গত কিস্তিতে
আড়াণা আর দরবারী কানাড়া রাগের কিছু পরিচিতি নিয়েছি।
দেখেছি দুটি রাগেই একই স্বর লাগে তবে প্রয়োগ ভিন্ন।
খেয়াল হয়ত করেছেন যে আড়াণাতে চড়া স্বর, অর্থাত্ মধ্য
সপ্তকের পা থেকে তার সপ্তকের সা বা আরও উপরের স্বর,
বেশী ব্যবহার হচ্ছে; আবার দরবারী কানাড়ার ক্ষেত্রে
মধ্য সপ্তকের মা থেকে নীচের দিকে সা এবং আরও নীচে
গিয়ে মন্দ্র সপ্তকের ধা পর্যন্ত স্বরগুলি বেশী লাগছে।
আর একটি বিষয় এখানে বলে রাখি, দুটি রাগেরই পরিবেশনের
অনুকূল সময় মধ্য রাত্র। রাগের মেজাজ আনার জন্য এটি
খুব জরুরী।
জৌনপুরী, আশাবরী
এবং ...
জৌনপুরী আর আশাবরী এই দুটি রাগেও একই স্বর সমষ্টি
( স, র, জ্ঞ, ম, প, দ, ণ) লাগে।
একটা কথা এখানে বলে রাখি। জৌনপুরী আর আশাবরী এই দুই
রাগের মধ্যে প্রভেদ সামান্যই। অন্তত আমার অশিক্ষিত
কানে চট করে ধরা পড়ে না। তবে ভরসার কথা এই প্রখ্যাত
গুণী পণ্ডিত ওঙ্কার নাথ ঠাকুর না কি এই দুই রাগকে
দুটি আলাদা রাগ বলে স্বীকার করেন নি। যাই হোক, দুটি
রাগের স্বর প্রয়োগ আলাদা করে দেখাচ্ছি।
রাগ
জৌনপুরী
আরোহণ স র ম প দ ণ স*
অবরোহণ স* ণ * দ প ম জ্ঞ র স
বাদী দ
পকড় র ম প দ প, ম প ণ দ প, ম প জ্ঞ র স
রাগ
আশাবরী
আরোহণ স র ম প দ দ স*
অবরোহণ স* ণ দ প ম প দ ম প জ্ঞ র স
বাদী দ
পকড় স র ম প দ, ম প দ ম প জ্ঞ, স র স
দুটি রাগেরই
পরিবেশনের প্রশস্ত সময় সকাল, একটু বেলার দিকে।
কয়েকটি গানের
উদাহরণ দিচ্ছি:
পান্নালাল ভট্টাচার্যর গাওয়া: 'কালো
মেয়ের পায়ের তলায়..'
(নজরুল গীতি) । এটি জৌনপুরী ।
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'শুভ্র নব শঙ্খ তব' - এটিকে আশাবরী
বলা যাবে
আমরা এতক্ষণ
এই স্বরগুলির উপরে গঠিত কয়েকটি রাগ দেখলাম- স (সা),
র (শুদ্ধ রে), জ্ঞ (কোমল গা), ম (শুদ্ধ মা), প (পা),
দ (কোমল ধা) এবং ণ (কোমল নি)। এখন শুদ্ধ রে- র বদলে
কোমল রে (ঋ) নিয়ে কয়েকটি রাগ দেখা যাক। তাতে এই কটি
স্বর ব্যবহার : স, ঋ, জ্ঞ, ম, প, দ, ণ।
ভৈরবী:
আরোহণ: স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ স*
অবরোহণ: স* ণ দ প ম জ্ঞ ঋ স
পকড়: জ্ঞ স ঋ স, ণ# স জ্ঞ ম প দ প, জ্ঞ ম ঋ স
এর আগে বলেছি
যে সঙ্গীত জগতে এটি একটি বহু ব্যবহৃত রাগ। আগে কয়েকটি
উদাহরণও দিয়েছি। আরও কিছু নমুনা দিলাম:
রবীন্দ্রসঙ্গীত: 'আমার
হৃদয় ' , 'আমার
রাত পোহালো
নজরুল গীতি: 'বাগিচায়
বুলবুলি তুই'
রজনীকান্তের রচনা: 'তুমি
নির্মল করো' (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া)
ছায়াছবি, বিশেষ
করে হিন্দী চলচিত্রে এই রাগ বহুব্যবহৃত। আগে কয়েকটির
উল্লেখ করেছি। মান্না দের গাওয়া বেশ কিছু গান আছে
এই রাগে। এখানে একটি গানের উল্লেখ করছি, গানটি বেশ
মজার এবং আধুনিক সময়ের বাজনা সমেত। তবে ভৈরবী চিনে
নিতে ভুল হয় না। ছবির নাম " আধি রাত কে বাদ "
গান 'গোরি তোরে বাঁকি. .'
মালকোষ:
আরোহণ: স জ্ঞ ম দ ণ স*
অবরোহণ: স* ণ দ ম জ্ঞ স
পকড়: ণ# স জ্ঞ দ#, দ# ণ# স ম, ম জ্ঞ স জ্ঞ ম জ্ঞ স
উদাহরণ:
রবীন্দ্রসঙ্গীত: 'আনন্দধারা
বহিছে'
আকাশবাণী পরিবেশিত মহালয়ার প্রভাতী অনুষ্ঠান "
মহিষাসুরমর্দিনী"- তে একটি গান 'ওগো আমার আগমনীর
আলো'।
হিন্দী ছায়াছবি বৈজু বাওরা (১৯৫২)- তে মহম্মদ রফী-
র গাওয়া 'মন
তড়পত হরি দরশন'
রাগটি পরিবেশনের প্রশস্ত সময় মধ্যরাত্র।
কোমল
ঋষভ আশাবরী:
নাম থেকে নিশ্চয় বুঝেছেন যে এই রাগটি আশাবরী রাগের
এমন একটি রূপান্তর যাতে শুদ্ধ ঋষভ বা রে স্বরের বদলে
কোমল ঋষভ (ঋ) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই রাগটিকে আশাবরী
তোড়িও বলা হয়ে থাকে। এটি আশাবরী রাগের চেয়ে ভৈরবী
বা তোড়ি রাগের কাছাকাছি।
আরোহণ: স ঋ ম প দ স*
অবরোহণ: ঋ# ণ দ ম জ্ঞ ঋ স
পকড়: ঋ ম প ণ দ প, ম প দ ম প জ্ঞ ঋ স
উদাহরণ:
খুব ভালো উদাহরণ পুরাতন ছায়াছবি আশা- তে (১৯৫৮ বা
১৯৫৯ সনে মুক্তি পেয়েছিল; কানন দেবী, কমল মিত্র, আশিসকুমার
প্রভৃতি অভিনয় করেছিলেন) প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়- র
গাওয়া 'কোয়ু না পায়ো পার'; সুর দিয়েছিলেন জ্ঞান প্রকাশ
ঘোষ।
রবীন্দ্র সঙ্গীত: 'মনোমোহন গহন যামিনীশেষে'
পরের অংশের জন্য
দেখুন: রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা (৫)
(চলবে)