প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

প্রসঙ্গ: পরশুরাম (১) (২) (৩) (৪) (৫) (৬) (৭) (৮) (৯)

(আগের অংশ) রোমান্সের গল্পও পরশুরাম বেশ কিছু লিখেছেন, তার অনেকগুলোতেই প্রেমের সংজ্ঞাটা একটু বিস্তৃত করে নিতে হয় বা ব্যঙ্গকৌতুকের পর্দার আড়ালে উঁকি দিতে হয়। যথা, "ভুশণ্ডীর মাঠে"র নায়িকা নৃত্যকালী যে আত্মহত্যা করলো এবং পরে আবার সেই শিবুর সঙ্গেই ভুতুড়ে বিয়েতে বসলো সেটাকে প্রেম বল হবে, না প্রতিহিংসা। লম্বকর্ণের অনুগ্রহে আমরা সামান্য সময় বংশলোচন-মানিনীর বিবাহিত রোমান্স দেখলাম ("লম্বকর্ণ")। ভাগনে উদয়ের সদ্যোপরিণীতার স্তুতি অন্যদের বিরক্তির কারণ হলেও আমাদের ভালোই লাগে। বিপুলা-নন্দের কোর্টশিপ নিয়ে পরশুরাম ফলাও করে কিছু লিখলেন না, কিন্তু সেটা যে ঘটেছিল এবং সার্থক হয়েছিল, যতীন্দ্রকুমার সেনের ছবি প্রসাদাত্‍‌ সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয় ("চিকিত্‍‌সা সঙ্কট")। "বিরিঞ্চি বাবা"-তে পরশুরাম ধর্মের নামে ভণ্ডামিতে আমাদের নজর আটকে রাখলেন, আড়ালে সত্য আর বুঁচকীর রোমান্সে অঙ্কুর থেকে কুঁড়ি ধরলো, বিয়ের ফুল এবার ফুটলেই হয়। "স্বয়ম্বরা"-তে পাচ্ছি সাহেবী রোমান্স, তার ফল কী তা আমরা জানি। "কচি সংসদ"-এর রোমান্স যে কী ভাবে ঘটে গেলো, পরশুরাম তা আমাদের ভালো করে বুঝতেই দিলেন না। "রাতারাতি"-র শৃঙ্গাররস আর একটু চওড়া খাতে বয়েছে, স্বয়ং কন্যা সেখানে নায়কের মহড়া নিয়েছেন, নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে তার হাত বেঁধে দেওয়া পর্যন্ত কিছু বাকী নেই। নেলীর দৌলতেই আমাদের কার্তিকের ভাইস্‌রয়ের ডান্সে যাওয়া হবে, এ আমরা লিখে দিতে পারি। এই নেলী, থুড়ি নেড়ীই কি আবার দেখা দিয়েছেন "রটন্তীকুমার"-এর দিদি জয়ন্তীমঙ্গলা হয়ে?

প্রথম পর্বের পরশুরাম ব্যঙ্গকৌতুকের গল্প লিখতেন, তাঁর কাছে রোমান্সটা গৌণ, গোলাপজল ছড়ার মতো। প্রায় বিশ বছর পরে দ্বিতীয় পর্বে যখন তাঁর দেখা পাওয়া গেলো তখন, অন্তত কিছু গল্পে, গল্পটা মুখ্য, ব্যঙ্গকৌতুক গৌণ। এখানে প্রেমের গল্পকে প্রেমের গল্প বলে চেনা যায় এবং যার অনেকগুলোই পরশুরামের প্রথম শ্রেণীর সৃষ্টি। সরাসরি নির্ভেজাল প্রেমের গল্প হোলো "চিঠি বাজি" আর "জয়হরির জেব্রা" (দ্বিতীয়টিতে বিদেশী গল্পের ছোঁয়া আছে)। "রাজমহিষী"-র বংশীধর আর "সরলাক্ষ হোম"এর সরলাক্ষ বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের বাঞ্ছিতাকে লাভ করেছে, সেই পুরাকালের রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব লাভের মতোই ব্যাপার। রাখাল মুস্তৌফী ভারী বুদ্ধিমান লোক, কিন্তু তার রাহাজানি হয়ে যাওয়া বাগ্‌দত্তার সঙ্গে তার মিলন ঘটিয়ে দেবার জন্য পরশুরামকে বিলেত থেকে শার্লক হোম্‌স্‌ আর ডক্টর ওয়াটসনকে আমদানি করতে হোলো কেন ("নীল তারা")? উদ্যোগের অভাব বাঙালী চরিত্রের একটা দুরপনেয় কলঙ্ক বটে। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, কিন্তু লম্পট রাজার পড়ে গিয়ে কোমর আর পায়ের হাড়গোড় না ভাঙলেই কি চলতো না? শুচিবায়ু?

