প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৭- এ লিখেছিলাম যে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত বারোটা, এই ছয় ঘণ্টায় প্রচুর রাগ। আরও লক্ষ্য করবেন গোধুলি থেকে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত তীব্র মধ্যমের ব্যবহার থাকে। সন্ধ্যা যত রাত্রির দিকে গড়াতে থাকে, অর্থাত্ আটটার পর থেকে তীব্র মধ্যমের ব্যবহার থাকে না বললেই চলে। প্রায় সব স্বরেরই স্বাভাবিক রূপ ব্যবহার হয়ে থাকে বেশী ভাগ রাগের ক্ষেত্রে। আমরা এবার যে রাগগুলি দেখবো, সেগুলি রাত আটটা থেকে বারোটার মধ্যে পরিবেশিত হয়ে থাকে।
আগের কিস্তিতে তিনটি রাগ, যথা ইমন কল্যাণ, শ্যাম কল্যাণ আর হাম্বীর, দেখেছিলাম, যেগুলিতে স্বাভাবিক এবং তীব্র এই দুরকম মধ্যমই ব্যবহার হয়। আরও দুটি রাগ দেখি দুই মধ্যমের।

কামোদ:

স্বর লাগছে স র গ ম হ্ম প এবং ধ (তবে কদাচিত্ কোমল নিষাদ ও ব্যবহার হয়)
আরোহণের প্রকৃতি স ম র প হ্ম প ধ প স*
অবরোহণে স* ধ প গ ম ধ প গ ম প গ ম র স
চলন স ম র প, প গ ম ধ প, প প গ ম প গ ম র স
প্রথমে শুনুন ভীäমদেব চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে 'মতি মলিনিয়া'
১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দী চলচিত্র চিত্রলেখা- তে লতা মনগেশকর গেয়েছেন 'এ রি যানে না দুংগি'
দুটি গানেই নিশ্চয় খেয়াল করেছেন ষড়জ, মধ্যম আর পঞ্চমের ব্যবহার যেটা হল (স) ম র স, ম র প ।
শেষে শুনুন রবীন্দ্রসঙ্গীত 'যতবার আলো জ্বালাতে চাই'।


কেদার:

কেদার রাগে কামোদে ব্যবহৃত স্বরগুলির উপর যোগ হচ্ছে নিষাদ, স্বাভাবিক (ন)
আরোহণে স ম গ প হ্ম প ধ ন স*
অবরোহণে স* ন ধ প হ্ম প ধ প ম স র স
চলন স র স ম ম প, প হ্ম ধ প ম, স র স
নিদর্শন শুরু করি ১৯৭২ সালের হিন্দী চলচিত্র গুড্ডী- তে বাণী জয়রামের গাওয়া 'হামকো মনকি শক্তি দে না" । কেদার রাগের একটি আগমার্কা গান।
এর পরে উপস্থিত করব দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত 'কে দিল আবার আঘাত'। আর একটি আদর্শ উদাহরণ কেদার রাগের।
সব শেষে শুনুন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি সাহেবের কণ্ঠে।
উপরের দুটি রাগই পরিবেশনের সময় রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যে। এই প্রহরের রাগের ফিরিস্তি শেষ করব তিলক কামোদ ও তিলং, এই দুটি রাগ দিয়ে।


তিলক কামোদ:

নাম তিলক কামোদ হলে কি হবে, কামোদ রাগের সঙ্গে মিল নেই, বরং দেশ রাগের কাছাকাছি; কাঠামো এক। স্বর লাগছে স, র, গ, ম, প, ধ ও ন
আরোহণে স র গ স র ম প ধ ম প স*
অবরোহণে স* প ধ ম গ ম গ স র গ স ন#
চলন প# ন# স র গ স, স র প ম গ, স র গ স ন#
উপরে বলেছি যে দেশ রাগের সঙ্গে তিলক কামোদ রাগের কিছুটা নৈকট্য আছে। অনেক গানেই সুরকার বা শিল্পী দুটি রাগ মিশিয়ে গান।

নিদর্শন হিসাবে প্রথমে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনুন 'দুখিয়া ম্যায়'।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে আসে 'মধুর রূপে বিরাজো'।
১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দী ছায়াছবি জাগতে রহো- তে আশা ভোঁশলে গেয়েছেন 'ঠাণ্ডি ঠাণ্ডি শাওনকি' ।


তিলং:

তিলং রাগের স্বর পরিচিতিতে যাবার আগে তারাপদ চক্রবর্তীর গাওয়া রাগপ্রধান গান 'পূজারিণী, খোলো খোলো মন্দিরদ্বার' শুনুন।
গানটি অনেকেই শুনে থাকবেন। তিলং রাগ শিল্পী ও সুরকারদের কাছে খুবই পছন্দের। রাগটিতে স্বর লাগছে স, গ, ম, প, ণ এবং ন, দুরকম নিষাদই লাগে। এবং খেয়ালে রাখবেন উঠছে স্বাভাবিক নিষাদ (ন) দিয়ে আর নামছে কোমল নিষাদ (ণ) দিয়ে।
আরোহণে ন# স গ ম প ন স*
অবরোহণে স* ণ প গ ম গ স
চলন গ ম প ন স* ণ প গ ম গ স
অনেক জনপ্রিয় গান আছে এই রাগে। প্রথমেই মনে আসে নজরুলগীতি 'অঞ্জলি লহো মোর'।
কিশোর কুমারের দরদী কণ্ঠ শুনুন শর্মিলী চলচিত্রের 'কেইসে কহে হম' গানে
সব শেষে শুনুন ভীäমদেব চট্টোপাধ্যারের কণ্ঠে 'তোরে সে লো মন'।


