প্রথম পাতা

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

ভ্রমণ কাহিনী

নভেম্বর ৩০, ২০১৫

 

পুরনো অ্যালবাম

কেয়া মুখোপাধ্যায়


(১২)

(আগের অংশ) ল্যুভর শুধু মিউজিয়াম নয়। ল্যুভর যেন একটা শহর। মিউজিয়াম শহর। এক একটা ঘর যেন এক এক রূপকথা। অতীত ইতিহাসের এক একটি পর্যায়ের আর জীবন যাপনের ইতিহাস বুকে নিয়ে আমাদের অপেক্ষায়। বহু যুগ ধরে বহু মানুষের ধৈর্য, অধ্যবসায়, শিল্পমগ্নতা আর স্বপ্নসাধনার ইতিহাস যেন স্থান পেয়েছে এখানে।

টিকিটের অনেকগুলো লাইন। ক্রেডিট কার্ডে কাটলে লাইন দ্রুত এগোচ্ছে। কিন্তু তখন আমাদের কারোরই ক্রেডিট কার্ড ছিল না। অগত্যা অপেক্ষা। টিকিট হাতে পাওয়া অবধি যেন এক বিস্ময় অপেক্ষা করেছিল। টিকিটের এক পিঠে ছোট্ট করে ছাপা ল্যুভরের নানা ছবি। এক একজনের এক একরকম। কি আশ্চর্য! আমার টিকিটে ভ্যান গখের বিখ্যাত আত্মপ্রতিকৃতির এক ছোট্ট রেপ্লিকা! সে যে কি অনাবিল আনন্দ! কাচের পিরামিড-এর তলায় একপাশে সরে গিয়ে ম্যাপ হাতে নিয়ে দেখছি কোন দিক থেকে শুরু করব, সৌর খুব নরম করে বলল,
- বলছি কি, আমার টিকিটটার সঙ্গে তোরটা পাল্টা পালটি করবি?
- কেন রে? কি আবদার! কক্ষনো না। একদম না।
- ওটা আমার খুব প্রিয় ছবি।
- আমারও।
- আমারটা শুধু মিউজিয়ামের বাইরেটার ছবি। ভাল্লাগে না!
সৌর রিনির লেগ পুল করে সুযোগ পেলেই। এযাত্রা, বলাই বাহুল্য, এরকম একটা সুযোগ রিনি ছাড়ল না।
- আহা রে! কাঁদিস না প্লিজ। সবাই দেখছে তোকে। চল, একটা ক্যান্ডি কিনে দেব।
- চুপ কর। বাজে বকিস না।
রেগেমেগে হাঁটা লাগাল সৌর।
- এক মিনিট, অনি বলল, এই যে কুম্ভমেলার চারগুণ ভিড় এখানে, হারিয়ে গেলে সুপার কেলো কিন্তু। একসঙ্গে হাঁটব আমরা। কেউ এদিক ওদিক যাবি না একদম।

সামনেই সুদীর্ঘ এক গ্যালারীর ভিড়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে শুরু হল এগিয়ে চলা আর ছবি দেখা। এই গ্যালারীই Grande Galerie। ফ্রান্স আর ইতালির প্রাচীন চিত্রশিল্পের সম্ভার এখানে। নেপোলিয়ানের সময় ইতালি আর অষ্ট্রিয়ার সঙ্গে এক শান্তি চুক্তিতে ইতালির ভ্যাটিকান ও ভেনেশিয়ান রিপাবলিকের প্রচুর প্রাচীন চিত্র ও ভাস্কর্য ফ্রান্স অধিকার করে নেয়। এর অনেক ছবিই ইতালির রেনেসাঁর সময়ে আঁকা। তাছাড়া ছিল নেপোলিয়ানের নিজস্ব লুটতরাজ। সেসব ছবিই গ্র্যান্ড গ্যালারীর দু’দিকের দেওয়ালে সাজানো। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা অনেক ছবি আছে এই গ্র্যান্ড গ্যালারিতে, মোনালিসা বাদে। এই ছবিগুলো মোনালিসার মত ছবিটির মতো বিখ্যাত হতে পারেনি। কিন্তু লিওনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্পচেতনার নিজস্বতায় তারাও অনন্য, ব্যতিক্রমী।

শুধু শিল্পকলা বা ভাস্কর্য নয়, ল্যুভরের প্রতিটি দেওয়াল, সিলিং, ছাদ সবই মন কেড়ে নেয় তাদের শিল্পিত সুষমায়। কোনটা ছেড়ে যে কোনটা দেখি!