দাম্পত্য প্রেমে "যার অদৃষ্টে যেমনি জুটেছে সেই আমাদের ভালো", অর্থাত্‍‌ স্ব্কীয়া যে পরকীয়াকে টেক্কা মেরে যেতে পারে, এটা নিয়ে পরশুরাম নাড়াচাড়া করেছেন তিনটি গল্পে-- "ধুস্তুরীমায়া", "আনন্দীবাঈ" আর "বরনারীবরণ"। প্রথমটিতে উদ্ধবের কালিদাসী একটু মুখরা, "মেমের কাছে এম এ" পড়েননি, রূপচর্চায় রাজকুমারী স্পন্দচ্ছন্দার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেন না, কিন্তু রাঁধেন একেবারে অমৃত, উদ্ধব যে ফোকলা কুমিরের কামড় থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাতেই তিনি খুসী, স্বামীর মঙ্গলার্থে দক্ষিণেশ্বরে পুজো পাঠান। উদ্ধবকে ফিরে আসতে হয় তাঁরই কাছে। "আনন্দী বাঈ" গল্পে ওই "ধুস্তুরীমায়া"র মতো অনেকটা একই মোদ্দা কথা , তবে কল্পলোকে না ঘটে আজকের দিনেই ঘটছে, কুশীলব আর বাঙালী নয়, মারোয়াড়ী। একটু বেশী ঘোরালো, নায়ক ত্রিক্রমদাস সনাতনী মতের স্ত্রী আনন্দীবাঈ থাকতেও বেআইনী আরো দুটি বিয়ে করে ফেলেছেন। আইনের ঝঞ্ঝাট এড়াবার কারণে তাঁর তিন পত্নীকে যাচাই করতে গিয়ে উপলব্ধি করলেন যে তাঁর অন্য দুই ঘরণীর নজর তাঁর দিকে তত নয়, যত তাঁর টাকার দিকে, এবং সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবার জন্য দূরসম্পর্কের তুতো ভাইদেরও জোগাড় রেখেছেন। তিনি দেখলেন যে আনন্দীই সত্যি তাঁকে চায়। এই উপলব্ধির জন্য তাঁকে "ডিরেন কা ছুছুন্দর" আদি কিছু সম্ভাষণ শুনতে হোলো, গালে খামচানি খেলেন, কপালও কাটলো আনন্দীর কঙ্কণাঘাতে, কিন্তু তার বদলে পেলেন খিচ্‌ড়ি আর গলাবন্ধ-- দুইই আনন্দীর নিজের হাতে করা, আর আজীবন অপ্রতিহত দাম্পত্যসুখের গ্যারাণ্টী। প্রকাশ্য কৌতুক আর প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গে মোড়া "বরনারীবরণ' গল্পে রাখহরি লাহিড়ীকে সজ্জনেরা ভার দিলেন সমবেত মহিলামহল থেকে বরনারী নির্বাচনের। প্রবীণ রাখহরি ও তাঁর প্রবীণা গৃহিণী থাকমণি দুজনেই রাজী। কোন নারীকে বরনারী বলা যেতে পারে, রাখহরি তার সংজ্ঞা দেবার পর -- "শুধু কম বয়স আর ওপরচটকে ভুললে চলবে না মশাই, দেখতে হবে বনেদ কেমন, গাঁথনি কেমন, ভূমিকম্প আর ঝড়বৃষ্টির ধকল সইতে পেরেছে কিনা"--শেষ পর্যন্ত বরণ করলেন সেই থাকমণিকে। তিনি কানে একটু কম শোনেন, তাতে কী এসে যায়, সমবেত সজ্জনেরা খুসী, খুসী আমরাও। এখন আমাদের আজকের বিচ্ছেদপ্রবণ সমাজের কানে এই সুভাষিতটি প্রবেশ করলে হয়। আরেকটি দাম্পত্য সম্পর্কের গল্প "দ্বান্দ্বিক কবিতা"-র ধূর্জটি কাল্পনিক প্রিয়ার উদ্দেশে চুটিয়ে কবিতা লেখে, স্ত্রী শংকরী প্রতিশোধ নেবার জন্য আরো চুটিয়ে কাল্পনিক পুরুষের উদ্দেশে কবিতা লিখতে আরম্ভ করে নাম করে ধূর্জটিকে ছাড়িয়ে গেলো। এদের পুনর্মিলনে অনেক রোমান্সের উপাদান ছিলো, কিন্তু ব্যঙ্গের খাতিরে পরশুরাম আরো কিছু চরিত্র, যথা এক লম্পট মঠাধ্যক্ষ, এবং কিছু দুর্বোধ্য দর্শন যথা ডায়ালেক্‌টিজম এনে ফেললেন, মাঝ থেকে রোমান্স মাঠে মারা গেলো।

