ভ্রমণ কাহিনী
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
পুরনো অ্যালবাম
কেয়া মুখোপাধ্যায়
(১৩)
মিশরীয় সভ্যতার এক লিপিকার।
|
(আগের অংশ) এগোতে গিয়ে থমকে
গেলাম একজোড়া ভারি উজ্জ্বল চোখের সামনে। বাঁ হাতে ধরা প্যাপিরাস।
ডান হাতে কলম ধরার ভঙ্গি। বসে থাকা মানুষটির দৃষ্টি কি তীব্র!
মিশরীয় সভ্যতার এক লিপিকার। ‘Scribbe acrroupi’ বা ‘Seated scribe’।
ফরাসী আর্কিওলজিস্ট ম্যারিইয়েটকে ল্যুভর কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছিলেন
ঈজিপ্টে। সেটা ১৮৫২। মিশরীয় সভ্যতার স্থাপত্য, ভাস্কর্যের প্রায়
ছ হাজার নিদর্শন তিনি পাঠিয়েছিলেন প্যারিসে। এই লিপিকার তাঁরই
আবিষ্কার। ল্যুভরের ঈজিপশিয়ান অ্যান্টিক সংগ্রহশালার প্রথম ডিরেক্টরও
ম্যারিয়েট। ইউরোপ আর আমেরিকার বিত্তশালী কিছু মানুষ-ও তাঁদের ব্যক্তিগত
সম্ভার থেকে নিদর্শন তুলে দিয়েছেন ল্যুভরে। অবশ্য নেপোলিয়ানের
অভিযান আর লুটতরাজের ইতিহাসও বাড়িয়েছে সংগ্রহ। এভাবেই ল্যুভরের
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মিশরীয় সভ্যতার নানা অ্যান্টিকে সমৃদ্ধ
ল্যুভরের ঈজিপশিয়ান গ্যালারি।
নানা অ্যান্টিকে সমৃদ্ধ ল্যুভরের Galerie d’Apollon
লিপিকারেরর হাত ধরেই পাড়ি নীল নদের দেশে। উজ্জ্বল পাথুরে চোখের
এই লিপিকারই বলে দেয় হাজার হাজার বছর আগেও সুপ্রাচীন মিশরে শিক্ষা
আর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার গুরুত্ব ছিল কি অপরিসীম গুরুত্ব ছিল!
নীল নদ। আফ্রিকার তথা পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী। নীল নদের দেশ মিশর।
নদীকে ঘিরে নগরায়ণ আর সমৃদ্ধির এক বিস্ময় মিশর সভ্যতা। ছোটবেলায়
পড়েছিলাম, মিশর নীল নদের দান। প্রতি বছর বন্যা হত নীল নদে। সে
বন্যায় উর্বর বিস্তৃত উপত্যকা ভূমি। তাতেই কৃষিকাজের বিকাশ। বিস্তার
যোগাযোগ আর বাণিজ্যের। খনিজ পদার্থের উত্তোলন আর ব্যবহার, কৃষিজ
পণ্যের সুসংহত ব্যবহারের পাশাপাশি একটি স্বাধীন লিখন পদ্ধতির আদি
বিকাশও এই সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। এসব নিয়েই ইতিহাস আর ঐতিহ্যের
সমৃদ্ধি। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের একক শাসনের
অধীনে মিশরীয় সভ্যতার সুসংহত বিকাশের সূচনা। কলা, স্থাপত্য, ভেষজ
থেকে রাজনীতি – সবেতেই পৃথিবীর ইতিহাসের মিশর সভ্যতার কৃতিত্ব
চমকপ্রদ। জাতিশাসনের জন্যে মিশরীয় সভ্যতাই সর্বপ্রথম সরকার তৈরি
করেছিল। স্থায়ী রাজ্যের এক সুশৃঙ্খল ধারায় তিনহাজার বছর ধরে বিকাশ