যা নিশা সর্বভূতানাং তস্য জাগর্তি সংযমী

রাত্রি গভীর হয়, রাগগুলিতে কোমল ঋষভ (ঋ) আর তীব্র মধ্যম (হ্ম)- এর ব্যবহার থাকেনা। আগে কয়েকটি রাগের পরিচয় দিয়েছি যেগুলি মধ্য রাত্রির- যেমন, শংকরা (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৫); বাগেশ্রী ও বেহাগ (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৬); আড়াণা ও দরবারী কানাড়া (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৩); মালকোষ (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৪); এবং সাহানা (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৯) । সব কটি রাগই মধ্য রাত্রির, দশটা থেকে দুটোর মধ্যে। আরো দুটি রাগের কথা বলে মধ্য রাত্রির পালা শেষ করব।


চন্দ্রকোষ:

রাগ মালকোষ (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা- ৪)- এর কথা আশা করি মনে আছে, বিশেষ করে বৈজু বাওরা ছায়াছবির গান 'মন তড়পত হরিদরশন কো' গানটির কথা বা রবীন্দ্রসঙ্গীত 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে' । মালকোষ রাগে লাগে স, জ্ঞ, ম, দ, ণ। এখন শুধু নিষাদটি স্বাভাবিক (ন) করে দেখুন, হয়ে যাবে রাগ চন্দ্রকোষ।
আরোহণ ও অবরোহণ একেবারে সাধারণ।
আরোহণ স জ্ঞ ম দ ন স*
অবরোহণ স* ন দ ম জ্ঞ স
চলন ম জ্ঞ স, জ্ঞ স ন# দ#, ম# দ# ন# দ# স ন# জ্ঞ স
উদাহরণ হিসাবে প্রথমেই মনে পড়ে ১৯৫৪ সালের ছায়াছবি ঢুলী তে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যর গাওয়া গান 'ত্রিনয়নী দুর্গা'।
সম্পূর্ণ রামায়ণ (১৯৬১) ছবিতে লতা মনগেশকরের গাওয়া গান আছে চন্দ্রকোষ রাগে 'সন সনন'।
আর শুনুন লতা মনগেশকরের তরানা


কৌশিক ধ্বনি:

রাগটির আরও একটি নাম ভিন্ন ষড়জ। চন্দ্রকোষ বা মালকোষ বা ভূপালি রাগের মতন (আরও বেশ কিছু রাগ) এই রাগেও পাঁচটি স্বর লাগে। এই শ্রেণীর রাগের, যাতে মাত্র পাঁচটি স্বর ব্যবহার হয়, একটি বিশেষ জাতিগত নাম আছে, যাকে বলে ঔড়ব জাতি। সেই ভাবে ছয়টি স্বরের রাগকে ষাড়ব ও সাতটি স্বরের রাগকে সম্পূর্ণ জাতি বলা হয়। যাই হোক এখন কৌশিক ধবনির পরিচয় নেওয়া যাক।
আরোহণের সময় লাগছে স গ ম ধ ন স*
অবরোহণে লাগে স* ন ধ ন ধ ম গ ম গ স
চলন ন ধ গ ম গ স, ধ# ন# স ম
প্রথমে শুনুন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলির কণ্ঠে একটি খেয়াল
একই শিল্পীর কণ্ঠে শুনুন ঠুংরি 'ইয়াদ পিয়াকি আয়ে'।
গানটির একটি বাঙলা রূপান্তর আছে, 'কে আমারে ডাকে' হয় তো শুনে থাকবেন।
শেষে মান্না দের কণ্ঠে শুনুন হিন্দী ছায়াছবি বাওয়ার্চি থেকে 'তুম বিন জীবন'।

"নিশীথ রাতের প্রাণ
কোন সুধা যে চাঁদের আলোয় আজ করেছে পান
।"

রবীন্দ্রসঙ্গীতটি পরজ রাগের উপর। পরজ রাগের কথা রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা-৮ -এ লিখেছি। রাগটি শেষ রাতের, দুটো থেকে চারটের মধ্যে পরিবেশিত হয়ে থাকে। আর একটি রাগের পরিচিতি দেব এই প্রহরের।


সোহিনী:

স্বর লাগছে স, ঋ, গ, হ্ম, ধ এবং ন। লক্ষ্য করুন, রাত শেষ হয়ে ঊষার আগমনের সময় ঘনিয়ে আসছে এবং কোমল ঋষভ (ঋ) আর তীব্র মধ্যম (হ্ম) ফিরে এসেছে।
স্বর ব্যবহার স, ঋ, গ, হ্ম, ধ এবং ন
আরোহণ স গ হ্ম ধ ন স*
অবরোহণ স* ঋ* স* ন ধ হ্ম গ হ্ম গ ঋ স
চলন স* ন ধ ন ধ গ, হ্ম ধ ন স* ঋ* স
উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি সাহিবের একটি অবিস্মরণীয় ঠুংরী আছে সোহিনী রাগে 'প্রেমকি মার কাটার'। একই সুরে শিল্পী মুঘল ই আজম ছায়াছবিতে গেয়েছিলেন 'প্রেম যোগন বন
পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের রচনা (প্রায় একই সুরে) পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে শুনুন 'আমি নিজেরে শুধাই বারেবার'।
আশা ভোঁশলের কণ্ঠে শুনুন হিন্দী চলচিত্র গৃহস্থী থেকে গান 'জীবন জ্যোত জ্বলে'

ঘনিয়ে এলো ঘুমের ঘোর
গানের পালা সাঙ্গ মোর।

(চলবে)

পুষ্পেন্দু মুখোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।