যে প্রেম দাম্পত্যে পরিণতি পেতে-পেতেও-পেল না, তেমনি প্রেম নিয়ে দুটি কাহিনী লিখেছেন পরশুরাম। "তিরি চৌধুরী"-তে প্রভাবতী-প্রিয়নাথের বিয়ে ভেঙে যায়, প্রিয়নাথ বিয়ে করেন কনকলতাকে, প্রভাবতী কুমারীই থেকে যান। এদিকে কনকলতারও গৌরগোপালের সঙ্গে সম্বন্ধ ভেঙেছে, গৌরগোপাল অন্যত্র বিয়েথা করেন এবং এখন বিপত্নীক। তারপর প্রায় দুই পুরুষের মতো কাল কেটেছে, তাদের নাতনী তিরি এখন তরুণী। সম্প্রতি প্রভাবতী ও প্রিয়নাথের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবহারিক প্রয়োজনে, কিন্তু তাতে "সেকেলে এবং হিংসুটে" কনকলতার চিত্তদাহ। তিরি বেশ জটিল কারচুপি করে তার আসল আর হতে-হতে-ফস্‌কে যাওয়া ঠাকুর্দা-ঠাকুমাদের একত্র এনে কনকলতাকে ঢিট করেছে, বিষে বিষক্ষয়ের একটি টোটকা প্রয়োগ করে। মজার গল্প, রোমান্স যতটুকু আছে বলে বোঝা গেল তা হোলো চার বুড়োবুড়ীই যা পেয়েছেন তাই নিয়েই খুসী। "যশোমতী" গল্পে, পুরঞ্জয় আর যশোমতী পাশাপাশি বড়ো হয়েছেন, পরস্পরকে ভালোবেসেছেন কিন্তু যশোমতীকে জোর করে অন্যত্র পাত্রস্থ করা হয়, পনেরো বছরের যশোমতী তার প্রতিবাদ করতে পারেননি। পুরঞ্জর বিদেশ চলে যান, আজীবন অকৃতদার, যশোমতীর বিবাহিত জীবন স্বল্পস্থায়ী এবং অসুখী। পঞ্চান্ন বছর পরে যশোমতীর উদ্যোগে আবার তাঁদের দেখা, যশোমতীই খবর নিয়ে উদ্যোগ করে এসে দেখা করেছেন। কাহিনীটিতে তার ও তার পরের কথা। প্রথম ধাক্কাটির পর তাঁরা সেই গতদিনের কথা আলোচনা করেছেন, আজ পরস্পরকে দেখে কী মনে এলো তা বলেছেন এবং শেষে যখন অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন উঠেছে যে তাঁরা এখন মিলিত হবেন কিনা তখন পুরঞ্জয় সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। যুক্তিগ্রাহ্য সংযত রচনা, কিন্তু খটকা লাগে যখন খেয়াল করি যে আদ্যোপান্ত কথা বলেছেন পুরঞ্জয়, এর মধ্যে যশোমতীর কোনো সংলাপ নেই, তাঁর ভাবনা বা মতামত কোনো স্থানই পায়নি। অবশ্য যে কালে এই গল্পটি লেখা সে কালে এমনটিই হোতো, বাঙালী মেয়েদের বুক ফাটতো কিন্তু মুখ ফুটতো না, আর ছেলেরা সবাই অমিত রায়ের মতো বাক্যবাগীশ। পরশুরামের এই রচনাটি ব্যঙ্গাত্মক হতে পারতো, কিন্তু তা নয়। তাঁর কাছ থেকে গভীরতর অন্তর্দৃষ্টি আর যশোমতীকে অন্তত স্বীকৃতি দেবেন আশা করা গিয়েছিলো।

