, তারিখ আজও ইতিহাসে লিখিত নেই।
তৎকালীন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরতা এক সুইপার, রাবেয়া খাতুনের জবানবন্দিঃ
আমি স্বচক্ষে দেখেছি অনেক মেয়ে অবিরাম ধর্ষণের ফলে নির্মমভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। প্রতিদিন সকালে গিয়ে সেই বাঁধন থেকে অনেক বাঙালি যুবতীর বীভৎস মৃতদেহ পাঞ্জাবি সেনাদের নামাতে দেখেছি। আমি দিনের বেলায়ও সকল বন্দি মহিলার পুতগন্ধ, প্রস্রাব, পায়খানা পরিষ্কার করার জন্য সারাদিন উপস্থিত থাকতাম।
প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসের উপরতলা থেকে বহু ধর্ষিতা মেয়ের ক্ষতবিক্ষত, বিকৃত লাশ ওরা পায়ে দড়ি বেঁধে নিয়ে যেত এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন নতুন মেয়েদের চুলের সঙ্গে ঝুলিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে ধর্ষণ আরম্ভ করে দিত।
স্বাধীন বাংলাদেশ আজও অনেক যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেড়ায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ-এর বড় মূল্য ছিল নারীর সম্মান। বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে পাওয়ার জন্য ওই দেশের মানুষকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে। অগণিত নারী, পুরুষ, শিশু বেঘোরে প্রাণ দিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। ওই বছর বঙ্গবন্ধু সরকার নির্যাতিতা নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দিয়েছেন। সরকার তাঁদের জীবনের মূল স্রোতে ফেরাবার চেষ্টা করেছেন, সুযোগও দিয়েছিলেন। তবু ফেরা হয়নি সকলের। অত্যাচারের নির্মম অন্ধকার দিনগুলির সঙ্গে লড়াই করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। তাঁদের অনেকের নামও হয়তো কোথাও কোনও রেকর্ডে নেই। কয়েকজন সাহসী নারী সমাজের বুকে অর্ধেক নিভে যাওয়া প্রদীপের মত বাঁচার চেষ্টা করেছেন। অত্যাচারের অন্ধকার দিন পেরিয়ে তাঁরা আলোর স্রোতে নিজেদের মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবুও এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, বাংলাদেশের ক্যালেন্ডারে ১৯৭১ সাল নিরস্ত্র, অসহায় নারীর উপর অত্যাচারের এক জ্বলন্ত দলিল।
সাত বীরাঙ্গনার অত্যাচারের জবানবন্দি
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে পরাস্ত করার জন্য দুটি অস্ত্র সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়েছিল। গণহত্যা এবং নারী নির্যাতন। পরবর্তীকালে বহু সাংবাদিক, সহৃদয় ব্যক্তি এবং গবেষকরা সেই সব অত্যাচারের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। অনেকেই নিজেদের নাম, পরিচয় প্রকাশ করেননি। কেউ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়েছেন। তবুও এই সাত সাহসী বীরাঙ্গনা নিজেদের অত্যাচারের জবানবন্দি সাহসের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করতে দিয়েছিলেন।
তারা ব্যানার্জি অর্থাৎ মিসেস টি. নিয়েলসনের কথাঃ
ডেনমার্কের বাসিন্দা হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর নাম ছিল তারা ব্যানার্জী। বিবাহসূত্রে নাকি অন্ধকার স্মৃতির ভারে পরবর্তীকালে নিজের নাম বদলেছেন, তা মিসেস টি. নিয়েলসন নিজের স্মৃতিচারণায় স্পষ্ট বলেননি।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ। তখন কারফিউ শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশে। হঠাৎ করেই একদিন বাড়ির চারপাশে কিছু অচেনা লোককে ঘুরঘুর করতে দেখেছিলেন তারা। মা-বাবাও যথেষ্ট চিন্তিত। প্রতিদিন ভয়ে ঈশ্বরের নাম জপ করতেন। কেউ নিরাপদ ছিলেন না সেই সময়। নিজের স্মৃতিচারণায় লুকিয়ে থাকার দিনগুলিকে ইঁদুরের গর্তে থাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। লুকিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি।
