প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
" আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।।
"
রবীন্দ্রসঙ্গীত- রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

শুদ্ধ স্বর (?) মালা:
প্রথম কথা শুদ্ধ এবং বিকৃত এই বিভাজনে আমার আপত্তি। স্বর আবার শুদ্ধ অশুদ্ধ কি? সঠিক প্রয়োগে কোনও স্বরই অশুদ্ধ বা বিকৃত নয়। আমি বরং বলি স্বরের স্বাভাবিক রূপ আর কোমল অথবা কড়ি রূপ। তবে সুরবাগিচার মালীরা হয়তো লাঠি নিয়ে তেড়ে আসবেন আমার এই ব্যাখ্যায়।

সে কথা যাক। আমরা এতদিন সুর খুঁজতে আর মেলাতে বেশ কিছু কোমল আর কড়ি (তীব্র) স্বরের দেখা পেয়েছি বিভিন্ন গানে। এবারে এমন কয়েকটি রাগ দেখব যাতে কেবল শুদ্ধ স্বরই লাগে। দেখা যাবে শুধু শুদ্ধ অর্থাত্ স্বাভাবিক স্বর দিয়ে কত সুন্দর রাগ ও রাগাশ্রয়ী গান আছে।

গুপীগাইন বাঘা বাইন ছায়াছবির শেষ গানটি (ওরে বাবা দেখো চেয়ে কত সেনা চলেচে সমরে ) একটু খেয়াল করে শুনুন, গানটির প্রথম চারটি লাইন অর্থাত্ শুরু থেকে "আধপেটা খেয়ে বুঝি মরে" পর্যন্ত স র গ প ধ এই পাঁচটি স্বর ব্যবহার হয়েছে।


ভূপালী (তত্সহ দেশকার):

ভূপালীতে লাগছে নীচে লেখা পাঁচটি স্বাভাবিক স্বর :
স র গ প ধ
আর চলন গ র স ধ# স র প গ, ধ প গ র গ র ধ# র স (পকড় শব্দের চেয়ে চলন কথাটি আমার বেশি পছন্দ)

কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি:
রবীন্দ্রসঙ্গীত "আমরা সবাই রাজা", সমবেত সঙ্গীত " প্রচণ্ড গর্জনে আসিল", " ঘোর দু:খে জাগিনু";
নজরুলগীতি "শ্যামা নামের লাগল আগুন" (শিল্পী- অজয় চক্রবর্তী)
" বল ওকে চলে যেতে বল" (শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়)
রামকুমার চট্টোপধ্যায়- র অপূর্ব আগমনী গান আছে "গিরি, একি তব বিবেচনা"; এ ছাড়া আছে শ্যামাসঙ্গীত "মনেরি বাসনা শ্যামা"( এই গানের একটি সুরান্তর আছে পান্নালাল ভট্টাচার্য- র গাওয়া )
হিন্দী ছায়াছবিতে পাবেন "ঘনশ্যাম সুন্দর" (অমরভূপালী - ১৯৫৩: শিল্পী- মান্না দে)। এর একটি মারাঠি সংষ্করণ লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া
" জ্যোতি কলস" (ভাবী কি চুড়িয়াঁ: শিল্পী- লতা মঙ্গেশকর),
" এ বন্ধন বাঁধো" (পাকীজা: শিল্পী- শোভা গুরটু)
ভূপালী রাগ পরিবেশনের উপযুক্ত সময় সন্ধ্যা।

দেশকার রাগেও একই স্বর লাগছে, তবে চলনে তফাত্-
স ধ ধ স* প, গা পা ধ প ধ প গ, ধ প গ র স র গ স ।
চমকে উঠবেন না, একটি সুন্দর উদাহরণ আছে হিন্দী ছায়াছবি "লাভ ইন টোকিয়ো" (১৯৬৬)- তে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া "সায়োনারা সায়োনারা";
রবীন্দ্রসঙ্গীত "কামনা করি একান্তে" দেশকার রাগের উপরে রচিত।
দেশকার রাগের পরিবেশনের সময় বেলার দিকে।

শংকরা ও হংসধবনি:

শংকরা রাগে লাগে স র গ প ধ ন
চলন গ প ন ধ স* ন, ন প ধ গ গ স

এই রাগের গান আমি প্রথম শুনি যদু ভট্ট (১৯৫৫) ছায়াছবিতে প্রসুন বন্দ্যোপধ্যয়- র গাওয়া "জাগো মা কালী কপালিনী"। সম্ভবত ছায়াছবি এবং গান কিছুই রক্ষিত হয় নি।
সাধক রামপ্রসাদ ছায়াছবিতে ধনঞ্জয় গেয়েছিলেন "শংকর পদতলে মগনা রিপু দলে"। এটি হয়তো সিডি হয়েছে; তবে শিল্পীর একটি এলবাম "জাগো মা শ্যামা"- তে গানটি আছে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত "কাঁদিতে হবে রে পাপিষ্ঠা" (নৃত্যনাট্য শ্যামা)
" আমারে করো জীবন দান"
নজরুলগীতি "পলাশ ফুলের মৌ পিয়ে ঐ" শিল্পী- মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
শংকরা রাগের সময় রাত্রি দশ-টার পরে।

হংসধবনি:

স র গ প ন এই পাঁচটি স্বরের উপর রাগটি গঠিত।
চলন স গ প ন প গ র, গ প র, ন# প# ন# র স
একটি সুন্দর গান আছে হিন্দী ছায়াছবি "পরিবার" (১৯৫৬) (অর্ধাঙ্গিনী-র হিন্দী রূপান্তর)- তে লতা মঙ্গেশকর ও মান্না দে গেয়েছেন "যা তোসে নাহি বলুঁ "। সলিল চৌধুরী-র দেওয়া সুরের এই গানের একটি রূপান্তর আছে হৈমন্তী শুক্লা-র গাওয়া "দে দে সখী চোখে নীলঞ্জন" গানে।
হংসধবনি রাগের পরিবেশনের সময় সন্ধ্যা।


দুর্গা:

দুর্গা রাগে (পরিবেশনের সময় সন্ধ্যা) লাগে স র ম প ধ
চলন স র প, ম প ধ ম র, র ধ# স
রবীন্দ্রসঙ্গীত "হৃদয়ে রাখো হে"। এ গানে দুর্গা রাগের ছায়া আছে।
সব চেয়ে ভালো নমুনা তারাপদ চক্রবর্তী (এখনকার শিল্পী পণ্ডিত মানস চক্রবর্তীর পিতা) গীত "ফাগুনের সমীরণ" গানে পাওয়া যায় (জানি না গানটি এখন কোনও দোকানে আছে কি না)।
আর উদাহরণ নজরুলগীতি "মহাকালের কোলে এসে" - শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। শিল্পী অজয় চক্রবর্তী-ও এই গানটি গেয়েছেন, এ ছাড়া এই গানটির একটি রেকর্ড বহু পূর্বে ভবানী দাশের কণ্ঠে ছিল।


পরের অংশের জন্য দেখুন: রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ()

(চলবে)

পুষ্পেন্দু মুখোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।