সাহিত্য

অগাস্ট ৩০, ২০১৬
রুদ্রপ্রয়াগের চিতা (ধারাবাহিক)
দীপক সেনগুপ্ত
২১। আমার আতঙ্কের রাত
(আগের অংশ)
সেই যে পাইন গাছের উপর বসার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তখন থেকেই মানুষখেকোটার কোন খবর পাচ্ছিলাম না। সে সেই এবড়ো খেবড়ো জমিটার কাছেও আর ফিরে আসে নি। আমি জঙ্গলে বা উঁচু জমিটায় কয়েক মাইল ঘুরেও তার বা যে সঙ্গিনী সেদিন তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল কারোরই কোন খোঁজ পেলাম না। এখানকার জঙ্গল ছিল আমার নখদর্পণে, চিতাবাঘ যদি এ অঞ্চলের কোথাও থাকত, আমি ঠিক সেটাকে খুঁজে পেতাম, জঙ্গলের পাখি ও অন্যান্য প্রাণীরাও এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করত।
স্ত্রী-চিতাটি নিশ্চয়ই তার এলাকা ছেড়ে বহুদূরে চঞ্চল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সে যখন পাইন গাছের ওপর থেকে আমার পাঠানো ডাকটা শুনল তখন সে তার সাথী পেয়ে তার সঙ্গে নিজের এলাকায় ফিরে গেছে। তার সঙ্গিনী খুঁজে পেতে আমিই তাকে সাহায্য করেছি। পুরুষ-চিতাটি এবার নিশ্চয়ই একলাই ফিরবে এবং অলকানন্দার গ্রামের লোকেরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করায় তার পক্ষে শিকার ধরাটাও কষ্টকর হবে। কাজেই সে হয় ত নদী পেরিয়ে ওপারে যেতে চাইবে। এসব ভেবে আমি পরের কয়েক রাত রুদ্রপ্রয়াগের সেতুর কাছে পাহারায় থাকব ঠিক করলাম।
নদীর বাঁদিকে সেতুর কাছে পৌঁছবার তিনটি রাস্তা ছিল। দক্ষিণ দিকের রাস্তাটা গিয়েছিল চৌকিদারের বাড়ির পাশ দিয়ে। চতুর্থ রাতে চিতাটা যে চৌকিদারের কুকুরটাকে মেরে ফেলছে সেটা সেদিন শব্দ শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম। কুকুরটা ছিল ছোটখাটো সাধারণ ধরণের এবং আমি তার বাড়ির রাস্তা দিয়ে গেলেই সে বেরিয়ে এসে আমাকে অভ্যর্থনা জানাত। কুকুরটা এমনি খুব কমই ডাকত কিন্তু সেই রাতে সে পাঁচ মিনিট ধরে সমানে ডেকেছে এবং সেটা শেষ হয়েছে একটা আর্ত চীৎকারে। এর পরেই বাড়ির ভেতর থেকে চৌকিদারের চীৎকার শোনা গেল, তারপর সব চুপচাপ। কাঁটা ঝোপ সরিয়ে সেতুর প্রবেশ পথটা খুলে দেওয়া হয়েছিল; আমি রাইফেলের ট্রিগারে আঙুল লাগিয়ে সারারাত বসে রইলাম কিন্তু চিতাটা সে রাস্তা মাড়াল না।
কুকুরটাকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে চিতাটা সেতুর ফটকের কাছে যে এসেছিল সেটা আমি পরের দিন রাস্তায় চিহ্ন দেখেই বুঝেছি। যেদিকে সে যাচ্ছিল সেদিকে আর পাঁচ পা ফেললেই সেতুর কাছে চলে আসত, কিন্তু সেটা সে করে নি। তার বদলে সে ডান দিকে ঘুরে গেছে এবং বাজারের রাস্তাটা ধরে কিছুটা গিয়ে ঘুরে এসে আবার যাত্রীদের পথ ধরে উত্তর দিকে গিয়েছে। মাইল খানেক গিয়ে আমি তার আর কোনও চিহ্ন খুঁজে পেলাম না।
দু’দিন বাদে খবর পেলাম আগের দিন সন্ধ্যায় যাত্রীপথের সাত মাইল উপরে চিতাটা একটা গরু মেরেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে মানুষখেকোটাই গরুটাকে মেরেছে; কারণ আগের দিন রাতে, যে রাতে চৌকিদারের কুকুরটা মারা পড়েছে, সে রাতেই চিতাটা একটা বাড়ির দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেছে। তার কাছেই পরের দিন সন্ধ্যায় গরুটা মারা পড়েছে।
