তবে তাই হোক।
এই যাত্রায় কিছু রাতের আর মধ্য রাতের রাগ খুঁজি।
এ দিকে শ্রাবণ মাস তো এসে গেল। শুরু করি একটি শ্রাবণ
এর গান
দিয়ে; গানটি হিন্দী ছায়াছবি মলহার (১৯৫১)-এ লতা মঙ্গেশকর
গেয়েছিলেন। গানটি গৌড় মলহার রাগে।
গৌড়
মলহার (বাঙলায় গৌড় মল্লার):
স্বর ব্যবহার
স র গ ম প ধ ণ ন (তবে খেয়াল রাখবেন যে আরোহণে ন এবং
অবরোহণে ণ লাগছে
চলন ম গ র প, ম প ধ ণ ধ প, ম প ধ স* ধ প ম প ম, গ
র গ স
আরও একটি উদাহরণ
পাওয়া যাবে হিন্দী ছায়াছবি বরসাত কি রাত(১৯৬০)- এর
"গরজত
বরসত শাওন আয়ো রে" গানে (শিল্পী কমল বারোট
ও আরো অনেকে) ।
রবীন্দ্রসঙ্গীতে
"মোর
ভাবনারে কি হাওয়ায় ",
" কহো কহো মোরে প্রিয়ে "(শ্যামা),
" গুরু গুরু গুরু গুরু ঘন মেঘ "(চিত্রাঙ্গদা)।
অজয় চক্রবর্তী-
র গাওয়া একটি গান "শ্রাবণ মেঘমায়া " (কথা
ও সুর জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ)
রাগটি পরিবেশনের প্রশস্ত সময় সন্ধ্যা আটটার পর।
মিঞা
মলহার (বাঙলায় মিঞা মল্লার):
এটিও বর্ষা ঋতুর
রাগ এবং এই রাগেও গৌড় মলহার রাগের মত স র গ ম প ধ
ণ ন স্বরগুলি লাগছে। তবে চলনে তফাত্
স ধ# ণ# ম# প, ণ# ধ# ন# স, ম র প জ্ঞ ম র স
আরও একটি কথা গৌড় মলহার- র তুলনায় এটি নবীন, প্রসিদ্ধ
তানসেন- র সৃষ্টি। রাগটিতে নীচুর দিকের স্বরের প্রাধান্য।
পরিবেশনের সময় সন্ধ্যা আটটা থেকে দশটার মধ্যে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত
"
কোথা যে উধাও হল ";
হিন্দী ছায়াছবি " যব সে তুমহে দেখা "- তে
মান্না দে এই রাগে একটি গান গেয়েছেন-
"মহম্মদ শাহ রঙ্গিলে"।
রাত দশটা ত বাজল, জ্যোত্স্না আগতপ্রায়। চলুন জ্যোত্স্না
রাতে সবাই মিলে বনে যাই ।
গানটি অপূর্ব একবাক্যে সবাই বলবেন। গানটি বেহাগ রাগে।
বিহাগ
(বাঙলায় বেহাগ):
বিহাগ রাগে স্বর
লাগছে স র গ ম হ্ম প ধ ন
পরিবেশনের সময় রাত দশ-টার পরে রাত বারোটা পর্যন্ত।
চলন ন# স ম গ, হ্ম ধ গ ম গ, গ ম প ম গ র স
কথিত আছে, আগে এটি দিনের বেলায় গাওয়া হত। দেখা গেল,
গান শুনে সবাই কাজ গুবলেট করে গান শুনছে। তাই রাজার
আদেশে রাগটির সময় রাত্র করে দেওয়া হল।
অসাধারণ সব গান আছে বিহাগ রাগে। একটি উপরে দেওয়া আছে।
আরও দেওয়া হল।
রবীন্দ্রসঙ্গীত
"
জাগে নাথ ",
" কে
যায় অমৃতধাম যাত্রী ";
হিন্দী ছায়াছবিতে
তেরে
সুর ঔর মেরে গীত (ছবির নাম- গুঞ্জ উঠি সেহনাই;
শিল্পী লতা মঙ্গেশকর)
বন থেকে দেশে ফিরি, তবে বানান পালটিয়ে "দেস"
করে।
রাগ
দেস (বাঙলা ভাষায় দেশ লেখা হয়):
এটি রাত আটটা
থেকে দশটা পর্যন্ত গাওয়া হয়। স্বাভাবিক নি (অর্থাত্
ন) ছাড়াও কোমল নি (অর্থাত্ ণ) প্রয়োগ করা হয়। তাহলে
মোট স্বর ব্যবহার দাঁড়াল স র গ ম প ধ ণ ন।
চলন ন# স র ম গ র, র ম প ণ ধ প, প ধ ম গ র, র প ম
গ র, র গ ন# স
সন্ধ্যা মুখোপধ্যায়-