২৭ শে মার্চ ওঁদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। প্রাত্যহিক জিনিসপত্র কেনার জন্যেও বাইরে বেরোনো যেত না। তবুও একদিন পরিস্থিতি দেখে মা-বাবা সমেত গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন তারা। বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন সকলে, এমন সময় একটি জিপ এসে থামে রাস্তায়। সকলকে ওই জিপে উঠতে অনুরোধ করা হয়। প্রথমে তারার বাবা-মাকে সেখানে উঠতে বলা হয়। প্রবল আপত্তি জানান তাঁরা। এটুকুর জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল ওই মিলিটারি বাহিনী। আপত্তি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারাকে জোর করে জিপে তুলে নেওয়া হয়। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি থানায়। চা, রুটি কলা, একে একে সাজিয়ে থালায় দেওয়া হয়েছিল তারার সামনে। তারার মত আরও দু-তিন জন মহিলাও ছিলেন সেখানে।
থানার ভেতর একটি অন্ধকার ঘরে তখন তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খাবারের দিকে অপলক তাকিয়ে যখন ঘেন্নায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তারা, সেই সময় অন্ধকার ঘর থেকে দু’তিনজন নারীর কান্না ভেসে আসে। তারা বুঝতে পারেন তাঁর কোন সর্বনাশ হতে চলেছে।
এমন অবস্থায় কিছুতেই খাবার খেতে চাইছিলেন না তারা। রীতিমতো ঠুসে খাবার গেলানো হয়। তারার অবস্থা দেখে তাকে জিপে করে ওই থানা থেকে অন্য আরেকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাহসী তারা সেই সময় জিপ থেকে ঝাঁপ দেয়। সর্বনাশ আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা। মাথায় প্রবল আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। কয়েকদিন পরে যখন জ্ঞান ফিরল, বুঝতে পারেন কিছু মানুষ তাঁর মাথার আঘাতের সেবা করছেন। তারা একটু সুস্থ হতে সেই মানুষগুলোই পাশবিক অত্যাচার করেছিল তারার উপর। নিজের স্মৃতিচারণায় তারা ব্যানার্জী বলেছেন, “লালাসিক্ত পশুর শিকার হলাম। ওই রাতে ঠিক কতজন আমার ওপর অত্যাচার করেছিল বলতে পারব না, তবে ছ-সাতজনের কম নয়।” দীর্ঘদিন তাঁর মস্তিষ্ক কাজ করেনি। যন্ত্রের মত অত্যাচার সহ্য করে গেছেন। শরীরটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাবারও গ্রহণ করেছেন।
ঢাকার একটি গ্রামে থাকতেন তারা ব্যানার্জী। মিলিটারি সৈন্যরা এক একটি গ্রামের জন্য এক একটি নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করে দিতেন। তারা ব্যানার্জীর কথায় ১৬ই ডিসেম্বর-এর আগে তারা আর মানুষ দেখেননি। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পেয়ে খুব সহজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। দীর্ঘদিন নিজের অন্তরের ক্ষতর সঙ্গে লড়াই করে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছেন।
ডেনমার্কে বিয়ে হয় তাঁর। সেখানেই মিসেস টি. নিয়েলসন হন তিনি। তবে সেই অত্যাচারের স্মৃতি দগদগে ক্ষতর মত জড়িয়ে থেকেছে তাঁর জীবনকে। পরবর্তীকালে মুজিবর রহমান সরকারের তরফ থেকে তাঁকে ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
মেহেরজানের যন্ত্রণার কথাঃ
ঢাকা শহরের কাপাসিয়া গ্রাম। শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিল এই গ্রাম। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে গ্রামে ঢোকে পাকিস্তানি বাহিনী। মেহেরজান একটি জলপাই রংয়ের জিপের কথা স্পষ্ট মনে করতে পারেন। আর মনে করতে পারেন বাড়ির দরজায় বুটের লাথির শব্দ। সেই শব্দের কদর্যতায় যখন মেহেরজানের বাড়ির সকলে কানে চাপা দিয়ে বসার চেষ্টা করছেন হঠাৎ করেই দরজা ভেঙে পড়ে। পরের ঘটনাগুলো মৃতদেহ থেকে ভেসে আসা রক্তের মত মনে হত মেহেরজানের।
