প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

রাগ সঙ্গীত প্রবেশিকা ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

এখনো পর্যন্ত ছত্রিশটি রাগের পরিচিতি আমরা পেয়েছি। এখন কিছু সকালের রাগ নিয়ে বসা যাক। সকাল বলতে ছয়টা থেকে সকাল দশটা। এই ব্যাপারে একটা বিষয় খেয়াল করার--এই সময়ের রাগগুলিতে কোমল ঋষভ (ঋ) এবং কোমল ধৈবতের (দ) ব্যবহার। প্রায় সব রাগেই, মানে সকালের রাগে, এটি দেখতে পাবেন। এর আগে সকালের রাগের মধ্যে এই কটি রাগের পরিচিতি দিয়েছি- কোমল ঋষভ আশাবরী (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৪ দেখুন), তোড়ী ও গুর্জরী তোড়ী (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৮ দেখুন) এবং বিলাসখানি তোড়ী ও আহীর ভৈরব (রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৯ দেখুন)। এবারে আরও কয়েকটি সকালের রাগের পরিচিতি নেব।

রাগ ভৈরব ( হিন্দীতে ভৈরোঁ বলা হয়):
স্বর লাগছে
আরোহণে স ঋ গ ম প দ ন স*
অবরোহণে স* ন দ প ম গ ঋ স
চলন স ম ম ম প প, দ দ প, ম প ম ম গ, ম ঋ স

কয়েকটি নমুনা শুনুন:
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'শুভ্র আসনে বিরাজো'
১৯৫৬ সনে রাজকাপুর পরিচালিত দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল একই কাহিনীর উপর বাংলা ও হিন্দীতে যথাক্রমে 'একদিন রাত্রে' ও 'জাগতে রহো' নাম নিয়ে। ছবির একেবারে শেষে ছিল গান 'জাগো মোহন প্রীতম' আর হিন্দী ছবিতে 'জাগো মোহন প্যারে'-- দুটি গানই লতা মনগেশকরের গাওয়া।
সব শেষে শুনুন উস্তাদ সলামত আলির কণ্ঠে খেয়াল


কালিংড়া (কালেংড়া- ও বলা হয়ে থাকে):

ভৈরব- এর খুবই কাছাকাছি আসে। স্বর ব্যবহার প্রায় একই, কেবল আরোহণের সময় ঋষভের ব্যবহার নেই।
ন# স গ ম প দ ন স* ।। স* ন দ প ম গ ঋ স ।।
চলন দ গ ম গ, গ ম ঋ স, ঋ ন# স ঋ গ
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'অরূপবীণা রূপের আড়ালে'|
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর গাওয়া শ্যামাসঙ্গীত 'যতনে হৃদয়ে রেখো' (কমলাকান্ত রচিত);


যোগিয়া:

রাগটিতে গান্ধারের ব্যবহার খুবই প্রচ্ছন্ন, লাগে না বললেই চলে। বাকী স্বর ভৈরবের মতনই, তবে কোমল নিষাদ (ণ)- ও অল্প ব্যবহার হয়ে থাকে।
আরোহণে স ঋ ম প দ স*।
অবরোহণে স* ন দ ম প দ ম গ ঋ স।
চলন ম ম প দ, প দ স* দ, ম প দ ম গ ঋ স।
প্রথমে শুনুন উস্তাদ আবদুল করীম খানের কণ্ঠে ঠুমরী 'পিয়া কে মিলন কি আশ';
নজরুলগীতি 'সাজিয়াছো যোগী';
সব শেষে শুনুন 'গুঞ্জ উঠি শেহনাই' ছায়াছবি থেকে মহম্মদ রফীর গাওয়া 'কহে দো কোই না করে য়ঁহা প্যার';


রামকলি (রামকেলি- ও বলা হয়ে থাকে)

স্বর লাগছে স ঋ গ ম হ্ম প দ ণ ন
চলন স গ ম প প হ্ম প গ, গ ম প গ ম ঋ স, ন# স গ ম প, প দ ণ দ প

প্রথমে শুনুন পণ্ডিত ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের 'জাগো আলোক লগনে';
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'স্বপন যদি ভাঙিলে';
সব শেষে শুনুন পন্ডিত অনন্ত মনোহর যোশীর কণ্ঠে;


এর পরে আসি রাগ নটভৈরব- এ। স্বর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভৈরবের মতনই, কেবল কোমল ঋষভ না লেগে লাগে স্বাভাবিক ঋষভ (র)
আরোহণ স র গ ম প দ ন স*
অবরোহণ স* ন দ প ম গ র স
চলন ন# স দ# প#, স র গ ম, গ ম র স

প্রথমে শুনুন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে 'শংকর করে ডমরু';
ষাটের দশকে মানবেন্দ্র মুখোপধ্যায়- র গাওয়া গানটি অনেকেরই মনে থাকার কথা- .বনে নয় মনে মোর';