চলেছিল এ সভ্যতার। পরবর্তীকালে অবশ্য রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে
পরিণত হয়েছিল নীল নদ উপত্যকা।
মিশরীয় সভ্যতার ছোট বড় অ্যান্টিক পিস
নানা মূর্তি আর মমি
ল্যুভরে এসে সেই মিশরের রহস্যময় হাতছানিতে সাড়া দিতেই হয়। ১৯৯৭
তে ল্যুভরে শুরু হয়েছিল গ্র্যান্ড রেনোভেশন প্রোজেক্ট। সেই সময়ে
খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০০ থেকে ১৭১০ পর্যন্ত মিশর সভ্যতার বিপুল সংগ্রহকে
ভাগ করে দুটি ফ্লোরে সাজিয়ে রাখা হয়। মিশরীয় সভ্যতার প্রায় পঞ্চাশ
হাজার ছোট বড় অ্যান্টিক পিস আছে ল্যুভরের সংগ্রহে। পিরিয়ড অনুযায়ী
তাদের সাজানো অসম্ভব। ভারী সব স্থাপত্য আর ভাস্কর্যের নিদর্শন
একতলাতেই রাখতে হত। ইজিপশিয়ান গ্যালারীতে ঢোকার মুখেই স্বাগত জানায়
হায়ারোগ্লিফিক্স লিপি বুকে নিয়ে এক পাথুরে ফলক।
স্পিংক্স
|
বিশাল হল ধরে এগিয়ে চলতে চলতে টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে যাই হাজার
হাজার বছর। ফারাও-দের ভাস্কর্য, দ্বিতীয় আর তৃতীয় রামেসিসের বিশাল
মূর্তি, স্পিংক্স, সুপ্রাচীন ইতিহাস চিহ্ন আঁকা সারকোফেগাস বা
পাথুরে কফিন, হায়ারোগ্লিফিক্স-এর ফলক, নানা মূর্তি আর মমি আর সূর্যদেবতা।
এত বছর পরেও অনেক রং কী অদ্ভুত রকম জীবন্ত! দেখতে দেখরে ঘোর লেগে
যায়। ডুবে যাই মিশর রহস্যের অতলে।
কি সুন্দর! হাতির দাঁতের চিরুণি। ইস! আমার যদি একটা থাকত!
সুমনার কথায় ফিরে তাকালাম।
হাতির দাঁতের চিরুণি
|
চিরুণির সব কটা দাঁড়া নেই। হারিয়ে গেছে। একদিকে ছোট দাঁড়া। অন্যদিকে
বড়। কিন্তু অপূর্ব শিল্পের ছোঁয়া চিরুণির ঠিক মাঝখানের আয়তাকার
অংশটিতে। তিনটি মূর্তি- একসঙ্গে যেন যোগ দিয়েছে কোন নৃত্য কি কবিতার
প্রতিযোগিতায়। আয়কাকার অংশের ওপরে আর নীচে গ্রীক ভাষায় কিছু লেখা।
মাঝের নারীটির মাথায় মুকুট। সে-ই কেন্দ্র চরিত্র। তার একদিকে এক
নারী। অন্যদিকে এক পুরুষ। এরা দুজনে যেন স্বাগত জানাচ্ছে মাঝের
নারীটিকে। সূক্ষ্ম কারুকাজের অনবদ্য এক নিদর্শন। পাশেই এক ভাসমান
কন্যে ধরে আছে সুদৃশ্য চামচ। এরকম ছোট ছোট অপূর্ব অ্যান্টিকের
সমারোহ এদিক-ওদিক জুড়ে।
“সত্যি দারুণ! অপূর্ব! কিন্তু এবার পেটে কিছু না পড়লে নাড়িভুঁড়ি
অবধি হজম হয়ে যাবে বস! প্লিজ চল। কিছু খেয়ে নিই।”
অনি-র কথায় হুঁশ ফিরল সব্বার। এ গ্যালারি, ও গ্যালারি ছুটেই চলেছি
সকাল থেকে। কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। এবার কিছু না খেলেই নয়। ল্যুভরের
মধ্যেই প্রায় গোটা পনেরো ক্যাফে। কোনটা বাইরে, ওপেন এয়ার। আবার