জিপে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তার আগেই বন্দুকের গুলিতে প্রাণ দিতে হয় মেহেরের মা এবং তাঁর ছোট্ট ভাইকে। তুলে নিয়ে আসার পর মেহেরের ঠাঁই হয়েছিল একটি সেনানিবাসে। সেখানে চলে পাশবিক অত্যাচার। ওই সেনানিবাসে বারবার মনে পড়ত বাবার কথা। মানসিক দিক থেকে একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছিলেন। কয়েদখানায় আটকে থাকার মত বন্দি থেকেছেন।
মেহেরজানকে পরার জন্য শাড়ি দেওয়া হত না। লুঙ্গি, গামছা, শার্ট – নির্ধারিত পোশাক ছিল এই ক’টি। শরীরের অনাবৃত অংশের দিকে লালসার চোখ যাতে সহজে মেলে ধরা যায়। শারীরিক ও মানসিক এই নির্যাতনের ক্ষত তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন।
স্মৃতিচারণায় ওই সেনানিবাসের এক দিদির কথা বারবার বলেছেন তিনি। মেহেরজান যাওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাঁদের বলা হয়েছিল না খাওয়ার জন্য অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন ওই দিদি। তাই খাওয়া-দাওয়া করা বাধ্যতামূলক ছিল। নইলে শরীর ক্ষতবিক্ষত হওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করা যাবে না। পরবর্তীকালে মেহেরজান জানতে পেরেছিলেন ওই দিদি গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন দীর্ঘদিনের অত্যাচারে। পরে পরিকল্পনামাফিক তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল সেনানিবাসে।
সাহসী মেহের মরতে চাননি। দাঁতে দাঁত চেপে অত্যাচার সহ্য করতেন। বিশ্বাস করতেন একদিন স্বাধীন হবে বাংলাদেশ। স্বাধীন হওয়ার পরেও অনেক কঠিন পথ পেরিয়ে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সেই যন্ত্রনা মাখানো দিন ভুলতে পারেননি। পরিবার ও সমাজ তাঁকে সহজ ভাবে মেনে নেয়নি। পরে বাংলাদেশে তাঁকে বীরাঙ্গনা খেতাব দেওয়া হলেও নিজের দেশের মাটিতে অভিমানে তা গ্রহণ করতে চাননি। তখন তিনি ভারতবর্ষে চলে এসেছেন। বীরাঙ্গনা রূপে একবার মাত্র বাংলাদেশকে ছুঁয়ে এসেছিলেন। আবার ফিরে এসেছিলেন ভারতে। সেখানে স্মৃতিচারণায় বলেছেন “নাই বা পেলাম জাতীয় পতাকা, নাই বা পেলাম আমার সোনার বাংলা, কিন্তু আমি জাতির পিতার স্বপ্ন সফল করেছি, একজন যুদ্ধজয়ী বীরাঙ্গনা রূপে বাংলাদেশ ছুঁয়ে এসেছি।”
সাহসী, বীরাঙ্গনা রীনার কাহিনিঃ
অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। ফর্সা। উন্নত নাসিকা। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী পাকিস্তানে জন্ম। বাবা-মা, দাদা-ভাই নিয়ে সুখী পরিবার। যে সময় মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলন শুরু হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন রীনা। প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়লেও নিরুত্তাপ, নিস্তরঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। তবে খুব বেশিদিন লড়াই থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি। অল্প অল্প করে মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে হওয়া মিটিং, মিছিলে তিনি যোগদান করতেন। একদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হন।
দীর্ঘদিন বাংকারে বন্দি ছিলেন রীনা। এ সময়ে চলেছে চরম শারীরিক নির্যাতন। অর্ধমৃত রীনাকে বাঙ্কার থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি মেসবাড়িতে। এ সময় মৃত্যু এসে বারবার হানা দিয়েছে। যে ঘরটাতে থাকতেন, মুক্তোর মত রোদ প্রবেশ করত সেখানে। রোদের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতেন রীনা। ভাবতেন যুদ্ধ শেষ হবে, তিনি সংসার করবেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে সাধারণ মেয়ের মত জীবন কাটাবেন।
