প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

অনেকেই বলেন ক্লাসিক্যাল গানের ব্যাপারগুলো বুঝতেই পারিনা, এবং দাবী করেন এই জন্যই ভালো লাগেনা। কিন্তু তাঁরাই হয়তো ঠুংরি বা দাদরা বা রাগাশ্রয়ী গজল শুনে তারিফ করেন। আসলে গান, বিশেষ করে মার্গ সঙ্গীত ঠিক বোঝার বিষয় নয়, অনুভবের বিষয়, একাত্মিকরণের ব্যাপার।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছেন, "একটা আম খেলে মাতোয়ারা হয়ে যাই, তো বাবুর বাগানে কটা গাছ, বছরে কবার ফল দেয় সে খবরে কী দরকার?"
কথাটা এক দিক দিয়ে ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক যে সব রকমের আম একই ভাবে খাওয়া যায় না। একরকমের আম আছে (জানিনা এখনও সে আম মুর্শিদাবাদে পাওয়া যায় কি না) দশ বারো ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে মাঝ রাতে তুলোর উপর রেখে কাটলে তবে তার সর্বোত্তম স্বাদ পাওয়া যায়।
কবিগুরু বলেছেন,
"একাকী গায়কের নহেকো গান, গাহিতে হবে দুইজনে।
একজনা গাবে ছাড়িয়া গলা, আরজনা গাবে মনে।"

উস্তাদ গাইছেন গলা ছেড়ে, সামনে বসা (এমন কি হলের বাইরে দাঁড়িয়ে) শ্রোতা একাত্ম হয়ে মাথা দুলিয়ে তারিফ করে শুনছেন, কখনও সহর্ষে বাহবা দিচ্ছেন। এনারা সবাই কবিগুরুর কথিত সেই আরজনা।

তবে এ কথাও ঠিক যে গভীর ভাবে রস গ্রহণ করতে মার্গ সঙ্গীতের কিছু কিছু বিষযের পরিচিতি থাকলে রসগ্রহণটা প্রগাঢ় হয়। আমি মার্গসঙ্গীত খুব উপভোগ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার সব অন্ধি-সন্ধি আমার করায়ত্ত। বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে যে আপনি বসে এই লেখাটা দয়া করে পড়ছেন, সেই আপনি ভারতীয় রাগ সঙ্গীত সম্বন্ধে আমার চেয়ে কিছু কম জানেন না, হয়ত বেশীই জানেন। আমার লেখা পড়ে বেশ কিছু ভুল বার করে ফেলবেন। আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমার উপকারই হবে। তা হলে চলুন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের উদ্যানে একটু ঘুরে ঘুরে কিছু কিছু পরিচিতি নিই।

স্বর (বা সুর) এবং সপ্তক:

প্রথমে দেখি সপ্তক ব্যাপারটা কি? আমলকির রাজা গুপীকে প্রশ্ন করেছিল - সপ্তক জানা আছে?
একজন পারিষদ বুঝিয়ে দিল সপ্তক মানে সাত সুর। তা হলে জানা গেল স্বর বা সুর মূলে সাতটা। কথাটা ঠিক, তবে কিছুটা পর্যন্ত।
সাত স্বর বলতে এখানে মূল বা শুদ্ধ সাতটি স্বরের কথা বলা হয় যা নিয়ে একটি সপ্তক। এই সাতটি শুদ্ধ স্বর হল যথাক্রমে - সা, রে, গা, মা, পা, ধা এবং নি। এদের সঙ্গীতশাস্ত্রগত নাম নীচে দেয়া হল -