র গাওয়া একটি অসাধারণ গান আছে " পথ
ছড়ো ওগো শ্যাম "। অবশ্য সন্ধ্যা মুখোপধ্যায়
মানেই অসাধারণ গান।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের
মধ্যে " এসো
শ্যামলসুন্দর ",
" এ ভারতে রাখো নিত্য " ;
আরও বেশ কিছু গান আছে।
নজরুলগীতি "
পিয়া পিয়া পিয়া পাপিয়া " মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-
র গাওয়া।
দেস (শ) থেকে বাগে (বাগান) ঢুকি।
রাগ
বাগেশ্রী:
স্বর লাগে স
র জ্ঞ ম প ধ ণ; পরিবেশনের সময় রাত দশটা থেকে মধ্য
রাত পর্যন্ত।
চলন ধ# ণ# স
ম, ম জ্ঞ ম ধ, ধ ধ ম প ধ জ্ঞ র জ্ঞ, ম জ্ঞ র স।
শুরুই করি তপন
সিনহা পরিচালিত "ক্ষুধিত পাষাণ " ছায়াছবির
"কেইসে কাটে রজনী " গানটি দিয়ে; উস্তাদ
আমীর খনের গাওয়া।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের
মধ্যে আছে " নিশীথশয়নে ভেবে রাখি মনে ",
"আমার
মিলন লাগি তুমি " এবং অবশ্যই "যে
রাতে মোর দুয়ারগুলি "।
স্বামী বিবেকানন্দের
রচিত একটি গান আছে "নাহি
সূর্য, নাহি জ্যোতি"।
অজয় চক্রবর্তী- র গাওয়া মাতৃসঙ্গীত "সংসারেরই
দোলনাতে " (কবি কাজী নজরুল রচিত);
পান্নালাল ভট্টাচার্য-র গাওয়া একটি শ্যামাসঙ্গীত (কবি
কাজী নজরুল রচিত) " আর লুকাবি কোথায় মা কালী
"
হিন্দী ছায়াছবি
" প্রাইভেট সেক্রেটারী"- তে মান্না দে গেয়েছেন
“ যা রে বেইমান তুঝে "।
এই সংখ্যা শেষ
করি রাগ রাগেশ্রী দিয়ে।
রাগ
রাগেশ্রী:
স্বর লাগছে স
র গ ম ধ ণ তবে প্রায়শই ন ও ব্যবহার হয়।
চলন র স ণ# ধ#, ম# ধ# ণ# স গ, গ ম ধ গ ম র স।
শুরুই করি উস্তাদ
বড়ে গুলাম আলি খান সাহেব- র একটি গান "শুভ
দিন আও " দিয়ে। " মুঘল-এ-আজম "
ছায়াছবির।
হিন্দী ছায়াছবি " দেখ কবীরা রোয়া " (১৯৫৭)-
তে মান্না গেয়েছেন "কওন
আয়া মেরে"। মান্না দে- র একটি গান আছে "
অভিমানে চলে যেওনা "।
পুনশ্চ:
এক পাঠক ( আমার ধারণা ছিল আমার লেখা কেউ পড়েন না,
বা পড়লেও মন দেবার প্রয়োজন হয় না) অনুরোধ করেছেন আগের
কিস্তিতে লেখা ভূপলি ও দেশকার রাগের তফাতগুলি আরও
একটু বিশদ করতে। হয়তো এতে রাগ দুটিকে আলাদা করে চেনার
সুবিধা হবে।
একটু সারণী করে সাজিয়ে দিলে বোধ হয় অল্প আয়াসে বোঝা
যাবে।
এবারে
দেখুন (এবং এই রাগের গানের সময় মিলিয়ে নেবেন) ভূপালী
রাগটিতে গ স্বরটির প্রয়োগই বেশী অন্য স্বরগুলির তুলনায়।
গ স্বরটি যেন মধ্যমণি- নেতা। এখানে বাদী গ।
দেশকারের বেলায় বাদী স্বর ধ। অর্থাত্ প্রাধান্য ধ
স্বরটির।
এ ছাড়া দেখবেন ভুপালী- তে মন্দ্র সপ্তকের স থেকে প
স্বরের মধ্যে রাগটি ঘোরা ফেরা করে। দেশকার- র বেলা
মন্দ্র সপ্তকের প থেকে স* পর্যন্ত ঘোরা ফেরা করে।
তবে এসব তত্বের কচকচিতে না গিয়ে গানের পর গান শোনাই
সবচেয়ে কাজের হবে। মুস্কিল হল, ভূপালী বহুল প্রচলিত।
তুলনায় দেশকার বেশী শোনা যায় না।
(চলবে)