রাস্তায় দেখলাম বহু লোক আমার জন্য অপেক্ষা করছে। রুদ্রপ্রয়াগ থেকে পাহাড়ের ওপরে ওঠা অত্যন্ত ক্লান্তিকর বলে তারা আমার জন্য এক কাপ চায়ের ব্যবস্থা করেছিল। আমি একটা আম গাছের ছায়ায় বসে সিগারেট ও তাদের দেওয়া চা খেতে খেতে শুনলাম গরুটা আগের দিন সন্ধ্যায় দলের সঙ্গে ফিরে আসে নি। খোঁজ করতে করতে রাস্তা ও নদীর মাঝামাঝি জায়গায় সেটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গের লোকেরা গত আট বছরে মানুষখেকোটার হাত থেকে বেশ কয়েকবার কি ভাবে মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছে সে সব গল্প শোনাচ্ছিল। তারা আমাকে এটাও জানাল যে চিতাটার দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা গত তিন বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সে সফলও হয়েছে। তার আগে যারা ঘরের বাইরে থাকত বা যাদের ঘরের দরজা খোলা থাকত তাদেরই সে ধরত। তারা আমাকে বলল –“এখন শয়তানটার সাহস এত বেড়েছে যে যখন সে দরজা ভাঙতে পারে নি, তখন মাটির দেয়ালে গর্ত তৈরি করে তার ভিতর দিয়ে ঢুকে শিকার ধরেছে।”
যারা আমাদের পাহাড়ি লোকদের চেনেন না বা অলৌকিক বিষয়ে তাদের ভীতি সম্বন্ধে যাদের কোন ধারণা নেই তারা বিশ্বাসই করতে চাইবেন না যে যারা সাহসী বলে খ্যাত বা যারা যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের পরিচয় দিয়ে সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছে তারা কি করে একটা চিতা দরজা ভেঙে বা দেয়ালে গর্ত করে ঘরে ঢুকছে দেখেও প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসে নি, বিশেষ করে তাদের অনেকের কাছে যখন টাঙ্গি, কুকরী এমন কি বন্দুকও রয়েছে। আট বছরে আমি প্রতিরোধ করার একটাই মাত্র ঘটনা জানি, প্রতিরোধকারী ছিল একজন মহিলা। একটা ঘরে সে একাই শুয়ে ছিল এবং তার দরজাটা খুলত ভিতরের দিকে যেটা সেদিন খোলাই ছিল। ঘরে ঢুকে চিতাটা যখন মেয়েটার বা দিকের পা টা কামড়ে ধরে ঘরের মেঝে দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন মেয়েটার হাত ঠেকে ডাল কাটার জন্য ব্যবহৃত একটা টাঙ্গি জাতীয় অস্ত্রে। সেটা আঁকড়ে ধরে সে চিতাটাকে প্রাণপণে আঘাত করে। চিতাটা তার কামড় না ছেড়েই ঘরে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং যে ভাবেই হোক দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়। দরজার একদিকে মহিলাটি এবং অন্য দিকে চিতা – এই অবস্থায় চিতাটা প্রচণ্ড জোরে মেয়েটাকে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টায় কামড়ে ধরা অংশটি মেয়েটার শরীর থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। মুকান্দিরাম ছিলেন সেই সময়ে যুক্তপ্রদেশের আইন সভায় গাড়োয়ালের প্রতিনিধি, তিনি নির্বাচনের কাজে তখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলেন। খবর পেয়ে তিনি গ্রামের সেই ঘরটিতে এক রাত কাটান কিন্তু চিতাটা আসে নি। আইন সভায় তথ্য পেশ করে তিনি জানান যে চিতাটা সে বছর পঁচাত্তরটি মানুষ মেরেছে। তিনি মানুষখেকোটিকে মারার জন্য জোর কদমে প্রচার চালাতে সরকারের কাছে আবেদন করেন।
মাধো সিং এবং রাস্তা চিনিয়ে দেবার জন্য গ্রামের একজন লোককে সঙ্গে নিয়ে আমি মরাটাকে দেখতে গেলাম। রাস্তা থেকে সিকি মাইল এবং নদী থেকে একশ’ গজ দূরে একটা গভীর খাদের ভিতরে গরুটাকে মারা হয়েছে। খাদটার একদিকে ছিল বড় বড় পাথর ও কাঁটা ঝোপ এবং অন্য দিকে ছোট ছোট কয়েকটা গাছ। এর কোনটিতে চড়ে বসা যায় না। এই গাছগুলির নীচে খাদটা থেকে ত্রিশ গজ দূরে একটা বড় পাথর ছিল, তার নীচে ছিল একটা বড় ফোকর। আমি এই ফোকরটাতেই বসব ঠিক করলাম।
মাধো সিং ও গ্রামের সেই লোকটি আমার জমিতে বসার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি তুলল। কিন্তু আমি রুদ্রপ্রয়াগে আসার পর এটাই ছিল চিতাটার প্রথম শিকার এবং সূর্যাস্তের পরেই যেহেতু চিতাটা আসবে বলে আশা করছিলাম, আমি আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাদের গ্রামে ফিরে যেতে বললাম।