কোনটা ভেতরেই। বাইরেই বসতে ইচ্ছে করছিল।
বাইরে রোদ ঝলমল দিন। মনে হল আবার হাজার হাজার বছর পথ হেঁটে ফিরে
এসেছি আমার নিজের সময়ে। ল্যুভরের ভেতরে অমোঘ অতীতের হাতছানি। আর
বাইরের খোলা চত্বর- উদ্যান জুড়ে বর্তমানের প্রাণচঞ্চলতার উদযাপন।
অগুন্তি ট্যুরিস্ট। স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাসে আর হাসিতে ভরপুর জীবন।
‘লা তেরেস দি পোমো’
সবচেয়ে কাছে তখন ‘লা তেরেস দি পোমো’। তুলেরিস উদ্যানের এক ভারি
সুন্দর পুকুরের পাড়ে। এখান থেকে যেমন ল্যুভরের বাইরের সৌন্দর্য
মুগ্ধ করে, তেমনি চোখে ধরা দেয় উল্টোদিকের ম্যুজে ডি অরসে। ইম্প্রেশনিস্ট
ছবির সম্ভারে যে মিউজিয়াম বিখ্যাত। পুকুরপাড়ের টেবিলগুলোতে জোড়ায়
জোড়ায় তরুণ-তরুণী। কোনমতে একটা টেবিলের ব্যবস্থা হল আমাদের। মেনুতে
চোখ বোলাতেই বুঝলাম আজ লাঞ্চের বিলটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট হবে। এসব
সময়ে রিনি মাঝে মাঝে একেবারে অব্যর্থ কিছু মন্তব্য করে। প্রায়
ভোকাল টনিকের মত কাজে দেয় সেটা।
- হোক না বেশি বিল, মাত্র এক বেলাই তো! ইস! ল্যুভরে এসে অত কেউ
হিসেব করে!
- শোন, আমরা বাজেট ট্রাভেলার। হিসেব তো করতেই হবে। আর একবেলা
মানে? ডিনার খাবি না আজ?
সৌর বলল।
- ধুস! ডিনার খাব না কেন? কিন্তু তার তো আর খরচ নেই আজ! ভুলে
গেলি, সন্ধের ইনঅগ্যুর্যা ল সেশনের পরে রিসেপশন আছে? সেখানে খেয়ে
সোওজা হোস্টেল। তাই বেশি না ভেবে চল বেশ জমিয়ে করে লাঞ্চ করে নিই।
আইসক্রিম-ও নেবো কিন্তু।
- ও হ্যাঁ! তাই তো। আর রিসেপশনে নিশ্চয়ই দুর্দান্ত সব ওয়াইন থাকবে।
তাহলে লাঞ্চটা ভালো করেই হোক।
সব কিছু নিয়ে গুছিয়ে বসলাম টেবলে।
- বল তো কোন বিখ্যাত বাংলা রহস্যগল্পে ল্যুভরের প্রসঙ্গ আছে?
মুড ভালো থাকলে সৌর প্রায়ই এরকম ক্যুইজমাস্টার হয়ে যায়। সন্ধের
ওয়াইন-এর কথা ভেবে নির্ঘাত এত ভালো মুড!
- ডিটেকটিভ গল্প?
- উঁহু। সত্যান্বেষী।
- ওহ্। তাহলে তো এক ও অদ্বিতীয় ব্যোমকেশ বক্সী।
- হ্যাঁ। কিন্তু কোন গল্প?
মনে পড়ে গেল দাম্ভিক শিল্পী স্যর দিগিন্দ্রনারায়ণকে। অজিত আর
ব্যোমকেশকে ঘোল খাইয়ে দিয়েছিলেন প্রায়!
"... স্যর দিগিন্দ্রের বসিবার ঘরে টেবিলের উপর একটি অতি
সুন্দর ছোট নটরাজ মহাদেবের মূর্তি দেখিয়াছিলাম। ওটা তখনই আমার
দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল, কিন্তু উহাই যে স্যর দিগিন্দ্রের নির্মিত
বিখ্যাত মূর্তির মিনিয়েচার, তাহা তখন কল্পনা করি নাই।
আমি বিস্মিত হইয়া বলিলাম, "ঐ মূর্তিটাই আপনি প্যারিসে একজিবিট
করিয়েছিলেন!"