অফিসারদের মেসবাড়িতেও অত্যাচারিত হয়েছেন। ধর্ষিতা হওয়ার সময় বেশিরভাগ দিন যন্ত্রণায় তাকিয়ে থাকতে পারতেন না। কিছুদিন বোধশক্তি লোপ পেয়েছিল। অনুভূতিশূন্যতা গ্রাস করেছিল। স্মৃতিচারণায় তিনি বলেছেন, “সকালে মুখ ধুতে গিয়ে দেখলাম আমার সমস্ত শরীরে দাঁতের কামড় ও নখের আঁচড়। কামগ্রস্ত মানুষ যে সত্যিই পশু হয়ে যায় তা আমার জানা ছিল না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলতাম।”
মেস বাড়ি থেকে আবার বাংকারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রীনাকে। প্রতিদিন গোলা-বারুদের শব্দ, বোমার আলোচনা আর শারীরিক অত্যাচার, এই ছিল অভ্যেস। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। লজ্জায়, অপমানে, কষ্টে দীর্ঘদিন নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন।
তবে ঢাকায় আলাপ হয় ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে। তাঁর উদ্যোগেই বিয়ে হয়। বিয়ের পরও অনেকদিন নতুন জীবনে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সহজ হতে পারেননি রীনা। কিন্তু জীবনসঙ্গীর অবিরাম প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে আবার সহজ হতে শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করেও যন্ত্রণামাখানো দিনের কথা ভুলতে পারেননি।
মুক্তিযোদ্ধা শেফালীর কথাঃ
আদর করে সবাই তাঁকে ডাকত শেফা। ১৯৬৯ সালে যখন প্রথম মুক্তিযুদ্ধের দামামা বাজে তখন থেকেই শেফা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লড়াই শুরু করেছিলেন। সে সময় স্কুলে পড়তেন। কিশোরী শেফালী মিটিং মিছিলে যেতেন। প্রতিবাদ করতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মায়ের বলা কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন – “মেয়েদের এত সাহস ভালো নয়।”
বাবা বড় আদরের কন্যা ছিলেন শেফালী। মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় বাবার আদরিনী এই কন্যা রক্ষা পাননি। মিটিং, মিছিলে যখন সাহসী শেফালির মুখ বারবার দেখা যাচ্ছে, এক প্রতিবেশী হঠাৎ সহৃদয় ভাবনা নিয়ে শেফাদের বাড়ি যাতায়াত শুরু করেন। হঠাৎ ক’দিন পরে, শেফার ভাই অদৃশ্য হয়ে যান। শেফালীর পরিবার বুঝতে পারেন কোথাও কিছু গন্ডগোল আছে। মেয়েকে নিয়ে তাঁরা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। সেই প্রতিবেশী পাশে থাকতে চাইলেন। শেফার বাবা অভিভূত। এমন অস্থির সময়ে কেউ সাহায্য করতে চাইছেন মানে তিনি নিশ্চয়ই ফরিস্তা।
সেই ছেলেটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। সেই গাড়ি তবে শুধু শেফালীর বাবা-মাকে নিয়ে চলে যায়। শেফালী ছেলেটির সঙ্গে অন্য গাড়িতে উঠে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন, পৌঁছনো হয়নি নির্দিষ্ট গন্তব্যে। শেফালীর স্থান হয় কয়েদখানায়। তবে অত্যাচারিত হওয়ার আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন। ছেলেটি যখন প্রথমবার শেফালীকে জোর করে নিগ্রহ করার চেষ্টা করতে থাকে তাকে আঁচড়ে কামড়ে দিয়ে পালাবার চেষ্টা করেছিলেন এই সাহসিনী। পাশবিক শক্তির কাছে হেরে গিয়েছিল নারী শরীর। সেনানিবাস-এর কয়েদখানায় দীর্ঘদিন নির্যাতিতা হয়েছিলেন। “বাঘের থাবার আক্রমণ,” শেফালীর নিজের বয়ান।
শেফালীকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন নৃশংস মানুষটি। তারপর প্রতি রাতে নতুন পুরুষ। তবে সাহসী শেফালী জানতেন শরীর ময়লা হলেও অন্তর শুদ্ধ থাকে। নিজের ভেতর মালিন্যের ছাপ পড়তে দেননি।