ছবিঃ Grande Galerie

ফরাসী বিপ্লবের আগে এই সুদীর্ঘ গ্র্যান্ড গ্যালারী দিয়ে ল্যুভর রাজপ্রাসাদ আর তুলারিস প্রাসাদ সরাসরি যুক্ত ছিল। ল্যুভরের এই অংশ তখন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ হলওয়ে। ফরাসী বিপ্লবে তুলারিস প্রাসাদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল। ল্যুভরের প্রাসাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তুলারিসের সংযোগ। দৈর্ঘ্যে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেল এই হলওয়ে। পরে, যখন ল্যুভরে প্রাসাদ পাবলিক মিউজিয়ামে পরিণত হল, এই দীর্ঘ করিডোরই হয়ে গেল ‘গ্র্যান্ড গ্যালারী’। ফরাসী বিপ্লবের ঘোষণা করা হল, রাজপরিবার থেকে শুরু করে ফ্রান্সের সব অর্থবান শিল্প সংগ্রাহকদের সংগৃহীত শিল্পই জাতীয় সম্পত্তি। ফ্রান্সের জনসাধারণের জন্যে এই গ্র্যান্ড গ্যালারীতেই প্রদর্শন করা হয়েছিল ফ্রান্সের নানা জায়গার শিল্প সংগ্রহ। সে ছিল ফরাসীদের বিজয় উৎসবের দিন।

একটু একটু করে এগোই গ্র্যান্ড গ্যালারী দিয়ে। আনাচ কানাচে যেন সোনালি অতীতের মায়াবী ঐশ্বর্য-ভরা রূপকথার আল্পনা। টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে গেছি হাজার বছর। জীয়ন কাঠির ছোঁয়ার অতীতের রূপকথারা জেগে উঠেছে ল্যুভরের ঘর, হলওয়ে, সিঁড়ি, সবখানে। চোখে যেন ঝিলমিল লেগে যায়!

‘এসো তবে আমরা ভালবাসি, এসো ভালবাসি
ধাবমান প্রহরকে উপভোগ করি দ্রুত
মানুষের কোনো বন্দর নেই
সময়ের কোনো তটরেখা নেই
শুধু বয়ে চলে, আমরাও পার হয়ে যাই!
-- আলফঁস দ্যা লামারতিন

সময়ের তটরেখা পেরিয়ে আমরাও পিছিয়ে যাই হাজার বছর। পৃথিবীর বুকে বন্দী ছিল কঠিন শ্বেত পাথর। সেই প্রাণহীন শীতলতায় প্রাণের ছোঁয়া এসেছে ছেনি হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে। পাথরে ফুটেছে আবেগ, রূপ, নানা বিভঙ্গ। পাথর হয়ে উঠেছে অমূল্য। অমরত্ব পেয়েছে শিল্প। আর শিল্পীও। সেই অমরত্বকে ছুঁয়ে দেখতেই ল্যুভরে আসেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন। দু’চোখ ভরে দেখেন পাথরের গায়ে থমকে যাওয়া সময়।