প্লেটনিক প্রেম নিয়ে লেখা মজার গল্প "নিকষিত হেম", অর্থাত্‍‌ যে প্রেমে "নাহি কামগন্ধ তায় "। প্রাকৃতিক নিয়মে যখন অখিলের প্রেয়সী যখন আর প্রেয়সী থাকতে পারলেন না তখন অখিল তাঁকে বাঞ্ছিততে পরিবর্তন করে নিলো অনায়াসে এবং একত্র থাকতে শুরু করলো। তারা সমকামী নয় (এ লেখার সময় সে ব্যাপারটি একেবারে অচিন্ত্য), কাজেই এ প্রেমটি নিকষিত হেম। তারপর ইন্দ্রিয়ের তাগিদে দুজনেই বিবাহ করলো কিন্তু দুই যুধ্যমতী স্ত্রীয়ের ঠেলায় নিকষিত বা অনিকষিত, কোনো হেমই টিকলো না আর, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো দুজনের। তারা এখন আর কেউ কারো মুখদর্শন করে না। পরশুরামী কায়দায় লেখা একটি সরস গল্প, তবে গভীরতা খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হবে। এ ছাড়া তাঁর আরো কয়েকটা গল্পকে (যথা "উপেক্ষিত/তা" ও "পুনর্মিলন" আদি তিনটি ছোট্টো ছোটো গল্প) প্রেমের গল্পের দলে ফেলা যায় কিন্তু হয় তাদের নিয়ে অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, নয় তাদের মধ্যে প্রেমের সূত্রটা ক্ষীণ তাই আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

মহাবীর ("হনুমানের স্বপ্ন") আর দক্ষিণ রায়কে ("দক্ষিণ রায়") বাদ দিলে পরশুরামের চিড়িয়াখানা আলো করে আছেন লম্বকর্ণ। এ ছাড়া আরো ছটি গল্পে মানবেতর প্রাণী পরশুরামের কাহিনীতে দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে গাধা ("জয়হরির জেব্রা"), মোষ ("রাজমহিষী") আর পোষা ইঁদুরের ("ভরতের ঝুমঝুমি") কথা আগেই বলা হয়েছে। এক প্রতাপশালী অহিংস জমিদার একটি বাঘ ধরে তাকে নিরামিষাশী করতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু ফল হোলো না। তখন তাঁর গুরুর উপদেশে-- যেমন চেলা তার তেমনি গুরু-- বাঘের বিয়ে দিয়ে তার "বির্হা"-নিবৃত্তির চেষ্টা করলেন, কিন্তু ফুলশয্যার রাত্রে তারা পরস্পরকে কামড়ে দিলো। ক্ষুধা যে ছয় রিপুরই যে কোনোটির থেকে প্রবলতর প্রবৃত্তি, রামনামে তার প্রশমন হয়না মানুষদেরই, পশুরা কোন ছার,-- সেটা ওই মূর্খদ্বয়ের জানা ছিলো না ("নিরামিষাশী বাঘ")। মাঝ থেকে ক্রনিক অরুচি নিয়ে চিড়িয়াখানায় বন্ধ হয়ে রইলো বেচারী দুই বাঘ। "লক্ষ্মীর বাহন" লক্ষ্মী প্যাঁচাটি এসে ব্যবসায়ী মুচুকুন্দের ভাগ্যোন্নতি এবং দ্রুততর ভাগ্যহীনতা ঘটালো, ঘটিয়ে দিল্লির কিং এডোআর্ড রোডের কাছে একটি পেঁচীর সঙ্গে আস্তানা গাড়লো। একটু আপিঙের নেশাও সংগ্রহ করলো। পরশুরাম তার গল্প আমাদের শোনালেন আর নীতিহীন ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটু শ্লেষও করলেন। "শিবলাল" একটি ষাঁড়, আসলে সুপারষণ্ড, হরপ্পার সীলে তাঁর ছবি ছিল, তিনি কলিকালে কোলকাতায় এসে তরুণ ষাঁড় লোহারামকে ঘায়েল করে, যথেচ্ছ আহার করে কামধেনু ডেয়ারির তিনশো গরু বেষ্টিত হয়ে মগরাহাটে আস্তানা গাড়লেন, দুধের ব্যবসা লাটে উঠলো। ডেয়ারির কর্তারা তাঁর বীর্যের যথেষ্ট মর্যাদা না দেওয়ায় তিনি লীলা ত্যাগ করে কালীঘাটে ফিরে এলেন। এই তিনটি গল্প মৃদু ব্যঙ্গের ফোড়ন সহযোগে অতি উপাদেয় কৌতুককাহিনী।

