অনেকেই
বলেন ক্লাসিক্যাল গানের ব্যাপারগুলো বুঝতেই পারিনা,
এবং দাবী করেন এই জন্যই ভালো লাগেনা। কিন্তু তাঁরাই
হয়তো ঠুংরি বা দাদরা বা রাগাশ্রয়ী গজল শুনে তারিফ
করেন। আসলে গান, বিশেষ করে মার্গ সঙ্গীত ঠিক বোঝার
বিষয় নয়, অনুভবের বিষয়, একাত্মিকরণের ব্যাপার।
ঠাকুর রামকৃষ্ণ
বলেছেন, "একটা আম খেলে মাতোয়ারা হয়ে যাই, তো
বাবুর বাগানে কটা গাছ, বছরে কবার ফল দেয় সে খবরে কী
দরকার?"
কথাটা এক দিক দিয়ে ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক যে সব রকমের
আম একই ভাবে খাওয়া যায় না। একরকমের আম আছে (জানিনা
এখনও সে আম মুর্শিদাবাদে পাওয়া যায় কি না) দশ বারো
ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে মাঝ রাতে তুলোর উপর রেখে কাটলে
তবে তার সর্বোত্তম স্বাদ পাওয়া যায়।
কবিগুরু বলেছেন,
"একাকী গায়কের নহেকো গান, গাহিতে হবে দুইজনে।
একজনা গাবে ছাড়িয়া গলা, আরজনা গাবে মনে।"
উস্তাদ গাইছেন
গলা ছেড়ে, সামনে বসা (এমন কি হলের বাইরে দাঁড়িয়ে)
শ্রোতা একাত্ম হয়ে মাথা দুলিয়ে তারিফ করে শুনছেন,
কখনও সহর্ষে বাহবা দিচ্ছেন। এনারা সবাই কবিগুরুর কথিত
সেই আরজনা।
তবে এ কথাও ঠিক
যে গভীর ভাবে রস গ্রহণ করতে মার্গ সঙ্গীতের কিছু কিছু
বিষযের পরিচিতি থাকলে রসগ্রহণটা প্রগাঢ় হয়। আমি মার্গসঙ্গীত
খুব উপভোগ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তার সব অন্ধি-সন্ধি
আমার করায়ত্ত। বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে যে আপনি
বসে এই লেখাটা দয়া করে পড়ছেন, সেই আপনি ভারতীয় রাগ
সঙ্গীত সম্বন্ধে আমার চেয়ে কিছু কম জানেন না, হয়ত
বেশীই জানেন। আমার লেখা পড়ে বেশ কিছু ভুল বার করে
ফেলবেন। আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমার উপকারই হবে। তা
হলে চলুন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের উদ্যানে একটু ঘুরে ঘুরে
কিছু কিছু পরিচিতি নিই।
স্বর
(বা সুর) এবং সপ্তক:
প্রথমে দেখি
সপ্তক ব্যাপারটা কি? আমলকির রাজা গুপীকে প্রশ্ন করেছিল
- সপ্তক জানা আছে?
একজন পারিষদ বুঝিয়ে দিল সপ্তক মানে সাত সুর। তা হলে
জানা গেল স্বর বা সুর মূলে সাতটা। কথাটা ঠিক, তবে
কিছুটা পর্যন্ত।
সাত স্বর বলতে এখানে মূল বা শুদ্ধ সাতটি স্বরের কথা
বলা হয় যা নিয়ে একটি সপ্তক। এই সাতটি শুদ্ধ স্বর হল
যথাক্রমে - সা, রে, গা, মা, পা, ধা এবং নি। এদের সঙ্গীতশাস্ত্রগত
নাম নীচে দেয়া হল -