প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

[ত্রুটি সংশোধন: পূর্বপ্রকাশিত রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা (৬) লেখাটিতে বাগেশ্রী রাগের চলনে একটি ত্রুটি ছিল। চলনের " ধ ধ ম প ধ জ্ঞ র গ " অংশটির এক জায়গায় ধৈবতের (ধ) বদলে কোমল ধৈবত (দ) দেখান হয়েছিল। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনের আগে যদি কেউ সেটি পড়ে থাকেন - সেই ভেবে এই অমার্জনীয় ত্রুটির জন্য তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।]

প্রথমে বলে রাখি এখন থেকে স্বাভাবিক স্বরের ক্ষেত্রে শুধু স্বরটির উল্লেখ করব স্বাভাবিক শব্দটি বাদ দিয়ে: যথা ঋষভ, গান্ধার, মধ্যম ইত্যাদি। কোমল বা তীব্র স্বরের বেলায় অবশ্য যথোপযুক্ত বিশেষণটি ব্যবহার করব। স্বাভাবিক (ব্যাখ্যান্তরে শুদ্ধ) ও কোমল স্বরের ব্যাপারে পরে আরও আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।

আরও কয়েকটি রাগ দেখা যাক, যাদের স্বরসমষ্টি কাছাকাছি। রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা (৭)- এ কাফি রাগের চর্চা করা হয়েছিল। দেখেছি যে রাগটিতে স র জ্ঞ (কোমল গান্ধার) ম প ধ ও ণ (কোমল নিষাদ) লাগে। একটি গান শুনুন বেগম আখতারের গাওয়া " যব সে শ্যাম সিধরে "। আরও কয়েকটি গান দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির পুনরাবৃত্তি এখানে করলাম না, রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা (৭) খুলে আবার শুনে নিতে পারবেন।


রাগ দেশী (হিন্দী ভাষায় দেসি বলে):

এই রাগেও উপরের স্বরগুলিই লাগে। আগে একটি গান শুনে নিন। "আজ গাওত মন মেরো "।গানটি হিন্দী ছায়াছবি বৈজু বাওরা- র জন্য পণ্ডিত ডি ভি পলুশকর এবং উস্তাদ আমীর খান গেয়েছিলেন; সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নৌসাদ। ছায়াছবিটি ১৯৫৩ সনে মুক্তি পেয়েছিল।

এবার দুটি রাগের স্বর ব্যবহারে তফাত্গুলি দেখুন।
প্রথমে দেখুন কাফিতে স্বর যখন আরোহণে যায়, অর্থাত্ উদারার সপ্তকের স থেকে তার সপ্তকের স পর্যন্ত যায়, তখন তার চাল একেবারে সরল স র জ্ঞ ম প ধ ণ স*।
দেশী রাগের আরোহণে কিন্তু একটু তফাত্ হচ্ছে- ণ# স র ম প ণ স*। কোমল গান্ধার ( জ্ঞ ) ও ধৈবত বাদ গেল। (এই যে গান্ধার ও ধৈবত বাদ গেল, এই ব্যাপারটিকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যকরণে লঙঘন বলে)। মাত্র পাঁচটি স্বর ব্যবহার হচ্ছে।
অবরোহণের সময় আবার কাফি রাগের মত সোজা সরল ভাবে না নেমে ( কাফিতে স* ণ ধ প ম জ্ঞ র স অর্থাত্ প্রত্যেকটি স্বর পরপর লাগিয়ে নামছে) একটু বাঁকা পথে নামে। স* প ধ ম প, র ম প ধ ম প, র জ্ঞ স র ণ# স , যেন ঝর্ণার মত লাফিয়ে লাফিয়ে। একটা স্বরকে ডিঙিয়ে নীচে নেমে হয়ত আবার ডিঙিয়ে যাওয়া স্বরটিতে অবস্থান করে পুনরায় একটি বা দুটি স্বর ডিঙিয়ে নামল। ব্যাপারটা দেশী রাগের স্বরের চলনে ধরা পড়ে - র ম প ধ ম প, র জ্ঞ স র ণ স। উদাহরণ উপরের গানটিতে অনবরত পাবেন। কয়েকটি নজির দেখা যাক:
যেখানে গাওয়া হচ্ছে " আজ গাওত মন ", সেখানে স্বর লাগছে স র ণ# স স র ণ#
যেখানে গাওয়া হচ্ছে " মেরো ঝুমকে", সেখানে স্বর লাগছে " র প জ্ঞ স র ণ# স
যেখানে গাওয়া হচ্ছে " তেরি তান ভগবান ", সেখানে স্বর লাগছে র ম প প প প প ধ ম প র জ্ঞ ।

মহালয়ায় আকাশবাণীর মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটি প্রায় সকলেই শুনে থাকেন। ঠিকই ধরেছেন, "অখিল বিমানে, তব জয়গানে " গানটি দেশী রাগে। গানটি এখানে পরিবেশন করা গেল না, তবে এই গীতি আলেখ্যটির সিডি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া শুনুন পণ্ডিত ভীäমদেব চাট্টোপাধ্যায়ের "তব লাগি ব্যাথা " ।
অমর শিল্পী বড়ে গুলাম আলি সাহিবের কণ্ঠে শুনুন " মনুয়া লরজে "।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি কখনও কখন গায়কেরা ধৈবত (ধ)- এর স্থলে কোমল ধৈবত (দ) ব্যবহার করে থাকেন। দেশী রাগের পরিবেশনের সময় সকাল দশটা থেকে বারোটার মধ্যে।


রাগ ভীমপলশ্রী (হিন্দীতে ভিমপলাশি বলা হয়):