এগোতে এগোতে ক্রমশ একটু হাল্কা হয় গ্র্যান্ড গ্যালারীর ভিড়। ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের ঘরগুলোতে।
ল্যুভরের Denon wing- এর একটি অংশ গ্রীক, Etruscan আর রোমান যুগের ভাস্কর্যের জন্যে নিবেদিত। ইউরোপের গ্রীস, ইতালি আর মেডিটেরিয়ান অববাহিকার সুবিশাল অঞ্চলের আশ্চর্য শিল্প সম্ভার আর প্রাচীন ইতিহাস উঠে এসেছে ল্যুভরের এই অংশে। গ্রীসের নানা জায়গায়, দ্বীপে প্রত্নতাত্বিক খনন করে প্রাচীন গ্রীসের প্রচুর ভাস্কর্য, ভাস্কর্যের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার সেই নিদর্শনের সংগ্রহগুলোকে দেখা যায় এই অংশে।
এখানে প্রথম স্থান পেয়েছিল সতেরো ও আঠারো শতাব্দীর ভাস্কর্য। পরে আরও প্রাচীন ভাস্কর্য এসেছে এখানে। আছে ফরাসী রাজ পরিবারের ভাস্কর্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রাচীন রোমান ভাস্কর্য। এই অংশের শিল্প সংগ্রহ প্রচুর।
থমকে যাই ল্যুভরের বিশাল সিঁড়ি (Escalier Daru)-র সামনে গিয়ে। ঠিক সামনে গ্রীসের Samothrace দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার এক অপূর্ব মাস্টারপিস, Winged Victory of Samothrace বা Nike of Samothrace। মার্বেল পাথরে তৈরি আট ফুট উচ্চতার, নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়ানো, মস্তকহীন, ডানামেলা এক ভাস্কর্য। তৈরি গ্রীক দেবী Nike এর মর্মরমূর্তি। মস্তকহীন বলেই কি এমন রহস্যময় লাগে? এ মূর্তি শুধু গ্রীক দেবী Nike এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত নয়। এ মূর্তি ঘোষণা করে সমুদ্র যুদ্ধের বিজয়। দেহের দু’পাশে মেলে দেওয়া খোলা ডানা মাঝখানে যেন থমকে আছে যুদ্ধ জয়ের প্রশান্তি। উড়ন্ত ডানার সূক্ষ্মতায় আর দেহের বিভঙ্গে তীব্র গতি। অথচ, সে গতি এসে হঠাৎ স্থির হয়ে গেছে যেন। দেবী Nike-কে জড়িয়ে আছে এক পাথুরে কাপড়। সমুদ্রের তীব্র হাওয়ায় সেই পাথুরে কাপড়ের এলোমেলো উড়ে যাওয়ার কি অসামান্য প্রয়াস পাথরে সূক্ষ্ম কাজে। আজও প্রতিদিন ল্যুভরে এসে হাজার হাজার মানুষ দেখে এই মর্মরমূর্তির তীব্র গতি আর স্থবিরতার আশ্চর্য ভঙ্গিমাকে। এ মূর্তি দেখে মনে হয় শিল্পীর কতখানি নিমগ্নতা, আর আশ্চর্য প্যাশন থাকলে তবে না পাথরের বুকে অনন্ত আগামীর জন্যে জাগিয়ে দেওয়া যায় সমুদ্রের দুরন্ত হাওয়ার এই চঞ্চলতা!



ছবিঃ Nike

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঠিক আগে ল্যুভরের বিখ্যাত নানা শিল্পসংগ্রহ সরিয়ে নিয়ে ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই সময় সুবিশাল এই Nike of Samothrace কেও ল্যুভরে থেকে সরিয়ে নিয়ে প্যারিসের বাইরে Château de Valençay তে রাখা হয়েছিল তখন। পরে যথারীতি আবার ল্যুভরে ফিরে আসেন দেবী Nike ।

কি ভিড় এর সামনে! মূর্তিটির একদম সামনে যাওয়াই মুশকিল। অসামান্য স্থাপত্য আর ভাস্কর্য দেখতে দেখতে বিস্ময়ের শেষ থাকে না। শ্বেত পাথর, গ্রানাইট কি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি কোনটা। আবার কারও ওপরে সোনার কারুকাজ। মানুষের সমান মাপের মূর্তিগুলো কি জীবন্ত! মুখের অভিব্যক্তি, শরীরের প্রত্যেকটা পেশীর আশ্চর্য রূপায়ণ পাথরে প্রাণ ফুটিয়েছে যেন! দেখা হয়ে যায় গ্রীক প্রেম-সৌন্দর্যের দেবী ‘ভেনাস দ্য মিলো’-র সঙ্গে। শ্বেতপাথরে ফুটিয়ে তোলা নারীর সৌন্দর্যের আর শিল্পকর্মের এক অনন্য নিদর্শন এই মূর্তিটি। তৈরি হয়েছিল গ্রীসে, প্রায় ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। কথিত, শোনা যায় দ্বিখন্ডিত অবস্থায় এক কৃষক এই মূর্তিটি খুঁজে পান ভূমধ্যসাগরের ‘মিলো’ নামের এক দ্বীপে এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে। ফরাসি নৌ-সেনারা পরে সেটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।