স্যর দিগিন্দ্র তাচ্ছিল্যভরে বলিলেন, "হ্যাঁ। আসল মূর্তিটা
পাথরের গড়া - সেটা এখনও ল্যুভরে আছে।"
- “সীমন্ত হীরা”। কি ভাল গল্পটা! বললাম আমি।
- রাইট। ব্যোমকেশের মত ঘরোয়া অথচ সেরিব্রাল সত্যান্বেষী আর হল
না বাংলায়। সৌরর আক্ষেপ।
- ব্যোমকেশের মত সত্যি কেউ থাকলে মোনালিসাকে ঘিরে রহস্যের সমাধান
হত বোধহয়। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অসংখ্য ভাল ছবির মধ্যে মোনালিসা
ছবিটাই বা এত বিখ্যাত হয়ে উঠল কেন বল তো?
অনি-র মত আমাদের সবারই সেই প্রশ্ন।
সৌর বলল, ল্যুভর থেকে চুরি যাবার পরে আরও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে মোনালিসা।
মোনালিসা
|
ভিনচেঞ্জো পেরুজ্জা এক ছোটখাট চেহারার ইতালিয়ান। কাজ করত ল্যুভরে।
১৯১১ র ২১ শে অগাস্ট সকাল সাতটায় কর্মীদের জন্যে নির্ধারিত গেট
দিয়ে ঢুকল। যোগ দিল কাজে। মোনালিসার সামনে যখন কেউ নেই, তখন দেয়ালের
চারটে লোহার পেরেক থেকে চটপট খুলে নিল ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটা। কাছাকাছি
কর্মীদের সার্ভিস সিঁড়িতে গিয়ে প্রোটেক্টিভ কভার খুলে নিয়ে কর্মীদের
পরার পোশাক দিয়ে মুড়ে নিল মোনালিসাকে। ওই একই গেট দিয়ে বেরিয়ে
গিয়ে ফিরে গেল নিজের অ্যাপার্টমেন্ট-এ। মোনালিসাকে লুকিয়ে রাখল
ট্রাঙ্কে। পুলিস খোঁজ করতে আসায় বলেছিল সেদিন তার অন্য জায়গায়
ডিউটি ছিল। পেরুজ্জা-র অ্যালিবাই মেনেও নিয়েছিল পুলিস। দু’বছর
ধরে ট্রাঙ্কেই ছিল বন্ধ মোনালিসা। সেসময় মোনালিসাকে খোঁজার জন্যে
ল্যুভর বন্ধ রাখা হয়েছিল অনেকদিন। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পাওয়া
যায় নি। শেষে দু’ বছর ধরে মোনালিসাকে লুকিয়ে রাখার পর অধৈর্য হয়ে
পেরুজ্জা চলে যায় ইতালিতে। ফ্লোরেন্স এর এক আর্ট গ্যালারির মালিক
আলফ্রেডো গেরি-র কাছে বিক্রি করতে গেল মোনালিসাকে। তার যুক্তি
ছিল, নিজের দেশকে সে ভালোবাসে। তাই মোনালিসাকে সে নিজের দেশ ইতালিতে
ফিরিয়ে এসেছে। ধরা পড়ে গেল পেরুজ্জা। উদ্ধার পাওয়া মোনালিসাকে
নিয়ে অনেকগুলো একজিবিশন হল ইতালিতে। তারপর মোনালিসা আবার ফিরে
এল ল্যুভরে, ১৯১৩ তে। ওদিকে পেরুজ্জার কী হল? ট্রায়ালের সময় কোর্ট
কিন্তু পেরুজ্জার দেশপ্রেমের আবেগকে খানিকটা মেনেই নিয়েছিল। যদিও
পালটা যুক্তি ছিল, সে দান করে না দিয়ে তাহলে বিক্রি করতে গেছিল
কেন? সে যাই হোক, এক বছর পনেরো দিনের জেল হয় তার। কিন্তু সাত মাসেই
ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল পেরুজ্জা। বাকি জীবন কেটেছিল ইতালি আর ফ্রান্স
মিলিয়ে।
বিশ শতকের সবচেয়ে বড় আর্ট চুরির ঘটনা ল্যুভর থেকে মোনালিসা চুরি।
তবে ল্যুভরে ফিরেও শান্তি নেই মোনালিসার! একবার ছবিতে অ্যাসিড
ছুঁড়ে মারা হল। ছবির একটা কোণা পুড়ে গেল অ্যাসিডে। একবার পাথরও
ছুঁড়ে মারা হয়েছিল মোনালিসাকে। হাতের রঙ একটু চটে গিয়েছিল। পরে
