পঞ্চস্বরের
মাধুরী
স্বাভাবিক ও কোমল তথা
তীব্র (কড়ি) মিলিয়ে মোট বারোটি স্বর আছে একটি সপ্তকে।
কমপক্ষে পাঁচটি স্বর ব্যবহার হয় একটি রাগে। পাঁচ স্বরের
রাগে একটি বৈশিষ্ট্য হল শুধু পরপর স্বরগুলি গেয়ে (বা
বাজিয়ে) রাগটিকে চেনা যায়। চলন দিয়ে আলাদা ভবে নির্ণয়
করার প্রয়োজন হয় না)। ব্যাতিক্রম ভূপালি ও দেশকার
রাগ (রাগ দুটি রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৫- এ দেখান হয়েছে),
যেখানে স্বরগুলির চলন খেয়ালে রাখতে হয়।
এর আগে পাঁচটি স্বরের
এই কটি রাগ উল্লেখ করেছি-
রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৪- মালকোষ;
রাগসঙ্গীত প্রবেশিকা ৫- ভুপালী, দেশকার, হংসধবনি,
দুর্গা, ধানি, চন্দ্রকোস ও কৌশিক ধবনি।
এখন আরও কয়েকটি দেখা যাক।
আভোগি (আভোগি কাণাড়া)
স্বর লাগছে স র জ্ঞ ম
ধ;
প্রথমে পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর কণ্ঠে একটি খেয়াল
শুনুন;
এবারে শুনুন পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে
বসন্তবাহার (বিকাশ রায় পরিচালিত) ছায়াছবি থেকে 'চরণের
ধ্বনি শুনে'।
কলাবতী, লীলাবতী ও শিবরঞ্জনী
কলাবতী রাগে স্বর লাগছে
স গ প ধ ণ;
১৯৬৩ সালে সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য
গেয়েছিলেন 'ঝনন
ঝনন বাজে'; অনেকেরই হয়ত মনে বা সংগ্রহে আছে। একই
সুরে হিন্দী ছায়াছবি চাঁদ ঔর সুরজ- থেকে লতা
মনগেশকরের কণ্ঠে শুনুন । (একটু খেয়াল করবেন অন্তরাতে
স্বাভাবিক মধ্যম লাগান হয়েছে)।
দিল দিয়া দর্দ লিয়া ছায়াছবিতে মহম্মদ রফি গেয়েছেন
কলাবতী রাগের গান 'কোই
সাগর দিল যো বহলাতা নহি'; গানটি অপূর্ব।
সব শেষে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠে শুনুন 'ছলনা
জানি তবু'।
লীলাবতী রাগে স্বর লাগে
স র জ্ঞ প দ । রাগটির খুব একটা প্রচলন নেই।
লীলাবতীর খুব কাছাকাছি আসে শিবরঞ্জনী। তফাতের মধ্যে
এখানে ধৈবত স্বাভাবিক। অর্থাত্ স্বর ব্যবহার হচ্ছে
স র জ্ঞ প ধ। (অবরোহণের সময় কোমল ধৈবত- ও ব্যবহার
হয় কদাচিত)
রাজ কাপুর পরিচালিত ও অভিনীত সঙ্গম ছায়াছবির কথা হয়ত
মনে থাকতে পারে। এতে লতা মনগেশকরের গাওয়া 'ও
মেরে সনম' গানটি শিবরঞ্জনীর উপর বাঁধা। উত্তমকুমার
অভিনীত আনন্দ আশ্রম ছায়াছবির গান 'আশা
ছিল, ভালোবাসা ছিল', কিশোরকুমারের গাওয়া গানটিও
একই রাগে।
বিভাস
এবারে আসি রাগ বিভাসে।
এতে স্বর লাগে স ঋ গ প ধ
রেখা ও আমজাদ খান অভিনীত উত্সব ছায়াছবি থেকে সুরেশ
ওয়াদকরের কণ্ঠে গাওয়া 'সাঁঝ
ঢলে' গানটি মারোয়া রাগে।
রাগটির
শাস্ত্রীয় রূপ শুনুন কিশোরী আমনকারের কন্ঠে।
বিভাস রাগের আর একটি রূপ আছে যাতে স্বাভাবিক ধৈবতের
বদলে কোমল ধৈবত ব্যবহার হয়। একটি উদাহরণ হল আকাশবাণীর
বাত্সরিক প্রভাতী অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী গীতি আলেখ্য-
তে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া 'তব অচিন্ত্যরূপ
চরিত'। গানটি সকলেই শুনে থাকবেন।
এ ছাড়া আরও রাগ পাওয়া
যায়, যথা: ভূপালী তোড়ী (স ঋ জ্ঞ প দ); একটু বিলাশখানি
তোড়ীর আভাস আছে), বৈরাগী (স ঋ ম প ণ); দুটি বিখ্যাত
গান আছে, 'কে ডাকে আমারে' ও 'ভবানী দয়ানী', হিন্দোল
(স গ হ্ম ধ ন); পণ্ডিত তারাপদ চক্রবর্তীর গাওয়া একটি
গান আছে 'দ্রুমে দ্রুমে লতা'।
সাধ্যমতো অনেকগুলি রাগের
পরিচয় দিয়েছি। পর্যায় শেষ করব তিনটি রাগের পরিচয় দিয়ে।
মারু
বেহাগ
স্বর লাগে স র গ ম হ্ম
প ধ ন;
চলন স ম গ হ্ম প, ন ধ প হ্ম গ স র স;
নমুনা হিসাবে প্রথমে পণ্ডিত
ভীমসেন জোশীর কণ্ঠে শুনুন '।
প্রায় একই সুরে হিন্দী ছায়াছবি এক রাজ- এর 'পায়লবালি
দেখ না' গান কিশোর কুমারের গাওয়া।
একই রাগের উপর গান আছে শচীন দেব বর্মনের গাওয়া 'ফেলিয়া
কুসুমসাজ'।
রাগ নন্দ (আনন্দী কল্যাণ)
স্বর লাগছে স, র, গ, ম,
হ্ম, প, ধ ন;
চলন স গ ম গ প, স গ ম ধ প র স;
হিন্দী ছায়াছবি মেরা সায়া থেকে একটি গান শুনুন লতা
মনগেশকরের গাওয়া 'তু
যাহাঁ যাহাঁ চলেগা';
উস্তাদ আমীর খানের কণ্ঠে খেয়াল শুনুন নন্দ রাগে ।
নট বেহাগ
স্বর লাগে স, র, গ, ম, প, ধ, ণ ও ন
চলন স র র গ ম প ম প গ, গ ম প গ র স
শচীন দেব বর্মনের একটি প্রসিদ্ধ গান আছে 'ঝন
ঝন ঝন মঞ্জীর'।
সুরটি সুরকার হিন্দী ছায়াছবি বুঝদিল- এ ব্যবহার করেছিলেন,
গেয়েছিলেন লতা মনগেশকর।
খুবসুরত ছায়াছবিতে লতা মনগেশকরের গাওয়া এই রাগের গানটি
শুনুন 'পিয়া
বাবরি'