ছবিঃ ‘ভেনাস দ্য মিলো’

১৬৯৭ সালে রিসউইক-এর ট্রিটি সফল হওয়ার আর ফ্রান্সের গৌরব ফিরে আসার সম্মানে দুটি মূর্তি তৈরির আদেশ দেন ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই। উপকথার পেগেসাস বা ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়া মার্কারি (দেবতাদের বার্তাবাহক আর ব্যবসা বাণিজ্যের দেবতা) আর ফেম। সৃষ্টি হয়েছিল এন্টোনি কয়সেভক্সের ‘দ্য ফেম অ্যান্ড মার্কারি’।
১৬৮২-৮৫ সময়কালে মার্টিন দেজার্দিন সৃষ্টি করলেন ‘চার বন্দী’। এটি ‘নিজমেজেন ট্রিটি’তে ফ্রান্সের কাছে পরাজিত চার দেশ, স্পেন, রোমান এম্পায়ার, ব্রেন্ডেনবুর্জ আর হল্যান্ডের প্রতীক। মানুষের থেকেও বড় আকারের ব্রোঞ্জের চারটি মূর্তি। পাশে রাখা ঢাল তলোয়ার, কারও হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। চারজনের মুখের অভিব্যক্তি আর বসার ভঙ্গি চার রকম। একজন প্রকাশ করছে রাগ, একজন আশা, একজন উদাসীনতা আর অন্যজন শোক।



মার্টিন দেজার্দিন সৃষ্টি করলেন ‘চার বন্দী’