যে জায়গাটা আমি বসার জন্য বেছে নিয়েছিলাম সেটা ছিল শুকনো এবং আরামদায়ক। পিঠটা পাথরে ঠেস দিয়ে এবং একটা ছোট ঝোপের আড়ালে পা দুটিকে ঢেকে রেখে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে চিতাটা আমাকে দেখতে পাবে না এবং আমার উপস্থিতি টের পাবার আগেই আমি সেটাকে মারতে পারব। আমার সঙ্গে ছিল টর্চ এবং একটা ছুরি। সবচেয়ে ভাল রাইফেলটা কোলের উপর রেখে মনে হল এই নির্জন জায়গায় চিতাটাকে আমার গুলি করার সম্ভাবনা আগের যে কোন জায়গার থেকে অনেক বেশি।
একটুও নড়াচড়া না করে ও সামনের পাথরের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে সমস্ত সন্ধ্যাটাই কাটালাম, প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল, এইবার চিতাটার আসার সময় হয়েছে, কিন্তু কোথায় সে? সামনের জিনিসগুলি ক্রমশ: ঝাপসা হয়ে আসছে; ভাবলাম হয় ত যখন চিতাটা আসবে বলে ধরেছিলাম তার কিছুটা পরে সে আসবে। এতে আমার চিন্তা করার তেমন কিছু ছিল না, কারণ আমার সঙ্গে টর্চ রয়েছে এবং মরাটা মাত্র ত্রিশ গজ দূরে। আমাকে শুধু গুলিটা চালাতে হবে খুব নিখুঁত ভাবে যাতে ভবিষ্যতে একটা আহত জন্তুর বোঝা না বইতে হয়।
গভীর খাদের মধ্যে ছিল নিশ্চল নিস্তব্ধতা। গত কয়েক দিনের প্রখর রোদে খাদের উপরে ঝরে পড়া পাতা গুলি শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে গেছে। এটা একপক্ষে ভাল, এতক্ষণ যেখানে আমি দৃষ্টিশক্তির উপর নির্ভর করেছিলাম, এবার আমার শ্রবণ শক্তিকে কাজে লাগাতে পারব। আমার বুড়ো আঙুলটা টর্চের বোতামে এবং এবং অন্য আঙুল ট্রিগারে রেখে যেদিক থেকে সামান্য শব্দও আসবে সেদিকে গুলি করার জন্য প্রস্তুত হলাম।
চিতাটা না আসার জন্য আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। এমন কি হতে পারে যে কোন জায়গায় লুকিয়ে থেকে সে এতক্ষণ ধরে আমার উপর নজর রেখেছে এবং বহুদিন মানুষের মাংসের স্বাদ না পেয়ে তার দাঁত আমার গলায় বসাবার আগে জিব দিয়ে ঠোঁট চাটছে? আমি আর কোন ভাবেই তার না আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছিলাম না। এখন আমাকে যদি খাদ থেকে পায়ে হেঁটে ফিরতে হয় তবে আমার শ্রবণ শক্তির উপর এত বেশি নির্ভর করতে হবে যা আগে কখনো করিনি।
মনে হচ্ছিল যেন কয়েক ঘণ্টা ধরে আমার কান দুটোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছি। হঠাৎ বেশি অন্ধকার নেমে আসছে মনে হওয়ায় আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি ঘন কালো মেঘে তারাগুলি আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই বড় বড় ফোটা বৃষ্টি পড়তে শুরু হল। আগে যেখানে কোন শব্দই ছিল না এখন চারিদিকেই নড়াচড়ার সঙ্গে শব্দ ভেসে আসছে, চিতাটা হয় ত এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই ছিল। গায়ের কোটটা খুলে আমি গলায় জড়িয়ে হাতা দুটো দিয়ে বেঁধে নিলাম, রাইফেলটা কোন কাজে আসবেনা জেনেও আমি সেটাকে বা হাতে নিয়ে ডান হাত দিয়ে ছুরিটাকে শক্ত মুঠোতে ধরলাম। ছুরিটা ছিল আফ্রিদিদের ব্যবহৃত এবং আমি সর্বতোভাবে আশা করছিলাম ছুরিটা তার প্রাক্তন মালিকের যে ভাবে কাজে লেগেছে আমার বেলাতেও সেটা হবে। আমি যখন হাঙ্গুতে একটা সরকারী দোকান থেকে এটাকে কিনি তখন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রাজ্যের ডেপুটি কমিশনার আমাকে জানিয়েছিলেন যে ছুরিটা দিয়ে তিনটে খুন করা হয়েছে। এটা একটা ভীতিকর সংগ্রহের জিনিস সন্দেহ নেই তবে এটা হাতে থাকায় আমি খুশিই হয়েছি। আমি ওটাকে মুঠোয় শক্ত করে ধরলাম, তখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে চলেছে।