আরও একটি রাগ যাতে স র জ্ঞ ম প ধ ণ লাগছে। পরিবেশনের সময় সন্ধ্যা আটটা থেকে রাত দশটার মধ্যে।
চলনটি হল ণ# স ম ম প ণ ধ প ম প জ্ঞ ম জ্ঞ র স
সুরকার ও শিল্পীদের একটি অতি প্রিয় রাগ।
প্রথমেই বলি পান্নালাল ভট্টাচার্য- র গাওয়া " আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল " খুবই জনপ্রিয় ও চেনা গান।
হিন্দী ছায়াছবি দিল তেরা দিওয়ানা- র জন্য লতা মনগেশকর ও মুহম্মদ রফি গেয়েছেন " মাসুম চেহরা "।


রাগ পটদীপ:

উপরের রাগগুলির কাছকাছি, তবে কোমল নিষাদ-র (ণ) বদলে নিষাদ (ন) ব্যবহার হয। রাগে স্বরগুলির চলন হল জ্ঞ ম প ন ন ধ ন স* ধ প প ম প জ্ঞ ম জ্ঞ র স
১৯৫৫ সনে মুক্তি পাওয়া শাপমোচন (উত্তমকুমার সুচিত্রা সেন জুটি) ছয়াছবিটির কথা অনেকেরই মনে আছে; ছবিটি তে চিন্ময় লাহিড়ী ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন " ত্রিবেণী তীর্থপথে কে গাহিল গান" গানটি হাতের কাছে নেই, তাই শোনাতে পারছি না। তবে সতীনাথ মুখোপধ্যায়ের গাওয়া একটি রাগপ্রধান গান শুনুন "কেন জানি না বাজে"।
১৯৭১ সনে মুক্তি পাওয়া শর্মিলী ছায়াছবিতে ( রাখী ও শশী কাপুর অভিনীত, শচীন দেব বর্মনের সঙ্গীত) একটি সুন্দর গান আছে "মেঘা ছায়ে আধি রাত "।
শেষ করি পণ্ডিত ভীäমদেব চট্টোপধ্যয়ের গাওয়া " পিয়া পরদেশ " গানটি দিয়ে।
পটদীপের সময় হল গোধূলি।


সাহানা:

স্বর লাগে স র জ্ঞ ম প ধ ণ ( কখনও কখন নিষাদ অর্থাত্ ন ব্যবহার হয়) রাগের লক্ষণ স্বরগুলির চলনে ধ ণ প, ম প স* ধ ণ প, ম প জ্ঞ ম প জ্ঞ ম র স।
রবীন্দ্রনাথ এই রাগটির বহু ব্যবহার করেছেন, যথা:
" যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি "
" কী গাব আমি কী শুনাব "
উত্তর ভারতে রাগটির খুব একটা প্রচলন নেই। গভীর রাতের রাগ এটি।


" দুই হৃদয়ের নদী একত্রে মিলিল যদি
বলো দেব, কার পনে আগ্রহে ছুটিয়া যায় "

রাগ আহীর ভৈরব:

ভৈরব রাগের কথা আশা করি মনে আছে; রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা (২)- এ দেওয়া হয়েছিল। এতে স্বর লাগে স ঋ গ ম প দ ন।
এইবার দেখুন প্রথম চারটি স্বর স ঋ গ ম নিলাম আর তার সঙ্গে দিলাম কাফি রাগের শেষ তিনটি স্বর প ধ ণ। মিলে হল আহীর ভৈরব রাগ।
আরোহণ ও অবরোহণ দেখুন
স ঋ গ ম প ধ ণ স*।। স* ণ ধ প ম গ ঋ স
চলনটি এই রকম প ধ ণ ধ ম প গ ম ঋ স

প্রথমেই শুনুন পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের রচনা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে " আনন্দভরা এ সুন্দর ভুবনে "।
হম দিল দে চুকে সনম, খুব হালের ছবি, ছায়াছবিতে কবিতা কৃষ্ণমূর্ত্তী ও অন্যান্য গেয়েছেন " অলবেলা সাজন আয়ো রে "
গানটির শুরুর দিকে বাজনা শুনে ঘাবড়িয়ে যাবেন না। কিছুটা গেলেই রাগের আসল রূপটি আসছে।


রাগ বিলাসখানি তোড়ী:

স্বরসমষ্টির সামান্য পরিবর্তন করে, গান্ধারের (গ) বদলে কোমল গান্ধার (জ্ঞ) এবং ধৈবতের (ধ) জায়গায় কোমল ধৈবত (দ) লাগিয়ে অর্থাত্ স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ নিয়ে সৃষ্টি রাগটির। উপাদান রাগ ভৈরবীর মত, কিন্তু চলনে তফাত জ্ঞ প দ ণ দ ম ঋ জ্ঞ ম ঋ জ্ঞ ঋ স
( রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৪ খুলে দেখুন ভৈরবীতে স্বরের চলন জ্ঞ ম ঋ স ণ# স জ্ঞ ম প দ প জ্ঞ ম ঋ স)
সাম্প্রতিক হিন্দী ছায়াছবি লেকিন থেকে আশা ভোঁশলের গাওয়া ( সঙ্গে আরও একটি কণ্ঠ আছে) এই গানটি শুনুন " ঝুঠে নয়না বোলে "।

আহীর ভৈরব ও বিলাসখানি তোড়ী, দুটি রাগেরই পরিবেশনের সময় সকাল আটটা থেকে দশটার মধ্যে।

(চলবে)

পুষ্পেন্দু মুখোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।