রেস্টোর করা হয়েছিল সেটা। তাছাড়া একবার নাকি বুলেটও মারা হয়েছিল
মোনালিসাকে। আর একবার, টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়ামে প্রদর্শনের সময়
ছোঁড়া হয়েছিল লাল রঙ। শেষে ল্যুভরে কর্তৃপক্ষ আর ঝুঁকি না নিয়ে
বানিয়ে তুললেন বুলেটপ্রুফ কাঁচের আড়াল।
তখন সেলফি তোলার এত মাতামাতি ছিল
না।
আগে মোনালিসার সামনে বসে দীর্ঘ সময় নিয়ে ভালো করে দেখার ব্যবস্থা
ছিল। বসে থাকা যেত। এত ভিড় আর ধাক্কাধাক্কি ছিল অকল্পনীয়। হঠাৎ
মনে হল, তাও তো আমরা যখন গেছি তখন সেলফি তোলার এত মাতামাতি ছিল
না। এখন নিশ্চয়ই মোনালিসার সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যতিব্যস্ত সকলে!
এসব দেখেশুনে বুলেটপ্রুফ কাচের আড়ালে মুচকি হেসেই চলেছেন মোনালিসা।
- এবার কোন গ্যালারি? বেশি সময় নেই আর।
ম্যাপের ওপর ঝুঁকে পড়ে সিদ্ধান্ত হল Galerie d’Apollon এ যাব।
Petite Galerieও বলা হয় একে। ফ্রান্সের সোনালি অতীত আর বৈভবের
ছবি সেখানে।
বিশাল রাজকীয় হল। দেওয়াল থেকে ছাদ- শুধু ছবি আর ছবি। উজ্জ্বল সোনা-রঙ
ফ্রেমে বাঁধানো অপূর্ব সব ছবি। চতুর্দশ লুই-এর প্রথম রয়্যাল গ্যালারি
ছিল এখানে। চতুর্দশ লুই-এর এই হলের অনুকরণেই তৈরি হয়েছিল ভার্সেই
প্রাসাদের ‘হল অফ মিররস্’। এখানেই আছে নানা রাজকীয় ঐশ্বর্য। অমূল্য
রত্নরাজির সম্ভার। ফরাসী রাজমুকুট আর তার নানা রত্ন, রাজ-তরবারি,
রাজমুকুটের নানা রত্ন, রাণীর অলঙ্কার আর কত যে হীরের, মানিক, চুনি,
পান্না, মুক্তো! সব মিলিয়ে এই গ্যালারি নিজেই যেন ল্যুভরের মুকুটে
এক আশ্চর্য অলঙ্কার। অহঙ্কারও।
গ্যালারির একদিকে উন্মুক্ত বিশাল জানলা। চোখ চলে যায় বাইরে। সেইন
নদীর দিকে। ঝলমল রোদের টুকরো জানলা দিয়ে ঢুকে পড়েছে সোনা-মোড়া
ঘরে। সেই হঠাত আলোর ঝলকানিতে ভেতরটা আরও উজ্জ্বল। আরও মোহময়।
ঘড়ি জানান দিচ্ছে কনফারেন্স-এর উদ্বোধনের সময় এগিয়ে আসছে দ্রুত।
অতীতের ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা রূপকথাকে পেছনে ফেলে পা বাড়ালাম আগামীর
দিকে।
লেখক পরিচিতি - ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। বর্তমানে
আমেরিকার স্যান অ্যান্টোনিওতে প্রবাস-জীবন। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে
বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। লেখালেখি শুরু স্কুল ম্যাগাজিন থেকে।
কলেজ জীবন থেকে রেডিওর প্রতি ভালোবাসা ও আকাশবাণী কলকাতাতে রেডিও
জকি প্রায় এক দশক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখার পাশাপাশি
বেড়ানো আর গান শোনায় কাটে ছুটির অবকাশ।
(আপনার
মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)
অবসর-এর
লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য
অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।