এরপর এক রহস্যময়ীর সন্ধানে আমাদের যাত্রা। ফার্স্ট ফ্লোরের গ্রান্ড গ্যালারির ৬ নম্বর ঘরে পৃথিবীজোড়া খ্যাতি নিয়ে বিরাজমান সেই রহস্যময়ী। মোনালিসা। সে যে কি অসম্ভব ভিড়! এক পলকের একটু দেখা আর ছবি তোলার জন্যে লড়ে যাচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ট্যুরিস্টরা। একজন হয়তো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ক্যামেরা তাক করে শাটার টিপলেন আর ঠিক সেই মুহূর্তে দুম করে সামনে চলে এলেন আর কেউ। ফলে মোনালিসার বদলে আর কারো টাকের ছবি উঠে গেল হয়তো। এ সমস্যা সারাক্ষণ হচ্ছিল। নজর কেড়ে নেয় মোনালিসার ঠিক উল্টো দিকে দেওয়াল জোড়া ‘The Wedding Feast at Cana।’ যীশুর জল থেকে ওয়াইন তৈরির গল্প আঁকা ছবিতে। তাছাড়া এই ঘরের অন্যান্য দেওয়াল জুড়ে অপূর্ব কিছু ছবি আছে, কিন্তু সবার নজর মোনালিসার ভুবন ভোলানো মুচকি হাসির দিকেই। যীশু খ্রিস্ট তার জীবনে যে সমস্ত আশ্চর্য অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তার মধ্যে Cana র বিবাহ উৎসবে জলকে ওয়াইনে পরিণত করা ছিল প্রথম অলৌকিক ঘটনা – বিবাহ অনুষ্ঠানের শেষের দিকে নিমন্ত্রিত যীশু যখন জানতে পারলেন নিমন্ত্রিতদের পরিবেশনের জন্যে ওয়াইন ফুরিয়ে গেছে, তিনি জগে জল ভরে দিতে বললেন আর সেই জলকে তিনি ওয়াইনে পরিণত করে দিলেন। সেই অলৌকিক ঘটনাকে ইউরোপের নানা জায়গায় নানা ভাবে আঁকা হয়েছে। ভেনিসের ইটালিয়ান রেনেসাঁ সময়ের চিত্রশিল্পী Paolo Veronese এঁকেছিলেন এই ছবিটি। বিশাল এই ছবিটি বিবাহ নিমন্ত্রণ ভিড়ের সূক্ষ্মতিসূক্ষ ডিটেলসে পরিপূর্ণ। যীশু সহ একশো ত্রিশ জন এ ছবিতে উপস্থিত নানা স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে। ছবিতে সবাই ব্যস্ত, কেউ নিজের কাজে, য়াবার কেউ নিজের মধ্যে। ছবির ডান দিকে একজন সুদৃশ্য জগ থেকে ওয়াইন ঢালছেন। ছবির একদম মাঝে বসে আছেন যীশু। যীশুর ঠিক পেছনে, উপরের বারান্দায় ভেড়া কাটতে ব্যস্ত কসাই। নীচে বসে বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলছেন দুজন। একি জীবন আর মৃত্যুর মধ্যের ব্যবধানের দ্যোতক? নাকি যীশুর জীবনের পরিণতির ইঙ্গিতবাহী? হয়তো বা বোঝায়, জীবনে সঙ্গীত আর সুরের মতই এক অনিবার্য সত্য মৃত্যু। তেলরঙে আঁকা এই ছবিটি ল্যুভরের সমস্ত চিত্র সংগ্রহের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়। ছবিটি ভেনিসের এক বেনেডিক্ট মঠের দেওয়ালে প্রায় দু’শো বছরের উপরে ঝোলানো ছিল – অষ্টাদশ শতাব্দীতে নেপোলিয়ান ছবিটি লুঠ করে প্যারিস পাঠিয়ে দেন। ওয়ারটার্লু যুদ্ধে নেপোলিয়ান হেরে যাওয়ার পরে ইউরোপের নানা দেশ থেকে লুন্ঠিত শিল্পসামগ্রী ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল ফ্রান্সকে। কিন্তু এই বিশাল ছবিটি ল্যুভর কর্তৃপক্ষ ইতালিকে ফিরিয়ে দেননি।



ছবিঃ The Wedding Feast at Cana।

দৌড় দৌড় দৌড়! এ গ্যালারী থেকে ও গ্যালারী।

নীল নদীর উপত্যকার প্রাগৈতিহাসিক মিশর ও তার সভ্যতাকে ঘিরে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের তীব্র কৌতূহলের সীমানা নেই। সেই রহস্যময় প্রাচীন মিশর যেন জীবন্ত হয়ে উঠে আসে প্যারিসের ল্যুভরের এক অংশে। তুলে ধরে মিশর রহস্যের এক ঝলক। হাজার হাজার বছরের পুরনো মিশর সভ্যতার সেই হাতছানি কি কিছুতেই এড়ানো যায়? সময় চলে যাচ্ছে অথচ কিছুই বুঝি দেখা হল না। আবারো ল্যুভর আসব আমরা একদিন, তার আগে মিশর সভ্যতার উন্মোচন।
অনন্ত সময়ব্যাপী মানব সভ্যতার ইতিহাস, আর তার সৃষ্টিরহস্যকে কি এক জীবনের মাপা সময়টুকুতে জানা এতই সহজ? মিশরের দিকে এগোতে এগোতে মনে মনে উচ্চারণ করতে থাকি, ‘যা দেখেছি, যা পেয়েছি, তুলনা তার নাই...’।

(পরের অংশ)


লেখক পরিচিতি - ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। বর্তমানে আমেরিকার স্যান অ্যান্টোনিওতে প্রবাস-জীবন। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। লেখালেখি শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকে। কলেজ জীবন থেকে রেডিওর প্রতি ভালোবাসা ও আকাশবাণী কলকাতাতে রেডিও জকি প্রায় এক দশক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখার পাশাপাশি বেড়ানো আর গান শোনায় কাটে ছুটির অবকাশ।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.



অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।