"রাজভোগ" একটা মামুলি গল্প। এক বৃদ্ধ রাজাবাহাদুরের হজমশক্তি একেবারে গত, তিনি হোটেলের বাবুর্চির কাছে ফরমাশ দিয়ে নানান সুখাদ্যের রেসিপি জেনে মনের ক্ষুধা মেটান আর বার্লি খেয়ে শরীরের-- এই মাত্র। তবে চিত্রতারকা নক্ষত্র দেবী তাঁর সহচারিণী এবং এই গল্পে চাঙ্গায়নী সুধার ("চাঙ্গায়নী সুধা" পশ্য) রেসিপি পাওয়া যাচ্ছে, এ গল্পের স্বপক্ষে এটুকু বলা যেতে পারে। "আতার পায়েস"ও অমনি মামুলি, একদল স্কুলের ছেলে মাস্টারের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে কিছু পেয়ারা চুরি করে ধরা পড়ে গেলো যাঁর কাছে তিনি রিটায়ার্ড ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর কাছে প্রচুর বকুনি ও তাঁর গিন্নির কাছে সদ্য রান্না করা আতার পায়েস খেয়ে তারা বাড়ী এসে দেখে ওই আতাগুলি তাদের বাগান থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট ও তাঁর গিন্নি চুরি করেছেন। চুরিতে চুরিতে কাটাকুটি হয়ে গেলো, এই আর কী। পরশুরামের ভাণ্ডারের অবশিষ্ট গল্প "ধনুমামার হাসি", এক অনাবিল হাসির গল্প, শ্লেষ আর ব্যঙ্গ অবশ্যই আছে কিন্তু মন না চাইলে তা উপেক্ষা করা যায়। বক্তা ক্লাস নাইনের ভোলা, ধনঞ্জয় দত্ত, ধনুমামা তার দিদিমার পিসেমশাই, তিনপুরুষ সিনিয়ার। এই ধনুমামা কৈশোরে এক চোরের ধন চুরি করে বাড়ী থেকে পালান, আসার আগে ওই চোরের কাছ থেকে এক বিকট হাসি শিখে এসেছিলেন, ভোলাকে সেটি দান করে যান। সেই চুরির টাকা বুদ্ধি খাটিয়ে আরো বাড়িয়ে শেষ বয়সে তিনি ভোলার মায়ের কাছে আশ্রয় নেন, তার মধ্যে জমানো টাকার সদ্‌গতির কিছুটা হাত ছিলো, সেটা বোধহয় বলে দিতে হবে না। বাকীটা গল্প পড়ে জানতে হবে। মুচকি হাসির খোরাকে ভরপুর এক মনভোলানো কাহিনী, পরশুরামের কাছ থেকে ঠিক যেমনটি আশা করা যায়।

সুমিত রায়

(পরের অংশ)

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।