সাধারণ চিতাবাঘ বৃষ্টি পছন্দ করে না এবং কোন একটা আশ্রয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষখেকো সাধারণ চিতা নয়, তাদের পছন্দ অপছন্দ বা তারা কি করতে পারে বা না পারে তার কিছুই জানা নেই।
মাধো সিং চলে যাবার সময় জানতে চেয়েছিল যে আমি কতক্ষণ বসে থাকব, উত্তরে আমি বলেছিলাম যতক্ষণ না চিতাটাকে গুলি করতে পারছি। অতএব তাদের কাছ থেকে এখন আর সাহায্য পাবার আশা নেই অথচ সে সময়ে সাহায্য পাওয়াটা ছিল খুব জরুরী। আমি থাকব না চলে যাব সেটা ভেবেই আমি অস্বস্তিতে পড়লাম, দুটিতেই অসুবিধা প্রায় সমান। চিতাটা যদি সত্যিই আমাকে না দেখে থাকে তবে তাকে আমার অবস্থানটা জানানো অত্যন্ত বোকামি কারণ সেই অবস্থায় আমাকে যাত্রীপথ অবধি যেতে হবে, আর যদি আমি আরো ছ’ঘণ্টা সেখানে বসে থাকি তবে একটা বিজাতীয় অস্ত্রকে হাতিয়ার করে নিজেকে রক্ষা করতে হবে – এই চিন্তায় আমার মনের উপর যা চাপ পড়বে সেটা সহ্য করা সম্ভব না। অতএব উঠে দাঁড়িয়ে রাইফেলটা কাঁধে ফেলে আমি রওনা হলাম।
আমাকে খুব বেশি হলে পাঁচশ’ গজের মত যেতে হবে, এর অর্ধেকটা ভিজে কাদার মধ্য দিয়ে আর বাকিটা পাথরের উপর দিয়ে – যে পাথরের উপরিভাগ মানুষের পা ও পশুর খুর লেগে মসৃণ হয়ে গেছে। পাছে মানুষখেকোটা জেনে যায় এই ভয়ে আমি টর্চটা জ্বালতে পারছিলাম না। এক হাতে রাইফেল ও অন্য হাতে ছুরিটা শক্ত করে ধরে পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে এগিয়ে চললাম। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে পৌঁছে আমি সর্বশক্তি দিয়ে রাতের অন্ধকারে একটা ‘কু’ ডাক ছাড়লাম। কয়েক মুহূর্ত পরেই পাহাড়ের উপরের গ্রামে একটা দরজা খুলে মাধো সিং ও তার সঙ্গী একটা লন্ঠন হাতে বেরিয়ে এলো।
আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাধো সিং বলল বৃষ্টি না নামা পর্যন্ত তার কোন চিন্তা ছিল না, কিন্তু বৃষ্টি নামতেই সে লন্ঠনটা জ্বেলে দরজায় কান লাগিয়ে বসেছিল। দু’জনেই আমার সঙ্গে হেঁটে রুদ্রপ্রয়াগ অবধি যেতে রাজি ছিল, কাজেই আমরা হাঁটা পথে সাত মাইল যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লাম – প্রথমে বাচি সিং, পরে লন্ঠন হাতে মাধো সিং এবং সবার শেষে আমি। পরের দিন গিয়ে দেখলাম মানুষখেকোটা গরুটাকে ছোঁয়ও নি, রাস্তায় তার পায়ের ছাপও চোখে পড়ল কিন্তু সেগুলি দেখে বোঝা গেল না আমাদের সেই রাস্তা ধরে যাবার কত পড়ে সে আমাদের অনুসরণ করেছিল।
আমি যখন সেই রাতটার কথা চিন্তা করি তখন মনে হয় সেটা ছিল আমার একটা আতঙ্কের রাত। অনেক ভয়ের মধ্যে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে কিন্তু সেই রাতে যখন হঠাৎ বৃষ্টি নামায় আত্মরক্ষার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেল এবং একটা খুনির ছুরি হাতে করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হলো সেরকম ভয় আমি আর কখনও পাই নি।
(চলবে)
লেখক পরিচিতি - বহু বছর বি.ই. কলেজে (এখন ইন্ডিয়ান
ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শিবপুর (
IIEST,shibpur )) অধ্যাপনা করেছেন। কিছুদিন হল অবসর নিয়েএখন সেখানে
অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আছেন। অ্যাপ্লায়েড মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা
করলেও একাধিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে - জ্যোতিষশাস্ত্র, পুরনো কলকাতার
সংস্কৃতি, ইত্যাদি। অবসর সময়ে 'অবসরে'র সঙ্গে সময় কাটান।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।