আশা রেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের। বন্দি জীবনে যুদ্ধক্ষেত্রের গোলাগুলি আর অত্যাচারিতা অন্তরের বোবা কান্না, দুই ছিল সঙ্গী। দীর্ঘ লড়াই পেরিয়ে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় শেফালীও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসেন। স্বাধীন বাংলাদেশ শেফাকে ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দিয়েছেন। তবুও শেফার বুকে জীবিত থেকেছে ক্ষত।
ময়নার যন্ত্রণার কথাঃ
উত্তাল গণ-আন্দোলনের স্রোতে লড়াইয়ে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে ময়না। তৎকালীন ঢাকার নারায়ণগঞ্জ ছিল তাঁর আদি নিবাস। বাবা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। মধ্যবিত্ত। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ ছিল সোচ্চার। বাড়ির লোকের অমতে নানা আন্দোলনে যোগ দিতেন। তবে বেশিদিন সম্ভব হয়নি। বাবা-মায়ের আপত্তি ছিল। তা এড়িয়ে ময়নার পক্ষে খুব বেশিদিন আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি। বাবা-মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের অদূরে নিজেদের গ্রামে চলে আসেন ময়না। মিলিটারির ভয় ছিল চারিদিকে। প্রান্তিক গ্রামগুলোয় ভয়ের একেবারে অন্যরকম পরিস্থিতি। প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হচ্ছেন নারীরা। বাদ যাননি ময়না নিজেও।
তবে স্বেচ্ছায় নয়, বাবা-মার প্রাণ বাঁচানোর বিনিময়ে ময়নাকে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়েছিল। মিলিটারি লোকেরা প্রাথমিক অত্যাচারের পর আবার নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে ময়নাকে।। চোখ বেঁধে জিপে করে নিয়ে আসা হয়েছিল। সামরিক ঘাঁটিতে পাশবিক অত্যাচার সহ্য করেছেন এক মাস। এত কিছু করেও রক্ষা করতে পারেননি নিজেদের বাড়িঘর জমি-জমা। সব চলে যায় পাকিস্তানি হানাদার অর্থাৎ রাজাকারদের হাতে।
সেই সময় অত্যাচারে সাময়িক মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন ময়না। যে বাবা-মার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন ভুলে গিয়েছিলেন তাঁদেরও। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেই জুটত মার।
পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে ময়না যখন মুক্তি পান তিনি খুজে পেয়েছিলেন ভালোবাসার মানুষকে। ভাগ্যে বরাবর বিড়ম্বনায় ফেলেছে ময়নাকে। সংসার, সন্তান নিয়ে সুখের দিনযাপন ছিল মাত্র কয়েকদিনের।
ষড়যন্ত্রের কঠিন সময়ের কাছে হার মানতে হয় তাঁকে। একটি দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারান। তবে তিনি মনে করতেন সেটি দুর্ঘটনা নয়, দুর্ঘটনা রূপে দেখানো হয়েছে। তবুও হার মানেননি। সন্তানকে একা বড় করেছেন। কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার তাঁকে বীরাঙ্গনা আখ্যা দিয়েছিলেন। তবুও সেই অন্ধকার সময়টার কথা ভেবে দীর্ঘদিন বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন সাহসী এই নারী।
মিনার যন্ত্রনামাখা দিনের কথাঃ
বাংলাদেশের নোয়াখালীর মেয়ে মিনা। সাহসী, বুদ্ধিমতী গৃহবধূ। মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ যখন নোয়াখালীতে আছড়ে পড়ছে তখন মিনার স্বামী কাজের সূত্রের বাইরে। সেই সময় গর্ভবতী ছিলেন মিনা। ১৯৭০ সালে তাঁর প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। গ্রামগুলোয় তখন মিলিটারিরা প্রবেশ করছে। মিনার বাবা-মা সেই সময় তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে নিতে এসেছিলেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁদের পাঠানো হয়নি।