এর পরে আসব বেলার কয়েকটি রাগে অর্থাত্ সকাল দশটা থেকে মধ্যাহ্ন পেরিয়ে দুপুর দুটো পর্যন্ত। এই সময়ের রাগ খুব বেশী নেই। তার মধ্যে থেকে তিনটি রাগ বেছে নেব।


আলাহিয়া বিলাবল (বিলাবল):

রাগটি সাতটি স্বাভাবিক স্বর নিয়ে স, র, গ, ম, প, ধ, ন। চলনও আরোহণের সময় পরপর তবে অবরোহণের সময় একটু ঘুরে ফিরে আর কোমল নিষাদ ( ণ ) লাগিয়ে। যেমন ধরুন
ম গ র গ প, ন ধ ন স*, স* ধ ণ ধ প, ম র গ প, ম র স।

প্রথমে শুনুন উস্তাদ সলামত আলির কণ্ঠে;
হিন্দী ছায়াছবি বাওয়ারচি- তে মান্না দে ও অন্যান্য শিল্পীর কণ্ঠে 'ভোর আয়ী গয়া উজিয়ারা';
রবীন্দ্র সঙ্গীত 'বসে আছি হে'।


গৌড়সারং:

এই রাগটিও মূলত সাতটি স্বাভাবিক স্বর নিয়ে, কেবল অবরোহণে তীব্র মধ্যম (হ্ম) লাগে আর আরোহণ, অবরোহণ এবং চলনে স্বরের ব্যবহার ঘুরে ফিরে, ঠিক যেমন মাষ্টার মশাই গলা সাধবার সময় করতে বলেন।
আরোহণ স গ র ম গ প ম ধ প ন ধ স*
অবরোহণ স* ধ ন প ধ হ্ম প গ ম র ম গ প র স
চলন স র ন# স গ, গ র গ র ম গ, প র স

প্রথমে শুনুন পণ্ডিত ডি ভি পলুশকরের কণ্ঠে;
মানবেন্দ্র মুখোপধ্যায়ের একটি গান আছে 'যদি আমাকে দেখো তুমি উদাসী', গানের শুরুটা একই সুরে। এ ছাড়া ষাটের দশকের ছায়াছবি বেনারসী- তে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রুমা গুহ ঠাকুরতা ছিলেন) একই রাগে একটি গান ছিল 'মেরা মন নন্দলাল কো'। গান দুটি এই আসরে উপস্থাপন করতে পারছি না বলে দু:খিত।
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'তরুতলে ছিন্নবৃন্ত';
১৯৫৩ সনে মুক্তি পাওয়া হমদর্দ ছায়াছবিতে লতা মনগেশকর ও মান্না দের কণ্ঠে শুনুন 'ঋতু আয়ে ঋতু যায়ে'


বৃন্দাবনী সারং:

১৯৫২ বা ১৯৫৩ সনে ঢুলী বলে একটি ছায়াছবি মুক্তি পেয়েছিল; অনেকের মনে থাকতে পারে। অভিনয়ে ছিলেন সুচিত্রা সেন, মালা সিনহা, বিকাশ রায় প্রভৃতি। রাজেন সরকারের সুরে প্রচূর ভালো গান ছিল যা গেয়েছিলেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, যূথিকা রায় প্রভৃতি। সেই ছবিটিতে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া একটি গান ছিল 'নিঙাড়িয়া নীল শাড়ী'। গানটি বৃন্দাবনী সারং- এর একটি সুন্দর উদাহরণ।
গান্ধার এবং ধৈবত বাদে সব স্বরই লাগছে এবং তা স্বাভাবিক রূপে; দুই রূপের নিষাদ ব্যবহার হয়; স্বর যখন উঠছে তখন স্বাভাবিক নিষাদ ন , আর স্বর যখন নামছে তখন কোমল রূপ ণ। মানে আরোহণ ও অবরোহণ এই রকম দাঁড়াল:
ন# স র ম প ন স*।। স* ণ প ম র স* ।।
চলন র ম প ণ প ম র, প ম র ন# র স।
উদাহরণের মধ্যে একটি গান আগেই বলেছি। কিন্তু গানটি শোনাতে পারছি না। ১৯৫৪ সনে মুক্তি পাওয়া নাগিন ছবিতে লতার গাওয়া গান 'জাদুগর সৈঁয়া' মনে আসছে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত 'অন্ধকারের উত্স হতে';
শেষে আনছি পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর গাওয়া 'তুম রব তুম সাহেব' ;

দিনের রাগ এইখানেই শেষ করছি। এর আগে এই কটি রাগের পরিচিতি দিয়েছি।
ভৈরবী, আশাবরী এবং জৌনপুরী- রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৪। দেশী- রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৯। দেশকার- রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৫

আরো কিছু রাগ আছে এই সময়ের, সেগুলি পরে দেখা যাবে।

(চলবে)


পুষ্পেন্দু মুখোপাধ্যায়

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।