সা = ষড়জ
রে = ঋষভ
গা = গান্ধার
মা = মধ্যম
পা = পঞ্চম
ধা = ধৈবত
নি = নিষাদ

এবারে একটি হারমনিয়ম জোগাড় করে বসুন। লক্ষ করে দেখবেন যে পর পর সাদা রঙের রীড (Reed) বসান। মাঝে মাঝে কালো রঙের রীড। এখন কালো রীডগুলির কথা ভুলে যান কিছু সময়ের জন্য। বাম দিক থেকে আট নম্বর রীডটি টিপুন (Bellow চালাতে ভুলবেন না)। যে স্বরটা বেরুল সেইটি হল - সা। এইরকম ভাবে পরপর সাদা রীডগুলি বাজিয়ে গেলে যথাক্রমে সা থেকে নি স্বরগুলি বাজবে আট নম্বর থেকে চৌদ্দ নম্বর পর্যন্ত। পনের নম্বর রীডটি টিপলে শুনবেন যে স্বরটি বেরুল তা যেন সেই আট নম্বর রীডের - সা, তবে উঁচু- তে। ঠিক যেমন আপনি বাড়ীর সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় উঠলে দৃশ্যটা একই দেখতে পান, তবে একটু উপর থেকে। এই উপরের বা চড়ার সা মানে পরবর্তী সপ্তক শুরু হল। এই সপ্তকটিকে আমরা তার সপ্তক বা তারা বলব। যদি আট নম্বর রীড থেকে বাম দিকে পর পর সাদা রীডগুলি বাজিয়ে বাম দিকে যেতে থাকেন, আপনি আবার নি থেকে ধাপে ধাপে নীচের সা- তে পৌঁছে যাবেন। এই সাত স্বরের সপ্তকটিকে আমরা মন্দ্র সপ্তক বা উদারা বলব। আর যে সপ্তক দিয়ে (অর্থাত্ আট নম্বর রীড থেকে) শুরু করেছিলাম সেটিকে বলব মধ্য সপ্তক বা মুদারা ।


তা আমরা জানলাম যে একটি সপ্তকে সাতটি শুদ্ধ বা মূল স্বর। ও হ্যাঁ, আমরা তো সেই কালো রীডগুলির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এক কাজ করুন, সাদা রীডগুলিতে, আট নম্বর রীড থেকে, সা, রে, গা ইত্যাদি লিখে ফেলুন। ডট পেনের লেখা, পরে মুছে দিলেই হবে। সা (সাদা রীড) আর রে এই দুটি রীডের মধ্যে যে কালো রীডটি আছে, সেইটি বাজালে দেখবেন যে স্বর বেরুল, সেটি রে-র তুলনায় চাপা আবার সা-র তুলনায় উঁচু। এই স্বরটিকে আমরা কোমল রে বলব। এর পরের কালো রীডটির স্বর শুদ্ধ রে-র তুলনায় উঁচু আবার গা-র তুলনায় চাপা। এই স্বরটিকে আমরা কোমল গা বলব। তৃতীয় কালো রীডের স্বর দেখবেন (মানে শুনবেন) সাদা রীডের মা-র তুলনায় উঁচু (তীব্র) আবার সাদা রীডের পা-র তুলনায় নীচু। এই কালো রীডের স্বরটিকে আমরা তীব্র মা অথবা কড়ি মা বলব। সাদা পা-র রীডের পরেই যে কালো রীড আছে সেটির স্বরকে বলব কোমল ধা। এর পরের কালো রীডের স্বরটিকে বলব কোমল নি।
তাহলে দেখা গেল একটি সপ্তকে সাতটি শুদ্ধ স্বর, চারটি কোমল স্বর এবং একটি তীব্র স্বর। বারোটি স্বর হারমোনিয়মে এই ভাবে পর পর সাজান আছে:

রীড স্বর লিপিচিহ্ন
সাদা সা স
কালো রে (কোমল) ঋ
সাদা রে (শুদ্ধ) র
কালো গা (কোমল) জ্ঞ
সাদা গা (শুদ্ধ) গ
সাদা মা (শুদ্ধ) ম
কালো মা (তীব্র) হ্ম
সাদা পা প
কালো ধা (কোমল) দ
সাদা ধা (শুদ্ধ) ধ
কালো নি (কোমল) ণ
সাদা নি (শুদ্ধ) ন

একটি ব্যাপার এখানে দেখা যাচ্ছে যে সা এবং পা এই দুটি স্বরের কোনও বিচ্যুতি নেই। এই দুটি স্বরকে আমরা অচল স্বর বলব। সাধারণ ভাবে উপরের স্বরগুলিকে মধ্য সপ্তকের ধরতে হবে। নি (শুদ্ধ)- এর উপরের স্বরটি আবার সা, তবে তার সপ্তকের। লেখার সময় লিখব স*। এই ভাবে পর পর স্বরগুলি * বসিয়ে লেখা হবে। আবার মধ্য সপ্তকের শুরুতে যে সা আছে, তার নীচের স্বরটি নি (শুদ্ধ) তবে মন্দ্র সপ্তকের। লেখার সময় লিখব ন#।

আজকের পরিচিতি এই পর্যন্ত।

পরের অংশের জন্য দেখুন: রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ()

পুষ্পেন্দু মুখোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।