এদিকে গ্রামের পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। একদিন মিনার ছোট্টো মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটিকে ডাক্তার দেখাতে বাইরে বেরোনো ছাড়া কোন উপায় ছিল না তাঁর। কোনমতে মেয়েকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত লুকিয়ে পৌঁছন মিনা। ডাক্তার তখন ভেতরে রোগী দেখছেন। মেয়েকে ডাক্তারের চেম্বারের ভেতরে পাঠিয়ে মিনা অপেক্ষা করছিলেন বাইরে।
অপেক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে মেয়ের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। সবুজ রঙের মিলিটারি জিপটা তুলে নিয়ে যায় মিনাকে ডিস্পেন্সারির সামনে থেকে। তাঁর ঠাঁই হয় সেনানিবাসে। শুরু হয় অত্যাচার। নিজের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেছেন, “শকুন যেমন করে মৃত পশুকে ঠুকরে ঠুকরে খায় তেমনি কিংবা দিন কিংবা রাত্রি আমরা ওই দোজখে পচতে লাগলাম।” প্রতিদিন অত্যাচারিত হওয়াই ছিল অভ্যেস।
স্বাধীন বাংলাদেশে মিনার মুক্তির ডাক আসে। দীর্ঘদিনের অত্যাচারে মিনা তখন দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশের তৎপরতায় গর্ভপাত করানো হয়। মিনার জীবন তারপরেও সহজ হয়নি। আর কোনদিন পরিবার তাঁকে ফিরিয়ে নেয়নি। স্বামী, এমনকি নিজের বাবা-মার কাছেও জোটে অবহেলা, উপেক্ষা। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছিল তাঁর। এই শান্ত গৃহবধূ তবুও জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি।
পুনর্বাসন কেন্দ্রে হওয়া একটি ট্রেনিং নিয়ে স্বনির্ভর হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে কিছু সহৃদয় মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছিলেন। পরিবার হারানোর যন্ত্রণা তাঁকে আজীবন দগ্ধ করতে পারেনি। সমাজ-সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। সেখানেই খুঁজে পেয়েছিলেন আত্মীয়তা। বঙ্গবন্ধু সরকারের তরফ থেকে যখন মিনাকে বীরাঙ্গনা আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি পুরোদমে সমাজসেবার কাজ করছেন। ধীরে ধীরে কাজের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন।
ফতি পাগলীর যন্ত্রণার দিনঃ
খুলনার উপকন্ঠে শিল্পশহর সোনাডাঙায় বাড়ি ছিল ফাতেমাদের। পড়াশোনা আর একটা না নুয়ে পড়া শিরদাঁড়া, এই ছিল সম্পদ। আদর করে সকলে বিবি ফতেমা বলে ডাকত। মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের সময় বারবার প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন পাকিস্তানি মিলিটারির অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। সাহসী ফাতেমাকে সাবধান করেছিলেন বাবা-মা, ওই অঞ্চলের অন্য মানুষ। ফতেমার মন মানেনি। তিনি জানতেন অন্যায় কাজ সমর্থন করবেন না কখনও। তাই বুক চিতিয়ে সকলকে সৎ থাকার পরামর্শ দিতেন।
মিলিটারি সৈন্যরা যেদিন ফতেমাদের গ্রামে আসে ছোটো বোনকে কোলে নিয়ে ফতেমা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। সৈন্যদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তাঁরা।
সৈন্যরা কোলের শিশুকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মেরে ফেলে। চোখের সামনে নিজের ছোটো বোনকে ওইভাবে মরতে দেখে ফতেমা সাময়িক বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় সেনানিবাসে। তার আগে গ্রামের রাস্তায় প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে। এক বাবা ও ছেলে তাঁর উপর অত্যাচার করে। লজ্জায় গ্রামবাসীরাও সেদিন তাকাতে পারেননি। সেই পাশবিক অত্যাচারে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা গ্রামবাসীর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন ফতেমা।
সেনানিবাসে থাকাকালীন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থাতেও অজস্রবার নিগৃহীত হয়েছেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হলেও ফতেমা কখনোই পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেননি।
তবে পরবর্তীকালে মনের মানুষের ভালবাসা তাঁকে সুস্থ হতে সাহায্য করেছিল। অল্পদিন-এর সংসার জীবনে আঁচড় কেটেছে অতীতের স্মৃতি। আবার পরিবার-বিচ্ছিন্ন হন ফতেমা। তবে নিজেকে সমাজ-কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের তরফে দেওয়া বীরাঙ্গনা খেতাব তাঁকে জীবন থেকে একেবারে মুছে যেতে দেয়নি।
বীরাঙ্গনা নাকি মুক্তিযোদ্ধা: শেষের কথা
বাংলাদেশের প্রায় দু’লাখ নারী পাকিস্তানি সেনা অর্থাৎ রাজাকারদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তবে সরাসরি লিখিত সাক্ষাৎকার অর্থাৎ সংরক্ষিত তথ্য রয়েছে গুটিকয়েক সাহসিনীর। এই সাত সাহসিনী ছাড়াও আরো অনেক নিগৃহীত নারীকে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের সরকার ‘বীরাঙ্গনা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এঁরা শুধু বীরাঙ্গনা নন, এঁদের কেউ কেউ সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই নির্যাতিতা হওয়ার পরেও বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন সমাজসেবা।
কেউ আবার পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলে পরিবার ফিরিয়ে নেননি। তাঁরা তখন আশ্রয়হীন অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই ক্যাম্পে গিয়ে আহত মুক্তিবাহিনীর সেনাদের সেবা করেছেন। কেউ আবার কবিতা ও গানের মাধ্যমে অন্য নির্যাতিতাদের মনোবল বাড়িয়েছেন। এমন তথ্য পাওয়া যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিগৃহীত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন।
পরবর্তীকালে সমাজতত্ত্বের গবেষক এবং এই বীরাঙ্গনা নারীরা অনেকেই এই আখ্যায়িত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যেমন শিরিন বানু মিতিল। তিনি মনে করেন এই নির্যাতিতা নারীদের বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যা দেওয়া উচিত। ১৯৭২ সালে ‘বীর প্রতীক’ পুরস্কার পাওয়া তারামন বিবির যোদ্ধা হিসেবে দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান হতে তেইশ বছর লেগেছে। বীরাঙ্গনা তকমাটা অত্যাচারিতা হওয়ার স্মৃতিগন্ধী, তাই পরবর্তীকালে অনেক বীরাঙ্গনাই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলতে বেশি পছন্দ করতেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষে পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্যাতিতা নারীদের অনেককে বাংকারে রেখে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে থেকেই মৃত্যুবরণ করেন কেউ কেউ। কেউ সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন। বেশিরভাগ নারী নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাদের মধ্যে অনেকেই আজও জীবিত। তাঁরা হয়তো অন্য কোনও নামে, অন্য কোন পরিচয়ে অবসাদ, অভিমান ও অন্ধকার স্মৃতিমাখা দিন কাটাচ্ছেন।
———-
তথ্যসূত্র
ইব্রাহিম, নীলিমা। (১৯৯৮)। আমি বীরাঙ্গনা বলছি। ঢাকা, বাংলাদেশঃ জাগৃতি প্রকাশনী।
কবির, শামছুল। (২০১৯)। ১৯৭১ এর গণহত্যা ও নির্যাতনঃ প্রসঙ্গ নোয়াখালী জেলা। Jagannath University Journal of Arts, 9, 1-14.
খাতুন, আফরোজা। (২০২৩)। “‘বীরাঙ্গনা’ নয়, মুক্তিযোদ্ধা।” আনন্দবাজার অনলাইন। অন্তর্জাল প্রাপ্তিস্থানঃ https://www.anandabazar.com/amp/editorial/essays/essay-role-of-women-in-the-bangladesh-liberation-war/cid/1481337
ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত।